PravatiPatrika

Thursday, May 28, 2020

কিশোর উপন্যাস



ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

 সোহান ও তার বন্ধুরা 
পার্থসারথি
পর্ব-১
স্কুলের নাম তাড়াইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ।এ স্কুলের আছে দুটো মাঠ ।একটি ক্লাসরুমগুলোর সামনে এবং অন্যটি অফিসের পেছনে।পেছনের মাঠটি তুলনামূলক বেশ বড়।ছোট মাঠটির পূব্ পাশে আছে বেশ বড় আকৃতির শহীদ মিনার।তার পাশেই ছাত্রাবাস আর পুকুর। ছোট মাঠের চারদিকে কাঁঠাল , মেহগনি, অর্জুন , ইউক্যালিপ্টাস, আমড়া, কৃষ্ণচূড়া আর নারকেল গাছের সমাহার। পুকুরের চারপাশে রয়েছে কয়েকটি কড়ইগাছ ।আর বাজার থেকে যে রাস্তাটা স্কুলে পৌঁছেছে, তার দু'পাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছের অপূর্ব সারি। পুকুরের পূবপাশটা ফাঁকা। বর্ষাকালে পানিতে থই থই করে । সব মিলিয়ে স্কুলটা দেখতে বেশ মনোরম । প্রথম দেখাতেই ভালোলাগার মতো একটি স্কুল।প্রতিবছর রেজাল্টও ভালো হয়।
স্কুলের ক্লাস শুরুর আগে ছেলেরা মাঠে হই-হুল্লোড় করে বেড়ায়। প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে চারদিক। ক্লাশ শুরুর ঘণ্টা পড়তেই ফাঁকা হয়ে গেল মাঠটা। সবাই যার যার ক্লাশরুমে চলে এল।
কয়েকজন স্যার একসঙ্গে হেঁটে আসছেন। সাথে একজন অচেনা লোক এবং ইয়া মোটা একটি বাচ্চা ছেলে। ক্লাশের ছেলেরা তাকিয়ে আছে স্যাররা কোন ক্লাশে ঢুকে। 
সব স্যার একসঙ্গে অষ্টম শ্রেণী কক্ষে ঢুকল।ক্লাশে এসেই হেড স্যার ছেলেটিকে দেখিয়ে বললেন – ‰ও হচ্ছে তোমাদের নতুন বন্ধু। আজই ভর্তি হয়েছে। ক্লাশের সবাই চুপচাপ শুনছে হেড স্যারের কথা।ছেলেটা লজ্জায় যেন একেবারে আড়ষ্ট হয়ে আছে। মাথা নীচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।'
হেড স্যার জানেন যে এ' ক্লাশেই স্কুলের সব দুষ্টের শিরোমণিরা আছে। তাই সাবধান করে দিয়ে বললেন- কেউ কিন্তু ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। এই কথা বলে পুরো ক্লাশটায় রাঙা চোখ জোড়া একবার ঘুরালেন।
স্যারের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই অচেনা লোকটি বললেন- আমি ওর বাবা, ওকে তোমরা বন্ধু হিসেবে নিও। এই বলে ভদ্রলোক প্রথম বেঞ্চে বসা নাউড়ার দিকে তাকালেন এবং বললেন- তোমরা ওকে দেখে রেখো।
নাউড়া উত্তরে বলে- ঠিক আছে স্যার। আমরা বন্ধু হিসেবেই চলব।
হেড স্যার আর কিছুই বলেন নি। শুধু যাবার সময় চোখ জোড়া গোল গোল করে আসফিকে নীরবে শাসিয়ে গেলেন। চোখ জোড়া যেন পিটপিট করে বলে গেলেন- সাবধান! ওকে কেউ কিছু বলবে না। কিছু বললে পিঠের চামড়া থাকবে না।ক্লাশ টিচার বাদে অন্য সবাই চলে গেলেন।
ক্লাশ শেষে স্যার চলে যেতেই সবাই এসে ভীড় জমালো নতুন ছাত্র সোহানের কাছে। সবাই একসঙ্গে এটা-ওটা জিজ্ঞ্যেস করা শুরু করেছে। সোহান কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। সবাই কথা বলছে কিন্তু কে কি বলছে তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত যত কথা হয়েছে তার মধ্যে ওর নামটি ছাড়া আর তেমন কিছুই বুঝা গেল না। আসফির দলবল নিয়ে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আসফিই নতুন ছাত্র সোহানকে বেশি জিজ্ঞাসা করছে। নাউড়া, সুজন আর কাহার খুব বেশি একটা পাত্তা পাচ্ছে না আসফির জন্য।
একটু বলে রাখা ভালো, ক্লাসে দুটি গ্রুপ আছে ।একটি হল চিনুর নেতৃত্বে নাউড়া, সুজন, কাহার ও অন্যান্য আরও কয়েকজন। আর আসফির নেতৃত্বে শিবলী, কাজল ওরা। চিনুকে সবাই চিনুদা বলে ডাকে। কারণ সে আরও সিনিয়র ছিল।পরপর দুবার ড্রপ দিয়েছে। তবে সবাই তুই বলেই সম্বোধন করে।
চিনুদা আজ ক্লাসে নেই।নাউড়া, সুজন, কাহার চিনুদার বাড়িতে গিয়েছিল।গিয়ে জানতে পারল চিনুদা মামাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে।দুদিন থাকবে। সে থাকলে আসফির দল এতবড় সাহস দেখাতো না।চিনুদাকে ক্লাসের প্রায় সবাই পছন্দ করে।কারণ চিনুদার গ্রুপ অযথা কারও পেছনে লাগে না। আসফিটা একটু পাঁজি ধরণের।এই যে,সোহানকে জ্বালাচ্ছে।
কাহার নাউড়াকে খোঁচা দিয়ে বলল - “এই নাউড়া, আরও কাছে যা।“এই বলে কাহার নাউড়াকে ধাক্কা দিল। নাউড়াও চেষ্টা করতে লাগল যাতে সোহানের একদম কাছে যেতে পারে।সুজন পেছনে দাঁড়িয়ে গোঁড়ালিতে ভর দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।
এত ভিড়, ঠেলাঠেলি আর চেঁচামেচিতে সোহান বিরক্ত হয়ে ওঠল। সে ঘেমে নেয়ে একাকার । এমনিতেই মোটা মানুষ, তার ওপর সবাই যেভাবে ঘেরাও দিয়েছে তাতে বাতাস যাবার কোন উপায় নেই।শেষ পর্যন্ত কথা বলা বন্ধ করে দিল। আসফি পীড়াপীড়ি করেই যাচ্ছে। কিন্তু সোহান কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না।মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। আসফি ধমক দিয়ে বলল -“এই মটকু ! কথা বলছিস না কেন?“- এই বলে কনুই দিয়ে সোহানকে গুঁতা দিল।
সোহান রাগে ক্ষোভে বেঞ্চে হেড ডাউন করে দু'হাতে মাথা পেঁচিয়ে রাখল।
তবুও আসফি ও তার দলবল সোহানকে রেহাই দিচ্ছে না।নাউড়া কাহারের দিকে তাকাল। কাহার রাগে দু'হাত কচলাতে শুরু করল।সুজনও যেন কিছু একটা বলতে চাচ্ছে । কিন্তু আসফির ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ একমাত্র চিনুদা ছাড়া ক্লাশের আর কেউ আসফির সাথে কোনভাবেই ঝগড়ায় পারে না।
নাউড়া সান্ত্বনার স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল- ‰এখন আমরা কিছুই বলব না। পরে কড়ায়-গণ্ডায় হিসেব নেবো।ছেলেটাকে একা পেয়ে কি না করল!' নাউড়ার কথাতেই বুঝা গেল সেও ভীষণ রকম রেগে আছে।
স্যার ক্লাশে ঢুকতেই চোখের নিমিষে জটলা পরিষ্কার হয়ে গেল। সবাই যার যার জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল। স্যার চেয়ারটা টেনে বসেই চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছেন। সোহান যেখানে বসেছে সেখানে গিয়ে স্যারের চোখ জোড়া হঠাৎ স্থির হল। সোহানকে ডেকে স্যার বললেন- ‰ কী ব্যাপার, তুমি পেছনে বসেছো কেন? সামনে এসে বসো।'
নাউড়া, সুজন আর কাহার যে বেঞ্চে বসেছে সেখানে এসে সোহান বসল। কাহারের পাশে বসতেই সে একটু জায়গা ছেড়ে চেপে বসল। নাউড়া এবং সুজন খুব খুশী হল। এটাই যেন ওরা মনে-প্রাণে চেয়েছিল। সবাই এখন ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েরাও থেকে থেকে তাকাচ্ছে। সবাই ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছে দেখে সোহান লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল কিছুটা।
নাউড়া মনে মনে ভাবল-  আমার মতো দু'জন হলে তবে সোহানের সমান সাইজ হতে পারব। শরীরের কোন অংশে যেন কোন কমতি নেই। তবে বেশ সুদর্শন বটে। চুলগুলো কুঁচকুঁচে কালো। চোখে চশমা লাগানো। পরনে জিন্সের প্যান্ট, পায়ে সুন্দর কেডস আর গায়ে হালকা আকাশী রঙের শার্ট। সোহানকে বেশ লাগছে দেখতে।
সবাই ভেবেছিল সোহান আসফির বিরুদ্ধে নালিশ করবে। কিন্তু করে নি।
স্যার ক্লাশ শেষে চলে যেতেই আসফি রীতিমতো ছুটে এল সোহানের কাছে। পেছনে পেছনে শিবলী আর কাজল।
চলবে...


No comments:

Post a Comment