একাকীত্ব
সুতপা মন্ডল
একাকীত্ব আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে আমাকে
ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি নিজের সত্তাকে
ভুলে যাচ্ছি জীবনের গতিময় ছন্দকে
জীবন এমন বেরঙিন হতো না যদি তুমি থাকতে।
রাতের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকি একা
কোথাও রাত পাখি ডেকে ওঠে
আমি ভাবলেশহীন নির্বিকার চেয়ে থাকি
তুমি যদি থাকতে জ্যোৎস্নার আলো মেখে
নিশ্চুপ প্রেমে মনে মনে কইতাম চুপকথা।
ঘরের বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠে না অনেকদিন
মানুষের ভিড়, কথার আওয়াজ ভালো লাগে না
ভালো লাগে না, রাস্তার চোখ ধাঁধানো আলো
অথচ কত উচ্ছল কত অন্য রকম ছিল সেই দিনগুলো।
শরৎ এসেছে আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর
পিছনের বাগানে শিউলি পড়েছে ঝরে
আমি জানি শিউলির সুবাস তোমার প্রিয়
তুমি যদি থাকতে আঁচলা ভরে কুড়িয়ে এনে
সাজিয়ে দিতাম তোমার ঘরে মুঠো ভরে।
কার জন্য সাজাবো এখন! আমি নিজেই এলোমেলো।
একলা স্মৃতির খাতার পাতায় হাজার অনুভূতি
ঝাপসা চোখে আলতো ছুঁই তোমার মধুর স্মৃতি।
আলমারির তাকে থরে থরে সাজানো তোমার কাপড় জামা
রোজ হাত বুলায় অনেক অনেকক্ষণ
ওর গন্ধ বুকে নিয়ে তোমাকে, তোমাকে খুঁজি।
চন্দননগরের ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়ের (৩৮বছর) করোনা আক্রান্ত হয়ে অকাল প্রয়াণ স্মরণ করে তার স্মৃতিতে রচিত আমার কবিতা.......
অমর দেবদত্তা
--- চিত্তরঞ্জন দাস
সবাই যখন ভীষণ ভয়ে
গুটিয়ে আছেন ঘরে
চাকরিতেও যান না অফিস
যান না ইচ্ছা করে,
তখন তুমি বুকের মাঝে
অসীম সাহস ধরে
পরিযায়ী ভাই-বোনেদের
পাঠাও তাদের ঘরে!
দিনে রাতে কাজ করে যাও
নিজের কথা ভুলে ---
করোনা ভয় তুচ্ছ করে
উচ্চে মাথা তুলে।
তোমার তরে হাজার শ্রমিক
ফিরল অবশেষে ---
করোনা আজ থমকে দাঁড়ায়
তোমার কাছে এসে !
জেলাশাসক নও তুমি ,
তুমিই দশভুজা ---
করোনা ভয় বিনাশকারী,
নাও আমাদের পূজা।
দেবদত্তা নামটি তোমার
সত্যি দেবের দান ---
মরণকামী মহামারী
কাড়লো তোমার প্রাণ।
অন্যের প্রাণ বাঁচাতে আজ
নিজেই শহীদ হলে
শত প্রণাম তাইতো জানাই
তোমার চরণতলে !
তোমার মত দুর্গারা মা
সত্যিই মহীয়ান ---
এই বাংলার গর্ব তুমি,
অমর তোমার নাম।
পাশ_ফেল
অনিক চক্রবর্তী
ঘরে বসে
পড়ছি আমি
মজার মজার ছড়া
এই দেখে
বলে মা
ছেড়ে দিতে পড়া
সারা দিন
তুমি শুধু
পড়া পড়া করো
পুঁথি পড়ে
কজনই বা
হয়েছে মস্ত বড়?
পাশ ফেল
উঠে গেছে
জানো নাতো তুমি!
তাই শুধু
বলে বেড়াও
ফেল করবো আমি।
আশা
তাপস বর্মন
পৃথিবী আবার সুস্থ হোক
আশা একটু খানি,
ঘুচুক যত উৎকণ্ঠা
মুছুক চোখের পানি।
কিল বিল ভাবনা গুলো
সাজুক নতুন করে,
এবার তারা প্রাণ পাক
আশার হাত ধরে।
সচল হোক কর্ম জীবন
সচল যাওয়া আসা,
স্পন্দন আসুক শিরায় শিরায়
মুখে ফিরুক ভাষা।
বোধি-পীঠ
কপিলদেব সরকার
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
আমি অবাক হতে ভুলে গিয়েছি
দেরিতে হলেও, অবশেষে
বিস্ময় ছেড়ে গিয়েছে আমার হৃদয়স্থলী।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
পায়ে পা মেলাতে আর
কোন বাধা রইল না আমার,
ফিরে দেখার, একা থাকার, নিঝুম অলিগলি
রাজপথে দিয়ে দিলাম সর্বস্ব অঞ্জলি।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
আমার উত্থান কেউ রুখতে পারবে না আর,
কেননা শাদার বিপরীতে কালোই,
ছেঁড়া জামা উল্টে নিলে গলাবদ্ধ কোট,
দেওয়ালিতে অন্ধ ছুঁচোবাজি কেউ পোড়ায় না আর,
প্রাণপণ চেপে ধরে রকেটের মেঘপুচ্ছ, রঙিন, তুলোট।
আমার বীজরাশিপুঞ্জ সবেগে ধাবিত হল
ভেবেই নিলাম, পথ বিলকুল সোজা,
তবু একদিন তারা আচম্বিতে থমকে দাঁড়াল।
আমি চমকে উঠলাম।
লোকারণ্য রাস্তায়, তবু অদূরেই
একটা বুড়ো বিকেলের মত একা গলি।
তার প্রথম বাড়িটার
তেতলায় জানলার গ্রিলে
একজোড়া চোখ জেগে আছে।
একজোড়া মাতৃহীন চোখ।
একজোড়া ভাষাহীন চোখ।
একজোড়া ভূমিহীন চোখ।
অস্তিত্ব ঘুলিয়ে দেওয়া
বোবা আর বোধহীন চোখ।
ঈশ্বরের দোহাই, ঐ পথেরই কিনারে
আমার বীজেরা কাল মহীরূহ হোক।
সহযাত্রী
সুনন্দ মন্ডল
ও পাড়ায় দেখ কার বাড়িতে যেন আগুন লেগেছে
ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে।
এ পাড়ার লোকজন দরজা জানালায় খিল তুলেছে
যার গেল তার গেল, ভেবে কী লাভ?
সময়ে আপনি বাঁচলে বাপের নাম!
এখন কে আর করে বল হরি নাম?
নিজের বাড়িতে কিংবা নিজের পাড়ায় আগুন জ্বললে
চিৎকারে সারা গ্রাম জাগিয়ে তোলে, পাশে থাকতে অনুরোধ করে।
তখন সময়টাও সময়ের দিকে তাকিয়ে অট্টহাস্য করে।
ওদের শরীরে ভাইরাস!
ওরা হাসপাতালে শুয়ে!
ওদের চিন্তায় যত মাথা ব্যথা,
রাতদিন ক্লান্তিহীন প্রার্থনা, আর অঞ্জলিতে স্থিতিশীলতার চেষ্টা।
আর এরা সব আবর্জনা, চিৎ হয়ে থাক,
ডাস্টবিনে জমে থাকা অব্যবহার্য্যের মতোই
পাশ ফিরানোর দরকার নেই এদের!
এদের দরকার নেই হাসপাতাল,
অসুখ থাকলেও ওষুধ নেই।
নেই কোনো সহানুভূতি, আর একটু সকলের প্রার্থনা।
আসলে আমরা চাই না কেউই কারও সহযাত্রী হতে।
দাম...
রাহুল পাত্র
সকালে বাজারে বেরিয়ে নবীনের সাথে পান্ডুর দেখা l দুজনেই সরকারি স্কুলের শিক্ষক l নবীন অংকের আর পান্ডু বাংলা l রথের দিন, স্কুল ছুটি l দুজনেই বেরিয়েছে খাসির মাংস কিনতে l
নবীন - কত করে কিলো নিলো রে?
পান্ডু - সাড়ে সাতশ টাকা ভাই l
নবীন - কোন দোকান দিয়ে নিলি?
পান্ডু - ঐতো বাজারের শেষ মাথায় মোবারক-এর দোকান দিয়ে l
নবীন - ও আচ্ছা, আমি সেলিমের দোকান থেকে নিলাম, টোটালে 50 টাকা কম নিল l
পান্ডু - তোর ছেলেকে কোথায় ভর্তি করলি?
নবীন- বোসবাবুর পাড়ার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলটায় l জানিস, ক্লাস ওয়ান-এর অ্যাডমিশন ফি কুড়ি হাজার টাকা l ভাবা যায়! আমাদের সময় 100 টাকায় সারা বছর চলত l
পান্ডু- আমার মেয়েটা ওই 'মহেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে'ই পড়াশোনা করে l সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল l ভালো স্কুল l
নবীন- ওখানে এখন পড়াশোনা হয় নাকি? ওসব বহুকাল আগে হতো l এখন স্রেফ আড্ডা! মুখস্ত মেরে দাও l বুঝলে ভালো, নয়তো আরো ভালো l
পান্ডু- না ভাই, মহেশ্বরী স্কুলের একটা আলাদা সুনাম আছে l
নবীন - ধুর! ওসব বাজে কথা l বাংলা মিডিয়াম এখন আর চলে না l ইংলিশ মিডিয়াম এখন শিক্ষার পিলার l এর ধারে কাছে টিকবে না বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলো l
পান্ডু- বাদ দে বাবা! তর্কে কাজ নেই l তা কাল তোর ক্লাস কখন?
নবীন - কাল মঙ্গলবার, ফার্স্ট ক্লাস থাকে l একটু দেরি করে ঢুকব, নাম ডাকব, ত্রিকোনমিতির দুটো অংক করাবো l তারপর ওই মিড-ডে-মিলের কাজ দিয়েই গোটা দিনটা ম্যানেজ করে দেব l
পান্ডু - আসছি রে, দেরি হয়ে গেল l চালিয়ে যা!
সুতপা মন্ডল
একাকীত্ব আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে আমাকে
ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি নিজের সত্তাকে
ভুলে যাচ্ছি জীবনের গতিময় ছন্দকে
জীবন এমন বেরঙিন হতো না যদি তুমি থাকতে।
রাতের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকি একা
কোথাও রাত পাখি ডেকে ওঠে
আমি ভাবলেশহীন নির্বিকার চেয়ে থাকি
তুমি যদি থাকতে জ্যোৎস্নার আলো মেখে
নিশ্চুপ প্রেমে মনে মনে কইতাম চুপকথা।
ঘরের বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠে না অনেকদিন
মানুষের ভিড়, কথার আওয়াজ ভালো লাগে না
ভালো লাগে না, রাস্তার চোখ ধাঁধানো আলো
অথচ কত উচ্ছল কত অন্য রকম ছিল সেই দিনগুলো।
শরৎ এসেছে আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর
পিছনের বাগানে শিউলি পড়েছে ঝরে
আমি জানি শিউলির সুবাস তোমার প্রিয়
তুমি যদি থাকতে আঁচলা ভরে কুড়িয়ে এনে
সাজিয়ে দিতাম তোমার ঘরে মুঠো ভরে।
কার জন্য সাজাবো এখন! আমি নিজেই এলোমেলো।
একলা স্মৃতির খাতার পাতায় হাজার অনুভূতি
ঝাপসা চোখে আলতো ছুঁই তোমার মধুর স্মৃতি।
আলমারির তাকে থরে থরে সাজানো তোমার কাপড় জামা
রোজ হাত বুলায় অনেক অনেকক্ষণ
ওর গন্ধ বুকে নিয়ে তোমাকে, তোমাকে খুঁজি।
চন্দননগরের ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়ের (৩৮বছর) করোনা আক্রান্ত হয়ে অকাল প্রয়াণ স্মরণ করে তার স্মৃতিতে রচিত আমার কবিতা.......
অমর দেবদত্তা
--- চিত্তরঞ্জন দাস
সবাই যখন ভীষণ ভয়ে
গুটিয়ে আছেন ঘরে
চাকরিতেও যান না অফিস
যান না ইচ্ছা করে,
তখন তুমি বুকের মাঝে
অসীম সাহস ধরে
পরিযায়ী ভাই-বোনেদের
পাঠাও তাদের ঘরে!
দিনে রাতে কাজ করে যাও
নিজের কথা ভুলে ---
করোনা ভয় তুচ্ছ করে
উচ্চে মাথা তুলে।
তোমার তরে হাজার শ্রমিক
ফিরল অবশেষে ---
করোনা আজ থমকে দাঁড়ায়
তোমার কাছে এসে !
জেলাশাসক নও তুমি ,
তুমিই দশভুজা ---
করোনা ভয় বিনাশকারী,
নাও আমাদের পূজা।
দেবদত্তা নামটি তোমার
সত্যি দেবের দান ---
মরণকামী মহামারী
কাড়লো তোমার প্রাণ।
অন্যের প্রাণ বাঁচাতে আজ
নিজেই শহীদ হলে
শত প্রণাম তাইতো জানাই
তোমার চরণতলে !
তোমার মত দুর্গারা মা
সত্যিই মহীয়ান ---
এই বাংলার গর্ব তুমি,
অমর তোমার নাম।
পাশ_ফেল
অনিক চক্রবর্তী
ঘরে বসে
পড়ছি আমি
মজার মজার ছড়া
এই দেখে
বলে মা
ছেড়ে দিতে পড়া
সারা দিন
তুমি শুধু
পড়া পড়া করো
পুঁথি পড়ে
কজনই বা
হয়েছে মস্ত বড়?
পাশ ফেল
উঠে গেছে
জানো নাতো তুমি!
তাই শুধু
বলে বেড়াও
ফেল করবো আমি।
আশা
তাপস বর্মন
পৃথিবী আবার সুস্থ হোক
আশা একটু খানি,
ঘুচুক যত উৎকণ্ঠা
মুছুক চোখের পানি।
কিল বিল ভাবনা গুলো
সাজুক নতুন করে,
এবার তারা প্রাণ পাক
আশার হাত ধরে।
সচল হোক কর্ম জীবন
সচল যাওয়া আসা,
স্পন্দন আসুক শিরায় শিরায়
মুখে ফিরুক ভাষা।
বোধি-পীঠ
কপিলদেব সরকার
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
আমি অবাক হতে ভুলে গিয়েছি
দেরিতে হলেও, অবশেষে
বিস্ময় ছেড়ে গিয়েছে আমার হৃদয়স্থলী।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
পায়ে পা মেলাতে আর
কোন বাধা রইল না আমার,
ফিরে দেখার, একা থাকার, নিঝুম অলিগলি
রাজপথে দিয়ে দিলাম সর্বস্ব অঞ্জলি।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম,
আমার উত্থান কেউ রুখতে পারবে না আর,
কেননা শাদার বিপরীতে কালোই,
ছেঁড়া জামা উল্টে নিলে গলাবদ্ধ কোট,
দেওয়ালিতে অন্ধ ছুঁচোবাজি কেউ পোড়ায় না আর,
প্রাণপণ চেপে ধরে রকেটের মেঘপুচ্ছ, রঙিন, তুলোট।
আমার বীজরাশিপুঞ্জ সবেগে ধাবিত হল
ভেবেই নিলাম, পথ বিলকুল সোজা,
তবু একদিন তারা আচম্বিতে থমকে দাঁড়াল।
আমি চমকে উঠলাম।
লোকারণ্য রাস্তায়, তবু অদূরেই
একটা বুড়ো বিকেলের মত একা গলি।
তার প্রথম বাড়িটার
তেতলায় জানলার গ্রিলে
একজোড়া চোখ জেগে আছে।
একজোড়া মাতৃহীন চোখ।
একজোড়া ভাষাহীন চোখ।
একজোড়া ভূমিহীন চোখ।
অস্তিত্ব ঘুলিয়ে দেওয়া
বোবা আর বোধহীন চোখ।
ঈশ্বরের দোহাই, ঐ পথেরই কিনারে
আমার বীজেরা কাল মহীরূহ হোক।
সহযাত্রী
সুনন্দ মন্ডল
ও পাড়ায় দেখ কার বাড়িতে যেন আগুন লেগেছে
ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে।
এ পাড়ার লোকজন দরজা জানালায় খিল তুলেছে
যার গেল তার গেল, ভেবে কী লাভ?
সময়ে আপনি বাঁচলে বাপের নাম!
এখন কে আর করে বল হরি নাম?
নিজের বাড়িতে কিংবা নিজের পাড়ায় আগুন জ্বললে
চিৎকারে সারা গ্রাম জাগিয়ে তোলে, পাশে থাকতে অনুরোধ করে।
তখন সময়টাও সময়ের দিকে তাকিয়ে অট্টহাস্য করে।
ওদের শরীরে ভাইরাস!
ওরা হাসপাতালে শুয়ে!
ওদের চিন্তায় যত মাথা ব্যথা,
রাতদিন ক্লান্তিহীন প্রার্থনা, আর অঞ্জলিতে স্থিতিশীলতার চেষ্টা।
আর এরা সব আবর্জনা, চিৎ হয়ে থাক,
ডাস্টবিনে জমে থাকা অব্যবহার্য্যের মতোই
পাশ ফিরানোর দরকার নেই এদের!
এদের দরকার নেই হাসপাতাল,
অসুখ থাকলেও ওষুধ নেই।
নেই কোনো সহানুভূতি, আর একটু সকলের প্রার্থনা।
আসলে আমরা চাই না কেউই কারও সহযাত্রী হতে।
দাম...
রাহুল পাত্র
সকালে বাজারে বেরিয়ে নবীনের সাথে পান্ডুর দেখা l দুজনেই সরকারি স্কুলের শিক্ষক l নবীন অংকের আর পান্ডু বাংলা l রথের দিন, স্কুল ছুটি l দুজনেই বেরিয়েছে খাসির মাংস কিনতে l
নবীন - কত করে কিলো নিলো রে?
পান্ডু - সাড়ে সাতশ টাকা ভাই l
নবীন - কোন দোকান দিয়ে নিলি?
পান্ডু - ঐতো বাজারের শেষ মাথায় মোবারক-এর দোকান দিয়ে l
নবীন - ও আচ্ছা, আমি সেলিমের দোকান থেকে নিলাম, টোটালে 50 টাকা কম নিল l
পান্ডু - তোর ছেলেকে কোথায় ভর্তি করলি?
নবীন- বোসবাবুর পাড়ার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলটায় l জানিস, ক্লাস ওয়ান-এর অ্যাডমিশন ফি কুড়ি হাজার টাকা l ভাবা যায়! আমাদের সময় 100 টাকায় সারা বছর চলত l
পান্ডু- আমার মেয়েটা ওই 'মহেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে'ই পড়াশোনা করে l সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল l ভালো স্কুল l
নবীন- ওখানে এখন পড়াশোনা হয় নাকি? ওসব বহুকাল আগে হতো l এখন স্রেফ আড্ডা! মুখস্ত মেরে দাও l বুঝলে ভালো, নয়তো আরো ভালো l
পান্ডু- না ভাই, মহেশ্বরী স্কুলের একটা আলাদা সুনাম আছে l
নবীন - ধুর! ওসব বাজে কথা l বাংলা মিডিয়াম এখন আর চলে না l ইংলিশ মিডিয়াম এখন শিক্ষার পিলার l এর ধারে কাছে টিকবে না বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলো l
পান্ডু- বাদ দে বাবা! তর্কে কাজ নেই l তা কাল তোর ক্লাস কখন?
নবীন - কাল মঙ্গলবার, ফার্স্ট ক্লাস থাকে l একটু দেরি করে ঢুকব, নাম ডাকব, ত্রিকোনমিতির দুটো অংক করাবো l তারপর ওই মিড-ডে-মিলের কাজ দিয়েই গোটা দিনটা ম্যানেজ করে দেব l
পান্ডু - আসছি রে, দেরি হয়ে গেল l চালিয়ে যা!
No comments:
Post a Comment