জলের শিয়রে
শঙ্খশুভ্র পাত্র
মণ্ডলাকার এই গৃহে এসে যে সুবিধা হল বিলক্ষণ বুঝি ৷ নির্বাচিত গুচ্ছ নিয়ে বসে আছি ৷ প্রস্ফুটিত
মুখের দিকে তাকিয়ে আছে পাঠক ৷
একটা ধরাশায়ী রঙের আলোর দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে মন ৷ শ্বেতাভ কন্যার কাছে রূপার্থ বেদনা লুকিয়ে রেখে কী প্রাণান্ত মণীন্দ্রসাধন !
কালীকৃষ্ণ-আলোকে পূর্ণ নিশীথিনী...
শেষাবধি মহারানা, জলের শিয়রে দেখি : খণ্ড চাঁদ,
বিজনরঙের ঢেউয়ে দোল খায় আদিগন্ত কবিতাশরীর...
তিল
অমিত পন্ডিত
যে তিল টা ওখানে মিনিমাইজ করে রাখা আছে, তার কেয়ার অফ কে বলে দিও চিঠি লিখব তাকে--
ধুতরা সকাল নয়,
কয়েক লাইন চাঁদ লিখে দেব তাকে
বাদামী রাত বিকে দেব তাকে
যে টুকু পুড়লে তিলে তাপ যাবে
যে টুকু আলোতে ঠোঁটে ঠোঁট মাপা যাবে--
.... সেটুকুই লিখব তাকে..
প্রিয় বান্ধবী
হামিদুল ইসলাম
মৃত্তিকার উপর উদাসী মরীচিকা ফিরে আসে
বারবার জ্বালায় পোড়ায়
খেয়ে নেয় মাটির শাঁস
দু্র্ভাবনার বিষাক্ত ছোবলে স্বপ্নগুলো ভেঙে চৌচির
হেমন্তের শিশির ছুঁয়ে যায় অরণ্যের বসতবাটি ।
তোমাকে দেখেছিলাম অশোকনগর
ইতিহাসের পাতা গিলছে সময়ের স্রোত
ভয়ংকর ময়াল ছুটছে পিছু পিছু
অসম্ভব বিষের আকর বসায়
বিষ্ফারিত পৃথিবীর সমস্ত অসহায় রোমকূপ ।
বগল দাবায় ঘর্মাক্ত সূর্য
পুড়ে পুড়ে খাক হয়ে যায় নিষ্ঠুর মরীচিকার অবয়ব
মৃত্তিকার উপর শায়িত শস্য শ্যামলা পৃথিবী
হাজার অভিমানে জেগে থাকে
বিনিদ্র সারারাত ।
তবু তোমার কাছে ফিরে আসি অশোকনগর
কফিনের শেকড়ে শায়িত আমার প্রিয় বান্ধবীর লাশ ।
গত ন বছরে
তানবির
অনেক দূরে আবার অনেক কাছে । মেঘ করেছে,
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিতে রাশি পঞ্জিকা খুলে দেখো তুমি,
গতো ন বছরে
বৃষ্টি নিয়ে গেছে কষ্ট , নিয়ে গেছে মুঠোফোন
নিয়ে গেছে যোগ্যতা,নিয়ে গেছে পুরোনো বায়না
একদিন না রোজ এবং একসাথে
মিন মিন করে ।
ওসব তোয়াক্কা না করে কেমনে জাল হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, দেখো না দেখো কলম্বাসের জাহাজে !
পরের দিন তার পরেরদিন । এভাবে দাঁড়াতে দাঁড়াতে একদিন যদি দাঁড়াতে সুযোগ না দাও । তবে বৃষ্টি দিও না ,
কারণ,
গতো ন বছরে
বৃষ্টি নিয়ে গেছে কষ্ট , নিয়ে গেছে মুঠোফোন
নিয়ে গেছে যোগ্যতা,নিয়ে গেছে পুরোনো বায়না l
মিন মিন করে ।
পরিত্যক্ত জীবন
- চিরশ্রী কুণ্ডু (অবন্তিকা)
জীবনের পাতা থেকে মুছে গেছে
মূল্যবোধের হিসেব,
চারিদিকে শুধু ধু ধু মরুভূমি
মনের চিলেকোঠায়,
পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে মনে
আবেগের সমাবেশ,
প্রাধান্য হারিয়েছে আজ ভালোবাসা
বাস্তব মূল্যবোধের কাছে,
বিশ্বাসের ঘরে করেছে আঘাত
জীবনে নেইতো কোনো বাঁচার ফাঁদ,
সুনামি হয়ে ভেসে গেছে জীবন এর অধ্যায়
বুকের পাঁজর জুড়ে দাবানলের উচ্ছাস...।
দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় সময়
হারিয়ে যায় কথার ভিরে প্রতিশ্রুতির গল্প....,
হাজার হৃদয়ের মাঝে কতো পরিত্যক্ত জীবনের ছন্দ
গেছে হারিয়ে কালের বিবর্তনে...............।।
মন্দির সম পিতৃভূমি
বিমান প্রামানিক
জন্ম থেকেই করছি যে বাস
ছোট্ট এই কুটীর
চিন্তায় কাটে বারোটি মাস
জ্যোষ্ঠে দুশ্চিন্তার ভীর।
আকাশ জুড়ে যতই তুফান
আসেই ফিরে ফিরে
সবার চেয়ে আমি মহান
আছি এই নীড়ে।
কিন্তু যখন ঝড় বাদলে
দুলিয়ে দেয় খুঁটি
জড়িয়ে স্মৃতি পিতৃকুলে
শুধু এই ভিটেটি।
যেমন করেই বাপ দাদুরা
রাখে আগল করে
এখন তবে আমি ছাড়া
কেউ নেই, রাখবো ধরে।
বাদল দিনে বৃষ্টি ঝরে
চালের ফুটো দিয়ে
রেখেছি তবু যতন করে
আছে স্মৃতি জড়িয়ে।
ছেলের কান্না মায়ের কানে
যেমন করেই ভাসে
দোচালা এই কুটীর পানে
আনন্দে বুক হাসে।
গর্বে আমি উচ্চ শিরে
বলি বার বার
তবুও আছি নিজ নীড়ে
এইটুকুও নেই সবার।
হে বিধাতা রেখো আমায়
নিজের চরণ তলে
আসুক যতই দুঃসময়
এই ধরাতলে।
আমার নিকট এই ঘরখানি
যেন মন্দির সমান
প্রকৃতি যতই হোক বিমুখী
ভিটেতেই হোক মরণ।
খেয়াল খুশি
সুদীপ্তা মণ্ডল
দু-মাস আরও বন্ধ হলো বিদ্যালয় ,
পড়াশোনা তাই বাড়িতেই করো সবাই ।
একটি শিশু মন দিয়েছে ড্রইং খাতায় ,
দিদি এসে হঠাৎ করে মারলো চাটি মাথায় ।
বললো তারে এটা আবার করছিস কি ভাই ?
প্রজাপতি আঁকতে হবে , শুয়োপোকা নয় ।
লকডাউনের পরে যখন দিবি খাতা জমা ,
স্কুলেতে স্যার কী তোকে করবে তখন ক্ষমা ?
দিদিরে তুই বড্ড বোকা ,
শুয়োপোকা কি আর থাকবে আঁকা ?
বড়ো আমি হয়েছিরে , নইকো আর খোকা ,
যা খুশি তায় করতে পারি , যাবেনা আমায় রোখা ।
এখনও তো ঠিক হয়না স্কুল খুলবে কবে ,
ততদিনে শুয়োপোকা প্রজাপতি হবে ।
হ্যারিকেন
সোমনাথ বেনিয়া
হ্যারিকেন অন্ধকার কেটে ভয়ের মুখে ফুল
উষ্ণ গন্ধ সলতে জড়িয়ে চোখের উজ্জ্বল ভাষা
ছায়ার ভিতর বৃত্ত, সে কী শূন্য নিরপেক্ষ
দেওয়ালে আবছা সংসার প্রবাহমান সিঁড়িভাঙা
অতীত জং ধরা বঁড়শি, নতুনকে তুলতে হয়রান
যার কাছে প্রেম আছে, তার কাছে চাও ঘৃণা
হ্যারিকেন নিভে গেলে দোষের ভাগী, প্রিয় বিছানা
জীবনতুফান
সোমনাথ মুখার্জী
অমাবস্যার মত রাতের আকাশ রং
বাতাস বইছে বাদুড়ের ডানার মত,
রূপকল্প গড়ে ওঠে শিল্পীর চেতনায়
মাটি মেখে নেয় চেতনা-শিল্প।
ঝড়-বৃষ্টি-তুফান-উমপুন-
জীবনে ক্ষয় মেশায়,
মৃত্যু সূর্যালোকের সোনা খোঁজে
পাতাবাহার এবং বৃক্ষ বাকল
সময়ের আশ্রয়।
রূপকল্প উপমা তৈরী হয়, ভেঙে যায় নতুন উষায়।
তোকে বড্ড ভালোবাসি
বটু কৃষ্ণ হালদার
ইস, তোকে যদি একবার ছুঁয়ে দেখতে পারতাম
তোর ওই লাল ঠোঁটে যদি স্বপ্ন এঁকে দিতাম,
না এমন আশা কোনোদিন করিনি,
কারণ আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি পাগলী,
তোকে সারা জীবন বুকের মাঝে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম,
তোর চোখের তারায় স্বপ্ন দেখেছিলাম,
কিন্তু কখন যে তারা খসা হয়ে ঝরে পরলাম বুঝতে পারিনি,
গহীন আঁধারের বুকে চাতক পাখির মতো জেগে থাকে পিপাসার্ত মন।
সুরার পেয়ালা এখন সঙ্গ দেয় আমার।
আত্মার সঙ্গে মিশে যেতে চায়। যখন খুব বেসামাল হয়ে পড়ি,
তখন ছুটে যাই জলঙ্গীর তীরে,
সোহাগীর জল তরঙ্গের কাছে জানতে চাই, কেমন আছে বন্ধু আমার?
জীবনের গল্প
টুম্পা মুখার্জী
অট্টহাস্যে নির্যাতিত মন
পথ খুঁজে ফেরে,
প্রিয়জনের দরজাগুলো শিকল
আঁটা খুব করে।
প্রয়োজন তাই ফেরিওয়ালা হয়ে
জানালায় কড়া নাড়ে,
চাহিদার তাগিদরা কালো
নিশ্বাস ফেলে ঘাড়ে ।
শুকনো পাতা আওয়াজ
তোলে মর্মর,
যেন শূন্যতার আশাবরি রাগ
পূর্ণ করে অন্তর।
নীলাকাশে প্রখর সূর্য
কটাক্ষ হানে,
উষ্ণতা ছড়ায়, নাকি দগ্ধ
করে অগ্নিবাণে?
দিনের মধ্যক্ষণ
আর ছায়া ফেলা সায়াহ্ন,
এক ঝলক ঊষর বাতাস,
আর বন্ধ্যা নদীর চড়ায়
পড়ে থাকা মৃত বালিহাঁস
যেন জীবনের গল্প বোনে ।
উপাখ্যান
মহীতোষ গায়েন
অস্থির এই সময়ে শুধু সংগ্রাম
আর প্রতিরোধের স্বপ্ন দেখি...
আগুনকে ভয় পাইনা আর,
অগ্নিমন্ত্র উচ্চারিত হয় সমূহ সমাজে।
রাতের অন্ধকারে আকাশের তারা গুনি,
হিসেব মেলাতে পারি না,
শরীরের অলিতে গলিতে
ঢুকে পড়ে প্রতিরোধের বীজ।
রহস্যময় অন্ধকারে শুনতে পাই
অচেনা সুর,মেঘমল্লার রাগ...
ভুবনডাঙ্গার মাঠে রচিত হয়
বসুন্ধরার এক গোপন উপাখ্যান।
একদিন বিপর্যয় কেটে যাবে,
শিরায় উপশিরায় প্রতীক্ষার উত্তেজনা...
শঙ্কাহীন নব উপাখ্যানে সাঙ্গীভূত
হয় নবজীবনের উদ্বোধনী সঙ্গীত।
ধর্ষণ
শেখ মনিরুল ইসলাম
র্নিজুম রাত
আশ্বিনের সাত
সুযোগ খুঁজে
গন ধর্ষন
একা নয়
সঙ্গে যত জন
বস্ত্রহীন দীর্ঘক্ষন,
কাঁটার ওপর
জ্বালাতন।
বৃষ্টি বেরার কবিতা
১)
আমার মানব জীবন , আমার সৌন্দর্য , আমার যোগ্যতা
তা তো অন্যকে প্রমাণ করার জন্য নয় বা অন্যের মনোরঞ্জন করার জন্য নয়
২)
পিছুটান তারই থাকে যে
ভালোবেসেছিল ..
নিষ্ঠুর ঈগল তো শুধু এক আকাশ থেকে
অন্য আকাশে শিকার ধরতে পারে
ভালোবাসতে তো পারে না তাই সে মুক্ত।
বোধোদয়
জহরলাল দাস
দীর্ঘদিন পর লকডাউন কিছুটা শিথিল হতেই গলির মোড়ের দোকানটায় মানুষের লম্বা লাইন।
কিছু পাওয়ার আশায় মানুষের দেখাদেখি লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন পর হারুকাকা জানতে পারল বিদেশী রঙ্গিন পানীয় বিক্রির দোকানে ক্রেতার লাইন!
নদী কথায় ভেসে যায় .....
তীর্থঙ্কর সুমিত
১)
কত জমানো কথা ভেসে যায় নদী বুকে।কেউ খবর রাখেনা।কোনো গল্পের শেষ হয়না। শেষ হয় কথার।ওখানেই শুরু হয় নতুন গল্পের।নতুন থেকে চিরনতুন হতে হতে আটকে যায় চোখ।সেই চোখ থেকে সৃষ্টি হয় এক একটা গঙ্গা,এক একটা পদ্মা।ভালো থাকার লড়াইয়ে জলের স্রোতে ভেসে যায় অব্যাক্ত কত কথার যন্ত্রণা।হয়তো এভাবেই সৃষ্টি হয় কয়েকটা কথা, কয়েকটা চিহ্ন আর এক একটা মরুভূমি...
মা
আব্দুল রাহাজ
মা কথাটি শুনলে কোথাও যেন মায়া মমতা বেদনা খুঁজে পায়। যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। প্রকৃতির সাথে মা কোথাও যেন সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রকৃতির সবুজায়নের কোলে ছোট্ট শিশু তার মায়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। একটি মা বোঝে তার সন্তানের আনন্দ কষ্ট দুঃখ এভাবে মা তার সন্তানকে আগলে রাখে। যখন প্রকৃতির মায়ের কোলে মনোরম পরিবেশে ছোট্ট শিশু জন্মায় তখন যে মায়ের কষ্ট পৃথিবীতে আর অন্য কোন কারো সাথে তুলনা করা যায় না। একটি মা তার সন্তানকে নিজের প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে।যদি কোন ছেলে বাইরে থাকে তাহলে ভেবে দেখেন তো তার মায়ের অবস্থা কি রকম হয় শুধু মায়ের মনটা চাই ওই বোধহয় প্রকাশ্যে এইভাবে পথ চেয়ে থাকে। ভাবুন তো কোন বাবা মায়ের কোলে ছেলে বা মেয়ে মারা যায় তখন তাদের যে কষ্ট হয় তা কথায় প্রকাশ করা যায় না। ভাবুনতো যাদের বাবা মা নেই তাদের অবস্থা কি হয়। পৃথিবীতে মা হারা কষ্ট সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। এই পৃথিবীতে তার জনম দুঃখিনী আমাকে একটি বারও মা বলে সুযোগ আর পাবে না তাই মায়ের মত মূল্যবান জিনিস এই পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। মা তার ছেলেমেয়েকে আগলে ধরে বাঁচতে চায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন পর্যায়ে এসে পড়েছে যেটার গর্ভধারিনীমাকে আঘাত করছে গায়ে হাত তুলছে যা মানবজাতির কাছে খুবই লজ্জাজনক। যে মা কষ্ট করে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তাকে আঘাত দেওয়া মানে এর মত হতাশ লজ্জা আর কিছুই নেই। একটা ছোট্ট মেয়েটি তার মাঝে ছোট্ট দ্বীপটির নামটি তার ফ্যেদম চারিদিক থেকে সবুজ গাছপালায় ঢাকা দূর থেকে দেখলে মনে হয় নদীর জলের সাদা আস্তরণ এর উপর এক রূপকথার দেশ। দ্বীপটিতে অনেক পশুপাখি বসবাস করতেন এবং সেখানে একটি ছোট্ট পরিবার বাস করতো তারা ছিল খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির পরিবারের দুটি লোক ছিলো তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো। দিন যায় দিন আসে তাদের মাঝে জন্ম নিলো ছোট্ট শিশু।শিশুটি মায়ের গর্ভ থেকে বের হওয়ার পর এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পায়।এই ভাবেই ছোট্ট পরিবার তাদের সন্তানকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন সেই ছোট্ট শিশুটি তার মায়ের স্নেহ ভালবাসায় বড়ো হলেন যুবক বয়সে মাকে ছাড়া থাকতে পারতো না তার মা ছিল তার নয়ন মনি। তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস মা সেই মাকে আগলে ধরেই দিনের পর দিন পর দিন বসবাস করতে লাগবে। তার বাবা দ্বীপটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ফলমূল কাঠ জোগাড় করে নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটায়। সেই ছেলেটি বড় হল প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পেয়ে বাড়িতেই মায়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে একজন সৎ আদর্শবান ব্যক্তি হলেন। এরপর বনের পশু পাখিরা সেই ছেলেটি বন্ধু হলো তাদের সাথে কাটত তাঁর শৈশব বাল্যকাল যৌবন কাল। হঠাৎ তার বাবা মারা গেলেন ছোট পরিবার কোথাও যেন পায়ের তলা থেকে ক্ষনিকের জন্য মাটি সরে গেল এভাবে কয়েকটা দিন শোক স্তব্ধ হয়েছিল গোটা পরিবার।দিন যায় দিন আসে এই ছোট্ট পরিবার দ্বীপের সবার সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে লাগলো। একদিন তার মা হঠাৎ কঠিন অসুখে পড়লেন ছেলেটি চিন্তার জগতে ভেসে গেল তার মায়ের সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করল কিন্তু আর ধরে রাখতে পারলেন না সবুজের মাঝে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে হয়ে গেলেন পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ। গর্ভধারিনী মাকে হারিয়ে সত্যি সত্যি শোকস্তব্ধ হয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল এরপর দিন যায় দিন আসে মাকে নিয়ে এতটাই ভেঙে পড়লেন না যে আর ঘর থেকে বেরোইনি শুধু সেই জনমদুঃখিনী মা কে নিয়ে ভাবতেন লাগলেন আর ঘরের দেওয়ালে একে ফেললেন সেই মায়ের ছবি যা গোটা জীবনকে চোখের সামনে রেখে স্মরণ করতে থাকে এভাবে দিন যায় দিন আসে সেই ছেলেটি তার বাবা-মাকে স্মরণ করে দ্বীপটির পশুপাখি সবুজের মধ্যে জীবনকে অতিবাহিত করতো। জনম দুখিনী মা বাবাকে হারিয়ে সবুজের সংস্পর্শে মনোরম পরিবেশে এক রূপকথার দেশে সেই ছেলেটি আনন্দ-বেদনা কষ্টের মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন। আর মনে করতেন সেই জনমদুখিনী মা কে ।তার কাছে তার মা এই পৃথিবীতে মূল্যবান জিনিস আর কোথাও ছিল না।
নিয়তি
রাজকুমার ঘোষ
করোনা প্রভাবে মানুষ লকডাউনে ঘরেই বন্দী। রাজও ঘরে বন্দী গত দুই মাস। না আছে কাজ, শুধু খাও, আর ঘুমাও আর মাঝে মাঝে সোশ্যাল সাইটে গান গেয়ে, কবিতা লিখে পোস্টানো… এই ভাবে কেটে যায় দিন-রাত। খবরের কাগজ, নেট থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পূর্বাভাস ছিলোই আমফাণ আসছেই। লোকমুখে তো প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন এর আগেও কত আয়লা এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় তার প্রভাব রেখে গেছে। আসুক তবে, দেখা যাবে… বিকেল থেকে আকাশ ঘন কালো। সবাই বলছে আমফাণ আসছে প্রবল ফণা তুলে। আস্তে আস্তে ঝড়ের একটা প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। ছাদে গিয়ে সে দেখলো, আকাশ কালো রঙে ছেয়ে গেছে। গাছগুলো নাচের একটা ছন্দ পেয়ে গেছে। প্রবল ভাবে দুলতে লাগলো। তাদের ঝড়া পাতা আর ডাল গুলো উড়ে আসতে লাগলো। আশে পাশে বাড়ির টিনের ছাউনিগুলো লাফাতে লাগলো। শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বাড়ির জানলাগুলোর কিছু কাঁচ ঝনঝনিয়ে উঠলো। সবল ঝাপটায় বৃষ্টির জল ঢুকে পড়লো জানলা দিয়ে, দরজার তলার নিচের ফাঁক দিয়ে। ভিজিয়ে দিলো মেঝে। রান্না ঘরের জানলার কাঁচ ভেঙে জল ঢুকতে লাগলো। থালা-বাসন গুলো ঝনঝন করে আওয়াজ সহকারে পড়তে লাগলো। বাড়ির মেয়েরা সেই বাসনগুলো তুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। এদিকে দরজা বা জানলা দিয়ে জল ক্রমাগত ঢুকতেই থাকে। বেশ কিছু কাপড় বা প্লাস্টিকের চট দিয়ে সেই জল আটকানোর এক অসম প্রচেষ্টা। কিছু সফল বলা যেতে পারে। বাড়িতে বিদ্যুৎ কখনই চলে গেছে। সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাতের কালো নিকষ অন্ধকারে অনেকদিন পর আবর্জনায় পড়ে থাকা একটা মাত্র হারিকেন জ্বালানো হলো। কিছু মোমবাতি ছিল তাও জ্বালানো হলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গভীর রাতে চলে এলো, কিন্তু ঝড়ের রেশ কমেনি। প্রবল হাওয়ার বিভৎস আওয়াজে এক বর্ণও চোখের পাতা দুটো এক করতে পারেনি রাজ। ঘুম তো আসেইনি। সকালের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো। উঠতে প্রায় ৮টা হলো তার। ঘুম থেকে উঠেই ছেলে বললো,
- বাবা, বেশ কয়েকটা গাছ, ইলেকট্রিক পোল ভেঙেছে। এছাড়াও কিছুটা দূরে একটা বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে।
- বলিস কিরে… চল দেখি একবার বাইরে গিয়ে।
- আরে ঐ বাড়িটার ছাদে দেখো বাবা, কোনো বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে এসে পড়েছে।
খবর পেলো, আশে পাশের বাড়িতে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ইলেকট্রিকের তার খুলে পড়েছে। সারাটা দিন, বিদ্যুৎ নেই, জলের সরবরাহ নেই। কি ভাগ্যিস রাজদের পাতকুয়া ছিলো। সেখান থেকেই জল সংগ্রহ করে নেওয়া হলো। খাবার জল আগে থেকেই সংগ্রহ করা ছিলো।
সারাটা দিন কিভাবে যে কেটে গেলো, সন্ধ্যে গড়ালো। বাড়ির মধ্যে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। মোমবাতি আর নেই। একমাত্র হারিকেনই সম্বল। সেটাই ব্যবহার করা হলো। একটা জায়গায় সে জ্বলে আছে আর সকলের দশা দেখে মিটমিট করে হাসছে। রাজ তার অভ্যাস মতো মা’র তৈরী করা চা পান করতে বাড়ির নিচের ঘরে চলে এলো। অন্ধকারে ফ্লাক্সে রাখা চা ছোট একটা গ্লাসে কোনোরকমে নিলো। একটা বিস্কুটও খুঁজে নিলো। বিস্কুট সহযোগে চা দু’-তিন চুমুক দেওয়ার পর সে তার মা’এর খোঁজ নিলো,
- মা, কোথায় তুমি? অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
রাজের বাবা বারান্দায় ছিলো, তিনি এলেন লাইটার জ্বেলে। বললেন,
- ঘরে গরম তো? দেখ তোর কম্পিউটার রুমের ঘরের মেঝেতে ঘুমোচ্ছে।
- বলো কি? মেঝের মধ্যে ধুলো আছে। পিঁপড়ে, টিকটিকি কত কি ঘুরতে পারে। এইভাবে ঘুমোয় কখনো!
সে অন্ধকারে হাতরে হাতরে হাতে চা’র এর গ্লাসটা নিয়ে ঘরের দরজার কাছে এসে খুলতে গেলো দরজা। চা’র গ্লাসে একটা চুমুক দিতে গেলো। হঠাৎ অনুভব করলো, গ্লাসের সাথে লেগে থাকা কড়ে আঙুলে কি একটা হালকা স্পর্শ। মনে মনে সে বললো,
- কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার?
রাজ বাবাকে বললো, বাবা গ্লাসের মধ্যে কি একটা পড়লো? কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার।
- কি পড়বে?
- না গো, আমি চুমুক দিতে যাচ্ছি, কিন্তু আঙুলে একটা স্পর্শ পেলাম।
- দাঁড়া, লাইটারটা জ্বালি
লাইটার টা জ্বালানো হলো, টিম টিম করতে থাকা লাইটারে জ্বলতে থাকা আগুনে কিছুই বোঝা গেলো না। মোবাইলের সুইচ অফ, কাজেই অগত্যা গ্লাসটা নিয়ে রাজ ছুটে গেলো হারিকেনের কাছে। হারিকেন উঁচু করে ধরতেই রাজের চক্ষু চড়কগাছ। গ্লাসের মধ্যে থাকা চা’র মধ্যে পড়ে আছে একটা ছোট্ট টিকটিকি। গরম চা’র মধ্যে টিকটিকি পড়েই সেদ্ধ হয়ে ভাসছে। রীতিমত ও বিষ্ময়ে হতবাক।
রাজ চুপ করে সিঁড়ির একটা ধাপে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর নিজের অবস্থায় ফিরে ও ব্যাপারটা অনুধাবণ করলো। ওর মাকে যখন ডাকতে গেলো দরজা খুলে, তখনই ও চুমুক দিতে যাচ্ছিলো চা’র গ্লাসে। দরজার ওপরে থাকা ঝোলানো একটা ব্যাগের গায়ে আটকে ছিলো টিকটিকিটা, সেই মুহূর্তেই চা’র গ্লাসে পড়ে।
রাজ আর ভাবতে পারে না, সে সেই গ্লাসে থাকা চা সমেত মরা টিকটিকিটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তারপর ছুটে গেলো সে তার আরাধ্য কুল দেবতার কাছে…
- জীবনে মরণতো এইভাবেই হতে পারতো। তুমি তা চাওনি। যতই করোনা আর আমফাণ আসুক… আমি আছি এখনো কিছু আছে করার জন্য, আমার ছেলে, স্ত্রী এবং আমার পরিবারের পাশে থাকার জন্য।
রাজের স্ত্রী ছিলো সেখানে, সে সমস্ত ঘটনার সাক্ষী। সে বললো –
- আমরা ক্ষতি করিনি কারোর। আমাদের নিয়তি এইভাবে হতে পারে না। একদিন ঠিক সূর্যের আলোয় সব কিছু ফিরে আসবে। এই অন্ধকার সাময়িক।
শঙ্খশুভ্র পাত্র
মণ্ডলাকার এই গৃহে এসে যে সুবিধা হল বিলক্ষণ বুঝি ৷ নির্বাচিত গুচ্ছ নিয়ে বসে আছি ৷ প্রস্ফুটিত
মুখের দিকে তাকিয়ে আছে পাঠক ৷
একটা ধরাশায়ী রঙের আলোর দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে মন ৷ শ্বেতাভ কন্যার কাছে রূপার্থ বেদনা লুকিয়ে রেখে কী প্রাণান্ত মণীন্দ্রসাধন !
কালীকৃষ্ণ-আলোকে পূর্ণ নিশীথিনী...
শেষাবধি মহারানা, জলের শিয়রে দেখি : খণ্ড চাঁদ,
বিজনরঙের ঢেউয়ে দোল খায় আদিগন্ত কবিতাশরীর...
তিল
অমিত পন্ডিত
যে তিল টা ওখানে মিনিমাইজ করে রাখা আছে, তার কেয়ার অফ কে বলে দিও চিঠি লিখব তাকে--
ধুতরা সকাল নয়,
কয়েক লাইন চাঁদ লিখে দেব তাকে
বাদামী রাত বিকে দেব তাকে
যে টুকু পুড়লে তিলে তাপ যাবে
যে টুকু আলোতে ঠোঁটে ঠোঁট মাপা যাবে--
.... সেটুকুই লিখব তাকে..
প্রিয় বান্ধবী
হামিদুল ইসলাম
মৃত্তিকার উপর উদাসী মরীচিকা ফিরে আসে
বারবার জ্বালায় পোড়ায়
খেয়ে নেয় মাটির শাঁস
দু্র্ভাবনার বিষাক্ত ছোবলে স্বপ্নগুলো ভেঙে চৌচির
হেমন্তের শিশির ছুঁয়ে যায় অরণ্যের বসতবাটি ।
তোমাকে দেখেছিলাম অশোকনগর
ইতিহাসের পাতা গিলছে সময়ের স্রোত
ভয়ংকর ময়াল ছুটছে পিছু পিছু
অসম্ভব বিষের আকর বসায়
বিষ্ফারিত পৃথিবীর সমস্ত অসহায় রোমকূপ ।
বগল দাবায় ঘর্মাক্ত সূর্য
পুড়ে পুড়ে খাক হয়ে যায় নিষ্ঠুর মরীচিকার অবয়ব
মৃত্তিকার উপর শায়িত শস্য শ্যামলা পৃথিবী
হাজার অভিমানে জেগে থাকে
বিনিদ্র সারারাত ।
তবু তোমার কাছে ফিরে আসি অশোকনগর
কফিনের শেকড়ে শায়িত আমার প্রিয় বান্ধবীর লাশ ।
গত ন বছরে
তানবির
অনেক দূরে আবার অনেক কাছে । মেঘ করেছে,
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিতে রাশি পঞ্জিকা খুলে দেখো তুমি,
গতো ন বছরে
বৃষ্টি নিয়ে গেছে কষ্ট , নিয়ে গেছে মুঠোফোন
নিয়ে গেছে যোগ্যতা,নিয়ে গেছে পুরোনো বায়না
একদিন না রোজ এবং একসাথে
মিন মিন করে ।
ওসব তোয়াক্কা না করে কেমনে জাল হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, দেখো না দেখো কলম্বাসের জাহাজে !
পরের দিন তার পরেরদিন । এভাবে দাঁড়াতে দাঁড়াতে একদিন যদি দাঁড়াতে সুযোগ না দাও । তবে বৃষ্টি দিও না ,
কারণ,
গতো ন বছরে
বৃষ্টি নিয়ে গেছে কষ্ট , নিয়ে গেছে মুঠোফোন
নিয়ে গেছে যোগ্যতা,নিয়ে গেছে পুরোনো বায়না l
মিন মিন করে ।
পরিত্যক্ত জীবন
- চিরশ্রী কুণ্ডু (অবন্তিকা)
জীবনের পাতা থেকে মুছে গেছে
মূল্যবোধের হিসেব,
চারিদিকে শুধু ধু ধু মরুভূমি
মনের চিলেকোঠায়,
পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে মনে
আবেগের সমাবেশ,
প্রাধান্য হারিয়েছে আজ ভালোবাসা
বাস্তব মূল্যবোধের কাছে,
বিশ্বাসের ঘরে করেছে আঘাত
জীবনে নেইতো কোনো বাঁচার ফাঁদ,
সুনামি হয়ে ভেসে গেছে জীবন এর অধ্যায়
বুকের পাঁজর জুড়ে দাবানলের উচ্ছাস...।
দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় সময়
হারিয়ে যায় কথার ভিরে প্রতিশ্রুতির গল্প....,
হাজার হৃদয়ের মাঝে কতো পরিত্যক্ত জীবনের ছন্দ
গেছে হারিয়ে কালের বিবর্তনে...............।।
মন্দির সম পিতৃভূমি
বিমান প্রামানিক
জন্ম থেকেই করছি যে বাস
ছোট্ট এই কুটীর
চিন্তায় কাটে বারোটি মাস
জ্যোষ্ঠে দুশ্চিন্তার ভীর।
আকাশ জুড়ে যতই তুফান
আসেই ফিরে ফিরে
সবার চেয়ে আমি মহান
আছি এই নীড়ে।
কিন্তু যখন ঝড় বাদলে
দুলিয়ে দেয় খুঁটি
জড়িয়ে স্মৃতি পিতৃকুলে
শুধু এই ভিটেটি।
যেমন করেই বাপ দাদুরা
রাখে আগল করে
এখন তবে আমি ছাড়া
কেউ নেই, রাখবো ধরে।
বাদল দিনে বৃষ্টি ঝরে
চালের ফুটো দিয়ে
রেখেছি তবু যতন করে
আছে স্মৃতি জড়িয়ে।
ছেলের কান্না মায়ের কানে
যেমন করেই ভাসে
দোচালা এই কুটীর পানে
আনন্দে বুক হাসে।
গর্বে আমি উচ্চ শিরে
বলি বার বার
তবুও আছি নিজ নীড়ে
এইটুকুও নেই সবার।
হে বিধাতা রেখো আমায়
নিজের চরণ তলে
আসুক যতই দুঃসময়
এই ধরাতলে।
আমার নিকট এই ঘরখানি
যেন মন্দির সমান
প্রকৃতি যতই হোক বিমুখী
ভিটেতেই হোক মরণ।
খেয়াল খুশি
সুদীপ্তা মণ্ডল
দু-মাস আরও বন্ধ হলো বিদ্যালয় ,
পড়াশোনা তাই বাড়িতেই করো সবাই ।
একটি শিশু মন দিয়েছে ড্রইং খাতায় ,
দিদি এসে হঠাৎ করে মারলো চাটি মাথায় ।
বললো তারে এটা আবার করছিস কি ভাই ?
প্রজাপতি আঁকতে হবে , শুয়োপোকা নয় ।
লকডাউনের পরে যখন দিবি খাতা জমা ,
স্কুলেতে স্যার কী তোকে করবে তখন ক্ষমা ?
দিদিরে তুই বড্ড বোকা ,
শুয়োপোকা কি আর থাকবে আঁকা ?
বড়ো আমি হয়েছিরে , নইকো আর খোকা ,
যা খুশি তায় করতে পারি , যাবেনা আমায় রোখা ।
এখনও তো ঠিক হয়না স্কুল খুলবে কবে ,
ততদিনে শুয়োপোকা প্রজাপতি হবে ।
হ্যারিকেন
সোমনাথ বেনিয়া
হ্যারিকেন অন্ধকার কেটে ভয়ের মুখে ফুল
উষ্ণ গন্ধ সলতে জড়িয়ে চোখের উজ্জ্বল ভাষা
ছায়ার ভিতর বৃত্ত, সে কী শূন্য নিরপেক্ষ
দেওয়ালে আবছা সংসার প্রবাহমান সিঁড়িভাঙা
অতীত জং ধরা বঁড়শি, নতুনকে তুলতে হয়রান
যার কাছে প্রেম আছে, তার কাছে চাও ঘৃণা
হ্যারিকেন নিভে গেলে দোষের ভাগী, প্রিয় বিছানা
জীবনতুফান
সোমনাথ মুখার্জী
অমাবস্যার মত রাতের আকাশ রং
বাতাস বইছে বাদুড়ের ডানার মত,
রূপকল্প গড়ে ওঠে শিল্পীর চেতনায়
মাটি মেখে নেয় চেতনা-শিল্প।
ঝড়-বৃষ্টি-তুফান-উমপুন-
জীবনে ক্ষয় মেশায়,
মৃত্যু সূর্যালোকের সোনা খোঁজে
পাতাবাহার এবং বৃক্ষ বাকল
সময়ের আশ্রয়।
রূপকল্প উপমা তৈরী হয়, ভেঙে যায় নতুন উষায়।
তোকে বড্ড ভালোবাসি
বটু কৃষ্ণ হালদার
ইস, তোকে যদি একবার ছুঁয়ে দেখতে পারতাম
তোর ওই লাল ঠোঁটে যদি স্বপ্ন এঁকে দিতাম,
না এমন আশা কোনোদিন করিনি,
কারণ আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি পাগলী,
তোকে সারা জীবন বুকের মাঝে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম,
তোর চোখের তারায় স্বপ্ন দেখেছিলাম,
কিন্তু কখন যে তারা খসা হয়ে ঝরে পরলাম বুঝতে পারিনি,
গহীন আঁধারের বুকে চাতক পাখির মতো জেগে থাকে পিপাসার্ত মন।
সুরার পেয়ালা এখন সঙ্গ দেয় আমার।
আত্মার সঙ্গে মিশে যেতে চায়। যখন খুব বেসামাল হয়ে পড়ি,
তখন ছুটে যাই জলঙ্গীর তীরে,
সোহাগীর জল তরঙ্গের কাছে জানতে চাই, কেমন আছে বন্ধু আমার?
জীবনের গল্প
টুম্পা মুখার্জী
অট্টহাস্যে নির্যাতিত মন
পথ খুঁজে ফেরে,
প্রিয়জনের দরজাগুলো শিকল
আঁটা খুব করে।
প্রয়োজন তাই ফেরিওয়ালা হয়ে
জানালায় কড়া নাড়ে,
চাহিদার তাগিদরা কালো
নিশ্বাস ফেলে ঘাড়ে ।
শুকনো পাতা আওয়াজ
তোলে মর্মর,
যেন শূন্যতার আশাবরি রাগ
পূর্ণ করে অন্তর।
নীলাকাশে প্রখর সূর্য
কটাক্ষ হানে,
উষ্ণতা ছড়ায়, নাকি দগ্ধ
করে অগ্নিবাণে?
দিনের মধ্যক্ষণ
আর ছায়া ফেলা সায়াহ্ন,
এক ঝলক ঊষর বাতাস,
আর বন্ধ্যা নদীর চড়ায়
পড়ে থাকা মৃত বালিহাঁস
যেন জীবনের গল্প বোনে ।
উপাখ্যান
মহীতোষ গায়েন
অস্থির এই সময়ে শুধু সংগ্রাম
আর প্রতিরোধের স্বপ্ন দেখি...
আগুনকে ভয় পাইনা আর,
অগ্নিমন্ত্র উচ্চারিত হয় সমূহ সমাজে।
রাতের অন্ধকারে আকাশের তারা গুনি,
হিসেব মেলাতে পারি না,
শরীরের অলিতে গলিতে
ঢুকে পড়ে প্রতিরোধের বীজ।
রহস্যময় অন্ধকারে শুনতে পাই
অচেনা সুর,মেঘমল্লার রাগ...
ভুবনডাঙ্গার মাঠে রচিত হয়
বসুন্ধরার এক গোপন উপাখ্যান।
একদিন বিপর্যয় কেটে যাবে,
শিরায় উপশিরায় প্রতীক্ষার উত্তেজনা...
শঙ্কাহীন নব উপাখ্যানে সাঙ্গীভূত
হয় নবজীবনের উদ্বোধনী সঙ্গীত।
ধর্ষণ
শেখ মনিরুল ইসলাম
র্নিজুম রাত
আশ্বিনের সাত
সুযোগ খুঁজে
গন ধর্ষন
একা নয়
সঙ্গে যত জন
বস্ত্রহীন দীর্ঘক্ষন,
কাঁটার ওপর
জ্বালাতন।
বৃষ্টি বেরার কবিতা
১)
আমার মানব জীবন , আমার সৌন্দর্য , আমার যোগ্যতা
তা তো অন্যকে প্রমাণ করার জন্য নয় বা অন্যের মনোরঞ্জন করার জন্য নয়
২)
পিছুটান তারই থাকে যে
ভালোবেসেছিল ..
নিষ্ঠুর ঈগল তো শুধু এক আকাশ থেকে
অন্য আকাশে শিকার ধরতে পারে
ভালোবাসতে তো পারে না তাই সে মুক্ত।
বোধোদয়
জহরলাল দাস
দীর্ঘদিন পর লকডাউন কিছুটা শিথিল হতেই গলির মোড়ের দোকানটায় মানুষের লম্বা লাইন।
কিছু পাওয়ার আশায় মানুষের দেখাদেখি লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন পর হারুকাকা জানতে পারল বিদেশী রঙ্গিন পানীয় বিক্রির দোকানে ক্রেতার লাইন!
নদী কথায় ভেসে যায় .....
তীর্থঙ্কর সুমিত
১)
কত জমানো কথা ভেসে যায় নদী বুকে।কেউ খবর রাখেনা।কোনো গল্পের শেষ হয়না। শেষ হয় কথার।ওখানেই শুরু হয় নতুন গল্পের।নতুন থেকে চিরনতুন হতে হতে আটকে যায় চোখ।সেই চোখ থেকে সৃষ্টি হয় এক একটা গঙ্গা,এক একটা পদ্মা।ভালো থাকার লড়াইয়ে জলের স্রোতে ভেসে যায় অব্যাক্ত কত কথার যন্ত্রণা।হয়তো এভাবেই সৃষ্টি হয় কয়েকটা কথা, কয়েকটা চিহ্ন আর এক একটা মরুভূমি...
মা
আব্দুল রাহাজ
মা কথাটি শুনলে কোথাও যেন মায়া মমতা বেদনা খুঁজে পায়। যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। প্রকৃতির সাথে মা কোথাও যেন সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রকৃতির সবুজায়নের কোলে ছোট্ট শিশু তার মায়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। একটি মা বোঝে তার সন্তানের আনন্দ কষ্ট দুঃখ এভাবে মা তার সন্তানকে আগলে রাখে। যখন প্রকৃতির মায়ের কোলে মনোরম পরিবেশে ছোট্ট শিশু জন্মায় তখন যে মায়ের কষ্ট পৃথিবীতে আর অন্য কোন কারো সাথে তুলনা করা যায় না। একটি মা তার সন্তানকে নিজের প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে।যদি কোন ছেলে বাইরে থাকে তাহলে ভেবে দেখেন তো তার মায়ের অবস্থা কি রকম হয় শুধু মায়ের মনটা চাই ওই বোধহয় প্রকাশ্যে এইভাবে পথ চেয়ে থাকে। ভাবুন তো কোন বাবা মায়ের কোলে ছেলে বা মেয়ে মারা যায় তখন তাদের যে কষ্ট হয় তা কথায় প্রকাশ করা যায় না। ভাবুনতো যাদের বাবা মা নেই তাদের অবস্থা কি হয়। পৃথিবীতে মা হারা কষ্ট সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। এই পৃথিবীতে তার জনম দুঃখিনী আমাকে একটি বারও মা বলে সুযোগ আর পাবে না তাই মায়ের মত মূল্যবান জিনিস এই পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। মা তার ছেলেমেয়েকে আগলে ধরে বাঁচতে চায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন পর্যায়ে এসে পড়েছে যেটার গর্ভধারিনীমাকে আঘাত করছে গায়ে হাত তুলছে যা মানবজাতির কাছে খুবই লজ্জাজনক। যে মা কষ্ট করে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তাকে আঘাত দেওয়া মানে এর মত হতাশ লজ্জা আর কিছুই নেই। একটা ছোট্ট মেয়েটি তার মাঝে ছোট্ট দ্বীপটির নামটি তার ফ্যেদম চারিদিক থেকে সবুজ গাছপালায় ঢাকা দূর থেকে দেখলে মনে হয় নদীর জলের সাদা আস্তরণ এর উপর এক রূপকথার দেশ। দ্বীপটিতে অনেক পশুপাখি বসবাস করতেন এবং সেখানে একটি ছোট্ট পরিবার বাস করতো তারা ছিল খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির পরিবারের দুটি লোক ছিলো তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো। দিন যায় দিন আসে তাদের মাঝে জন্ম নিলো ছোট্ট শিশু।শিশুটি মায়ের গর্ভ থেকে বের হওয়ার পর এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পায়।এই ভাবেই ছোট্ট পরিবার তাদের সন্তানকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন সেই ছোট্ট শিশুটি তার মায়ের স্নেহ ভালবাসায় বড়ো হলেন যুবক বয়সে মাকে ছাড়া থাকতে পারতো না তার মা ছিল তার নয়ন মনি। তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস মা সেই মাকে আগলে ধরেই দিনের পর দিন পর দিন বসবাস করতে লাগবে। তার বাবা দ্বীপটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ফলমূল কাঠ জোগাড় করে নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটায়। সেই ছেলেটি বড় হল প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পেয়ে বাড়িতেই মায়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে একজন সৎ আদর্শবান ব্যক্তি হলেন। এরপর বনের পশু পাখিরা সেই ছেলেটি বন্ধু হলো তাদের সাথে কাটত তাঁর শৈশব বাল্যকাল যৌবন কাল। হঠাৎ তার বাবা মারা গেলেন ছোট পরিবার কোথাও যেন পায়ের তলা থেকে ক্ষনিকের জন্য মাটি সরে গেল এভাবে কয়েকটা দিন শোক স্তব্ধ হয়েছিল গোটা পরিবার।দিন যায় দিন আসে এই ছোট্ট পরিবার দ্বীপের সবার সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে লাগলো। একদিন তার মা হঠাৎ কঠিন অসুখে পড়লেন ছেলেটি চিন্তার জগতে ভেসে গেল তার মায়ের সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করল কিন্তু আর ধরে রাখতে পারলেন না সবুজের মাঝে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে হয়ে গেলেন পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ। গর্ভধারিনী মাকে হারিয়ে সত্যি সত্যি শোকস্তব্ধ হয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল এরপর দিন যায় দিন আসে মাকে নিয়ে এতটাই ভেঙে পড়লেন না যে আর ঘর থেকে বেরোইনি শুধু সেই জনমদুঃখিনী মা কে নিয়ে ভাবতেন লাগলেন আর ঘরের দেওয়ালে একে ফেললেন সেই মায়ের ছবি যা গোটা জীবনকে চোখের সামনে রেখে স্মরণ করতে থাকে এভাবে দিন যায় দিন আসে সেই ছেলেটি তার বাবা-মাকে স্মরণ করে দ্বীপটির পশুপাখি সবুজের মধ্যে জীবনকে অতিবাহিত করতো। জনম দুখিনী মা বাবাকে হারিয়ে সবুজের সংস্পর্শে মনোরম পরিবেশে এক রূপকথার দেশে সেই ছেলেটি আনন্দ-বেদনা কষ্টের মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন। আর মনে করতেন সেই জনমদুখিনী মা কে ।তার কাছে তার মা এই পৃথিবীতে মূল্যবান জিনিস আর কোথাও ছিল না।
নিয়তি
রাজকুমার ঘোষ
করোনা প্রভাবে মানুষ লকডাউনে ঘরেই বন্দী। রাজও ঘরে বন্দী গত দুই মাস। না আছে কাজ, শুধু খাও, আর ঘুমাও আর মাঝে মাঝে সোশ্যাল সাইটে গান গেয়ে, কবিতা লিখে পোস্টানো… এই ভাবে কেটে যায় দিন-রাত। খবরের কাগজ, নেট থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পূর্বাভাস ছিলোই আমফাণ আসছেই। লোকমুখে তো প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন এর আগেও কত আয়লা এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় তার প্রভাব রেখে গেছে। আসুক তবে, দেখা যাবে… বিকেল থেকে আকাশ ঘন কালো। সবাই বলছে আমফাণ আসছে প্রবল ফণা তুলে। আস্তে আস্তে ঝড়ের একটা প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। ছাদে গিয়ে সে দেখলো, আকাশ কালো রঙে ছেয়ে গেছে। গাছগুলো নাচের একটা ছন্দ পেয়ে গেছে। প্রবল ভাবে দুলতে লাগলো। তাদের ঝড়া পাতা আর ডাল গুলো উড়ে আসতে লাগলো। আশে পাশে বাড়ির টিনের ছাউনিগুলো লাফাতে লাগলো। শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বাড়ির জানলাগুলোর কিছু কাঁচ ঝনঝনিয়ে উঠলো। সবল ঝাপটায় বৃষ্টির জল ঢুকে পড়লো জানলা দিয়ে, দরজার তলার নিচের ফাঁক দিয়ে। ভিজিয়ে দিলো মেঝে। রান্না ঘরের জানলার কাঁচ ভেঙে জল ঢুকতে লাগলো। থালা-বাসন গুলো ঝনঝন করে আওয়াজ সহকারে পড়তে লাগলো। বাড়ির মেয়েরা সেই বাসনগুলো তুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। এদিকে দরজা বা জানলা দিয়ে জল ক্রমাগত ঢুকতেই থাকে। বেশ কিছু কাপড় বা প্লাস্টিকের চট দিয়ে সেই জল আটকানোর এক অসম প্রচেষ্টা। কিছু সফল বলা যেতে পারে। বাড়িতে বিদ্যুৎ কখনই চলে গেছে। সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাতের কালো নিকষ অন্ধকারে অনেকদিন পর আবর্জনায় পড়ে থাকা একটা মাত্র হারিকেন জ্বালানো হলো। কিছু মোমবাতি ছিল তাও জ্বালানো হলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গভীর রাতে চলে এলো, কিন্তু ঝড়ের রেশ কমেনি। প্রবল হাওয়ার বিভৎস আওয়াজে এক বর্ণও চোখের পাতা দুটো এক করতে পারেনি রাজ। ঘুম তো আসেইনি। সকালের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো। উঠতে প্রায় ৮টা হলো তার। ঘুম থেকে উঠেই ছেলে বললো,
- বাবা, বেশ কয়েকটা গাছ, ইলেকট্রিক পোল ভেঙেছে। এছাড়াও কিছুটা দূরে একটা বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে।
- বলিস কিরে… চল দেখি একবার বাইরে গিয়ে।
- আরে ঐ বাড়িটার ছাদে দেখো বাবা, কোনো বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে এসে পড়েছে।
খবর পেলো, আশে পাশের বাড়িতে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ইলেকট্রিকের তার খুলে পড়েছে। সারাটা দিন, বিদ্যুৎ নেই, জলের সরবরাহ নেই। কি ভাগ্যিস রাজদের পাতকুয়া ছিলো। সেখান থেকেই জল সংগ্রহ করে নেওয়া হলো। খাবার জল আগে থেকেই সংগ্রহ করা ছিলো।
সারাটা দিন কিভাবে যে কেটে গেলো, সন্ধ্যে গড়ালো। বাড়ির মধ্যে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। মোমবাতি আর নেই। একমাত্র হারিকেনই সম্বল। সেটাই ব্যবহার করা হলো। একটা জায়গায় সে জ্বলে আছে আর সকলের দশা দেখে মিটমিট করে হাসছে। রাজ তার অভ্যাস মতো মা’র তৈরী করা চা পান করতে বাড়ির নিচের ঘরে চলে এলো। অন্ধকারে ফ্লাক্সে রাখা চা ছোট একটা গ্লাসে কোনোরকমে নিলো। একটা বিস্কুটও খুঁজে নিলো। বিস্কুট সহযোগে চা দু’-তিন চুমুক দেওয়ার পর সে তার মা’এর খোঁজ নিলো,
- মা, কোথায় তুমি? অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
রাজের বাবা বারান্দায় ছিলো, তিনি এলেন লাইটার জ্বেলে। বললেন,
- ঘরে গরম তো? দেখ তোর কম্পিউটার রুমের ঘরের মেঝেতে ঘুমোচ্ছে।
- বলো কি? মেঝের মধ্যে ধুলো আছে। পিঁপড়ে, টিকটিকি কত কি ঘুরতে পারে। এইভাবে ঘুমোয় কখনো!
সে অন্ধকারে হাতরে হাতরে হাতে চা’র এর গ্লাসটা নিয়ে ঘরের দরজার কাছে এসে খুলতে গেলো দরজা। চা’র গ্লাসে একটা চুমুক দিতে গেলো। হঠাৎ অনুভব করলো, গ্লাসের সাথে লেগে থাকা কড়ে আঙুলে কি একটা হালকা স্পর্শ। মনে মনে সে বললো,
- কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার?
রাজ বাবাকে বললো, বাবা গ্লাসের মধ্যে কি একটা পড়লো? কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার।
- কি পড়বে?
- না গো, আমি চুমুক দিতে যাচ্ছি, কিন্তু আঙুলে একটা স্পর্শ পেলাম।
- দাঁড়া, লাইটারটা জ্বালি
লাইটার টা জ্বালানো হলো, টিম টিম করতে থাকা লাইটারে জ্বলতে থাকা আগুনে কিছুই বোঝা গেলো না। মোবাইলের সুইচ অফ, কাজেই অগত্যা গ্লাসটা নিয়ে রাজ ছুটে গেলো হারিকেনের কাছে। হারিকেন উঁচু করে ধরতেই রাজের চক্ষু চড়কগাছ। গ্লাসের মধ্যে থাকা চা’র মধ্যে পড়ে আছে একটা ছোট্ট টিকটিকি। গরম চা’র মধ্যে টিকটিকি পড়েই সেদ্ধ হয়ে ভাসছে। রীতিমত ও বিষ্ময়ে হতবাক।
রাজ চুপ করে সিঁড়ির একটা ধাপে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর নিজের অবস্থায় ফিরে ও ব্যাপারটা অনুধাবণ করলো। ওর মাকে যখন ডাকতে গেলো দরজা খুলে, তখনই ও চুমুক দিতে যাচ্ছিলো চা’র গ্লাসে। দরজার ওপরে থাকা ঝোলানো একটা ব্যাগের গায়ে আটকে ছিলো টিকটিকিটা, সেই মুহূর্তেই চা’র গ্লাসে পড়ে।
রাজ আর ভাবতে পারে না, সে সেই গ্লাসে থাকা চা সমেত মরা টিকটিকিটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তারপর ছুটে গেলো সে তার আরাধ্য কুল দেবতার কাছে…
- জীবনে মরণতো এইভাবেই হতে পারতো। তুমি তা চাওনি। যতই করোনা আর আমফাণ আসুক… আমি আছি এখনো কিছু আছে করার জন্য, আমার ছেলে, স্ত্রী এবং আমার পরিবারের পাশে থাকার জন্য।
রাজের স্ত্রী ছিলো সেখানে, সে সমস্ত ঘটনার সাক্ষী। সে বললো –
- আমরা ক্ষতি করিনি কারোর। আমাদের নিয়তি এইভাবে হতে পারে না। একদিন ঠিক সূর্যের আলোয় সব কিছু ফিরে আসবে। এই অন্ধকার সাময়িক।
No comments:
Post a Comment