বিরূপাক্ষ পন্ডা'র গুচ্ছ কবিতা
✍✍✍✍✍✍✍✍
সংকল্প
কিছু একটা করতেই হবে
ইচ্ছার নিবারণ চেয়ে পাই
নদীকাব্য, উত্তরকথা
এনে দ্যায় ভাবনার পয়ার
মিলে যায় অতীত -বর্তমান
প্রবহমান, লগ্ন মিলন
এই যে বুনো হিংসা
এই যে সাপের বেদন
এই যে দখল-বেদখল
এই যে ভাইরাস উসকানি
এই যে বিষণ্ণতার চিতা
রূপকথায়, অমৃতবাণীতে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে হবে রাজভিখারি
সত্যি, কিছুতো করতেই হবে
সংকল্পে শুদ্ধ হবে দুয়ার, চৌকাঠ।
ঠিকানা
তবুও ঠিকানা পেলাম না। প্রতিদিন নতুন গন্ধ সমুদ্র শরীরে। প্রিয়
দিনলিপি যায় ঘন অন্ধকারে। অজস্র ভাবনার ঢেউ আছড়ে পড়ে
বুকের পাঁজরে ।
এইই সেই প্রেম। প্রাথমিক পাঠ। বকুল বকুল গন্ধ । তারপর অতি
প্রিয় হয় সব সুর ও ছন্দ। সময়ের মায়াকাননে প্রোথিত হয় বীজ।
চারাগাছ নাম নিয়ে ঘটে যায় সবুজ বিপ্লব। ধারাজলে ধুয়ে যায়
নগ্নতা ও পাপ ।
সুতরাং দেখা-অদেখার নাম আকাশ কুসুম কল্পনা ।
মাদুলি
ছোঁ মারে মৃত্যু
যখন তখন সে
আমার প্রিয়জনদের
জীবন ঠোঁটে নিয়ে পালায়
কেন এই অন্যরকম
বোঝে না ঋষি মুনি
তবে হাজির দর্শন
ক্রমে ক্রমে তৈরি হয় দর্শনশাস্ত্র
ছোঁ, একটাই ছোঁ
ঠোকরাবে একদিন
জীবন, প্রশান্তি মহত্ব
অমর হবে মেলবন্ধন
বাকি যা কিছু
কেড়ে নেবে মরণ
কবিতাসমুদ্র
গভীর রাতে স্বপ্নের গভীরে মাতাল সংক্রমণ
সুদৃশ্য ঘরের জানালায়
উঁকি দ্যায় কালি-কলম-মন।
শূন্যে ,মহাশূন্যে ঘোরে ঢেউভর্তি মাথা
নিদ্রাহীন রাতের কলাপে
জাগে ---সমুদ্র, কবিতা সমগ্র ।
মানসলোক
মাথার উপর উদার আকাশ
ধোয়া মুখে কুয়াশা নবান্ন
দখিন দুয়ারে ছিল অক্ষরপরী
শব্দমালায় গাঁথা নদী - সমূদ্র
কবিতাবাগান শূন্য, মালী একা
অজানা পথে বে-লাগাম ছবি
মোনালিসা হাসি ছড়ায় পলি
মনের তরঙ্গে তবু বসন্ত পদাবলী।
উত্তম চক্রবর্তী র দুটি কবিতা
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
যদি এমন হয়
যদি এমন হয় --
আর ভালোবাসবো না তোকে
ভুলে যাবো পথ চাওয়া ক্ষণ ,
ঘরেই তো কেটে যায় সদা
মৃত্যুর তদারকি জীবন।
যদি এমন হয় ---
পাশপাশি ঘরে থাকি তবু
তুই ছাড়া জীবন দহন ,
মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে
দরজায় দাঁড়িয়েছে বাতাস পিওন।
যদি এমন হয় --
মুখোমুখি বসে থাকি সারাটা জীবন
মাস্ক বাঁধা মুখ নিয়ে হৃদয়ের ডর ,
দু- জনার দিনগুলি যাবে এগিয়ে
ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে মৌন প্রহর।
মাড় ভাতের লিহাই
কি কইরে বুঝাই খুড়া তুকে
মাড় ভাতের লিহাই কি
পুরুল্যার রুখা মাটির পিরিত
উটা ছাইড়ত্যে লাইরেছি।
আঁকড়াই ধইরে রাখে বাপ্
হামদের গাঁ-ঘরের মাটি
উটাই ত ব ভুইলত্যে লারি
কি কইরে পূব কে যাবি ?
পূবে গেলে গতর ছাঁচ্যে
টাকা দুটা ন হত্য
লুলহুটাও ইবছরে খুড়া
লোতুন টেনা পাত্য ।
বৌ টাকেও কিন্যে দিথি
ইকটা রঙিন কানি
মাড় ভাতের লিহাই টা কি
উটা ত হামি জানি।
টাঁইড় টিকইরা মানভূম্যা মাটির
টুকুনও রস নাই
কাঁসাইয়ের বুকে ধুঁইড়সা বালি
চাষের ঘরে ছাই।
বস্যে বস্যে ভাঁউর করি
প্যাটের ভাতের লাগ্যে
বৌ লুলহু কে লিহেই খুড়া
যাব পূবে ভাগ্যে।
মাড়ভাতের লিহাই টা ইবার
জিতত্যেই হবেক টুকু
সোব দুঃখু ভুলার লাগ্যে
গিল্যেছি ইকপাট ভাকু।
হামিদুল ইসলামের দুটি কবিতা
🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲
লড়াই
তোমার জন্যে হাত পাতি
বিশ্বস্ততার হাত
প্রাণের গভীরে রাখি ভালোবাসা
তবু বিনিদ্র রাত ।।
ভয়ে ভয়ে ঘুরি আকাশ
হৃদয়ে ব্যবধান
জীবন দাঁড়িয়ে থাকে দূরে
নেই কোনো সমাধান ।।
ইতিহাসের পাতাগুলো ভাঙি
ভাঙি জীবন যুদ্ধের পথ
বিমূর্ত পৃথিবীর হৃদয়ে অসুখ
দ্বার দ্বারে আতঙ্কের বিভৎস রথ ।।
তোমাকে ছাড়া পৃথিবী আঁধার
মিথ্যে জাগ্রত প্রাণ
বেঁচে আছি তবু বেঁচে নেই
জীবন এখন মরণ বাঁচন ।।
আর কতোকাল
এভাবে কেটে যাবে দিন
আসুন বাঁচার জন্যে লড়াই করি
আঁধারে সূর্য ঢাকে তবু ফিরবে সুদিন ।
বনলতা
ণিজন্ত ক্রিয়ায় জ্যামিতির ছন্দ সাজাই
গায়ে মাখি সকালের সূর্য
পুড়ে যায় শরীর
ঘামজলে রক্ত করবীর এককাট্টা সংগ্রাম ।।
বুক পেতে বসে থাকি একাকী
লাল পাহাড়ির দেশ
ধানসিঁড়ি
ভালোবাসা খুবলে খায় কল্পতরু নাম ।।
তুমি সুখ পারাবত
পরের ঘরে আপন বাসা
জলেতে জলচ্ছবি তোমার
তোমার পাঁজরে আঁকড়ে থাকে বাসক পাতা ।।
আকাশের তারারা তোমার বুকে রাখে প্রেম
মনের ইতিহাস ভাঙি
স্বপ্নগুলোতে শৈশব এখনো
তবু মেলে না হিসেব বেসামাল জীবনানন্দের বনলতা ।
রঞ্জন চৌধুরীর দুটি কবিতা
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
একান্তে এবং তারপর
"কবিতায় সবকিছু চলতে পারে। কেবল একটাই শর্ত - - - অবশ্যই উন্নত করতে হবে সাদা পৃষ্ঠাকে।" - - - কবি নিকোলাস গ্যিয়েন।
দেহই আসল কথা
দেহই সব
আশরীর দেহই জানে সুখ দুঃখ হাসি কান্না....
বাউল দেহতত্বের কথা বলে
মুক্ত মনের কথা বলে
প্রেম পিরিতির কথা বলে
প্রেম আসে প্রকৃতিতে
মাঠ ঘাট গ্রাম গঞ্জ শহর বাজার হাসপাতাল....
প্রেম মাধুকরী হয়
বিনিময় হয়
প্রেম বশ করে একান্তে সুরা ও সাকিতে
আমার প্রেম এক শাড়ি ব্লাউজ পরা পাখির সাথে
যে আমাকে দানাপাণি এনে দেয়
চুমু খায়
আমি নিশ্চিত সে আমাকে বিশ্বাস করে
আর চরম বিস্ময়ে লক্ষ্য করে আমার কবিতাকে
আমি লিখি... লিখি... আর লিখে যাই সব চূর্ণ-বিচূর্ণ সাদা পাতা জুড়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাফিত্তি
আর প্রতিটি লেখার শেষে উড়িয়ে দিই তাকে
দু'হাতে তুলে মহাকবিতার দিকে
ত্রি-স্বস্ত্যয়ন
প্রথমাংশ - তৃষ্ণা
শরীর আলগা করে
কখন যে লিখে ফেলেছে, উল্কা
আচ্ছন্ন অন্ধকারে
'আলোটুকু জ্বালো'
তুমি ততক্ষণে
মধু-মাধবের হাওয়ায়
ঢুকে পরেছো অরণ্যে অরণ্যে
উড়ে যাওয়া পতঙ্গের মত
ব্যক্তির কামনা তুচ্ছ করে
অদৃশ্য দ্যুলোকে
দ্বিতীয়াংশ - বাসনা
ছিপ হাতে বসে আছি পুকুরে
তুমি আসবে বলে
যতই বয়স বাড়ুক
তার বদলে এল
কামস্রোতের বিলাস নিয়ে
শীত
বসন্ত
তৃতীয়াংশ - জিজ্ঞাসা
কেমন আছ সান্ধ্য প্রদীপের ঘন্টা
ক্ষত চিহ্ন আঁকা
দেহভাস্করে
রক্তক্ষরণে
ঘন্টা থামাও
ভীষন দুলছো....
আর তোমার নির্গত দু:খগুলো
সংগীত নয়, আর্তনাদ করে প্রবেশ করছে
আমার ভেতরে
মণিকাঞ্চন সিংহের কবিতা
🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱
জ্যান্ত লাশ
বাসি রুটি টা রাস্তায় ছুঁড়তে হবে
আধমরা, আধপচা পেটগুলোর দিকে.....
স্বপ্ন যাদের ঘুমকে চুরি করে ।
কারণ ...
তাদের নিদ্রা কখনো
তন্দ্রা হয়ে ওঠেনি ।
অস্ফুট ইংরেজী বাক্য গুলো
তাদের চাবুক মারে ।
ওহ ! ডিসগাস্টিং
ওরা শত ফুলের দাবিদার
মৃত প্রতিমা নয় ।
জ্যান্ত লাশ গুলো শুধু
ফুটপাতে উঁকি মারে.......
কবি উজ্জয়িনী র কবিতা
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
বইয়ের মতন
তুই ঠিক বইয়ের মতন,
কঠিন মোড়কে যত্নে বাঁধানো
অভিমানে ঘেরা শব্দের আঁখর,
কৌতূহলী আমি,
হতে চাই সেই প্রতিটি শব্দের পাঠক।
তুই ঠিক বইয়ের মতন,
অক্ষরে অক্ষরে অনুভূতি বপন,
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আমার অবসর যাপন,
পাঠক আমি,
সেই বইয়ের পৃষ্ঠায় আটকে গেছে আমার মন।
সেখ সাবির মোল্লার দুটি অনুকবিতা
🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾
১)
চোখের সামনে নগ্ন শতাব্দী পুড়ছে ঘৃণা নিয়ে,
জন অরণ্যে মানুষ অবলুপ্তির পথে।
মানবতার রক্তক্ষরণে ফ্যাকাসে হয়েছে।
রক্ত ভালোবাসি!
২)
পিছনের দিকে ছুটে চলেছি ক্রমাগত
সাপ,ব্যাঙ,মানব-মানবী হাঁটছে পিছন পানে।
আদিম সভ্যতায় ফিরে যেতে চাই সবাই।
অমিয় কুমার চৌধুরির দুটি অণুগল্প
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
যমরাজের স্বস্তি
ঘাটের মরা। যেকোন সময় অক্কা পেতে পারেন! কিন্তু যমরাজ তুলে নিচ্ছেন না! এই সেদিনও হাসপাতাল ঘুরে আবার বাড়ি ফিরে এসেছেন। দু'দিন চরম অস্বস্তিতে ফেলেছিল পরিবারকে। পরিবার বলতে এক নাতি ও এক নাতনি এবং বিপত্নিক ছেলে। কয়েক মাস আগে দুরারোগ্যে মারা গেছে যুবতী ছেলের বউ। শাশুড়ি ও বৌ'মার মধ্যে কোনদিনই বনিবনা ছিল না। বলা যেতে পারে বিয়ের পরদিন থেকেই নতুন বৌকে কোণঠাসা করতে চেয়েছে শাশুড়ি। ছেলে পাড়ারই এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। ফলে উভয়েই উভয়ের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বৌ'য়ের উপর সমানে সত্য-মিথ্যা লাগিয়ে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালিয়ে মনের জ্বালা মিটিয়েছেন শাশুড়ি। পাড়াপড়শিরাও দুই পক্ষ থেকেই মজার মজার গপ্প শুনেছে ও দেখেছে মনের সুখে। বৌ মারা যাবার পর এখন আবার পট পরিবর্তন হয়েছে পরিবারে। তবুও স্বভাব পাল্টায়নি কেউই। এখন ছেলে ও মা'য়ের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের পালা। পাড়াশড়শিরা নতুন এপিশোড পেয়ে একঘেয়েমি থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছে। শেষবার হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে যখন বৃদ্ধা শান্তিদেবী আবার বাড়ি ফিরে এলেন তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে বলছে - যাক্ শান্তিদেবী আবার ফিরে আসায় শো চালু থাকবে!
- সারাজীবন যে মহিলা অশান্তিকে অবলম্বন করে বেঁচে আছেন তাঁর নাম 'শান্তি' কি করে টিকে গেল তা ভাবতে গেলে আশ্চর্য হতে হয়। তাছাড়া, যমরাজ তুলে নিচ্ছেন না কেন? অন্য প্রতিবেশী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল।
- শান্তিদেবীর যা স্বভাবচরিত্র তাতে যমরাজের অরুচি হয়েছে।
- তার হতে পারে। তবে আমার মনে হয়, অরুচি ঠিক নয়। শান্তিদেবী নরকে গেলে যমরাজ ঝামেলায় পড়বেন। শান্তিদেবীকে সামলাতে পারবেন না। যা স্বভাব ...
- যাক্ গে! আপাততঃ যমরাজ স্বস্তিতে থাকতে পারবেন ও নরকের শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে সমর্থ হবেন!
দুই প্রতিবেশী হো হো..... হা হা...... করে উল্লসিত হলেন।
সাহায্য
যতীনবাবু এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিন রকমের ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে। চার ভাইয়ের যৌথ পরিবার। এলাকায় তাঁর চরিত্র সম্পর্কে একেকজনের একেক ধারণা আছে। কেউ বলেন প্রচন্ড কিপটে, কেউ বলেন হিসেবি , কেউ বলেন সুদখোর, কেউ বলেন গরীব দরদী। তাঁর নির্দিষ্ট দিনলিপি আছে। দিনলিপির অন্যতম কাজ - বাজার করা।
তিনি শেষ মূহুর্তে সব্জি বাজারে যান। এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, সকালে প্রথম ঘন্টার বাজার এপিএল (আপার পোভার্টি লাইন) বাবুদের জন্য, এই এক ঘন্টা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকে বাজার। অফিস টাইমের ব্যাপার আছে, ওরা বেশি দাম দিতে রাজি থাকে। পরের এক ঘন্টা বিপিএল ( বিলো পোভার্টি লাইন) মানুষদের জন্য। সব শেষে অন্ত্যোদয় বাজার। গরীব মানুষের বাজার! গরীব কৃষকরা অবশিষ্টাংশ সব্জি বা মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে বসে থাকে। এদের তখন বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে। ফলে স্বল্প দামে বা অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। তারপর অনেক ক্ষেত্রে বিক্রি না হলে গরীব চাষীদের ক্ষতি হয়।
এপর্যন্ত যতীনবাবুর কথা বন্ধুরা মনোযোগ সহকারে শুনেছে। তারপর, মুচকি হেসে চলে গেছে। যে যেরকম পারে ভাবতে থাকে।
আজ পয়লা বৈশাখ, ১৪২৭। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস-এর দাপট চলছে। আমাদের দেশে চলছে লকডাউন প্রক্রিয়া। বাড়িতে বন্দি মানুষজন। তাই রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাজার থেকে দু-একজন করে ফিরছে।
যতীনবাবু তাঁর সময় মেপে নিয়ে অন্ত্যোদয় বাজারে চললেন। কয়েকজন বাজার থেকে ফিরছিল। প্রথমজন মনে মনে বলল, কোটিপতি কিপটে শেষবেলায় সস্তার মাল কিনতে যাচ্ছে। দ্বিতীয়জন ভাবলো, কোটিপতি মানুষ, হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ। অথচ, সঙ্গে চাকর-বাকর নেই। বড্ড হিসেবী। তৃতীয়জন একসময় যতীনবাবুর বাড়িতে কাজ করতো। সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, বাবু ভালো আছেন?
- হ্যাঁ, ভালো আছি। তোর ছেলে কেমন আছে। কলেজে পড়ছে তো। জিজ্ঞেস করলেন যতীনবাবু।
- হ্যাঁ বাবু, কলেজে যাচ্ছে। আপনার অসীম দয়া। বাবু, আপনার বাড়ির কালো ও ধলো গাই দু'টা ভালো আছে?
- হ্যাঁ রে, ভালো আছে। একদিন সময় করে যাস। দেখে আসিস।
যতীনবাবু বাজারে প্রবেশ করতেই গরীব সব্জি বিক্রেতারা উৎফুল্লের সঙ্গে একে একে তাদের অবশিষ্ট অচল সব্জিগুলো ( পোকাধরা বেগুন, বুড়ো ভেন্ডি, প্রভৃতি) তুলে দিচ্ছে তাঁর ব্যাগে। চাহিদানুসারে তাদের টাকা মিটিয়ে দিচ্ছেন যতীনবাবু। কোন দরাদরি নেই।
পরিচিত এক ভদ্রলোক যতীনবাবুর এধরণের বাজার করতে দেখে অবাক হলেন। একটু সাহস সঞ্চয় করে বললেন, আচ্ছা যতীনবাবু, এসব সব্জি কেন কিনছেন পয়সা খরচ করে? এগুলো বাড়িতে নিয়ে গেলে আপনার গিন্নি কিছু বলবে না?
যতীনবাবু মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, না গিন্নি কিছু বলবে না, বরং খুশি হয়।
- কেন? অশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ঐ ভদ্রলোক।
- ওসব হিসাব আপনি বুঝবেন না। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। এই সমাজটাকে আমি খুব ভাল করে চিনি ও জানি।
✍✍✍✍✍✍✍✍
সংকল্প
কিছু একটা করতেই হবে
ইচ্ছার নিবারণ চেয়ে পাই
নদীকাব্য, উত্তরকথা
এনে দ্যায় ভাবনার পয়ার
মিলে যায় অতীত -বর্তমান
প্রবহমান, লগ্ন মিলন
এই যে বুনো হিংসা
এই যে সাপের বেদন
এই যে দখল-বেদখল
এই যে ভাইরাস উসকানি
এই যে বিষণ্ণতার চিতা
রূপকথায়, অমৃতবাণীতে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে হবে রাজভিখারি
সত্যি, কিছুতো করতেই হবে
সংকল্পে শুদ্ধ হবে দুয়ার, চৌকাঠ।
ঠিকানা
তবুও ঠিকানা পেলাম না। প্রতিদিন নতুন গন্ধ সমুদ্র শরীরে। প্রিয়
দিনলিপি যায় ঘন অন্ধকারে। অজস্র ভাবনার ঢেউ আছড়ে পড়ে
বুকের পাঁজরে ।
এইই সেই প্রেম। প্রাথমিক পাঠ। বকুল বকুল গন্ধ । তারপর অতি
প্রিয় হয় সব সুর ও ছন্দ। সময়ের মায়াকাননে প্রোথিত হয় বীজ।
চারাগাছ নাম নিয়ে ঘটে যায় সবুজ বিপ্লব। ধারাজলে ধুয়ে যায়
নগ্নতা ও পাপ ।
সুতরাং দেখা-অদেখার নাম আকাশ কুসুম কল্পনা ।
মাদুলি
ছোঁ মারে মৃত্যু
যখন তখন সে
আমার প্রিয়জনদের
জীবন ঠোঁটে নিয়ে পালায়
কেন এই অন্যরকম
বোঝে না ঋষি মুনি
তবে হাজির দর্শন
ক্রমে ক্রমে তৈরি হয় দর্শনশাস্ত্র
ছোঁ, একটাই ছোঁ
ঠোকরাবে একদিন
জীবন, প্রশান্তি মহত্ব
অমর হবে মেলবন্ধন
বাকি যা কিছু
কেড়ে নেবে মরণ
কবিতাসমুদ্র
গভীর রাতে স্বপ্নের গভীরে মাতাল সংক্রমণ
সুদৃশ্য ঘরের জানালায়
উঁকি দ্যায় কালি-কলম-মন।
শূন্যে ,মহাশূন্যে ঘোরে ঢেউভর্তি মাথা
নিদ্রাহীন রাতের কলাপে
জাগে ---সমুদ্র, কবিতা সমগ্র ।
মানসলোক
মাথার উপর উদার আকাশ
ধোয়া মুখে কুয়াশা নবান্ন
দখিন দুয়ারে ছিল অক্ষরপরী
শব্দমালায় গাঁথা নদী - সমূদ্র
কবিতাবাগান শূন্য, মালী একা
অজানা পথে বে-লাগাম ছবি
মোনালিসা হাসি ছড়ায় পলি
মনের তরঙ্গে তবু বসন্ত পদাবলী।
উত্তম চক্রবর্তী র দুটি কবিতা
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
যদি এমন হয়
যদি এমন হয় --
আর ভালোবাসবো না তোকে
ভুলে যাবো পথ চাওয়া ক্ষণ ,
ঘরেই তো কেটে যায় সদা
মৃত্যুর তদারকি জীবন।
যদি এমন হয় ---
পাশপাশি ঘরে থাকি তবু
তুই ছাড়া জীবন দহন ,
মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে
দরজায় দাঁড়িয়েছে বাতাস পিওন।
যদি এমন হয় --
মুখোমুখি বসে থাকি সারাটা জীবন
মাস্ক বাঁধা মুখ নিয়ে হৃদয়ের ডর ,
দু- জনার দিনগুলি যাবে এগিয়ে
ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে মৌন প্রহর।
মাড় ভাতের লিহাই
কি কইরে বুঝাই খুড়া তুকে
মাড় ভাতের লিহাই কি
পুরুল্যার রুখা মাটির পিরিত
উটা ছাইড়ত্যে লাইরেছি।
আঁকড়াই ধইরে রাখে বাপ্
হামদের গাঁ-ঘরের মাটি
উটাই ত ব ভুইলত্যে লারি
কি কইরে পূব কে যাবি ?
পূবে গেলে গতর ছাঁচ্যে
টাকা দুটা ন হত্য
লুলহুটাও ইবছরে খুড়া
লোতুন টেনা পাত্য ।
বৌ টাকেও কিন্যে দিথি
ইকটা রঙিন কানি
মাড় ভাতের লিহাই টা কি
উটা ত হামি জানি।
টাঁইড় টিকইরা মানভূম্যা মাটির
টুকুনও রস নাই
কাঁসাইয়ের বুকে ধুঁইড়সা বালি
চাষের ঘরে ছাই।
বস্যে বস্যে ভাঁউর করি
প্যাটের ভাতের লাগ্যে
বৌ লুলহু কে লিহেই খুড়া
যাব পূবে ভাগ্যে।
মাড়ভাতের লিহাই টা ইবার
জিতত্যেই হবেক টুকু
সোব দুঃখু ভুলার লাগ্যে
গিল্যেছি ইকপাট ভাকু।
হামিদুল ইসলামের দুটি কবিতা
🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌲
লড়াই
তোমার জন্যে হাত পাতি
বিশ্বস্ততার হাত
প্রাণের গভীরে রাখি ভালোবাসা
তবু বিনিদ্র রাত ।।
ভয়ে ভয়ে ঘুরি আকাশ
হৃদয়ে ব্যবধান
জীবন দাঁড়িয়ে থাকে দূরে
নেই কোনো সমাধান ।।
ইতিহাসের পাতাগুলো ভাঙি
ভাঙি জীবন যুদ্ধের পথ
বিমূর্ত পৃথিবীর হৃদয়ে অসুখ
দ্বার দ্বারে আতঙ্কের বিভৎস রথ ।।
তোমাকে ছাড়া পৃথিবী আঁধার
মিথ্যে জাগ্রত প্রাণ
বেঁচে আছি তবু বেঁচে নেই
জীবন এখন মরণ বাঁচন ।।
আর কতোকাল
এভাবে কেটে যাবে দিন
আসুন বাঁচার জন্যে লড়াই করি
আঁধারে সূর্য ঢাকে তবু ফিরবে সুদিন ।
বনলতা
ণিজন্ত ক্রিয়ায় জ্যামিতির ছন্দ সাজাই
গায়ে মাখি সকালের সূর্য
পুড়ে যায় শরীর
ঘামজলে রক্ত করবীর এককাট্টা সংগ্রাম ।।
বুক পেতে বসে থাকি একাকী
লাল পাহাড়ির দেশ
ধানসিঁড়ি
ভালোবাসা খুবলে খায় কল্পতরু নাম ।।
তুমি সুখ পারাবত
পরের ঘরে আপন বাসা
জলেতে জলচ্ছবি তোমার
তোমার পাঁজরে আঁকড়ে থাকে বাসক পাতা ।।
আকাশের তারারা তোমার বুকে রাখে প্রেম
মনের ইতিহাস ভাঙি
স্বপ্নগুলোতে শৈশব এখনো
তবু মেলে না হিসেব বেসামাল জীবনানন্দের বনলতা ।
রঞ্জন চৌধুরীর দুটি কবিতা
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
একান্তে এবং তারপর
"কবিতায় সবকিছু চলতে পারে। কেবল একটাই শর্ত - - - অবশ্যই উন্নত করতে হবে সাদা পৃষ্ঠাকে।" - - - কবি নিকোলাস গ্যিয়েন।
দেহই আসল কথা
দেহই সব
আশরীর দেহই জানে সুখ দুঃখ হাসি কান্না....
বাউল দেহতত্বের কথা বলে
মুক্ত মনের কথা বলে
প্রেম পিরিতির কথা বলে
প্রেম আসে প্রকৃতিতে
মাঠ ঘাট গ্রাম গঞ্জ শহর বাজার হাসপাতাল....
প্রেম মাধুকরী হয়
বিনিময় হয়
প্রেম বশ করে একান্তে সুরা ও সাকিতে
আমার প্রেম এক শাড়ি ব্লাউজ পরা পাখির সাথে
যে আমাকে দানাপাণি এনে দেয়
চুমু খায়
আমি নিশ্চিত সে আমাকে বিশ্বাস করে
আর চরম বিস্ময়ে লক্ষ্য করে আমার কবিতাকে
আমি লিখি... লিখি... আর লিখে যাই সব চূর্ণ-বিচূর্ণ সাদা পাতা জুড়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাফিত্তি
আর প্রতিটি লেখার শেষে উড়িয়ে দিই তাকে
দু'হাতে তুলে মহাকবিতার দিকে
ত্রি-স্বস্ত্যয়ন
প্রথমাংশ - তৃষ্ণা
শরীর আলগা করে
কখন যে লিখে ফেলেছে, উল্কা
আচ্ছন্ন অন্ধকারে
'আলোটুকু জ্বালো'
তুমি ততক্ষণে
মধু-মাধবের হাওয়ায়
ঢুকে পরেছো অরণ্যে অরণ্যে
উড়ে যাওয়া পতঙ্গের মত
ব্যক্তির কামনা তুচ্ছ করে
অদৃশ্য দ্যুলোকে
দ্বিতীয়াংশ - বাসনা
ছিপ হাতে বসে আছি পুকুরে
তুমি আসবে বলে
যতই বয়স বাড়ুক
তার বদলে এল
কামস্রোতের বিলাস নিয়ে
শীত
বসন্ত
তৃতীয়াংশ - জিজ্ঞাসা
কেমন আছ সান্ধ্য প্রদীপের ঘন্টা
ক্ষত চিহ্ন আঁকা
দেহভাস্করে
রক্তক্ষরণে
ঘন্টা থামাও
ভীষন দুলছো....
আর তোমার নির্গত দু:খগুলো
সংগীত নয়, আর্তনাদ করে প্রবেশ করছে
আমার ভেতরে
মণিকাঞ্চন সিংহের কবিতা
🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱
জ্যান্ত লাশ
বাসি রুটি টা রাস্তায় ছুঁড়তে হবে
আধমরা, আধপচা পেটগুলোর দিকে.....
স্বপ্ন যাদের ঘুমকে চুরি করে ।
কারণ ...
তাদের নিদ্রা কখনো
তন্দ্রা হয়ে ওঠেনি ।
অস্ফুট ইংরেজী বাক্য গুলো
তাদের চাবুক মারে ।
ওহ ! ডিসগাস্টিং
ওরা শত ফুলের দাবিদার
মৃত প্রতিমা নয় ।
জ্যান্ত লাশ গুলো শুধু
ফুটপাতে উঁকি মারে.......
কবি উজ্জয়িনী র কবিতা
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
বইয়ের মতন
তুই ঠিক বইয়ের মতন,
কঠিন মোড়কে যত্নে বাঁধানো
অভিমানে ঘেরা শব্দের আঁখর,
কৌতূহলী আমি,
হতে চাই সেই প্রতিটি শব্দের পাঠক।
তুই ঠিক বইয়ের মতন,
অক্ষরে অক্ষরে অনুভূতি বপন,
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আমার অবসর যাপন,
পাঠক আমি,
সেই বইয়ের পৃষ্ঠায় আটকে গেছে আমার মন।
সেখ সাবির মোল্লার দুটি অনুকবিতা
🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾
১)
চোখের সামনে নগ্ন শতাব্দী পুড়ছে ঘৃণা নিয়ে,
জন অরণ্যে মানুষ অবলুপ্তির পথে।
মানবতার রক্তক্ষরণে ফ্যাকাসে হয়েছে।
রক্ত ভালোবাসি!
২)
পিছনের দিকে ছুটে চলেছি ক্রমাগত
সাপ,ব্যাঙ,মানব-মানবী হাঁটছে পিছন পানে।
আদিম সভ্যতায় ফিরে যেতে চাই সবাই।
অমিয় কুমার চৌধুরির দুটি অণুগল্প
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
যমরাজের স্বস্তি
ঘাটের মরা। যেকোন সময় অক্কা পেতে পারেন! কিন্তু যমরাজ তুলে নিচ্ছেন না! এই সেদিনও হাসপাতাল ঘুরে আবার বাড়ি ফিরে এসেছেন। দু'দিন চরম অস্বস্তিতে ফেলেছিল পরিবারকে। পরিবার বলতে এক নাতি ও এক নাতনি এবং বিপত্নিক ছেলে। কয়েক মাস আগে দুরারোগ্যে মারা গেছে যুবতী ছেলের বউ। শাশুড়ি ও বৌ'মার মধ্যে কোনদিনই বনিবনা ছিল না। বলা যেতে পারে বিয়ের পরদিন থেকেই নতুন বৌকে কোণঠাসা করতে চেয়েছে শাশুড়ি। ছেলে পাড়ারই এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। ফলে উভয়েই উভয়ের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বৌ'য়ের উপর সমানে সত্য-মিথ্যা লাগিয়ে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালিয়ে মনের জ্বালা মিটিয়েছেন শাশুড়ি। পাড়াপড়শিরাও দুই পক্ষ থেকেই মজার মজার গপ্প শুনেছে ও দেখেছে মনের সুখে। বৌ মারা যাবার পর এখন আবার পট পরিবর্তন হয়েছে পরিবারে। তবুও স্বভাব পাল্টায়নি কেউই। এখন ছেলে ও মা'য়ের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের পালা। পাড়াশড়শিরা নতুন এপিশোড পেয়ে একঘেয়েমি থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছে। শেষবার হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে যখন বৃদ্ধা শান্তিদেবী আবার বাড়ি ফিরে এলেন তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে বলছে - যাক্ শান্তিদেবী আবার ফিরে আসায় শো চালু থাকবে!
- সারাজীবন যে মহিলা অশান্তিকে অবলম্বন করে বেঁচে আছেন তাঁর নাম 'শান্তি' কি করে টিকে গেল তা ভাবতে গেলে আশ্চর্য হতে হয়। তাছাড়া, যমরাজ তুলে নিচ্ছেন না কেন? অন্য প্রতিবেশী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল।
- শান্তিদেবীর যা স্বভাবচরিত্র তাতে যমরাজের অরুচি হয়েছে।
- তার হতে পারে। তবে আমার মনে হয়, অরুচি ঠিক নয়। শান্তিদেবী নরকে গেলে যমরাজ ঝামেলায় পড়বেন। শান্তিদেবীকে সামলাতে পারবেন না। যা স্বভাব ...
- যাক্ গে! আপাততঃ যমরাজ স্বস্তিতে থাকতে পারবেন ও নরকের শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে সমর্থ হবেন!
দুই প্রতিবেশী হো হো..... হা হা...... করে উল্লসিত হলেন।
সাহায্য
যতীনবাবু এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিন রকমের ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে। চার ভাইয়ের যৌথ পরিবার। এলাকায় তাঁর চরিত্র সম্পর্কে একেকজনের একেক ধারণা আছে। কেউ বলেন প্রচন্ড কিপটে, কেউ বলেন হিসেবি , কেউ বলেন সুদখোর, কেউ বলেন গরীব দরদী। তাঁর নির্দিষ্ট দিনলিপি আছে। দিনলিপির অন্যতম কাজ - বাজার করা।
তিনি শেষ মূহুর্তে সব্জি বাজারে যান। এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, সকালে প্রথম ঘন্টার বাজার এপিএল (আপার পোভার্টি লাইন) বাবুদের জন্য, এই এক ঘন্টা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকে বাজার। অফিস টাইমের ব্যাপার আছে, ওরা বেশি দাম দিতে রাজি থাকে। পরের এক ঘন্টা বিপিএল ( বিলো পোভার্টি লাইন) মানুষদের জন্য। সব শেষে অন্ত্যোদয় বাজার। গরীব মানুষের বাজার! গরীব কৃষকরা অবশিষ্টাংশ সব্জি বা মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে বসে থাকে। এদের তখন বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে। ফলে স্বল্প দামে বা অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। তারপর অনেক ক্ষেত্রে বিক্রি না হলে গরীব চাষীদের ক্ষতি হয়।
এপর্যন্ত যতীনবাবুর কথা বন্ধুরা মনোযোগ সহকারে শুনেছে। তারপর, মুচকি হেসে চলে গেছে। যে যেরকম পারে ভাবতে থাকে।
আজ পয়লা বৈশাখ, ১৪২৭। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস-এর দাপট চলছে। আমাদের দেশে চলছে লকডাউন প্রক্রিয়া। বাড়িতে বন্দি মানুষজন। তাই রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাজার থেকে দু-একজন করে ফিরছে।
যতীনবাবু তাঁর সময় মেপে নিয়ে অন্ত্যোদয় বাজারে চললেন। কয়েকজন বাজার থেকে ফিরছিল। প্রথমজন মনে মনে বলল, কোটিপতি কিপটে শেষবেলায় সস্তার মাল কিনতে যাচ্ছে। দ্বিতীয়জন ভাবলো, কোটিপতি মানুষ, হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ। অথচ, সঙ্গে চাকর-বাকর নেই। বড্ড হিসেবী। তৃতীয়জন একসময় যতীনবাবুর বাড়িতে কাজ করতো। সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, বাবু ভালো আছেন?
- হ্যাঁ, ভালো আছি। তোর ছেলে কেমন আছে। কলেজে পড়ছে তো। জিজ্ঞেস করলেন যতীনবাবু।
- হ্যাঁ বাবু, কলেজে যাচ্ছে। আপনার অসীম দয়া। বাবু, আপনার বাড়ির কালো ও ধলো গাই দু'টা ভালো আছে?
- হ্যাঁ রে, ভালো আছে। একদিন সময় করে যাস। দেখে আসিস।
যতীনবাবু বাজারে প্রবেশ করতেই গরীব সব্জি বিক্রেতারা উৎফুল্লের সঙ্গে একে একে তাদের অবশিষ্ট অচল সব্জিগুলো ( পোকাধরা বেগুন, বুড়ো ভেন্ডি, প্রভৃতি) তুলে দিচ্ছে তাঁর ব্যাগে। চাহিদানুসারে তাদের টাকা মিটিয়ে দিচ্ছেন যতীনবাবু। কোন দরাদরি নেই।
পরিচিত এক ভদ্রলোক যতীনবাবুর এধরণের বাজার করতে দেখে অবাক হলেন। একটু সাহস সঞ্চয় করে বললেন, আচ্ছা যতীনবাবু, এসব সব্জি কেন কিনছেন পয়সা খরচ করে? এগুলো বাড়িতে নিয়ে গেলে আপনার গিন্নি কিছু বলবে না?
যতীনবাবু মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, না গিন্নি কিছু বলবে না, বরং খুশি হয়।
- কেন? অশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ঐ ভদ্রলোক।
- ওসব হিসাব আপনি বুঝবেন না। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। এই সমাজটাকে আমি খুব ভাল করে চিনি ও জানি।
No comments:
Post a Comment