PravatiPatrika

Sunday, June 7, 2020

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস



ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস▪

                        সোহান ও তার বন্ধুরা
                              পার্থসারথি

পর্ব-৫▪

সব শোনার পর চিনুদা রেগে একেবারে আগুন হয়ে গেল। চোখ গোল গোল করে বলল- 'তুই তো শিবলীর সাথে লাগতে পারতি। তোর সাথে শিবলী পারতো নাকি? কোনদিনই না।এভাবে অপমানিত হওয়ার কোন মানে আছে?'
কী বলবে নাউড়া ঠাহর করতে পারছে না। অপরাধীর মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আসলে শিবলীর সাথে নাউড়া কোনদিনই পেরে ওঠে নি। চিনুদা নাউড়াকে একটু বেশি ভালোবাসে বলে কথায় কথায় নাউড়াকে একটু গুরুত্ব দেয়।চিনুদা কী যেন ভেবে তারপর সান্ত্বনার স্বরে বলল- 'ঠিক আছে, কোন চিন্তা করার দরকার নেই। যা হবার হয়েছে। আগামীকালই সব ফয়সালা হবে। যা এখন গিয়ে পড়তে বস। এসেই বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েছি। আবার খুঁজতে শুরু করে দিবে। ও হে, ক্লাশের কী কী পড়া আছে একটু বলে দে।'
চল, ঘরে চল। চিনুদা ঘরের ভেতর এসে তাড়হুড়া শুরু করল।তারপর ক্লাশের খাতা দেখে দেখে চিনুদাকে ক্লাশের সব পড়া দেখিয়ে দিল।
পরদিন চিনুদার কথামতো নাউড়া আধ ঘন্টা খানেক আগে স্কুলে চলে এল। কিন্তু চিনুদা এখনও আসে নি। আসফি, শিবলী ওরা সবাই চলে এসেছে। হইচই করতে করতে ক্লাশ রুমটা যেন মাথায় তুলে নিয়েছে। নাউড়া রুমে ঢুকতেই আসফিরা আরও জোরে চেঁচাতে শুরু করল। কারও কথা তেমন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। সবাই এত চিৎকার চেঁচামেচি করছে যে টিকে থাকা দায়। কান যেন ব্যথা করছে। মাঝেমধ্যে আবার টিটকিরিও দিচ্ছে। নাউড়া ক্লাশ রুম থেকে বেরিয়ে এল। গেইটের সামনে এসে দাঁড়াল। চিনুদা আসছে। চিনুদাকে আসতে দেখেই নাউড়ার মনে সাহস এল।
কাছে আসতেই নাউড়া চিনুদাকে বলল- 'কী ব্যাপার, আমাকে আগে আসতে বলে তুই দেরী করলি কেন?'
বাজার-সদায় করে দিয়ে আসতে একটু দেরী হয়ে গেল। চল, ক্লাশে চল।
হাঁটতে হাঁটতেই নাউড়া ক্লাশ রুমের অবস্থাটা চিনুদাকে জানাল। কথাটা বলার পর চিনুদা খানিক কী যেন ভাবল। তারপর বলল- 'একটু পরে ক্লাশ রুমে যাব।এখানে কতক্ষণ দাঁড়াই।'
কাহার, সুজন ওরা সবাই একে একে চলে এল। সরোজও ওদের পাশে এসে দাঁড়াল। সরোজ অবশ্য ওদের সাথে মাঝে মধ্যে চলাফেরা করে। তবে ভালো বন্ধুত্ব আছে ওদের সাথে। কিন্তু আসফিদের সাথে একদম মেলমেশা করে না।
সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। সোহান আসছে দেখে নাউড়া চিনুদাকে ডেকে বলল। চিনুদা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটের ডগায় চোরা হাসি খেলে যাচ্ছে। ব্যাপারটা নাউড়ার দৃষ্টি এড়াতে পারে নি। না জিজ্ঞ্যেস করে পারল না- 'কী ব্যাপার, মুখে তোর চোরা হাসি কেন?'
হাসছি তোদের নতুন বন্ধুটিকে দেখে। সত্যিই তো আলুর বস্তার মতো। হাটছে যে দেখে মনে হচ্ছে...।'
চিনুদার কথা কেড়ে নিয়ে নিয়ে কাহার বলল- 'নারে চিনুদা, ছেলেটা খুবই ভালো।'
সোহানের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। কাছে আসতেই প্রথমেই চিনুদার সাথে সোহানকে পরিচয় করিয়ে দিল। আর কোন কথা হলো না।চিনুদার পরামর্শে ওরা সবাই ক্লাশে চলে গেল। চিনুদা চুপচাপ ক্লাশের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। আসফিদের গ্রুপের কেউ জানে না যে, চিনুদা এসেছে।'
ক্লাশে ঢুকতেই আসফিদের আক্রমণাত্বক কথাবার্তা শুরু হল। কাহাররা কিছুই বলছে না। চুপচাপ বসে আছে। আসফিদের চেঁচামেচি বেড়েই চলছে। আজ আবার একটা নতুন ছড়া আওড়াচ্ছে-
'আলুর বস্তা গড়িয়ে চলে
দপাদপ তালে তালে
আলুর বস্তা গেল হেরে
দে'না ধরে কানটা ম'লে।'
ছড়া আওড়াতে আওড়াতে আসফি, শিবলী, কাজল আরও দু'তিন জন কাহারদের বেঞ্চের সামনে চলে এল। কাহার অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সোহানের দৃষ্টি কোথায় আছে ধরা বড় মুশকিল। সোহানের চোখ-মুখ রাগে ও ক্ষোভে লাল হয়ে আছে। আসফিরা থামছে না। চিৎকার করছে আর তালে তালে ছড়া আওড়াচ্ছে। সোহান এবার সহ্য করতে পারল না। দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল- 'তোমরা চুপ কর! নইলে স্যারের কাছে নালিশ করব।'
কাহার সোহানকে টেনে বসাল। আসফি যেন আরও আস্কারা পেয়ে গেল। এবার ছড়ার তালে তালে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী করতে লাগল। নাচতে নাচতে একবার সামনে আসে আবার দুলতে দুলতে পেছনে।ছড়ার শব্দে রুমটা গমগম করছে।
চিনুদা চুপচাপ রুমে প্রবেশ করল। দরজার কাছেই একপাশে দাঁড়িয়ে রইল। আসফি দেখেও না-দেখার ভান করছে। কোন কথা না বলে চিনুদা এগিয়ে এল। আসফিকে ডাক দিল।হইচই এতক্ষণে একটু কমে এল। ধীরে ধীরে সবার কন্ঠস্বর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।
দু'হাত কোমরে রেখ চিনুদা বুক টান টান করে দাঁড়িয়ে বলল- 'কিরে আসফি খুব আনন্দে আছিস মনে হচ্ছে?'
আসফি চোখ দু'টো ছোট ছোট করে একটা ভাব নিয়ে উত্তর দিল-  'তাতে তোর কী? আমাদের যা খুশী তা করব।'
চিনুদা আসফিকে কোনরকম তোয়াক্কা না করে বলল- 'করবি ভাল কথা, তবে ওই যে কি বলছিস, ওসব বাদ দে।'
আসফি আঙুল উঁচিয়ে বলে- 'কেন, তাতে তোর কী হয়েছে? একশ' বার বলব, হাজার বার বলব।'
কথাগলো শুনে চিনুদার ভীষণ রাগ হল। কিন্তু প্রকাশ করল না। রাগটা ভেতরে ভেতরে রাখল।এবার চিনুদার হাত দু'টো পকেটে। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল- 'ঠিক আছে বল। দেখি, তোর সহসের দৌঁড়।'- কথাগলো বলে চিনুদা এমন ভঙ্গীতে দাঁড়াল যেন কোন এক ছবির নায়ক দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ লাগছে। নাউড়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছে হচ্ছে চিনুদা হয়ে যেতে।নাউড়া আরও কিছু ভাবতে যাচ্ছিল এমন সময় লাথির শব্দটা কানে এসে পৌঁছাল এবং তার চিন্তায় যতি পড়ল। আসফিও পাল্টা লাথি বসাল চিনুদাকে। সবাই তো হতবাক! চিনুদার উপর আঘাত! দেখতে না-দেখতেই আসফি চিৎফটাং। আর ওর বুকের উপর চেপে বসেছে চিনুদা।আসফি সজোরে হাফাচ্ছে।অন্যরা সব ভয়েতে কাঁপছে যেন। এরই মধ্যে কয়েকজন যার যার জায়গায় গিয়ে বসল। শিবলী পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাহার, নাউড়া, সুজন ওরা সবাই চিনুদার কাছে এসে দাঁড়াল। চিনুদা আসফির বুকের উপর আরও সজোরে চেপে বসে দু'গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকখানা চড় বসাল।  শিবলী, কাজল ওরা কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক পলকেই বুঝা যাচ্ছে আসফির গ্রুপের সবাই ভয়েতে একেবারে কাবু হয়ে গেছে।
আসফি শেষে হার মেনে নিয়ে স্বীকার করল যে, আর কোনদিন এমন করবে না। অবশ্য আসফি ঠেলায় পড়ে এমন শপথ আরও কয়েকবার করেছে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।যেদিন চিনুদা ক্লাশে থাকে না সেদিনই আসফি রাজত্ব শুরু করে দেয়। সাথে সাথে কাজল, শিবলীও ভুলে যায় চিনুদার দেয়া হাড্ডিসার কনুইয়ের গুঁতো আর শুকনো খড়খড়ে হাতের চড়।
সবাই চিনুদা আর আসফির দিকে তাকিয়েছিল। কেউ বিন্দুমাত্র টের পায় নি স্যার এসে কখন দাঁড়িয়েছে। টের পাওয়া মাত্রই সবাই ভূত দেখার মত হতবাক। চিনুদা তখনও আসফির বুকের উপর চেপে বসে আছে। স্যার চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে। সবাই একদম নীরব। কেউ মুখ খুলে আওয়াজ করে কিছুই বলতে পারছে না। যদিও নাউড়া কয়েকবার ইশারায় বুঝাতে চেয়েছে কিন্তু চিনুদা বুঝে ওঠতে পারে নি। কিন্তু হঠাৎ সবার নীরবতায় চিনুদা বুঝতে পারল যে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়! আন্দাজ করতে পারল পেছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। চিনুদা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। নিমিষেই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।স্যার চিনুদার কান টেনে ধরলেন। আসফি উঠে চলে যেতে চাচ্ছিল। স্যার চিৎকার করে হাক দিলেন। আসফি স্যারের কাছে গিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়াল।
স্যার একজনকে বেত আনতে পাঠিয়েছেন।তারপর চিনুদা ও আসফিকে দু'কান ধরে দাঁড়াতে বললেন। স্যার একটু অন্য দিকে তাকাতেই আসফি ফাঁকি দিতে চাচ্ছিল। স্যারকে ফাঁকি দিতে পারে নি। তারপর আসফিকে কান ধরাসহ এক পা তুলে দাঁড়াতে বলল। কিন্তু আবার স্যার একটু অন্য দিকে তাকাতেই আসফি পা নামিয়ে ফেলল।স্যারের চোখকে ফাঁকি দেয়া এত সহজ নয়। স্যার চোখ গরম করে আসফির দিকে তকিয়ে রইল। এর মধ্যে বেত নিয়ে চলে এসেছে। বেত হাতে নিয়েই স্যার আসফিকে পেটাতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পিটিয়ে তারপর দু'পক্ষের কথা শুনলেন। এবার স্যারের চেহারা পাল্টে গেল। আবার ধুমাধুম পেটাতে শুরু করলেন আসফিকে। আসফি ছোট বাছুরের মত তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাগল। তারপর আসফির কান টেনে ধরে স্যার বললেন- 'আর যদি কোনদিন এমন করিস তাহলে বাপের নাম ভুলিয়ে তবে ছাড়ব।'
স্যারের শেষ কথাটায় ক্লাশের সবাই একসঙ্গে ফিক করে হেসে ওঠল। চোখ গরম করে স্যার চারদিকে একবার তাকালেন। সবাই একদম চুপ হয়ে গেল।তরপর কিছুক্ষণ নীরব। ক্লাশের ভেতর পিনপতন নীরবতা। মনে হচ্ছে স্যারের রাগের পতন হচ্ছে ধীরে ধীরে। ইশারায় আসফিকে চলে যেতে বললেন। বিন্দুমাত্র দেরি না করে আসফি ব্যথার স্থানগুলোয় হাত বুলাতে বুলাতে এক দৌঁড়ে গিয়ে নিজের আসনে গিয়ে বসল।
এবার চিনুদার পালা। সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে। কী হয়, কী হয়! স্যার হালকা ধমক দিয়ে বললেন- 'কোন কিছু হলে আমাকে জানাবি।মাতব্বরি করবি, উপায় রাখব না।'- আচ্ছা স্যার বলে চলে আসার সময় চিনুদাকেও এক ঘা বসালেন। তবে তেমন একটা লাগে নি। হয়ত বা স্যার ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে।
ক্লাশ শেষে আসফি’ কাজল’ শিবলী ওরা ভেঁজা বেড়ালের মতো চুপচাপ বসে আছে। সোহানের চোখ-মুখে রাজ্যের কৌতূহল মিশে আছে। সোহান ভাবছে-'আসফি বাঁদর তো একেবারে টাইট হয়ে গেছে। ঠিক শাস্তি হয়েছে আসফিটার। কী যন্ত্রণাটাই না ক'দিন করেছে। কয়েকটা দিন তো নয় যেন কয়েকটা যুগ।এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল।'-একবার চিনুদাকে দেখছে আবার আসফির দিকে তাকাচ্ছে। নাউড়ার চোখে চোখ পড়তেই একটা তৃপ্তির হাসি আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দিল সোহান। নাউড়া খুশী খুশী ভাব নিয়ে মাথা নাড়ল। চিনুদা আর কাহার কী যেন পরামর্শ করছে।
ক্লাশের ভেতরে মারামারি করার দুঃসাহসটুকু জানতে চাইল নাউড়া। চিনুদা উত্তরে বলে- 'ওসব বুঝলে তো তুইই চিনুদা থাকতি। আর আমি হতাম নাউড়া।'
সুজনও জানতে চায় ব্যাপারটা। কিন্তু চিনুদা এড়িয়ে চলে।সবাই মিলে একসঙ্গে যখন চিনুদাকে চেপে ধরল তখনও রহস্যভরা একটা হাসি হসে বলল- 'হেড স্যার আজ স্কুলে নেই।'
আশ্চর্য হয়ে নাউড়া বলে- 'তাই তো বলি, চিনুদা এত সাহস পায় কোথায়!'
চল, চল...বাইরে কোথাও গিয়ে বসি।– এই বলে চিনুদা হাঁটতে শুরু করল।
চিনুদার সংস্পর্শে এসে সোহান মহাখুশী। একটা বিরাট যন্ত্রণার ফাঁদ থেকে যেন চিরদিনের মতো মুক্ত হলো আজ। সোহানের খুশী খুশী ভাব দেখে কাহার ও নাউড়াকে বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে। আড্ডায় যতক্ষণ কথা হলো ততক্ষণ সোহান চিনুদার কথা হা হয়ে শুনল। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সোহান একদিনেই চিনুদার ভক্ত হয়ে গেল। সোহান সবাইকে ওদের বাসায় আমন্ত্রণ জানাল।
চিনুদা বেশ ভাব নিয়েই বলল- 'তোমাদের বাসায় কী কী আছে?'
সোহানের এক কথায় জবাব- 'অনেক কিছুই আছে। ভিডিও গেমসও খেলতে পারবে। আছে অনেক অনেক গল্পের বই।'
চিনুদা বেশ খুশী হলো। তারপর বলল- 'ঠিক আছে। এই শুক্রবারই তোমাদের বাসায় যাব।'
সোহান বেশ খুশী হয়ে বলে- 'থ্যাংক ইউ চিনুদা। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'
চিনুদা কপট রাগ দেখয়ে বলল- 'কোন তুমি নয়। সোজাসুজি তুই, কি ঠিক আছ? এখন থেকে তুই বলতে হবে।'
সোহান একটু লাজুক ভাব নিয়ে বলে- 'তা কয়েক দিনেই হয়ে যবে।'
কয়েকদিন নয়। এখনই বলতে হবে।
সোহান চুপচাপ বসে আছে। কোন কথা বলছে না দেখে চিনুদা আবার বলল-'এখনই বল।'
সোহান আমতা আমতা করছিল।
চিনুদা জোরে এক ধমক বসাল সোহানকে। 
সোহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে ওঠল- 'আরে তুই এত পাগলামি করছিস কেন? আস্তে আস্তে হয়ে যাবে। বলবো অবশ্যই বলবো। তোরা আমার বন্ধু না!'
সবাই খুশীতে হৈ হৈ করে ওঠল।চিনুদা সোহানের পিঠে একখানা আদুরে থাপ্পর বসাল। থাপ্পরটা হালকা হলেও বেশ লেগেছে। তাই পিঠ হাতাতে হাতাতে সোহান বলল- 'ওরে বাবারে! চিনুদা তোর হাত যে কী শক্ত। আসফিকে যে মা'র মেরেছিস, খবর আছে ওর।'
চিনুদা এক হাতের উপর আরেক হাত রেখে দেখে আর মিটিমিটি হাসে।সবাই তাকিয়ে দেখে চিনুদার হাসি।
সর্বশেষে স্থির হলো শুক্রবার বিকেলে সবাই সোহানদের বাসায় যাবে।
শুক্রবার। বিকেল পাঁচটা বাজে।সবাই টিডিসির পুকুর পাড়ে সোহানদের বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। সোহানদের বাসাটা দোতলা। কথা ছিল সোহান বাসার বারান্দায় অপেক্ষা করবে। কিন্তু সোহান নেই। প্রায় দশ মিনিট হয়ে এল ওরা শুধু পায়চারি করছে। আর বারবার দোতলার বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, চিনুদা ভীষণরকম রেগে আছে।সোহানের দেখা না পেয়ে সবাই পুকুর পাড়ের দুর্বা ঘাসের উপর।সবাই পুকুরের দিকে মুখ করে বসেছে। সোহানদের বাসাটা ওদের ঠিক পেছনেই। যা'তে সহজেই দেখতে পায়। বসে বসে ওরা বিচ্ছিন্ন টুকটাক গল্প করছিল।
সোহান বারান্দায় এসে ওদের দেখতে পেয়েই চিৎকার করে ডাক দিল। ওরা তাকাতেই সোহান হাত নেড়ে বলল- 'আমি আসছি।'
সোহান এক দৌঁড় দিল। মিনিট খানেকের মধ্যেই গেইট খুলে বাইরে বেরিয়ে এল। কাছে আসতেই চিনুদা সোহানকে এক ধমক বসাল। সোহান অপরাধীর মতো বলল- 'দুপুরে খাওয়ার পর শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ ঘুম এসে গিয়েছিল। স্যরি দোস্ত, একদম বুঝতে পারি নি।'
চিনুদা এই ক'দিনেই বুঝতে পেরেছে যে’ সোহান সাধারণত মিথ্যা কথা বলে না। তাই চিনুদা আর কোন কথা বাড়ায় নি।সবাইকে নিয়ে সোহান বাসার ভেতরে প্রবেশ করল। সবাই সোহানের পিছু পিছু হাঁটছে। একেবারে সোজা সোহানের নিজের রুমে গিয়ে প্রবেশ করল। রুমটা বেশ পরিপাটি করে সাজানো। দেয়ালে টানানো রয়েছে বেশ সুন্দর একটা প্রাকৃতিক দৃশ্যের বাঁধানো ছবি।বুক শেলফে সাজানো আছে অনেক অনেক বই।পাঠ্যপুস্তক সবগুলো সুন্দরভাবে টেবিলের উপর সাজানো।ক্যাসেট প্লেয়ার আছে পাশের একটা ছোট্ট টেবিলে। আর ক্যাসেটগুলো থরে থরে সাজানো রয়েছে ক্যাসেট রেকে। ছোট্ট একটা টেলিভিশনও আছে রুমে। এটাতেই ভিডিও গেমস খেলে সোহান। খাটের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনেকগুলো ভূতের গল্পের বই। একটি বই মনে হয় সোহান পড়ছিল। বইটির পাতা ভাঁজ করে উল্টানো। সবার দৃষ্টি যেন চঞ্চল হয়ে ঘোরা ফেরা করছে একদিক থেকে অন্যদিকে।মিনিট খানেক এভাবেই একটা ঘোরের মধ্যে কেটে গেল। কেউ কারও সাথে কোন কথা বলে নি।যেন অজানা রহস্যময় এক রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে।   চলবে...

No comments:

Post a Comment