PravatiPatrika

Monday, May 25, 2020

কবিতা ও গদ্য


                     দামামা
                হামিদুল ইসলাম।

তোমাকে দেখি সমুদ্র স্রোত
কিশোরী চাঁদের আলোয় উচ্ছ্বল প্রাণ
প্রাণের গভীরে জীবকোষ
প্রতিদিন জন্ম এক
দ্বান্দ্বিক জীবন  ।

প্রাচুর্যের দেয়ালে চাপা পড়ে শ্বাস
মৃত‍্যু উন্মুখ
হাতের কব্জি ভাঙে এক একটি আঘাত
মুহূর্তে উধাও
শক্তি আসুরিক ।

তোমার বাজুতে কতোটা শক্তি ধরে
জেনে নিই পরস্পর
ঘরে ঘরে যুদ্ধের কাড়া নাকাড়া
পথের নিশানা দেখায়
বাহুবলি সংগ্রাম  ।।

পৃথিবীতে এখন প্রতিদিন রণ দামামা  ।




                  অতিথি
         শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার

আতিথ‍্য পেতেছ দাওয়ায় আদর করে,
গৃহস্থী বেড়ালের মত এসে বসি,
কি নিঃসীম ঠান্ডা স্পর্শটুকু আপনজনের
মা'বোনেদের নিবিড় আশ্রয়..

তুমি জানো, অন‍্য ভূখন্ডে এখন  আমি
ঝকঝকে একটি খুপড়িতে থাকি!
ফ্রিজ, টিভি, ঠান্ডার মেশিন
দু বেলা কাজের লোক
যতকিছু আরাম, স্বাচ্ছন্দের
সব আছে! একটা সুন্দর জানালাও
সেখান থেকে তোমাদের দেখি!

আদিগন্ত ধান ক্ষেত, ভদ্রা নদী
পলুই এর ভেতরে লাফানো কাচকী মাছ.....
চন্ডীমন্ডপ, নাসিরদের জাম্বুরা বাগান....
ফিকে হওয়া বিকেলের আজান.....
সব কিছু....সব কিছু...দেখতে দেখতে....
হিংসায় বুকে লাগে চাপ!

আহা! যদি এমন মসৃণ দাওয়ায়
একটি শীতলপাটী থাকত আমার.....
আর সবুজ শাড়ির বুকে লাল সোহাগের ছাপ......

ওপারে যেমন আছে
অর্ধেকটা আমার!
হৃদয়ে আকর্ষণীয় ভাঁড়ার,
ওপারে যেমন আছে
অর্ধেকটা আমার!



চরের নাম বালিঘড়ি
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

এক বুক নিভে গেলে জাগে এক বুক
আশার সলতে ঝুঁকে আলো নেয়  অন্য  আলো থেকে...
বেঁচে থাকা মানুষেরা বাঁচার ইতিহাস
পাঠ করে মৃতদের মগজ খুলে নিয়ে।
তবু ঝড় নামে বৃষ্টি নামে দিন নামে দেহে
তমসাভুক দেহ একদিন শিখে নেয় প্রতিরোধী গান
সাম্পান সাম্পান....
তার তলায় নোয়ার ঢেউ লাগে।
মৃতদের পাশ থেকে বেদনার পাশ থেকে
ডুবে থাকা বালিঘড়ি জাগে...



           শিকার
    মিজানুর রহমান

হাজারটা মরুভূমি খালি পায়ে...
শব্দহীন কবিতাদের সাথে জয়লাভের গল্প
দু কিমি বালি বন্ধু,
নদীর ছায়ার মৃত্যু ঘুমিয়ে।

হৃদয়ের পেট আছে, সেখানে শর্করা?
বালুকা বাতাস ভোগ হয়
নদীর তীরে পৌঁছায়, কাঁটাতার।
আবছা ওয়েসিসের হাত।

লাইসোজোম খুশি তখন...
ষোলো পাউন্ড শিকার।
হৃদয়ের পেটে...
একটা ধূসর মাঠ, কাঁকুরে বৃক্ষ।।




        সাবধানে ঈদ পালন
          সৌমিত্র মজুমদার

ওই দ্যাখা যায় ঈদেরই চাঁদ
      আসলো খুশির দিন,
মিলন মেলায় আসবি কে আয়
      মনে খুশি'র বীণ
কিন্তু এবার করোনা-তে
      নেই সে আমোদ-রেশ --
ঘরে থেকেই ঈদ এ বছর
      করবে পালন বেশ !
অতিমারী'র কাটলে প্রহর
      আসবে খুশি ফিরে,
তখন সবাই আনন্দেতে
      যাবোই মিশে ভিড়ে
এই বছরে সতর্কতা
      মহামারী কারণ,
জমায়েতে নিষেধ সবার
      হাজার রকম বারণ।



         শ্রাবনের ধারা
     নির্মাল্য কুমার পান্ডে

শ্রাবনের ধারা ঝরছে ক্ষণেক্ষণে,
বইছে ঝিরিঝিরি সমীরণ, বাগানে।
আছি বসে, বাতায়ন পাশে,
লিখছি কবিতা, দুরুদুরু বুকে।
আসছে না কোন রোম্যান্স মনের কোনে,
নাড়ছি কলমটা, খাতার সাদা-পাতাতে।
হঠাৎ উঠল ঝড়, ঘরের বাইরে,
মুহূর্তে ভাঙ্গল গাছটা সশব্দে।
হলাম বিমুঢ়, খসে গেল কলমটা, হাত থেকে।
যেমন ছিলাম প্রেমহীন জীবন, রইলাম তেমনি-
শ্রাবনের-ধারারমত বিনা ‘রোম্যান্সে’!
হল না লেখা ‘প্রেমের কবিতা’ শুষ্ক-হৃদয়ে।




        যারা বেঁচে আছে
        তীর্থঙ্কর সুমিত


যারা বেঁচে আছে
তারা এখনো ঘুরছে
গলি থেকে রাস্তা,রাস্তা থেকে রাজপথ
ধুলো পরা জীবনে
দুপুরের রোদ সব আলো জ্বালিয়ে
নতুনের দিশা দেখায়
শব্দে শব্দে জেগে ওঠে প্রাণ
নতুনের কথা গেয়ে ওঠে গান
নিস্তব্ধ আলোয় ভরে ওঠে স্বপ্নচূড়া
আর আমরা হেঁটে যাই
বেচা - কেনার শহরে
একটু চায়ের নেশায়।



                      ভলক্যানো                 
                      সুদীপ সেন     


 পরিস্থিতিগত কারণে আগত দিশাহীন পরিবেশ আজ কী তোমার স্বপ্নের পথে বাধা?নাকি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মতো লুন্ঠনের শিকারীর অবাধ তীর-লক্ষ্যে তুমি পতিত?নাকি প্রকৃতির অজ্ঞাত  আক্রোশে আজ দিক-বিদিক শূন্য জীবন মরূভূমির অন্তিম সীমায় দাড়িয়ে তুমি হতাশাকে  আশ্রয় করেছো?....আমাজনের শিখা,ভাইরাসের গোপন আক্রমণ,সাইক্লোনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তান্ডব--এই সব কিছুর চরম বাস্তবতার কারণে আজ যদি তুমি পরাজিত---তবে ভয় পেও না,শক্ত করো পদক্ষেপ,মুষ্ঠিবদ্ধ করো আহত শরীর ও মনকে,সামলে ফেলো নিজের সমতা।     
           ধরে নাও না এগুলো তোমার কর্মের ফল।প্রকৃতির প্রতি নমনীয়তা হারিয়ে ফেলেছিলে তুমি,হয়তো এগুলো তারই প্রতিরোধ,প্রতিবাদী রূপ।নিজের স্বার্থে প্রয়োজনে কতই না উত্যক্ত করে তাকে মরণের পথে ঠেলে দিয়েছো।     
              ভুলে গেছো?--অরণ্য-ধ্বংস,শিল্পায়ন,নগরায়ন,জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আরও কত কিছু তোমার হাত দিয়ে।পরিবেশকে প্রতি মুহূর্তে দূষিত করার প্রবণতা আজও তোমার নিশ্বাসে।ভুল গুলো শুধরে নেবার জায়গা আছে কিনা,সে বিষয়েও প্রকৃত মানসিকতার অভাব।সব কিছুই আজ কেমন যেন অস্পষ্ট।                                     
আজ তাই প্রকৃতি যেন এক 'ভলক্যানো',তোমার দেওয়া আঘাতের ম্যাগমাগুলোকে সুপ্ত ভাবে সহ্য করার পর আজ সে প্রতিশোধের লাভা উদগিরণে ব্যস্ত।তারই ছিটেফোটা আজ কোথাও কোথাও মৃত্যুর আকার নিয়েছে।                                           
এই জীবন-বিরোধী কার্যকলাপ আজ সঠিক ভাবে হজম করার পরও তুমি উঠে দাড়াবে,ব্যস্ত হবে আপন কর্মে,গুছিয়ে নেবে বর্তমানকে।....শুধু অতীতগামী হবে কিছু রক্ত-মাংসের দেহ,কিছু সদ্যোজাত স্বপ্ন,আর কিছু সমতা-বিধানকারী কর্মপন্হা।   সুতরাং...প্রকৃতি না তুমি,কে আহত,কে আঘাতদানকারী?...এই অস্পষ্টতার মৌনতায় দিবারাত্র এগিয়ে যাবে এই কর্মধারা,এই সহনশীলতা।         
শুধু...অপেক্ষা করবে তুমি,তোমার সময়,আগামী 'ভলক্যানো'-র আগমনের,যার ম্যাগমা হয়তো আজ থেকেই সঞ্চয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তুমি বা তোমার আগামী ভবিষ্যৎ।....প্রস্তুত থেকো.....ভালো থেকো।.....



1 comment: