PravatiPatrika

Sunday, May 31, 2020

রবিবারের পাতায়



ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস
===========================
 সোহান ও তার বন্ধুরা 
 পার্থসারথি

পর্ব-১
 https://pravatipatrika.blogspot.com/2020/05/blog-post_2.html

পর্ব-২

আসফি সোহানকে টানতে টানতে বলে - এই তুমি আমাদের সাথে বসবে, এসো।' যেই শিবলীও সোহানের হাত ধরে টান দিতে গেল, কাহার ধমক দিয়ে বলল- সোহান যাবে না, ছেড়ে দে বলছি।স্যার ওকে এইখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে।'
আসফি চোখ রাঙিয়ে বলল-  ও আমাদের সাথে বসবে ।তুই কোনো কথা বলবি না।'
কেন বলব না, তুই ওকে এভাবে টানছিস কেন? ছাড় বলছি।'- কাহার উঠে দাঁড়াল।সঙ্গে সঙ্গে নাউড়া আর সুজনও দাঁড়াল।
আসফি ছেলেটির হাত ছেড়ে দিয়ে বলল- না ছাড়লে তুই কি করবি?'
 কি করব পরে বুঝবি ।'- কাহার শান্ত গলায় আবার বলল- এতক্ষণ কিছুই বলি নি। শুধু শুধু ওকে যন্ত্রণা করছিস!'
তাতে তোর কী হয়েছে? আমার যা ইচ্ছা তা-ই করব।'- এই বলে আসফি আবার সোহানের হাত ধরে টান দিতে লাগল।
কেউ কিছু বলার আগেই সোহান প্রতিবাদ করল, বলল-আমার হাত ছাড়ো।আমি এখানেই বসব। অন্য কোথাও যাব না।'
আসফির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোহান বসে পড়ল। কিন্তু আসফি নাছোড়বান্দা।
এবার সুজন ধমক দিয়ে বলল-  আসফি, ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।'
আসফি এবং শিবলী মারমুখী ভঙ্গীতে সুজন এর কাছে এল। সুজন ভয় পেয়ে গেল। নাউড়া আর কাহার তাদের ঠেকিয়ে ধরল। আসফি আবার রেগে গিয়ে তেড়ে আসতেই হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল। এরই মাঝে একজন এসে খবর দিল- হেডস্যার ক্লাসে আসছেন।'
খবরটা ক্লাসে পৌঁছা মাত্রই ক্লাসরুম একেবারে শান্ত হয়ে গেল।
হেডস্যার রাগী মানুষ ।কপালে সবসময়ই কয়েকটি ভাঁজ পড়ে থাকে। দেখলেই বুঝা যায় যে, তিনি রেগে আছেন।আর চোখে-মুখে একটা বিরস ভাবও ফুটে থাকে সবসময় । একবার রেগে গেলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে তবে ছাড়েন।যার পিঠে হেডস্যারের বেতের ঘা পড়বে সে সারা জীবনে আর ভুলবে না।আর, স্যার চোখ বন্ধ করে বাম হাত দিয়ে বেত চালান। আরে বাবা! সে কি জিনিস। 
 ক্লাসরুম এ ঢুকেই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন তিনি। পুরো ক্লাসে একবার চোখ ঘুরালেন।মেয়েরাও ইতিমধ্যে বসে গেছে।মেয়েরা স্যারের সাথে ক্লাশে আসে আবার স্যারের সাথেই চলে যায়। মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম আছে ওখানেই সবাই থাকে।প্রতি ক্লাশে স্যারদের সাথে আসে আবার ক্লাশ শেষে স্যারের সাথেই চলে যায়।
পুরো ক্লাশে এখন পিনপতন নীরবতা। কেউ কি বলতে পারবে যে একটু আগেই এখানে লংকাকাণ্ড হয়ে গেছে? ক্লাশের পরিবেশ দেখে স্যার শান্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
সবাই হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল। ভেবেছিল, মারামারির খবর পেয়েই স্যার এসেছেন। সে খবর স্যারের কানে পৌঁছায় নি। হেডস্যারকে ভয় পাবার আরেকটা কারণ আছে। উনি মারতে শুরু করলে সাধারণত কাউকে বাদ দেন না। তবে যে অপরাধ করবে তাকে একটু বেশি পেটাবেন। আর যে বেত নিয়ে আসবে তার হলো পোয়াবারো অবস্থা।
নাউড়া, সুজন আর কাহার ওরাও ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। স্যারকে দেখে বুঝতে পারল, মেজাজ খুব একটা খারাপ নেই। কারণ চেয়ারে বসেই পা নাড়াচ্ছেন। অথএব স্যারের মেজাজ ভালো। ইশারায় বই চাইলেন। তবুও নাউড়া খুব ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে ইংরেজী গ্রামার বইটা দিয়ে এল। হাত বাড়িয়ে স্যার বইটা নিলেন। কিন্তু কোন শব্দ করলেন না।
এক এক করে সবাইকে পড়া জিজ্ঞাসা করলেন। সবাই মোটামুটি সন্তোষজনক জবাব দিয়েছে বা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসফি আর শিবলী কোন কিছুরই উত্তর দিতে পারে নি। এবং বাড়ীর কাজও করে আনে নি।
স্যার একদম চুপ হয়ে গেলেন। কপালের ভাঁজ যেন আরও কয়েকটা বেড়ে গেল।চোখজোড়া ক্রমশ বড় হচ্ছে। আর তাকিয়ে আছেন অপলক দৃষ্টিতে। ক্লাশ রুমের পরিবেশ একেবারে থমথমে। কোথাও কোনরকম টু শব্দটি পর্যন্ত হচ্ছে না। সবাই নিঃশ্বাসও যেন খুব ভয়েতে ফেলছে।
আসফির ওপর রাগ করার অবশ্য বেশ কারণও রয়েছে। সে কোনদিন ক্লাশের পড়া তৈরী করে আসে না। তার ওপর কথায় কথায় অনর্থক মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলে। আবার ক্লাশও রীতিমতো করে না। আরও রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টামি।
নীরবতা বেশিক্ষণ থাকল না। হেডস্যার সিংহের মত গর্জে ওঠে বললন-  বেত! এই নাউড়া একটা বেত নিয়ে আয়। দেখবি আমার টেবিলের উপর রাখা আছে।'
স্যারের প্রথম চিৎকারে নাউড়ার বুকটা ধড়ফড় করে ওঠল। হাঁটু থেকে নীচ পর্যন্ত যেন কোন শক্তি নেই।কেমন অবশ অবশ লাগছিল। উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিল না। কিন্তু স্যারের দ্বিতীয় গর্জনে নাউড়া যন্ত্রের মত ক্লাশ রুম থেকে বেরিয়ে সোজা স্যারের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করল।
রুমে ঢুকেই স্যারের টেবিলের কাছে গেল। বেশ কয়েকটা বেত রাখা আছে। নাউড়া বেছে বেছে মোটাসোটা দেখে দু'টো বেত নিল। আর মনে মনে ভাবল-  এবার আসফির মজা দেখা যাবে। চিনুদা নেই বলে যা বাহাদুরি দেখাচ্ছে। একদম সহ্য করার মতো নয়। সুতরাং এমন একটা সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।'
ক্লাশ রুমে পা রাখতেই ঈগল পাখির মতো ছোঁ মেরে হাত থেকে বেত দু'টো কেড়ে নিলেন হেডস্যার। তারপর দু'টো বেত একসঙ্গে করেই আসফিকে পেটাতে শুরু করলেন। ঠাস ঠাস করে আসফির পিঠে কয়েক ঘা পড়ল। ঠাস ঠাস পিটাচ্ছে আর ধান ভানা ঢেঁকির মত স্যার হাঁফাচ্ছেন। নাউড়া প্রায় হেসেই ফেলছিল। কোন রকম নিজেকে সামলে নিল। স্যার শুনে ফেললে আর রক্ষা নেই। পিটাতে পিটাতে পিঠের চামড়া জগাখিচুড়ি করে ফেলবে।
আসফিটা আসলেই চালাক।কয়েক ঘা দেবার পর স্যারের রাগটা আরও বেড়ে গেল।হাত মাথার ওপর উঁচিয়ে যেই-না আঘাত করতে যাবেন এমন সময় আসফি সরে গেল, টেবিলের উপর পড়ল। দু'টো বেতই ভেঙে গেল। স্যারের রাগ যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আছাড় মেরে ভাঙা বেতগুলো মেঝেতে ফেলে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলেন। একদিকে রাগের ভার আর অন্য দিকে বয়সের ভার। হেডস্যার ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেনা। কতক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। স্যারের সাথে সাথে সবাই যেন অঘোষিত নীরবতা পালন করছে। স্যার একদৃষ্টে আসফির দিকে তাকিয়ে রইলেন।আসফি ও শিবলী মাথা নীচু করে মেঝেতে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষণ পর স্যার নীরবতা ভেঙে বললেন- আর যদি কোনদিন পড়ায় ফাঁকি দিস, তবে তোকে আমি আস্ত গিলে ফেলব।'
হেডস্যারের কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই ফিক করে একটা হাসির শব্দ ভেসে এল। স্যার কান দু'টো খরগোশের মতো খাড়া করলেন। তারপর চোখ বড়বড় করে বললেন-  কে হেসছিস ? '
কেউ কোন কথা বলছে না দেখে স্যার আবার বললেন-  কি হলো কথা বলছিস না কেন? নাকি গণহারে বেত লাগবে?'
তবুও কোন উত্তর নেই। কতক্ষণ নীরবে কাটল। স্যার আর কোন কথা বললেন না। এই প্রথম আর না পিটিয়ে পড়ানো শেষে আগামী দিনের পড়া দিয়ে চলে গেলেন। বোধ হয় স্যারের শরীরটা আজ বিশেষ একটা ভালো নেই।
বাকী ক্লাশগলোতে আসফি আর কোন রকম উত্যক্ত করতে এল না। যে কয় ঘা পিঠে লেগেছে সবগুলো দাগ হয়ে ফুলে ওঠেছে। আসফি নাউড়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসফাস করছে।
এরই মধ্যে সোহানের সাথে নাউড়া, সুজন ও কাহারের বেশ ভাব হয়ে গেল ।ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে টুক করে কিছু কথাও হয়েছে তাদের মধ্যে।লিডার চিনুদার ব্যাপারেও কিছু কথা তারা সোহানকে বলেছে। 
চলবে...


                     সাক্ষাৎকথায় ইকবাল খন্দকার

        'সাক্ষাতে যত কথা' বইয়ের জন্য সাক্ষাৎকার                 নিয়েছেন প্রশান্ত ভৌমিক 

                  আমি নানারকম লেখা লিখতে চাই

ইকবাল খন্দকার- বর্তমান সময়ের লেখক। উপন্যাস, ছোটগল্প, থ্রিলার, ভৌতিক, গোয়েন্দা, রহস্য, রম্যসহ বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখে যাচ্ছেন নিরন্তর। পাশাপাশি নাট্যকার ও গীতিকার হিসেবেও সুপরিচিত। লেখালেখির পাশাপাশি উপস্থাপক হিসেবে উপস্থাপনা করছেন সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনের নানামাত্রিক অনুষ্ঠান। জীবনকে অন্যভাবে দেখার একটা চোখ আছে লেখকের। তার প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই তাঁর লেখাগুলোয়। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে লেখকের মুখোমুখি হলাম।

প্রশান্ত ভৌমিকঃ ছোটবেলায় কী পড়েছেন? মানে সাহিত্য কী পড়েছেন?

ইকবাল খন্দকারঃ ছোটবেলায় এক কথায় যদি বলি, পাঠ্যবই পড়েছি। ভালো ছাত্র ছিলাম। আর ক্লাসের বাংলা বইটা খুব প্রিয় ছিলো। আমার ধারণা সাহিত্যের প্রতি যে আগ্রহ সেই কারণেই বাংলা বই খুব প্রিয় ছিলো। অংক বই প্রিয় হতে পারতো, বিজ্ঞান বই প্রিয় হতে পারতো। সেটা কিন্তু হয়নি। বাংলা বই-ই প্রিয় হয়েছে। যে গল্পগুলো একবার পড়ে ভালো লেগেছে, সেগুলো আমি বারবার পড়েছি স্কুল-কলেজের পুরোটা সময়ই।  আর ততটা বই মানে সাহিত্য পড়ার সুযোগ ছিলো না। কারণ গ্রামে তো লাইব্রেরি ছিলো না। তাছাড়া পত্রিকা পাওয়া যেত না। সব মিলিয়ে পড়ার কোনো উপকরণ ছিলো না। বাড়িতে হয়তো বই আসতো। সেটা ধর্মীয় বই। সেগুলো পড়তাম। নবী-রাসুলদের জীবনী ছিলো সেখানে, সেগুলো অনেকটা সাহিত্য করে লেখা ছিলো। সেগুলো পড়ে প্রভাবিত হতাম। এক কথায় যদি বলি, পাঠ্য বইয়ের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিলো।

প্রশান্ত ভৌমিকঃ আপনার লেখালেখির শুরুটা সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার প্রথম লিখিত লেখা কী? আর প্রথম প্রকাশিত লেখা কী?

ইকবাল খন্দকারঃ আগেই বলেছি আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। আমার লেখালেখির শুরুটা সম্ভবত ক্লাস এইটে। পড়াশোনা করছিলাম ঘরে বসে। আমাদের উঠানে নতুন ধানের আঁটি এনে ফেলছিলো আমাদের কাজের লোক। ভদ্রলোকের নাম ছিলো সিদ্দিকুর রহমান। উনি যখন ধানের আঁটিগুলো এনে ফেলছিলেন, আমি অন্যরকম একটা পুলক অনুভব করছিলাম। নতুন ধানের বিষয়টা আমার কাছে একেবারে অন্যভাবে উপস্থাপিত হলো। তখনই মনে হলো, কিছু একটা লিখতে পারবো। তখনই কাটাকাটি করে আমি একটা লেখা লিখলাম 'নতুন ধান' নামে। যদিও সে লেখাটা পরবর্তীতে কোথাও ছাপা হয়নি। কিন্তু এটাই আমার প্রথম লেখা। আর প্রথম পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার কথা যদি বলি, 'ইনকিলাব'-এ 'উপহার' নামে একটা পাতা ছিলো। খুব জনপ্রিয় ছিলো সেই সময়ে। ১৯৯৯ সালে সেখানে আমার প্রথম লেখা ছাপা হয়। লেখাটির নাম ছিলো 'চামচা'। স্যাটায়ার টাইপ একটা লেখা ছিলো। তারপর বইয়ের কথা যদি বলি, ২০০১ সালে আমার লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয়। অবশ্যই সেটা নিজের খরচে বের করতে হয়েছিলো। বইটা 'আগামী প্রকাশনী' থেকে বের হয়েছিলো। কিন্তু  'আগামী প্রকাশনী' অনেক বিখ্যাত লেখকদের বই প্রকাশ করতো বলে আমার মতো লেখকের বইতে তারা প্রকাশক হিসেবে নিজের নামও ব্যবহার করেন নি। আমার মতো লেখক বলতে আমি বোঝাচ্ছি, এমন লেখক যিনি নিজের খরচে বই প্রকাশ করেন। তারা প্রকাশক হিসেবে নিজেদের নাম ব্যবহার না করে ছোটখাট কোনো প্রকাশনীর নাম ব্যবহার করেছিলো। আর পরিবেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো 'আগামী প্রকাশনী'র নাম। এটা হচ্ছে আমার প্রথম বইয়ের কথা। ২০০১ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির নাম ছিলো 'ভুলে যেও আমায়'। 

প্রশান্ত ভৌমিকঃ আপনার প্রকাশিত বইগুলো সম্পর্কে বলুন।

ইকবাল খন্দকারঃ আমি নানান রকম লেখা লিখে থাকি। নির্দিষ্ট করে অনেকেই বলেন, তুমি এই জায়গাটা ধরে এগোতে পার। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সবকিছুই লেখা উচিত। আমি সায়েন্স ফিকশন লিখি না। আমার মন টানেও না। এখন যেদিকে টানছেনা মন, সেদিকে তো আমি যাচ্ছি না। কিন্তু অন্যগুলো আমি পারি। ভৌতিক লেখাটাও পারি আমি। ভৌতিক লেখায় ভয়ের যে পরিবেশ সেটা আমি সৃষ্টি করতে পারি আমার মনে হয়। আমি কেন তাহলে ভৌতিক লিখবো না? থ্রিলারে যে টানটান উত্তেজনার ভাবটা ধরে রাখা, সেটা আমি পারি বলে আমার মনে হয় বা পাঠক স্বীকার করে। তাহলে থ্রিলার কেন আমি লিখবো না? তারপরে রহস্য ধরে রাখার যে বিষয়টা, একেবারে শেষ পাতা পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখার যে ব্যাপারটা, সেটা বোধহয় আমি পারি। কায়দা- কৌশল অনুসরণ করেই আমি লিখি। যেহেতু আমি পারি, তাহলে আমি কেন রহস্য লিখবো না? বড়দের উপযোগী উপন্যাস- সেটা মা বিষয়ক হতে পারে, সমসাময়িক যেকোনো বিষয়ে হতে পারে সেটাও আমার মনে হয় লিখতে পারি। সমালোচক যারা আছেন তারাও স্বীকার করেছেন। 'বিদায় মা' নামে আমার একটা বই আছে। অনেকের ধারণা ছিলো যেহেতু আমি পত্র-পত্রিকায় রম্য লিখি, সেহেতু 'বিদায় মা' নামে একটা সিরিয়াস টাইপের বইয়ে হয়তো জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলবো। না রম্য, না সিরিয়াস- এই রকম একটা কিছু  হবে। কিন্তু যারা এই ধরনের ধারণা করেছিলেন তারাও বইটি পড়ার পরে একেবারে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আর অন্য পাঠকদের প্রশংসা তো পেয়েছিই। যে কারণে আমার মনে হয়, যা লিখে আনন্দ পাওয়া যায়, তাই লেখা উচিত। যেমন সায়েন্স ফিকশন আমি নিজে থেকেই এড়িয়ে চলি। এটা আমি পারি না। বা সায়েন্সের স্টুডেন্টও আমি ছিলাম না কখনো। আমি আগে থেকেই সারেন্ডার করছি। যেগুলি আমি পারবো না ধারণা করছি, অথবা এত  বছর লেখার পর তো একটা ধারনা আপনা আপনি এসে যায়, যে এটা আমি পারবো কিনা। যে কারণে নানারকম লেখা আমি লিখি। রম্য তো অবশ্যই লিখি। বড়দের উপযোগী, ছোটদের উপযোগী, কিশোরদের উপযোগী- নানা রকম লিখি।

প্রশান্ত ভৌমিকঃ আপনার পরিবারে কে কে আছেন? 

ইকবাল খন্দকারঃ আমার দুই মেয়ে আছে, আর স্ত্রী আছে। এটা হচ্ছে আমার পরিবার। বড় মেয়ে থ্রিতে উঠবে। এর আগের ফ্যামিলির কথা বলি, অর্থাৎ আমার আব্বার পরিবার। আব্বা বেঁচে নেই। মা আছেন। আর আমরা চার বোন, দুই ভাই। এই হছে আমার দুই পরিবার। আমার বাবার পরিবার, আর আমার পরিবার।   

প্রশান্ত ভৌমিকঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


ইকবাল খন্দকারঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।



                           ধারাবাহিক গল্প

                          নেপোদাদুর গপ্পো 
                           রাজকুমার ঘোষ

                             প্রথম পর্ব

অনেক বিচিত্র লোকের সমাহারে এই আজব দুনিয়া। এই আজব দুনিয়ায় এক আজব পাবলিকের নাম নেপালচন্দ্র সর্দার। তাকে নিয়ে বলতে গেলে অনেক গপ্পের সৃষ্টি হয়, সেই গপ্পের যে কত পাতা হবে তা আন্দাজ করা মুশকিল। নেপোদাদু থুরি নেপালচন্দ্র সর্দারের মতো বিচিত্র মানুষ ও তার কর্মকান্ডর জন্য অনেক মানুষ তাকে অনেক নাম দিয়েছিল। তারই মধ্যে একটা নেপো, আমরা সবাই তাকে আদর করে নেপোদাদু বলি। 
নেপোদাদুর বাবা হারাধন সর্দার ধনী লোক ছিলেন। নেপোদাদু ছিলেন তার একমাত্র সন্তান। ছোট থেকেই দাদু খামখেয়ালী এবং চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। তার বাবা তাকে অনেক চেষ্টা করেছিলেন ভালো করে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবার, কিন্তু সব কিছুই ভস্মে ঘি ঢালা… নেপোদাদু  পড়াশোনা সেভাবে করলেনই না। উলটে বাপ-দাদুদের কামানো সম্পত্তিতে নিজের হক বুঝে নিয়ে গদ গদ হয়ে সক্কলকে বলতেন, “কি হব্বে দু পাতার ঐ ছিঁড়ে? আমার এত সম্পত্তি কে ভোগ করবে?  আমার যা আছে না! তা পাঁচ-ছয় জেনারেশন বসে বসে খাবে”। ছেলের এই ধরণের মনোভাবে হারাধন বাবু ভীষণ অখুশি ছিলেন । ছেলেতো…!  তাই তার ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে যেতেন। তার কাছের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলোচনা করে তিনি ছেলেকে অনেকগুলো গরু কিনে দিলেন। যাতে গরুর দুধ বিক্রি করে নিজের জীবন নির্বাহ করতে পারে। কিন্ত নেপোদাদু ভীষণ কুঁড়ে ছিলেন… গরুগুলোর ঠিক দেখাশোনা করতেন না। অন্যলোকের ওপর দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে নিজে ঘরে বসে থাকতেন। বন্ধুদের সাথে তাস খেলায় ব্যস্ত থাকতেন। হারাধনবাবু ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে একদিন ইহলোক ত্যাগ করলেন।
নেপোদাদুর বয়স বাড়তে থাকে। নিজের উপার্জিত কিছুই নেই, এতোদিনে বাপের পয়সায় ফুটুনি দিতেন। বাবার কিনে দেওয়া গরুগুলোও তিনি সেভাবে কাজে লাগালেন না। দুধ বিক্রি করতে পারলেন না, অনুভব করলেন যে কিছু একটা করতেই হবে, এই ভাবনা মাথায় নিয়ে তিনি গরুর দুধ বিক্রি বন্ধ করে গরুর গোবর থেকে ঘুটে তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করলেন। আমাদের পাড়ায় ফিস্টে রান্নার আঁচের জন্য প্রথম কাস্টমার হিসাবে নেপোদাদুর ঘুটে নেওয়া হয়েছিল। দাদু নিজের হাতেই ঘুটে তৈরি করতেন। সেই ঘুটে বেশ বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল। শুধু আমাদের পাড়া নয়, আশেপাশের পাড়া থেকেও লোক এসে নেপোদাদুর ঘুটে নিয়ে যেত। দাদুর ইনকাম এইভাবে শুরু হল। দাদুর নিজের সম্পত্তি তো ছিলোই এবং ঘুটের পসার ছড়িয়ে পরাতে দাদুও খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দাদু ঘুটের কারখানাও তৈরী করে ফেললেন। 

তা বুঝতেই পারছেন নেপোদাদুর মতো বিচিত্র মানুষ এই দুনিয়ায় সত্যি বিরল…! এই বিচিত্র মানুষের গপ্পো এখানেই শেষ নয়, এতো শুরুমাত্র…


                                    দ্বিতীয় পর্ব

ঘুটের বিজনেস করে নেপোদাদু নিজের জীবনের আরো ২০ বছর কাটিয়ে ফেললেন। দাদু তার বাপের পয়সায় যা ফুর্তি করার করে নিয়েছিলেন কিন্তু যখনই নিজের ইনকাম শুরু করলেন দাদুর নতুন পরিচয় তৈরী হল। সেই বিষয়েই একটু আলোকপাত করা যাক তবে -  
নেপোদাদু ভীষণ কিপ্টে হয়ে গিয়েছিলেন। দাদুর থেকে এক-কানা বার করাও ভীষণ দুস্কর ব্যাপার। তার এই কিপ্টেমি নিজের জীবনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছিলেন। বাপের যা সম্পত্তি ছিল তার ভোগ সে তো করতই কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে মেরামতি দরকার, তার দিকে কোনো নজরও দিতেন না। বাপের তৈরি করা বাড়িটি ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হতে থাকে। এছাড়া নিজের পোশাকের ব্যাপারেও তিনি স্বছন্দ্য ছিলেন না । তার প্রিয় পোশাক হল লুঙ্গি। উনি খালি গায়েই লুঙ্গি পরে সবজায়গায় চলাফেরা করতেন। শীতকালে খুব জোর একটি গেঞ্জী ও চাদর পড়তেন। এহেন নেপোদাদুর কিপ্টেমিও সকলের চর্চার কারণ হয়ে উঠেছিল। দাদু নিজে থেকে বেশি কিছু খরচা করতেন না। 
দাদু নিজের হাতেই ঘুটে দিতেন। গায়ে গোবরের গন্ধে মো মো করতো। তার আশে পাশে কেউ ঘেসতো না। একটা সাবান কিনতেও দশ’বার ভাবতেন। দাদুর নেশাও ছিলো না সে ভাবে। কারোর থেকে বিড়ি ঝেড়ে ফুঁকতেন। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে তাসের আড্ডায় বসতেন এবং বাংলাও টানতেন তাদেরই ঝেড়ে। হ্যাঁ দাদুর নেশা বলতে ছিলো অল্প খরচের নস্যি। নাকে ভীষণ নস্যি নিতেন আর বন্ধুদের নস্যি অফার করতেন। নস্যির তীব্র গন্ধে সব ভয়ে পালাতো। এছাড়াও অন্যকে খাওয়ানো দূর অস্ত সেক্ষেত্রে দাদু ভীষণ ঝেড়ে খেতে ভালোবাসতেন।   
নেপোদাদু কিপ্টে কিন্তু ভীষণ রকমের সেয়ানা। দাদুকে মুরগী করা সহজ ব্যাপার ছিলো না । আমাদের পাড়ার অনেকেই দাদুকে হেনস্থা করতে গেলে নিজেই হেনস্থা হয়ে ফিরে যেতো। নেপোদাদু লোককে টাকা ধার দিতেন, এবং সেই সাথে চড়া সুদও নিতেন। কেউ এক পয়সাও যদি না দেয় দাদু তার পুঙ্গি বাজিয়ে ছাড়তেন । দাদু তার পৈতৃক বাড়িতে একাই থাকতেন । বাবা গত হবার পর তার মাও বেশিদিন আর থাকলেন না। বিশাল বড় বাড়িতে একাকিত্বে জীবন কাটাতেন । নেপোদাদু বিয়েও করেন নি । এখানেও তার এক লজিক ছিল, তিনি বলতেন, “বিয়ে করলে সংসারে আর একজন এসে সব কিছুতে ভাগ বসাবে, অতিরিক্ত খসবে”। অতএব দাদু আইবুড়ো কার্তিক হয়েই থাকতে চাইলেন। একুলে দাদুর আর কেউ নেই বললেই চলে । তবে দাদুর প্রিয় সঙ্গী হল তার প্রিয় টিভি এবং টিভিতে থাকা স্পোর্টস চ্যানেলগুলো। যদিও এই টিভি তিনি এক প্রিয় বড়লোক বন্ধু পানুকে পটিয়ে আদায় করেছিলেন। তিনি তার ক’জন কাছের বন্ধুকে নিয়ে প্রতিদিন টিভি দেখতেন এবং সেই কেবল্‌ চ্যানেলের টাকাও তার বন্ধুরাই মেটাতো। 


                                 তৃতীয় পর্ব

নেপোদাদুর বন্ধু
ছোট থেকেই নেপোদাদু বার ফটকা টাইপের পাবলিক ছিলো। সারাদিন আড্ডা দিতো, এ প্রসঙ্গে আগের পব্বগুলোতেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাপের পয়সায় ফুটুনি করতো।  যত নচ্ছাড় বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পরে বিগড়ে যাওয়া আর কি! দাদুর বাবা অনেক চেষ্টা করেও সেই সঙ্গ কাটাতে পারেননি। শুধু পয়সা ওড়াতো। পরে বাবা টপকে যাওয়ার পর নিজে যখন ইনকাম শুরু করতে লাগলো, তখনই বুঝলো অর্থের মূল্য।  নিজেকে চেঞ্জ করে নিয়ে একেবারে কিপ্টে হয়ে গেলো। তখন সেই বন্ধুদের থেকেই লুটতো। সেইভাবে কেউই নেপোদাদুর পীড়িতের বন্ধু হয়ে ওঠেনি।    
পরবর্তীকালে, নেপোদাদুর পাড়ায় কেলো নামেরএক বখাটে ছোঁড়া ছিল। সেই ছোঁড়ার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় পানু নাম তার, কেলো তাকে পানুখুড়ো বলে ডাকতো। সে এসে কালুদের বাড়ির পাশে একটা জায়গা  কিনে নিয়ে বিশাল অট্টালিকার মত একটা বাড়ি করে ফেললো। বাড়ি করার সময় পাড়ার ফুটো মস্তানরা খুবই জুলুম করেছিলো। নেপোদাদু নিজে উদ্যোগ নিয়ে সেই জুলুমবাজি বন্ধ করে দিয়েছিল। নেপোদাদুর পাড়ায় যথেষ্ট প্রভাব ছিলো। একা হাতে সব কিছু সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। সেইসূত্রে পানুখুড়োর সাথে নেপোদাদুর একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পানুখুড়োরও তিনকুলে কেউ ছিলো না। তার একমাত্র বৌ তাকে ছেড়ে চলে যায়।  নেপোদাদুর বাড়িতে মাঝে মাঝে যা মজলিশ হতো সবই পানুখুড়ো স্পনসর করতেন। নেপোদাদুও তেমনি পটাতো পানুখুড়োকে, পানুখুড়ো এতই ভালো মনের মানুষ ছিলেন যে নেপোদাদুর সব কিছু আহ্লাদ পূরণ করতেন। নেপোদাদুর কোনোদিনও হয়তো বাংলু পান করার ইচ্ছা হলো – 
- পানু আজ একটু ইচ্ছে হচ্ছে  
- কি গো নেপো 
- একটু জমিয়ে টানতে ইচ্ছে করছে। শুধু তুমি আর আমি। আর কোনো বেয়াদপদের জানাবো না। 
- কি টানবে? 
- আরে বাংলু টানবো। 
- আরে এতো সস্তা কেন? তোমার জন্য ভালো ইংলিশ আনাবো। নো চিন্তা বন্ধু, আমি আছি তো। 
ব্যস নেপোদাদুর দিল খুশ। মেঘ না চাইতেই জল। পাড়ার অন্য বন্ধুরাও গন্ধ শুঁকে ঠিক চলে আসত। সেই দিন ফুর্তিতে কাটে তাদের। 
নেপোদাদুর বাড়িতে পুরোনো ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইটের মান্ধাতা আমলের টিভি ছিলো, একদিন ইচ্ছা করে নেপোদাদু আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে পানুখুড়োর কাছে কান্নাকাটি করলো। আর দেখে কে বন্ধুদরদী পানুখুড়ো স্যামসুং কোম্পানীর একটা আস্ত টিভি উপহার দিলেন নেপোদাদুকে। দাদু খেলা দেখতে ভীষণ ভালোবাসতো। বন্ধুরা সব একসাথে টিভি দেখতো। সেই সব বন্ধুদের থেকে মাসে মাসে কেবল ভাড়া আদায় করে নিতেন। সব বন্ধুদের থেকে এই পানুখুড়োই নাকি স্পেশ্যাল বন্ধু। এই পানুখুড়ো এক জাহাজ কোম্পানীতে চাকরি করতেন। বিয়ে করার পরই খুড়ো তিন মাস বিদেশে চলে যান, ফিরে এসে দেখেন বউও পাখির মত ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়েছিলো। সেই দুঃখে পানুখুড়ো আর বিয়েই করলেন না। সেই খুড়োর একমাত্র সাথী ও আপনজন হয়ে উঠেছিল এই নেপোদাদু। দাদুর তাতে সুবিধেই হয়েছিল। 
একদিন নেপোদাদু বন্ধু পানুর কাছে আর একটি আবদার রাখলেন,  
- বুঝলে পানু, মনটা বড়ই হু হু করছে। 
- কেনো গো কি হলো নেপো? 
- গতকাল রাতে প্রভু জগন্নাথ স্বপ্নে এসেছিলেন। 
- তো কি হয়েছে 
- একবার দর্শন করলে হতো না! কিন্তু আমি একা তো কিছুই জানি না। ভালো করে হিন্দি বা ইংলিশে কথাই বলতে পারি না। তাছাড়া পকেটে মালকড়িও নেই সেভাবে। 
- তো, কি হবে আমি আছি তো, পুরী যাবে ? চলো দুই বন্ধু মিলে যাওয়া যাক। 
নেপোদাদুর খুশি আর ধরে না... পুরীতে যাবার চান্স এইভাবে হয়ে যাবে ভাবতেও পারেননি...  

চলবে...


                            ভ্রমণ কাহিনী

" বাঁকুড়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত স্থান ভ্রমণ "
                             টুম্পা মুখার্জী
    
দ্বিতীয় দিন

পরের দিন ভোরে উঠে আমার ছানার বাবা সাইকেল নিয়ে প্রাত:ভ্রমণে বের হলেন একাকী অভিসারিকার মত। তার উৎসাহ প্রচণ্ড। শুনলাম তিনি সাঁওতাল গ্ৰাম পার হয়ে হাতিবাঁধ গ্ৰামে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে দুপাশে ঘন জঙ্গলের সারি, তার মাঝে মোরামের রাস্তা। জঙ্গলের ধারে প্রাত:কৃত সারতে আসা লোক তাকে সাবধান করে দিল, "ওদিকে এগোবেন না। হাতি আছে।" তাই শুনে তিনি লেজ তুলে পাইপাই করে আবার আমাদের মাড হাউসে ফিরে এলেন। সেখানে চা সেবন করে আবার পাড়ি দিলেন অন‍্যদিকে। এবার গেলেন রঘুনাথনগর গ্ৰামে। সেখানে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মত মহল আবিষ্কার করলেন। একজন চাচা তার দুই ছেলেকে নিয়ে টিনের তাতালে খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানাচ্ছেন।তিনি তখন চাচার কত জন্মের ভাইপোর মত রস খাওয়ার আবদার জানান। চাচা বললেন,"সকাল ছ'টার মধ্যে না এলে রস পাওয়া মুশকিল।" তিনি তখন চাচার ছেলের ফোন নাম্বার নিয়ে, কাল আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার আমাদের আস্তানায় ফিরলেন। সকালের জলখাবার সারা হলো বাঁকুড়ার ট্রাডিশনাল জলখাবার চপ মুড়ি আর রসোগোল্লা সহযোগে। এরপর তৈরি হয়ে বের হতে হতে এগারোটা বেজে গেল। আমার অগ্ৰজ গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসলেন। আমি আজও তাকে মনে করালুম ৪০/৫০ এর বেশি স্পীড হলে আমি কিন্তু নেমে যাব। ও বলল," যা, তুই নেমে গিয়ে কাড়ার ( মোষ ) পিঠে চড়ে আয়। এমনিতে তোর চেহারাটা কাড়ার মতোই, পিঠে বসলে ওরা স্বজাতিদের অবজেকশন জানাবে না। তাই শুনে ছানার বাবার দাঁত বের করে সে কী হাসি! তাই দেখে আমার ইচ্ছে করছিল তেনার গলাটা টিপে ধরি, শেষে ছানার কথা ভেবে নিজেকে সংযত করলাম। রাস্তা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কালো পিচের চওড়া রাস্তা, মাঝখানে ডিভাইডার দেওয়া। বোধহয় ভূমিরূপের কারণে রাস্তা গুলো খুব চড়াই উৎড়াই। রাস্তার সৌন্দর্য দেখে রাস্তারই প্রেমে পড়ে গেলাম। এরপর বাঁকুড়া শহরকে ডানদিকে রেখে বাইপাস ধরে আমারা এগিয়ে চললাম। পথে রেল ক্রসিংয়ে গাড়ি দাঁড়ালো। সেখানে একটু ফটোসেশন চলল। গেট উঠতেই, আবার ছুটলাগালাম। দুপাশে গাছের সারি, মধ্যে মধ্যে দু একটা বাড়ি ঘর, ফাঁকা মাঠ, পুকুর প্রকৃতিকে আলাদা মাদকতা দান করেছে। কিছুটা এগোতেই শুশুনিয়া পাহাড় দৃষ্টি গোচর হল।দূরের পাহাড় দেখে আমার ভাইপো ভীষণ উত্তেজিত। জীবনে এটাই প্রথম ওর পাহাড় দর্শন। তারপর ধীরে ধীরে পাহাড়ের পাদদেশে গাড়ি থামল। এখানে কয়েকটি চা, খেলনা, ইমিটেশন আর পাথরের জিনিস পত্রর দোকান। শুনলাম এই পাহাড় থেকেই পাথর এনে এই থালা বাটি, প্রদীপ মূর্তি এসব বানায়। পাহাড়ে ওঠার মুখেই একটা ঝর্ণা। তবে সেটাকে ঝর্ণা বলে মনে হয় না। কারণ তাকে এমন ভাবে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে বড় ট‍্যাপকল থেকে জল পরছে। শুনলাম এই জলে স্নান করলে নাকি রোগবব‍্যাধি সারে। তাই এখানে সবার স্নান করার ধুম। এরপর পাথরের খাঁজ বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। এমনিতে আমি সেরোনেগেটিভ স্পণ্ডিলো আর্থারাইটিসের ভাগ‍্যবতী রোগী। তাই দুই ধাপ উঠি আর জিভ বের করে হাঁফাতে থাকি। তাই দেখে আমার অগ্ৰজ পরামর্শ দিল " তুই এখানে হাত পা টান করে বসে জিভ বের করে হাঁফা, নাহলে কুন্ডলী পাঁকিয়ে শুয়ে থাক।"
কী অপমান!!ইচ্ছে করছিল চোখের তেজ দিয়ে ওকে ভস্ম করে দেই। শেষে পাঁচ নম্বর সরবৎ এর দোকান পর্যন্ত উঠে ওখানে ছড়িয়ে পড়লাম এবং চোঁ চোঁ করে দুই গ্লাস সরবৎ আর একটা মাজা খেয়ে ধাতস্ত হলাম। ওরা সবাই উপরে উঠতে লাগল, আমি সরবৎ ওয়ালার সঙ্গে গল্প জুড়লাম।শুনলাম সারা পাহাড় জুড়ে এমনি জঙ্গল। উপরে একটা মন্দির আছে। আর অন‍্যদিক দিয়ে উঠলে শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। রক্ষে কর বাবা, আমার আর উপরে ওঠার ক্ষ‍্যামতা নেই। আধঘণ্টা পরে দেখি আমার ছানা আর ভাইপো ফেরৎ এসেছে 'গার্জেন'দের নিয়ে। শুনলাম কে তাদের এই পাহাড়ে বাঘ আছে বলায় ছানারা আর উপরে উঠতে রাজী হয়নি। বাকিরাও আমার মত এখানে সরবৎ পান করে নামতে শুরু করল। ওরে বাবা!!এতো দেখি ওঠার থেকে নামতে বেশি কষ্ট। পাথরে পা দিলেই পাথর সরে যাচ্ছে আর পা হড়কাচ্ছে। শেষে বসে, গাছ ধরে, পাথর ধরে, লোক ধরে, বসে,পারলে শুয়ে ছেচড়াতে ছেচড়াতে নিচে নামলাম কোনোক্রমে। নেমে পাথরের কিছু থালাবাটি কিনে ,দুপুরের খাবার খেয়ে আদিম প্রকৃতির সুগন্ধ গায়ে মেখে ফেরার পথ ধরলাম।
                              (চলবে )
           


                        নদী কোথায় ভেসে যায়  .....
                            তীর্থঙ্কর সুমিত  

                                     ( ১)

কত জমানো কথা ভেসে যায় নদী বুকে।কেউ খবর রাখেনা।কোনো গল্পের শেষ হয়না। শেষ হয় কথার।ওখানেই শুরু হয় নতুন গল্পের।নতুন থেকে চিরনতুন হতে হতে আটকে যায় চোখ।সেই চোখ থেকে সৃষ্টি হয় এক একটা গঙ্গা,এক একটা পদ্মা।ভালো থাকার লড়াইয়ে জলের স্রোতে ভেসে যায় অব্যাক্ত কত কথার যন্ত্রণা।হয়তো এভাবেই সৃষ্টি হয় কয়েকটা কথা, কয়েকটা চিহ্ন আর এক একটা মরুভূমি...
                                          

                                      (২)

প্রতিটা দিন কেটে যায় রাতের আঁধার বুকে নিয়ে।কবিরা জন্ম দেয় হাজারো কবিতার।সময়ের সাথে সাথে সময়কে বুকে নিয়ে ফিরে আসে ঢেউ।আজকের প্রশ্ন আগামী কাল পুরনো।নতুন থেকে চিরোনতুনের সন্ধানে আমরা সকলে । কখন যেনো একের পিঠে বহু শূন্য নিয়ে ওজন বাড়াই ।নিজের অচিরেই ফাঁকা হতে হতে কখনো আবার নদীর সাথে মিশে যাই ।গঙ্গা ,পদ্মার বুকে লিখে রাখা এক একটা যন্ত্রণা কত নষ্টা মেয়েকে সতীত্ব দিয়েছে।আর আমি নতুন হতে হতে কখন যেনো ঢেউ এর সন্ধান পেয়েছি ...

                      
                                   (৩)

নদীটা রোজ দেখি বয়ে যায় নিজের মতো।
হাজার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে নদী বয়ে যায় নিজের গন্তব্য স্থলে।এই গন্তব্য কোথায় আমরা কেউ জানিনা।তবুও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।তার গন্তব্যের দিকে।কিছু বোঝার আগেই শত ঢেউ ভিজিয়ে দেয় আমাদের।এভাবেই কত কথা ঢেউয়ের স্রোতে হারিয়ে যায়।কত লাল সাদা হয়ে ওঠে।ফিরে আসে তোমার আমার...
নদী স্রোতে ভেসে যায়




              আগুন
        মহীতোষ গায়েন

রূপের আগুনে পুড়ছে আপন পর...
চুপিসারে পুড়ছে নিজেরেই ঘর,
দেখতে কি পাও হৃদয় পোড়া রঙ
অথৈ জলে ভাসছে আপন ঢঙ।

রূপ পুড়িয়ে কিসের শান্তি পাও
রূপ-আগুনে মন পোড়াতে যাও,
সুখের অসুখ শূন‍্য ভরা মন;
মন-আগুনে পুড়ছে নিজের বন।



                          ফিরে দেখা
                      নিতাই চন্দ্র দাস

                     প্রখর তাপের ইশারায়―
       নিস্তব্ধ দুপুরে সুর তোলে দোয়েলের শিস।

                  দূরে ঐ দিগন্তে থেকে থেকে―
       গোধূলীর আকাশেতে ভেসে ওঠে কমলার মিথ্।

                   এখনও আমি শুনতে পাই;
               তোমার গমনের শব্দগুচ্ছ গুলো।

                আগামীর পথে পথে ফিরে দেখা
   তোমার পায়ে চুম্বনে ভরে দেওয়া চেনা রাশি ধূলো।

          ড্রেসিং টেবিলের স্বচ্ছ আরশিতে দাঁড়ালে;
                      বাতায়নে দেখা দিত চাঁদ।

       সোনালী জ‍্যোৎস্নার সফেদ মোড়কের আবহে
         আমার কেটে যেত স্বপ্নিল রূপকথার রাত।


         

                      যারা
             জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

যারা ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে এখনো
        তারা জানে ছায়া বড়ো অস্থির।
যারা রোদের ভেতর দাঁড়িয়ে তারা জানে
        পুড়তে পুড়তে ঠিক জল খুঁজে পাবে।
যারা বৃষ্টিতে ভিজেছে উদ্দাম তারা জানে
         স্বপ্নের আয়ু মাত্র দেড় সেকেন্ড।
যারা দুর্জয় পাহাড় ভেঙে উঠেছে চূড়ায় তারাতো
         জানে বাঘের পিঠ থেকে নামাই কঠিন।
যারা ছুটতে ছুটতে চলে গ্যাছে সীমানার কাছে
                  তারা জানে এবার বিশ্রাম।

যারা এখনো শুরুই করেনি তারা দাঁড়িয়ে
                            পাঁচমাথার মোড়ে
ভেবে নিচ্ছে শুরুর ভাবনা। 
   



                      জিঞ্জাসা
                দেবার্ঘ্য ভট্টাচার্য

একলা দুপুর—     রোদ্দুর চুরি গেছে —  বহুদিন।।
মেঘেদের মন খারাপ।। 
আকাশের মুখভার।।

একফাঁকে উড়ে গেছে।   পরিযায়ী পাখিদের দল।।
সিলিং ফ্যানে—       একশিশি স্লিপিং পিল।।

আয়নায় দাঁড়িয়ে, ক্ষত।। রক্তাক্ত।। বিবেক।।
     ভেঙে যাওয়া
               বাড়ি
                    ঘর
                       দোর।
আগলায়।।

চি
  লে
      কো
           ঠা—
একখানি নরম মেয়ে।।
তারাদের সাথে ভারি ভাব।
বেঁচে থাকে বুকে নিয়ে,
একদিন তারা হয়ে যাওয়ার
                বিশ্বাস।‌।

অসময়ী কুয়াশার মতো,
        ঘিরে আসে প্রশ্নচিহ্নরা।
ফাঁকা হয়ে গেছে।।
                  হঠাৎ।।
  চেনা শহরের
রা—স্তা—ঘা—ট।।

এক বেহেড বেভুল মাতাল।।
        ঈশপের গল্প।
—জল নেমে গেলে, সবাই কুঠার ফিরে পাবে তো?




    শব্দ লিখব সঙ্গোপনে

শব্দ ভেঙে শব্দ বানাই রোজ।
শব্দবন্ধ দেখায় টেলিফোনে,
রাত নামলে শব্দেরা দেয় খোঁজ।
ফিসফিসানি শব্দ আসে কানে।।

এক পৃথিবী শব্দ নিয়ে বসি।
রাত-আঁধারে শব্দ নিয়ে বৃষ্টি আসে।
পত্রলেখা। ফুরিয়ে গেছে মসি।
মেঘলা মানুষ শব্দ নিয়েই ভাসে।।

শব্দগুলো সাজায় কথামালা।
শব্দগুলোই দিয়েছে আজকে আঘাত।।
আঘাত পেলে তুমিও বুঝতে জ্বালা,
কান্না পেত। যখন নামত রাত।

সেই শব্দগুলোই হারিয়ে যাচ্ছে রোজ।
একটা দুটো লক্ষ শয়ে শয়ে।
হারিয়ে গেছে। কেউ রাখেনি খোঁজ।।
হারিয়ে গেলেও পূরণ হয়ে যায়।।

(তাই) আজও আমি শব্দ খুঁজে যাই,
রাত বিরেতে। চোখ বাঁচিয়ে। খুব গোপনে।।
আবার যদি শব্দ খুঁজে পাই।
কথা দিলাম,
লিখব চিঠি তোমায় আবার সংগোপনে।।



                           
                 
         অকবির কবিত্ব  ( প্রথম পর্ব )
                  অনিরুদ্ধ কর
         
      চৈত্রের রৌদ্রতাপে দাহিত নগর,
   
      তপ্ত সমীরণে অনার্দ্র কবিত্ব অকবির ।
         
      সহসা বাজিয়া উঠিল রণডঙ্কা !

      বাদিকার অস্তিত্বে এক অলীক আশঙ্কা !

      তবে নারী পরমা প্রকৃতিরূপে আজ ।-

      আশাশূন্য মানববক্ষে তীব্র উচ্ছ্বাস,

       নগণ্য বারিপাত কাব্য-বিষাদে, -

       অকবির সিক্তদেহ কবিত্বের নীরে ।
                             
                                           
         অকবির কবিত্ব  ( দ্বিতীয় পর্ব ) 

   অর্ণব তরঙ্গসম অবিরত যুগাবর্তনে ;
   সত্যকেতু হারিয়া যায় প্রবল প্রভঞ্জনে ।-
   বিনাশিত স্মৃতিকাব্যে মৃতপ্রায় স্মৃতিরাশি,
   বিশ্বমানব তবে যে নিদ্রিত কালরথযাত্রী !
মোহাবিষ্ট জগতবাসী ভাসিয়া যায় যুগস্রোতে,
জীবনকাব্যে নবীনছন্দের মলিনতা সৃজিছে,
   কভু স্বার্থবশে আত্মকাব্যে ছন্দ পরিবর্তন !
   সত্য ত্যজিয়া মিথ্যা-ছন্দ রচিছে বিশ্বজন,
মায়াস্থলে বিশ্বমানব এবে কবিরূপী কুজ্ঞানী !
জগতান্তরে বিরাজমান হে মহীয়ান অকবি ।
সত্যবাদী মহা-মানব তুমি অখ্যাত জগতে ।
বিশ্বের নিভৃতস্থলে করিছ বাস, বিরলভাব তব কাব্যে, -
  যুগছন্দ-কালছন্দ তব নিকটে থমকিত ।-
ঐ ছন্দশূন্য কাব্যে যেন চিরসত্য বর্ণিত ।
তবে এ বিশ্বতলে ; মানব যেথা বহিছে সদলে যুগছন্দস্রোতে ।
সেথা সে পথহারা পথিক, হায় ! নিমগ্ন বিষণ্ণতায়, আবদ্ধ প্রাচীনেতে, -
  হেথায় তুমি অবমানিত, অকবি আখ্যা লভিলা কোন্ হেতু ? -
  যেথায় কাব্য তব অবমানিতের উচ্চনাদ, সত্যান্বেষীর কেতু ।
  হে মহামতি, তব কাব্যে অপার ছন্দ, সত্যোত্তম তব বাণী !
   সুধাসম বাণীরসে ডুবিয়া মরে পিপীলিকাসম অনাচারী ।
   হেরিনু এ জগতে তোমারে ছন্দদাতারূপে ; সৃজনকারী যেমতি !
    জলধিতরঙ্গ, সূর্যকিরণ মিলিয়াছে তব কাব্যে, তুমি হে কবিপতি ।
    হে চিরবিস্ময়, তব সম্মুখে আজি বিপুল বাধা, নিশ্চয়, -
     কিন্তু ঐ কাব্যাগ্নিতে দাহিত হইবে পাষন্ড যত, তুমি হে অমর-মৃত্যুঞ্জয় ।
    এ ছন্দময় জগতে সর্ব মানব যদি কবি ;
    ত্রিভুবনের অকবি তুমি, যেরূপ দুর্লভ কৃষ্ণমণি ।
    হে কাব্যেশ্বর, সতত সত্য তব কাব্যবাক্য, তুমি প্রশান্ত-বীর ।-
   বিরল তব রণনীতি, অবিনশ্বর কবিত্ব অকবির ।

                             
                   

       অথই জলে সূর্যোদয়
             –তন্ময় চক্রবর্তী
         
ওরা কখনো ডানে গেছে
কখনো বামে গেছে,আবার
কখনো মধ‍্যবিত্ত হয়ে গেছে।
কেউ ধার্মিক হতে বলেছে
ওরা ধার্মিক হয়েছে তখনি,
কেউ বলেছে নাস্তিক হতে
ওরা সব ফেলে দিয়ে আবার
পুরো নাস্তিক হয়ে গেছে।
কখনো মধ‍্যবিত্ত হয়ে গেছে।
রাস্তা নিয়ে ওদের কোনোদিন
কোনো অভিযোগ ছিলই না।
ওরা জলের মতো সহজ―
যেকোনো রাস্তায় বিশ্বাস করে
গড়িয়ে যেতে পারে তখনি!
ওরা বহুদিন ধরে বহুবার
বহু রাস্তায় হেঁটে গেছে, কোনো
প্রশ্ন করে নি কোনোদিন, শুধু
জয়ের পতাকা পাল্টে পাল্টে
দিন বদলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে
বিশ্বাস করে হেঁটে গেছে।
ছয় যুগ পার করে এসে
যখন ফিরেছে ঘরে তখন–
এখনো তাদের ঘরের চাল
ঝড়ে উড়ে যায়, জলে ভেসে যায়
তাদের মেঝের বালিশ,
একবুক জলে দাঁড়িয়ে থাকে
তাদের ভাঙা ঘর,পারাপারের সাঁকো
গভীর আঘাতে ডুবে যায় জলে–
সব ভেসে যায় তাদের, শুধু
ভেসে যায় না তাদের স্বপ্ন,বিশ্বাস–
সন্তানকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে আবার
একবুক জলে একটা গাছের
ডাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আজো–
আর দিন বদলের আরও একটা
স্বপ্ন দেখে–একটা রাস্তা দেখে
আদিগন্ত নিমগ্ন জলের পারে
সূর্যাস্তে নতুন করে সূর্যোদয় দেখে!
                     



Saturday, May 30, 2020

শুধুই কবিতা

হুজুর মিছা কথা নাই বইলব 
বিকাশ  দাশ  

হুজুর ই খাঁচাটর ভিতরে দাঁঢ়ায়
মিছা কথা নাই বইলব।
ই গীতাট ছুঁয়ে যা বইলব সোব সাচ বইলব
টুকুও পেঁদুয়া কথা নাই বইলব হুজুর।
চোদ্দ গুষ্টির কিরা খায়ে বলছি
আপনারা মানঅ আর নাই মানঅ।
হুজুর হামার নাম বুধন সদ্দার,  বাপের নাম জগা সদ্দার
গাঁয়ের নাম গোবিন্দপুর,  পুলিশ ফাঁড়ি - পুঞ্চা,  জেলা - পুরুল্যা
নামহ কুলহির পশ্চিম দিগে তাল বাগুড়ার ঘর।

শুনুন ধম্মাবতার,  বাপের কিরা খায়ে বলছি
হামার কনু দোষ নাই,  তাথেও যদি মালুম হয় হামি দোষী
হামকে ফাঁসিতে লটকাবেন।

শুনুন ধম্মাবতার ; ছুটুর ল্যে মাইয়ের মু দ্যাখি নাই
মালুমও নাই
ছুটুরল্যে ফুলকি পিসির কলে বড় হল্যম
ইতটুকুন ছা রাখ্যে মাই হামার মরল্য
তখুনের ল্যে ফুলকি পিসির কাছেই মানুষ হল্যম
ফুলকি পিসি হামার মাইয়ের পারা
উ কনুদিন আর বিহাট নাই করে
হামকে মানুষ করতে হবেক বল্যে।
উ পিসিটর কলে চাপে ই মুড়া - উমুড়া কত ঘুরেছি
লিজে না খায়্যে হামকে খাওয়ায়ছে
বাপ হামার কাড়া চরায় দুপহরে ঘর আইসথ।
গরিব ঘরে যা জুটথ তাই রাঁধে খাওয়াথ
ঢেঁকিতে ধান কুটে চাল করে মাটির হাঁড়িতে ভাত বসাথ
জল হিঁড়ে বিহানবেলায় সিনায় আইসথ
বাপ হামার কাঠ ফাঁড়ে খামারে শুকতে দিথ
কনুদিন মহুল পালহায় ভাত রাঁধথ।
হামার জ্বর হল্যে কপালে জল পটি দিথ
সারারাইত চ্যখে চ্যখ করে নাই
সেই মাইয়ের পারা পিসিটকে লকে ডাহিন বললে মান্যে লিতে লারথম আইজ্ঞা।

টুকু মন দিয়ে শুনুন ধম্মাবতার
পাড়ার ফইকরা সদ্দারের বেটাটর জ্বর আল্য
সোব লকে বইলতে লাইগলেক - " ইটা ফুলকির কাজ। "
গাঁয়ের মড়ল বইললেক- " উয়াকে আটচালায় নিয়ে আয়, বিচার হবেক। "
কন দিগেরলে জনকতক কাল হুঁদহুঁদিয়া বয়ার কাড়ার পারা জুমঢ়া মরদ আস্যে
টানে হিঁচুড়ে আটচালায় লিয়ে গেল।
যে হাতটয় ফুলকি পিসি হামকে খাওয়াথ
হুজুর সেই হাত দুটাকে খামের পিছন দিগে বাঁধল।
তাপর শ খানেক ডাঙ্ঘে করে ডাঙ্গুরাল্য
ফুলকি পিসি কত চেঁচাল " হামকে মার না ; হামি ডাহিন লই ; হামি ডাহিন লই। "
ধম্মাবতার সোব লকের ছামুতে
হামার মাইয়ের পারা পিসিটকে কাপড় খুল্যে ল্যাংটা করে মাথা ন্যাঢ়া কইরে দিলঅ
কত আঝাট- পাঝাট দিলঅ হুজুর
মরার পারা পিসিটকে কলে করে ঘরে আনলম
তার টুকু পরেই মইরে গেল হামার পিসিট
হামকে মাই হারা কল্য হুজুর।

শুনুন ধম্মাবতার ; হামার রাগট খরিশ সাপের পারা ফঁসফঁস করে উঠল
উ রাতেই হামি মড়ল বদনা খুড়াকে টাঙি দিয়ে ঘাড়েরলে মাথাট নামহায় দিয়েছি।
হুজুর যে মড়ল মাইয়ের ইজ্জত বুঝে নাই
লকের ছামুতে ল্যাংটা করে
চারদিগে কত মাইয়া লককে ডাহিন বলে লির্যাতন করে মারছে
উয়াদেরও বাঁচার অধিকার নাই।
দ্যাশ ইত আগুয়াছ্যে,  সিঠিনে ডাহিন আইসবেক কনদিগের ল্যে?
আপনি বলুন হুজুর -
ছায়ের ছামুতে মাইকে কনু লকে ল্যাংটা করলে,  কন বেটায় মান্যে লিবেক?
  হাপনি মান্যে  লিবেন আপনার মাইকে ল্যাংটা করল্যে
বলেন আইজ্ঞা হাপনি মান্যে লিবেন?

ধম্মাবতার ইটা শুনহে যা সাজা দিবেন মান্যে লিব
বাপের কিরা বলছি হুজুর
ই কাটগড়ারলে নাই নামভ।
হুজুর হামার আর কন বলার নাই
কিন্তুক হামার মাইয়ের পারা ফুলকি পিসি ডাহিন লয় হুজুর
হামার ফুলকি পিসি ডাহিন লয়।
হামকে ফাঁসিতে লটকালেও হামি গলা ফাঁড়ে বলইলব
ফুলকি পিসি ডাহিন লয় ধম্মাবতার।



    ইটা কনু সুখের সময় লয় 


" ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়,। "
দুখের ডুংরি ডিঙ্গায় যিমন
দু-চ্যখে লদী বয়।
কতেক সুখে কতেক দুঃখে
আশা লিয়ে বুক বাঁধি
মরা ছায়ের সুহাগ লিয়ে
পা ছ' ড়ায় লিতই কাঁদি।
চুপ মারে সোব জুয়ান গুল্যান
আর কতক সবুর সয়?
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।

দ্যাবতা নকি বাঁচে আছেক
ত ক্যামনে ইমন হয় দশা?
রকত ঢাল্যে ফসল ফলাই
গতর লিয়ে লাঙ্গল চষা।
খাটেও ক্যানে খাবার নাই
কি জানি ক্যামনে ইমন হয়?
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।

ঝুপড়ি ঘরে জোসঠার আল্য
ছায়ের পারা হাসছ্যে
যিমন লইতন বউ মরদটাকে
বেদম ভাল্য বাসছে।
বইশাগ মাসের চ্যাঁদড় রদে
ফাটে গ্যাছে মাটি
পাহাড়ের পারা দুখ্যু লিয়ে
কি করে কাল কাটি।
কাঁসাই লদী শুয়্যে কাটায়
কনু কম্মের লয়।
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।

আগুন জ্বলে মনের ভিতরে
যিমন মাদল্যে তাল দিছ্যে
মরব ; না হয় মারব ইবার
নাহ্ লে বাঁচা মিছ্যে।
কাঁড় বাঁশ আর টাঙি গুল্যান
তেমন কথাই কয়।
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।।



    একটাই আবেগ
    সৌমিত্র চ্যাটার্জী

একটাই আবেগ
মাটির গভীর থেকে উঠে আসে
তারপর মেধাবী চরিত্রহীন
একটা সচল বিন্দু
খালি চোখে অদৃশ্য
চোখ ভরে গেলে ঝাপসা, অন্তিম

গাছের কোটরে সংসার, পর্দানসীন
নদী এসে ছুঁয়ে যায় বহমান সম্পর্কের মত
ধ্বংসের গায়ে প্রোথিত প্রথম প্রস্তরযুগ

একটাই আবেগ
জন্মের আগে থেকে যায় প্রজন্মের রেশ...


মৌমাছি আর পাখি

ঐ খানে যে মৌমাছিটি বসে আছে
ওকে আমি চিনি
প্রতিদিন আসে আমার পাশে পাশে
ওর সংসারের সব কথা আমি জানি
শুনেছি সেসব রূপকথা
ওদের বুকে যে শুধুই মধু  
সেখানে নেই কোন শূণ্যতা  

যে পাখিটা প্রতিদিন ছাদের কানাচে এসে বসে
ওর দুঃখ আমি জানি
ভুলতে পারেনি আজও ঘর ভাঙার অভিশাপ
কথা বলি,  বুকে মেখে রাখি ওর পাঁজরের অনুতাপ
তুলতুলে বুক কেঁপে কেঁপে ওঠে জমে থাকা বিষাদে
বেলাশেষে উড়ে যায়, জানিনা কোথায়
ফিরে যেতে যেতে শিস দিয়ে কাঁদে...



পঞ্চ হাইকু (বিষয় নারী)) 
   ডঃ রমলা মুখার্জী

১ 
        রাতের তারা
        নারী লাবণ্যময়ী,
        মিষ্টি প্রেমিকা।
        দুহিতা, জায়া,
        স্নেহময়ী জননী,
          নারী কল্যাণী।
         নারী প্রকৃতি
      ভ্রূণ সৃষ্টিকারিণী
          রমা,পরমা।
৪    
         কন্যারা রত্ন, 
        নয় ছলনাময়ী।
          সে দেবী দুর্গা।
           মমতাময়ী
          অপরূপা অনন্যা
           অভয়া কন্যা।



      বিপর্যয়ের বিশ
     মৃত্যুঞ্জয় হালদার    

বিপর্যয়ের বিশ দেখি অহর্নিশ
দিকে দিকে সর্বনাশ
এযে ঘোর কলি করে গলাগলি
কতশত ভাইরাস!

বিপদের বিশ করে ফিসফিস
আমাদের আশপাশ
কে যে কোন ফাঁদে দিন রাত কাঁদে
অশান্তিতে করে বাস।

বিকলাঙ্গ বিশ ঢালে কত বিষ
কত শত প্রাণ মাপে
বড় অগোছালো জীবন আজ জোলো
অসময়ের অভিশাপে!!


                    সম্ভাবনা
                   মিঠুন রায়

 স্বপ্নের উচ্ছাসে ঘুম ভাঙে আমার 
দেওয়ালে বসে কিছু জোনাকি আলোর বার্তা দেয়।
দগ্ধতার মাঝেও একরাশ আলোর গন্ধে ভরে উঠে মন
সবুজ পাতার শ্যামলী আভায়  ক্ষীণ হয়ে আসে ধ্রুবতারা।
সময়ের উল্কাপিণ্ড তবু খসে পড়ে হৃৎপিন্ডের মাঝখানে,
শুধু ক্যানভাসে ফুটে ওঠে পুরাতন প্রেমের আলতো ছবি।
ভ্রাম্যমান শুকতারা যেন অপেক্ষা করে মৈথেলীসুর শোনার জন্যে ,
নগ্ন পৃথিবীও একদিন ফলপ্রসব করবে গর্ভযন্ত্রণার শেষে।
            

                
          মা মা মা 
      সম্রাজ্ঞী কোনার

ভেঙে যাক কলম , জ্বলে যাক কাগজ ।
মরে যাক কবি , মরে যাক লেখক।
রূদ্ধ হয়ে যাক কন্ঠ , স্তব্ধ হয়ে যাক মন ।
মরে যাক গায়ক, মরে যাক দর্শক।
অন্ধ হয়ে যাক আঁখি , নিস্পন্দ হোক হৃদয়।
মরে যাক বুদ্ধিজীবী , মরুক বিদ্যাজীবী ।
ধসে যাক প্রাসাদ , ডুবে যাক গুদাম ।
শোষিতের চিতা জ্বলার আগে জ্বলুক শোষকের চিতা।
মরে যাক নেতা , মরুক অভিনেতা ।
শাসিতের চিতা জ্বলার আগে জ্বলুক শাসকের চিতা।
পবিত্রতমদেহের শেষের আগে হোক পাপীদের বিনাশ।
আর একজনও মায়ের মৃত্যু দেখার আগে 
এই রাষ্ট্রের মৃত্যু হোক ।


                আজকে
 - অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

আজ আর লিখবো না কোনকিছু;
ঐ বিরাট বটগাছের ছায়ায় 
দু- দন্ড একটু বসবো ...।
বয়ে যায় সময় নাকি 
স্রোতস্বিনীর মতো
সেই চলে যাওয়া সময়কে একটু দেখবো ।...
পাখিদের কলতানে একটু কানটা জুড়োবো!...
 ঐ ঝিলটার জলরাশি দেখে
তোমার কথা মনে করবো ।
হয়তো কোনো অচেনা পথে
যেতে যেতে তুমিও 
বসেছো কোনো তরুতলে ...;
 সময়টাকে চলে যেতে দেখছো ...।
তাই আজ কিছু লিখবো না 
মনে মনে ছবি আঁকবো 
এই নীরবতার, এই যাওয়া আসার ...



                  মেঘমিতা
               ঈশিতা চৌধুরী

এখানে  বসন্তে, আগুনজ্বলা মন অশান্তে,
একাকার আলো ধোঁয়া পাহাড়, 
দাবানলের আগ্রাসী তীব্র প্রতিবাদে মুখর যেমন  হৃদয়পুর,
ভালোবাসার অবিশ্রান্ত বর্ষণে 
অতলান্ত আঁখি অর্ণব তেমনই  দূর,বহুদূর ......
এভাবেই আকাশে প্রবাসে একরাশি কবিতাঘন মেঘমিতা, 
তোমাকে ছুঁয়েছে কিছু মনকাড়া অভিলাষী ভাষা,
আমার চোখেতে আঁকা অনুভবের সম্পূর্ণ সে সঞ্চয়িতা!!


                       প্রার্থনা 
               বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণা বোঝেনা দুধের অবোধ,
জাগ্রত নয় বুদ্ধিবৃত্তি সুপ্ত তার বোধ।
বালখিল্যে আঁকড়ে ধরে বাছা মাতার আঁচল,
অগোচরে খোঁজে অবলাশিশু স্নেহে ভরসার কোল।
নিয়তির মৃত্যুদূত মাতারে বেঁধেছে নাগপাশে,
অবোধ মাতারে পেতে চায় স্নেহের পরশে।
সন্তানের অজানা কি লেখা তার কপালে?
ভগ্নজীবন ডোবে সংসারের জটিল আবর্তের বেড়াজালে।
নিষ্ঠুর নিয়তির, এটাই নির্মম কঠিন পরিহাস,
যুগেযুগে নিয়তি গড়েছ মানবের  বিষাদের ইতিহাস।
ইতিহাস বহমান আপন ধারায় নিজ্ স্রোতে,
মানব জীবন চালিত হয় অদৃষ্টের হাতে।
খন্ডিত হয় না ওদের ললাট লিখন,
এসো প্রভু,ধরায় রোধ কর অকাল মারণ।


     সমাজের অবক্ষয়ে  
       নিতাই চন্দ্র দাস (তমাল)

যুগের বংশানুক্রমের সম্প্রসারণে–
ফিরে দেখা একবিংশ শতাব্দীর ছায়াতল!
সমাজটা দুর্নীতির আশ্রয়ে।
দিনেদিনে বেড়েছে সামাজিক মূল‍্যবোধের অবক্ষয়।
বেড়েছে সাম্রাজ‍্যবাদ, সন্ত্রাসবাদের রমরমা।
বিশ্বজুড়ে রাবনের চিতার পোড়া গন্ধে–
আকাশ দেখাচ্ছে ধূসর।
তদ্রুপ কালো ধোঁয়ার প্রাচুর্য‍্যতা
ছড়িয়েছে হুঙ্কার।
জাতীয় সংস্কৃতি, সামাজিকতা অবলুপ্ত।
যুবসমাজ , কর্মসংস্থান, পরিনত ধ্বংসস্তূপে।
ক্ষুধার্ত প্রাণের অস্তিত্ব ক্রমবর্ধমান।
বিশ্ব সামাজিক অবক্ষয়ের আত্মগ্লানি মুছে,
কখনও ফিরবে কি মহাজাগতিক ভাস্কর?

                   
          অবগাহন
   ডাঃ তারক মজুমদার

জেনারেশান গ্যাপ যেন আজ 
বিচ্ছেদ দুটি সাঁকো----। 
রক্ত স্রোতের পাতায় সূর্যের উত্তাপ। 
দুর্গম পথ কবিতার খাতায় নক্সিকাঁথা। 
ধূর্ত শিয়ালের সমস্বরে চিৎকার,
কুয়াশার চাঁদর অবশেষে পরাজিত। 
নবতর কিছু সংস্কার ঝুলে থাকে
খাঁড়া  হয়ে---। 
প্রতিদিন  চলো সংস্কার সাগরে 
অবগাহন  করি পালাকরে---। 



       সর্বহারা 
         শ্রীমতী তারা ভট্টাচার্য 

হারাতে হারাতে হারাচ্ছে সব
ধৈর্য আঁকড়ে থাক
বিগত কর্মে ভাগ্য এমন
ভগবানকেই ডাক
দিনমজুরের  বিপন্ন প্রাণ
থিদেকেই শুধু চেনে
ভগবান নিয়ে মাথা ব্যথা নেই
সত্য গেছে যে জেনে
দুঃসময়ের ঝটিকার রণে
তারা শুধু ঝরা পাতা
দেনা পাওনার হিসেব মেলেনা 
শূন্য জীবন খাতা...



ঘুয়েছে ঝাউপাতা
          শেখ মনিরুল ইসলাম

ঘুয়েছে ঝাউপাত
সমুদ্রের অন্তর ঘেঁষে
দেখতে হলে যেতে হবে
দীর্ঘার প্রান্ত দেশে। 

শিকড় আঁকড়ে ধরে
ঝাউ করেছে বিস্তার
ঐ ছায়ায় গেলে পরে
পাবে তুমি নিস্তার। 

কত স্নেহ করবে তারা
নেবে আপন করে
ভালো-বাসার ফুল ছড়িয়ে
দিবে দু-হাত ভরে। 

বিদায় বেলায় জানাও 
যদি হাজার কামনা
ঝাউয়ের হাওয়া 
তখন দেবে মনে বেদনা। 

সূর্যদয়ের সাথে,যদি হাওয়া চাও
 কেন দেরি ,শিগ্রী তবে দীঘা যাও।



      স্মৃতি  
হামিদুল ইসলাম।

গ্রাম থেকে শহর 
অসংখ‍্য গিরিখাত 
সমুদ্রে জোয়ার এখন 
তবু পাড়ি দিই রাত   ।।

পেরিয়ে আসি এপারের আকাশ 
কৃষ্ণচূড়া গাছ 
মৃত‍ শহর ঘুমোয় 
ভোরের সূর্য খাঁচাবন্দি আজ   ।।

চলে আসি চড়াই উৎরাই পথ 
মাথার উপর অভূক্ত আকাশ 
সাপের মতো লেপ্টে থাকে 
শিশির ভেজা কাশ   ।।

তুমি তবু দাঁড়িয়ে থাকো 
বাড়িয়ে দাও হাত 
তোমার ভালোবাসা প্রতিদিন স্বর্গ ছুঁয়ে যায় 
স্মৃতিগুলো নিখাঁত   ।