গুচ্ছ অনুকবিতা
রঞ্জন চৌধুরী
ঘুম
এক ভয়ংকর হেঁয়ালি
ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজেকে ভুলে যাওয়া।
চোখ
দেখে নেত্রবান হয়ে
পাপ ও পূণ্যের চরাচরব্যপী
এক পিয়ানো বসানো আছে
আর তাতে কেউ আঙ্গুল নাচাচ্ছে।
হাসি
থম মারা মেঘের পরে বৃষ্টির ইশারা।
কান্না
সুরসুরির মত
কখন আসবে
প্রেম বিরহ দু:খ আনন্দ কেউ জানে না।
তামাশা
শয়তানের আত্মা ঢুকে পরেছে
বুঝেও যে হাত্তালি দেয়।
খেয়াল
রোদ না বুঝে নিজের ছায়াটিকে লম্বা হতে দেয়া।
কথা
পরস্পর ছোঁয়াছুঁয়ির এক মোচ্ছব।
ধাপ্পা
ফষ্টিনষ্টির শেষে পালিয়ে যাওয়া।
রহস্য
সারাদিন গাছের নীচে বসেও যে পাখি দেখে না।
চুপ
পড়ছি দেখছি শুনছি
অথচ কিছু বলছি না।
শর্মিষ্ঠা সাহার অণুকবিতা
সমাধি
যে পদচিহ্নগুলো চোরাবালিতে শেষ হয়
তদন্ত করো না,
ওটা নিশ্চিত আত্মহত্যা..অন্য কিছু নয় ।
গিরগিটি
দিস্পদ ছেড়ে আমরা হয়েছি সবাই চতুষ্পদ,
তাসের ঘরের এই রংমিলান্তি খেলার আসবাব ।
দুই লাইনার কবিতা
অশোক কুমার আচার্য্য
১) প্রেমের রং কেমন কেউ জানে না,
প্রেম দেখতে কেমন কেউ বলে না।
২) বসন্ত ঋতু রাজ শরত্ ঋতুর রাণী,
হেমন্ত কেন বাদ আমি জানতে পারিনি।
৩) ভিক্ষা দিয়ে আমাদের ভিখারি কোরনা,
আমাদের শক্ত কর্মঠ হাতে কাজ দাও।
৪) মা তুমি কাকে বেশি ভালোবাস?
সত্যি বললে- তোমাদের বাবাকে।
৫) নারী যদি সুন্দরী হয়,
পুরুষ হলো সুন্দরতম।
বাসর সিরিজ-২
রাত
মহীতোষ গায়েন
নি:শব্দে মোহময় রাত চুরি করেছো...
ভালোবাসার ঘর আজ নিসঙ্গ ফাঁকা;
অপেক্ষায় আছে দেখ হৃদয় বাসর-
চিএপটে তাই জলের স্বপ্ন আঁকা।
জিঘাংসা
সৌমেন সরকার
যখন বুবাই-এর বুকের উপর থেকে লাল সিক্ত ভোঁজালীটা আমার ডান হাত দিয়ে সজোরে তুলে নিলাম,তখন সে অলরেডি ডেড।আর কি!ঘন্টা তিনেক পর রিগারমর্টিস্-এ আক্রান্ত হবে বুবাই।আড়ষ্ট হয়ে যাবে ওর তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের ভরা যৌবণময় ডাগর শরীর।
আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।ওর বাপ কেলো মস্তান আমার বাপকে এই ভাবে একদিন...... বাপকা ব্যাটা আমি।দুজন আলাদা পার্টি করত।আর সেই রেসারেসির জেরেই....যাগ্গে!এখন পথের কাঁটা ফিনিস।ওর বৌকে বিধবা আর ব্যাটাকে বাপহারা করে যেন পিতৃদায় থেকে মুক্তি পেলাম।এখন আমি আমার বৌ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে থাকব।
বছর পনের পরের কথা.....
বুবাই-এর ছেলে রাজা আমার ছেলে-মেয়েকে ঠিক একইভাবে ভোঁজালী দিয়ে কুপিয়ে মেরেছে!আমি ভেবে ভেবে সারা হলাম যে,আমার ছেলে-মেয়ের সাথে রাজার শত্রুতা কোথায়?
বিয়ের কার্ড
মিনতি গোস্বামী
আজ এত দেরী হল বাবা, রাস্তায় জ্যাম ছিল?
"ধুর, রাস্তায় জ্যাম নেই।বাস কম চলছে বলে বাসে ভিড় হচ্ছিল।দুটো বাস ছেড়ে দিয়ে বাস ধরলাম, তাই দেরী হল রে মা।"
"বাবা, আজকে ও কি তুমি বিয়ের কার্ডটা আনতে ভুলে গেছো?
তুমি তো জানো বাবা,কার্ড ছাপানো না হলে বিয়ের জন্য 'রূপশ্রী'র পঁচিশ হাজার টাকার জন্য আবেদন করতে পারছিনা।বিয়ের আগে টাকাটা তো পেতে হবে।"
"সোমা,তুই বলছিস বটে, কিন্তু জানিস,আজ দেশে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লক্ষ ছাড়িয়েছে।
রাস্তায় তো শুনে এলাম,পরশু থেকেই কলকাতা শহরে কড়াকড়ি লকডাউন আবার শুরু হচ্ছে।
আজ নাকি কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি।মারাও গেছে কুড়ির উপর।এই অবস্থায় কি বিয়ের অনুষ্ঠান হবে?
তাছাড়া আমার কাপড়ের দোকানের কাজটা ও
বোধহয় আর থাকবে না।মালিক বলেছে, নতুন করে লকডাউন হলে আর মাইনে দেবেনা।
আর একটা খবর জানিস, সোনার ভরি পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়ে গেছে।আমি তো তোকে কিছুই দিতে পারবোনা।"
"শোনো বাবা, দিন যখন ধরে ফেলেছি,রূপশ্রী র
টাকাটা নিয়ে বিয়ে করবোই। জীবন তো থেমে থাকবেনা।অলক আর একটু ও অপেক্ষা করতে রাজী নয়।তাছাড়া আত্মীয় স্বজন, বরযাত্রী কেউ
আসবেনা, এটাই তো বিয়ের সুযোগ।
কাল অবশ্য ই কার্ডটা প্রেস থেকে আনবে।
লকডাউন বাড়লেও বিয়েটা হবেই।"
জহরলাল দাসের অনুকবিতা---
পাত্রী চাই
মেয়েপাগল ছেলের জন্য
পাত্রী খুঁজেন বাপ,
প্রেমের বেলায় জাত লাগে না
বিয়ের বেলায় জাত!
সাধুমানুষ
ভালো মানুষ, সাধুমানুষ
নিরামিষ খান উনি
হয়না তাহার পূন্যক্রিয়া
না থাকলে সাধনসঙ্গিনী!
মনের মাঝে
অশোক কুমার রায়
ভাবছি নাতো বন্দি , ঘরে একা ;
মনের মাঝেই হচ্ছে সবার দেখা !
অনুকাব্য----
জুয়েল রুহানী।
নিশীথেরও অন্ধকারে
পথিক তুমি কোথা যাও একা?
সঙ্গী কর হে মোরে
এমনও অন্ধকারে,
যদিও না পাও আলোর দেখা।
No comments:
Post a Comment