PravatiPatrika

Sunday, June 28, 2020

সোমবারের পাতা


     
বন্দি ঘরে মনকেমনের ছড়া
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

বন্দি ঘরে ক-মাস ধরে ভাল্লাগে না
মস্ত তালা দেখেই কি কেউ ভিখ মাগে না !
দারুণ ভয়ে চুপ দেখি সব কি যে হবে
কোন বাতাসে বিপদ আসে হু হু রবে!
বন্ধু যত আমার মতই কীভাবে যায়
বন্ধ দুয়ার খেলতে যাবে নেই যে উপায়!
রকের কুকুর দেখে করুণ মুখটা তুলি
ব্যালকনিতে হাত বাড়িয়ে খাবার ফেলি।
কাক ও শালিখ ডাকছে বেজায় ঝগড়া ভুলে
মায়ের দেওয়া ভাত ও মুড়ি নিচ্ছে তুলে।
আমার খাওয়ার সময় ওরা খুব যে ডাকে
মন ভালো নয় মন চলে যায় গ্রিলের ফাঁকে।
ভবঘুরে কাকুটা আর পায় না খেতে
বাবার প্যান্টে বসেছে সে গামছা পেতে।
বাবা ওকে ডেকে নিয়ে দুই বেলাতে
থালায় করে খাবারটা দেয় জলের সাথে।
তখন হাসির ঝিলিক লাগে কাকুর মুখে
তাই দেখে খুব আনন্দ পাই আমার বুকে।
কবে আবার খুলবে দুয়ার ভয়কে গিলে
স্কুলে যাবো খেলতে পাবো সবাই মিলে!



 
                 কি মজা
             রঞ্জন চৌধুরী

                    হ্যাঁ
চাঁদ উঠেছে       পলাশ বনে
                   উ-ফ!
    হায়না চলে হন হনিয়ে।
ফুল হাসছে     পাখি হাসছে
                  হু-ম!
  হাতি নাচছে ঠ্যাং দুলিয়ে।
তালে মাতাল     বেতাল যত
                  বা-হ্!
বাদুড় বাজায় খোল ঢোল।
মেও পুষির        বিয়ে হবে
                 তা-ই!
     ছাতিম তলে সবাই চল।
চলছে সবাই     ভূতের নায়ে
                 কি-ই!
    উঠছে যত খুশির রোল।
বাঁদর তখন      আদর করে
    বলছে বাঘা ঘুমিয় পর।
                  ই-স্!




দাবা
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

প্রশ্নগুলো হারিয়ে গেলো
কোথায় গেলো কেউ জানে না।
তার যে কিছু উত্তর ছিলো
উত্তরগুলো ঢেউ টানে না...
দাঁড়গুলো সব তুলোটকাঠের
উত্তর দেবে সাধ্যটা কি?
প্রশ্নগুলোই রাজা হলে
উত্তর দিতে বাধ্য নাকি?
বড়ে ঘোড়া নৌকো রাজা
হাতের গুলি শক্তিনগর
দাবার খাঁজে ফুল রেখেছি
নিবেদনে ভক্তি টগর...





           " ব‍্যবধান "
                 হামিদুল ইসলাম
                   

বুকের ভেতর বুক
পড়ে থাকে সময়
যেনো মস্ত অজগর সাপ
ছোবলে গর্জায়   ।।

রাতের উল্কারা খসে পড়ে
রক্তাক্ত মাটি
পৃথিবীর পাঠশালা বন্ধ আজ
তবু জীবন দুর্জয় খাঁটি   ।।

বন্ধু আমার আসে না আর
বাড়িতে কোনোদিন
ঘরের দরজায় মস্ত তালা
অপেক্ষার রাত সঙ্গীহীন  ।।

দূরে দূরে খুঁজি জীবনের স্বাদ
জীবন এখন অন‍্যরকম
বাক্সবন্দি জীবন হাপিত‍্যেশ করে
মনের বাইরে যেতে অক্ষম   ।।

তবু পেয়ে যাই জুটি
নিঃশব্দ প্রেম
দুজনে পাশাপাশি ব‍্যবধান হাজারো বিছানা
কেবল স্মৃতিগুলো বুকে আঁটা ফ্রেম   ।।






                          সাহিত্য
              ------সৌমেন সরকার

সাহিত্য কথার সঠিক অর্থ প্রকৃতপক্ষেই আমরা কেউই জানিনা।বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যের সংজ্ঞাতে বলেছেন,"সাহিত্য শুধু রসবিলাস নয়,জীবন সমস্যার সমাধানের গূঢ় ইঙ্গিত থাকবে যে সাহিত্যের মধ্যে তারই মধ্যে আমরা পাবো কলালক্ষ্মীর কল্যানতম মূর্তিটির সন্ধান।"শুধু তাই নয়,সাহিত্য হবে "The easiest way to express".সাহিত্য মানে আমি কতটা জানি,কতটা পারি বা কতটা ট্যালেন্টেড্ তা দেখানো নয়।যেটা আমি জানাতে চাইছি সেটা কত সহজে,কত সাবলীলভাবে বা কত চিত্রপূর্ণরূপে উপস্থাপন করতে পারি তাই।সাহিত্য শুধুমাত্র নীরস বা সরস না;কিম্বা গল্প,কবিতা,নাটক ইত্যাদির সম্ভার হবেনা।সাহিত্য হবে বাস্তব ও তৎকালীন পরিস্থিতির রত্নস্বরূপ;সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিপার্শ্বিক ইত্যাদির জীবন্ত দলিল।রচয়িতার সুক্ষ বিচারশক্তি,দার্শনিকতা,উপস্থাপন ক্ষমতা প্রভৃতি প্রতিটি বিষয় প্রতিটি পদক্ষেপে সুন্দরভাবে উপস্থাপিত থাকবে।সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার নিয়মাবলী মানতে হবে সাহিত্যিককে পুঙ্খানুপঙ্খভাবে।মানে,উপন্যাসের নিয়মের সাথে কবিতার নিয়ম মিলবেনা বা গল্পের বিভাগ হলেও ছোটগল্প ও অনুগল্পের মধ্যে সুক্ষ পার্থক্য থাকবেই।আবার জীবনী অন্য ব্যক্তির জীবনকাহিনী হলেও আত্মজীবনী লেখকের নিজেরই জীবনকথা হবে।ভ্রমন কাহিনী হবে সম্পূর্ণ সহজ ও সাবলীল।গোয়েন্দাকাহিনী হবে রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ।
         লেখকদেরও বিভিন্ন বিভাগের জন্য বিভিন্ন নামে অবিহিত করতে হবে।কবিতার ক্ষেত্রে কবি,গল্পের জন্য গল্পকার,উপন্যাস হলে ঔপন্যাসিক,জীবনী হলে জীবনীকার,ভ্রমনকাহিনী হলে ভ্রমনকারী,গোয়েন্দাকাহিনী হলে লেখক বা কাব্য হলে কাব্যিক।তবে যদি গল্পের ক্ষেত্রে গল্পকার নিজে ঘটনা বর্ণনা করে তবে হবে কথক ইত্যাদি।পরিশেষে বলা যায় রচনা যতটা বাস্তবধর্মী হবে,যতটা মানুষের হৃদয়ের মণিকেঠায় হিরকের ন্যায় প্রজ্জ্বলিত হতে পারবে ততটাই তার উদ্দেশ্য সার্থকতায় পর্যবসিত হবে।





                   দুর্ভিক্ষ দুয়ারে দাঁড়িয়ে
                     ডঃ রমলা মুখার্জী

ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখতে পাব ভারতবর্ষে প্রধাণত দুটি দুর্ভিক্ষ বড় আকারে দেখা দিয়েছিল। ১৩৫০ বঙ্গাব্দে পঞ্চাশের মন্বন্তরে ভারতবর্ষে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর অমানবিক নীতি, তবে বর্নবৈষম্যও কিছুটা দায়ী ছিল। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছিল ১১৭৬ বঙ্গাব্দের ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানির খাদ্যশস্যের বাজার থেকে মুনাফা লুট এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্যই দেখা দিয়েছিল এই চরম দুর্ভিক্ষ যার ফলে প্রায় এক কোটি লোক মারা গিয়েছিল।
     দুভাগ্যবশত আগের দুর্ভিক্ষগুলি প্রধাণত ছিল মনুষ্যঘটিত। কিন্তু ২০২৯ এ সারা পৃথিবীর মাটিতে নেমে এল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত এক আতঙ্ক অনুকণা। প্রকৃতিসৃষ্ট নভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা ভয়াল প্রাণঘাতী অসুখের কারণে সারা পৃথিবী জুড়ে মড়ক লেগে গেল।১৮৯৭ সালের মহামারী রোগ আইন ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত  বিধিনিষেধ অনুসারে ২৪শে মার্চ থেকে ভারত সরকার লকডাউনের নির্দেশ জারি করতে বাধ্য হয়েছিল। স্তব্ধ হল সোনার দেশ। সত্যি, এমন বিপর্যয়ের কথা কি মানুষ কখনও কল্পনা করতে পেরেছিল! পৃথিবীর উন্নততম প্রজাতি যখন প্রকৃতি জয় করার উল্লাসে দাপাচ্ছে ঠিক তখনই এই মারাত্মক করোনা কীটের আক্রমণে সারা পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ একদম ধরাশায়ী, লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু মিছিল।
     সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করাই ছিল এই লকডাউনের একমাত্র উদ্দেশ্য কারণ এক মানুষ থেকে আর মানুষে খুব দ্রুত সংক্রমিত হয় এই কভিড নাইটিন। আচমকা এই লকডাউন ঘোষণার ফলে যারা বাড়ির থেকে দূরে ছিলেন তাদের দুর্গতির আর সীমা পরিসীমা রইল না। তারা সবাই আটকে পড়ে রইলেন, হোটেল নেই, খাবার নেই, এমনকি জল পাওয়াও মুস্কিল হয়ে পড়ল। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে যাদের সঙ্গতি আছে কিছু যোগাড় করতে পারলেও গরীব মানুষদের অবস্হা নিদারুণ হয়ে পড়ল। পরিযায়ী শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘরে ফিরতে লাগল। অনাহারে, পথশ্রমে ক্লান্ত শ্রমিকদের কি চরম ভোগান্তি যে হল তা বর্ণনা করা ভাষার অতীত। ক্লান্ত শ্রমিক পথে, রেললাইনে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার ওঠে, আবার পথ চলে। কিন্তু পথে অনাহারে, অসুখে, পথশ্রমে, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেক শ্রমিকের প্রাণ পথেই শেষ হয়ে গেল, ঘরে আর ফেরা হল না।
         যান চলাচল, দোকান বাজার হঠাৎ বন্ধ হওয়ার কারণে একদিকে যেমন দেশবাসী চরম দুর্গতির সম্মুখীন হল, অপরদিকে প্রচুর মানুষ কাজের অভাবে অনাহারে ভুগতে লাগল। দেশে নেমে এল হাহাকার, অন্নহীনতা। সরকারও চরম অর্থসঙ্কটে পড়ল, তাই সরকার আস্তে আস্তে পয়েলা জুন থেকে লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। কিন্তু তার ফলে সংক্রমণ দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে যে হারে বাড়ছে, জানি না এর শেষ কোথায় ! অতিমারীর ভয়ংকর ছোঁবলে সোনার ভারত ছারখার হয়ে যাচ্ছে; দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে ঘরে ঘরে। এ যেন শাঁখের করাত, ঘরে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে, বাইরে বেরুলে করোনা সংক্রমিত হবে।
      লকডাউনের মধ্যেই আবার  শস্য-শ্যামলা সোনার পশ্চিমবঙ্গ তছনছ হয়ে গেল আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের প্রচন্ড দাপাদাপিতে। কত শত গাছ যে আছড়ে পড়ল তার ইয়ত্তা নেই। গৃহহারার হাহাকার প্রবল বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে বাংলার আকাশ বাতাস ভরিয়ে তুলল। বেশ কয়েকটি জেলার চাষের জমি ভেসে গেল।শস্য, ফসলের অভবে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ দুয়ারে কড়া নাড়ছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। সমুদ্রের পাড় ভেঙে নোনা জলে ডুবে গেল সুন্দরবনের গ্রামকে গ্রাম। বিশ্বউষ্ণায়ণের ফলে  বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বাড়ছে, তাই জলচ্ছাস বাড়ছে। বিগত এক দশকে তাই ঝড়-ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝাটও বেড়ে গেছে। আবহাওয়াবিদদের মতে ঝড়ের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবচ, তাই সুন্দরবন ধ্বংস হলে কোলকাতা মহনগরীও তছনছ হয়ে যেতে পারে।
       মনুষ্য প্রজাতির অতি আধুনিকতা, ভোগ-বিলাসিতা, বেহিসেবী পদক্ষেপ কি তাহলে হোমো সেপিয়েন্সের কাছেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। প্রকৃতি কি তার তুলাদন্ডে  ভারসাম্যের হিসেব কষতে বসেছে, নিক্তির ওজনে বুঝে নিচ্ছে তার অম্লজানের অনুপাত, আরও সব পরিবেশের ঘাটতি। পাখির কাকলি শুনতে শুনতে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করার কাজে পরমা প্রকৃতি বড় ব্যস্ত তাই মানুষের কোন প্রার্থনাই তাঁর কানে পৌঁছাচ্ছে না। কবে যে করোনার বিভীষিকা শেষ হবে তার  উত্তর জানা নেই। তবে নিজের প্রয়োজনে করোনা সব মানুষকে ধ্বংস করবে না কারণ এই ভাইরাস যেহেতু মানুষের দেহে ঢুকে জীবন লাভ করে তাই মানুষ না থাকলে করোনারও অস্তিত্ব থাকবে না। তবে মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক থেকে নিশ্চয়ই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে, এই আশায় আমরা সবাই। সেইদিনটা যেন  খুব তাড়াতাড়ি আসে এটাই আজ সারা পৃথিবীর প্রার্থনা। প্রতীক্ষার শেষ কর প্রকৃতি মা, তোমাকে লাঞ্ছিত আর করবে না মানুষ। পৃথিবীকে বিশুদ্ধ আর সুন্দর রাখবো এই অঙ্গীকারে দৃঢ়বদ্ধ আমরা সবাই।

পরমা-প্রকৃতি, ক্ষমো অপরাধ যত,
নতুন ভোরে ধুইয়ে দেবো ক্ষত।
দুষণ-দৈন্য করে যাব সব দূর....
সাম্য-মৈত্রী-ঐক্যে তুলবো সুর।
অতিমারী শেষে ধনী-দরিদ্র মিশে
হাতে হাত রেখে বাঁচবো ভালোবেসে।




                   যদি জানতেম
              শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার


শীতের মাঝামাঝি মা চলে গেলেন। বছর আঠষট্টির মোটামুটি সুস্হ শরীর, একটু সুগার, গায়ে হাতে ব্যথা এ ছাড়া উপসর্গ ছিলনা। রাত্রিবেলা উঠে বাথরুম যাবার সময় হঠাৎ পড়ে যান। হঠাৎ স্ট্রোক আর তারপর কোমা। জ্ঞান ফেরেনি আর।

মা'য়ের টবজোড়া গাঁদা আর জারবেরা। তাদের সবকটা ফুলে ভরে উঠতে উঠতেই মা আর নেই।

বাড়ীতে যে কদিন লোকজন আসাযাওয়া করেছে ধূপের গন্ধ আর ফলপাকুড়ের ঝুড়ির মনখারাপ করা গন্ধে বাড়ি ছেয়ে ছিল। সবটাতেই একজনের অনুপস্থিতি প্রবল, অথচ মানুষটা ছিলেন মিতবাক। মানুষের থাকার সময়ের চেয়ে না থাকার সময়ে বড় বেশী চর্চিত হয়। জীবনের এ এক নিদারুণ রসিকতা।

শ্রাদ্ধশান্তির অনুষ্ঠান  মিটতে মিটতে বেশ দেরী হয়ে গেল।  কালকে দাদা ফিরে যাবে পুনায়,আর আমি ফিরে যাব জব্বলপুর আমার কর্মক্ষেত্রে। দু' ভাই এর বউরা অবশিষ্ট আত্মীয়স্বজনের সাথে নীচের ঘরে টুকিটাকি ব্যস্ত। আমরা দু' ভাই ধীরে ধীরে ছাদে  উঠলাম এলাম চুপচাপ। মাথার  ওপর আকাশের শামিয়ানা। দাদা ই বরাবর মায়ের নেওটা তাই ওর মনটা এখনো অস্হির। নীরবতা ভেঙে আমি বললাম - 'আচ্ছা মা এর সাথে আবার দেখা হলে কোন কোন কাজ  করতে বারণ করবি?' দাদা স্মিত হেসে বলল, ' মা বড় বেশী সঞ্চয়ী ছিল অপ্রয়োজনেই। এখনো মা র আলমারিতে কমপক্ষে এখনো দশটা নতুন শাড়ি পরে আছে ! জীবনকে উপভোগ করতে মা ভুলে গেছিল ! দেখা হলে আয়ুষ্কাল খরচ করতে বলব ! অতি সঞ্চয়ের পরিণাম যে আসলে শূন্য সেটাই বোঝাব।'

একটা সিগারেট ধরিয়ে আমি বললাম
'তোর মনে আছে ! মা হারমোনিয়ামটা বেচে দিয়েছিল? দাদুর দেওয়া ডোয়ার্কিন হারমোনিয়াম ছিল ওটা ! তার আগের রাতে বাবার সাথে কি সব নিয়ে অনেক্ষণ ঝগড়া হয়েছিল ! কে এক রমেনদা'র  নাম ঝগড়ার মধ‍্যে বারবার  ফিরে ফিরে আসছিল। '
দাদা বলল 'রমেনদা' মা'র গানের মাস্টার ছিল বিয়ের আগে। এবাড়িতেও কয়েকবার এসেছে, বেশি কিছু করত না ওই  ছুটকোছাটকা গানের টিউশনি ছাড়া।'

মা খুব অপমানিত হয়েছিল সেই ঘটনায়। পরদিন কাবারিওলা ডেকে হারমোনিয়াম বেচে দেয়। আর তারপর থেকে ঘুণাক্ষরেও কোনওদিন বাড়িতে এক লাইনও গান গায়নি মা আর। ওই হারমোনিয়ামটায় মায়ের কৈশোরবেলাটা ধরা ছিল। আজ হলে ওটা বিক্রি করতে বারণ করতাম।

' আচ্ছা! মায়ের কি সত্যি রমেনদা'র প্রতি কোনও অপাপবিদ্ধ দূর্বলতা ছিল? না কি সে সব নয় স্রেফ গানের মধ্যেই বদ্ধজীবনের মুক্তি খুঁজেছিল কখনো? '

এরপর আরও কিছুক্ষণ স্তব্ধতা ঘুরপাক খায়  সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে মিশে।

দাদার হাতটা পিঠের ওপর এল আলতো করে। বলল 'ওসব কথা আজ থাক! বেশ ঠান্ডা লাগছে এখন ছাতে!  গায়ে চাদর আর মাথায় টুপি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার এখন আর কেউ নেই ! নীচে যাই চল !'

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মাথার ওপরের জমাটবাঁধা তারাভরা আকাশের বুক থেকে হাল্কা একঝলক হিমেল বাতাস আমাদের দু'ভায়ের গা ছুঁয়ে চলে গেল।







                        বোকামি
                  মিনতি গোস্বামী

দিন দিন পলি অবসাদগ্ৰস্ত হয়ে যাচ্ছে।তার গানের মাষ্টারমশাই বহু পুরোনো।ছোট্ট বয়স থেকে সে গান শেখে।কিন্তু বছরখানেক একটি নতুন মেয়ে এসেছে,তাকেই সব প্রোগ্ৰামে সুযোগ দেয় মাষ্টারমশাই।
পলি যে তার থেকে গানে ভালো সারা শহর জানে।
কিন্তু পুলিং এর যুগ, তাই পলি কোথাও সুযোগ পাচ্ছেনা।এছাড়া এস, এস,সি বন্ধ বলে মাষ্টার্স করার পর চাকরির সুযোগ ও হচ্ছেনা।
ইতিমধ্যে লকডাউন শুরু, পৃথিবী জুড়ে থমথমে অবস্থা।এক ধাক্কায় পৃথিবী স্তব্ধ, সবাই ঘরবন্দী।
দু'চারজন বান্ধবী ছিল, তাদের সঙ্গে দেখা করার ও সুযোগ নেই।
যেহেতু পলি তার বাবা মায়ের বেশি বয়সের সন্তান, তাই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও গড়ে ওঠেনি।
তাদের আত্মীয়-স্বজন ও তেমন নেই।তার থেকে ও তার জীবনের বড় সমস্যা এখন অতনুর সঙ্গে সম্পর্কটা। অতনুও বেকার, তাই বিয়ে করতে পারছেনা।অতনু অবশ্য বড় ব‍্যবসাদারের ছেলে, চাকরি না পেলেও অসুবিধা নেই জানিয়েছে।
সেই অতনুও লকডাউনের প্রথম দিকে কথা বললেও দিন পনেরো কোন যোগাযোগ রাখছেনা।
পলির বাড়িতে প্রেম না জানলেও বন্ধু বলে অতনুকে জানে।
পলি যেন দিশেহারা।ভাগ‍্যের বিড়ম্বনায় প্রতিটি পদক্ষেপে তার মত মেয়ের পিছুহটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।তার এখন মনের কথা বলার মত কেউ নাই।বান্ধবীরা ফোন করলে নিজের কথাই বলে, তাই সে আর কথা বলেনা।অবসাদগ্ৰস্ত পলি ক'দিন মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
দুপুর বেলায় ফ‍্যানের সঙ্গে শাড়িটা লাগিয়ে জানালা
দিয়ে শহরটা শেষবারের মত দেখে নেয়।এমন সময়ে দরজায় ধাক্কা।মা বললো,"অতনু এসেছে,
দরজা খোল।" সে মূহুর্তেই দরজা খোলে।
অতনু হতবাক।
অতনু বলে,"লকডাউনে ব‍্যবসা মন্দা, তাই চিন্তায় বোধহয় বাবার স্ট্রোক হয়েছিল।খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।এখন বাবা ভালো হয়ে বাড়ি এসেছে।
বিশ্বাস করো, একদম যোগাযোগ করতে পারিনি।
কিন্তু এই সেবা ভুলটা তুমি করে ফেললে কি হতো?"
পলি হাঁউমাঁউ করে কেঁদে বলে,"সত্যি বোকামি হতো।"





    আমি আত্মহত্যা করব
                                     --গৌতম দাস।

বর্বরতার মায়াজালে বিষাক্ত মন্ত্র ঢুকল
মনের গহিনে।
নিজেকে একা মনে হয় প্রিয়া তোমার বিহনে।
তব সুধাময় আলতো স্পর্শের স্মৃতি আজ জীবন্ত।
শোকের জলে ডুবুরি সেজে তোমায় খোঁজা একান্তই ভ্রান্ত।
বয়ঃসন্ধিতে নেশার জলে নিজেকে হারিয়েছি।
ভরা যৌবনে পরিপূর্ণ শোকে রেল লাইনে মাথা রেখেছি।
এই ধাপেও ব্যর্থ  হলাম শুভাকাঙ্ক্ষীর চোখে।
সমাজ বলে কুলাঙ্গার, কাপুরুষ ,নিষ্কর্মারা নিজেকে নিজে হারায়।
ছোট বাচ্চারাও শুনে মুখ ফিরিয়ে নেয় ,কেঁদে বুক বাসায়।

মানসিক অবসাদের তরে আত্মহত্যা করতে চাই।
যদিও এটা বড় মহাপাপ এর নেই কোন মাফ।
মা বলে সব সমস্যার সমাধান মৃত্যুতে নয়।
অন্যায়,শোক,হতাশাকে কেন কর ভয়?
সমস্যাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হয়।
চন্দ্র,সূর্য ,পৃথিবী থমকে দাঁড়ায় এই শোকেতে।
কী সুখ পাবে তুমি আত্মহত্যা করাতে?
কেন বার বার বল আমি আত্মহত্যা করব?
             
                                 


পথ
--চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

খাতাগুলো ছিঁড়লেও
অগোচরে থেকে যাবে একশোভাগ হিসেব

তোমার থেকেই অন্যতুমি
মনে রেখো
 সুন্দর সকালের উল্টোপিঠে দুঃখ-রাত

তর্জনী যতো উঠবে
বৃদ্ধাঙ্গুলি তত কাছে

ব্যক্তি এক। পথ অগাধ
বেছে নেওয়া তোমার কর্তব্য





সঞ্চয়ী!
সমীরণ বেরা।

এখন সব কিছুই থেমে গেছে
শুধু কয়েকটি ব্যতিরেক
আহ্নিকগতি কিম্বা শ্বাস প্রশ্বাসের মত ।
কবিতাও কি থেমে গেল?
কবিতা তো থামতে জানে না
থমকে গেছে ; বিস্ময়ে নয়, সঙ্কটে নয়
আতঙ্কে নয়; অকস্মাত্ বিপন্নতায়
কলম ধরতে গেলেও তো হৃদয় লাগে!

হৃদয়ে লেগেছে অন্ধকারের দাপট
এক লহমায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে
এত মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যেত!
মানুষও পরিযায়ী হয়?
তিলোত্তমা তবে তুমি কেন জলসাঘর সাজিয়ে রাখতে?
নেশার মত চোখে এখন বিষম ঘোর
না জানি মেঘের বুকে কেমন বজ্রপাত !
আমি শুধু দেখছি শুনছি নির্বাক শ্রোতার মত,
সঞ্চিত গচ্ছিত রাখছি গোপন ইস্তেহারের ইতিকথা।
ওদের ঘাম ওদের শ্রমেই বেড়ে উঠছে
চোরা গোপ্তা রাস্তা হেঁটে খুনী প্রত্যয়
তুমি কি দেখেছো তাকে?

বহু শতাব্দীর পর শতাব্দী সে ফিরে ফিরে আসে
গেরিলা যুদ্ধ উলগুলান অন্য রক্তের স্বাদ
গলির মুখে মেধাবী ছাত্র ছুরি উঁচিয়ে
লাশের পাহাড় পুঁজিপতির অনিশ্চল হাতের মত
আমি তাই শুধু গোপনে সঞ্চয় রাখছি দৃশ্যপট
আমার ক্যানভাসে একদিন তুলির আঁচড় পড়বেই।
তোমরা এখন শুধু টিকে থাকো; টিকে থাকাই আসল লড়াই,
আমি সঞ্চয় করে রাখছি বিষ মন্ত্র
একদিন ঠিক ঢেলে দেব।
আমার সারা শরীরে চেতনায় এখন বিষ
সঞ্চিত বিষে সঞ্চারিত আমার আলো বাতাস
আমি সঞ্চয়ী! একদিন ঠিক সব সঞ্চয়
 বিলিয়ে দেব সর্বহারার মত
তাই আমার ভয় কী!






                     . মিলন
                 রাজকুমার ঘোষ

গত একবছরে অনেককিছু পাল্টে গেছে। জ্যাঠতুতো দাদা বিট্টুর সাথে সেন্টুর সম্পর্ক ভীষণ ভালো। একসাথে দুজনের বেড়ে ওঠা, খেলাধুলা, স্কুলে যাওয়া সব কিছু। যাকে বলে হরিহর আত্মা। বিট্টু সেন্টুর থেকে মাত্র একবছরের বড়। দুজনে একই ক্লাসে পড়ে। তাও সেন্টু বিট্টুকে দাদা বলে ডাকে। গতবছর শীতের সময় একসাথে পৌষমেলা গিয়ে দারুণ আনন্দ করেছিলো। তারপর বাড়িতে এসে পিঠে পাব্বনে দুজনে কম্পিটিশন করে পিঠে খাওয়া, আজ সবই যেন ফিকে হয়ে গেছে ওর বা বিট্টুর কাছে। কারণ হল ওদের বাবা-জ্যাঠার লাঠি-ঝ্যাটা সম্পর্ক। সম্পত্তির ভাগ বাটোয়াড়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল অশান্তি। এই একবছরে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়েছে যেন দুই পরিবারের মধ্যে। পাশাপাশি ঘর অথচ খবর নিতে পারে না বা যেতে পারেনা একে অপরের ঘরে।  সেন্টু খুব চিন্তিত বিট্টুর সাথে কিভাবে এই বিশেষ দিনগুলোতে আনন্দ করবে। ওরা এখন বাড়ির বাইরে দেখা করে, কথা বলে। কিন্তু বাড়িতে এলেই যেন কেউ কাউকে চেনে না এমনই বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে ওদের বাড়ির তরফ থেকে। তার ওপর বিট্টুরও গত কদিন ধরে দেখা নেই। ও বন্ধু মারফত খবর নিয়েছে বিট্টুর নাকি ভীষণ জ্বর। এবারের শীতেও যথারীতি পৌষের মেলা চলে এসেছে। পিঠে পাব্বন খুবই কাছে। বলতে গেলে আর দুদিন পরেই এই কাঙ্খিত দিনগুলো ওদের সামনে চলে আসবে। সব বন্ধুরা গিয়ে মজা করবে, কিন্তু সেন্টু ওর দাদা বিট্টুকে ছাড়া কিভাবে কাটাবে? ও আর ভাবতে পারে না। ভীষন অসহায় বোধ করে। বিট্টুকেও সে বলতে পারে না তার মনের কথা। না... সেন্টুর আর ভাবার সময় নেই, পৌষ মেলার দিন ও চলে এল বিট্টুদাদার বাড়ি... “বিট্টু দাদা, কোথায় তুই ? আজ আমরা একসাথে পৌষমেলায় যাবো, তারপর একসাথে পিঠে খাবো তো নাকি”। ওর হঠাৎ আগমনে ওর জ্যেঠু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলো। ওর সাহস দেখে জ্যেঠু বড় বড় চোখ করে ওর কাছে এল, তারপর চিৎকার করে ডাকলো ওর বাবাকে, ‘এই কমল, সাহস দেখ তোর ব্যাটার... আজ পিঠে পার্বনে সেন্টু এসে কি কান্ড করছে দেখে যা... ওর বুকের পাটা দেখেছিস...” সেন্টুর বাবা কমল এবং তার স্ত্রী ছুটে চলে এল। হাতে একটা লাঠি নিয়ে কমল সেন্টুকে মারতে উদ্যত হবে কি! জ্যেঠু চিৎকার করে বলল, ‘এই কমল একদম মারবি না’ তারপর সেন্টুকে বুকে জড়িয়ে ধরে, “চরম শিক্ষে দিয়েছিস ব্যাটা”, এবার তার ভাইকে হেড়েগলায় বললো, “কমল, দেখ তোর ব্যাটা আমাদের মেলানোর জন্য এইরকম দুঃসাহসিক কাজ করেছে, তোর মত নয় একদম। তুই তোর দাদার কাছে আসতে পারিসনি? কি হবে এই বিষয় সম্পত্তি... এদের থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। আমার চোখ খুলে দিয়েছে”। অন্যদিকে বিট্টুও চলে এসেছে সেন্টুর কাছে এবং ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। সেন্টু বললো,’চল দাদা, আমরা যাই পৌষমেলায়, কিন্তু তোর শরীর খারাপ... কি করে যাবি রে?” বিট্টূ জানালো, “তোকে দেখে আমার শরীর ঠিক হয়ে গেছে। আজ আমরা খুব আনন্দ করবো, তারপর রাত্রে এসে আমাদের পিঠে খাওয়া নিয়ে কম্পিটিশন... ঠিক আছে”।  দুই ভাইয়ের এই মিলনে বাড়ির বড়োদের চোখের জলে ভিজিয়ে দিলো দুই পরিবারের তিক্ততার সম্পর্ক।






একার কল্পনা
প্রিয়া ঘোষ

 প্রিয় ,তেপান্তর হারাবে ?
নতুন করে পথ গুলো আমায় দেখাবে
চোখে চোখে হৃদয়ের মেল বন্ধন ঘটাবে ।
যদি কখন বড্ড বিরক্ত করি
একটিবার বুকে নিয়ে নিমেষে শান্ত করবে?
আচ্ছা খুব দামী উপহার না হোক
অফিস ফেরা ক্লান্ত মানুষটিকে দুচোখ ভরে দেখার অধিকার দেবে ?
আমার এই এলোমেলো জীবন তোমার পদবীর ছোঁয়ায় সাঁজাবে?
কথা দেবে খুব গোপনে?
এভাবে চলতে চলতে শরীর যখন ছাড়বে আমার সাথ -
তোমার বাড়ির কাছে এক নদীর ধারে ছেড়ে আসবে সেই আগুনের কাছে ।
শেষ দেখায় ছাই  যেন তোমায় আমার অস্তিত্ব জানান দেবে ।
তুমি হয়তো আসবে বাড়ি ফিরে-
কিন্তু আমি যেন পিছু ছাড়বো না ।
হাওয়ার সাথে ভেসে এসে কানে কানে বলব -  প্রিয় তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি





না পাওয়ার গল্প
জয় জ্যোতির্ময়


পাহাড়ের বুকে পাথরের কান্না ঝর্ণা,
ভুলে গেছে তার আদি কথা।

ঝর্ণার সাথে নদীর ইদানীং গলায় গলায় ভাব
ঝর্ণা একদিন মুখ ফুটে নদীকে বললে,
আমি তোমাকে ভালোবাসি নদী,
যতটা ভালোবাসলে ভুলে থাকা দায়;
আমি তোমাতে মিশে বহমান থাকতে চাই।

নদী কলকল শব্দ থামিয়ে বললে,
আমি নদী তুমি ঝর্ণা;
তাই বলে কি তোমাকে ভালোবাসা যায়?
তোমার গণ্ডি সীমাবদ্ধ; আমি প্রবাহমান-
তুমি বরং পাহাড়কে ভালোবাসো
তোমার জন্মে পাহাড়ের অবদান।

কথাগুলো শুনে ঝর্ণা কান্না করলেও
টের পায়নি নদী।

আষাঢ়ের বর্ষায় জলে থৈ থৈ করছে নদী
ভরা যৌবনে আনন্দে-উৎফুল্লে দিশেহারা নদী।
দক্ষিণাবাতাসে হাসিমুখে
সাগরের কাছে গিয়ে নদী বললে,
তোমার বুকেই তো আমার চিরসুখ-
আমার জন্যই যেন সৃষ্টি হয়েছে তোমার বুক।

কথাগুলো শুনে সাগর বললে,
তোমার মতো কত নদী আমাতে মিশেছে।
আষাঢ়-শ্রাবণে প্রেম নিবেদন করে
তাই বলে কি নদীকে ভালোবাসা সাগরের চলে?

নদীর কান্না হারিয়ে যায় সাগরের ঢেউয়ে।

মনখারাপেও হাসিমুখে ঝর্ণার কাছে গিয়ে বলে,
আমাকে ক্ষমা করো; কষ্ট দিয়েছিলাম সেদিনে,
সত্যিকারের ভালোবাসা ক'জনে বা চিনে!

     




জীবনের স্বপ্ন
তাপস কুমার বেরা

আপদ মস্তক
বিষাক্ত ছোবল
সাথে নিয়ে
অহরহ
নিত্য দিনের
হাসি কান্নার
জীবনালেখ্য
চলে পাঠ |

রিক্ত হাতে
জীবনের মাঝে
দন্ডায়মান |
অতীতে
বুনে চলা
ভাবী সময়ের
সোনালী
স্বপ্নগুলো
রাতের অন্ধকার
ছিঁড়ে
জাগ্রত
দিনের আলোয়
খান খান |

তবু
জীবনের
অবশিষ্ট
দিনগুলো
অলঙ্ঘনীয়
প্রাচীর তুলে
সুরক্ষিত
করার
স্বপ্ন দেখা
শুরু হোক |





উড়ান্ত ফাল্গুনি
   এম ডি আবুহোসেন সেখ

হাওয়াই হাওয়াই দ‍্যায় দলিয়ে মনুষ্যত্বের শরীরটাকে।
শান্ত স্নিগ্ধ বাতাস বইছে আমাদের পাড়াগাঁয়।
ঝরিয়া পুষ্পতি হচ্ছে নতুন গাছের পাতা।
সেই সুন্দরজীনি দেখিয়া মুগ্ধ মানুষেরা।

উড়ান্ত করিয়া দ‍্যায় মানুষের মন।
যেন পুরান কলঙ্গ শেষ করে,
নতুন আলম্ভের অনুভূতি জাগায়।

ফাল্গুনি মাস মনুষ্যত্বের কাছে অবিনশ্বর হয়ে যায়।
মানুষের মাঝে হয়ে উঠুক গাছেরী মতো।
   
 
             


           আদিবাসী জীবন যাত্রা
              আব্দুল রাহাজ

ওরা কোথাও যেন আজ অবহেলিত ক্ষুধার্ত, অসহায় প্রান্তিক প্রকৃতির সভ্য সমাজের সঙ্গে নতুন বিশ্বের মধ্যে এখনো তৈরি করতে পারেনি। পারবেই বা কি করে আধপেটা খাওয়া প্রতিনিয়ত ও জীবিকা উপার্জনের জন্য কঠিন সংগ্রাম করে বেশি আছে আদিবাসী মানুষেরা। কত কষ্ট করে এই সমাজ তথা প্রকৃতি তথা বাংলা মা তথা সুন্দর পৃথিবীর কোলে বসবাস করছে ওরা। সেই আদিবাসী মানুষেরা ছোট্ট ছেলে মেয়েদের নিয়ে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করে খাবার জোটে আধপেটা অত্যন্ত কষ্টে জীবিকা উপার্জন করে সংসার চালান এইসব আদিবাসী মানুষগুলো। কিন্তু তারা প্রান্তিক হলেও সরল সাদাসিধে একে অপরের সাহায্যে রক্ষক বিপদের দিনে বন্ধু। সমাজের চোখে তারা যেন কোথাকার কি কেউ দাম ই দেয়না সাহায্যে তো দূরের কথা। এই আদিবাসী মানুষগুলোর প্রতিভা থাকলেও তাদের কেউ পাত্তা দেয় না। একবার স্বচক্ষে আরিফ ও শাহাদাত দেখেছিল আদিবাসী মানুষের জীবনযাত্রা বাঁচার রসদ কিভাবে বাঁচা যায় প্রতিনিয়ত কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আর ছোট্ট ছেলে মেয়েরা খেতে না পেয়ে ও পুষ্টির অভাবে দিনের-পর-দিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে উঠেছে ওরা। শরিফদের ও শাহাদাতের গ্রাম থেকে তিন কিলো মিটার দূরে বেশ কয়েকটা গ্রাম সবকটি আদিবাসী ও অধুষ্যিত প্রান্তিক মানুষের বসবাস। সেখানেই বিভিন্ন আদিবাসী পুরো জাতির বসবাস মুন্ডা সাঁওতাল ওরাংওটাং প্রভৃতি। তাদের জীবিকা উৎস ছিল পাশে ইটভাটা বিদ্যাধরী নদীর মাছ ধরা আবার কারন ইঁদুর মৌমাছি চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা এসব কাজ করে প্রান্তিক আদিবাসীদের জীবনযাত্রা চলত। কোনরকম সংসার চালাতে ওরা বাড়ির বাচ্চারা বাদেই সকল সদস্য শীত-গ্রীস্ম ও বর্ষা এক করে কাজ করে অন্ন তুলে দিতেন তাদের মুখে সেটা আবার দিন আনা দিন খায় ঠিকমতো ভাতের স্বাদ নিতে পারে না এইসব মানুষগুলো। ঠিকমতো পোশাক-আশাক পর্যাপ্ত পানীয় জল মিললেও কোথাও অপুষ্টির শিকার হতো ওরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো। এখন অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষা পায় ওরা আবার খুব কষ্ট সহ্য করে তাদের এই শিক্ষাটা গ্রহণ করতে হয়। মানুষ গুলোর দিকে তাকালে সত্যিই যেন মনটা কেঁদে ওঠে। ছোট্ট ছেলে মেয়েরা সারা দিন খেলা করে কাটাতো তাদের অবস্থা দেখলে সত্যিই যেন মায়া লাগে।গায়ে আছে ধুলো কাদামাখা শুধু পরনে একটা প্যান্ট জামা থাকলেও অপরিচ্ছন্ন এভাবে দিনের পর দিন ওরা খেলা করে বেড়ায় বাবা মা ছোটে দুবেলা দু'মুঠো তাদের মুখে তুলে দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। এরকম অবস্থায় যখন কোন অনুষ্ঠান কিংবা মেলা বসলে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে সভ্য মানুষের দিকে কখন তারা তাদের সাহায্য করবে এরপর যদি তা কখনো পায় তাদের আনন্দের আর সীমা থাকে না। এইভাবে ওরা বহুকষ্টে ক্ষুধায় যন্ত্রণায় ভোগ করে বড় হয়ে ওঠে তারপরই ওই ছোট বয়সে কাজে যোগ দেওয়া একটু ভালো করে পেট ভরে খাবার খাওয়ার জন্যকিন্তু সে আশায় কোথাও যেন ঘাটতি থেকে চাই বহুকাল ধরেই। ওরা উৎসব আসলে তাঁদের
 সাধ্যমতো করে মাতে নিজেদের মতো করে পালন করে। আহা কি কষ্ট কি কঠিন পরিশ্রম মনে হয় বিধাতা যেন জন্মের পর থেকে এরকম ভাবেই তাদের পাঠিয়েছে। একবার এক বিকাল বেলায় শাহাদাত শরীফ ঘুরতে ঘুরতে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকলো সাদা দল আজকে আমরা এদের সঙ্গে কথাবার্তা বা আলাপ করি তখন পেছন থেকে বেশ কয়েক ছোট্ট ছেলে মেয়ে হাত ধরে ডেকে বলল দাদা দাদা একটা টাকা দেবে বিস্কুট কিনে খাবো এরকম অবস্থায় শাহাদাত শরীফের মনে মায়া হল তোমরা বিস্কুট খাবে এই বলে তাদের হাতে বিস্কুট কিনে দিলো তখন ছেলে মেয়েদের মুখে সে কি চওড়া হাসি এই হাসি দেখে শাহাদাত শরীফের যেন একটু আনন্দ বোধ হল। তাড়াতাড়ি হাসির মধ্যেই লুকিয়ে আছে কষ্ট ক্ষুধার যন্ত্রণা এবার শরীফ একটা গ্রামে ভিতরে ঢুকলো কি করুন অবস্থা শাহাদাত আর শরীফকে দেখে সবাই কাছে চলে এলো তারা মনে করলো হয়তো আমাদের সাহায্য করবে তখন শরীফ ও শাহাদাত বললো তোমাদের সাথে একটু কথা বলবো তখন সন্ধ্যা হতে বেশ দেরি আস্তে আস্তে ওরা ভিড়ের জটলা কাটতে দেখলো তারপর কয়েক জন ছেলেমেয়ের কাছ থেকে শুনলো করূন অবস্থার কথা। শরীফের চোখ দিয়ে জল টপ টপ করে পড়তে লাগলো তাদের কথা শুনে শাহাদাত বিষন্ন মনে বসে রইলো হঠাৎ একজন বুড়িমা  বললো বাবারা তোমরা বাড়ি যাবেনা কালো অন্ধকার যে নেমে এসেছে হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে ওরা দুজন ভাবলো কী করূন অবস্থার মধ্য দিয়ে কাটছে ওদের জীবন দেখলেও যেন কোথাও মায়া লাগে এই বলে দুজন যে যার বাড়ি চলে গেল। পরের দিন আবার বিকাল বেলায় সেই অধুষ্যিত অঞ্চল বরাবর একটি নদী ছিল বিদ্যাধরী তার বাঁধের উপর বসে গল্প করছে শাহাদাত শরীফ তারপর দেখল পাশে একটা ছোট্ট বোন থেকে একদল মহিলা কাঠ কেটে মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সারিবদ্ধ পাড় ধরে হেঁটে যাচ্ছে তখন শাহাদাত বলল দেখ দেখ দৃশ্যটা পেটের জ্বালায় দুবেলা দুমুঠো ভাতের আশায় গভীর বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছে সত্যিই তাদের জীবনযাত্রা কি অদ্ভুত ভাবেই গড়ে উঠেছে। তারপর তারা হাঁটতে হাঁটতে দেখল একটা পরিবার অর্থাৎ একটা বাড়ির সমস্ত সদস্যরা ইটভাটায় কাজ করছে সবশেষে মালিকের দেওয়া টাকা নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে খাবারের জোগার করে আশায় বুক বাঁধে তারা আজ ভাত খাবে পেট ভরে এই দেখে শাহাদাত বলল আজকে  ওদের কী আনন্দের দিন এরকম যদি প্রত্যেকদিন ভালো করে কাটতো তাহলে এই সমাজের চোখে তারা উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকতেন কিন্তু তা না চিরদিনের পথ ধরে এখনো অসহায়তাকে আঁকড়ে ধরে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়া কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে সবার মাঝে। সত্যিই এই মানুষগুলোর জীবনযাত্রা অদ্ভুত ভাবাই। সূর্যের নীল দিগন্ত রাশির সাথে ওদের জীবনযাত্রা ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিলেও কোথাও যেন ঘাটতি থেকে যায় ঘাটতি থেকে যায়।






ঘন্টা
শুভার্থী সাহা

সারাদিন ঝুলে থাকে দুলে যায় ঘন্টা
মন্দিরে গির্জায় বাজে এই ঘন্টা ।
এছাড়াও কত কাজ আছে তার দিন রাত
স্টেশনে ট্রেন এলেই, তার আবার পরে ডাক।
কত ট্রেন আসে যায়, বাজ সে ঠং ঠং
ফায়ার ব্রিগেডেও, বাজো তুমি টং টং ।
মালগাড়ি - টয়ট্রেন নয় শুধু সীমা তার
কুলফির গাড়িতেও , দেখা যায় তাকে আর ;
দেওয়ালের ঘড়ি টায় অ্যালার্ম এর সঙ্গে
প্রত্যেক ঘন্টায় বাজে সে নিয়মে ।
স্কুল কলেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্রে -
তুমি ছাড়া ঘন্টা জীবন অচল যে ,
এছাড়াও ঘন্টা পুরুতের আঙুলে
কাঁচ কলা উঁচিয়ে ঘন্টা বাজায় সে ,
সারাক্ষণ বেজে যায় বাড়িতে ও অফিসে
কাওকে ডাকতে গেলে দেওয়ালে ও টেবিলে।
কখনো বা হাতুড়ির বারি খায় সমানে
আজীবন বেজে যায় সে আপন খেয়ালে।
কিন্তু আঘাত ছাড়া ঘন্টা না বাজে ভাই
শত আঘাত সয়ে নিজে, সচেতন করে যায়।






অনুকবিতা:      বৃষ্টি যেন ঝড়ে
                    বাপ্পা দাস

চলো যাই পঙ্খিরাজে চড়ে ,
রঙ বেরঙের ডানা মেলে পাখি যেথায় উড়ে ।
মেঘগুলোকে আসবো বলে,বৃষ্টি যেন ঝড়ে ।
শখ হয়েছে ভিজবো আমি তোমার দুহাত ধরে ।







জেনারেশন গ্যাপ্
বাপন দেব লাড়ু

'জিগ্ জ্যাগ্' পথে
সময়ের হাইজাম্প্
মিটার ফিঁতেতে মাপা যায় না
জেনারেশন গ্যাপ।
নতুন কত মুখ কতই খোলামেলা ;
তবুও গোপন,
তবুও নিষিদ্ধ
হাইব্রিডের আয়নায়
আজ বিশ্বায়নের মুখ।






                কাশী ভ্রমণ-
               নির্মাল্য পান্ডে

১১) কি! তীর্থ ভ্রমণে অনেক তো ঘুরলে, এবার তব এচল যাই কাশী ধামে, রথদেখা ও ক লা বেচা দুইই হবে! কাশী বা বারাণসী যাওয়া খুব সহজ। উত্তর প্রদেশের প্রায় মধ্যভাগে অবস্থিত এবং রেল, সড়ক ও ফ্লাইটের ব্যবস্থা আছে। এটা তো বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর ভোট কেন্দ্র, কাজেই এই ঐতিহাসিক স্থান নে দেখলে তো জীবনি বৃথা। বাঙ্গালীরা তো কাশী দর্শন করেন নি-তা শোনা যায় না। ক ল কাতা থেকে মাত্র ১২ ঘণ্টার জার্নি রেলে। চল যাই কাশী-
কাশীধামে বিশ্বেশ্বর- এবার আমরা চলে এসেছি উত্তর প্রদেশের কাশী বা বারাণসীতে, যেখানে আছেন দ্বাদশ জ্যোতিঃরলিঙ্গের অন্যতম শিবস্থান। এখানে শুধু বাবা বিশ্বনাথ আছেন তা নয়, আছেন মা অন্নপূর্ণাসহ বহু দেবদেবী। এটি বহু চর্চিত দেবস্থান, অবশ্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে, কারণ এই হিন্দুদের আদিকাল থেকে এই স্থানটি পীঠস্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল, তাই বারংবার মুসলমানদের দ্বারা আক্রন্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা এই পরিক্রমায় কাশীর অন্যতম তীর্থ  ভগবান শিববাবাকে বিশ্বেশ্বররূপে যেমন দেখব, তেমনি এই দ্বাদশ জ্যোতিঃরলিঙ্গের অবস্থান, পৌরাণিক কাহিনী ও ইতিহাসের দিকে নজর দেব। তবে খুব অল্প কথায়—
অবস্থান—ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে বা কাশীতে গঙ্গার তীরে অবস্থিত। সব দিক থেকে রেল ও সড়ক পথের যোগাযোগ আছে। কলকাতা থেকে ১২ ঘণ্টা মত সময় লাগে ট্রেনে এবং অন্যন্য স্থানের সঙ্গেও অনুরূপ যোগাযোগ আছে। প্রচুর ধর্মশালা, হোটেল, ভারতসেবাশ্রমে থাকারও ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে কাশী বা বেণারস জনবহুল, ব্যবসাকেন্দ্রিক, ধর্মীয়, সংস্ক্রিতি, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতন স্থান হিসেবে চিহ্নিত। এখনে প্রাচীনকাল থেকে রাজামহারাজার ধর্মের খিদে মেটাতে এসেছেন, পবিত্র গঙ্গার ঘাটে স্নান করেছেন, ঘাট বাঁধিয়েছেন, মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন-তাই, তো আজ কাশীতে ১০০টির বেশী বাঁধন ঘাট ও তাঁদের নামে ঘাট যেমন, হরিশ্চন্দ্র ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট, রাজেন্দ্র, অহল্যাবাই, প্রয়াগ, দশাশ্বমেধ ঘাট—প্রভৃতি।
 মন্দির ও বিগ্রহ প্রসঙ্গে—বিভিন্ন পুঁথি ঘেঁটে সঠিক কখন ও কেন ভগবান শিববাবা জ্যোতিঃরলিঙ্গ রূপে এই স্থানে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তার হদিশ আমি পাই নি তবে, এই স্থানের কথা- ‘স্কন্ধপুরাণে-কাশীধামের নাম’- উল্লেখ আছে। একাদশ শতাব্দীতে রাজা হরিশ্চন্দ্র বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের পুননির্মাণ করেছিলেন এবং ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি মন্দির ধ্বংস করে লুটপাঠ চালায়। পুনরায় মন্দির সংস্কারের পর মহম্মদ কুতুবউদ্দিন আইবক ও ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক আবার ধ্বংস করেন। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবরের রাজদরবারের রাজস্ব মন্ত্রী ‘টোডরমল’ পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের সংস্কার ও পুনঃ নির্মাণ করেন.। ১৬৬৯ সালে সম্রাট ঔরাঙ্গজেব আবার এই মন্দির ধ্বংস করে জ্ঞানবাপি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও বিদ্যমান। এই মন্দিরের একপাশে উক্ত মসজিদ বিদ্যমান। ১৭৮০ সালে ইন্দোরের রাণী অহল্যাবাই মসজিদের পাশে আবার অনুরূপ মন্দির নির্মাণ করে পুজোর ব্যবস্থা করেন। আবার, ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাব কেশরী মহারাজা রণজিৎ সিংহ মন্দিরের চূড়া ১০০০ কেজি সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।তাই, এই জ্যোতিঃরলিঙ্গের    বিগ্রহের উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার ও পরিধি ৯০ সেন্টিমিটার যা, একটি রূপোর পাত্রে রাখা আছে, এটা সব তীর্থ যাত্রিরা দেখে থাকবেন। মন্দিরের মধ্যে জ্ঞানব্যাপী নামে একটি কুয়ো আছে, কথিত, যখন মুসলমান আগ্রাসনে মন্দির ও বিগ্রহ ধ্বংসর মুখে, তখন প্রধান পুরোহিত আসল বিগ্রহ নিয়ে ঐ ক্যুয়োতে ঝাঁপ দেন। তাই এটাও পবিত্র ও দর্শনীয়।
 গুরুত্বঃ—এই প্রাচীন বিগ্রহ ও মন্দিরের গুরুত্ব অপরিসীম। পুরান, বেদ বেদান্ত, ইতিহাস খ্যাত এই স্থানে কে না এসেছেন, থেকেছেন ও এখনও থাকছেন। আদিশঙ্করাচার্জ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, ত্রৈলঙ্গস্বামী, তুকিরাম, স্বমীবিবেকান ন্দ, প্রমুখ আরও অনেক অনেক আধ্যাত্মিক জগতের দিকপালের পদধূলি ধন্য এই বারাণসী বা কাশী। তাই তো বিদেশীদের বার বার টেনে এনেছে লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে কৃতিত্ব স্থাপন করতে! তাছাড়া, এখানে আছে শক্তিপীঠ। সতীমায়ের দেহত্যাগের পর যখন মহাদেব উন্মত্তের মত শবদেহ নিয়ে নৃত্য আরম্ভ করেন, তখন পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য শ্রীবিস্নু সুদর্শনচক্র দিয়ে ঐ শবদেহ বিচ্ছিন করতে থাকলে মায়ের দেহাংশ বিভিন্ন স্থানে পড়ে ও সেই সব স্থানে সতীপীঠ তৈরী হয়। কাশীতে মায়ের চোখের মণি পড়ে ও মণিকর্ণিকা ঘাটের সৃষ্টি হয়। কথিত, এই ঘাটে শবদাহ করলে ‘আত্মার মুক্তি’ লাভ ঘটে। এখানেই আছে বিখ্যাত অন্নপূর্ণা দেবী ও অন্নকূট সেবার স্থান। কাশীতে কেউ অভুক্ত থাকেন না- সেটা মা অন্নপূর্ণা মায়ের দৌলতে।  গোটা কাশী মন্দিরময়- পুণ্য দেবস্থান, এর গুরুত্ব অপরিসীম।
 এই বিষয়ে আর বেশী বলব না। সকলেই প্রায় কাশী দর্শন করেছেন, নিয়েছেন বাবা বিশ্বেশ্বরের ও মায়ের আশীর্বাদ। বাঙ্গালী বিধবারা পূর্বে বলতেন,-‘ বাবা, আমায় কাশী পাঠীয়ে দে, সেখানেই বাবা বিশ্বনাথের আশ্রয়ে থাকব—‘। কাশীর ঘাট ও মন্দির নিয়ে ‘ছায়াছবি, বিশেষত সত্যজিত রায়ের ছবি- ফেলুদা’ নির্মিত হয়েছে, কাজেই এর কদর ও আদর কতটা বুঝে নাও তোমরা- চল এবার যাই শেষ ধাম- কেদার--।

   আচ্ছা! এই সব গল্প যে বলছেন, এর সত্যতার কি প্রমাণ আছে? বলচ্ছেন, আত্মা অবিনশ্বর, তবে তার মুক্তির জন্য এত আকুতি কেন? তার জন্ম তো অনিবার্য!
-হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই, নেই কোন সঠিক প্রমাণ, সবই প্রাচীনের শ্রুতি থেকে স্মৃতি, তার থেকে প্রাপ্ত লিপি থেকেই এর উদ্ভব। কথাতে আছে না! ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’--।






পাহাড় ও সোনার নদী
 - অগ্নিমিত্র

  পাহাড়, জঙ্গল, আপন মনে বয়ে চলা নদী, এই নিয়েই হলো ঘাটশিলা । বছর কুড়ি আগে গিয়েছিলাম সপরিবারে ।..
  প্রকৃতি একে সাজিয়েছে আপন খেয়ালে! ফুলডুংরি পাহাড়ে অমর সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি দেখা হলো। দেখলাম ক্ষীণতোয়া সুবর্ণরেখা নদী; আজও নাকি এর জল ও  মাটিতে সোনা পাওয়া যায়! সেই আশাতেই হয়তো মহিলা ও শিশুরা বড় ছাঁকনি নিয়ে সমানে জল ছেঁকে চলেছে !
 ঘাটশিলা দেখে ভাবি, কাছেই তো বাঙালি অধ্যুষিত জামশেদপুর; যাবো না নাকি ?
  রাস্তায় পড়বে বিরাটকায় ডিমনা লেক ও ড্যাম। খুব ভালো লাগবে ।
  জামশেদপুর সাজানো গোছানো ব্যস্ত আধুনিক শহর। ঘাটশিলা থেকে ঘন্টা দেড়েক লাগলো বাসে। জুবিলি পার্কে গিয়ে বেশ লাগলো ।...সুন্দর পার্ক, মাঝে মাঝে বাগান। অনুপম লাগলো। সন্ধ্যায় বাইরে থেকেই দেখলাম বিখ্যাত কিনান স্টেডিয়াম । উঁকি দিয়ে দেখা হলো মখমলি ঘাসে মোড়া স্টেডিয়াম । ক্রিকেট ম্যাচ হয় এখানে।
 আবার ফেরা ঘাটশিলা! পাহাড়টা যেন সবুজে মাখোমাখো । ..দুদিন জিরিয়ে বুঝলাম, বিভূতিভূষণ কেন প্রকৃতিপ্রেমিক হয়েছিলেন!
 বেশি প্রেম নাকি ভালো নয়। তাই আবার কলকাতার পথ ধরা।
 এতই মন টেনেছিল ঘাটশিলা ও সুবর্ণরেখা, যে আরেকবার যাবো ভাবছি ।।





 পারুল ( ৭ )
বদরুদ্দোজা শেখু


পারুল মাঝি ভর্তি  হলো ঝাড়গ্রাম শহরে
এগারো ক্লাশে ,লোকজন আসে তারে দেখার তরে ,
সেখানে আলাপ  সহপাঠী যোহান টুডুর লগে
যোহান  আছে সাঁতাল বটে খ্রীস্টান বরগে,
 আলাপ থেকে অন্তরঙ্গ  ভালো লাগার মন
ধীরে ধীরে তৈরী হলো স্বপ্ন এক ভুবন ,
জানলো সে বঞ্চনার কথা জঙ্গলমহল জুড়ে
জানলো আমলাশোলের কথা না-খেতে পেয়ে মরে
জীর্ণ শীর্ণ অভুক্ত মানুষ বছর বছর মাস
সাহায্য নাই চিকিৎসা নাই, আছে দলদাস,
করুণ কাহিনীতে তারা দুঃখী প্রতিবাদী---
গোপন ডেরায় নাম  লেখালো, হলো কি মাওবাদী ?


তখন থেকে চলাফেরায় শুরু হলো ধোঁয়াসা----
কখন্ কোথায় যায় বলে না, কেবল ক্রূর হাসা;
আর ভালবাসায় মগ্ন থাকে  দুজন আদিবাসী
ছাত্রছাত্রী,  রাতবিরাত্রি সহচর পাশাপাশি
দলের কাজে , গোপন সভায়, অস্ত্র প্রশিক্ষণে,
ভাঁটা পড়লো লেখা পড়ায়  অন্য আকর্ষণে,


মাওবাদী স্কোয়াড ছেড়ে বিহা করবে দু'জন
শুরু করবে অন্য জীবন , মনে মনে এক স্বপন
দেখছে তারা, গোপন ডেরার জীবন বড়ো কঠিন--
এমন ক'রে দুঃখ-মোচন হবে না কোনোদিন  ;
তাই দুজনে  সমাজসেবার কাজ করবে ব'লে
ক্রমশঃ তারা ছেদ ঘটালো মাওবাদীদের দলে ।




                    পারুল ( ৮ )

আজ পারুলের গায়ে  হলুদ , কাল পারুলের বিহা
পারুল যাবে শ্বশুরবাড়ি গোর্গাবুরু ডিহা
বেলপাহাড়ি বেলপাহাড়ি বেলপাহাড়ি হাসো,
আমলাশোলের ক'জন ম'লো ? ক'জন ভালো আছো ?
বর সেজেছে যোহান টুডু --- তাগড়া মরদ বটে
তার  মতো কি বর আছে এই জঙ্গলী তল্লোট ?
পারুল যাবে বরের বাড়ি, সঙ্গে মালু কালু
জোয়ান বিটির কপাল  বটে মারাং বুরু দয়ালু,
চিকন কালো মেইয়া মরদ  মেঝেন মাঝি সাঁঝে
রঙবেরঙে নাচছে সবাই কূলপ্রথার সাজে---
লাল পাগড়ি পালক -গোঁজা, গামছা-বাঁধা কটি
গাছ-কোমরে রঙীন শাড়ি, ফুল-খোঁপাতে নটী ;
বহু বিটি নাচছে বেতাল মরদগুলার সাথে
পারুল মাঝি যোহান টুডুর আজকে বিহা রাতে।
হাসছে বুঝি বেলপাহাড়ি ,হাসছে মারাং বুরু
টাঁড়মহলের গাছগাছালি কাঁপছে দুরু দুরু !

 
মধ্যি রাতে গুড়ুম গুড়ুম , ধোঁয়ায় আঁধার দিশা
চারিদিকেই বারুদ পোড়ার গন্ধে ভয়াল নিশা,
মাওবাদীদের হামলা বুঝি ? সূত্র খুঁজি কোথা ?
যোহান পারুল নাম লিখিয়ে ভাঙলো দলের
প্রথা ?


লাশ পড়েছে লাশ পড়েছে , সঙ্গে মালু কালু
ওরাও দোষী ? মাওবাদীরা ভয়ঙ্কর ভয়ালু ?
চালু চুক্তি ভেঙেছে ওরা পারুল যোহান টুডু
তাই কি বাঁচার নাই অধিকার ? যাবেই যাবে মুণ্ডু?
পোড়া মাংসের কটু গন্ধ যাচ্ছে ভেসে দূরে
অপারেশন বিহা-বাড়িকে শোকে দিয়েছে মুড়ে !


আজ পারুলের  বিহ্যার হাসি, আজ পারুলের গঙ্গা,
সঙ্গে যোহান মালু কালু । সঙ্গে কি  তিরঙ্গা ?
এই অবেলায় রঙ ছাড়্ নাই, রাজনীতি তো জমবে
এবার আরো,বলতে পারো দুঃখ কবে কমবে ?

মারাং বুরু,  আজ তো কাঁদো, কাঁদছে বেলপাহাড়ি  !
জঙ্গলমহল আকাশ বাতাস  অন্তরীক্ষ ভারী !
অন্তরীক্ষ ভারী  এবং অন্তরীক্ষ গুমসাম !
কাম দিলো কি মারাং বুরু আল্লা যীশু জয় শ্রীরাম?







রবিবারের পাতা

                  সাক্ষাৎকথায় লুৎফর হাসান
                        প্রশান্ত ভৌমিক

    আমি বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান পাঠক

(লুৎফর হাসান- উপন্যাসিক, ছড়াকার, কবি গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী, সাংবাদিক। বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে যে কয়জন তরুণ নিজ দ্যুতিতে ঝলমল করছেন তাদের একজন তিনি। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। রচনা করেছেন বেশকিছু পাঠকপ্রিয় উপন্যাস। শিশুদের জন্য লেখার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নতুন বছরে। নিউজ জি টোয়েন্টি ফোর ডট কম নামের অনলাইনে কর্মরত আছেন লুৎফর হাসান। জানুয়ারির এক বিকেলে এলিফ্যান্ট রোডে জি সিরিজের অফিসে মুখোমুখি তিনি।)

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনার ছোটবেলার পাঠ্যাভ্যাস সম্পর্কে বলুন। ছোটবেলায় কী পড়েছেন? বাড়িতে পড়ার পরিবেশ কেমন ছিল?

লুৎফর হাসান: ছোটবেলায় পড়ার জায়গাটা যেটা সেটা হচ্ছে যে আমার ছোটবেলাটা অনেক সমৃদ্ধ, বড়বেলার চেয়ে। আমার বড় মামা মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে লিখতেন। উনি নিয়মিত দেশ পত্রিকা আনতেন আমাদের বাড়িতে। আর ছিলো দৈনিক ইত্তেফাক। ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতা বা বাচ্চাদের কচি কাঁচার আসর পড়তাম। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন পূজা সংখ্যা আনতেন। তারপরে সাপ্তাহিক বিচিত্রা ঈদ সংখ্যা আনতেন। সেখানে গল্প, উপন্যাস এগুলা পড়তাম। তারপরে আম্মার একটা লাইব্রেরি ছিলো। ভালো সংগ্রহ ছিলো সেখানে। ওখানে আমরা আসলে বাংলা সাহিত্যের বেসিক যেটা মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়- এসব লেখকের লেখা আমি ছোটবেলায় পড়ে ফেলেছি। তারপরে একটু বড় হলাম যখন- বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই আমার পড়া হয়ে গেলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিশেষ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আমার সবচেয়ে প্রিয়, পছন্দের লেখক। তারপরে পড়লাম রশীদ করিম, মাহমুদুল হক। অর্থ্যাৎ এই যে পাঠ পরিক্রমা, তখন থেকেই আমার অভ্যাস হয়ে গেলো। মানে পারিবারিকভাবেই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠলো আর কি!

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনার শৈশব- কৈশোর সম্পর্কে বলুন। আপনার গ্রাম নবগ্রামের একটি ছবি আমরা আপনার বর্ণনায় দেখতে পাই। সেই গ্রাম সম্পর্কে বলুন।

লুৎফর হাসান : শৈশব- কৈশোর দু'টোই কেটেছে গ্রামে, ঝিনাই নদীর পাড়ে। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার নবগ্রামে। নবগ্রাম হিন্দু ব্রাহ্মণদের গ্রাম ছিলো। এই সময়ে এসে আমাদের গ্রামের বাড়িগুলোর নাম লাহিড়ী বাড়ি, ভাদুড়ি বাড়ি, সান্যাল বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ি, ব্যানার্জি বাড়ি। বাড়িগুলোর নাম এখনও এরকম। ওনারা চলে গিয়েছেন বিক্রি করে। এখন মুসলমানরাই থাকছেন। এমন না যে দেশ বিভাগের সময় ওনারা গিয়েছেন। ওনারা গিয়েছেন আশি- একাশি সালের দিকে। আমার গ্রামটা কেমন জানেন? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাসের মতো। দূরবীনের মধ্যে পড়া যে বর্ণনা যেমন একশ বছর আগের কুয়া, কুয়ার পাড়, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, কালী মন্দির। এমনকি আমাদের গ্রামের যে মসজিদটা আছে সেটাও অনেক পুরনো। প্রায় দুই- তিনশ বছরের পুরনো মসজিদ, ঈদগাহ। গ্রামটিকে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো করে পেঁচিয়ে রেখেছে ঝিনাই নদী। মাঝখানে হচ্ছে নবগ্রাম। আর শেষ সীমানায় হচ্ছে হেলেঞ্চা বিল এবং শ্যাওড়া বিল দুইটা বিল পাশাপাশি। প্রকৃতির সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটি গ্রাম আমার নবগ্রাম। এই গ্রামটা ক্ল্যাসিক গল্প- উপন্যাসে পড়া গ্রামের মতো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প- উপন্যাসের গ্রাম। আমি কখনো দেখেছি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথার বিলটার মতো একটা বিল। আবার কখনো আমি দেখেছি পথের পাঁচালীর মতো গ্রাম। আবার কখনো মনে হয়েছে এটা হাঁসুলী বাঁকের উপকথার সেই গ্রাম। বা হাসান আজিজুল হকের সাবিত্রী উপাখ্যানের মধ্যে যে রাতের বর্ণনা দেয়া নদীর তীরের বা আম বাগানের এরকম আমার মনে হয় আমাদের নবগ্রাম। আমি সবকিছু পেয়েছি এই গ্রাম থেকে। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এই গ্রামে। আমি ছোটবেলায় খুবই দুষ্ট এবং চঞ্চল ছিলাম বলে আমার আব্বা আমাকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়ার কারণ ছিলো আমি খুবই দুরন্ত ছিলাম। আমি সিনেমা হলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমাদের থানা শহরে একটা সিনেমা হল ছিলো। সেই সিনেমা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে সাউন্ড শুনতাম। আমার একটা কালো রঙ-এর রেডিও ছিলো ন্যাশেনাল ব্র‍্যান্ডের। সেটা দিয়ে বিজ্ঞাপন তরঙ্গ শুনতাম। আমাদের গ্রামে কোনো টেলিভিশন ছিলো না সেই সময়ে। নদী সাঁতরিয়ে জামতলী নামে একটা গ্রাম ছিলো, সেই গ্রামে গিয়ে টেলিভিশন দেখে আসতাম। পালিয়ে যেতাম। সব মিলিয়ে শৈশব- কৈশোর একদম বর্ণাঢ্য ছিলো আমার।

প্রশান্ত ভৌমিক: টেলিভিশন ছিলো না বলতে কি ইলেকট্রিসিটির কারণে টেলিভিশন ছিলো না?

লুৎফর হাসান : গ্রামে কিছুই ছিলো না। অন্ধকার একটা গ্রাম। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর গ্রামটা অন্ধকার হয়ে যায়। কিন্তু একসময় এটাই সবচেয়ে আলোকিত গ্রাম ছিলো। কোলকাতা থেকে যাত্রা দল আসতো। ময়মনসিংহ থেকে যাত্রা দল আসতো। প্রতি পুজা- পার্বনে, বিভিন্ন উৎসবে দারুণ দারুণ অনুষ্ঠান হতো আমাদের গ্রামে। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর গ্রামটা অন্ধকার হয়ে যায়। আমার বেড়ে ওঠা সেই অন্ধকার সময়ে। এখন আবার আলোকিত হয়ে গেছে নবগ্রাম। তবে আমি এখন মনে করি যে সেই অন্ধকারের ভেতর একটা উৎসব ছিলো। উজ্জ্বল একটা ব্যাপার ছিলো। না হলে এত সুন্দর শৈশব আমি পেতাম না। এত বিচিত্র! আমি মনে করি বর্ণাঢ্য একটি শৈশব আমি কাটিয়েছি।

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সম্পর্কে বলুন।

লুৎফর হাসান : আমার স্কুল- কলেজ জীবন মাদ্রাসায় কেটেছে। তাই আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, তখন আমার মনে হলো আমি মুক্ত হলাম। আমি মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধীতা করছি না বা ঐরকম কোনো বক্তব্যও দিচ্ছি না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে আমি বড় ধরনের একটা বাধার ভিতরে ছিলাম, যেটা আমার সঙ্গে যায় না। আমি গান- বাজনা করি, অভিনয় করি, কবিতা আবৃত্তি করি, অনেক কিছুই করি যেটা মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যায় না। ফলে মাদ্রাসায় পড়া আমার জন্য খুব কঠিন ব্যাপারই ছিলো। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমার মাদ্রাসার পৃথিবী থেকে প্রস্থান। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর উড়তে লাগলাম। আমি পাখি হয়ে গেলাম। আমি গানের একটা বিরাট পৃথিবী পেয়ে গেলাম। দল বেঁধে গান গাইতাম, মঞ্চে গাইতাম, হলের ছাদে গাইতাম, হলের সামনের মাঠে গাইতাম, অন্ধকারে গাইতাম, জোছনায় গাইতাম। আজকে আমার গানে যতটুকু পরিচিতি সবটুকুই এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনি স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার। গায়ক এবং সুরকার সত্ত্বাকে পাশ কাটিয়ে শুধু গীতিকার সত্ত্বাটাকে নিয়ে কথা বলবো। যেহেতু আমি শুধু লেখকদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি তাই গীতিকার হিসেবে আপনার পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাইছি।

লুৎফর হাসান: দুই ধরনের কথা আছে এখানে। গীতিকার এবং গীতিকবি। আমি গীতিকিবি। স্বতি:স্ফূর্ত গান লিখি। গীতিকার যারা, তারা দক্ষ খুব। তারা সুরের উপর গান লিখে ফেলে, মিউজিক্যাল ট্র‍্যাকের উপর গান লিখে, থিম দিয়ে দেয় সেটার উপর গান লিখে। একটা গণ্ডি বেঁধে দেয় এরকম করে লিখতে হবে, ওরকম লেখা যাবে না, সেভাবেই লিখে ফেলে তারা। ওরা গীতিকার। আমি কখনো গীতিকার ছিলাম না। আমি পারি না এভাবে লিখতে। আমি গীতিকবি। যখন যে সুরটা খেলা করে আমার ভেতরে সুরের সাথে কথা চলে আসে। কথা আমি লিখে ফেলি। বা যখন যে ভাবনা আসে লিখে ফেলি, সুর হয়ে যায়। হয় সুর আমি করি, অথবা অন্য কেউ করে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি গান লিখতে পারে তারাই যারা ছড়া খুব ভালো পারে। ছন্দ নিয়ে যারা খেলতে পারে। আমি ছোটবেলায় খুব ছড়া লিখতাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা দুই বন্ধু ছিলাম। আমি আর নাজমুল হক। নাজমুল হক এখন উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা। নাজমুল আর আমি একসাথে হলেই ছন্দে ছন্দে কথা বলতাম সবসময়। হাঁটতে হাঁটতে, রিক্সায় যেতে আমরা ছন্দে ছন্দে কথা বলতাম। ছন্দের বাইরে আমরা কথা বলতাম না। ছন্দে ছন্দে আমরা ফান করতাম। এমনকী অশ্লীল আড্ডা যেগুলো ছিলো সেগুলোও আমরা ছন্দে ছন্দে বলতাম। ওটা আমাকে খুব দক্ষ করে তুলেছিলো। তারপর যখন গান লিখতে আসলাম, তখন দেখলাম যে গান লেখা খুবই সহজ কাজ। মানে গান লেখা আমার জন্য খুবই সহজ কাজ। ধরেন উপন্যাস লিখতে অনেক সময় লাগে। বসে বসে লিখতে হয়, চরিত্রগুলোকে ঠিকঠাক রাখতে হয়, সময়কে ধরতে হয়- সবকিছু মিলে উপন্যাস লেখা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সবচেয়ে কঠিন লাগে কবিতা। কবিতা তো আসে না সহজে। হুট করে আসে। আমি তো সব মাধ্যমেই লিখি। গান লেখাটা সবচেয়ে সহজ মনে হয়। আমার মনে হয় পৃথিবীতে যে ক্রিয়েটিভ মানুষ ছন্দ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে তার জন্য সবচেয়ে সহজ কাজ গান লেখা। আমার লেখা অনেক জনপ্রিয় গান আছে মাত্র পাঁচ মিনিটে লেখা





            বীর্য পুরুষ
                  বিকাশ  দাশ

যজ্ঞের অগ্নি থেকে
বেরিয়ে আসছে যে পবিত্র শব্দের উচ্চারণ
তাকে ধারন করার মতো দীক্ষিত মানব নেই দেখে
যিনি এগিয়ে এলেন তিনি এক বীর্যবান কবি।
এই বিরাট ভুবনের দায়ভার নিয়ে
বেদ ব্রাহ্মণ রূপে জাগ্রত হলেন সমাজে।

অথচ যিনি মহামন্ত্রোচ্চারণে কমণ্ডলু হাতে 
প্রলয় ওঙ্কার হয়ে দাঁড়াতে পারতেন
তিনি মৌনব্রতে ব্রহ্মকে তেজ রূপে ধারনে ব্যস্ত।
দধীচির যে হাড়, একদা যে সত্য রচনা করেছিল
সে বজ্র সংকল্পচ্যুত হয়ে
ভেসে যাচ্ছে অনন্তের গভীরে
বহু বীর্যবান হারিয়ে যাচ্ছে ভুল ঠিকানায় । 

অথচ একমাত্র বীর্যবানের বসার কথা ছিল পদ্মবেদীতে
আসন্ন যজ্ঞের পুরোহিত হয়ে ;
সেই সংকল্পের চুল্লিতে এখন আগুন নির্বাপিত। 

যার ধীরজ কণ্ঠের মন্ত্রোচ্চারণে সমুদ্র থেকে
সজল শরীরে উঠে আসত মৎস্যগন্ধা ;
অনুত সুখের ভেতর কবিতার বর্ণগুলি
দম্ভের সৌন্দর্য হয়ে ফুটে উঠত দু- একটি তারায় ;
তিনি " জবা কুসুম সংকাশ্যং " - মন্ত্রোচ্চারণের আরম্ভ ছুঁয়ে
শব্দকোষ সাজাচ্ছেন চটুল ইস্তাহারে ;
অবশেষে নতজানু হয়ে
আস্বীকার করলেন সমস্ত দায়ভার । 





                         শ্রী
                  শঙ্খশুভ্র পাত্র

অশেষ ফাল্গুনে তুমি মেঘে-মেঘে প্রতিদিন দোল...
অব্যক্ত আকাশ ঘিরে — সুরে-সুরে চতুর্দশপদী
অবন্ধুর পথে, বন্ধু — হাতে-হাত, অবাধ হিন্দোল
রাতের গহনে, গ্রহ — ঘূর্ণমান, কাল নিরবধি...

সম্পর্ক টেকে না, শুধু ঠেকে শেখা, ছন্নমতি কুহু
না- মেলালে এ-জীবন— তন্ত্রমন্ত্র, বৃথা হাঁকডাক
লালনদুহিতা— ওই অস্তসূর্যে—একবার... উঁহু...
দ্বিতীয়বারের জন্য উড়ে গেল প্রেতসিদ্ধ-কাক...

বাকরুদ্ধ-শুদ্ধাচার, সামান্য পাথর—চকমকি
আগুনের ব্যবহার— স্বপ্নপ্রভ অতীতের রং
ছন্দের বন্ধনে, ওই আরক্ত-আবেগে, তুমি, সখী
ফাগুনের ফুটে ওঠা শিমুল-পলাশে, দ্যাখো শ্রম ৷

ঋতুযান, মিথ্যে নয়— মেঘে-মেঘে প্রতিদিনই দোল
কেবল দেখার গুণে : শ্রী, যে-গান রাতের, হিন্দোল...






         উৎসর্গ_সখি_তোমাকে
              সপ্তর্ষি মন্ডল
 
কবি প্রেমে পড়েছেন , এটা স্বাভাবিক
কিন্তু কবি প্রেম থেকে উঠে এসেছেন , এটা বড়ই অস্বাভাবিক ।

কবি যখন প্রেমে পড়েন , হোয়াইট হাউস সেদিন নিস্তব্ধ
তারপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সীমাবন্ধের ঘোষণা পেতেই
কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন , মানা গেল না তো ?

কবি যখন প্রেমে পড়লেন , নোবেল সেদিন পুরস্কার দেয়নি
তারপর ঘোষণা হল সাহিত্য শান্তিনিকেতন বানাবে
আর কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন , বিশ্বাস হল না তো ?

কবি প্রেমে পড়লে , পার্লামেন্ট মুলতুবি হয়ে গেল
তারপর ইমার্জেন্সি লাগাতেই , কবি প্রেমে ইতি টানলেন
এটাও বাস্তবে ঠিক মানানসই হল না তো ?

কবি যখন প্রেমে পড়লেন , তখন
ঘরের কচি ছেলেগুলো বউ আনতে ব্যস্ত
তারপর বউয়ের জায়গায় একজোড়া বর ঘরে ঢুকতেই
কবি বললেন , প্রেমে আর কোনদিন পড়া যাবে না ,
হজম হল না তো ?

আসলে , কবিরা প্রেমে পড়েন না কোনদিন
মুহুর্মুহু মন বদল হলেও ,
প্রেম তাদের তুলে ধরে ,
তারা প্রেম করে আর উঠে আসে শিখরে প্রত্যেকবার ।






                    সাদা পাথরের দু:খ 
                    হীরক বন্দোপাধ্যায়

সাদা পাথরের স্নান দেখতে দেখতে কতবার আমি দরজা খুলে দিয়েছি হাট করে
যাতে নারী পুরুষেরা মেলামেশা করার
সুযোগ পায় ,ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে যারা এসেছিল একদিন তারা সব আত্মহত্যা করেছে
শূন্যবেদী জুড়ে এখন আর কোনো ঝর্না নেই
বেদানা সাইজের দু:খ ,পোস্টকার্ড সাইজের
যন্ত্রণাকে আলিঙ্গন করছে
এখন আর ঋতুকালীন সম্ভাবনা নেই তাই
অভ‍্যাসে অনভ‍্যাসে চিকচিক করছে
যা কিছু কম্পাস, টর্চ ইলেকট্রনিকস মেঘেদের
সাথে জল ভরতে চলে গেছে
শ্রীকৃষ্ণ ফার্মেসির পাশে হাট বসেছে
চিত্রালয় পেরিয়ে ক্রেতাদের ভিড়
কতকিছু হাবিজাবি বক্সক‍্যামেরা সাপের আ্যসিড, হাটুরেরা সব অন্ধ
ইতিহাসের রত্নগুহায় কোনোরকম মান‍্যতা না দিয়ে হোমার কবর থেকে উঠে এসেছেন
কিছু চাল ডাল তরিতরকারি কেনার জন্য
ইলিয়াড ওডিসির জন্য
এ দেশের মহাভারত আর রামায়ণ বড়ো ক্লিশে
বাল্মীকি ও ব‍্যাসদেবের বয়স হয়েছে
দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ কিংবা অশোক বনে
সীতার শ্লীলতাহানিতে ওদের আর কিছু
যায় আসে না ...






                   দেবপ্রিয় দে এর দুটো কবিতা

                     হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স
           

ভালোবাসার গায়ে বড়ো টকটক গন্ধ।ক্ষার সাবানে ঘষে উজালা দিয়ে ট্রিনোপলে ধুলেও বেদব্যাস গ্রহণ করেন না।

জামাতে পারফিউমের গন্ধ পেলে হেরোডোটাসরা কফি হাতে বসে পড়েন ঘন্টাখানেক সুমনের সাথে।ঘা আর ঘায়ের পোকা দুজনেই সাফ।

অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশ করলে তুমি বিরাট বড় হনু।কর্ণের রথচক্র মেদিনী গ্রাস করলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ?

হাজার দোষ করেও তুমি নাড়াজোলের নাতজামাই। আমি পেনাল্টিবক্সে ওয়ান ইস টু ওয়ান হলেই তোমার অফসাইডের বাঁশি?

একশো হাঁড়ি শিলাবতী দুশো প্লেট দামোদর দিয়ে খেয়েও তোমার ক্ষিদে বেড়েই চলে।আমি শালার একচিমটে ডোবা! যত সূর্যগ্রহণ আর বলয়গ্রাস ভীষ্মের কপালেই লেখা?

একটা হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স খুঁজছি সংগে একটা সক্রেটিস - একটা কিনলে দুটো ফ্রী!  শালা লাথি মারবো ভূগোলে লাশ পড়বে ইতিহাসে।




                  বিধিসম্মত সতর্কীকরণ

চশমার ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া আংটি বানায়।পড়িয়ে দেয় আকাশের আঙুলে।অতএব এনগেজমেন্ট সমাপ্ত হোলো।

তুমি তখন ঝারখাওয়া দেবদাস।পুরো হিমালয়টাই একটা গেদে-শিয়ালদা লোকাল।তুই থামমিনি তোর বাপ থামমে।

'ধ'-নামক অক্ষরটিতে আপনি হ্রস্ব-উ কারই দেন বা দীর্ঘ-ঊ কার,করোনা আটকাতে পারবেন না।উল্টে গাদাগুচ্ছের হ্যাণ্ড-স্যানিটাইজার কিনতে গিয়ে ঝিটচাল তক বিক্রি করতে হবে।

তার চেয়ে চুপিচুপি একটা কথা বলি শুনুন।কাব্যের মোড়কটা ঝাঁ চকচকে করুন,তা সে ভেতরে যতই তেল চটচট করুক!শুধু তলায় ছোট্ট করে লিখে দিন----------
Disclaimer টা-('ধুম' পান সাহিত্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)।

 


      সময় বিষয়ক 
   সন্দীপ কাঞ্জিলাল

একটা দাঁত কয়েকদিন ধরে
এমন সাপটাচ্ছিল
আজ তুলে ফেললাম।
কিছুদিন আগে চোখে উঠেছে চশমা।
বলা নেই কওয়া নেই
মাথার চুল কিছু উধাও।
এখন সেই বয়স,
সিঁড়ি না ভাঙতে হলে ভালোই লাগে।

বেশ বুঝতে পারছি
এবার ধরতে হবে ফিরতি ট্রেন।

তা নিয়ে আমার ভাবনা নেই,
আমার ভালোই জানা
এখানে এসেছি বেড়াতে।

ভয়? তা একটু আছে।
ঐ বেচারা সময়কে নিয়ে।
বয়সকাল
সময় টময় মারো গুলি বলে
এমন শাসিয়ে ছিলাম,
ব্যাটা সেই যে পগারপার,এখন তাকে
আর ধারেকাছেও দেখছি  না।

তখন আর কে জানতো
সময়ই হাত ধরে
তুলে দেবে ফিরতি ট্রেনে।

সময় কে সময় না ভাবা
তার যে কি জ্বালা
এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।






  কণ্টক শয্যা
    সৌম্য চক্রবর্তী

লাল গোলাপটা না হয়,
কণ্টক রূপেই পরিপূর্ণতা পাক !
মনের ভিতরের জমানো কথা গুলো ;
না হয় যত্ন করেই তোলা থাক।
আমার এই মনের গভীরে,
নীরবতা বারে বারে আঘাত করুক !
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি গুলোতে,
নয়ন তরে অশ্রু জমুক !
বেঁচে আছি আজও ;
অর্ধমৃত সব অনুভূতি কে সঙ্গী করে !
বেঁচে থাকুক আমার মতনই ;
অভিমানী সব বন্ধু গুলো।






     প্রেম.কম
            সত‍্যব্রত ধর

অনধিকার চর্চায় আপত্তি রেখেও,
প্রেমের আলাপ শুরু।
পুরনো ভালোবাসারা পাখি হয়ে,
উড়ে গেছে অচিরেই।
এরপর একটু একটু করে তোমাতে,
বিলীন হয়ে গেছি।
সামলে ওঠার আগেই বিলিয়ে দিয়েছি,
সমস্ত নিজস্ব সত্ত্বা।
বেঁচে থাকার চাবিকাঠি পৌঁছে দিয়েছি,
তোমার নরম হাতে।

ডান নিলয়ের ঠিক বামপাশটায়,
সযত্নে রেখেছি তোমায়।
রক্তের স্রোতে মিশে পৌঁছে গেছো,
শরীরের কোণায় কোণায়।
দেহের নোনতা চেটে বুঝে নিয়েছো,
প্রকৃত দুর্বলতাগুলো।
মেরুদন্ড ফুঁড়ে অবাধে ঢুকে গেছো,
মজ্জার অতল গভীরে।
তবে মগজে আনাগোনা করলেও,
কব্জা হতে দেইনি আজও।






    তীর্থঙ্কর সুমিত এর ধারাবাহিক ব্যক্তিগত গদ্য   



                  নদী কথায় ভেসে যায় .......
                            (১১)

যখন একা দাঁড়াই রাস্তায়।মনে হয় কত রাস্তা মিশে গেছে এপাশ থেকে ওপাশ।ওপাশ থেকে এপাশ।ভালো লাগা কি না লাগার সূত্র ধরে ক্রমশ এগিয়ে যাই।আরো রাস্তার খোঁজে ।শেষ কোথায় কেউ জানিনা।তবুও শেষের নেশায় শুরুকে খুঁজি প্রতিদিন।আর হারিয়ে যাই কোনো নদীর বুকে। যার স্রোত প্রতিনিয়ত আমায় ভেজায়। যার পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলি।



                নদী কথায় ভেসে যায় .......
                          (১২)

যে কথাগুলো অনেকদিন আগে বলার ছিল।সে কথাগুলো বলা হয়েছে।গভীর থেকে গভীর ভাবে।শুধু বলার প্রয়োজনীয়তা থেকে অপ্রয়াজনীয়তায় ব্যাবহার হয়েছে বেশি। অক্ষর চিহ্ন আরো কত কি?ভেসে গেছে কথামালা ।তবুও বদল হয়নি মুহুর্ত।শুধু বদলেছে সময়।বহুদিনের ব্যার্থতার ইতিহাস আজকে অব্যার্থ চাহিদার সাথে হুবহু মিল।যে পথ বেঁকে যেতে যেতে বাঁক নিয়েছে নদী বুকে,সে পথ ই আজ নদী কথা বলে।






Saturday, June 27, 2020

শুধুই কবিতা

                     প্রত্যয়
                সমীরণ বেরা

পি -ল সুজের ব্যাখ্যাটা আজও পেলাম না
আ- মার ভিতরকার এক অন্য সত্তা জানান দেয়
লী- লার মাঝে যে খেলা - তা আসলে বোঝা যায় না।

তো- রণ নির্মাণের সকালে প্রস্তুতির ডাক দিয়ে যায়
মা - ভৈ : আমরা আছি তোমার সাথে
র- ব উঠেছে চতুর্দিকে-" বাঁচতে চাই বাঁচতে চাই "।

জ- ন্মের অপেক্ষা সুপ্রভাতের আঁধার রাতে
ন - ত হ'য়ে শিখেছি জীবনে কী পাই না পাই!
ম- স্ত বড় ভুলের পরেও সংশোধিত ইতিহাস
দি- গন্ত জুড়ে নব সূর্যের আভাস
ন - ব প্রাণে নূতনের ডাক দিয়ে যায়
শু- ক সারি জেগে থাকে অনিমেষ কাল
ভ' - রে যাক অপূর্ণতার যত ঘট ; ছেড়ো না হাল
হো- ক না এখন পূর্ণ অমাবস্যার রাত
ক - খনো আশা ছেড়ো না, রেখো হাতে হাত।




        বোধ
বাপন দেব লাড়ু

শ্লীলতা,  অশ্লীলতা অদৃশ্য
এই মুহুর্ত শুধুই সত্যের,
সব বাঁধন ভেঙে একাত্ম হয়েছে সময়,
লজ্জা বোধ গুলোকে অসীম দুঃসাহসিকতায়
ভাঙছি তুমি ও আমি ;
চোখ বুজে আসলেও
আদিম পাপ বোধে
জড়ায় সব চাওয়া - পাওয়া।
পাপ-পূন্যের হিসেব দূরে থাক ;
ইতিহাস হোক বোধগম্য ভালোবাসা।








             দৈনন্দিন 
      জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

কাজ শেষ হলে নপুংসক সূর্যের হাত ধরে
পশ্চিমে দাঁড়ায় কুন্তীবিষাদ
রাগমোচন করে ক্লান্ত সুর্যের রথের গতি শ্লথ
সপ্তাশ্বের পাশে দীর্ঘচ্ছায়া ডাকে ক্লান্ত বিহগ
পূর্ণ কুলায় অবকাশের আনন্দরাগ

পশ্চিমে প্রহর গোনার ঘড়ি নির্বিকার......

মঞ্চবদলের অনিবার্যতায় উচাটন প্রেতের প্রবেশ
অস্থিময় আলিঙ্গন টান আর টান.......
খানিক ডিপ্রেশন আর অশ্লীল অনুভূতির ফাঁদ
পাহাড়িয়া পথ তাপ-সন্তাপে আছাড়ের তেতো স্বাদ
সুগার ফ্রি সুগার বিছানার মাটি নেবার আগে স্বপ্নসুখ
সবুজ ধানখেতে ভাদ্র-হাওয়ার বিমোহন ঢেউ

ব্যর্থ সাধন বলে,হে নপুংসক কাল একটু দেরিতে উঠো






             " রামধনু ভালোবাসা "
                         হামিদুল ইসলাম
                   
সূর্যটাকে ধরতে চাই
হাতের মুঠোয়
মনের দিগন্তে স্বপ্নগুলো
প্রতিদিন ঘোড়া ছুটোয়  ।।

স্বপ্নগুলো সাজাই
রাত্রি গভীর
তখনো তুমি দাঁড়িয়ে থাকো
সুদূর সমুদ্র তীর    ।।

তোমাকে ছুঁয়ে যায়
মনের আকাশ
দুহাত বাড়িয়ে দিই
হৃদয়ে রাখি শ্বাস    ।।

তুমি উদিত সূর্য
মনের তাজমহল
তোমার ভালোবাসা
সিন্ধুনদের জল   ।।

সে জলে নামি প্রতিদিন
স্নান সারি দুজনে
জলের গভীরে দেখি
আমাদের প্রেম সাজানো গানে গানে    ।।

প্রেম করি সারারাত
বুকে রাখি নিখাদ আশা
তুমি আমার প্রাণের প্রতিমা
রামধনু ভালোবাসা    ।।






  নকশী কাঁথা
 জুয়েল রূহানী


মায়ের হাতের নকশী কাঁথা
দেখতে চমৎকার,
শীতের দিনে নকশী কাঁথা-
উৎস উষ্ণতার!

সুই-সুতা আর হাতের ছোঁয়া-
হাসি ভরা মুখ,
নকশী কাঁথা তৈরিতে মাঁ-
পান যে ভীষন সুখ!

জড়িয়ে রয় নকশী কাঁথায়
কত যে স্মৃতি!
সে সব স্মৃতি প্রকাশ করেন-
মাঁ যত্নে অতি।

আসুক যতই হিম-কুয়াশা-
ভয় করি না আর,
আমার কাছে আছে যে ভাই
বল নকশী কাঁথার।




আমার ভালোবাসা
    -----সৌমেন সরকার

আমার ভালোবাসা
এক অন্তঃসলিলা নদীর মত
অপ্রকাশিত

যেখানে অনুবীক্ষনও কার্যকরী নয়
প্রেমের স্বরূপ দর্শনে...

কিন্ত,বোধগম্যতার গভীরে
নিহিত থাকে-
প্রেমের সমূল চক্রবৃদ্ধি...





                         টাপুর টুপুর
                       রমলা মুখার্জী


টাপুর টুপুর বাজছে নূপুর সকাল দুপুর সন্ধ্যে.........
খুকুর প্রাণ গাইছে গান আনন্দে সুর ছন্দে।
নেই তো পড়া উঠোন ভরা জল করে থৈ থৈ.,....
নাচছে খুকু সঙ্গে টুকু তা থৈ তাতা থৈ।
নৌকা বানায় কানায় কানায় জলে ভাসায় রাজা......
উঠোন জলে নৌকা দোলে, মন খুলে আজ মজা।
খুকুর দাদা এনেছে গাদা জিলিপি গরম চপ
সবাই মিলে হেসে খেলে খাচ্ছে গপাং গপ্।
ঘিরে দাদাই বসে সবাই গল্প জমে নানা.......
রূপকথারই রাজত্বে আজ স্বপ্ন মেলে ডানা।





                     মাদক
              বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

মাদকের নেশা সর্বনাশা জীবনকে দেয় হাতছানি,
মাদকাসক্ত জীবন সংসারের বালাই টানে অপকর্মের ঘানি।
ওরে যুবসমাজ নেশায় কেন রক্ত করিস জল?
নেশায় হয় আয়ু ক্ষয় শরীর দূর্বল।
নেশায় ঘোরে সাময়িক তোরা পাবি সন্তোষ,
দিনেদিনে তনু ক্ষয় বাড়ে আপশোস।
নেশায় ঘোরে সমাজচ্যুতি যাচ্ছিস উচ্ছন্নে,
মনুষ্যত্ব লোপ পরিনত বিবেক বর্বরতায় বন্যে।
নেশার ঘোরে বিবেক পুড়ে করিস কু-কাজ,
ছেলে-বৌ-মায়ের মুখে তাকিয়ে লাগেনা লাজ।
নেশা মানে মরীচিকার পিছে ছোটা জীবন মৃতপ্রায়,
নেশার বুঁদে জীবন থাকে মৃত্যুর অপেক্ষায়।
নেশাই শুধু জীবন নই সংসারও ছারখার,
সুগার,কর্কট,হৃদয়ের রোগ শরীরের বাড়তি উপহার।
ওহে আগামী শোন মোর বারতা,
তোমাদের মাদকাসক্ত বাড়ায় মোদের ব্যকুলতা।
চল ছাড়ি নেশা সংসারকে দিয়ে ভালোবাসা,
হাতে তুলে বই সমাজের জাগায় নতুন প্রত্যাশা।







                  প্রথম কদম ফুল
                   মিনতি গোস্বামী

এখন দুপুর হলেই সূয‍্যিটা মুখ লুকোচ্ছে মেঘের আড়ালে।মেঘগুলো শিবরাত্রির পুণ‍্যবতী মেয়েদের মত মাথায় জল ঢালতে ব‍্যস্ত।
আবছা শহর।লুকোচুরি।জলতরঙ্গ।
গ্ৰীলের বাইরে হাতের তালু পেতে ধরি ঋতুর আঁচল।চতুর সূর্যটা মুচকি হেসে ছাড়িয়ে নেয় আঁচল।মন তো তখনো কদম ফুল, পাতার বাঁশি,দিঘীজল।
রূপ , মনে পড়ে! স্কুল বেলায় আসার সময় বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তার ধারের গাছ থেকে কদমফুল এনে গোছা করে আমাকে দিতিস।আমি বুকে ধরে ফুলের গন্ধ নিতাম চোখ বুজে, হারিয়ে যেতাম রূপকথার দেশে।আর তোরা টিফিনে বন্ধুদের সঙ্গে কদমফুল লোফালুফি খেলতিস।
তুই কি বুদ্ধু ছিলি রে!
তুই জানতিসনা তুই আমার প্রথম প্রেম, আমি তোর প্রথম কদমফুল।
অতিমারীতেও আমি কদমের গন্ধে মশগুল।







নেপোদাদুর গোঁফ ও টাক
রাজকুমার ঘোষ

নেপোদাদুর খালি গায়ে,
গোবর গন্ধে ভরা …
তবে দাদুর গ্ল্যামার
গোঁফ ও টাকে মোড়া।

কিপ্টে দাদু বেচতো ঘুটে…
পরনে প্রিয় লুঙ্গি  ।
ডিজাইন করা গোঁফটি…
দাদুর চিরসঙ্গী  ।

হাজার ভীড়ের মাঝে যদি,
দাদু দাঁড়িয়ে থাকে…
তবু সবার চোখটি যেত
দাদুর স্পেশ্যাল টাকে। 

টাক-গোঁফের এমন জাদু
ঠাম্মা গেছে পটে।
তাইতো দাদু বুড়ো বয়সে
বিয়ের জন্য ছোটে !








Wednesday, June 24, 2020

কবিতা ও ধারাবাহিক উপন্যাস

                    পাখির ডানার উড়ান
                        প্রশান্ত ভৌমিক 

পাঁচ।
স্কুলে গিয়েই শুনলাম আজ নাকি বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন দেবে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন নাইনের ক্লাস আরম্ভ হয়েছিল। অথচ দেখতে দেখতে বছরটা পুরো শেষ হয়ে গেল। মোজাম্মেল স্যার প্রথম পিরিয়ডে ক্লাসে এসেই ঘোষণা করলেন আজ বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন দেয়া হবে। সাথে জানালেন, আজকের পর থেকে প্রতিদিনই পরীক্ষার জন্য সাজেশন দেয়া হবে। তাছাড়া এই পরীক্ষায় কেউ যদি এক বিষয়েও ফেল করে, তবে তাকে প্রমোশন দেয়া হবে না। স্যার রসিকতা করে বললেন, ছেলেরা ফেল করলে রিক্সা চালাবে আর মেয়েরা ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে।
এরপর রুটিন লিখে দিলেন বোর্ডে। পরীক্ষার রুটিন দেখে কেউ খুশি হতে পারল না। কেমন যেন এলোমেলো। প্রথমে ইংরেজি, তারপরে ধর্ম। তারপরে বাংলা, রসায়ন, আবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র। তারপরে বাকিগুলো। কী হবে কী জানি! তাছাড়া স্যার জানিয়ে দিলেন পরীক্ষার রেজাল্টের দিন অভিভাবক সাথে নিয়ে আসতে হবে।
এবার বোধহয় বাবার হাতে বার্ষিক মার না খেয়ে উপায় নেই। প্রতি বছরই বলেন বার্ষিক পরীক্ষার পর মার দেবেন। কিন্তু কখনো সেই মার খেতে হয়না। এবার রেজাল্টের দিন নিশ্চিত মার খেতে হবে। তবে এর উল্টো দিকও আছে। পরীক্ষায় ভাল করতে পারলে বাবা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে কিছু বই কিনে দেবেন। সেটাও জানি। তাহলে সমাধান হল আগামী কিছুদিন মন দিয়ে ভাল করে পড়া।
গণিত ক্লাসে মোজাম্মেল স্যার রুটিন দেয়ার পরে ত্রিকোণমিতির কয়েকটা অংক করালেন। ত্রিকোণমিতি আমার কাছে বিতিকিচ্ছি লাগত। আজ মন দিয়ে স্যারের কথাগুলো শুনলাম। সাথে সাথে বোর্ডে করা স্যারের অংকটা দেখলাম। মুহূর্তেই ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। এরপর নিজে নিজেই চেষ্টা করে আরো কয়েকটা অংকের সমাধান বের করে ফেললাম।
দ্বিতীয় ঘণ্টায় বাদশাহ আলম স্যার ইংরেজি সাহিত্য পড়ালেন। সাহিত্য আমার বরাবরই ভাল লাগে পড়তে। আজ আরো মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। খুবই উপভোগ করলাম। তৃতীয় ঘণ্টায় ওয়াজেদ স্যার এলেন বাংলা পড়াতে। ওয়াজেদ স্যারের মত মানুষ হয় না। স্যারের কথা শুনে ইচ্ছে করে পড়াশুনা করে নতুন করে বাঁচতে। তিনি খুব উৎসাহ দিয়ে কথা বলেন।
চতুর্থ পিরিয়ডে নিখিল স্যারের পদার্থ বিজ্ঞান। নিখিল স্যার খুব ভাল পড়ান। নিখিল স্যারের আগে পদার্থ বিজ্ঞান পড়াতেন বীরেন্দ্র স্যার। স্যার মারা গেছেন কিছুদিন আগে। বীরেন্দ্র স্যার আমার দুঃসম্পর্কের মামা হতেন। তাই ক্লাসে সুযোগ পেলেই পড়া ধরতেন। স্যারের প্রথম টার্গেটই ছিলাম আমি। কিন্তু পড়াতেন খুব মন দিয়ে। নিখিল স্যারও তেমনই। নিখিল স্যারের ক্লাস শেষে টিফিন টাইম। আজকে টিফিনে দেয়া হল বনরুটি আর জিলিপি। আমার মনে হয় পৃথিবীতে খারাপ খাবারের কোন তালিকা যদি কখনো হয় তাতে প্রথমেই থাকবে এই খাবারটি। কেউই পছন্দ করে না এটা খেতে। তাও কেন যে স্যারেরা এটা দেন খেতে কে জানে! অধিকাংশ ছেলেমেয়েই বনরুটি আর জিলিপি ফেলে দিয়ে চটপটির দোকানে ছুটল চটপটি খেতে। আমি অবশ্য ফেললাম না। আমি খেয়ে নিলাম। মা পছন্দ করেন না বাইরের খোলা খাবার খাওয়া, বিশেষ করে চটপটি তো একেবারেই না। আর আমিও খেয়ে গিয়ে মিথ্যে বলি না মাকে। তাই বনরুটি আর জিলিপিতেই সন্তুষ্ট থাকলাম।
টিফিন টাইমে বাপ্পী আমার কাছে জানতে চাইল বিপ্লবের কী কী ক্যাসেট বের হয়েছে? সে নাকি সবগুলো কিনবে। আমি মাঝে মাঝে বাপ্পীকে ঈর্ষা করি। আমরা যে ক্যাসেটগুলো বা বইগুলো দিনের পর দিন টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিংবা মা-বাবার সাথে ঘ্যানঘ্যান করে কিনি সেগুলো বাপ্পী ইচ্ছে করলে একসাথে সবগুলো কিনে নিতে পারে। কিন্তু কেনা পর্যন্তই! আমি নিশ্চিত জানি বিপ্লবের সবগুলো ক্যাসেট হয়ত বাপ্পী আজ কিনে নেবে, কিন্তু কোন গান কখনোই শুনবে না। আর বাসায় কেউ গেলে বাপ্পী শোকেস ভর্তি বই আর ক্যাসেটের স্তুপ দেখিয়ে বলে, এগুলোর কোনটাই আমি পড়িনি কিংবা শুনিনি। পরে কোন একসময় নিশ্চয়ই পড়ব, শুনব।
বিপ্লব আমাদের সময়ের ক্রেজ। কয়েক বছর আগেও দেখতাম বড়রা আইয়ুব বাচ্চু, জেমস কিংবা হাসানকে নিয়ে মেতে থাকতেন। এখন আমাদের প্রজন্ম মেতে আছে বিপ্লবকে নিয়ে। কয়েকদিন আগেই ‘ইত্যাদি’তে পথিক নবী নামে একজনের গান দেখিয়েছে। পথিক নবীরও ক্রেজ হতে সময় লাগবে না। আমাদের ক্লাসের নাদিম দেখি সেদিন পথিক নবীর গান গুনগুন করছিল—‘আমার একটা নদী ছিল, জানল না তো কেউ’। নাদিমের গানের গলা ভাল। অবশ্য নাদিম পড়াশোনাতেও খারাপ নয়। কিন্তু গান কিংবা পড়াশোনা কোনকিছুকেই নাদিম সিরিয়াসলি নেয়নি কখনো। সবসময় হেলাফেলা করেই এসেছে।
বাপ্পীর বিপ্লব সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লবের যতগুলো ক্যাসেটের নাম জানি সেগুলো বললাম। বিপ্লবের মোটামুটি সবগুলো ক্যাসেটই আমার কাছে আছে। বিপ্লব আর পান্থ কানাই- এই দুইজনেই গান আমার বেশ পছন্দ। অবশ্য বড়দি কিংবা ছোটদি কেউই এঁদের গান পছন্দ করে না। ওরা পছন্দ করে সোনু নিগম, জগজিৎ সিং, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ এঁদের গান। এক কথায় মেলোডি গান। আমার কাছে অহেতুক প্যানপ্যানানি মনে হয়। আমার বয়েসী কেউ অবশ্য এঁদের গান শোনে না। আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই হিন্দি গান, হিন্দি সিনেমার ভক্ত। আমার কোনকালেই হিন্দি সিনেমা কিংবা হিন্দি গান ভাল লাগত না। হিন্দি ভাষা না বোঝাটাই এর অন্যতম কারণ। আর তাছাড়া বাংলার যে আবেগ সেটা হিন্দিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আমার বিশ্বাস। আর যারা হিন্দি গান শোনে না এদের অধিকাংশই বিপ্লব, পান্থ কানাই, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস কিংবা হাসানে মশগুল। অনেকে আবার আসিফের গানও শোনে খুব।
বাপ্পীর সাথে কথা শেষ হতে না হতেই ঢং ঢং করে টিফিন শেষের ঘণ্টা পড়ল। এখন জীববিজ্ঞান ক্লাস। খন্দকার স্যার আসবেন। খন্দকার স্যারকে সহজে রাগারাগি করতে দেখা যায় না। অত্যন্ত সুন্দরভাবে সবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু সব ছাত্র-ছাত্রী স্যারকে যমের মত ভয় পায়। আচ্ছা যমের মত ভয় পায় কথাটা বলে কেন সবাই? যমকে কেমন ভয় পায়? কেনই বা পায়? যমের যে কাজ সেটা তো ঘটবেই। সেখানে ভয় পেলেই কী, আর না পেলেই কী?
খন্দকার স্যারকে আমিও খুব ভয় পাই। কিন্তু কেন ভয় পাই তা জানিনা। স্কুলে যেদিন প্রথম এসেছি সেদিন থেকেই দেখছি খন্দকার স্যারের নামে ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ছেলেটিও ভয়ে কাবু হয়ে যায়। আর আমি তো চুনোপুঁটি! কেউ জোরে একটা ধমক দিলে খাটের নিচে ঢোকার রাস্তা খুঁজতে থাকি আমি। আর খন্দকার স্যারকে ভয় পাব না?
স্যার অবশ্য ক্লাসে এসে আজ নতুন কিছু পড়ালেন না। বই বের করে পৃষ্ঠা নাম্বার আর প্রশ্ন নাম্বার বলে সাজেশন দিতে লাগলেন। সবাই জানে খন্দকার স্যার যদি সাজেশন দেন সেটা ভুল হবার নয়, প্রশ্ন সেখানে যিনিই করুন না কেন! জীব বিজ্ঞানের পরের ঘণ্টায় ধর্ম। ধর্ম ক্লাসের সময় মুসলিম ছাত্ররা ক্লাসে বসে থাকে। আর হিন্দুরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে অন্য ফাঁকা ক্লাসে যায়। হিন্দুদের ধর্ম পড়ান পরেশ স্যার। আর মুসলিমদের শহিদ উল্লাহ স্যার। ধর্ম ক্লাসের পরে শেষ পিরিয়ডে রসায়ন পড়াতে আসেন মতিলাল স্যার। রসায়নের মত এত সুন্দর বিষয়কে কতটা কঠিন করে পড়ানো যায়, সেটা মতিলাল স্যারকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। মতিলাল স্যারের ক্লাসটা যেন শেষ হতেই চায় না। একসময় সেটাও শেষ হল, এবার ছুটি।
ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখলাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। শীতের শুরু মাত্র। বৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই, তবু বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় রিক্সা কম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রিক্সা পেলাম। আজকেও এক রিক্সায় সেই আমি, দোলন আর সনি। বৃষ্টির কারণে আজকেও তিন গোয়েন্দার বইটা কিনতে পারলাম না।




ধ্বংস
        সত‍্যব্রত ধর

অভুক্ত কলমের বিষাক্ত কালি,
গেঁথে দিয়েছি সমাজের নরপিশাচদের বুকে।
ফ‍্যাকাসে রঙ তুলির মোহের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করেছি,
দায়হীন সংসারের রাক্ষুসে পাশন্ডদের।
বেআব্রু ধর্ষকের লৌহ শিশ্নকে খুবলে নিয়েছি,
প্রবল ক্রোধের ক্ষিপ্র কামড়ে।
অজ্ঞাত আগমনীর আতুঁরঘরে কলুষিতদের জব্দ করেছি,
ক্ষারকীয় কথার তীব্রতায়।
আগ্রাসী চৌচির আদরের চাদরে আবদ্ধ করে,
পথহারা উলঙ্গ কপট শয়তানদের পিষেছি দিবিনিশী।
তবুও রয়ে গেছে কিছু ভণ্ড কাপুরুষ,
রক্তাক্ত চক্রব‍্যূহের ফাঁদে পড়ে ধ্বংসের অপেক্ষায়...






       মুক্তা
  সৌম্য ঘোষ


এক দঙ্গল ফাজিল বৃষ্টিরা কোলাহল
করে এল আমার বাগানে ,
টগর , মালতি , অপরাজিতার সোহাগ নিতে ।
কারো কি এখন  আসার কথা ছিল ,
এই অবেলায়?

তুমি নদীর ভেতর যাও
সেখানে অপরূপ শান্তি আছে;
নদীর ভেতর যাও , মুক্তা হবে ।

শুধু মুখের ভালোবাসায় মন ভরে না ,
তোমার বুকের মধ্যে ঘুমতে চাই
মুক্তা হবো  !
অবিশ্বাসে  পুড়ে প্রত্যহ অঙ্গার
হওয়ার বেদনা সইতে পারি না আর ।

কে ডাকে নিরবধি
শান্ত মোহন বাঁশি র সুর
নির্মল জ্যোৎস্না এসে ধুয়ে দেয়
আমার উঠোন , ফুলের বাগান   ।।





                     " বিশ্বাস
                হামিদুল ইসলাম
                     

অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে পৃথিবী
মরুরয় রাত
জীবনের পাতায় বড্ডো গোলমাল
মনের গভীরে ছুঁয়ে যায় এক রামধনু হাত   
কামনায় পুড়ে ছারখার   ।।

অসম্ভব খরস্রোতা নদী পেরিয়ে যায়
তারুণ‍্যের পুরুষকার
জীবনের মানে খোঁজে জীবন
পঙ্কিল পথ পায়ে ভাঙ্গে জীবাশ্মের আকর
পথের ধর্ম বিশ্বাসে অপার   ।।

ধর্মের নামে কাপালিক কপালে রাখে মৃত‍্যুবাণ
সাহসে নিঠুর ভর
দেখা হয় জানালার ওপারে
শতাব্দীর দলিল পোড়ে চোখের উপর
সুগন্ধিহারা আজন্ম কর্পুর   ।।

মুখোশে ঢাকা এখন সব মুখ
ভেঙে পড়ে শ্বাশত বিশ্বাস
প্রতিদিন পৃথিবী জন্ম নিচ্ছে মৃত‍্যু উপত‍্যকায়
বিবর্ণ সব ইতিহাস 
তবু জীবন  বিশ্বাসে ভরপুর    ।।





নেপো-পানুর আড্ডা
রাজকুমার ঘোষ

রোববারের ছুটির দিনে,
জমজমাটি আসর ।
ছোট-বড় সব খবরের…
পানু, নেপোর দোসর ।

পানুখুড়োর গেস্ট রুমটি,
সবার প্রিয় ঠেক ।
সবজান্তা নেপোদাদুর…
হয়না মিসটেক । 

হরেক রকম আলোচনা,
পাড়ার খবর বেশি,
স্বাদের স্থানে তৃপ্তি দিতো
কিপ্টে নেপোর দেশি ।

দুই বন্ধুর আড্ডা-স্থলে,
আরো বুড়োর ভিড়… 
পকেট খসে পানুখুড়োর
নেপো জমে ক্ষীর ।




প্রেমের টানে।
দিলীপ রায়।

আমি যদি মেঘ হতাম
তুমি হতে বৃষ্টি।
বুকে নিয়ে ভেসে বেড়াতাম
যতদূর যায় দৃষ্টি।
নীল আকাশে আঁধার ঘনায়
আমার কালো মেঘে।
রিমঝিম ঝিম ঝরতে তুমি
শ্যামল ধরার মাঝে।
শস্য শ্যামল হত ধরিত্রী
তোমার ধারায় ভিজে।
সার্থক হতো জনম তোমার
গর্ব হত নিজের।
বর্ষা শেষে আমার বুকে
তোমার ফেরার তারা।
একলা শেথায় ভাল লাগেনা
আমার পরশ ছাড়া।
মোর বিরহে ধরার মাঝে
থাকবে কেমন করে।
বাষ্প হয়ে ফিরলে আবার
আমার প্রেমের টানে।






            রথ যাত্রা
      সত্যব্রত চৌধুরী

আয়রে ছুটে আয় রথের মেলা বসেছে ।
পাঁপড়ভাজা, জিলিপি আর বেলুন এসেছে ।
এদিকে ফটোর সারি -
           পুতুল ও খেলনা-গাড়ি।
ভিডিও গেম, বন্দুক, মোবাইল এসেছে।
সন্দেহ নাই, মেলা যে ভাই খুব জমেছে ।।

ওইযে দেখো, মস্ত বড়ো রথ সেজেছে ।
জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলরাম বসেছে ।
রশিতে পড়লো টান -
            ভক্তের জোয়ার-বান ।
ঘড়ঘড়িয়ে ঐ দেখো ভাই রথ চলেছে ।
উদ্বেলিত ভক্তরা সব উপচে পড়েছে ।।

কে গো বাজায় বাঁশি, ঝুনঝুনি কিনেছে ।
কে কোথা যে ভীড়ের মাঝে ছিটকে গিয়েছে ।
হারিয়ে গেল 'সুমনা' -
      খোঁজে তার দাদা 'সোনা'।
অনেক পরে দাদু তাকে খুঁজে পেয়েছে ।
ততক্ষণে মায়ের চোখে জল এসেছে ।।






      জীবন
           শেখ মনিরুল ইসলাম

জীবন যদি শুরু হয়
নতুন ভোরে
লিখবো তোমায়
প্রভাত আলোয়।

জীবন যদি শেষ হয়
সাঁঝের বেলায়
দেখবো তোমায়
চাঁদের কোনায়

জীবন.......
নির্জন রাতের
আলো-আঁধারী মুখী
স্বপ্নহারা সবই  দুখী।






*অতিবাহিত দিন*
বাপন দেব লাড়ু

প্রতি রাতে যখন ঘুম ভাঙে
খুঁজে যাই মন খারাপের কারণ,
অভিমানী কলমে
তখন লেখা হয় না
বাকি ইতিহাস।

জমে জমে ভারাক্রান্ত ম'ন,
'হ্যাঙার'এ ঝোলানো জামা দেখে,
চোখের সামনে ভেসে ওঠে
গতকালের জল কালির লিখিত সারণ ;
শুধু ভাবি এসবের বাইরেও কি কোনো ভুল ছিল?

এই প্রশ্ন তেই অতিবাহিত হয় আরও একটা দিন।।








অন্ধকার যাপন
অনীশ ঘোষ

যাবতীয় অন্ধকার নিয়ে বেঁচে থাকা ,
শ্রাবণের চোখে আগুন জ্বলছে এবার ,
'আলো 'তুমি প্রস্ফুটিত হলে নিভে যাবে নিয়ন্ত্রিত শোক ,
এজন্মে নয়---
প্রিয় ,আমাদের পরজন্মে দেখা হোক |








পারুল( ৬ )
বদরুদ্দোজা শেখু


পারুল সোনা পাশ দিয়েছে, পারুল সোনা ধন্যি 
এখন থেকে সবাই তাকে করবে মান্যিগণ্যি !
মেঝেন মায়ের ছাতির  ধ্বকে দুঃখ উঠে ফুঁসি'
আজ যদি ওর দিম্মা থাকতো, হতো কতোই খুশী।
হ্বপন মাঝি  মানত দিইছে মুর্গা দিবেঙ্ চঢ়ি,
পারুল বুঝায় --- থাক-না বাপুন, উ তো মুদের ঘড়ি !
ভোরের বেলায় বাঙ্ দিয়ে যায়, পহর পহর ডাকে ---
ও তো মুদের পুষ্যি আছে, বাঁচাও মুর্গাটাকে ! বিটির কথায় বিপন্ন হয় বিরত হয় মাঝি
মাঝি মেঝেন কীই-বা করবে, বিটিই তো নয় রাজী।
সবাই মিলে মাদল বাজায় এবং ঝুমুর নাচে
মহুয়া পিয়ে মাতাল ডিহা রঙবেরঙের সাজে।।





কিশোর
        হরিহর বৈদ্য

শিশু মানে ফুলের কুঁড়ি
     শিশু মানে চারা গাছ।
ওরাই জাতির মেরুদণ্ড
     অন‍্যায়ের প্রতিবাদ।
কিশলয়ের মতো তাদের
     সবুজ-সাদা মন।
দেশের জন‍্য ধরতে রাজি
     জীবন মরণ পন।
শিশু মানে চঞ্চল মন
     দুরন্ত উচ্ছাস।
জাতের বড়াই থাকেনা যেথায়
     একসাথে করে বাস।
আজকে যারা কিশোর তারা
     স্বপ্নে রাঙা ভোর।
জাতির ভালে আগামী কালের
     পরাবে ন‍‍্যায়ের তিলক।





ব‍্যবধান
     ---------তমাল

তোমার শিশু ইনফ‍্যান্টে
ভরা টিফিনবক্স আর কাঁটাচামচে,
  থাকে যে মুখ গুঁজে।

 আমার শিশু শহরের বুকে
 ফুটপাতে বসে বিষন্ন মুখে, খালি থালাতে দুমুঠো ভাত খোঁজে।

তোমার শিশুর মাথার ওপর 
পুট্টি করা কংক্রিটের চাদর,
রঙবাহারী কারুকার্যের রাশ।

আমার শিশুর মাথার ওপর
খোলা আকাশ আর চাঁদের টোপর,
খিলখিলিয়ে রোদের হাঁসি থাকে যে বারমাস।







প্রথম আষাঢ়'-এ অমর বিশ
প্রলয় কুমার বিশ্বাস

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
বরং বুকটা কেঁপে উঠেছে
অন্ধকারে পথ দেখানো তারার বুক থেকে ঝরা রক্তে

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
গর্জন ছিল আকাশে, ঢেউ ছিল উত্তাল,
বীরের আর্তনাদ আর কাপুরুষের উল্লাস দিগন্তরেখায় মায়ের চোখে জল

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
বিশে বিষে বিষময়, অভাব-মহামারী তুচ্ছ মনে হয়
যখন বলিদানের রাষ্ট্রীয় সন্মানে দেখি আমার গর্বের অমর বিশ







অমরাবতী
জয় জ্যোতির্ময়

আমাজন পাহাড়ের ভেতরে গোপনে
সঙ্গহীন একা হাঁটি বুকে নিয়ে ব্যথা,
তন্নতন্ন করে খুঁজি তোমার সন্ধানে
কবরও পুরাতন হাড় পোড়া চিতা।
একেকটা বৃক্ষ তবু আকাশ সমান
নিচে শুধু অন্ধকার জ্যোতিহীন চোখ,
সমুদ্রে ভেসে বেড়ায় প্রাণহীন ঘ্রাণ
বৃক্ষেরও প্রাণ আছে দেখি নাই মুখ।

তোমাকে দেখেছি স্বপ্নে সেই থেকে মনে
বঙ্গ ছেড়ে আমাজনে প্রেমে জ্যোতির্ময়ে,
আসমান থেকে নেমে জোড়া হাত ধ্যানে
চিমটি কেটে বিশ্বাসে তোমাকে জড়িয়ে।
জীবনে বাঁচার স্বাদ পূর্ণতায় ব্রতী,
আজন্ম বাঁচবো আমি ও অমরাবতী।







Tuesday, June 23, 2020

অনুকবিতা ও অনুগল্প





                ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

                   "সোহান ও তার বন্ধুরা“ 
                           পার্থসারথি
▪শেষ পর্ব▪

সবাই দল বেঁধে আবার নৌকার দিকে চলল। এসে দেখে মাঝি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মাঝিকে ইচ্ছে করেই ডাকে নি। খাবারের সময় এসে ডেকে নেয়া যাবে। কী বলিস?-চিনুদা সবার উদ্দ্যেশে বলে।
নাউড়া বলল- 'ঠিকই, এখন ডাকবার কোন প্রয়োজন নেই।'
সবাই এটা-ওটা হাতে নিল। আসফি, কাজল আর শিবলীও বেশ আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। দু'বারে সব জিনিষ আনা শেষ হলো।
চিনুদার কথামতো আসফি ডাব গাছে ওঠল। অবশ্য আসফি ডাব গাছে ওঠাতে সবচেয়ে পটু। পায়ে দঁড়ির রিং লাগিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠল। গোটা বিশেক ডাব ফেলল। ডাব পাড়তে পাড়তেই সরোজ ঠেলা জাল নিয়ে হাজির। সরোজ এসে বলল- 'দিদি, মা , ঠাকুরমা ওরা তোদের সবাইকে দেখতে চাচ্ছে।'
কথাটা শুনে সবার মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠল। কিন্তু চিনুদা বলল- 'এখন না। ফিরে যাবার আগে দেখা করে যাব।'
সরোজ বিমর্ষ চিত্তে বলল- 'কাছেই তো, চল না! দেখা করেই চলে আসবো।'
চিনুদার সোজাসাপটা জবাব- 'এখন গেলেই প্রচুর সময় নষ্ট হবে।'
অন্য একটা বুদ্ধি পেয়ে গেছে এমন ভাব নিয়ে সরোজ বলল- 'তাহলে দিদি-ওদেরকে এখানে আসতে বলি?'
'না, দরকার নেই। এসে ডিস্টার্ব করবে!'-চিনুদার কাঠকোট্টা জবাব।
নাউড়া এবার কথা না-বলে পারল না। চিনুদাকে নাউড়া বলল- 'চিনুদা, ওর দিদিরা যদি আসে তা'তে দোষের কী?'
চিনুদা এবার ভেংচি কেটে বলল- 'ওর দিদি-ওরা এসেই বলবে, তোমরা রাঁধতে পারবে না। একটু সরে বস। আমরা রেঁধে দিচ্ছি। আমি চাই, আমাদের পুরো কাজ আমরা নিজেরাই করব। রান্না-বান্না শেষ করে তারপর আমরা নিজেরাই গিয়ে দিদিদেরকে নিয়ে আসবো।'
চিনুদার আইডিয়াটা সবারই পছন্দ হয়েছে।
সরোজ ওদের বাড়ীর একজন গোমস্তাকে নিয়ে এসেছে। নাম রহমত। রহমতকে সব জিনিষের পাহারায় বসিয়ে ওরা সবাই মাছ ধরতে গেল। পানিতে নামল চিনুদা আর সরোজ। আর বাকীরা সবাই ডাঙায়। চিনুদা জাল ঠেলে মাছ ধরছে আর মাছের ঝুড়িটা সরোজের হাতে। প্রায় ঘন্টা খানেক কেটে গেল মাছ ধরাতে। পাঁচ-মিশালী মাছের মধ্যে চিংড়ীর পরিমাণই বেশি। তারপর পিকনিক স্পটে ফিরে এল।
এবার রান্নার আয়োজন। সব মশলাপাতি বের করে সরোজের হাতে দিল, বাড়ী থেকে বেটে আনার জন্য। রহমতকে দিয়ে বাড়ীতে পাঠালো সরোজ। কীভাবে কে, কখন, কোন কাজ করবে সব ভাগ করে দিয়েছে। সবাই যার যার কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পাটখড়ি আনা হয় নি। রহমতটা বাড়ীতে গেল। বলে দিতে খেয়াল ছিলো না। চিনুদার কথামতো পাতা কুঁড়িয়ে আনা হলো। পাতা দিয়েই আগুন ধরানো হলো।রান্নার কাজ শুরু হয়ে গেল। গাছে গাছে পাখিরা কোলাহলে মত্ত। আর তেমনি পিকনিকের কাজে মত্ত ওরা সবাই। কাউকে দ্বিতীয়বার কিছুই বলতে হচ্ছে না। কার আগে কে কাজ শেষ করবে তা' নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
চিনুদাকে বেশ খুশী খুশী মনে হচ্ছে। দুটো চুলায় আগুন ধরানো হয়েছে। চিনুদা হেড বাবুর্চির মতো কাজ করছে। নাউড়া যাবতীয় কাটাকুটির কাজ করছে। কাহার আর কাজল সবকিছু ধুয়ে দিচ্ছে।শিবলী একটা চুলার আগুন দেখাশুনা করছে। আসফি আর সোহান আছে মুরগী কাটায়। আসফিই বেশির ভাগ কাজ করে নিচ্ছে। সোহান শুধু আসফির কথামতো সহযোগিতা করছে। সরোজ বসেছে মাছ কুটতে। ফাঁকে ফাঁকে চিনুদাও হাত লাগাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রহমত বাটা মশলা নিয়ে হাজির। রহমতও মাছ কুটতে বসে গেল। এই মুহূর্তে সবাই খুব ব্যস্ত।
চিনুদা বলতেই আসফি জাম গাছে গিয়ে ওঠল। কাহার উঠল গিয়ে আম গাছে। আম গাছে উঠেই একটা আম হাতে নিয়েই কামড়িয়ে খেতে শুরু করল। তারপর আম ছুঁড়ে ছুঁড়ে নীচে ফেলতে লাগল। সবাই কামড়িয়েই খাচ্ছে।
'আধা-পাকা আমের স্বাদই আলাদা।'-আম খেতে খেতে চিনুদা বলল।
অনেকগুলো জাম একসাথে নিয়ে আসফি গাছ থেকে নেমে এল। অবশ্য গাছের ডাল ঝাঁকিয়ে বেশ কয়েকবার নীচে জাম ফেলেছে। গাছ থেকে নেমেই আসফি বেছে বেছে কয়েকটা জাম মুখে পুরে সরোজকে বলল- 'জামগুলোর জাত খুব ভালো রে! দারুণ মিষ্টি!' তারপর একমুঠ করে সবার হাতে জাম পৌঁছে গেল।
বেলা দুটো নাগাদ ওদের রান্নার কাজ পুরোপুরি শেষ হলো। মাঝি আর রহমতকে সবকিছুর পাহারায় রেখে সবাই গেল স্নান করতে। হই-হুল্লোড় করে ওরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। একটা মিনি সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। সরোজ খুব ভালো সাঁতার পারে। ওর সাথে সাঁতরিয়ে কেউ পারে নি। 
স্নান শেষে এসে দেখে কয়েকটা মেয়ে মাঝি আর রহমতের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। চিনুদা দূর থেকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে, সরোজের দিদি আর উনার বান্ধবীরা। কাছে আসতেই মেয়েগুলো যেন একটু গুটিয়ে গেল। চিনুদা একটু গম্ভীর ভাব নিয়েই আছে। সরোজ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
পরিচয় পর্ব সেরেই দিদিরাসব চলে এল রান্না করে রাখা হাঁড়ির কাছে। একটা একটা ঢাকনা খুলছে আর খিলখিলিয়ে হেসে একজন অন্যজনের গায়ে ঢলে পড়ছে আর বলছে- 'বা! বেশ চমৎকার রং হয়েছে। স্বাদটা ভালই হবে। কে রেঁধেছে?'
সবাই চিনুদাকে দেখাল। দিদি চিনুদার থুতনিতে আদরের টোকা মেরে বলল-'তুমি কার কাছে রান্না করতে শিখেছো ভাইটি?'
চিনুদা একটু ভাব নিয়েই বলল- 'আমার মা'র রান্না দেখে দেখেই নিজেই শিখে নিয়েছি।' দিদিদেরকে তেমন পাত্তা না-দিলেও যেচে যেচে এসে এটা-ওটা জিজ্ঞ্যেস করছে। কিছুক্ষণ পর চিনুদা বুঝতে পারলো যে, দিদিরা খুবই আন্তরিক। তাই দিদিদের কথামতো সবাই একসঙ্গে খেতে বসল। ওদের খাওয়া শেষে দিদিরাও অল্প অল্প খেয়ে চেকে দেখল।সবাই রান্নার বেশ প্রশংসা করল। ডাবের পানি পান করেই বাগানবাড়ী ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়ল। দিদিরাও সাথে সাথে।
সূর্য কিছুটা হেলে পড়েছে। বিকেল বেলার প্রথম লগ্ন। ঝিরঝির বাতাস বইছে। রৌদ্রের তাপ ধীরে ধীরে থিতিয়ে এসেছে। পাখিরা অলসভাবে গাছের ডালে বসেই ডানা ঝাপটাচ্ছে। ঘুঘু পাখির ডাক শুনে সোহানের চোখ জোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে পাখিটাকে দেখার জন্য। নাউড়া বুঝতে পেরে দেখিয়ে দিল। সোহানের চোখ জোড়া খুশীতে ঝলমলিয়ে ওঠল। বেশ কতক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে পাখিটাকে মুগ্ধ চোখে দেখল সোহান। দেখতে ঠিক কবুতরের মতো। শুধু আকারে একটু ছোট।
হাঁটতে হাঁটতে এবার কিছুটা জঙ্গলমতো এলাকায় চলে এলো। লতায়-পাতায় হাজার রকমের ফুল চোখ মেলে যেন তাকিয়ে আছে। ফুল-পাখি-গাছ আর পাখির কলতানের রাজ্যে ওরা সবাই কিছুক্ষণের জন্য যেন ডুবে ছিল।
দেখতে দেখতে রৌদ্র অনেকটা হেলে পড়েছে। শেষ বিকেল। পাখিদের ভীড় ক্রমশঃ বাড়ছে। মুহূর্তেই যেন পাখিদের স্বর্গ হয়ে ওঠল এই বাগানবাড়ীটা। এমন নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর জায়গা থেকে চলে আসতে কারও মন চাচ্ছে না। কিন্তু সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সরোজের মা-বাবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে এল। দিদিরা এগিয়ে দিতে এগিয়ে এল। যখন নৌকা ঘাট ছাড়ে তখন সন্ধ্যা তারাটা আকাশে উঁকি দিয়ে যেন হেসে ওঠল। নৌকা অনেকটা দূর চলে এসেছে। সরোজ ও দিদিরা এখনও হাত নাড়াচ্ছে। চিনুদা যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সরোজের দিদির ভালোবাসায় মোড়ানো হাসিমাখা মুখখানা। হঠাৎ কানে বেজে ওঠল দিদির শেষ কথাটা- 'আবার এসো, এই দিদিটাকে দেখতে।'-চিনুদা নীরবে শুধু মাথা নাড়ালো।
ফুল-গাছ-লতাপতা-পাখি আর পাখির মধুর সুর রেখে চলে আসতে কারও মন সায় দিচ্ছিল না। নৌকা চলছে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিয়ে হেসে ওঠল। ধীরে ধীরে সরোজ ও দিদিরা দৃষ্টির সীমার বাইরে চলে গেল। আর এক বুক আনন্দ নিয়ে সবাই ফিরতি পথে।
                                *শেষ*


ব্যক্তিগত ৬ 
রঞ্জন চৌধুরী

১.
নতুন পাখি উড়তে চেয়ে একটু সময় নেবে

কিন্তু একবার উড়লে
শস্যমুখে তাকে ফিরতে দেখাও কম সুখের নয়

২.
শীতের আদরে চুম্বন রেখেছে যে
তাকে একবার জিজ্ঞেস করো তো----

বসন্ত কি এসে গেছে

আমি একবার ন্যাড়া গাছটার কাছে যেতে চাই

৩.
কলেজ বেলার গিটারটা আর সুর তোলে না
অথর্ব হয়ে পরে আছে

এখন তার গায়ে হাত দিলে
ভুল স্বরগমে কেবল চিৎকার করে কেঁদে ওঠে

৪.
পৃথিবীটা কেমন
কমলা লেবুর মত না ডিমের মত

বুঝতে বুঝতে কত কত বছর ফুরিয়ে গেল
মন মগজের চাপে

৫.
রাতবিরাতে ঘুম ভেঙে গেলে যাকে দেখি
সে অন্ধকার

যাকে আমি আলোতে পুড়তে দেখেছি
মৃত বলে জানি

৬.
সদর দরজাটা খুলে রেখেছি
আসতে পারো

অতিথি হয়ে নয় বন্ধু হয়ে

                 


           নামধারী বন্ধু
             রুহুল আমিন

সর্তি করে বলতো,
আমি কি তোর বন্ধু ছিলাম?
আজও কি তোর গ্রাফে আমার অনুপ্রবেশ ঘটে?
অস্বস্তিকর ইচ্ছা গুলো ইন্টারেস্টিং হয় কখন?
পলক হীন দৃষ্টিতে কেউ তাকায় তোর পানে?
তোর নিষ্ঠুরতার জীবন কি আতংকে ওঠে?
স্নেহ ভরা চোখে বিষক্রিয়া কেন?
আজ মৃত্যু বেদনা জাগে মনে।





কার ছায়া আসে
    বনবিহারী কুমার

এই রঙঝরা সন্ধ্যায়
       সুরঝরা আঙিনায়
       কার ছায়া আসে রূপ ধরি '
        সে তুমি , সে আমি মনে করি ।।




           অনুকবিতা গুচ্ছ
          সেখ সাবির মোল্লা

               শকুন

শকুনেরা হারিয়ে গেছে দরাজ নীল আকাশ থেকে,
এখন মেঠো পৃথিবীতে জন্মেছে,
ওদের সংখ‍্যা বেড়েছে বহুগুন।
মৃত মানুষ নয়,
জীবন্ত মানুষের রক্ত খায় ওরা।

                  পুঁজ

যে আকাশ একসময় ভালোবাসার মেঘে ভরে থাকতো,
বৃষ্টির রহমতে শ‍্যামল হয়ে উঠতো রুক্ষ জমিন।
সেই আকাশেই জমেছে বদরক্তের মেঘ,
পুঁজ হয়ে ঝরে পড়ে অনর্গল,
দূর্গন্ধময় নরক হয়ে উঠেছে যেন সব।




         রথযাত্রা
    ডঃ রমলা মুখার্জী

রথের রশি না টেনে এবার মন লোভের রশি টান........
সার্থক তবে হবে শুভ রথ
খোঁজ খোঁজ রে সত্যপথ।
জয় জগন্নাথ, জয় জগন্নাথ,
সেবা কর সবে আতুর অনাথ।
ঘুচিয়ে কালো, জগৎ আলো, চৈতন্য কর গো দান।




      নদী কথায় ভেসে যায় .......
          তীর্থঙ্কর সুমিত 
               (১১)

যখন একা দাঁড়াই রাস্তায়।মনে হয় কত রাস্তা মিশে গেছে এপাশ থেকে ওপাশ।ওপাশ থেকে এপাশ।ভালো লাগা কি না লাগার সূত্র ধরে ক্রমশ এগিয়ে যাই।আরো রাস্তার খোঁজে ।শেষ কোথায় কেউ জানিনা।তবুও শেষের নেশায় শুরুকে খুঁজি প্রতিদিন।আর হারিয়ে যাই কোনো নদীর বুকে। যার স্রোত প্রতিনিয়ত আমায় ভেজায়। যার পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলি।





   অণুকবিতা
  - অগ্নিমিত্র

১। রথের দিন


রথের মেলা হবে না আজ
তবুও খুশি অপার..
রথের খুশি ভাগ করে নিই
এই রথ যে সবার!

২।
গতিময় রথ


দুর্বার গতি হোক না আজকে
মানবতারই রথের ;
সবাই মিলে সাথে থাকা
মিল না হলেও মতের ..।

৩।
শান্তির রথ

শান্তির রথ এগিয়ে চলুক
এই পৃথিবীর বুকে,
গোলমাল যত মানুষের গড়া
যাক না চুকেবুকে!!



গোপাল বিশ্বাসের অনুকবিতা 

               ১)
 কাঞ্চন নজরে ধরেনা,
কাঁচ নিয়ে মাতামাতি।
আমার ঘর অন্ধকার রেখে,
তোমার ঘরে জ্বেলে গেছি বাতি।।
                ২)
যে জিনিস চিতার আগুনে
পুড়ে হয় ছাই,
সে জিনিস বুকের আগুনে
নিয়ত জ্বালায়।

            ৩)
 যে ফুল মধুতে টসটস,
তার কাঁটাতে অতি বিষ।
ভালোবেসে আদরে আদরে
তুই আমাকে নিলামে তুলিস।
                        -




   অতৃপ্তি-১
প্রশান্ত ভৌমিক

বৈশাখী শ্বশুর বাড়ির সবার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, এমনকি স্বামীর সাথেও। অথচ ১০ বছর প্রেমের পর বিয়ে হয়েছিল তাদের। বিয়ের আগে প্রদীপ স্যারের কাছে টিউশন পড়ত বৈশাখী। সেখান থেকেই সম্পর্ক। বিয়ের পরেও স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে বেশি দেরি হয়নি। স্বামী স্ত্রী দুজনেই সরকারি চাকুরিজীবী। ভালবাসার সংসারে একটা মেয়ে আছে।
কিন্তু ইদানীং খারাপ ব্যবহারের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদেরা নানাভাবে জানতে চেয়েছে বৈশাখীর সমস্যা। ও কাউকেই বলেনি। বরং সবার সাথে খারাপ ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যন্ত্রণা বৈশাখীর ভেতরটা কুরে কুরে খায়৷ ও কীভাবে সবাইকে বলবে এত ভালবাসার সংসারের মাঝে ওর মন পড়ে আছে স্কুল জীবনের বন্ধু নারায়নের কাছে?


অতৃপ্তি-২


মালতী বিয়ের পর থেকে কখনোই স্বামীর কাছে সুখ পায়নি। না, স্বামী মোটের ওপর খারাপ লোক নয়। কোন ধরনের নেশাও করে না। মালতীকেও খুব ভালবাসে। শুধু বিছানাতেই যথেষ্ঠ দক্ষতা দেখাতে পারে না। এ নিয়ে মালতীর মেজাজ সারাক্ষণ বিগড়ে থাকে। স্বামীকে ভালভাবে রান্না করে খাওয়ায়ও না। অনেকবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছে দু'জন। ডাক্তার বারবার বলেছে দুজনেই স্বাভাবিক, কারোর কোন সমস্যা নেই। মালতীর স্বামীও বারবার আকারে ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করেছে- ও স্বাভাবিক আছে। মালতীরই চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু মালতী এত কথা শুনতে চায় না। ও শুধু জানে, চাহিদা না মিটলে ও পাগল হয়ে যায়। মাথা গরম হয়ে যায় তখনই।



অতৃপ্তি-৩


মণির বিয়ে হয়েছিল খুব কম বয়সে। সতেরো বছর বয়সে ও যখন স্বামীর ঘরে আসে তখন স্বামীর বয়স ৪০। সেই থেকে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। বিয়ের পর অভাবের সংসারের অভাব কেটেছে। দু'টি সন্তান এসেছে ঘর আলো করে। আজ সাতচল্লিশ বছর বয়সের মণি একজন পরিপূর্ণ নারী। বড়লোক স্বামী টাকা পয়সা দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে। কিন্তু সত্তর বছরের সেই পুরুষের সাথে মনের মিল জীবনে কখনোই হয়নি। এসব ব্যাপারে স্বামী নিতান্তই চুপচাপ থাকে। কিন্তু মণি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আগের দিনের কথা তোলে, দুঃখে কাঁদে। কষ্টটা কাউকেই বোঝাতে পারে না। স্বামীকেও না, ছেলেদেরও না। জীবনের উপরেই অতৃপ্তি জন্মে যায় তার।



অতৃপ্তি-৪


পিটনের সাথে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই রিয়া জানতে পারে যে পিটন উভকামী। এ নিয়ে অশান্তির শেষ ছিল না। কারণ প্রতিটি সঙ্গমের মুহূর্তেই পিটনের অন্য অনুভূতি জেগে উঠত। পলকেই নিজের মধ্যে হারিয়ে যেত। ফলে পিটনের তৃপ্তি হত না। রিয়ার তো তৃপ্ত হবার প্রশ্নই নেই৷ পরদিন সকালে উঠেই পিটন দৌড়াত তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী বন্ধু রূপকের বাড়ি। কিন্তু রিয়ার তো তৃপ্ত হবার কোন উপায় নেই। অতৃপ্তি বেড়েই চলে তার দিন দিন। অতৃপ্তি থেকে অশান্তি। রিয়া বুঝে গেছে তার জীবনে এই অশান্তির শেষ হবার নয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয় সব অতৃপ্তির উর্ধ্বে চলে যাবার। সিদ্ধান্ত নেবার দিন রাতেই সে শেষ চেষ্টা করে সঙ্গমের। যথারীতি বিফল হবার পরে সে চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে।


অতৃপ্তি-৫


প্রিয়ার জীবনে খুব কালো একটা দাগ আছে। যখন তার বয়স ১৪ বছর, একদিন দেখে ফেলে তার মায়ের সাথে মামাত ভাই শুয়ে আছে৷ প্রতিবাদ করতে গেলে মা তাকে শুইয়ে চেপে ধরে রাখে, আর মামাত ভাই ধর্ষণ করে। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত তিন থেকে চারদিন করে মামাত ভাই এসে থাকত তার সাথে। বাকি দিনগুলো থাকত তার মায়ের সাথে। প্রিয়ার বাবা ব্যাপারটা জেনেও কিছু করতে পারেনি তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য৷ একসময় প্রিয়া এই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হল এক ভাল চাকুরিজীবীর সাথে। বিয়ের পর প্রিয়া সুমনকে মেনে নিতেই পারছিল না। ওর মনে, শরীরে অতৃপ্তি চিরকালের জন্য বাসা বাঁধল।




অনু কবিতা
সত্যব্রত চৌধুরী
১)

বরষা আসিল ওই,
ক্ষেত জলে থৈ-থৈ ,
চাষীদের হৈ-চৈ ।।


২)

পাতা-ঝরা জিওল গাছে ,
মঞ্জরীতে  মধূপ  নাচে  ।।




  ঘূর্ণির স্রোতে
  সঞ্জীব দে

ঘূর্ণির স্রোতে পাক খেতে খেতে
কতো অমূল্য জীবন তলিয়ে যায়।





Monday, June 22, 2020

আজকের সংখ্যা

অনুগল্প

এক বহুমুখী প্রতিভার কথা
 - অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

   রাণীর কথায় চমকে উঠলেন আচার্য সায়ণ । শস্ত্র আবার ধরতেই হবে তাহলে ! ..
  মনটা ভালো নেই আচার্যের । ..দুদিন আগেই রাজপ্রতিনিধি কম্পন মারা গিয়েছেন । উদয়গিরির এই প্রাসাদে সর্বক্ষণ শত্রুদের শ্যেনদৃষ্টি!..ওদিকে দাদা হাম্পিতে কী করছেন কে জানে ! বিজয়নগর রাজ্য আরম্ভেই যেন হোঁচট খাচ্ছে ।
 বিধবা রাণী সায়ণকে বললেন :-" আচার্য, আপনি ও আপনার দাদা আচার্য মাধব আমাদের জন্য অনেক করেছেন ।"
 " আমার সৌভাগ্য মহারাণী ।"
 " আমাদের পুত্র সঙ্গম শিশু মাত্র । ..ওদিকে চম্পারায় উদয়গিরি আক্রমণ করবে শুনলাম ।"
 সায়ণও গুপ্তচর মারফত একথা শুনেছেন । মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন ।
 " আপনি আমাদের সেনাপ্রধান হোন আচার্য! রক্ষা করুন আমাদের সবাইকে ।"
 " আমি !"
  " রাজপ্রতিনিধি কম্পনের সঙ্গে মিলে আপনি নেল্লোর ও কাডাপা জয় করেছিলেন, সে কথা আমি জানি আচার্য ।"
 সবে বেদের ভাষ্য প্রস্তুত করছিলেন সায়ণ; এখন যুদ্ধ! তবে রাজকার্য তো সর্বাগ্রে ! যদিও তলোয়ার তাঁর তেমন ভালো লাগে না ।
 যুদ্ধ বাধে; সায়ণের তলোয়ারে ছিন্নভিন্ন হয় চম্পারায়ের দেহ । উদয়গিরির বীর সৈন্যরা জয়ী হয় ।
  ইতিহাস এই মহান আচার্য ও তাঁর দাদাকে মনে রাখেনি। বিজয়নগর রাজ্যের উন্মেষলগ্নে তাঁরা কৌটিল্যের মতোই নির্লোভ সদুপদেশে ও অসীম বীরত্বে  সাম্রাজ্য রক্ষা করেন। এর মধ্যে সায়ণ সুপন্ডিত , ও অত্যন্ত কুশলী যোদ্ধাও ।
 ইতিহাস এত ভুলে যায় কেন ??






        আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে ( সম্পূর্ণ )
                      দীপাঞ্জন ভট্টাচাৰ্য
       (কিংবদন্তী মান্না দের  জন্ম   শতবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য)

নীরদ চন্দ্র চৌধুরী বলে এক বিখ্যাত এবং বিতর্কিত বাঙালি ছিলেন. ভারতবর্ষ তার পোষায় নি নানা কারণে. বিলেতে গিয়ে তিনি তার নাম লিখতেন নীরদ সি চৌধুরী নামে. মানে একদন বিলিতি কায়দায়. তার বহু বিতর্কিত বই এর মধ্যে,, " আত্মঘাতী বাঙালি ' ও " আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ " বহুল পঠিত. এই একটি জায়গায় আমি ওই বিতর্কিত ব্যক্তির সাথে সহমত. যে বাঙালি আত্মঘাতী তো বটেই এমন কি আত্ম বিস্মৃত জাতী ও বটে. তা না হলে এখনকার প্রজন্মের শিল্পী নচিকেতা যখন গেয়ে উঠেন... " আর বিরহের কথা এলে / বুঁকের জ্বালা ভুলে / আজও মাঝে মাঝে শুনি মান্না দের গান... ".  সেই মান্না দের জন্ম শতবর্ষ তো গেলো 2019 সালে. পয়লা মে মান্না দে জন্মগ্রহণ করেন. 2019 তে চিনা কোরোনার জুজু ছিল না. কিন্তু বাঙালি সে ভাবে মান্না দের জন্ম শতবর্ষ ঘটা করে পালন করলো কোই? তবুও তিনি বেঁচে আছেন মনের মনিকোঠায় সকল সংগীত পিপাসু দের হৃদয় তন্ত্রী তে. হিন্দি গান দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু হলেও তিনি গেয়েছেন মারাঠি পাঞ্জাবী গুজরাটি সহ দক্ষিণ ভারতীয় ভাষার বহু গান.
নব্বুই পেরিয়ে ও বাংলা বেসিক গানের তীব্র খরার দিনেও যখন তিনি মৃনাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর সুরে গেয়ে উঠেন... " আমায় একটু জায়গা দাও / মায়ের মন্দিরে বসি ". তখন তা সুপার ডুপার হিট হয়. এমন প্রবৃদ্ধ অবস্থায় এমন ইতিহাস আর কারো নেই. অ্যালবাম টির নাম ছিল মা আমার মা. সেই এলবামের একটি গানেই গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায় বলে গেছেন তার অনাহুত ভবিষ্যত এর কথা. গানটি ছিল... " যখন এমন হয় / জীবন টা মনে হয় ব্যর্থ আবর্জনা / ভাবি গঙ্গায় ঝাঁপ দেই / রেলের লাইনে মাথা রাখি "....... মান্না দে এই গানটি রেকর্ড করতে চান নি
...... কিন্তু নাছোড়বান্দা পুলক বাবু মান্না দে কে রাজি হতে বাধ্য করান. এরপর সত্যি সত্যি পুলক বাবু 2000 সালে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হোন. মান্না দে তার জীবনে যত বেসিক গান এর রেকর্ড করেছেন তার সত্তর শতাংশের ও বেশি গান পুলক বন্দোপাধ্যায় এর লেখা. যাই হোক কিংবদন্তী মান্না দের জন্মদিনের আবহে মনকে আর ভারাক্রান্ত করবো না. চলুন কিছু মজার কথা ও অবিস্মরণীয় গান সৃষ্টির ইতিহাস জানি. অনেকের কাছে চর্বিত চর্বন হতে পারে. কিন্তু এই স্বর্ণালী ইতিহাস যে এই প্রজন্ম কেও জানতে হবে.পুজোর গান বলতে সেই সময় আপামর বাঙালির কাছে এক তুমুল উত্তেজনা ছিল. HMV থেকে গান রিলিজ করার আগেই একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হতো. সেখানে লিপিবদ্ধ থাকতো সেই বছর কে কে কি কি পুজোর গান গাইছেন. তো একবার মান্না দে কে পুজোর গানের জন্য তাগাদা দিচ্ছে  HMV. কিন্তু তখন অব্দি মান্না দের নুতন কোন গান ই তৈরী হয় নি. ভারী মন খারাপ. কারণ পুলক বাবু তখন ও নুতন গান বাধঁতে পারেন নি. একদিন তিনি মান্না দের মন ভালো করার জন্য বললেন " চলুন আমার ভায়রা ভাই এর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি ". মান্না দে নিমরাজি হলেন. সেই বাড়িটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের একটি খনি অঞ্চলে. গাড়ি নিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লেন. কিন্তু যথা স্থানে পৌঁছে পুলক বাবু তার ভায়রা ভাই এর বাড়িটা ঠিক ঠাহর করতে পারলেন না. একটি সুদৃশ্য বাড়ি দেখে তার মনে হলো এটাই হয় তো তার ভায়রা ভাই এর বাড়ি. মান্না দে কে গাড়িতে বসিয়ে তিনি ওই বাড়িতে গেলেন এবং কলিং বেল টিপলেন. দরজা খুলে দিলেন এক অনুপমা সুন্দরী মহিলা. মহিলা প্রশ্ন করে বুঝতে পারলেন যে ভদ্রলোক ভুল বাড়িতে এসেছেন. পুলক বাবুও তার ভুল বুঝতে পেরে প্রায় দৌড়ে গাড়িতে মান্না দের কাছে এসে বললেন চলুন চলুন আর ভায়রা ভাই এর বাড়িতে যেতে হবে না. আপনার পুজোর গান রেডি. বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে মান্না দে কে রীতিমতো জোড় করে একটি অচেনা গানের স্কুলে গিয়ে উঠলেন. মান্না দে কে দেখে ওই অখ্যাত গানের স্কুলের সবাই তো বিস্ময়ে হতবাক. পুলক বাবু নির্বিকার ভাবে একটা হারমোনিয়াম মান্না দের দিকে টেনে দিয়ে বললেন চলুন সুর করুন. বলেই এক ছাত্রীর গানের খাতা টেনে নিয়ে লিখে ফেললেন " ও কেনো এতো সুন্দরী হলো / অমনি করে ফিরে তাকালো / দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই / আমি তো মানুষ.... ". সত্যিই তো মানুষই তো বারবার প্রেমে পড়বে,  ভালোবাসবে. খাক না দুয়েকটা হোঁচট. এভাবেই হটাৎ ই সৃষ্টি হয়ে গেলো সেই অমর গান. যা আজও বাঙালির হৃদয় তন্ত্রী তে ঝংকার তুলে.
মান্না দে যখন হিন্দী গানের জগতে প্লে ব্যাক শুরু করেন সেই সময় তার গান দুর্দান্ত হলেও কোন বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত জন কে প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে যেতে লজ্জা পেতেন. কারণ তার গান তখন পর্দায় পিক্চারাইজ হতো কোন ভবঘুরে, পাগল, ভিখারি, বা সন্ন্যাসীর লিপে. সেই সময় হিন্দী গানের জগৎ শাসন করছেন রফি, মুকেশ, কিশোরকুমার এর মতো ব্যক্তিরা. অনেক সংঘর্ষ করে আলাদা গায়ন শৈলী তৈরী করে মান্না দে কে হিন্দী গানের জগতে স্থান পাকা করে নিতে হয়েছে. মান্না দে যে কোন অনুষ্ঠানে তার গায়ক হয়ে উঠার পেছনে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে এর অবদান খোলা মনে স্বীকার করতেন. কাকার সাথেই তিনি বোম্বে জান. এরপর হয়ে জান শচীন কর্তার সহকারী. মান্না দে বলতেন সব কাজেতেই আমি কর্তার সহকারী ছিলাম.শচীন দার গানের নোটেশন তৈরী করে দিতাম, পান এনে দিতাম, তার বাজারের থলে বইতাম, এমনকি দুজনে একসাথে ফুটবল খেলা দেখতেও যেতাম. দুজন আবার ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান দুই ভিন্ন দলের সমর্থক ছিলেন. শচীন কর্তার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন মান্না দে. তাঁদের ফুটবল খেলা দেখা নিয়েও অনেক গল্প আছে. মুম্বাই তে যখন মান্না দের বেশ নামডাক সেই সময় একদিন কলকাতার বাড়িতে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন,  " হ্যাঁ রে তুই কি বাংলা গান গাইবি না কোনোদিন? " মান্না দে তার মাকে বললেন " বাংলা গান গাইতে তো আমার খুব ইচ্ছে করে মা. কিন্তু সেভাবে তো কেও ডাকে নি. " পরবর্তীতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল লতাজীর জন্য বানানো দুটি গানের দৌলতে. গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এর কথায় আর মান্না দের সুরে তৈরী করা দুটি গানের রেকর্ডিং এ লতাজি দুদিন সময় দিয়েও আসতে পারেন নি. অগত্যা মান্না দেই গাইলেন " কত দূরে আর নিয়ে যাবে বলো " এবং আরো একটি গান. এরপর তো বাংলা গানের ভুবনে রচিত হলো নুতন ইতিহাস.নচিকেতা ঘোষ খুব সকাল বেলা সুর নিয়ে বসতেন. সেবার মান্না দের পুজোর গানের জন্য সকালবেলা নচি বাবু তার পাইক পাড়ার বাড়িতে বসে আছেন. এদিকে গীতিকার পুলক বাবুর কোন পাত্তা নেই. বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে নচিকেতা ঘোষ ফোন করলেন পুলক বন্দোপাধ্যায় কে. পুলক বাবু ফোনেই বললেন তিনি খুব অসুস্থ. আজ আসতে পারবেন না. এদিকে সুরের ভুত চেপে বসেছে নচি বাবুর মাথায়. তিনি বললেন আপনি ফোনেই গানের মুখরা টা বলুন. পুলক বাবু অগত্যা বললেন " ক ফোটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালোবাসবে ". সুর নিয়ে বসলেন নচিকেতা ঘোষ. এভাবে ফোন এর মাধ্যমেই তৈরী হলো ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক অবিস্মরণনীয় গান.নচিকেতা ঘোষ এর বাড়িতে প্রায় ই আসতেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার. এসে দেখতেন নচিকেতা বাবুর ছেলে সূপর্ণ কান্তি  ঘোষ যাকে সবাই খোকা নামে ডাকতো সে শুধু আড্ডা মারছে. একদিন গৌরী বাবু জিজ্ঞেস করে ফেললেন, " কি রে তোরা এতো আড্ডা মারিস কেন? " উত্তরে খোকা বললো কাকু আড্ডা নিয়ে একটা গান লিখো না. আমি সুর দেবো আর মানা কাকু গাইবে ( এই নামেই উনি মান্না দে কে ডাকতেন )" এর পর সেই কথার সূত্র ধরে তৈরী হলো আর একটা ইতিহাস. গৌরী বাবু লিখলেন " কফি হাউস এর সেই আড্ডা টা আজ আর নেই ". সূপর্ণ কান্তি ঘোষ এর সুরে মান্না দের কণ্ঠে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলো সেই চিরকালীন গান. এখন আমার দশ বছর বয়সী মেয়েও সেই গান গুনগুন করে. মান্না দে পরে সূপর্ণ কান্তি ঘোষ এর সুরে সাড়া জাগানো দুটি অ্যালবাম " সারা বছরের গান এবং সারা জীবনের গান, "ও রেকর্ড করেন.  তুমুল জনপ্রিয় হয় অ্যালবাম দুটি. এছাড়া করেন, " সে আমার ছোট বোন '".  মান্না দের গান সৃষ্টির ইতিহাস একটি নিবন্ধে লেখা যায় না. সে এক মহাভারত. " দুই পুরুষ " ছবির জন্য গান তৈরী করতে সুরকার অধীর বাগচীর বাড়িতে এলেন গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়. অধীর বাবু একটার পর একটা রাগ ট্রাই করছেন কিন্তু কিছুতেই মনমতো হচ্ছে না. একসময় বলেই ফেললেন, " ভালো লাগে না ".  পুলক বাবু বললেন " এই না ভালো লাগা নিয়েই তো একটা ভালো গান হতে পারে ".  বলেই লিখে ফেললেন আর এক জনপ্রিয় গান " বেহাগ যদি না হয় রাজি / বসন্ত যদি না আসে / এই আসরে ইমন তুমি / থাকো বন্ধু আমার পাশে ".  মান্না দে বলতেন মানুষ এর মধ্যে সেন্স অফ হিউমার বা রসবোধ না থাকলে সে প্রকৃত মানুষই না. এই ব্যাপারে শচীন কর্তা কে গুরু মানতেন মান্না দে. তার মতে রসবোধ এর এপ্রিশিয়েট করার মতো লোক থাকাও প্রয়োজন. তারা একে অন্যের সেন্স অফ হিউমার কে এপ্রিশিয়েট করতেন. মান্না দে বিরহের গানের রাজা হলেও তাঁদের সাংসারিক জীবন ছিল খুব সুখের. স্ত্রী সুলোচনা দেবী কে খুবই ভালোবাসতেন মান্না দে. আবার মাঝে মধ্যে খুনসুটি ও হতো. মান্না দের কথায় " মাঝে মাঝে মন্দ হলে মন্দ কি /কাঁটা না বিধিয়ে / হাতে তুললে গোলাপ / আনন্দ কি ". মান্না দে বলতেন সব সংসারেই হয় তো এমন হয়. তারপর ভুল বুঝাবুঝি এক সময় কেটেও যায়. আর তখন সত্যি সত্যি " বিরহের জ্বালার পরেই মধুর লাগে /মিলন সুধা পান /এতো রাগ নয় গো / এ যে অভিমান ". কাজের প্রতি সেই সময় এর শিল্পী দের নিষ্ঠা ও ভালোবাসা ছিল অনুকরণ যোগ্য. যাকে আমরা স্বর্ণ যুগ বলি. একদিন রাত সাড়ে দশ টার সময় লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে স্বয়ং শচীন কর্তা হাজির মান্না দের বাড়িতে. এসেই বললেন হারমোনিয়াম টা বের কর. এক্ষুনি এই গানটা তুলতে হবে. কাল রেকর্ডিং. মান্না দে আর কি করেন. বসে গেলেন গান নিয়ে. সৃষ্টি হলো অমর গান " পুছনা কেইসে মেনে রেন বিতাইয়ি " গালার চাকতি গেলো. এরপর গেলো পঁয়ত্রিশ ও আটাত্তুর আর পি এম এর রেকর্ড. এলো ক্যাসেট. তাও একসময় বিদায় নিলো. এর পর এলো সি ডি / ডি ভি ডির যুগ. সেটাও যাই যাই করছে. এখন সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন বা আধুনিক ডিভাইস. ইউ টিউব সার্চ করলেই ভেসে উঠে মান্না দের সব জনপ্রিয় গান. ভবিষ্যত এ প্রযুক্তি কোন পথে যাবে আজকের দিনে বসে তা কেও জানেনা. কিন্তু যে প্রযুক্তি তেই মানুষ সাবলীল হোক হলফ করে বলা যায় মান্না দের গান থেকে যাবে শ্রোতা দের হৃদয় এর মনিকোঠায়






                        সরলরেখা
                        তানবীর


এখন শুধুমাত্র   রাত. . .আরও রাত আছে
 রাতকে   যদি সারা রাত  গহনা পরাই
 দেখি  -এ সত্যি আঁচল -আঁচল।
বাতাস হয়ে ছুটে আসে
রাতের কালো চুল  বঙগোপসাগরে ,
এখন শুধু রাত আর রাত আছে,

সহ্য করে নেয়ার অভ্যাসে।


হাত ধরে চলে যাওয়া যায় বহুদূর ,
হয়তো...!
যেমন গুটি পায়ে রাত নামে
কোকিলের কুহুতানে বহুদূরে - বহুদূর|
এখন শুধু আ -কাপড় , আ-  বণ্টন  আছে,

জীবনের এক অবিশ্বাস্য প্রাক্তনকে অঞ্জলি
যদি এমন হয় বহুবার?

এখন    রাত. .  "ৎ "আসছে ছুয়ে।

তোমার নাম, তোমার গন্ধ,
তোমার  বাড়ি,
তোমার  সাথে প্রাক্তন  স্বপ্ন।

আসছে সকাল - ইতি -বাউন্ডুলে ।






জীবন চুঁইয়ে পড়ে নোনাজল
পৃথা চট্টোপাধ্যায়

আরো বেশি নিঃসঙ্গ হলে
             হৃৎপিন্ডের শব্দ শোনা যায়
নিঝুম দুপুরকে মাপা যায় লীনতাপে
   বৃত্তের জ্যা ধরে হেঁটে গেলে
           পাওয়া যায় অর্থহীন ব্যাসবাক্য
সমোচ্চারিত  উল্লাসে
     হয়তো পেতেও পারো উৎসব প্রাঙ্গণ

তবুও তো
জীবন চুঁইয়ে পড়ে নোনাজল
পাখিদের শিস্ দেওয়া রাতে
       বিপণ্ণ  বিস্ময় এক খেলা করে...







                             মুক্তি

                     শাশ্বত ভট্টাচার্য্য

সকাল থেকেই মনটা আজ একেবারে ভালো নাই তিতাইয়ের,বারেবারে খালি মনে হয়, গ্ৰামে কতো ভালোই না ছিলো সে, সকালে ঘুম ভাঙা পাখির ডাকে, গাছে গাছে খেলে বেড়ানো কাঠবিড়ালি, তাকে দেখলেই পালিয়ে যেতো ঝটপট, চারিদিকে শুধু মাঠের পর মাঠ, মাঠ জুড়ে ফলে থাকা সোনার মতো ঝকঝকে ফসল, আর মাঠের মাঝে ওই কাকতাড়ুয়াটা যে কেমন যেন একদৃষ্টে চেয়ে থাকতো তার দিকে, ইরা-যামিনীদের সাথে কত খেলা, কত দুষ্টুমি, গোটা গ্ৰাম চষে বেড়ানো, ঘুড়ি ওড়ানো,ফল চুরি, হারু ময়রার দোকান, দাদুর কাছে গল্প শোনা, বিকেলে দাদুদের চায়ের আসর, তারপর...হঠাৎ বাবার অফিসে বদলি...শহরে চলে আসা, শীতের সকালের ধোঁয়াশার মতোই একটা তার চোখের সামনে থেকে একটু একটু করে ঝাপসা হয়ে যায় দিনগুলো, চলে আসে আস্ত একটা শহর, কিন্তু কিন্তু...এই শহরটা...কেমন যেন একটা অদ্ভুত, খাঁচার মতো, চারিদিকে খালি বাড়িঘর আর রাস্তাঘাট,গাড়িঘোড়া, কংক্রিটের জঙ্গল, না আছে গাছ, না আছে পাখি, আর না আছে পাখির ডাক, লোকেদের সারাক্ষণ যেন তাড়া..ভীষণ তাড়া, কেউ কারো খবর নেয়না, একদণ্ড দাঁড়ায় না পর্যন্ত, নতুন স্কুলের বন্ধুগুলোও ভালো নয়, ঘুরে বেড়ানো তো দূরের কথা, কথা পর্যন্ত বলেনা, খালি নম্বর-নম্বর,পরীক্ষা-টিউশন...একটুও ভালো লাগেনা তিতাইয়ের, শহরের এই পরিবেশে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, চোখ দিয়ে জল পড়ে, পড়ার বইটা সামনে খুলে রাখলেও মন যে এতটুকু বসেনা তার,মুক্তি চায় সে...মুক্তি, উড়ন্ত পাখির মতোই মুক্তি।মা-বাবারও ভারি কষ্ট হয় তাকে দেখে, কিন্তু কিছুতেই ভেবে উঠতে পারেনা ঠিক কী...কী করা যাবে, অবশেষে অনেক ভেবে একটা ফন্দি আঁটে তিতাইয়ের বাবা। বিকেলে তিতাই ঘরের মেঝেতে বসে নিজের মনে আঁকছে, হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ, তিতাইয়ের বাবা গিয়ে দরজা খোলে, তিতাই রংপেন্সিলের বাক্সে রংগুলো গুছিয়ে রাখছে, এমন সময় হঠাৎ কানে এলো বিভিন্ন ধরনের পাখির শব্দ, কখনো দোয়েল, কখনো কোকিল, কখনো টিয়া...এ কী...কীভাবে সম্ভব! ছুট্টে বাইরের বারান্দায় যায় তিতাই, কিন্তু নাহ্, সেখানে তো কেউ নাই, গাছই নাই তো, পাখি আসবে কোত্থেকে, তার মনে হলো আওয়াজটা যেন ঘরের দিক থেকে আসছে, বেশ একটা উৎসাহ জাগলো তিতাইয়ের মনে, তাহলে কী বাবা কোনো...., আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে হাজির হয় বসার ঘরে, গিয়ে দেখে, ওমা একি, এ যে রেকর্ডিংও নয়, পাখিও নয়, একটা লোক, যে বিভিন্ন ধরনের পাখির আওয়াজ বের করছে মুখ থেকে, অবাক হয়ে গেলো তিতাই, চোখের জল যেন মুহূর্তের মধ্যে লোপাট।তিতাইকে দেখে মুচকি হাসে লোকটা, বাবা বললো, "কী রে তিতাই, চিনতে পারছিস, সুদেব কাকু, গ্ৰামে বাড়ি", ঠিক তো, তিতাই তো বেমালুম ভুলেগিয়েছিল সুদেব কাকুর কথা, খুব ছোটোবেলায় তাদের বাড়িতে আসতো, দাদুর আড্ডায়, তার খুব বন্ধু ছিলো, কোলে নিতো, নানারকম পাখির আওয়াজ শোনাতো, তারপর অবশ্য শহরে চলে আসে, অনেকদিন কথাও হয়নি, ঠোঁটটা নাড়িয়ে আলতো হেসে ওঠে তিতাই, সুদেবকাকু আবারও বিভিন্ন পাখির আওয়াজ করতে থাকে, তিতাইয়ের মনটা খুশি হয়ে ওঠে‌, তার মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে আবার যেন সে হারিয়ে গিয়েছে ওই গ্ৰামের মাঠে, শেখার জন্য খুব বায়না করে তিতাই, সুদেবকাকুও তাকে প্রমিস করে শিখিয়ে দেবে।ঘন্টাখানেক আড্ডার পর সুদেবকাকু চলে গেলেন সেদিনের মতো‌, পরদিন বিকেলে আবার যথাসময়ে এসে হাজির, হাতে তাঁর একটা খাঁচা, যার ভিতরে দুটো টিয়াপাখি। খাঁচাটা তিতাইয়ের হাতে দিয়ে খুব যত্ন করতে বলেন সুদেবকাকু, তারপর নিজেও আবার বিভিন্ন পাখির আওয়াজ করে শোনান তিনি, ভারি মজা হয় তিতাইয়ের, আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে সে, মনের দুঃখটা একেবারে ধুয়েমুছে সাফ, প্রতিদিন খুব খুব যত্ন করে সে পাখিগুলোর, স্কুল থেকে এসে কথা শেখায়, সুদেবকাকুও মাঝেমধ্যে আসেন, পাখির আওয়াজ শোনাতে।শুকিয়ে যাওয়া মুখটা যেন আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তিতাইয়ের, দিন চলে যায়, কংক্রিটভরা শহরেও কেমন একটা নতুন বাঁচার রাস্তা খুঁজে পেলো সে, কিন্তু...সে আনন্দ বোধহয় সহ্য হলোনা নিয়তির... হঠাৎ শুরু অসহ্য পেটে যন্ত্রণা,  ডাক্তার বললেন, ব্লাড ক‍্যানসার লাষ্ট স্টেজ, অনেক চিকিৎসা করা হলো, কিন্তু নাহ্, পারা গেলোনা, ক্রমশ অবনতি হতে থাকলো পরিস্থিতি, বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হলো তাকে, সারারাত একটিবারের জন্যও দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনা তিতাই, অসহ্য যন্ত্রণা, অদ্ভুত অস্থিরতা, চোখেমুখে ফুটে ওঠে কষ্টের ছাপ।ভোরবেলা উঠেই তিতাইয়ের বাবার চোখে পড়ে, বিছানায় নাই তিতাই, শুরু হলো খোঁজ, কোত্থাও নাই,চিন্তায় যেন মাথা কাজ করছেনা, তিতাইয়ের বাবা বললেন, "আজব এমন অসুস্থ শরীরে গেলো কোথায় মেয়েটা!", বালিশের পাশে হাতড়ে ফোনটা খুঁজতে যাবে, হঠাৎ একটা শব্দ, বেশ জোরে, বারান্দার দিক থেকে মনে হলো, তিতাইয়ের বাবা-মা তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো...মেঝের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে তিতাইয়ের নিথর দেহ, পাশে পড়ে রয়েছে পাখির শূন্য খাঁচাটা, মুখে যেন অমলিন একটা হাসি, চোখদুটো তার স্থির আকাশের দিকে...অনেক অনেক দূরে...গভীর শূন্যে!








                       বিচ্ছুরিত বলয়
                         লক্ষণ কিস্কু 

   যখন বন্দী জীবন অতিজীবন লয়ে প্রাণ বায়ু বয়ে ছটপট তীরবিদ্ধ পাখি ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে ভাবে  এখন কোন দিকে যাব।
    নিজ চরণখানি লক্ষণ রেখা পেরিয়ে যেতে বুক দুরু দুরু করে। মনে হয় এক পা থেকে আরেক পায়ের দূরত্ব অলীক অশরীরী।
       বাসযোগ্য বসুন্ধরা অভি বিচ্ছুরিত বলয় ঘেরা। যেথায় অভিগম নিবে সেথায় নীড় হারা পাখীর কলরব। ভাবি, আমি জাগিয়ে তুলতে পারি তোমার হৃদপিণ্ড। তোমার জাগতিক সত্তা।
        আমার প্রয়াস ঔষধ, সেবক- সেবিকা হাত,  লাখ লাখ নিষ্প্রাণ আঙুলের উৎক্ষেপ। 
       আমি বন্দী জীবনের কথা বলি, গহন অন্ধকারে তোমার মৃত চোখের কোটর থেকে অদৃশ্য সরিয়ে অনুভূতির আবহে অবগাহন করে দিতে চাই অধিকারহীন আপ্লুত চুম্বন। ভীত চঞ্চল জীবন বদ্ধ জ্বালামূখ বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে আজ বা কাল। 






                       " তবু "
               
                 হামিদুল ইসলাম।
               
ঝুল বারান্দায় বসে থাকি
একাকী
নিঃশব্দ হাওয়া
লোকগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে
আমরা খোঁজ রাখি না কারো   ।।

প্রতিদিন খবরের পাতায় উঠে আসে
প্রাত‍্যহিক জীবন
বেসামাল হিসেব নিকেশ
স্বপ্নগুলো রোজ রোজ ভাঙে মনের বাগান
তবু অন‍্যের সাথে হয়ে থাকি জড়ো     ।।

নদীর জলে ভাসান আজ
প্রাণকোষ
প্রাণের প্রতিমা
গভীর শোকে ভেঙে পড়ে আকাশ
স্মৃতিগুলো নিপাত্তা তবু ভরিয়ে রাখি দুহাত    ।।

আমাকে ভোলাতে আসে
মহিমের দল
বিশ্বাসঘাতক
সাত‍্যকি সর্বনাশ
পিঠের ছালেতে রক্ত ভাসে সারারাত 





ধারা-পাত 'এর ধারাপাত
       সত্যব্রত চৌধুরী

বৈশাখের  বৃষ্টি ,
যত  অনাসৃষ্টি ।
জ্যৈষ্ঠেতে ধারা-পাত ,
আঁবগুলি  চিৎপাৎ ।
আষাঢ়েতে  বাদল ,
হৃদে বাজে  মাদল ।
শ্রাবণে  মুষল-ধারা,
চাষীরা  পাগল-পারা ।
ভাদ্রেতে  ঝুর-ঝুরে ,
চিত্ত হয়  ফুর-ফুরে ।
আশ্বিনের  ঝটকা ,
ওড়ে  চাল, মটকা ।
কার্ত্তিকেতে কদাচিৎ ,
ধান কাটা  বিলম্বিত ।
শুষ্ক মেঘ  অঘ্রাণে ,
পুলক জাগে এ-প্রাণে ।
পৌষে মেঘের  শ্বাস ,
ডেকে আনে সর্বনাশ !
ধারা যদি আনে  মাঘ ,
গর্জায় শীতের  বাঘ ।
ফাগুনে বৃষ্টি  আগুন,
মঞ্জরী পোড়ায় দ্বিগুণ ।
চৈত্রেতে  নিদাঘ-শেষে ,
সিক্ত-ধরা বরুণ বেশে ।।







বুড়ো ল্যাম্পপোস্ট
পলাশ পাল

প্রাকৃতিক আলোর খেলা শেষ।
এবার তবে আমার পালা।
পথের ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে র‌ই।
ওই দরিদ্র সমাজ ছুটে আসে আমার কাছে
সাদা পাতার ভাষা গুলো আবছা লাগে দেখে।
আমি স্বস্তির আলো দিই ওই ভাষার মাঝে।
প্রেমের শহরে রাতের আঁধারে ধর্ষিত হয় ওরা।
নিরুপায় হয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে
এগিয়ে আসে যৌবন ছেঁড়া পোশাকেই।
পথের ধারে একটু স্বস্তির আলো খোঁজে ওরা।
আমি বিলাসী আলোর চুম্বনে ভরিয়ে দিই।
ভালোবেসে এর থেকে আর যে
কিছু দিতে পারি না।
আমি অটল নিজের খেয়ালে।
বৃষ্টিতে ভেজা নিস্তব্ধ শহরে আমি একা।
ভিজতে থাকে আমার মরিচা পড়া শরীর।
এভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর।
মরিচা গুলো আরো পুরু হতে থাকে।
দেখায় ঠিক পোড়া বারুদের ঝলসানো দেহের মতো।
তাতে কি হয়েছে?
আমার স্থান তো পথের ধারেই
ডাস্টবিনের মতো।
আমি যে এক বুড়ো ল্যাম্পপোস্ট।




          আমি করোনা বলছি
        -------সৌমেন সরকার

আমার প্রিয় মানবসভ্যতা,

প্রতি প্রায় একশত বৎসর পর পর
যে সকল অতিথিগণ সারা পৃথিবীতে এসে
মানবসভ্যতাকে কোন না কোন শিক্ষা দান করে যান,
তাদের উত্তরসূরি আমি।
তাদের দ্বারা আমার হস্তে অর্পিত সেই গুরু দায়িত্ব-
আমি পালন করছি।
তাই ২০১৯-২০২০ তে চলে এসেছি,
আর বেশ সাফল্যের সাথেই আপন দায়িত্ব পালন করছি।

আমি Covid-19,
যাকে তোমরা ভালোবেসে নোভাল করোনা ভাইরাস নামে ভূষিত করেছ!
আমার সম্পূর্ণ নাম Corona Virus Disease 19.
আমি কিন্তু তোমাদের মত ভালো সাজার মুখোশ পরে থাকিনা।
আমি আমার কর্তব্য পালনে সর্বদাই অবিচল।
আমার হাত থেকে সারা পৃথিবীর নিষ্কৃতির কথা এখন আপাতত ভুলে যাও সকলে।
অবশ্যই আমি চলে যাব,
তবে তার আগে তোমাদের যে শিক্ষা দিতে এসেছি সেটি আগে সম্পন্ন করি।

প্রকৃতি-পরিবেশ তোমাদের মায়ের মত,
এমনকি মায়ের থেকেও অনেক বেশী...
তবে তারও সহ্যের একটা সীমানা আছে।
আজ তোমরা যেভাবে পরিবেশের সাথে ক্রমবর্ধমান অনাচার করে চলেছ,
তার জবাবেই এবার আমি চলে এলাম শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে।
তাকিয়ে দেখো,
লকডাউনে সারা পৃথিবী সেরে উঠেছে,
সুস্থ হয়ে উঠছে প্রকৃতি-পরিবেশ,
ভরে উঠেছে ওজোন স্তরের তীক্ষ্ণ ক্ষত।
বিষাক্ত নগরায়ণের লোলুপ জিহ্বা ক্রমপ গ্রাস করে চলছিল সারা বিশ্বকে।
এখন কত শান্তি চারিদিকে,কত সুন্দর চারিদিক।

ধরে নাও শেষ সুযোগ পেয়েছ তোমরা।
দেখো,কেবল তোমাদেরকেই শিক্ষা দিয়ে চলেছি।
মনুষ্যেতর কোন প্রাণী,উদ্ভিদ
বা আর কাউকেই কিন্তু আমি স্পর্শ করে কষ্ট দিচ্ছি না।
এই মহামূল্যবান শিক্ষা কেবল তোমার জন্য।
পৃথিবীকে ভালোবাসো,প্রকৃতিকে ভালোবাসো,পরিবেশকে ভালোবাসো।
এরাই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু।

সময় আছে এখনো,
পৃথিবীর সুস্থতার দায়িত্ব তোমরা আপন হস্তে তুলে নাও।
দেখবে,তুমি যতটা ভালোবাসা ও যত্ন দেবে,
তার থেকে শতগুণ বেশী প্রকৃতি তোমাকে ফিরিয়ে দেবে।

আশা করছি আর দেখা হবে না,
তবে যদি হয় তবে আবার আসব ফিরে Devil Virus হয়ে।
সুধরে যাও,
আশা করছি এই শিক্ষা যথেষ্ট হবে তোমাদের জন্য...

ইতি
তোমাদের সকলের ত্রাস
নোভাল করোনা ভাইরাস




        লকডাউন,ক্যানসার  আর জামাইষষ্ঠী
                 পরাশর গঙ্গোপাধ্যায়

 টুবলুদার মোটর সাইকেলে শ্বশুর বাড়ি জামাই ষষ্ঠী করতে চলেছে প্রকাশ।সাত বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম।

সরকারি উচ্চপদস্থ বাবার মেয়ের সামান্য চাকরি করা ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে মেনে নেয়নি শ্বশুর বাড়ির কেউ।

গত আটমাস আগে,প্রকাশের শাশুড়ির বুকে ক্যানসার ধরা পড়ে।চিকিৎসার জন্য যে লোকবল ভীষণ প্রয়োজন অর্থের অহংকারে ভেবেই দেখেনি এতদিন তারা।এগিয়ে আসে প্রকাশ।একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন শাশুড়ি।তারপরই এবছরের জামাই ষষ্ঠী।শাশুড়ি নিমন্ত্রণ করে প্রকাশকে।প্রথমে ভেবেছিল যাবেনা।ওর বউ আর ছেলে সেই থেকে রয়েছে ওখানেই।তারউপর লক ডাউন। যাওয়ার সমস্যা।কিন্তু  ক্যানসার আক্রান্ত এক মহিলার আর্তি ফেলতে  পারলোনা সে।তাই পাশেরবাড়ির  টুবলুদার বাইক একবেলার জন্য ধার নিয়ে ঝড় জল এড়িয়ে এগিয়ে যায় প্রকাশ...




স্তব্ধ
    ---টুম্পা মুখার্জী

ক্ষমতার অলিন্দ শিয়ালের গর্জনে মুখরিত,
ধী এর অধিপতিরা আজ কবরে শায়িত,
চারিদিকে উল্লাস আক্রমণ, হননের কদর্য ঘূর্ণন,
গৃধ্নুর শীৎকারে আকাশ ছিন্নভিন্ন,
ক্ষয়িঞ্চু সূর্য জাগরণের আলো জ্বালাতে অক্ষম,
আফিমের নেশায় আচ্ছন্ন বিবেক
মাকুতে আর স্বপ্নের তন্তু বোনে না।
অন্ধকার, অন্ধকার...
ঈশান, বায়ু, অগ্নি নৈঋত কোনে কেবল অন্ধকারের প্রাচীর,
উত্তোরণের স্বর্ণমৃগ শেষ নিঃশ্বাস
ফেলার আগে চীৎকার করে...
"লক্ষ্ম.....ণ     বাঁ...চা......ও"।
         
ধী এর অধিপতিরা ওম ভেঙে জেগে ওঠে,
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা শিশুর
শব্দে চারিদিক মুখরিত।
             


সেরা বন্ধু বাবা
জয় জ্যোতির্ময়

বাবা তুমি আমার প্রথম বন্ধু
প্রথম ভালোবাসা,
তোমার কাছে শেখা আমার
জীবনের আশা।

চলার পথে মূল মন্ত্রণা
দিছো বাবা তুমি,
প্রথম গৃহ শিক্ষক বাবা
তোমার চরণ চুমি।

তুমি বাবা সবার সেরা
ভাবতে আমায় হিরো,
তুমি ছাড়া যেখানে আমায়
ভাবতো সবাই জিরো।





     গগন
মিলন পুরকাইত

আজ নাকি ঐ গগন মাঝে,
চাঁদ উঠেছে রঙিন হয়ে।
পাখিরা সব দলে দলে,
উড়ছে মনের আনন্দ।
রজনী গন্ধার গন্ধে যেন,
ভরে গেছে নীল আকাশে।
পাখিরা ও সব রজনীর,
খুঁজে ছুটছে দিনরাত।



          শাশ্বত
   বাপন দেব লাড়ু_

সবার দখলেই রয়েছে একটা আকাশ,
কিছুটা হারিয়ে ফেলেই
তাকে আবার সাজাই নিজের মতন করে।
যত পথ আছে সব কৃষ্ণ গহ্বর এর সাথেই মিশে,
অজানা সংকেতের তীর চিহ্ন আঁকে।
মুহুর্তেই স্পষ্ট হয় অবহেলিত বর্ন মালা।
আঙুল ঘষে তাকে মোছানো কঠিন ;
'ট্রেসিং' করতে গিয়ে একটা মানচিত্র,
বহুবার ভুলভুলাইয়ায় আটকা পড়েছি আমি।
শূন্যগর্ভ থেকে উঠে আসে আকরিক,
এইযে স্বাধীন সত্তার আলাপচারিতা,
ফিরিয়ে নেবে একদিন জানি,
আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস হয়ে,
থাকবে বাকিটা সময়, নির্বিকার ইতিহাস।।



বীরের মর্যাদা
বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

উত্তর সীমান্তে বেজেছে ওই যুদ্ধের দামামা,
ওরে জওয়ান হও আগুয়ান শত্রুর মুখে ঘষে দিতে ঝামা।
ক্ষমতা প্রয়োগে লাগাও ক্ষত্রিয় তেজ বল বুদ্ধি,
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে বদলা নিতে হবে সুধী।
একশতআটত্রিশ কোটি ভারতভূমির বিশ্বস্ত জাগ্রত সন্তান,
কোন বেইমান,ভারত জওয়ানে বধিতে সেজেছে শয়তান।
রক্তচক্ষু রুদ্রমূর্তি ধরিয়া শত্রুরে ক'র বিনাশ,
আঘাতে আঘাতে জর্জরিত ক'র শত্রুশিবিরে ডেকে আন সর্বনাশ।
প্রস্তুত থাক দেশের জন্য দিতে আত্মবলি দান,
যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ ত্যাগ পরম -ধর্ম শহিদের সম্মান।
রাত্রি নিঝুম চোখে নাই ঘুম কর্তব্যে অবিচল দৈনিক,
সীমান্তে সদা জাগ্রত ভারতমাতার সাহসী নির্ভিক সৈনিক।
রুধিতে শত্রু সেনার আগ্রাসন গড়ে তোল প্রতিরোধ,
প্রত্যাঘাতে বদলা হা'ন প্রতি আঘাতে নাও প্রতিশোধ।
সহজলভ্য নহে এ কঠিন কর্ম সহজে হয়না আসান,
বীরসৈনিক বক্ষ পাতিয়া আগলে রাখছে ভারতমাতার নিশান।






সাথে থেকো তুমি

            -- বাপ্পা দাস

সাথে থেকো তুমি জীবনের সেই দিনে ,
যখন দিনটাকে খুব বড় মনে হয় ;
নিদ্রাহীন রাত যেন শেষ হওয়ার নয় ।
যখন বিশ্বাস থাকে না নিশ্বাসে ,
চোখে সব কিছু আপছা ছবির মত ভাসে ।
যখন নিজের শরীর পায়ে বোঝা মনে হয় ,
রাতের ঘুমে সকালে জেগে ওঠার অনিশ্চয়তা রয় ।
সাথে থেকো তুমি জীবনের সেই দিনে ,
যখন জীবন চলে তীব্র গতিতে ,
লিখতে থাকে তার শেষ কাহিনী ;
যখন মৃত্যু দেয় হাতছানি ।






ভয়!
সমীরণ বেরা।

আমার বুকে আগুন ধরিয়ে
আগুনের লেলিহান ছবি এঁকেছ,
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
জমাট বাঁধা বরফ গলে
কোন নদী উপত্যকা বা হিমবাহ নয়
শুধু দেখেছো নি:সাড় অবয়ব ।
গুনে দেখেছ; আর দেখেছ চরম বিস্ময়ে
ওদের সারা শরীর কেমন করে অক্ষত
কোন কঙ্কাল খুঁজে পাও নি ।

তোমরা তখনো শোনো নি
ওদের আর্ত চিত্কার
দেখেছ শুধু বাঁচার তাগিদে দৌড় ঊর্দ্ধশ্বাস
তখনো তুমিই শ্রেষ্ঠ মদ মত্ত আত্মবিশ্বাস
আজ তোমার ও তোমাদের জীবনের ত্রাস
তুমিও কী নিদারুণ অসহায় !
তোমার ডাক কি কেউ শুনতে পায়?

একটা ছোট্ট চারা জন্ম নিয়েছে
লোকালয়ে নয় , গভীর অরণ্যে
এই মাত্র খবর পেলাম ।
এখন ওদের মনে ভয় ভীষণ ভয়
যেন আনন্দ নেই কোথাও!
সমস্ত জীব কুলের গর্ভসঞ্চারের আগে
আনন্দ ও পূর্ণতার জয়গান থেমে গেছে
এবার গাভীও ভয় পেয়েছে
তোমাদেরকে ওদের ভীষণ ভীষণ ভয়!

আমার বুকে আমার সব সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়
শুধু তুই ও তোরা শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপায়
আমি! আমি ধরিত্রী মাও আজ অসহায়
আমার বোবা গাছ আর সমগ্র শাবকের দল
সবাই সব্বাই একে একে পেয়েছে ভীষণ ভয়
তাই তোদের কে আর ক্ষমা নয়।

তোদের আর্ত চিত্কার ভেসে আসছে
সুমেরু কুমেরু হয়ে আটলান্টিক প্রশান্ত মহাসাগর
 আমি এখন বধির হয়ে গেছি
শুধু কান্নার জলে অকাল বন্যা তীব্র জলোচ্ছ্বাস
ঝড়ের তাণ্ডব আমার দীর্ঘশ্বাস
আমার পদ সঞ্চালনে কেঁপে উঠছে বারম্বার
সুবিশাল জনপদ থেকে নগর প্রান্তর।
তোদের আর ক্ষমা নেই
গর্ভ সঞ্চারের আগে কিম্বা সৃষ্টির আদি লগ্নে
তোদের মনেও জাগুক ভয় ভীষণ ভয়






পিতা
শংকর হালদার

বয়সের ছাপ সময়ের গায়
প্রণয়ের গোপন শ্বাস মন জুড়ে
অক্ষুন্ন প্রবৃত্তি সীমা টানে আমার চৌকাঠ মাড়িয়ে
শিরাগুলি কেঁপেছিল ঈষৎ হাওয়ায়
অধীর চঞ্চলতা, যখন আঁকড়ে ধরেছিল সে সবুজ ঘাস
সবুজাভ হয়ে মুঠোর আদর মেখেছিলাম গায়
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে দু'চোখের অবুঝ মায়া
আলোর জাল বোনে বেদনার পাশ কাটিয়ে
খুলে রেখেছিল দ্বার দখিনা হাওয়ার
বারবার নিজেকে জানতে শিখেছি তার-ই ছায়
ছন্দের ঘর এঁকে, স্বপ্নের ছবি এঁকেছি তার গায়
ফাগুনের প্রথম সকাল মাড়িয়ে
অযাচিত যৌবন প্রেরণা পেয়েছিল তব খালি হাতে
আগামী প্রজন্মে পিতার স্বীকৃতি নিয়ে ।




ছিলাম তোমার অপেক্ষায়
বিমান প্রামানিক

আজও আমি আছি তোমার অপেক্ষায়
তুমি আমায় আসবো বলে কথা দিয়েছিলে তাই।
আমি কি ঠিক চিনতে পেরেছি তোমায়!
যেন আমি আছি এখনও শুধু তোমার অপেক্ষায়।

যতই এসেছে ঝঞ্ঝা তুফান, যতই এসেছে বাধা
কৃষ্ণ রুপে ছিলাম আমি, তুমিই আমার রাধা।
মনের যত ভাবনা ছিল, সবই যেন নিল বিদায়
মনের দুঃখ ঘুচিল সব, শুধু তুমি এলে তাই।

আমি জানিতাম, তুমি আসবে ঠিক একদিন
তাই তো আমি স্বপ্নে তোমায় দেখি কোনোদিন।
তোমায় ঘিরে কুটিল ভাবনা যত ছিল আমার মনে
সব কিছু আজ দূরে গেল প্রতীক্ষার অবসানে।

নতুন করে উঠবে ভরে তোমার আমার জীবন
তুমি আসবে বলেই হয়নি আমার একা একা মরণ।
সংসার যুদ্ধে জয়ী যেন আমি; তুমি এলে তাই
সেদিনের সেই দুই মাসের আদরের মেয়েটি আমার কোথায়?

তবে কি!পাঁচটি বছর পরেও বাবার উপর অভিমান!
নাকি তুমি এসেছো শুধুই একা নিতে কিছু প্রতিদান?