PravatiPatrika

Thursday, June 18, 2020

বৃহস্পতিবারের পাতা

                      পাখির ডানার উড়ান
                         প্রশান্ত ভৌমিক

                               চার

শুক্রবার ঘুম থেকে উঠে ভাবতে লাগলাম আজ করার কী আছে। মদন স্যার ৩২টা অঙ্ক বাড়িতে করার জন্য দিয়ে গেছেন, যার মধ্যে ৭ খানা জ্যামিতি। বাঁচোয়া যে, আজ মদন স্যারের আসার সম্ভাবনা কম। আমি তাই অংক বাদ রেখে অন্যান্য বিষয় পড়ায় মন দিলাম। মাঝখানে ছোটদিকে ব্লক-বাটিকের ক্লাসে এগিয়ে দিতে একবার বেরোতে হল। ছোটদি কলেজ রোডে এই কাজটা শিখছে। তাই রিক্সায় করে সেখানে যাওয়ার পথে সে আমাকেও নিয়ে গেল। আমি আবার রিক্সায় করে ফিরে এলাম। টিভিতে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ম্যাচ চলছে। সেটা চালিয়ে দিয়ে পড়া তৈরি করতে থাকলাম। পড়তে পড়তে মনে হল, একসময় আমিও নিজের আগ্রহে পড়তাম। ভাল রেজাল্ট করতাম। আমার নিজের বলে একটা জগৎ ছিল। আমি ক্রিকেট খেলতাম। আমি সবুজ ঘাসে দৌড়ে বেড়াতাম। আমি বাবা-মায়ের বড় আদরের ছিলাম। বড়দি-ছোটদিও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না। আর এখন? এখন আমি বেয়াদব! আমাকে পড়ালেখা না করিয়ে জমির কাজ করানো উচিত- এসব শুনতে শুনতে আর বেঁচে থাকার আগ্রহই থাকে না। আমার মনে পড়ছে না শেষ কবে মন ভাল রেখে আমি পরিবারের সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেছি।

দুপুরবেলা মুরগির মাংস, ডালের বড়া আর মুসুরির ডাল রান্না হল। মা জানেন এসব আমার খুব পছন্দের। আর তাই শুক্রবার বেশিরভাগ সময়েই এসব রান্না হয় আমাদের বাসায়।

ভাত খেয়ে শুয়ে শুয়ে তিন গোয়েন্দার পুরনো ভলিউম পড়ছিলাম। তিন গোয়েন্দা পড়া শিখিয়েছিল সাজুদা। আমি আর অর্ণব ছোটবেলা থেকেই ভাগাভাগি করে বই পড়তাম। তবে এখানে তেমন বই পাওয়া যেত না বলে আমরা ভূতের গল্প, আরব্য রজনী ইত্যাদি পড়তাম। সাজুদা মাঝে মধ্যে বেড়াতে এলে আমাদের বলত নতুন নতুন বইয়ের কথা। ওরা সিলেট থাকে। সিলেটে নাকি নতুন সব বই পাওয়া যায়। একবার এসে সাজুদা আমাদের তিন গোয়েন্দার বেশ কিছু নতুন বইয়ের নাম লিখে দিয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো কোথায় পাব জানতাম না। যখন ক্লাস এইটে আমি নতুন স্কুলে গেলাম, দেখলাম ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই তিন গোয়েন্দায় মশগুল। ওদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম ম্যাগাজিন সেন্টারের কথা। বাবাকে বলতে বলতে একদিন নিয়ে গেলেন। সেই শুরু। তারপর টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে, রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে চলা শুরু তিন গোয়েন্দার সাথে। পাশাপাশি খুব অনিয়মিত ভাবে বের হওয়া অয়ন-জিমিও ভাল লাগে খুব। এখন অবশ্য ম্যাগাজিন সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বই কিনি ব্যাংক রোডের তাজ লাইব্রেরি থেকে। হাতের বইটা উলটে দেখলাম এটাতেও তাজ লাইব্রেরির সিল মারা। ভলিউম ১১। ‘অথৈ সাগর’ গল্পটা আমার খুব প্রিয়। অর্ণব অবশ্য এখন আর তিন গোয়েন্দা পড়ে না। ও কিছুদিন পড়ে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর ধরেছে ফেলুদা। এখন আবার রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী কিনবে ভাবছে।

ডিং ডং! কলিং বেলের আওয়াজ হল। আমি ভাবলাম পিটনদা এসেছে। পিটনদা আমার পিশির ছেলে। সবাই ওকে খুব ভাল বলে। কিন্তু আমার একটুও ভাল লাগে না। কারণ, পিটনদা সুযোগ পেলেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়। আমার খুব খারাপ লাগে। কাউকে বলতেও পারি না।

কিন্তু না। পিটনদা নয়। মা এসে জানালেন মদন স্যার এসেছেন। আমার মাথায় বাজ পড়লেও এতটা অবাক হতাম না। আজ শুক্রবারে মদন স্যারের তো আসার কোন কারণই নেই। তাছাড়া আমি কোন অংকই করিনি। কাল রাতে আর আজ সকাল থেকে তো অন্যান্য বিষয়ই পড়েছি। অংকটা সন্ধ্যায় করব বলে রেখেছিলাম। কিন্তু মদন স্যার এখন এসে পড়লেন কেন? সপ্তাহে দু’দিনের জায়গায় তিনদিন পড়ানোর মানুষ তো তিনি নন। আজ কপালে কী আছে কে জানে?

বইপত্র নিয়ে পড়ার ঘরে যেতেই স্যার জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ কী করছিলি?
আমি সত্যিটাই বললাম, শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম।
স্যার গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কী বই?
আমি বললাম, তিন গোয়েন্দা।
স্যার ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকালেন। তারপর অংকের বইটা হাতে নিয়ে বিদ্রুপ মেশানো গলায় বললেন, তা বেশ! পড়া বোধহয় কম দিয়ে যাচ্ছি। তাই পড়া শেষ করে গোয়েন্দা বই পড়ার সময় পাচ্ছিস। ঠিক আছে, আজ থেকে পড়া আরো বাড়িয়ে দিতে হবে।
অংকের বইটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, কোথায় অংক করাচ্ছিলাম বের কর।

আমি বের করলাম।

এরপর বললেন, যে অংকগুলো দিয়ে গিয়েছিলাম, সেগুলো করেছিস যে সেই খাতা দেখা।
আমি বললাম, অংক করিনি।

মদন স্যার যেন অন্ধকারে আলোর দিশা পেলেন। সামান্য এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কেন?

আমি বললাম, সময় পাইনি।

বাঁহাতে চুলের মুঠি ধরে ডান হাতে আমার বাঁ গালে একটা চড় কষিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অংক করার সময় পাস নি! অথচ গোয়েন্দা বই পড়ছিলি শুয়ে শুয়ে। কত বড় বেয়াদব তুই চিন্তা করে দেখেছিস?

আমি সাহস করে বললাম, কাল রাতে আর আজ সকালে অন্য বিষয় পড়ছিলাম। অংক বেশি ছিল, তাই ভেবেছিলাম আজ রাতে করব। আপনি যে আজ আসবেন তা বুঝতে পারিনি।

স্যার রেগে যাচ্ছেন আরো। খুব ঠান্ডা গলায় বললেন, আমি যে আজ আসব না সেটা কি কাল বলে গিয়েছিলাম?

আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। স্যার উত্তর না পেয়ে আরো হিংস্র হয়ে আমার চুলের মুঠি চেপে ধরলে। তারপর ইচ্ছেমত গালে, মাথায়, পিঠে বেশ কিছুক্ষণ মারলেন। মারামারি শেষে বললেন, আমি বসে থাকব। সবগুলো অংক আমাকে এখন করে দিবি।

আমি পিঠের ব্যথায় সোজা হয়ে বসতে পারছিলাম না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজই বাবাকে বলব, আমি আর পড়াশোনা করব না। কাল থেকে আমাদের টিনের দোকানে মতিন দাদার সাথে লেবারের কাজ করব। মতিন দাদা আমাদের টিনের দোকানের হেড লেবার। খুব সজ্জন। তার সাথে কাজ করলে তো আর এভাবে মার খেতে হবে না, আর এত অপমানও সহ্য করতে হবে না। কিন্তু এখন তো আর সেটা বলতে পারব না। তাই চুপচাপ অংকগুলো করতে পাগলাম।

বাইরে থেকে ছেলে-মেয়েদের চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছে। আজ শুক্রবার বলে সবাই বিকেলে খেলতে বেরিয়েছে। ছুটির দিন বিকেলে সবাই স্বাধীনভাবে খেলাধুলা করার অনুমতি পায়। আর আমার সে কপালও নেই। শুক্রবার বিকেলেও আমাকে মার খেতে খেতে অংক করতে হয়। আমার অংক করতে আপত্তি নেই। কিংবা পড়া না পারলে যৌক্তিক যে কোন শাস্তি পেতেও আপত্তি নেই। আমার আপত্তি অযৌক্তিক শাস্তিতে। আজ আমি কিন্তু আমার দোষে শাস্তি পাইনি। আমি কাল রাত থেকে কোন সময় নষ্ট করিনি। কিংবা না পড়ে টিভিও দেখিনি, খেলতেও যাইনি। স্কুলের সব বিষয়ের পড়া করেছি। যতটুকু সম্ভব আগামী সপ্তাহের বাড়ির কাজ করে রেখেছি। প্র্যাকটিকেল খাতা লিখেছি। এত কিছু করার পর তিন গোয়েন্দার বইটা নিয়ে শুয়েছি ৩০ মিনিটও হয়নি। আর অংকগুলো আমি আজ রাতে করব বলে ভেবেও রেখেছিলাম।

স্যার জিজ্ঞেস করলেন, আজকে পেপার দিয়েছে?

আমি হ্যাঁ বোধক উত্তর দিতেই বললেন, যা। ভেতর থেকে নিয়ে আয়।

আমি পেপারের জন্য ভেতরে যেতেই মা জিজ্ঞেস করলেন, কিরে, তোকে মারল কেন? পড়া শিখিসনি বুঝি? সারা দিন কি বইয়ের সামনে বসে ধ্যান করিস নাকি? পড়া পারিস না কেন?
আমি মাকে কি উত্তর দেব? তাই কিছু না বলে পেপারটা নিয়ে চলে এলাম। স্যারকে পেপারটা দিতে তিনি হাতে নিলেন। বললেন, অংকগুলো তাড়াতাড়ি শেষ কর।

যেগুলো নিজে পারলাম, করলাম। বাকিগুলো স্যারকে বলতে দেখিয়ে দিল। তবে ফ্রিতে নয়। প্রতিটি অংকের সাথেই কানমলা, থাপ্পড়ের মত কিছু আদর দিয়ে। প্রায় সন্ধ্যা পার করে স্যার গেলেন। খিদেয় আমার পেট চোঁ চোঁ করছে। মাকে গিয়ে খাবার দিতে বললাম। মা খুব বকাবকি করলেন পড়া না পারার জন্য। এরপর চা আর বিস্কুট দিলেন খাওয়ার জন্য। আমি চা-বিস্কুট খেয়ে আবার পড়তে বসে গেলাম। 

মদন স্যার কাল দিয়ে গিয়েছিলেন ৩২টা অংক, যার মধ্যে ৭টা জ্যামিতি। আর আজ দিয়ে গেছেন ৪০টা অংক, যার মধ্যে ১২টা জ্যামিতি। আমি অন্য কোন বিষয়ের দিকে না তাকিয়ে সেগুলো করতে লাগলাম।

আমার মনে আছে ছোটবেলায় আমার প্রচুর আত্মসম্মানবোধ ছিল। বাবার সাথে একদিন এক সেলুনে চুল কাটতে গিয়েছিলাম। এক বৃদ্ধ নাপিত হাত দিয়ে আমার কান ধরে চুল কেটেছিল। এরপর থেকে আর কোনদিন সেই বৃদ্ধের দোকানে চুল কাটিনি। সবসময় রিক্সায় করে চৌমুহনী গিয়ে সেলুনে চুল কাটিয়ে আসতাম। আর এখন বিনা দোষে কেউ আমার চুল টানে, কান ধরে, থাপ্পড় মারে- আমার বলার কিছু থাকে না।

রাতে পড়া শেষ করে ভাত খেলাম। খাওয়া শেষে ঘুমাতে গেলাম সেই তিন গোয়েন্দার ভলিউম ১১ হাতে নিয়ে। বই পড়তে পড়তে ঘুমানো আমার বহুদিনের পুরনো অভ্যাস। বাবাকে বললাম কালকে আমাকে ভাড়া ছাড়াও আরো ১০ টাকা বাড়তি দিতে। বাবা জানতে চাইলেন, কেন?
আমি বললাম, বই কিনব।

বাবা আমার বই কেনার বা পড়ার ব্যাপারে কখনোই তেমন আপত্তি করেন না। শুধু পড়ালেখা ঠিকমত করার ব্যপারেই জোর দেন। তাই ১০ টাকা বাড়তি দিতে আপত্তি করলেন না। আমিও আনন্দে ঘুমিয়ে পড়লাম।




   ছুটিতে কাছেপিঠে
             -নির্মাল্য পান্ডে, কলকাতা)


কি চুপ করে বসে আছেন? পূজোর ছুটিটা কি মাঠে মারা যাবে? চলুন না কোথাও ঘুরে আসি!
-এই বলে চেয়ার টেনে বসল আমিত।
-তা ঠিক!কোথায় যাই বলতো!
-চলুন না, কাছেই আছে বঙ্গেরগর্ব ‘সামতাবেড়ে’, যেখানে কথাশিল্পী শরৎসংগ্রহশালা রাজ্য সরকারের অনুপ্রেরণায়  গড়ে উঠেছে। তা’ছাড়া রূপ নারায়ণকে কেন্দ্র করে তীন/চারদিন অল্প খরচে সুন্দর ভ্রমণ করা যাবে।
-ঠিক আছে, প্ল্যান কর কোথায় কোথায় যাবে, কি ভাবে যাবে--। আমার বয়েস হোয়েছে, বেশি ধকল সইবে না।
যেই কথা সেই কাজ। আমরা বেড়িয়ে পড়লাম নবমীর সকালে।রূপণারায়নের বামদিকে ‘দেউলটি রেলস্টেশান’।দেউলটি আসতে গেলে হাওড়া থেকে মেচেদা/ পাঁশকুড়া/ বা যেকোন লোকাল ট্রেনে আসতে হবে, দুরত্ব প্রায় ৫০ কিমি, সময় প্রায় ২ ঘণ্টামত লাগে। এইখানে ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে অমর কথাশিল্পীর শেষ জীবনের বাসভবন-‘সামতাবেড়েতে’।  ষ্টেশন থেকে সামতাবেড়ের দুরত্ব ৩ কিমিমত। রিকাশায় যাওয়া যাবে- গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই- আমরা অবশ্য রিকাশাতেই এলাম।এখানেই বাঙ্গালার গর্ব সে’সময়ের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনের শেষ অঙ্কের পতন ঘটে ‘মহেশের করুণ চোখের জলের সঙ্গে’।এখানেই তিনি রচনা করেছিলেন বড়দিদি, অভাগীর স্বর্গ, পল্লী সমাজ, রামের সুমতি, মহেশ, শীকান্তর শেষ পর্ব, বিপ্রদাস রচানাটাই তাঁর শেষ রচনা- এখানে আছে তাঁর জীবনের শেষ অস্তরাগের সকল ছবি, তাঁর ব্যবহৃত সকল জিনিষ-মায় আরাম কেদারা, চশমা—ইত্যাদি। ১৯২৬-১৯৩৮ সাল অবধি কাটিয়েছিলেন। তিরবরগার, টাইলের মাটির বাড়ি- এখন সংস্কার করা হয়েছে। তাঁর জন্ম অবশ্য হুগলীর দেবানন্দপুরে, ১৫/৯/১৮৭৬ সালে। জীবন সংগ্রামে ঘাতপ্রতিঘাতে জর্জরিত, বর্মায় পেটের তাগিদে যাওয়া ও প্লেগে স্ত্রী বিয়োগ ইত্যাদি ও গ্রাম বাংলার কুসংস্কারই তাঁর সাহিত্য জীবনের গোড়াপত্তন। সেই অমর কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধাজানানৈ আসল উদ্দেশ্য। 
এই বাসভবনের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছিল সুন্দরী রূপনারায়ণ নদ(এখন অবশ্য পথ পরিবর্তন করে দূরে চলে গিয়েছে)-যার উৎপত্তি দ্বারকেশ্বর ও শিলাবতীর মিলিত ধারা। দ্বারকেশ্বর নদ পুরুলিয়ার ছোট নাগপুরের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হোয়ে বাঁকুড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত  এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘটালের কাছে শীলাবতি নদীর সঙ্গে মিলিত ধারার নামই রূপণারায়ন নদ। এই নদ দক্ষিণ পূর্বে কোলাঘাট ছাড়িয়ে গেঁওখালির কাছে হুগলী নদীর সঙ্গে মিশেছে।এই নদে জোয়ার ভাটা চলে, তাই ‘কোলাঘাট ইলিশ মাছের’ জন্য বিখ্যাত।তাছাড়া একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও আছে- আছে সুন্দর মনোরম সব রিসর্ট- সোনারবাংলা, নিরাল--। কথাশিল্পী এইরূপনারায়ণের রূপেই মুগ্ধ হয়ে শেষ জীবনে বানপ্রস্থ নিয়েছিলেন সামতাবেড়েতে। এবার একটু বাড়িটা দেখি-                             
                                                  এই নদনদীকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ পীপাসুদের জন্য আছে সামতাবেড়ে/দেঊল্টী, গাদিয়াড়া, মহীষাদল, তম্লুক, নুরপুর--। কিছুদূরে আছে  কাঁসাই নদীতে-গড়ে উঠেছে ‘মুকুটমনিপুর’--, আমরা একে একে দেখব,তাইই না!   
   
রূপনারায়ণের পথ ধরে চলে এলাম গাদিয়াড়া- এখানে নদনদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম। কলকাতার কোলাহল থেকে ক্ষণিকের তরে মুক্তিলাভের ইচ্ছে থাকলে একরাত থাকা যেতে পারে। সূর্যাস্তর দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় দীঘার কথা, মনে হয় যেন এসেছি ছোট্ট সাগরে- পাখী ওড়ে সাঁঝের আলো-আঁধারে, দিগন্তব্যাপি মিষ্টি জলরাশি নীচে, তারি মাঝে পাখনায় ঢেউ তুলে উড়ে যায় নিজ কুঞ্জে।সবুজের ঘেরাটপ, বনানীর হাতছানি,একটা মিঠে সুগন্ধ দেহকে করে সুরভিত।


                           
এতটাই যখন এলাম, রূপণারায়নের কুলে ইতিহাসখ্যাত তমলুকটা দেখে যাই না! শহরে ঢুকবার মুখেই স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরাঙ্গনা মহিলা মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি চোখে পড়ে। আমরা জানি, মেদিনীপুর ও তমলুক চিরকাল লড়াকু, স্বাধীনতার জন্য 
অকাতরে বলি দিয়েছে বীর যোদ্ধারা। তাই, পা রেখেই মনটা ভরে গেল। শুনেছি এখানে সতী মায়ের পায়ের গোড়ালি পড়েছিল তাই, এখানে একটি সতী পীঠ আছে, নাম দেবী বর্গভীম।দেবী মহামায়া মন্দিরের গর্ভগৃহে আসীন। তা’ছাড়া আছে ধ্বংস প্রাপ্ত প্রাচীন রাজবাড়ী।




                       
তমলুকের অনতিদূরে প্রায় ১৬ কমি গেলেই দেখা যাবে আর এক প্রাচীন রাজবাড়ী- মহিষাদল, যা আজও খানিকটা বৈভব নিয়ে মাথা তুলে আছে- এখনও ধূমধাম করে প্রাচীন দুর্গাপূজো হয়ে আসছে। এখানে আছে রাণীমায়ের প্রতিষ্ঠিত ১৭৭৮ সালের ‘গোপালজীর মন্দির’।এই মন্দিরটিতে নয়টি চুড়া আছে- একে বলে নবরত্ন মন্দির। রথের সময় জাঁকজমক সহকারে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হোয়ে থাকে।


                         

একদিন থেকেই রওনা হলাম গাড়িতে মুকুটমনিপুর-কংসাবতী নদীর জলাধারে গড়ে উঠেছে মনোরম পর্যটনকেন্দ্র।মানুষের তৈরী জলাধারটি ভ্রমণ মানচিত্রে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।ছোট ছোট টিলার মত পাহাড়ঘেরা বনানীর হতাছানি, স্ফিতজলরাশি- তাতে পাখীর কলতানি অনৈসর্গিক দৃশ্য, মনের দুয়োরে বারে বারে আঘাত করে-আবার কবে আসব দেখতে!।






এখন সময়
      - গণেশ দেবরায়

বাইরে হাত বাড়ালাম
নিস্তব্ধ গাঢ় অন্ধকার।

হাতটা হৃদয়ে রাখলাম
যন্ত্রণার কান্না শুধু।

হাতটা মাথায় রাখলাম
আগুন দাউ দাউ করছে।

জীবন এখন মরুভূমি
উষ্ণ উত্তপ্ত জল শূণ্য
চারদিকে শুধু মহাপ্রলয়ের বার্তা
ঘরে বাইরে এমনকি হৃদয়েও।



                     " প্রেম "
                হামিদুল ইসলাম।
                         

ভোরের হাওয়ায় মিঠে রোদের সুবাস
তোমার ছোঁয়ায়
আমার উন্মত্ততা ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকো তুমি
দোপাটি ফুল তোমার খোঁপায়  ।।

ফুলের হাসি তোমার ঠোঁটের কোণে কোণে
নিত‍্য যাওয়া আসা
ঝর্ণাধারায় আকাশ থেকে শিশির ঝরে
এই তো ভালোবাসা  ।।

ভালোবাসার জলে ভাসিয়ে দিই
ময়ূরপঙ্খী নাও
সৃষ্টি থেকে তোমার সাথে হৃদয় বাঁধা
আমরা এখন প্রেমনগরে উধাও  ।।

প্রেমনগরে তুমি আমি একাই করি বাস
বুকের মাঝে প্রেমকে তুলে রাখি
প্রেম আমাদের ভালোবাসায়, প্রেম আমাদের শ্বাসে
এসো শুই, এখনো সারা রাত্তির বাকি  ।।




মেঘ কেটে যায় একদিন
      অর্পণ উপাধ্যায়

এ বৃহৎ পৃথিবীর গল্প অনেক,
অবসাদে সব শেষ হয়না।
হোক না শতাব্দীর পুঞ্জিভূত মেঘ,
মেঘ কেটে হবে একদিন ঝরনা।।

আছে অনেক কষ্ট, আছে অনেক গ্লানি,
আমি সবটুকুই মানি,
তবুও বলব অবসাদে সব শেষ হয়না,
মেঘ কেটে হবে একদিন ঝরনা।।

দিবসেরও আছে ঝড়-ঝঞ্জা,সাইক্লোন- বর্ষনা।
তবুও কোনদিন প্রাতকালে গোধূলি হয়না।
অবসাদে সব শেষ হয়না,
মেঘ কেটে হবে একদিন ঝরনা।।

কুয়াশায় ঢাকা থাকে রাস্তা,
চলাচল বন্ধ, কিছু দেখা যায়না।
কুয়াশাও আশা দেয়, চিরকাল থাকে না,
অবসাদে সব শেষ হয়না ।।

আশা রাখো, কাজ করো, অবসাদ কাটবে,
তুমিও একদিন রাজার মত হাটবে।
সব কিছু অল্পেতে শেষ হয়ে যায়না,
মেঘ কেটে হবেই একদিন ঝরনা।।




                       নাম তার পদ্ম
                        সৌম্য ঘোষ

             ভোরের  পাখীর কলতানের  আগেই ঘুম ভাঙ্গে  পদ্ম র।  গতরাতের বাসী দুটি  রুটি দাতেঁ  কেটে  বাঁক কাঁধে  নিয়ে  বেড়িয়ে  পড়ে  হাসনাবাদের  ডাম্পারের  ইট খালাস করতে । দেড় বছরের  শিশু পুত্র কে পিঠে বেঁধে  পদ্ম  তার দলে সঙ্গে  বেরিয়ে পড়ে ।  ইট সাজাতে । তখন  ধলতিথে নলকোডা র আকাশে ডিমের  কুসুম মতো রঙ ছড়িয়ে  সূর্য্যর প্রভা দেখা দিয়েছে।  ধীরে ধীরে  বেলা  বাড়ে।  তাপ বাড়ে।  মাথার  উপর  গনগনে  আঁচ ।  কালো শরীর  বেয়ে  ঘাম অন্ত সলিলা  হয়ে নামছে। মধ্য দুপুরে বিরতি। বিরতির অবকাশে  ওরা দল বেঁধে  ঝুপরীতে ফেরে ।  বাসি ভাত, রুটি যদি  থাকে,  নতুবা সামান্য  কিছু  ফুটিয়ে  নেয় । শীতের দুপুর তাড়াতাড়ি  পালাই পালাই  করে। শীতার্ত  হলুদ  রোদ্দুরের সাথে সখ্যতা  করে কিছু টা সময়  জিরিয়ে  নেয় । তারপর  আবার  কাজ। ইট সাজানো ।  পাখীর ডানায়  ভর করে সন্ধ্যা  আসে। শীতের আমেজে  নিঝুম  নিশা নামে। চারিদিকে  জ্বলে  উঠে  রাস্তার আলো ।
                   ঘাম পচা ক্লান্ত  শরীর  নিয়ে   ওরা ঝুপরীতে  ফেরে ।  খুপরিতে  কাঠের  চুলা ধরায় । রাতের খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে ,  ওরা  দল বেঁধে  গান  গায় ,  কোমর দুলিয়ে  মৃদুমন্দ  নাচে। শিশু উত্তরাধিকারদের  সাক্ষী  রেখে  দেশী সুরে  গান গায় । বাঁশীর সুরে তালে পদ্ম দের কালো দেহ যৌবনের  তপ্ত  আঁচে  নাগিনী র মতো ফণা তোলে। দেশী মদের নেশা তাদের সারাদিনের  হাড় ভাঙ্গা খাটুনি  কথা ,  ফেলে  আসা দেশ গাঁয়ের  কথা  ভুলিয়ে  দেয়  এক লহমায় ।
                        শীতাতুর চাঁদ যখন মাঝ আকাশে  মেঘ ও তারাদের অন্তরঙ্গ  সখ্যতায়, তখন পরিশ্রান্ত  শরীর নিয়ে  ঘরের বিছানায়  এলিয়ে পড়ে ।  ঝুপরীতে ঘরে ঘরে পদ্ম রা।  নেশাতুর  কামার্ত  মরদের বুভুক্ষু  যৌন তাড়না  পদ্ম দের ক্লান্ত  কান্ত  শরীরে  আছড়ে পড়ে । আদিম বর্বরতার সেই একপেশে  ছবি ।  একসময়  মরদের  উদ্দামতা থেমে আসে । ঘুমিয়ে  পড়ে  পদ্ম দের বস্তি । স্নিগ্ধ  চাঁদ তখন পশ্চিম  আকাশে  মনোরম। শান্ত  চরাচর  জুড়ে  তখন প্রশান্ত  নীরবতা । ঘুম,  ঘুম,  ঘুমের দেশে ওরা।
                 পদ্ম র স্বপ্নাতুর চোখে  ভেসে  ওঠে  সেই মহুয়ার দেশের ছবি । পাহাড়ী  গায়ের  সেই  ঘর,  পাহাড়ী  বুনো ফুলের  মাতাল সুবাস । শাল পিয়ালের  বনভূমি  থেকে  বাতাসে  ভেসে  আসা  কোন রাখাল বালকের বাঁশের বাশুরীর  সুর।
                পদ্ম র স্বপ্ন - ঘুমের মধ্যে  যেন একান্ত  মিশে যায়  বসিরহাট - হাসনাবাদ  ও  রাঁচির  সেই  ফেলে আসা অজ  দেশ-গাঁ।।



        উড়ান
    শর্মিষ্ঠা সাহা

অপরান্হের আলোয় অন্তরযাপন,
উৎসর্গ করেছি ভোকাট্টা ঘুড়িকে ।
মন্মথ!!!!??
যত্তসব ফালতু আলেখ‍্য।

জানালার কাঁচ ভেজা,
আদ্রতা!!!??
মনে হয় প্রামিতিক ক্রমায়ন ।।

যদি বলো এ পথ সমান্তরাল,
ভালো থেকো নাবিক স্মৃতিরা সহমত,
দেরাজে রেখেছি আমার,
শিকড়ের টুকরো,

এ সমুদ্র অতল
শুধু অতল।।

       

                      গুলানো সময়
                     আব্দুর রহমান

এ এক অদ্ভুত গুলানো সময় ঘিরে আছে জীবন বৃত্তে
মানুষ মানুষীর অন্তরের  বাসভূমে গোলকধাঁধায়
রোপণে বপনে জন্ম দেয় নিজ হাতে গড়া শমণ
কী ঘোরে কাটায় বিভ্রমে  মরীচিকার স্বর্গলোকে

দেখেছি ঘুরপাক খায় নাগরদোলার মতো নীচে উপরে
আশে পাশে পেটা লোহা পোড়ানোর মতো অস্থির সময়
কৃষ্ণের ব্যবস্থা মহাভারত  বিপন্ন গান্ধার কন্যার বেদনার মতো
মায়ের আঁচলে ঢাকা দম বন্ধ শীতলতা ছুঁয়ে যায় সময়

নাগরিক প্রকাশনা  থাকে বাঁধা সুদে  হারায় আসল
গরিবি বসতে রয়ে যায় দুয়ো রাণি ব্যর্থ দিতে সেলামি
রাজ রাজনীতি নষ্ট জীবন যাপন অতন্দ্র প্রহরী সেবা
ভুলে যায় আলো সুখ দিনের রিমান্ডে পতন উন্মুখ

ভয় হয় ভয় করে আগুন ধরিয়ে আগুন নেভানো যন্ত্র
অগ্নিজল পেতে যায় তারা  মায়া চোখে অগ্নিদহে
এ অদ্ভুত গুলানো সময় কবি গানের ধাঁধার  লড়াই
সব পাওয়ার ইচ্ছা পূরণের রেকর্ড ভোরের ঘুমের ছায়ায়
হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে পারি,  বলতে পরিনা কখনো
গুলানো সময় ঘিরে আছে জীবন বৃত্তে নষ্ট অগ্নিজল ।




আরোগ্য
বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

হালখাতা হ'ল-না পহেলা বোশেখে,
পৃথিবী ভুগছে জটিল কঠিন অসুখে।
প্রকৃতির আকাশেবাতাসে মারণ জীবানুর উপস্থিতি,
মানবজাতী অসিত্ব রক্ষায় আজ ভীষন আকুতি।
সেদিনও ছিল হাসিখুশি আজিকের বিশ্ব সংসারে,
ডুবে যাচ্ছে জীবন নিঃশব্দ নিরবতার ঘোর অন্ধকারে।
স্বত্তর চাই মৃতসজ্ঞীবনী বুটি,
ল্যাবে চলছে পরীক্ষা খুঁটিনাটি।
হাতে আসতে লাগবে বিস্তর সময়,
তার আগে ঘটবে বড় বিপর্যয়।
কালও ছিলনা মনে উদ্বেগের সংশয়,
ভ্রীতসন্ত্রস্ত মন উৎকন্ঠাকে দিচ্ছে প্রশয়।
রাজা হয়ে জীবন রক্ষার্থে প্রজার দ্বারে মাগিছে ভিক্ষা,
জীবনে চেয়ে বড় কিছু নেই পেলাম আবার শিক্ষা।
সভ্যতার মুখে আওয়াজ মিথ্যা আস্ফালন,
জীবাণুর সাথে জীবনের বেধেছে নতুনরণ।
আজ মানবজাতী অসহায় বড় ম্রিয়মান,
আনবে কবে বিশল্যকরনী মহাবলী হনুমান?



              ক্ষত
            ------সৌমেন সরকার

মুখের ওই মিষ্টি হাসি দেখে অনেক সময় ভাবি
কেউ খুব ভালো আছে,
ঠিক যেন লুকানো কোন গুপ্তধনের চাবি
সযত্নে রাখা আছে তার কাছে

হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশে প্রতিনিয়ত
কুরে কুরে খাওয়া ঘুণপোকা সব,
সৃষ্টি করে চলে যত ক্রনিক ক্ষত
আর বাক্যহীন করে ফেলে হৃদয়ের কলরব

মুখে লেগে থাকা মিষ্টি হাসিটা
মূল্যহীন তার নিজের কাছে,
তুমি ভাবলেই তার ভালো থাকা আসে না
তাকে একবার জিজ্ঞেস কর;সে কি সত্যিই ভালো আছে?


সম্পদ যশ প্রতিপত্তি সবই হবে অর্থহীন
কালের মন্দিরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা মোহ যত
সারাক্ষণ অভিনয় করে চলা লোকটি একসময় হয়ে পড়ে একাকী,নিতান্তই দীন
আর ক্রমশ কুরে কুরে খায় তাকে সেই সব ক্রনিক ক্ষত!

সারাদিন অভিনয় করে ঘরে ফিরি
আর রাতে দ্বন্দ্ব বাঁধলে নিজের কাছেই হেরে বসে থাকি,
আয়নাতে নিজের বন্ধু ছায়াও তখন মারে টিটকারি
আর ক্রনিক ক্ষতের দুর্গন্ধময় রক্ত গায়ে মাখি!

খুঁজে নাও এমন মনের মানুষ যাকে দিনের শেষে
সব কথা মনের দেওয়া যায় উজাড় করে,
নিজেকে খুঁজে পাই দিনান্তে এক সাধারণ ফকিরের বেশে,
আর সারাদিনের অভিনেতা-অভিনেত্রী আধার ঘনালেই যায় মরে!

তার শক্ত কাধে মাথা রাখো,বকবকানি যত দাও উজাড় করে
মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এলোমেলো গোপন গহ্বর যত,
দেখবে ডিপ্রেশনের কালো মেঘ কেটে যাবেই এক নতুন ভোরে;
আর সেরে উঠবে দুর্গন্ধময় রক্তাক্ত ক্রনিক ক্ষত যত!




                          ধারাবাহিক গল্প

                        কলেজের নৃত্যকলা
             - অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)
পর্ব ২:

  মানসী আমাদের কোরিওগ্রাফারের পদ থেকে ইস্তফা দিল। আমরা অথৈ জলে পড়লাম ।
 এর পর ময়ূরী বলে একজন একটু জুনিয়র মেয়ে আমাদের নৃত্য পরিচালকের ভার নিলো । আমরা তৈরী হচ্ছিলাম ভালোই, কিন্তু কিছুদিন পর সে-ও কোনো কারণে আর কোরিওগ্রাফ করতে চাইলো না ।
  আমরা কী করি ? নাচটাই না বানচাল হয়ে যায়!
 শেষমেশ কৌশিকদাকে ধরা হলো । দাদা কস্মিনকালেও নাচে নি। বিরাট চেহারা; গেঞ্জি ও ছোট হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলতো। গোলকিপার ছাড়া আর কিছু হতে পারতো না। তাই সে নিজেও একটু অবাক হলো।
 তবে কৌশিকদা কড়া ধাতের; অন্যরকম তার ডিসিপ্লিন! সে এসে আমাদের হাল ধরলো। আমরাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ! স্টেপগুলো মোটামুটি জানাই ছিল, তাই মহড়া চলতে থাকল।
  এভাবেই শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আমরা পারফর্ম করলাম । তার আগে বাইরের কলেজ থেকে যারা  এসেছিল তারা সবাই আমাদের খোঁজ করছিল । এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলাম।
   রণজয়, অমিত, অদৃজা, সবাই দারুণ নাচলো। তাও নয়টি দলের মধ্যে আমরা চতুর্থ হলাম। সবই কৌশিকদার কৃতিত্ব ! দীপিকার মুখেও হাসি দেখলাম ।..
  বলা বাহুল্য এর আগে বা পরে বড়বেলায় কখনোই স্টেজে নাচিনি । আজও  সেই পুরনো কথাগুলো মনে পড়লে হাসি পায় ।।




নেপোদাদুর নেশা
রাজকুমার ঘোষ

দুধের বদলে নেপোদাদুর
ঘুটে বেচাই পেশা,
কৃপণ বলেই বুদ্ধি করে..
খৈনিতে তার নেশা।

ছোট থেকেই দাদু তেমন
পায়নি কোনো দুঃখ...
নস্যি নিয়ে থাকতো ঘুমে
পরিণামেতে মূর্খ।

মাঝে মধ্যে দারুর প্রতি
দাদুর ভারি লোভ
বন্ধু পানু আছে যখন
থাকেনা আর ক্ষোভ

পৈত্রিক সূত্রে নেপোদাদু
ধনি ঘরের দুলাল
ফূর্তি করে বন্ধুর ঝেড়ে
নিজের ধরে হাল।

হরেক রকম রস-গল্প
দাদুর স্টকে থাকে,
দামি নেশা বন্ধুরা দেয়
খৈনি নিজের ট্যাঁকে।



     গুহার গল্প
         –তন্ময় চক্রবর্তী
       
কেউ জেগে নেই জোনাকি একা
খুঁজছে নিবিড় অন্ধকার–
যেমন করে বন‍্য-মানুষ
গুহার গুমোট থেকে বেরিয়ে এসে
আগুন জ্বালায় পাথর ঘষে।
আমার সেদিন লড়াই ছিল
পেটের খিদে মাথার ছাদ !
ইতিহাসে কতবার আমার
জন্ম আবার মৃত্যু হলো –
আমি খাদ্য আমিই খাদক,
মরে যাওয়া আমার মাংস
আমার মুখেই ভিন্ন স্বাদ!
গল্পগুলো পাল্টে যাচ্ছে আমার হাতেই ....
আমরা পথিক আমরাই পথ!
                   



        অন্ধ
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

যদিও নিজেকে বলি মিথ্যে হল সব
তবু কোথাও স্তব্ধ শ্বাসে
রয়েছে ক্ষীণ আশা
এ মহা ক্রান্তিকালে
পরম এবং পূর্ণ বলে যাকে জেনেছি
এতদিন সেও কি মুমূর্ষের
বুকে রেখেছিল মাথা
আজ এ সন্ধিক্ষণে
এত শত প্রশ্ন কেন আসে মনে  ?
পাহাড় চূড়া থেকে সাগর কিনারে
ছোট ছোট সফলতা বিফলতা
সব ই তো বিনাশের জন্যে
প্রস্তুত হয়ে আছে
আদিকাল থেকে
তুমি যতটুকু জানো সেটুকুই যদি সব হোত
তবে কেন তবে কেন উত্থানের জন্য
এখনো এতটা লালসা.....



                 নদী কথায় ভেসে যায় ......
                      তীর্থঙ্কর সুমিত 
                            (৯)

অক্ষরগুলো মনে হয় এইভাবেই হারিয়ে যায় মানুষের জীবন থেকে।সাদা কালো সব ই রং মাত্র।আর হারিয়ে না যাওয়ার কারণ নেই কোনো।শুধু হাততালি আর পুরস্কার কখনই সঠিক পথের সন্ধান দেয়না।ফেলে আসা স্মৃতি আর অভ্যাস একে অপরের পরিপূরক।তাইতো গানের সাথে গান,পথের সাথে পথ লুকিয়ে থাকে প্রতিটা অক্ষর বিন্যাসে।আর এখানেই সৃষ্টি হয় এক একটা নদীকথা।যেখানে সব স্রোতের পথ চলা শুরু ...



অসাড়
বলাই মন্ডল

মুকুল কীটপ্রহরী
রশ্মি শুন্য ডগা,
শ্রম ক্লান্তি ভরে
অসাড় সুর বাধঁন,
দানব স্ফুটন
চঞ্চল হাসি,
হীত যশ
মন মরা পীড়ে!!


1 comment:

  1. কবি আব্দুর রহমান এর কবিতা মন ছুঁয়ে গেলো।
    ধন্যবাদ প্রভাতী পত্রিকা কে।

    ReplyDelete