PravatiPatrika

Thursday, June 4, 2020

বৃহস্পতির পাতা

ধারাবাহিক উপন্যাস
                            পাখির ডানার উড়ান
                               প্রশান্ত ভৌমিক


                                     ২)


সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার আগে মা ভাত খাইয়ে দেন। এটা আমার প্রতিদিনের রুটিন। ভাত খেতে খেতে পেপারে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে পড়া। বিকেলে তো সময় পাবো না। মা প্রতিদিন সকালে হয় ডিম ভাজি, নয়তো আলু ভাজি দিয়ে মেখে ভাত খাইয়ে দেন। আর যেদিন মাংস রান্না হয় পরদিন সকালে তো মাংস দিয়ে খাওয়া চলবেই। আমাদের বাসায় কোন আত্মীয় এলে তারা এই খাইয়ে দেয়া নিয়ে হাসাহাসি করে। বলে নাইনে পড়া ছেলেকে মা খাইয়ে দিচ্ছে। না জানি আর কত বড় হওয়া পর্যন্ত খাইয়ে দেবে। আমি ভেবে পাই না মায়ের কাছে ছেলের আবার ছোট-বড় কী? মা-তো যে কোনো সময় ছেলেকে খাইয়ে দিতে পারে!
আজ বৃহস্পতিবার। আলু ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হলাম। স্কুলে যাচ্ছি। পকেটে ৩০ টাকা। অন্যদিন ২৫ টাকা করে দেয় বাবা। আজ স্কুলে টিফিন দেবে না বলে ঘ্যান ঘ্যান করে ৫ টাকা বেশি নিলাম। বাসা থেকে বেরিয়ে কলেজ রোড পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে এলাম। আমি মনে মনে আশা করছি আমাদের ক্লাসের সনি কিংবা দোলনের সাথে দেখা হবে। তারা দু’জনেই থাকে কলেজের পিছনের দিকটায়। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে আসে। আর তাদের সাথে যদি আমার দেখা হয় তাহলে আমি একই রিক্সায় উঠে যেতে পারব। আর ভাড়া লাগবে ৫ টাকা। কিন্তু কপাল খারাপ। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পরেও কেউ এল না। অগত্যা ১২ টাকা ভাড়ায় সফি ভাইয়ের রিক্সায় উঠে পড়লাম। সফি ভাইকে এলাকায় সবাই চেনে। যতটা না রিক্সার ড্রাইভার হিসেবে, তার চেয়ে বেশি চেনে সজ্জন হিসেবে। সফি ভাই রিক্সা ছেড়েই হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, আজ এত দেরি কেন?
তারপরে জানালেন আমার বন্ধুরা কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে একসাথে। দেরি করার জন্য নিজেই নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে করল। আজ যদি ওদের সাথে যেতে পারতাম তাহলে যেতে ৫ আর আসতে ৫ টাকা করে মোট ১০ টাকা ভাড়া লাগত। তাহলেই তিন গোয়েন্দার ৪৬ নম্বর ভলিউমটা কিনতে পারতাম। আমাদের ক্লাসের অনেকেই সেটা পড়ে ফেলেছে। আমি পড়িনি এখনো। আমি কারো কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ি না। পড়তে ভাল লাগে না। আমি বইগুলোকে খুব যত্ন করে রাখি। আর অন্যদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়লে ওদেরকেও আমার বই পড়তে দিতে হবে। তাতে ওরা বইয়ের অযত্ন করবে। যেটা আমার একেবারেই ভাল লাগে না। অবশ্য আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাপ্পী বইটা অনেক আগেই কিনেছে। আমাকে বলেছিল ওর কাছ থেকে বইটা এনে পড়ার জন্য। আমি আনিনি। বাপ্পী তিন গোয়েন্দার সব বই-ই কেনে। ওরা বিরাট বড়লোক। ওর বাবা ওর সব আবদারও মেটান। কিন্তু ও কোন বই-ই পড়ে না। বাপ্পী আমাকে বলেছে, ওর বই পড়তে ভাল লাগে না। ক্লাসের সবাই কেনে, তাই সেও কেনে তিন গোয়েন্দা। বাপ্পীর আশা হয়ত কোন একদিন বইগুলো পড়বে।
আমার বাবা বাপ্পীর বাবার মত কোটিপতি না হলেও স্বচ্ছ্বল তো বটেই। আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে, বাবাও আমার সব আবদার মেটাতেন। কিন্তু এখন মদন স্যারের কথা অনুযায়ী আমাকে কোন বই বা কোন কিছুই কিনে দেন না। আর তাই স্কুলে টিফিন না খেয়ে আর ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে বই কিনতে হয়। মা অবশ্য মাঝে মাঝে কিছু টাকা দেন। সেই টাকাও বইয়ের পিছেই যায়।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই স্কুলের গেটে এসে দাঁড়াল রিক্সা। সফি ভাইকে টাকা দিয়ে স্কুলে ঢুকলাম। প্রথম ঘন্টায় মোজাম্মেল স্যার জ্যামিতি করালেন। যে উপপাদ্যটি করালেন স্যার ক্লাসে, সেটি কিছুই বুঝিনি। কিন্তু সম্পূর্ণ মুখস্থ থাকার কারণে কোন অসুবিধে হল না। আমি ইদানীং আর কোন রিস্কে যাই না। বুঝি বা না বুঝি সবকিছুই মুখস্থ করে ফেলি। তাতে অন্তত স্কুলে সবার সামনে মার খাওয়া আর বাসায় কান ধরে উঠবস করা থেকে বাঁচা যায়।
দ্বিতীয় ঘন্টায় পরেশ স্যারের গ্রামার ক্লাস। পরেশ স্যার সহজ সরল মানুষ। আর তাই সবাই পরেশ স্যারের ক্লাস ফাঁকি দিত। ক্লাস আরম্ভ হলে বাইরে চলে যেত পানি খাওয়ার নাম করে। ফিরত প্রায় ক্লাস শেষ করে। আত্মভোলা পরেশ স্যারও পড়ানোতে এতই ব্যস্ত থাকতেন অন্যদিকে খেয়ালই করতেন না। কে আসছে, কে যাচ্ছে হুঁশই থাকত না।
এর পরের পিরিয়ডে তপন স্যারের বাংলা। আজ পড়ালেন ‘হাজার বছর ধরে’। সত্যিকারের শিক্ষক তিনি। আমি আগ্রহ নিয়ে তপন স্যারের ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করি। মন্তু আর টুনির কাহিনী পড়ানোর ফাঁকে স্যার নানা কথা বলতেন।
চতুর্থ পিরিয়ডে রাসেল স্যার সমাজ পড়ালেন। তপন স্যার যতটা ভাল শিক্ষক হিসেবে, রাসেল স্যার ততটাই বিরক্তিকর। রাসেল স্যারের পড়ানো মানেই ক্লাসে ঢুকে অমিওকে রিডিং পড়তে বলা। অমিও আবৃত্তি করে, ডিবেট করে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যায় খেলাঘরের হয়ে। আর তাই রাসেল স্যারের সবচেয়ে প্রিয় পাত্র সে। রাসেল স্যার ক্লাসে ঢুকেই প্রতিদিন অমিওকে একটা চ্যাপ্টার ধরে রিডিং পড়তে বলবেন। ব্যাপারটা যে যথেষ্ঠ বিরক্তিকর এটা ক্লাসের সবাই বোঝে, শুধু অমিও আর রাসেল স্যারই বুঝতে পারেন না।
আজ বৃহস্পতিবার বলে পঞ্চম পিরিয়ডের পর ছুটি। অন্যান্য দিন চার পিরিয়ডের পর টিফিনের ব্রেক থাকে। স্কুল থেকেই টিফিন দেয়। এই তো কালকেই সমুচা দিয়েছিল। সমুচা আমার খুব ভাল লাগে। টিফিনের ব্রেকের পরে হয় আরো তিনটে ক্লাস। তারপরে ছুটি। কিন্তু বৃহস্পতিবারে টিফিনের ব্যাপার নেই। টানা পাঁচটা ক্লাস করে তারপরে ছুটি। পঞ্চম পিরিয়ডে শফিক স্যারের উচ্চতর গণিত ক্লাস। শফিক স্যার যথেষ্ঠ ভাল শিক্ষক। নির্বিরোধী। গণিতের মত একটা কাট্টাখোট্টা বিষয়কে যথেষ্ঠ কৌতুহল উদ্দীপক মনে হয় স্যারের কারণেই। আজ স্যার করালেন ঘন জ্যামিতি। বুঝে নিলাম অংকগুলো। আমার সাধারণ গণিত মুখস্থ করে নিতে হলেও উচ্চতর গণিতে সেই ঝামেলা নেই। উচ্চতর গণিত আমি সহজেই বুঝে নিতে পারি।
ক্লাস শেষ হতেই সবাই হইচই করে বের হল ক্লাস থেকে। আমি ভাবতে লাগলাম এই সপ্তাহে মদন স্যার কতদিন এসেছেন? বুধবারে এসেছিলেন। এর আগে বোধহয় আর আসেন নি। তাহলে ঠিক আজকেই আসবেন। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে সনি আর দোলনকে তাড়া দিলাম। ওরা কিছুক্ষণ পরে যাওয়ার চিন্তা করছিল। কিন্তু আমার তাড়ায় দ্রুত রিক্সায় উঠতে বাধ্য হল। রিক্সায় ওরা দু’জনে নানা রকম কথা বলে হাসি ঠাট্টা করছিল। সনির সব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা আমার কানেও আসছিল।
আমার আর তখন সেদিকে মনোযোগ দেয়ার মত অবস্থা নেই। আমার চিন্তা বাসায় গিয়ে মদন স্যার কী পড়া দিয়েছেন সেটা দেখে নিয়ে তারপর ভাত খাওয়া। কারণ স্যার বলে গেছেন আজ পড়া না পারলে ৫০০ বার কান ধরে উঠবস করাবেন। আমার পড়াশোনার আগ্রহটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মদন স্যারের কারণে। কলেজ রোডে রাবেয়া হাসপাতালের ব্রিজের সামনে এসে আমি রিক্সা থেকে নেমে পাঁচ টাকা দিতেই সনি এক টাকা ফিরিয়ে দিল আমাকে। মোট ভাড়া ২০ টাকা। সেখানে আমার থেকে পাঁচ টাকা নিলে ১৫ টাকা ওদের নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে অসুবিধে হয়। তাই এখন থেকে আমি চার টাকা দিলেই চলবে। তাছাড়া ওরা আমি নেমে যাওয়ার পরেও আরো অনেকটা পথ যায়। কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে উঠল ওদের প্রতি। হিসেব করে দেখলাম, আমার কাছে সব মিলিয়ে ৪৯ টাকা হয়েছে। ইস! আগে হিসেব করলে তো আজকেই ৪৭ টাকা দিয়ে তিন গোয়েন্দার বইটা কিনতে পারতাম। আফসোস হল খুব। কিছু করার নেই। হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরে চমকে গেলাম।




                   ধারাবাহিক নেপোদাদুর গপ্পো
                         রাজকুমার ঘোষ
                              চতুর্থ পর্ব

                   নেপো-পানুর পুরী ভ্রমণ

বড়লোক বন্ধু পানু যার ভালো নাম পান্নালাল হাতি, আর আদরের নাম পানুখুড়ো। সেই পানুখুড়োকে পুরীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেপোদাদু পটিয়ে নিলো। নেহাতই ভালোমানুষ পানুখুড়ো নেপোদাদুকে ভীষণ ভালোবাসেন। তাই দাদুর আবদারে কিছু ভাবেন না। নিজে থেকে পুরী যাবার ট্রেনের এসি কামড়া বুক করে নিয়ে নেপোদাদুকে বলেন,

-        নেপো তবে চলো, এবার ঘুরে আসা যাক… দেখো আমাদের দু’জনের এসির টিকিট।“

নেপো গদগদ হয়ে পানুকে জড়িয়ে ধরে দু’গালে চুমু খেয়ে বলেন,

-        তুমি আমার সাচ্চা বন্ধু

সময় করে একদিন দু’জনে বেড়িয়ে পড়লেন পুরীর উদ্দেশ্যে, এসি কামড়ায় উঠে নেপোদাদু বলেই ফেললেন,

-        বাপের জম্মে এমনিই কোনো ট্রেনে উঠিনি, কি ভাগ্য আমার, আমি তোমার জন্য এসিতে যাচ্ছি”

বলেই নেপোদাদু পানুখুড়োকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে যাবে, পানুখুড়ো বিব্রত হয়ে বলেন,

-        করো কি, করো কি… আশেপাশের সকলে দেখছে তো দুই বুড়োর ভিমৃতি”।

নেপো বলে ওঠেন,

    - বেশ করেছি শালা, আমি আমার বন্ধুকে চুমু খাচ্ছি, কার বাপের কি?

“আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে” এই বলে পানুখুড়ো ঠান্ডা করেন বন্ধুকে। নেপোদাদু এসিতে আয়েস করে বসে, গুন গুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত ধরলেন, “আমারও পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই তুমি তাই গো”। আশে পাশে যারা ছিল  তারা  নেপোর কীর্তি দেখে মুচকি হাসতে লাগলো।

ট্রেন পুরীতে পৌঁছবার পর, নেপোদাদু প্ল্যাটফর্মে নেমেই “জয় জগন্নাথ” বলে চিৎকার করে উঠলো। পানুখুড়ো নেপোদাদুকে নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। আগে থেকেই পানুখুড়ো পুরীর সি-বিচের কাছে একটা লাক্সারি হোটেল বুক করে রেখেছিলেন। প্ল্যাটফর্ম থেকে ওনারা চলে এলেন হোটেলের কাছে। নেপোদাদু সি-বিচের কাছে হোটেল দেখেই “হুররে” বলে আবার পানুখুড়োকে জড়িয়ে চুমু খেতে যাচ্ছিলেন। পানুখুড়ো বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

-        আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। এবার চলো হোটেলের রুমে যাওয়া যাক। হোটেলের রুমও এসি নিয়েছি, তোমার অসুবিধা নেই তো নেপো।

-        কি যে বলো পানু। তুমি না আমার কি! বলে বোঝাতে পারবো না।

পানুখুড়ো আবার যাতে অস্বস্তিতে না পড়েন তাই আগে থেকেই বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে।

এরপর দু’জনে হোটেলের রুমে চলে গেলেন। একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে এলেন সি-বিচের কাছে। এসেই নেপোদাদু সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। লাফালাফি করার কিছুক্ষণ পর এসে পানুখুড়োকে বলুলেন,

-        আমার আর একটা আবদার আছে, দেখলাম একটা জায়গায় মাছ ভাজছে… আমাকে ইলিশ ভাজা খাওয়াতে হবে, তার সাথে যদি একটু ইংলিশ হয়, মন্দ হয় না। তবে এখন নয়, সন্ধ্যের পর আসবো। আমার এই আবদার মেটাবে তো দোস্ত।

-        আচ্ছা সে হবে ক্ষণ। এখন চলো হোটেলে যাওয়া যাক। তুমি বালিতে একাকার। ভালো করে একটু ঝেড়ে নাও। 

-        ওকে মাই ডিয়ার দোস্ত।

-        আর শোনো, জগন্নাথ দর্শন করবে তো? কবে করবে? আমরা এখানে তিনদিন থেকে ফিরে যাবো। আগামীকাল আমরা সকাল সকাল এখানে কোনো এক পান্ডা ধরে প্রভু জগন্নাথের দর্শন করবো আর পুজো দেবো।

-        তোমার ছত্রছায়ায় আছি, আমি ফুর্তিতে আছি। আমার একদম চিন্তা নেই।

এরপর দু’জনে হোটেলে চলে গেলো, দুপুরে জোরদার খাবার খেয়ে নিলো। তারপর একটা জোরদার ঘুম দিয়ে সন্ধ্যেবেলায় সি-বিচে চলে এলেন দু’জনে। এসেই নেপোদাদু পানুখুড়োর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকলেন, “আমাদের সেই প্ল্যানটা মনে আছে তো?”

-        মনে আছে গো। তুমি একটু বসে সমুদ্র দেখো, আমি একটু ঘুরে আসি মানে ব্যবস্থা করে আসি।

প্রায় ঘন্টা খানেক বাদ পানুখুড়ো একজনকে সাথে নিয়ে এলেন, আর দু’বোতল ইংলিশ আর সাথে ইলিশ ভাজা নিয়ে এলেন।  নেপোদাদুর জিভ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। পানুখুড়োকে আবার জড়িয়ে ধরতে গেলো। “আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে” পানুখুড়ো এরপর  সেই লোকটার হাতে কড়কড়ে নোট ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে ভাগিয়ে দিলো। নেপোদাদু বেশ তৃপ্তি সহকারে মাছ ভাজা আর প্রায় দু’ বোতল নিজেই সাবাড় করে দিলেন। পানুখুড়ো এমনিতেই সৌখিন মানুষ। তিনি বোতল প্রায় হাত দেন না বলেই চলে। নেপোর পাল্লায় পড়ে সামান্য একটু মুখে দিলেন। নেপোদাদু পুরো টাল্লু হয়ে হোটেলে ফিরলেন পানুখুড়োর সহায়তায়। পরদিন সকালে উঠে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পান্ডা ধরে জগন্নাথ দর্শন করলেন নেপোদাদু ও পানুখুড়ো। পুজো দিলেন। তারপর কাকাতুয়ার দোকান থেকে নেপোদাদু বেশ জমিয়ে খাজা খেয়ে এবং কিছু কিনেও নিলেন, যদিও তার কপালে পানুখুড়োর মত বন্ধু থাকতে গাঁটের কড়ি একটুও খসাতে হয়নি। সবই তার যেন পাওনা...

ফিরে যাবার দিন, ট্রেনে উঠে নেপোদাদু আবার পানুখুড়োকে জড়িয়ে ধরলেন, এবার কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

-        আমাকে কেউ এত ভালোবাসেনি পানু। তুমি আমার ভাই। তোমার উপকার কোনোদিনও ভুলবো না। আমার পাশে থেকো এইভাবে বাকিজীবনটাও”

পানুখুড়ো বললেন,

-        আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। বাড়ি করার সময়ে তোমার উপকার কোনোদিনও ভুলিনি নেপো। এখন চলো ভালোয় ভালোয় ফিরি, পরের কথা পরে ভাবা যাবে।



                             পঞ্চম পর্ব

                      নেপোদাদুর স্টাইল

এই পব্বের শুরুতেই  শিরোনাম দেখে হয়তো সকলে ভাবছে নেপোদাদুর আবার স্টাইল! একটা হাড়বজ্জাত কিপ্টে বুড়োর কি আবার স্টাইল থাকতে পারে। যে লোকটা শুধু লুঙ্গি পড়ে খালি গায়ে থাকে, ঘুটে বিক্রি করে গোবর গন্ধে খালি গায়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়, টাকা-পয়সা খরচের ভয়ে গায়ে সাবান পর্যন্ত মাখে না, তার আবার স্টাইল। আজ্ঞে না, পানুখুড়োর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর, বিশেষ করে পুরী থেকে ঘুরে আসার পর নেপোদাদুর স্টাইল বৃদ্ধি পায়। এমনিতেই পানুখুড়োর সৌজন্যে যখন পুরী যায় তখন দাদুর পরনে লুঙ্গি ছিলই তার সাথে জবরদস্ত স্যুট লাগিয়ে বিচিত্র বেশে সারা পুরী ঘুরে বেড়িয়ছে। বরং দাদুর এই বিচিত্র বেশকে অনেকেই পছন্দ করেছে। পানুখুড়ো নিজে থেকে দাদুকে বলেছেন,

-        তুমি তোমার লুঙ্গি পড়ো নেপো, আমি কিছু বলবো না। আমার অনুরোধ, তুমি লুঙ্গির সাথে একটা স্যুট পড়ে নাও পরনে। বেশ অন্যরকম লাগবে। আর কথা দাও প্রতিদিন গায়ে সাবান মাখবে। আর ভালো কিছু সুগন্ধী পারফিউম ব্যবহার করবে। তবেই আমার ভালো লাগবে। আর খরচার কথা ভেবো না, তোমার এই বন্ধু তো আছেই নাকি...

-        তুমি ভরসা যখন দিচ্ছো, আমি রাজি।

দাদু দেখলেন, এই যখন মকা, তখন বন্ধু পানুর কথা শুনে চলাই ভালো।   

পুরী থেকে এসে দাদুর স্টাইল আরও বেড়ে গেলো। লুঙ্গির সাথে তাও আবার যে সে লুঙ্গী নয়, পানুখুড়োকে পটিয়ে বাংলাদেশ থেকে ড’জন খানেক বিভিন্ন রং-এর লুঙ্গি আনিয়ে নিয়েছিলেন। আর পরণে নানা রঙের জামাও পড়তে শুরু করলেন। তারপর প্রতিদিন ঘুটের কাজ-কারবার করার পর নিজেকে সাবান দিয়ে পরিস্কার করে নিতেন। গায়ে  দামী দামী পারফিউম ব্যবহার করতেন। বাড়ির বাইরে বেরোলে এখন লোকে দাদুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। দাদুর মেজাজ ভীষণ হালকা। মনের ফুর্তি বেড়ে গিয়েছিলো। অবশ্য তারও এক কারণ আছে। ঘুটে বিক্রি করতে দাদু পাশের পাড়ায় যেতেন। সেখানে একজনের বাড়িতে জ্বালানি ঘুটে দিতেন। দাদুর নিয়মিত কাস্টমার। সেই বাড়িতে এক মহিলা থাকতো। অবিবাহিতা, একটু বয়স হয়েছে। কিন্তু গ্ল্যামারের ছটায় দাদুর মনকে আকর্ষণ করেছে।

নেপোদাদুর মাথায় চুল উঠে গিয়েছিল প্রায়। মাঝখান দিয়ে টাকটা বেশ চকচক করতো। কিন্তু দাদুর গোঁফটা ছিল বেশ মোটা, দক্ষিন ভারতের নায়কের মত। নেপোদাদু সেই গোঁফের যত্ন নিতেন, বেশ সুন্দর করে হাত বুলিয়ে নিতেন। আর মাথার মাঝের টাকটা বাদ দিয়ে বাকি যা চুল ছিল, যত্ন সহকারে পরিপাটি করে সেজেগুজে যেতেন যখন ঐ বাড়িতে ঘুটে দিতে যেতেন এবং সেই মহিলার সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন। মহিলাও দাদুর দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাতেন। দাদুর এই বিশেষ ব্যাপারের কথা বন্ধু পানুখুড়োকে জানিয়েছিল। বন্ধু পানু বেশ উৎসাহ নিয়ে নেপোদাদুকে বলেছিলেন, 

-        এই বয়সে তো কামাল করে দিলে নেপো। লেগে থাকো, লেগে থাকো। আর দরকার হলে জানিয়ো আমাকে, আমি আছি পাশে।

নেপোদাদুকে এবার পায় কে? মনে একরাশ উৎফুল্ল নিয়ে পানুখুড়োকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বললেন,

-        এই নাহলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড...

চলবে...


                        নদী কথায় ভেসে যায় ...
                            তীর্থঙ্কর সুমিত

                                   ৫)


বহুদূর নয়।ঠিক যতটা দূর ভাবি ততটাও নয়।তবুও সবাই বলে অনেক অনেক দূর।কখনো কখনো আমিও তাই ভাবি। কিন্তু ভাবনার ইতি ঘটতে না ঘটতে,আবার নতুন সংগ্রামে ভেসে গেছে কত কথা ।হয়তো এইভাবেই এক একটা দিন কেটে হয় রাত্রি।আর রাতের অাঁধারে লুকিয়ে থাকে দিনের কাব্যকথা ।যে নদী বয়ে গেছে বহুদূর তার ঠিকানা আমরা কেউ রাখিনা।তবু প্রতিটা ঘরে তার বয়ে যাওয়ার স্মৃতি চিহ্ন লুকিয়ে থাকে।যে ভাবে নদী বয়ে যায় ঠিক সেভাবেই ফিরে আসে প্রতিদিনের অবাধ্য কিছু যন্ত্রণা ।তবে সব ই ক্ষণস্থায়ী ।
আর বেঁচে থাকার মানে ...



ভ্রমণ কাহিনী: "বাঁকুড়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত স্থান ভ্রমণ "
                          টুম্পা মুখার্জী

                            তৃতীয় দিন


আজ সকালে উঠে ৬ টার আগেই আমি আর গেঁড়িগুগলি বাদে বাকিরা মহলে গেল রস খাওয়ার জন্য। সেখানে ভরপেট রস খেয়ে আর চার কেজি গুড় নিয়ে বেশ বেলা করেই ফিরলেন তারা। স্নান করে লুচি তরকারি খেয়ে বেরোতে বেরোতে বেলা ১০ টা । এবারের গন্তব্য মুকুটমণিপুর।
আজও সেই চমৎকার মসৃণ চড়াই উৎরাই রাস্তা। মাঝে গরু ছাগল মুরগির হাট দেখে মনে হলো "অল ইন্ডিয়ান গরু ছাগল মুরগি এসোসিয়েশনের" মিটিং বুঝি। হর্ন এর গুতোয় কর্ণাট প্রদেশকে যতটা সম্ভব গুপ্ত প্রদেশে চালান করলাম। আর আমার অগ্ৰজ নানা ভেল্কি দেখিয়ে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগল, আর আমি তো দুরুদুরু বক্ষে ভাবতে লাগলাম এই বুঝি চিকেন চিপ্স বা মটন চিপ্স বানানোর জন্য আমাদেরকে আবার ফাইন দিতে না হয়। না, সে গ‍্যাঁড়াকলে আর পড়তে হয়নি পাকা ড্রাইভার এর জন্য।
কয়েকটি টিলা জাতীয় পাহাড় আগেই দেখতে পাচ্ছিলাম, এবার সে গুলোকে বাঁয়ে রেখে, স্পোর্টস একাডেমি ডানে রেখে আমরা মুকুটমণিপুর পৌঁছালাম। বাঁধের উপর গাড়ি নিয়ে যেতে হলে টিকিট কাটতে হয়। টিকিট কেটে যখন ধীর গতিতে বাঁধের উপর দিয়ে এগিয়ে চলছি, তখন অনাবিল ভালো লাগায় আমার মন উড়ে চলল ওই দিগ্বলাকার দিকে---যেখানে কুমারী আর কংসাবতী মিলিত হয়ে চুপিসারে নিভৃত আলাপনে মগ্ন ।
ডানদিকে অসীম জলরাশি, মাঝে মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ মাথা উঁচু করে রয়েছে। বাঁদিকে সবুজের গালিচা পাতা পাহাড়ের মাঝে সবুজ সবুজ কটেজ চোখে পড়ল।
মৃগদাব যাওয়ার জন্য বাঁধের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে অনেকটা হেঁটে নীচে নামলাম।সেখানে নদীর পাড়ে অনেকগুলি নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ৪.৭৫ জন মিলে একটা নৌকাই ভাড়া করে নিলাম। ঠিক হল তিনটে দ্বীপে নিয়ে যাবে, যার মধ্যে একটি মৃগদাব বা ডিয়ার পার্ক।
প্রথমে যে দ্বীপে নিয়ে গেল, সেটি জনমানবহীন, দেখার কিছু নেই।আমরা তীরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ফটো সেশন করলাম, আর কিষ্কিন্ধা থেকে আগত আমাদের দুই বানর সেনাপতি নদীতে পাথর ছুঁড়ে আজই সেতু তৈরির কাজ শেষ করার পণ নিল।
ওখান থেকে আমাদের নৌকা গেল ডিয়ার পার্কের দিকে। নৌকা থেকে নেমে কিছুটা পিচের রাস্তা হেঁটে একজায়গায় থামতে হল। সেখান থেকে মৃগদাব যাওয়ার জন্য টোটো, মোটরভ‍্যান বা মারুতি গাড়ি ভাড়া করতে হয়। আমরা ২০০টাকা দিয়ে মোটরভ‍্যান ভাড়া করে চললাম হরিণ দেখার আশায়।  জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা মাঝে মাঝে এমন দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠছে যে আমার হালুয়া টাইট হয়ে যাচ্ছে। শেষে অগ্ৰজকে তার সামনের তখ্ত থেকে সরিয়ে আমি দখল করলাম। আগের থেকে ঝাঁকুনি একটু কম লাগলেও, আটভাজা হওয়া অবশ্য আটকালো না। সোনার বাংলা পার্ক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদিবাসী গ্ৰাম পাড় হয়ে অবশেষে আমরা ডিয়ার পার্কে এসে পৌঁছলাম। ভ‍্যান থেকে নামতেই কচিকাঁচারা হরিণকে খাওয়ানোর পাতা কেনানোর জন্য ঘিরে ধরল। আমাদের দুই ক্ষুদের সঙ্গে আমরাও মনের আনন্দে পাতা খাওয়াতে লাগলাম।সঙ্গে খোসাওয়ালা বাদাম ছিল, সেগুলো দেওয়াতে হরিণগুলো মহাখুশি হয়ে চেটেপুটে খেতে লাগল। বাদাম খাওয়াতে গিয়ে আমার ছানার হাত চেটে দেওয়ায় তার বেজায় সুরসুরি লাগল। হরিণকে খাওয়ানো আর ফটোসেশনের পর আমার চোখ হঠাৎ আটকে গেল একটা বোর্ডে, যেখানে বড়বড় হরফে লেখা "হরিণকে বাইরের খাবার কেউ খওয়াবেন না।" এটা দেখার পর নিজের খুব অনুশোচনা হতে লাগল কেন খাওয়ালাম?
এরপর আবার ষোলো ভাজা হতে হতে নদী তীরে ফিরলাম। আমাদের আর তৃতীয় দ্বীপে যাওয়া হলো না। কারণ, রবিমামা হামা দিতে দিতে আবার রাঙা থুরি কমলা জামা পড়তে শুরু করেছে। আমাদের সোনার তরীও নদীর বুকে ঢেউয়ের আল্পনা দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে। সত্যিই জায়গাটা মুকুটের মণি, যেখানে গিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের মন পাড়ি জমায় দিক্শূন‍্যপুরের দিকে। চাঁদনী রাতে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া সৌন্দর্য উপভোগ করার সঙ্কল্প নিয়ে বিস্মিত অভিভূত স্বপ্নাবিষ্ট আমি ঝিলিমিলি বিকেলে মুকুটমণিপুরকে বিদায় জানালাম।
                              (চলবে)
                   


                     অনাহার
                 অমিত দেশমুখ


আপনার উচিত ছিল আরো সাবধানে পা ফেলা।

আস্তে আস্তে।

যেমন স্বপ্ন আসে সোনালী ধানের গন্ধের মতো হাওয়ায় দুলতে দুলতে
রেশন ডিলারদের দোকানের পাশ দিয়ে
মধ্যবিত্তের বাজার ঘুড়ে
কোনো এক মুহূর্তে
অনাহারী মানুষগুলোর দুচোখে।

সবে মাত্র ঘুমিয়েছে ওরা
কেঁদে কেঁদে।

আপনার উচিত ছিল আরো নিঃশব্দে গোপনে
শিশিরের মতো পা ফেলা।

বাতাসের শব্দেও এখন জেগে ওঠে ওরা।

উদরের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেনা
কেউ, কেউই।

ওদের পেট ভরার কোনো ব্যবস্থা না করেই
দিলেন তো ওদের জাগিয়ে।




     বন্ধ দরজা- খোলা জানালা'
        গিয়াসুদ্দিন আহমেদ

সরকারী সব আদেশ নামা
    বাড়ি ঘরে লাগাও তালা,
সুস্থ থাকতে ঘরে থাকো
    'বন্ধ দরজা-খোলা জানালা।'

সেদিন এক ভর দুপুরে
    চলছে বধূ নাইকো ছাতা,
কোলে শিশু কাঁদছে তার
    পুড়ছে রোদে পায়ের পাতা।

আবার দেখি এই সেদিন
    জলের খোঁজে বৃদ্ধ বাবা,
অনেক ভেবে দেখলাম শেষে
  'করোনা' যদি বসায় থাবা।

মানবতা সব বর্জন করি
   ফিরিয়ে দিলাম ভাতের থালা,
ক্ষুধার জ্বালায় মরছে তারা
    'বন্ধ দরজা - খোলা জানালা।'



                 সাঁকো
         দুঃখানন্দ মণ্ডল 


খুব দূর্বল একটি সাঁকো পার হতে হবে;
পিছনে একটি বড় লাইন!
খরস্রোত গন্তব্যস্থলের দিকে ছুটছে
ওপারে অপেক্ষারত নবজাতক আহ্বান
খুব দূর্বল একটি সাঁকো পার হতে হবে।

পা কেঁপে ওঠার আগেই পিছন জনের দাপট
সরে আসুন আমি পেরিয়ে যাই আগে!
পথ অনেক বাকি; জীবনের কথা ভাবো না!
লোকটা পার হয়ে যায়, ভয় থিতু হয়েছে।
খুব দূর্বল একটি সাঁকো পার হতে হবে।

খরস্রোত বহে যাচ্ছে, মানুষ পার হচ্ছে, থেমে নেই জীবন;
অথচ জীবনের জন্য এতো পিছু টান!
ওরা কিন্তু সচ্ছল আছে ওদেরও ভয় আছে;
 জীবনের জন্য নয় বাঁচার জন্য।
খুব দূর্বল একটি সাঁকো পার হতে হবে।

পিছনে আর কেউ নেই!
ওপারে অপেক্ষারত নবজাতক ফিরে গেছে
নদীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছে সাঁকো
দিন শেষের শঙ্খধ্বনি বাজছে।
জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত আটকে আছে
খুব দূর্বল একটি সাঁকো পার হতে হবে।


                 যাযাবর
           নিতাই চন্দ্র দাস

ফেলে আসা অতি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক যুগের―
বিচরণ ক্ষেত্রে আমি ঘুরে বেড়াতে চাই।
কারন আমি যে যাযাবর।

স্বর্গের ইন্দ্রপুরীর গন্তব্যে―
যেখানে অপ্সরা আর সুরার মোহে
মেতে থাকেন দেবগণেরা ,
আমিও সেখানে যেতে চাই !
তাঁদের সঙ্গে মেতে থাকতে চাই !                           কারন আমি যে যাযাবর।

মিশরের পিরামিডের গর্ভে―
আরক মাখানো যে মরদেহ গুলি
চির সজ্জায় শায়িত রাখা আছে ,
আমিও সেখানে যেতে চাই !
তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই!
কারন আমি যে যাযাবর।

পৃথিবীর বুক চিরে শত সহস্র নক্ষত্রের
যে আলোক রাশি ,
গভীর রাত্রিকে করে তিলোত্তমা ,
আমি সেই সহস্রাধিক নক্ষত্রের মাঝে
পাড়ি দিতে চাই ! আমিও নক্ষত্র হতে চাই !
কারন আমি যে যাযাবর।

সুনীল সাগরের মাঝে
জাহাজের মাস্তুলে উঠে ,
পৃথিবীর দিগন্ত দেখতে গিয়ে―                              ক্লান্ত হয়ে আকাশের বুকে মাথা পেতে
আমি ঘুমাতে চাই ! একটু শ্রান্ত হতে চাই !

আমার নেই কোন ঘর , নেই কেহ আপন পর
শুধু আছে মস্ত এক পৃথিবী খোলা ছাদ !
যেখানে আমি সর্বদাই থাকতে চাই !
কারন আমি এক যাযাবর।


                       চম্বলে প্রাচীন রকশিল্প 
                           নির্মাল্য পান্ডে
                           (মধ্যপ্রদেশ)

যদি তানসেনর সমাধি দেখতে মধ্যপ্রদেশে না আসতাম, আফসোস থেকে যেত দশ হাজার বছরের পুরন শিলাচিত্র বা রক আর্ট দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য।কি শর্মাজী, তাই না! চম্বলকে আমরা জানতাম, ডাকাতের দেশ হিসেবে- এই নিয়ে ছায়াচিত্র পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে, আজ ধন্য হলাম শুনে ও দেখে যে, আদিম মানব কত বড় শিল্পী ছিল।তারা গুহাবাসী হোয়েও তাদের মেধা ছিল ক্ষুরধার ও শিল্পমনস্ক। তাই, আমাদের চেনা গাইড নিয়ে তিনজন বেড়িয়ে পড়লাম ‘চম্বল নদীকে’ কেন্দ্র করে।চম্বলের এক শাখা নদীর নাম-চতুর্ভুজ নালা। তা’র দু’ধারে জুড়ে রয়েছে অন্তত ১০ হাজার বছরের পুরন শিলাচিত্র বা রক আর্ট। একটা দুটো নয়, ৭+৭=১৪ কিমি লম্বা রক-শেলটার, সারি সারি গুহা বিন্ধপর্বতে আশ্রয় নিয়েছে। তাতেই আদি মানব তাদের জীবন কথা পাথরে এঁকে রেখেছে। এই আশ্চর্য রকশেল্টার আছে রাজ্যের পশচিমে মন্দসৌর জেলার অভয়ারণ্যের মধ্যে যা, আবিস্কার করেন প্রথম ফরাসি বিজ্ঞানী জাঁ ক্লত-ভীমবৈঠকার গুহাচিত্র থেকে কোন অংশে কম নয়।অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল জনসমক্ষে আজ তুলে ধরেছেন ‘আর্ট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’। পৃথিবীর দীর্ঘতম রকআর্ট গ্যালারীর সন্মানলাভ করেছে-আমরা তো বিশ্বাসী করতাম না,যদি না দেখতাম। শুধু চতুর্ভুজনাথ নালায় নয়-চম্বল ভ্যালীর ধারেও প্রচুর এই শিলাচিত্র পাওয়া গিয়েছে।
                             
ভোপালেই শুনলাম, ৩৬৫ কিমি দূরে গান্ধিসাগর, সেটিই নাকি শকুনদের অভয়ারণ্য। সেখানে নাকি ১০হাজারেরও বেশি শকুন আছে। শকুনদের বাঁচানর জন্যই নাকি এই ‘শকুন-অরণ্য’। কথিত, একবার ভাইরাস জনিত কারণে শকুনদের মড়ক লাগে, তারই পরিপ্রেক্ষিত এই প্রচেষ্টা নিয়েছিল ‘কনজারভেটার অফ ফরেস্ট সংস্থা। গান্ধী সাগর অভয়ারন্যে ছিল দুটি গ্রাম-বাগচাঁচ ও ধাঙ্গা। লালচে ধুসর মাটি, গাছগাছালীর কোন চিহ্ন নেই, যেন মরুভূমি। এককালে ছিল, এখন ধ্বংস স্তূপে পরিণত। মনটা খারাপ হয়ে গেল। শুনলাম, হিংলাজগড় কেল্লা, হিংলাজমাতার মন্দির। আফগানিস্থানের মরুতীর্থ ছাড়াও এখানে (মন্দসৌরে) আরও এক হিংলাজমাতার মন্দির আছে-সম্ভবত দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে পরমাবংশের রাজারা তৈরী করেছিলেন। এক কালে এটি ছিল স্বর্ণযুগ, অসাধারণ ভাস্কার্যে ভরা মন্দির-বিগ্রহ, এখন তার স্থান ভোপাল স্টেট মিউজিয়ামে। এই কেল্লা উঁচু পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত ছিল, এখন গড় জঙ্গলে পরিণত। নিচে খাদে আছে প্রাচীন শিব মন্দির, রাম লক্ষন মন্দির--। অবশ্য হিংলাজ মাতার পুজো এখনও হয়।
  সত্যি চম্বল নদী প্রসব করেছে যেমন আদি মানব শিলাচিত্র, তেমনি রুক্ষ বনানী ও পাহাড়ের খাড়াই যা, এককালে ছিল ডাকাতদের আস্তানা। চম্বল প্রসিদ্ধ হল না প্রাচীন রক আর্টে, পরিচিতি লাভ করল ‘চম্বল-ডাকাত রাণী ফুলন দেবী’ নামে।


             হলুদ গোলাপে রক্তের ছিঠে
                     অরন্য ভট্টাচার্য্য

গতকাল, উত্তর কলকাতার রাস্তা ধরে আনমনে হাঁটছি। রাস্তার একধারে দেখি অনেক মানুষের ভিড়। যদিও কলকাতার রাস্তায় এমন ভিড় নিত্যদিনই লক্ষ্য করা যায়, তবুও আজ কলকাতা শহরটাকে যেন একটু বেশিই অচেনা মনে হলো।এগিয়ে গিয়ে দেখি সামনে এক জায়গায় রোগা, লিকলিকে, শীর্ণকায় চেহারার একটি তরুণ, গোলাপ ফুলের চারা নিয়ে বসেছে। দেখলাম সবাই ফুল দেখছে কিন্তু কেউ কিনছেনা।একজন তো বলেই উঠল,"মশায়, এ যেন দিনে ডাকাতি; এই চারাটার দাম নাকি ৪০ টাকা"। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই চোখে পরলো হলুদ রঙের সেই গোলাপ চারটি।দরাদরি না করে কিনেই ফেললাম। মনে মনে ভাবলাম "শখের দাম লাখ টাকা"।বাড়ি ফিরতে একটু রাতই হল। বাড়ি এসে যত্ন করে গোলাপের চারাটি রেখে দিলাম,ভাবলাম কাল এটার একটা ব্যবস্থা করা যাবে।ক্লান্ত শরীর তাই খেয়েদেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো সকাল আটটায়। উঠেই দেখি বাবা মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছে, আর বাবার চোখের কোনে জলের ছিটে। হেডলাইনে দেখলাম গতকাল উত্তর কলকাতার ফুটপাতে এক কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যু। বাবার হাত থেকে   কাগজটা একপ্রকার কেরে নিয়ে পড়তে গিয়ে হতভম্ব হয়ে পরলাম, চোখে পরলো কালকের সেই চির পরিচিত মুখটি। ছুটে দোতলায় চলে এলাম। এসেই যা দেখলাম তাতে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। এ কি? হলুদ গোলাপে কালো রঙের এ কীসের ছিঠে??


                                   স্বপ্ন
                          পিয়ালী গোস্বামী

আমি দেখছি হঠাৎ চারজন লোক নেশাতুর লোলুপ দৃষ্টিতে অনিমার দিকে এগিয়ে আসছে। অনিমা চেঁচাতে লাগল। হঠাৎ রোড লাইটটা দপ দপ করছে।কই আগে তো করেনি। লুজ কানেকশন? শিবপুর ব্রিজের মধ্যে হচ্ছে ঘটনাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। অনিমার ম্যাস্ট্রো স্কুটিটা ওরা লাঠি দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। দেখলাম ও রাস্তায় বসে পড়েছে।হাত জোড় করছে।ছেড়ে দাও!যেতে দাও! বলে কাকুতি মিনতি করছে। আমি দেখছি একটা পুরুষবেশী পশু অনিমার সামনে এগিয়ে গেল। ওর মুখটা একটা লম্বা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল। অনিমা প্রতিবাদ করতে চাইল। তৎক্ষণাৎ বাকি পুরুষবেশী নেকড়েরা ওকে ঘিরে ধরল। এবার একটা একটা করে পোশাক খুলে ফেলল দানবগুলি। প্রায় অর্ধনগ্না অনিমা। ওরা অনিমার শরীরের দিক এগোচ্ছে এমন সময় দেখলাম অনিমার চোখে জলের বদলে আগুন জ্বলছে। আমি আবার দেখতে চেষ্টা করলাম কিচ্ছু দেখতে পেলাম না হঠাৎ প্রচন্ড জোড়ে ঝড় শুরু হল। চারিদিক তোলপাড় করে উঠল। আচমকা রোড লাইট টা নিভে গেল। চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেল। আমি দারুন আশঙ্কায় ছিলাম কি হল।খুব জোড়ে শব্দ শুনতে পেলাম। কোন চিৎকার নেই বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখলাম বিশাল ল্যাম্পপোষ্টটা ভেঙে পড়েছে।
প্রকৃতির প্রচন্ড তান্ডব থেমে গিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কি হল অনিমা মারা গেল? কি হল দারুন কৌতূহল হল কি সর্বনাশ হল?আমি ঘেমে যাচ্ছি শরীরের উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বিদ্যুতের ঝলকানি দেখতে পেলাম একঝলক অনিমা রাস্তা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। আঝোরে বৃষ্টির ধারা ঝড়ছে। বৃষ্টির শব্দ  ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দেখলাম অনিমা শ্রীহীন ভাবে এগিয়ে চলছে। অজস্র জলের ফোঁটায় ওর সারা কলঙ্ক ধুয়ে যাচ্ছে।ওর চোখে একফোঁটা জল নেই। এবার দেখলাম ওর ঠোঁটে প্রতিশোধের হাসি....
ঘুমটা ভেঙে গেল।



                           দুঃখিনী মা
                        আব্দুল রাহাজ

চারিদিকে সমুদ্র আর তার মাঝে আছে ছোট্ট দ্বীপ নামটি তার ফ্যাদম। সুন্দরী দ্বীপটির আশেপাশে নারকেল গাছের সারি রয়েছে এবং দ্বীপটিকে আবদ্ধ করে আছে। নদীর ছোট ছোট ঢেউ দ্বীপটির উপর আছড়ে  পড়ে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যেন এই দ্বীপকে আরো রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। এই ছোট্ট দ্বীপটির মাঝে বসবাস করত এক দুঃখিনী মা। দ্বীপটিরপশুপাখি জীবজন্তু নিয়ে তার সংসার। দীপ্তির আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত মনোরম ও স্বাস্থ্যকর এই ভাবে দুঃখিনী মা দ্বীপটিতে বসবাস করতেন। দীপ্তি পশুপাখি জীবজন্তু সবাই দুঃখিনী মায়ের কথা শুনতো। পশুপাখি জীবজন্তু সকালবেলা ও সন্ধ্যাবেলা দুঃখিনী মায়ের কাছে গল্প শুনতো। তারপর যে যার কাজে চলে যেত। দুঃখিনী মায়ের খাদ্য ছিল বনের ফলমূল আর নদীর মাছ এইভাবে তার দিন কাটত। একবার এক সন্ধ্যায় পশুপাখি ও গাছপালা দের নিয়ে এক গল্প বলতে  লাগলো ।দুঃখিনী মা নিজেই গল্পের বিষয়টি সবার সামনে বললো। দুঃখিনী মায়ের গল্পের বিষয় ছিল তার জীবনের ইতিহাস। দুঃখিনী মায়ের গল্প বলতে শুরু করল আমি জন্মেছিলাম মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী কিন্তু তার মেধাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। তার বাবা-মা ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া শহরের রাজা ও রানী সেই সময় দিতে ছিল মেয়েদের ঘরের বাইরে আসা নিষিদ্ধ। এই সময় গোটা আলেকজান্দ্রিয়া শহর তার বাবা শাসনকার্য চালাত। তাদের ভাই বোন মিলে ছেলে পাঁচ জন দুইজন দাদা তিনজন বোন এভাবেই তাদের গোটা পরিবার সুখে শান্তিতে বসবাস করত। আনন্দের মাধ্যমে তাদের দিনগুলো কাটতো। এইভাবে দেখতে দেখতে তার বড়ো হল। দুঃখিনী মা ছিল সবার ছোট।একে একে  সব  বোনেদের বিয়ে হয়ে গেল। দুই দাদা শাসনকার্য চলার জন্য বাবার সাথে নেমে পরলো। এইভাবে একদিন দুঃখিনী মায়ের বিয়ের প্রস্তাব এল। এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেও দুঃখিনী মায়ের বাবা-মা। বিয়ে হল কায়রো শহরে বিখ্যাত ধনী পরিবারের একমাত্র পুত্র আল তালিব কাসেম এর সাথে। সুখে-শান্তিতে তারা বসবাস করতে লাগল। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর তাদের প্রথম পুত্র সন্তান জন্মালো নামটি তার আল তালিব ফাইম। ছেলে ছিল রাজপুত্রের মতোএইভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। দেখতে দেখতে তাদের এই ছোট্ট সংসার কুড়ি বছর অতিক্রম করল। এদিকে দুখিনী মায়ের বাবা-মা দুজনেই মারা গেল স্বাভাবিকভাবে শোকস্তব্ধ হয়েছিল দুঃখিনী মা। তারপর কেটে গেল কয়েকটা বছর। একদিন মিশরে দেখা দিল খাদ্যের সংকট মহামারী। গ্রামের পর গ্রামে মানুষের মৃত্যুতে সব যেন উজাড় করে দিয়ে গেল মনে হচ্ছিল আলেকজান্দ্রিয়া শহরের মুখে। এর কিছুদিন পর আলেকজান্দ্রিয়া শহরের পশ্চিম দিবেন পাহাড়ি অঞ্চলের সোনার সন্ধান পায় বাইরের দেশের দস্যুরা।শুরু হয় আলেকজান্দ্রিয়া শহরের দখল আর শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে চলে ঘোর যুদ্ধ এরপর দুঃখিনী মায়ের ধাত্রী ভূমি চলে গেল সেই দস্যুদের হাতে তখন দুঃখিনী মায়ের ভাইয়েরা সেই যুদ্ধে শহীদ হয়ে সমাধি হয়ে গেল। আলেকজান্দ্রিয়া শহর আর দেখে আসা হলো না দুঃখিনী মায়ের। এরপর বহুদিন কেটে গেল একদিকে দুঃখিনী মা তার শহর ভুলে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। হঠাৎ একদিন কায়রো শহরের পূর্ব দিকে আসোয়ান বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে লাগল কায়রো শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি আর জলের চাপে কায়েরো শহরেভেসে গেল শত শত মানুষ তখন দুঃখিনী মায়ের স্বামী ও ছেলে বাণিজ্য কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে তখন জলের যাবে চিরজীবনের মতো ভেসে গেল। দুঃখিনী মা চিন্তায় পড়ে গেল এদিকে জলের চাপে মুহুর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল কায়েরো শহর কিরে ধ্বংসের মুখে। আর দুঃখিনী মা ভাসতে ভাসতে জীবনকে হাতে নিয়ে এই ছোট্ট দ্বীপের এক কোনায় গাছের গায়ে বেঁধেছিলেন।
তারপর জ্ঞান ফেরার পর কিছু বুঝতে না পেরে দ্বীপের মধ্যে বসবাস করতে লাগলো এইভাবে তো এই দ্বীপের পশুপাখি ও জীবজন্তুর সাথে পরিচয় হলো এইভাবে দুঃখিনী মা সবাইকে তার জীবনের ইতিহাস শোনালেন গল্পের শেষে দেখা যায় সবার চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে এইভাবে দুঃখিনী দ্বীপের সবার সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। আর চিরকাল দীপ্তির পশুপাখি জীবজন্তু দুঃখিনী মাকে আগলে ধরে বাঁচতে লাগলো।


No comments:

Post a Comment