PravatiPatrika

Thursday, June 11, 2020

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস


                   ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

                     সোহান ও তার বন্ধুরা
                          পার্থসারথি

                             পর্ব-৭

চিনুদা শান্ত কন্ঠে বলে- 'স্থানটা এখনও ঠিক হয় নি। তবে বেশি দূর কোথাও যাব না। নৌকা ভ্রমণে যাবো এটা ঠিক। কারণ ওতে খরচ অনেক কম হবে।পাশাপাশি আনন্দ হবে বহু গুণ।'
'নৌকা! এই গ্রীষ্মকালে? বলিস কী! নৌকা কি মাথায় করে নিয়ে যাবো নাকি?'- কাহার যেন আকাশ থেকে পড়ল।
'আপনিতো এক কাঠি বেশি বুঝেন! তাই তো এই অবস্থা। আমরা এখন যাচ্ছি না। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে তারপর যাবো।সুতরাং বুঝতেই পারছেন!'-এই বলে চিনুদা একটু নড়ে চড়ে বসল।
কাহার নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে চুপ করে বসে রইল। সোহান এবার ভয় মেশানো কন্ঠে প্র্শ্ন করল- 'নৌকায় যাব!' - সোহানের চোখে-মুখে যেন রাজ্যের ভয় এসে ভর করল।
অসুবিধা কী? নৌকাতে গেলেই তো পিকনিকে ভীষণ মজা হবে। তাই না-রে নাউড়া?-সমর্থনের আশায় চিনুদা নাউড়াকে জিজ্ঞ্যেস করে।
নাউড়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
সোহান খুব কষ্ট নিয়ে বলে- 'কিন্তু...কিন্তু...আমি যে সাঁতার জানি না!'-সোহান কথাটা এমন ভঙ্গীতে বলল, শোনার পর সবার মন একটু খারাপ হয়ে গেল। কথাটা শোনার পর কারও মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত নেই। চিনুদা অবাক হয়ে কতক্ষণ সোহানের দিকে তাকিয়ে রইল। সবার দৃষ্টি যেন সোহানকে শুষে নিচ্ছে। আর সোহান ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে।
অনেক ভেবে-চিন্তে চিনুদা বলল- 'ঠিক আছে তোর ব্যবস্থা আমি করব। চিন্তার কোন কারণ নেই।'
নাউড়া এবার কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল- 'কীভাবে হবে রে চিনুদা?'
একটু পরেই জানতে পারবি।– চিনুদা নাউড়ার কথা তেমন একটা পাত্তা দিল না।এইভাবে কথা বলাতে নাউড়ার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। নাউড়া আর কোন কথা বাড়ায় নি। অন্যদিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
এবার চিনুদা ওর কথা বলা শুরু করল- 'তাহলে কারও কোন আপত্তি নেই তো?'
সবাই সম্মতি জানাল। সবার সম্মতি পেয়ে চিনুদা আবার শুরু করল- 'তাহলে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার পরে আমরা যাচ্ছি। তারিখটা পরে ঠিক করা যাবে। আমরা এখানে আছি মোট ছয়জন। আপাতত প্ল্যান করেছি গ্রামের দিকে যাব।তবে কোন গ্রামে তা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করবো।এখন আমাদের কাজ হল অর্থ সংগ্রহ করা আর সোহানকে সাঁতার শেখানো।'- আঙুলে চুলের ভাঁজ ঠিক করতে করতে চিনুদা বলল- 'প্রথম কাজ হলো সবাইকে বিশ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে।'
কাহার না-বলে পারল না- 'বিশ টাকা করে আবার পিকনিক হবে নাকি?'
চিনুদা চোখ জোড়া গোল গোল করে বলল- 'দ্যাখ কাহার, কথায় কথায় অনর্থক বাগড়া দিস না। আগে পুরো কথা শুনবি তারপর যদি পারিস পরামর্শ দিবি।কথার মাঝখানে কথা বলবি না।'
আচ্ছা ঠিক আছে, বল।– কাহার চুপ হয়ে গেল।
এক এক করে চিনুদা সবাইকে জিজ্ঞ্যেস করে মতামত নিল- 'এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ টাকা করে জমা দিবে।সবাই রাজী।'
'ভেরী গুড।'- এই বলে চিনুদা আঙুল ঘষে তুড়ি দিল। তারপর আবার বলল- 'আর সোহানকে আমরা ক'দিনের মধ্যেই সাঁতার শিখিয়ে নেব।'
সাঁতারের কথা শুনে সবাই বেশ খুশী হলো। সোহানের মনটাও বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা কৌতূহল নাউড়ার মনের মধ্যে এখনও কুট কুট করছে। জিজ্ঞ্যেস করতে ইচ্ছে করছে ; বিশ টাকা করে না-হয় দিলাম কিন্তু তারপর ? কথাটা নাউড়া মনের মধ্যে আর চেপে রাখতে পারল না। চিনুদাকে আবার জিজ্ঞাসা করল- 'আচ্ছা চিনুদা, বিশ টাকা করে দিলাম। কিন্তু ওতে হবে?'
চিনুদা এবার শুরু করল- 'বিশ টাকা করে দিলে ছয়জনের মোট হবে একশত বিশ টাকা।'- এবার সবাই একটু নড়ে চড়ে বসল। সোহান গাছের ডালটা ভালো করে জড়িয়ে ধরে তারপর একটু নড়ে চড়ে বসল।
'একশত বিশ টাকার মুরগীর বাচ্চা কিনবো। বাচ্চাগুলো ছোট ছোট দেখে কিনবো। আনুমানিক কয়টা কেনা যাবে?' - এই বলে চিনুদা নিজেই হিসাব করতে লাগল। সাথে সাথে অন্য সবাই।হিসাব শেষে চিনুদাই প্রথমে বলল-'পনের থেকে বিশ টাকা গুটের ( প্রতিটি ) কিনলে ছয় থেকে আটটা বাচ্চা কেনা যাবে।'
উত্তরে সবাই প্রায় একসঙ্গে বলে ওঠল- 'হ্যাঁ, তা অবশ্য কেনা যাবে।'
'পরীক্ষার এখনও মাস দু'এক বাকী আছে।যদি আমরা এখন মুরগীর বাচ্চা কিনে রেখে দিই তাহলে এর মধ্যে বাচ্চাগুলো অনেকটা বড় হবে।তারপর একেকটা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা করে বিক্রি করতে পারবো। পিকনিকের জন্য বড় সাইজের গোটা তিনেক রেখে দিবো। আর বাকীগুলি বাজারে বিক্রি করে দিবো, ব্যস।তাতে অনেক টাকা আসবে। তারপরও যদি টান পড়ে তবে সবাই যার যার মা'র কাছ থেকে চেয়ে এক পোয়া করে চাউল চেয়ে আনবো। তবে আশা করি আমাদের মুরগী বিক্রির টাকাতেই হয়ে যাবে।'–এই বলে চিনুদা সবার দিকে তাকাল। কথাগুলো শুনে সবার মনে আনন্দ ফুটে ওঠল। একেই বলে চিনুদা। সত্যি ওর তুলনা হয় না। বেশ ভালো এবং সহজ পদ্ধতিটিই বের করেছে।
কাহার প্রশ্ন করল- 'সবই বেশ ঠিক আছে। কিন্তু মুরগীগুলো কার কাছে থাকবে?'
ওটা তোদের একজন দায়িত্ব নে। যার বাড়ীতে সুবিধা আছে রাখবি। এটা কোন ভাবনার বিষয় হলো!- বেশ খোশ মেজাজেই কথাগুলো চিনুদা বলল।
সবাই একটু আমতা আমতা করছিল। আসলে এই কষ্টের এবং কঠিন দায়িত্বটুকু কেউ নিতে চাচ্ছে না। কারণ আসফি যদি জানতে পারে তবে যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে। তার চেয়ে বরং চিনুদার বাড়ীতেই থাকুক। আসফি জানলেও ওখানে হাত দিতে সাহস পাবে না।– সবাই এ'মতে একাত্বতা প্রকাশ করল। এটা-ওটা সবিস্তারে আলোচনার পর স্থির হলো ; চিনুদার বাড়ীতেই মুরগীর বাচ্চা রাখা হবে।
চিনুদা এবার সোহানকে বলে- 'ও...হ্যাঁ সোহান, আগামীকাল থেকে তুই প্রতিদিন আমাদের সাথে খেলাধূলা করবি। কোনদিন বাদ দিতে পারবি না। কয়েকদিন খেলাধূলা করে শরীরটা একটু হালকা করবি। তারপর সাঁতার শেখার পালা শুরু হবে।আচ্ছা সোহান, তুই এত বড় হয়ে গেলি, সাঁতার শিখলি না কেন?
উত্তরের স্বপক্ষে সোহানের বক্তব্য - 'সোহানের আব্বু একজন সরকারী চাকুরীজীবি। তিনি বিভিন্ন থানায় চাকুরী করেছেন। তাড়াইল বদলী হয়ে আসার আগে ইটনায় ছিলেন। তিনি ছেলে-মেয়েদের কখনও পুকুরে বা নদীতে নামতে দেন না। পাছে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় এই ভয়ে। তাছাড়া পুকুর বা নদীর পানিতে প্রচুর ময়লা। সুতরাং টিউবওয়েল বা টেপের পানিতে স্নান সারতে হয়। সোহান এটুকু বয়স পর্যন্ত পুকুরে বা নদীতে নামে নি।তাই সাঁতার শেখা হয়ে ওঠে নি।'
সোহানের কথা চিনুদা এতক্ষণ বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। কথা শেষ হতেই চিনুদা বলল- 'যাক তাহলে, এবার যখন সুযোগটা এসে গেছে সাঁতারটা শিখে নে। জীবনে কোনদিন পানিতে সমস্যা হবে না।' শেষে আবার সবার উদ্দ্যেশে বলল- 'আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, আজ সোমবার।শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই সবাই বিশ টাকা করে আমার কাছে জমা দিবি।শনিবার হাট বার। ওইদিন মুরগীর বাচ্চা কিনে ফেলব। সপ্তাহের প্রথম হাটবার তো ভালো দামে কিনতে পারবো।কথা শেষে চিনুদা শরীরের আড়মোড়া ভেঙে বসল। সবাই বুঝতে পেরেছে যে, চিনুদা আর বসবে না। তাছাড়া সন্ধ্যাও প্রায় হয়ে এসেছে।মিনিট না পেরোতেই চিনুদা বলল- 'চল, এবার উঠা যাক।'-এই বলে চিনুদা বাঁদরের মতো এক লাফে গাছ থেকে নেমে পড়ল। এক এক করে লাফিয়ে সবাই নেমে পড়ল। শুধু সোহান এখনও নামতে পারে নি। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।নামতে দেরী হওয়াতে চিনুদা মন্তব্য করল- 'কিছুদিন খেলাধূলা প্র্যাকটিস করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সোহান গাছ থেকে নামার পর সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে বাড়ীর দিকে পা বাড়াল। চিনুদা পথ চলতে চলতেই সবাইকে বুদ্ধি এঁটে দিল- 'শোন, বিশ টাকা কিন্তু একসাথে পাওয়া খুব কষ্টদায়ক।'
সবার দৃষ্টি চিনুদার দিকে। কিন্তু চিনুদা নেতার মতো বলতেই থাকে- 'প্রতিদিন টিফিনের পয়সা থেকে জমিয়ে নিবি। দেখবি খুব সহজ হয়ে যাবে।'- কথাটা সবার খুব পছন্দ হয়েছে। একসাথে হাততালি দিয়ে বলল- 'দারুণ আইডিয়া চিনুদা। ম্যানেজ হয়ে যাবে।'-সাথে সাথে সোহানও কন্ঠ মেলালো। ঐদিন আর সময় নষ্ট না করে সবাই যার যার বাড়ীর দিকে পা বাড়াল।
সোহান বেশ প্রফুল্ল মনেই বাসায় ফিরে এল। হাত-মুখ ধুয়ে যথাসময়ে পড়ার টেবিলে। পড়া শেষে খাবার টেবিলে। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু বিছানায় আসতেই রাজ্যের চিন্তা ওর মাথায় কিলবিল করছে। এক এক করে মনে মনে সব কিছুরই সমাধান বের করেছে কিন্তু সাঁতার একমাত্র বাঁধা। মা-বাবা কি রাজী হবেন পিকনিকে যেতে দিতে? মহা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল সোহান।
পরের দিন চিনুদা এক তুড়িতেই সমস্যার সমাধান বের করে দিল- 'এখন তুই পিকনিক, চাঁদার টাকা, সাঁতার এসব ব্যপারে তোর মা-বাবার সাথে কোনরকম কথা বলবি না। তোকে প্রথমে সাঁতার শিখাবো। তারপর আমরা সবাই তোর মা-বাবার সাথে দেখা করবো। যদি বিশ্বাস না করেন বা সাহস না পান তবে তোর সাঁতার শেখানোটার কথা আমরা উনাদের বলবো। তবু যদি বিশ্বাস না করেন তবে প্র্যাকটিক্যালি সাঁতার কাটিয়ে দেখাবো, ব্যস। তখন তোর মা-বাবা তোকে পিকনিকে যেতে দিতে ভয় পাবেন না।'
পিকনিকের সদস্য আগে ছিল ছয় জন। আর এখন সাত জন। নতুন সদস্য সরোজ। কারণ পিকনিকের স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে সরোজদের গ্রামের বাগান বাড়ি। গ্রামের নাম রাহেলা। তাড়াইল থেকে মাইল পাঁচেক দূর হবে। এর চেয়ে দূরে যাওয়ার আর কোন দরকার নেই। ওখানেই দাঁড় বেয়ে যেতে এক ঘন্টার বেশি সময় লাগবে। তাছাড়া গ্রামটি নাকি দেখতে বেশ সুন্দর এবং মনোরম। নানারকম গাছপালায় সুশোভিত আর পরিপাটি গ্রাম। সরোজের খুব ইচ্ছে ওদের বাগান বাড়িতে যেন পিকনিকটা হয়।বাগান বাড়িটা বিরাট বড়। ওখানে পিকনিকটা বেশ মজার হবে। এই কারণে সরোজকেও পিকনিকের লিস্টে যোগ করা হয়েছে। সরোজ অবশ্য চিনুদার গ্রুপের সাথে সবসময় না ঘুরলেও প্রায়ই এসে মিশে। আসফিদের ধারে কাছেও সরোজ কখনও যায় না। তাই সরোজের ব্যাপারে কেউ কোনরকম আপত্তি করে নি।
মিটিং-এর পর থেকেই প্রতিদিন বিকাল বেলা সোহান সবার সাথে মাঠে খেলাধূলা করে। ফুটবল খেলে, গোল্লাছুট খেলে অথবা দাঁড়িয়াবান্দা অথবা অন্য যে কোন খেলা।কিন্তু কতক্ষণ দৌঁড়ালেই হাঁফাতে থাকে সোহান। প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট লেগেছে। এখন আর তেমন কষ্ট হয় না। সাঁতার শেখার পালা পরের সপ্তাহ শুরু হবে।
মাটির ব্যাংকটাতে কত টাকা হয়েছে দেখা দরকার। কাটি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পয়সাগুলো বের করলো নাউড়া। সে অবশ্য আগে থেকেই এই ব্যাংকে পয়সা জমাচ্ছে। এটা ওর অভ্যাস। যখনই কোন বিশেষ প্রয়োজন এভাবে পয়সাগুলো বের করে। সবগুলো পয়সা গুণল।আঠারো টাকা। আরও দু'টাকা দরকার।আগামীকাল বৃহঃস্পতিবার টিফিন আওয়ার নেই। পরশুদিন শুক্রবার। আর ওই দিনই পিকনিকের টাকা জমা দিতে হবে। এখন উপায়! নাউড়া মনে মনে ভাবল মা'র কাছ থেকে চেয়ে নেবে। মাকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই দিবে।তেমন একটা চিন্তা নেই। পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েই পয়সাগুলো টেবিলের ড্রয়ারে গুছিয়ে রেখে দিল। মা এলেন কী একটা কাজে। কাজ শেষে আবার চলে গেলেন।
পরেরদিন বিকেলে খেলাধূলা শেষে বাড়ীতে এসে নাউড়া জানতে পেল ছোট মামা এসেছে। নাউড়ার সে কী আনন্দ! এখন সে বেশ খোশ মেজাজেই আছে। খবরটা জানার পর থেকেই হাঁটতে গিয়েও যেন লাফিয়ে চলছে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস যেন ওকে ভাসিয়ে নিয়ে চলছে।একটু পর পরই শিস দিচ্ছে আর আঙুলে আঙুল ঘষে তুড়ি বাজাচ্ছে। নাউড়া নিজের রুমে চলে এল। পড়ার টেবিলে বসতে বসতেই মনে মনে ঠিক করল বাকী দু'টাকা মামার কাছ থেকেই বাগাতে হবে। নো চিন্তা এন্ড ডু ফূর্তি। ছোট ভাই প্রীতমকে ডেকে নাউড়া জিজ্ঞ্যেস করল- 'মামা কোথায় গেছে রে?'
দাদার সাথে বাইরে গেছে সেই বিকেলে।–এই বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে এক দৌঁড়ে চলে গেল প্রীতম।
রাত আটটা নাগাদ মামা ফিরে এল। পেছন পেছন নাউড়ার দাদা। দাদাকে মামার সাথে এত রাতে ফিরতে দেখে নাউড়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ নাউড়া যদি সন্ধ্যার পরে বাড়ীতে ফিরে তাহলে অনেক শাস্তি পেতে হয়। তাছাড়াও জবাবদিহি করতে হয়, কেন এত দেরী হল, ছোট মানুষের এমন কী কাজ থাকতে পারে যার জন্য সন্ধ্যার পরও বাইরে থাকতে হয়? মোট কথা যেখানেই থাকো, সন্ধ্যার আগেই বাড়ী ফিরতে হবে। একদিন নাউড়া সন্ধ্যার পর বাড়ী ফিরেছিল। তখন মা ওকে ভীষণ শাস্তি দিয়েছিল। অথচ দাদা এত রাত করে ফিরলেও কেউ কিছু বলে না। দাদাকে নিশ্চয়ই মা-বাবা দু'জনই একটু বেশি ভালোবাসেন। নাউড়ার মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে যায়। তারপর নাউড়া নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে যে, দাদা বড় বলেই হয়তো কিছু বলে না। বিশেষ করে মেট্রিক পাশ করার পর বাবা দাদাকে আর কখনও ধমকায় নি বা তেমন কিছু বলে নি। দাদা এখন পুরোপুরি মুক্ত বিহঙ্গ। এটা অবশ্য ঠিক দাদা কোনদিন এমন কাজ করে নি যা'তে মা-বাবাকে কারও কথা কোনদিন শুনতে হয়েছে। দাদাকে দেখে নাউড়ারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যেতে। কিন্তু আরও দুটো বৎসর বাকী। ভাবতে ভাবতে নাউড়া অন্য চিন্তায় ডুবে গেল। এখন মামার কথা ভাবছে। মামাকে যেভাবেই হোক ম্যানেজ করতে হবে।   চলবে...

No comments:

Post a Comment