PravatiPatrika

Sunday, July 26, 2020

রবিবারের পাতা

খুব কাছ থেকে ফিরে গেলে
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

খুব কাছ থেকে ফিরে গেলে মনে হয়
কিছু কি বলা হল না!
ভয় হয়, মাঝে মাঝে ওমুখে তাকাতে পারিনা
কি বলতে কি
বলে ফেলেছি ,কোথাও কি ফাঁক রয়ে গেল ?
যাকে বলতে এসেছি সে জানে সব কথা
তবু এত ই  তরল আজ মন
গেলাসে গড়িয়ে যায় রাত
যা কখনো প্রসাদ হবে না।
এখনো জল হাওয়া শিস দেয়
অরণ্য জুড়ে বাতাসের বৃষ্টিপতন,গাছেদের
ক্কচ্চিৎ কখনো নৈবেদ্য সাজাতে হলে
শ্রাবণ সঞ্চয় করা ভালো
আজ চারপাশে এত জ‍্যোৎস্না
তবু খুব কাছ থেকে ফিরে গেলে মনে হয়
কিছু কি বলা হল না !
যা বলার ছিল হয়তো সামান্য ই...





                  " সুখ বিলাসী "
                 হামিদুল ইসলাম
                 
পুকুরের পাড় আজ নিস্তব্ধ
শান বাঁধানো ঘাট
ঘাটে নামি
শান্ত জল
কেবল ওপারে ভাসে ক'টা বালিহাস   ।।

উড়ে যায় ওরা
আপন নীড়ে
সন্ধ‍্যা সমাসীন
হাতে রাখি হাত
উষ্ণতা বরাবর। চিনে রাখি জীবন    ।।

পাখিরা এখন ক্লান্ত
বাসায় আড্ডা জমায়
কোলকাতার কফি হাউসের মতো
হিমেল হাওয়ায় উড়ছে জীবন। জীবনের এলোকেশী লয়   ।।

এ জীবন আজ শান্ত
স্বচ্ছ জলের মতো
জলে তোমার ছায়া
তোমার অবয়ব।
বাংলার সমাজ ভেসে ওঠে জলে।।

আমরা সুখ বিলাসী





পশুবলি
কলমে- হরিহর বৈদ‍্য

প্রাণহত‍্যা মহাপাপ জেনো
তাই জীবে দয়া কর ভাই,
আজও কেন মোরা দেবতার নামে
তবু পশুবলি দিয়ে যাই।
যখন যেখানে দেবতার নামে
যত হয়েছে পশুবলি,
অবলা পশুর ক্রন্দন ধ্বনি
ছড়িয়েছে ওলি-গলি।
লক্ষ লক্ষ অবলা জীবের
প্রাণ হয় সংহার,
এই ভাবে কতদিন রবে
জাতির এ কুসংস্কার!
নিজের কোন মঙ্গলার্থে
এমন জীবনপাত--
এই অহেতুক কাজ, বিধির বিধানে
হবেনা কি প্রতিবাদ।
তবু নিজেকে মানুষ শ্রেষ্ঠভাবে
প্রাণিজগতের মাঝে,
এতটুকু ব‍্যথা পায়না তথাপি
নির্মম এই কাজে।
আমরা যদি নাহি দিতে পারি
শবদেহে ফিরে প্রাণ,
নির্দয়ভাবে কেন করি তবে
পশুদের বলিদান।
যিনি ঈশ্বর আমরা কি তাঁকে
করিতে পারি দান,
ধর্মের নামে অধর্ম এযে
মানবতার অপমান।
ভালোবাসা আর জীবে দয়া
সদা করে যেই জন,
দেবতার করুণা ধারা
পায় সে সর্বক্ষণ।
করজোড়ে তাই শুধু বলি ভাই
দিওনা মৃত‍্যুঘাত,
পরহীত তরে জীব- কল‍্যাণে
কর হে আত্মত‍্যাগ।
নিজের কথা না ভেবে যেজন
ভাবে মানুষের কল‍্যাণে,
তুষ্ট হন দেবতা ভীষণ
তার সেই মহাদানে।
থেকে অনাহারে যে জীবে দয়া করে
সেই তো শ্রেষ্ঠ দানী,
তবে কেন মিছে পশুবলি দিয়ে
রেখে যাই দ্বেষ-গ্লানি।




আরম্ভ
শর্মিষ্ঠা সাহা

আমার তোরণে মান্যতার বিষ্ফোরণ,
একটা কাব্যিক সন্ধ্যায়
জোৎস্না ভরা বেলুন ওড়ালাম,
শব্দের আরোহন  অবরোহন।
সমস্ত মুখোশমানুষ এর
মৃত্যু হোক, এই রাজপথে,
ঝিনুকের মুক্তা-আলিঙ্গনে
অসুখ ছেড়ে যাক এই রাতে।

ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখি
সব ভালোলাগাগুলো একসাথে দাঁড়িয়ে,
অসংখ্য ঘাসমল,
অসংখ্য স্বীকৃত জারজ,
দরবারী কানাড়ায় গ্রামাফোন
মুহুর্মুহু মুছে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস,
বৃষ্টিস্নাত সব পুরোনো অভ্যাস।

আমার দ্বন্দ্ব আর সম্মোহন
বুঝতে পারছিল না
দরজার দুপাশেই আমি,
যেন জাতিস্মর এর রাত্রিযাপন ।







বর্ষণমুখর রাতে
মিনতি গোস্বামী

বর্ষণমুখর রাতে একা আছি জেগে
নদী জানি ব ইছে আজ দুরন্ত বেগে


রাতে একা আছি জেগে বর্ষণমুখর
বিরহিনী গুণে যায় রাত্রি প্রহর

একা আছি জেগে বর্ষণমুখর রাতে
জানিনা বিহঙ্গ কি সংবাদ দেবে প্রভাতে

আছি জেগে বর্ষণমুখর রাতে একা
বৃষ্টির প্রতিটি ভাঁজে কবিতা লেখা

বর্ষণমুখর রাতে একা জেগে আছি
নিজের সঙ্গে নিজেই খেলছি কানামাছি।





       ভূতের রাজা
ডঃ       রমলা মুখার্জী

ভূতের রাজার বর পেয়ে যেই না বোঁচা চেয়েছে খাবার -
ওমনি ভূতের রাজা হাজির,
বলে,"মানুষ পাঝাড়া পাজির।
গড়েছে অভাব খাবার জলে,
জল প্রায় শেষ মাটির তলে।
জলাভাবে আমরাও মরবো,পৃথিবী কি কেবল তোদের বাবার?







      স্বাধীনতার অপেক্ষায়
    মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
           

ভারতের মাটি হলো স্বাধীন
যাদের রক্তের বিনিময়ে
তারা আজ পরোপারে,কিন্তু
মানবের মনে জাগ্রত আছে।
হাজারও মায়ের বুক শুন‍্য করে
দিলো জীবন অকাতরে
দেশও বাসীর কথা ভেবে
দিলো নিজেকে আত্তোবলীদান।
তাদের কারনে পেলাম আজ
মাথা গোঁজার ঠাঁই।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।
স্বাধীনতা জয় যুদ্ধের গান
আজও বাজে কানের ধার।
সেই বিদ্রোহের আগুন,জ্বলে ওঠে
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আজ।
প্রতিবারের মতো আবারও সাজাবো
সবুজ,সাদা,গেরুয়া রংয়ের সাজ।
ভারতস্বাধীনতা সংগ্রামী বীরদের জন‍্য
ফুলের মালা হাতে সারা ভারতবাসী
১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিনটি
ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।










            শশ্রু মাতা
           অদিতি সুর

"মা ও মা।কই গেলে গো?"
ঘরে ঢুকেই চিৎকার করে ডাকতে থাকে পিয়ালী।
"ডাকছো পিয়া?"
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন  রুচিরা দেবী।
"না মানে।"
আমতা আমতা করে পিয়ালী ওনার মুখের দিকে তাকায়।প্রতিবার বাড়িতে ফিরে কিছুদিন আগেও ও এইভাবেই ওর মাকে ডাকতো।
"নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে নিশ্চয়ই?"
"না মামুনি।অভ্যাস হয়ে গেছে।ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।"
"এই অভ্যাস কোন দিন যাবেনা পিয়া।এটা হলো মা মেয়ের সম্পর্ক।"
"তুমি সত্যি আমাকে এই কদিনে অনেক বোঝো মামুনি।"
কাছে এসে পিয়ালী ওর শাশুড়ির হাতে বাইরে থেকে আনা জিনিসগুলো দেয়।
"যাও ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি জলখাবার করেছি তোমার জন্য আজ তো যাওয়ার সময় ভালো করে খেয়েও যেতে পারোনি।"
পিয়া বাথরুমের দিকে যেতে যেতে মনে মনে ভাবে -  তোমার মত শাশুড়ি সবাই পেলে  কারুর ঘরে এতো  অশান্তিই হতো না কখনো।







প্রকৃতি

          বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

প্রকৃতিই দিয়েছে মনে আলোর ঠিকানা,
বনানী সবুজ ভরাই প্রকৃতির আঙ্গিনা।
পাহাড়ের বুকে নদীর স্রোত বহমান,
ঝর্ণা যেন প্রকৃতির অপার দান।
মাথার উপরে খেচর ওড়ার নীলাকাশ,
রবির আলোক মনে বাড়াই বিশ্বাস।
অতল সমুদ্র বুকে হাজার লহর,
হাজার বৈচিত্র্যে ফোটে প্রেমের বহর।
প্রকৃতির অদ্ভুত ভাঙাগরা চলমান অহর্নিশ,
আজ যা অমৃত কাল তা বিষ।
গ্রীষ্মের তপনের দাবদহে প্রকৃতি হুতাশন,
বর্ষার হাত ধরে জাগ্রত শ্রাবন।
বর্ষায় সুপ্ত বীচনের হয় অন্নপ্রাশন,
সুপ্তবীজের জীবন দেখে মহীরুহের স্বপন।
শীতে বনস্পতির ঝরে পড়ে পাতা,
বসন্ত আনে বয়ে নতুন বারতা।
কোকিল বনস্পতিরে কহে কেন এত ভয়?
বসন্ত আসিলে শাখে সবুজে ভরিবে নিশ্চয়!







সমীকরণ আর প্রশ্ন
কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর

বালির চরে উপুড় হয়ে, কাদামাখা স্যারের লাশটা--- প্রতিবাদ ছিন্নভিন্ন, আদর্শ সারারাত শিয়াল কুকুরে খুবলেছে। বুকপকেটে নক্ষত্রের মতো তখনও জ্বলজ্বল করছে, যেটা উঁচিয়ে স্যার বলতেন-- "অসির চেয়ে মসি বড়"।

থানার দুঁদে অফিসার মার্ডারের ক্লু খুঁজছিল---  হঠাৎ আবিষ্কৃত হল স্যারের পাজামার পেছনে একটা পরিছন্ন ছুরি... গোঁজা।

স্যারের দিকে তাকালাম--- সবার অলক্ষ্যে, ঠোঁটে তখনও একটা ব্যাঙ্গের হাসি ঝুলে...
                                 






গদ্য:-'ম্যাচিউরিটি'   
                  লেখক:-সুদীপ সেন।       

          >>বিন্দুমাত্র অবগত না হয়েও অসংখ্য কর্মধারার মধ্যে নিজেকে এক অভূতপূর্ব মানসিকতার ভাবধারায় নিয়োজিত করে অসামান্য চিত্তে হস্ত প্রসারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের পরিচয়ই হল ম্যাচিউরিটি।রৌদ্রতপ্ত আবহের সঙ্গী হয়ে শরীরের ঘামকে পরিশ্রমের প্রমাণ ও ক্লান্তিকে ব্যস্ততার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করাই হল ম্যাচিউরিটি।মনকে সংযম ও সহনশীলতার পরিবেশে দীক্ষিত করে মুঠো শক্ত রেখে চরম থেকে চরমতম কঠিনকে অতি সহজেই আলিঙ্গন এবং ব্যর্থতার সাথে সখ্যতা স্হাপন করে সাফল্যের স্বপ্ন চোখে মেখে নেওয়াই হল ম্যাচিউরিটি।ম্যাচিউরিটি হল সেই আবেগ যার উপর প্রভূত্ব স্হাপন করতে গিয়ে বাস্তবও হার মেনে যায়।                              রাত্রিকালীন ঘুমের বিছানায় বালিশ কামড়ে নিজ অশ্রূধারা  প্রতিহত করেও যদি প্রত্যাশিত নিদ্রা কাছে আসতে অতিরিক্ত  সময় নেয়,তাহলে বুঝবে তুমি ম্যাচিউরিটির পথের পথিক।অনুভূতি ও তার প্রকাশের চাইতে আত্মসম্মানবোধ যখন তোমার সত্ত্বাকে অধিকতর প্রশান্তি প্রদান করবে,বুঝে নেবে তুমি ম্যাচিউরিটির দ্বারপ্রান্তে।                                     চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে  ফুটপাতের একপাশে কিছু একপেষে রাজনীতি ও ধর্মবিষয়ক নিত্য-নৈমিত্তিক দলীয় আসর যখন পরিচিতি ও ঘনিষ্টতার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়,এবং তা সত্ত্বেও যদি আলোচ্য বিষয় ও বাস্তব পরিস্হিতির মধ্যে কোনো পরিবর্তন না আসে,তাহলে সেই জটিলতা থেকে পৃথক হয়ে নিজ বিবেকচেতনা ও চলতি সম্পর্ক বজায় রাখার অর্থই হল এই যে তুমি ম্যাচিউরিটির কক্ষে প্রবেশ করেছো।                                      তারপর আসবে এমন এক সময় যা তোমাকে মানসিক,শারীরিক বা পারিপার্শ্বিক অসুবিধাগত যন্ত্রণার মাঝেও সুস্হ মস্তিষ্কে টিকে থাকা ও টিকিয়ে রাখার প্রেরণা দান করবে।সেদিন বুঝে যাবে যে,তুমি কোনো ম্যাচিউরিটির মধ্যে নয়।...বরং তুমি যেন নিজেই 'ম্যাচিউরিটি'।...তখন তুমি হয়ে উঠবে অন্যের নক্সা,আদর্শ,এগিয়ে চলার তাগিদ,ভবিষ্যতের আঙ্গিক.....






খেদ্
🖋  বাপন দেব লাড়ু

কিছুটা জল গড়িয়ে গেল তোমার উঠোনে
আর কিছু নিরন্তর, অবিরত,
সুখের সময় আজ,
অনুভুতির অধুনা ভালোবাসায় মলিন ;
অনেকবারই ভেবেছি, দেশান্তরে যাবো।
যদি মুছে যায়,
যদি ঝরে যায়,
জমানো সব অভিমান, সব অভিযোগ।।
সব সব কল্পনা, লেখা,
ঝুলে আছে কার্নিশে ;
মাঝে মাঝে কানে আসে
পতনের টুপ্ টাপ্ শব্দ ;
খোলা চোখে বসে থাকি একা বারান্দায়
শব্দরা আজ মলিন,  মৃতপ্রায় ;
কান পেতে থাকি আগমনী বাতাসে
আসেনি এখনো কবিতার স্রোত
কলমে কাগজে।




 *দহন*
 শঙ্খজিৎ দাস 
[ মুজফ্ফরপুর স্টেশনে মৃত মায়ের সাথে অবুঝ শিশু--স্মরণে]

' ওঠো,ওঠোগো মা,জাগো---আমার খিদে পেয়েছে, '
নিথর শুকনো বুকে অনাথ শিশু কাঁদে .....।

সে এখন বেওয়ারিশ লাশ,
কেউ বলে---'ব্যামো ছিল',
কেউ বলে---'অনাহারে', কেউ-বা---'অপুষ্টিজনিত'।

এখন লাশকাটা ঘরে, যে ঠোঁট চুমু খায় সন্তানের মুখ---
মাছি এসে বসে তার ঠোঁটে ।

মা,----
যে আঁচলে আব্রু ঢাকো বেআব্রুর সমুখে
তারে তুমি ছিঁড়ে ফেলো, নগ্ন হও
ঊরু ফাঁক করে দেখাও----কোথায় রক্তপাতহীন ক্ষত
                  ------ কোথায় তোমার স্বদেশ

আর তুমি ঘুমিও না,মা----
ওঠো, জাগো---- আমাদের বড্ড খিদে পেয়েছে ।






শহীদের রক্ত( কবিতা)
আব্দুল রাহাজ

তোমরা বীর তোমরা মহান
জীবনকে উৎসর্গ করে
বাঁচিয়েছো মাতৃভূমি বাঁচিয়েছো দেশ মুক্ত করেছো দেশ।মুক্ত করেছো শক্রদের হাত থেকে
বন্ধ করেছো কামান গুলির আওয়াজ ।
তোমাদের তাজা রক্তে দেশ হয়েছে স্বাধীন
শত হারা মায়ের কান্না
বিজরিত সন্তান তোমরা
বীরের মতো বাঁচিয়েছো
আমাদের শস্য শ্যামলা দেশ।
আজ আমরা মুক্ত বাতাসে তা উপভোগ করি
তোমরা বীর তোমরা মহান
প্রতিটি মানুষের অন্তরে।






অরন্যর  দীর্ঘশ্বাস
                          সুব্রত দাস
উঁচু উঁচু টাওয়ার, বড় বড় অট্টালিকার পাশে,
ছোট্ট অরন্যটা ফ্যাকাসে  যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ;
জনসংখ্যার চাপে গাছ গুলোও দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
নদীর চড়ে যেন ময়লা আবর্জনার আতুরঘর ।
অরন্যর সবুজ গুলো তামাটে বিবর্ণ হয়ে যায় ,
প্রকৃতির কোল শুকিয়ে শুকিয়ে কষ্ট আওড়ায় ।
বনপ্রহরী মানুষ হয়ে লিখে যায় পাখির কলতান
গাছেদের আর্তনাদ,আর কিছু স্মৃতির উন্মাদনা
মনে পড়ে  কাঞ্চনফুল,সারিসারি লম্বা গাছপালা, এঁকেছিল মনে ঘন শাল বাগান,চিরসবুজ মাঠ ।
ছোট ছোট ঘাস জলের বুকে শ্যাওলার গান ।
আজ সব অচেনা কাঁদে সত্তা অরন্যর দীর্ঘশ্বাস।‌।






  আকর্ষ
 শ্যামসুন্দর  মন্ডল


অর্ণা ও অর্পণ দুজনেই বনেদী পরিবারের সন্তান। পরিবারের অনেকটা অমতে ভালোবেসে দুজনের বাসা বাঁধা।কিন্তু বিয়ের পর প্রচন্ড সেন্টিমেন্টাল অর্ণার উপর মনস্তাত্ত্বিক পীড়ন হতে থাকে,অর্পণের অদৃশ্য অপারগতার কারণে। একদিন সহ্যের সমস্ত সীমা অতিক্রম করলে অর্ণা বন্ধনের অদৃশ্য সুতোটা ছিঁড়ে চলে যেতে প্রস্তুত হয়। ব্যর্থতার সমস্ত দায় ও কলঙ্ক মাথায় নিয়ে অর্ণা ন্যূব্জ। তবু্ও, একফোঁটা কলঙ্ক ও....। না, অর্পণকে দেয় নি অর্ণা।

সেদিন। খুব সকাল। অর্পণ ঘুম থেকে উঠে নি। অর্ণা মাথার কাছে দাঁড়িয়ে খুব শান্তভাবে ডাকে,"ওঠবে না।" অর্পণ পাশ ফিরতে ফিরতে বলে, "হুঁ।" অর্ণা তেমনি ভাবেই বলল," যাচ্ছি।" অর্পণ ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞেস করে,"কোথায়?" অর্ণা বলে,"জানি না।"
"মানে!" বলে অর্পণ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। অর্ণা বলে চলে,"আমার প্রয়োজনীয়তা বোধহয় ফুরিয়েছে। আর অপ্রয়োজনীয়তা বহন করার বিড়ম্বনা,তাই বা কম কি! " তারপর নিঃস্ব আকাশের নিরবতা।

খানিকপরে আচমকা নিরবতা ভেঙে"তুমি অন্তত নিজের যত্নটুকু নিও।" অর্ণার এই শেষ কথাগুলোয় অর্পণের বুকের ভিতরটা যেন হুহু করে কেঁপে উঠল, যেন এক নিমিষেই মরুদ্যান ছাড়া ঊষর মরুভূমি হল। অর্পণ দেখল,যে লতাটি এত দিন ধরে একটু একটু করে উপরে উঠছিল,আজ আলগোছে হয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কার হাওয়ায় ভীষণ দুলছে। অর্পণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্ণার হাত দুটো খপকরে ধরে  নিজের বুকের উপর টেনে নিয়ে উৎকন্ঠায় বলে উঠে, "অর্ণা।" অর্ণা তার মুখের দিকে চেয়েই শান্তভাবে বলে," বলো।" অর্পণ কাঙালের মতো সমস্ত সংকোচ ও দ্বিধা কাটিয়ে বলে," অর্ণা,আমি আমাকে তোমাকেই দিলাম।পারো না নিতে?" আর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। অর্ণার মুখে কথা নেই। শুধু দু'হাতে শক্ত করে অর্পণের গলা জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টেনে নিল। আর সমস্ত প্রতিরোধকে ব্যর্থ করে অশ্রু অর্ণার দুগাল বেয়ে বাথাতুর বুককে ছুঁয়ে অর্পণের উপর নিঃশব্দে পড়তে থাকল।






ডালিম গাছ
        সত‍্যব্রত ধর

গলির মোড়ে একটা গাছের প্রেতচ্ছায়া দাঁড়িয়ে!
আঁকাবাঁকা শুকনো কিছু কাঠির ডালপালা,
পাতা নেই...ফুল নেই...ফল নেই
আছে শুধু জীর্ণ রুক্ষ মেরুদন্ডের মত কাণ্ড।
নিরস সেই গাছের তলাতেই যাচ্ছিলাম!
রোজ যাই,
দিন ফুরোলে যাই,
জরুরী দরকারে যাই,
সেখানে বসে মনের গোপন কথা কই।
আর, বারেবারে মনভরে প্রার্থনা করি সাজুক সে।
অন্তত এক আঁচড় সবুজ তার গায়ে লাগুক।
প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক আমার বন্ধু সেই ডালিম গাছ।


1 comment: