প্রিয় দেশ -১
শুভজিৎ সার
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ,
পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গন্তব্য
ধুলো মাখা ক্যানভাসে আবেগের বিকেল গুলো
গড়িয়ে আজ সন্ধ্যা নেমেছে ।
স্যোসাল সাইডে কাটছে দিন
কাটছে পড়ন্ত বিকেলের মুহূর্ত গুলো
মৃত অব্যয়ে ফেরার কোনো চোখ নেই আজ
ভরসা দেওয়ালে আটকে আছে না ফেরার দেশ ।
ভেজামাটির গন্ধ এখন কম
পলাশ রাঙা রঙিন ছদ্মবেশ এড়িয়ে যাচ্ছে মৃত চোখ
মনখারাপ এ বন্দি ফেসবুক
আর্তনাদেও সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা রোজ ।
স্বার্থ নিয়ে চলছে দিন গুলো
রূপের প্রতি টান অনেক বেশী ,
মানসিকতায় বন্দি থাকা নারী
হেটে চলে একা একা রোজ ।
ইভটিজিংয় ধর্ষন পনপ্রথা
নারী নির্যাতন এ আটকে যাচ্ছে আবছা চোখ
দাবী টা শুধু শরীর এর উপর ক্রমাগত
থমকে যাচ্ছে নিঝুম রাত্রি গুলো ।
ক্ষুধার জ্বালা গ্রাস করছে পেটে
অন্ধ হয়ে দেখছি শুনছি আর বোবা হয়ে গেছি
এই মৃত সভ্যতায় লুকিয়ে আছে শিকার
হিংস্র আমরা হচ্ছি রোজ কতো ।
ধারাবাহিক নেপোদাদুর গপ্পো
রাজকুমার ঘোষ
অষ্টম পর্ব
নেপোর ভয়ে রোমি
পানুখুড়োর অট্টালিকাসম বাড়িতে নতুন বৌকে নিয়ে বেশ সুখেই থাকতে লাগলো নেপোদাদু। তারপর বাড়ির বিশাল ছাদে প্রতিদিন সকালে উঠে নেপোদাদুর শরীর চর্চার ধুম দেখে আশেপাশের প্রতিবেশীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো। নেপো গিন্নী ছাদে আসতেন জামা-কাপড় শুকোতে দিতে, ঠিক সেই সময় পাশের বাড়ির ছোকরা রোমি নেপো গিন্নীকে দেখে নানারকম ইশারা করতো, কু-ইঙ্গিত করতো। নেপোদাদু সব কিছুই খেয়াল রেখেছেন। নেপো খোঁজ খবর রাখতে শুরু করলেন রোমি সম্বন্ধে। রোমি একটা বখাটে ছোকরা। সেভাবে কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই। যত আড্ডা পাড়ার বৌদিদের সাথে। একদিন নেপোদাদু রোমির এইসব কান্ড দেখে রেগে গেলেন, ছাদ থেকেই চেঁচিয়ে বললেন,
- এই হারামজাদা, পুঁতে ফেলবো তোকে আমি, জানিস।
রোমি ভয়ে পালিয়ে যায় ছাদ থেকে। এরপর রোমি যখনই নেপোদাদুকে দেখে, সেখান থেকে চটজলদি পালিয়ে যায়, নেপোদাদুকে যেন ভুত দেখার মত দশা হয় রোমির। কিন্তু নেপোদাদু তক্কে তক্কে থাকে কিভাবে রোমিকে জব্দ করা যায়। প্ল্যান করতে থাকেন। নেপোদাদু তার প্রভাব খাটিয়ে কিছু ছেলে ছোকরার সাথে যোগাযোগ করলেন। রোমির সব কীর্তি জেনে নেবার চেষ্টা করলেন। রোমি কিছুই করে না, বাবার দোকান আছে। ও বাড়িতে বসে থাকে। দুপুর হলেই কোনো বৌদি মহলে যায়, সেখানে তাদের সাথে পরচর্চা পরনিন্দার আসরে বসে।
একদিন পানুখুড়োর বাড়ির সামনের রাস্তায় পাড়ার ছেলেরা একটা রক্ষাকালীর পুজোর আয়োজন করে। নেপোদাদু সেই ছোকরাদের সাথে মিশে যায়। তাদের উৎসাহ দেয় পুজোর ব্যাপারে। তারাও নেপোর ন্যাওটা হয়ে যায়। তাদের হাত করার জন্য পানুখুড়োকে পটিয়ে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদার ব্যবস্থা করে দেয়। মাথায় থাকে ঐ হারামজাদা রোমিকে কিভাবে বিপাকে ফেলা যায়। রোমি যে সকল বৌদি গ্রুপের সাথে মেলামেশা করতো, তাদেরও সেই পুজোয় আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। একটু রাতে মাইকে হিন্দি গান চালিয়ে নাচের আসর বসে। সকল বৌদিকে ঐ নাচে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই রোমিকেও নাচতে দেখা যায়। সুযোগ বুঝে নেপোদাদুর ঠিক করা কিছু ছোকরাকেও সেই নাচে পাঠানো হয়। তারা ইচ্ছা করেই নাচের ভীড়ে মিশে যায় এবং রোমির কাছে যে বৌদি নাচছিল, তার পাছায় জোর করে চিমটি কেটে দেয়। এইভাবে বার তিনেক করার পর সেই বৌদি ভীষন রেগে যায়। আর চেল্লামেল্লি আরম্ভ করে। বলতে থাকে –
- জানোয়ারের দল, বাড়িতে মা-বোন নেই। এতো অসভ্য, ছিঃ
ছোকরাদের মধ্যেই একজন জিজ্ঞেস করলো,
- কি হলো বৌদি, আপনি চিৎকার করছেন কেন? হলো কি আপনার?
- চুপ একটা কথাও বলবে না। কি ভেবেছো তোমরা?
- দেখুন আমি বুঝতে পেরেছি আপনার ব্যাপারটা। বলুন, আপনার সাথে কে নাচছিল? আমি দেখেছি কে এই অসভ্যতা করেছে আপনার সাথে।
- রোমি, তুই?
এবারে মাঠে নামলো নেপোদাদু। রোমির কানটা টেনে ধরে জিজ্ঞেস করল –
- কি, হারামজাদা... এবারে তুই কি বলবি বল?
- আরে আমি কি করলাম?
- কি আবার করবি? ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে তোর মা’এর বয়সী মহিলাদের দিকে তুই কি সব ইশারা করিস, আমি কি দেখিনি বুঝেছিস। এখানেও অসভতা করছিস।
এক থাপ্পড় কষিয়ে দিলো নেপোদাদু রোমিকে। তারপর বৌদিদের মাঝে ঠেলে দিলেন।
- নিন, আপনাদের পেয়ারের রোমিকে কি করবেন দেখুন।
এরপর বৌদির দলের সবাই তাদের পায়ের জুতো খুলে রোমিকে উত্তম মধ্যম দিলো বেশ করে। তার খানিকবাদে সেখান থেকে সবাই চলে গেলো।
নেপোদাদু এবার রোমির কাছে এসে বললেন,
- তোদের মত পুচকে ছেলেদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়, আমার জানা আছে। দেখলি তো? ভুল জায়গায় চোখ দিলে কি হয়! চল ফোট এখান থেকে।
এরপর নেপোদাদু ওখানে উপস্থিত ছোকরাদের নাচতে বলে নিজেও তাদের সাথে নাচতে লাগলেন।
চলবে...
শুন্য থেকে শুরু
বাপন দেব লাড়ু
একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে
উঠোন জুড়ে রেখে গেছে তার স্মৃতি,
আকাশে এখন মেঘ-পিয়নের ব্যস্ততা,
টুপ-টুপ করে জল ঝরছে খড় ছাউনি থেকে,
পুরোনো খাতা, পুরনো কলম, বিষন্ন মাদুরে একা
পাতা জুড়ে একরাশ আঁকি বুঁকি ,
ঘর মেলাতে মেলাতে ভরে ওঠে লেখচিত্র
আগামীর উৎকন্ঠায়,
মনে মনে অতীত স্মৃতির 'ফ্ল্যাশব্যাক'।
আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করে সব কিছু।
কোনো এক না পেয়েছির দেশের থেকে,
যেমন করে শুরু হয়,
শুন্য থেকে ধারাপাত।
ভ্রমণ: "বাঁকুড়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত স্থান ভ্রমণ"
---টুম্পা মুখার্জী
চতুর্থ দিন
(বিষ্ণুপুর ভ্রমণের বাকি অংশ ও জয়পুর ভ্রমণ)
মৃন্ময়ী মন্দির দর্শন শেষে আমরা গেলাম জোড়বাংলা মন্দিরে। বিষ্ণুপুরে একটা সুবিধা হল , মন্দিরগুলি একে অপরের কাছাকাছি, তাই পায়ে হেঁটেই কাছে পিঠে সব বিখ্যাত মন্দির গুলির দর্শন সারা যায়। আমরা গাড়ি এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে পায়ে হেঁটে সব দর্শন করেছি।
যাইহোক, এবার আসি জোড়বাংলা মন্দির সম্পর্কে--
৫.
জোড়বাংলা মন্দির
মল্লরাজ প্রথম রঘুনাথ সিংহ ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন ।পরস্পর সংযুক্ত দুটি দোচালা কুটিরের সমণ্বয়ে গঠিত এবং সংযুক্ত অংশের মধ্যস্থলে একটি চারচালা শিখর বিদ্যমান, তাই মন্দিরটির নাম জোড়বাংলা মন্দির। বাংলার টেরাকোটার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এই মন্দিরটি ।
৬.
রাধেশ্যাম মন্দির
মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ মাকড়া পাথরের এই মন্দির ১৭৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।মন্দিরের শিখরটি গম্বুজাকৃতি। দেওয়ালে ফুলকারি ও জ্যামিতিক ভাস্কর্য, মহাভারত ও পুরাণ কাহিনীর স্থাপত্য লক্ষণীয়।মন্দিরে রাধেশ্যাম, নিতাই-গৌর ও জগন্নাথের মূর্তি পূজিত হয় এখনো।মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে ইটের তৈরি সুন্দর নহবতখানা আছে।মন্দিরের পূর্ব দিকে ওড়িশার স্থাপত্য অনুসারে সুন্দর তুলসী মঞ্চ রয়েছে। এছাড়া রান্নাঘর ও নাটমঞ্চও দৃষ্টিগোচর হল।
৭.
বড় পাথর দরজা
মাকড়া পাথরের তৈরি খিলান সজ্জিত এই প্রবেশ পথটি বড় পাথর দরজা বলে পরিচিত। দ্বিতল বিশিষ্ট এই দরজার দুই দিকে তীরন্দাজী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের অবস্থানের জায়গা রয়েছে । সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে মল্লরাজ বীরসিংহ এটি তৈরি করেছিলেন।
৮.
লালবাঁধ
সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রধান বাঁধটিসহ বাকি ছয়টি বাঁধ খনন করেন । কথিত আছে দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহের আমলে লালবাঈকে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রধান নর্তকী হিসেবে। রাজা তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন, তাদের এক পুত্রসন্তানও হয়। বাঈজির ছেলে সিংহাসনে বসবে এটা রাণীসহ প্রজারা মেনে নিতে পারেনি। তাই ষড়যন্ত্র করে লালবাঈ ও তার ছেলেকে এই বাঁধে নৌকা ডুবিয়ে মেরে ফেলা হয়। সেই থেকে এর নাম লাল বাঁধ। বাঁধ সংলগ্ন লালবাঈয়ের অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ আজও যেন নিষ্ঠুর ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
৯.
দলমাদল কামান
' দলমর্দ্দন' শব্দ থেকে অপভ্রংশ হয়ে ' দলমাদল' শব্দটি এসেছে।কথিত আছে স্বয়ং মদনমোহন এই কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে মারাঠা দস্যু ভাস্কর রাওয়েরনেতৃত্বাধীন বিশাল বর্গী বাহিনীকে বিতাড়িত করেন ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দে।এর ওজন তিনশত মণ।
১০.
ছিন্নমস্তা মন্দির
ছিন্নমস্তা মায়ের মূর্তিটি একটি গোটা শ্বেত পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। মেদিনীপুর নিবাসী স্বর্গীয় কৃষ্ণচন্দ্র গুঁই বামাখ্যাপা, ভৈরবীমাতা ও রাধারানী দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৭৩ সালের২১ জুলাই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কয়েকটি স্থান দর্শন করে আমরা ফেরার পথ ধরি।
পথে জয়পুরের বনলতা রিসর্টের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য থামি। খেতে খেতে ছানার বাবা ডিসিশন নেন আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে আগমীকাল সকালে জয়পুরের জঙ্গল সাফারি করে বাড়ি ফিরবেন। আমরাও পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো সবাই রাজি হয়ে যাই। কিন্তু রিসর্টের ভিতরে সব রুম বুক হয়ে আছে। একে পূজার ছুটি, তার উপর বনলতার সুনাম--- বাঙালি সদলবলে হামলে পড়েছে। শেষে অনেক অপেক্ষার পর মূল রিসর্টের গেটের কাছে পাশাপাশি দুটি রুম, প্রত্যেকটি ১৩০০/- তে পাওয়া যায়। ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, আধুনিক সুযোগসুবিধা সহ রুম। সামনে বারান্দায় কাঠের কারুকাজ করা ডাইনিং টেবিল চেয়ার । আমাদের ঘরের অদূরে বিশাল জলাধারে হাঁসের জলকেলী আর মাছেদের নিশ্চিত সন্তরণ। আর প্রত্যেকটি জায়গায় দোলনার ব্যবস্থা । চোখ জুড়ানো ফুল গাছের বাহার, অসংখ্য ফলের গাছ ,রিসর্টের ভিতরে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত সব্জি, এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গরুর খাটাল থেকে দুধসহ দুগ্ধজাত দ্রব্য, কোয়েল, টার্কি, এমু,দেশি মুরগি , তেলের ঘানি, ঢেঁকি , গুড় সমস্ত কিছুই এদের রিসর্টের সুবিশাল পরিসরে উৎপাদিত। রিসর্টের চারিপাশ ঘুরতে ঘুরতে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে মনে বলে উঠি, "আহা কী দেখিলাম!"
পঞ্চম দিন
পরদিন সকালে উঠেই হোটেল থেকে গাইড নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম জয়পুর ফরেস্টে। পথে একটা মৃত চন্দ্রবোড়া সাপ দেখলাম। গাইড বলল সাপটি বাচ্চা। ফণাবিহীন চন্দ্রবোড়া সাপ মারাত্মক বিষাক্ত। কামড়ালে মৃত্যু অবধারিত। কোনও সময় নাকি তিনি দেন না। জঙ্গলে স্থানে স্থানে উইপোকার বিশাল বিশাল ঢিবি ।গাইডের কথায় এই ঢিবি গুলোই চন্দ্রবোড়ার আবাসস্থল। এমনিতেই সাপে আমার প্রচণ্ড ভয়, তার উপর বিষাক্ত চন্দ্রবোড়ার কুখ্যাত কাহিনী।, গাড়ির থেকে নামতেই ভয় পাচ্ছি। কিন্তু জয়পুর জঙ্গলের মধ্যে যে অপার বিস্ময় অপেক্ষা করছে তা আমাদের ধারণাতীত ছিল। একটা সুবিশাল চাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করালেন আমাদের গাইড বাবু।বললেন এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর এয়ারপোর্ট এর মতো ছিল। এই সিমেন্টের চাতাল বা রানওয়ে সেই সময়ে নির্মিত। সমস্ত জঙ্গলে ২২ টির মতো (সঠিক সংখ্যা কিনা, কনফিউশন আছে ) এমন রান ওয়ে বা হেলিপ্যাড রয়েছে। জাপানি শত্রু পক্ষের দৃষ্টি থেকে আড়াল রাখতেই সুচতুর ব্রিটিশরা এই ঘন জঙ্গলে তাদের বিমান বাহিনীর আস্তানা গড়ে তুলেছিল। সত্যি দেখে অবাক আর মোহিত হতে হয়। কারণ প্রায় একশো বছর আগে নির্মিত এই রানওয়ের এক জায়গায়ও আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি, নতুনের মতোই অক্ষত অবিকৃত রয়ে গেছে। শুধু গাছগাছালি পরম মমতায় এর উপর ছায়া বিস্তার করে চলেছে।
জঙ্গলের ভিতরে একজায়গায় হঠাৎ করে প্রচন্ড মাছি আমাদের ঘিরে ধরল। গাইড বলল, পাশেই জৈবপ্রযুক্তিতে চাষ হয় বলে এত মাছি। গিয়ে দেখি কয়েকজন স্থানীয় মহিলা পুরুষ জমিতে কাজ করছে। তাদের আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ হতে হয়। এই জঙ্গলে হরিণ হাতির দেখা পাওয়া যায়। তবে শীতকালে নাকি তাদের দর্শনের সৌভাগ্য হয়। আমার ছানা এমন সময় 'হলিন হলিন' বলে চেঁচিয়ে উঠলো, তাকিয়ে দেখি ছাগলের বাচ্চা। আর ভাইপো হাতি হাতি বলে চীৎকার করে উঠল, তাকিয়ে দেখি গাছের আবডালে বিশাল বিশাল কালোকালো চেহারার আভাস... আমরা সবাই উত্তেজিত... হঠাৎ হেটহেট শব্দ আর দুরদার আওয়াজ, না হাতি না.... বিশাল বিশাল কাড়া। ঝকঝকে নীলাকাশ আর মিঠেল হাওয়া গায়ে মেখে ফেরার পথ ধরলাম। বাঁদিকে নতুন ওয়াচ টাওয়ার দেখলাম, যেটা তখনও চালু হয়নি। কিছু দূরে মল্লরাজাদের আমলে তৈরি আগাছায় ঘেরা ওয়াচ টাওয়ারের ভগ্নস্তূপ চোখে পড়ল ।
রিসর্টে ফিরে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট করে একরাশ তৃপ্তি আর মন খারাপ নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। কেবলি মনে হতে লাগল, "এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো 'তোমরা'(তুমি ) বলতো " ... সত্যি চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে " সকল দেশের রাণী সে যে , আমার বঙ্গভূমি" ।
(সমাপ্ত )
নববধূর স্মৃতিচারনা
আনোয়ার হোসাইন
ওগো ....., শুনেছ কি প্রিয়া
দশ বৎসর ছাড়িয়েছি যে মোরা
কখনো কি ভেবেছিলে তুমি
অচেনা নরের সাথে রইবে তুমি নারী
জানি তুমি জানো , তবুও একথা
বলবে না যে আমাকে কখনও।
জানি লজ্জাবতী লতা যে তুমি
তবু উন্মুক্ত করো নিজ দেহখানি
সুখী রাখতে স্বজন স্বামী ।
আমার তো সব কথায়
তোমার আছে জানা
তবুও আমি ছুতে পারিনি
তোমার মনের কোনা ।
নতুন মেরুন বেনারসীর প্রতি খাজে
অঙ্কিত ছিল যত স্বপ্ন তার ভাজে ভাজে
দর্শনে কাপিয়া উঠিল আমার নাড়ি
হ্নদয়ে বইছিল আমফান তুফান তখনি।
পতির ঘরে যখন এসে হাজির হলে
পায়ে মল্ ঝুম ঝুম হাতে চুড়ির ঝনঝন
নাকে টানা নথ শিরে রানীর মুকুট
কানেতে ঝুলছিল ঝুমকো কর্নদুল
সীতা হার গলাতে জ্যোৎস্না আলোতে
চকচক করছিল বক্ষের উর্ধ্বেতে ।
অজানা অচেনা তুমি নারী
রইলাম বাসরঘরে তুমি আর আমি
সুগন্ধি মাখা নববধূ তুমি
সুবাসিত করেছ বাকী জীবনের
নবীন দাম্পত্যের নবগৃহখানি।
যে রাতের আকাশ তারা ঝিলমিল
সে রাতের আকাশ জ্যোৎস্না ভরা নীল
পুবের জানালা ভেদিয়া আলো
স্পর্শে বক্ষদেশ দৃষ্টতায় লোমকেশ
সে রাত্রির চন্দ্রের মুখের মুচকি হাসি
হৃদয় করেছিল উৎফুল্ল।
যে রাত ছিল অনিদ্রা যাপনের
প্রথম রাত জীবনের।
স্পর্শ
বলাই মন্ডল
হৃদয় গহ্বরে ইচ্ছুক খেলে
তোমা স্পর্শ সইবে বলে!
সান্ধ্য রবি অতল গহ্বরে
মগ্ন ওষ্ঠ সিক্ত চড়ে।
তৃপ্তি শাঁসে ক্ষিপ্র বেশে
ধ্বজ চঞ্চল আধাঁর দেশে..।
ডিঙা মাঝী চতুর হয়ে
হাল টানে তৃষ্ণা পেয়ে..।
অন্ত চলে মধুর অনন্তে
ভিন্ন সুখে অভিন্ন গন্ত্যে।
কিছুটা প্রকাশিত,কিছুটা অপ্রকাশিত
-------সৌমেন সরকার
একটা ভোরের চৌকাঠে পেরিয়ে
মুঠো মুঠো আবীর শূন্যে ছুঁড়েছিলে যেদিন
স্তব্ধ আমি শূন্য বুকে
ডান হাত চেপে বসেছিলাম...
একটা আকাশ নামের সামিয়ানার বুকে
খিলখিল হাসিটুকু তোমার ছড়িয়েছিলে যেদিন
বাকরুদ্ধ আমি আবাক চোখে
দু হাত চেপে বসেছিলাম...
একটা পাহাড় প্রমাণ নিস্তব্ধতার বুক চিরে
ঝরণার কলতানের মত কথা বলেছিলে যেদিন
শ্বাসরুদ্ধ আমার বিহ্বল কানদুটি
দু হাত দিয়ে চেপে ধরেছিলাম...
একটা সাগরসম তরঙ্গের বুকে
গভীর চক্রবাকের মত সুর তুলেছিলে যেদিন
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
হৃদস্পন্দন জরিপে ব্যস্ত হয়েছিলাম...
একটা পৃথিবীর মত প্রেমের গভীরে
ভালোবাসার অঙ্কুরোদ্গম করেছিলে যেদিন
যদি ভালোবেসে ফেলি এই ভয়ে
ভীত সন্ত্রস্ত দুরুদুরু বক্ষে আমি চলে গিয়েছিলাম...
পারুল ( ২ )
বদরুদ্দোজা শেখু
পারুলের মা টুকাই মেঝেন, বাপ হ্বপন মাঝি
পেট চালানোর জন্য খাটে বেজায় গতরবাজি ,
দিদিমা তার বুড়ী এখন থাকে বাড়ি ব'সে
চোখ দুটোতে ঝাপসা দ্যাখে ছানি পড়ার দোষে ।
পারুললতা দিম্মার কাছে দিনের বেলা থাকে
বাসি খাবার খায়দায় আর দ্যাখে সে দিম্মাকে,
মালুর যখন খিদে পায় সে পায়ে পা লাগায়
কালু কিন্তু এধার ওধার খাবার খুঁজতে যায়,
উঠানে ব'সে পুতুল নিয়ে পারুল খ্যালে রোজ
মাটির পুতুল কাঠের পুতুল রোজ বিয়ে রোজ ভোজ,
পাশের বাড়ির জুঁই চামেলি তারাও সঙ্গ দ্যায়
এমন ক'রেই পার হয় তাদের শিশুকাল অধ্যায়। ।
পারুল (৩)
পারুল এখন একটু বড়ো, ইস্কুলেতে যাবে
ওখানেই সে দুপুর বেলা মিড-ডে মিল খাবে,
গাঁওবুঢ়া তাই ব'লে দিয়েছে-- কামাই চলবে লাই,
পঢ়ালিখা শিখতে হবেক --- সরকার এটাই চায়।
মুদের বিটি বই পঢ়বেক , লিখা শিখবেক বটে--
টুকাই হ্বপন খুশী খুশী মানত দিবেক মঠে।
জুঁই চামেলি পারুললতা একসাথে ইস্কুলে
যেতে লাগলো, টুকাই হ্বপন ভর্তি ক'রে দিলে,
মালু কালুর মনটা খারাপ,ওরা দিম্মার
পাশে
পায়ের কাছেই ব'সে থাকে, কখন পারুল আসে!
অস্থায়ী
রুপম
আমরা পরিযায়ী
মাটি আমাদের জন্য ক্ষণস্থায়ী ,
আমরা পেটের দায়ে পাল্টে ফেলি সুখ
ভাতের খোঁজে ভুলে যাই অসুখ ।
আমরা পরিযায়ী
ওরা ভাবে শরীর আমাদের শুধু কাজের জন্য
কিংবা কাজের শেষে দু মুঠো ভাত এর জন্য ,
কোথাও আবার খাবার শেষে ডাক পরে মোদের
এঁটো থালা কিংবা বাটির জন্য ।
আমরা পরিযায়ী
আমাদের বাড়ি ই ই ই ই ই...
সেতো প্রায় অন্য দেশ ,
সেথায় দিনের শেষে সবার সাথে গল্পে কাটে বেশ
সেথায় ধানের শীষে মায়ের ছোঁয়ার শিশির লেগে রয়
সেথায় কথার মাঝে ভেসে ওঠে শুধু সহজ সরল মুখ ,
ক্যামনে যাবো সেতো দীর্ঘ মাইল দূর !
আমরা পরিযায়ী
আশা আমাদের কারো প্রতি আসে না ,
তাই গল্পে আমাদের গা ও ভাসে না ,
লক্ষ- কোটি টাকা !
ওসব বোকা বাক্সে দেখে স্বপ্ন আসে বেশ
কিন্তু রাতের শেষে নিজের পায়েই নিজেদের রেশ ।
রক্ত ঝরছে ! সে আর নতুন কি ,
পা ফুলছে , খিদের জ্বালায় নাড়ি ছিরছে !
আমরা যে অস্থায়ী ! দুঃখ মোদের চিরস্থায়ী
বাড়ির উঠোন ছাড়া আমাদের তরে অন্য ভালোবাসা যে ক্ষণস্থায়ী।।
‘আত্মা রেখে ধর্ম’
নির্মাল্য পান্ডে
‘আত্মা রেখে ধর্ম’, এই প্রবচনটি প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষভাবে যখন পূজোর সময় উপবাস থাকা যায়।কিন্তু কেন এর প্রচলন হল-তার কি বিশ্লেষণ করেছি? আত্মা কি ও কোথা থেকে এসেছে, তার ব্যাখ্যা অনেক, তবে সারবস্তু এইযে,-আত্মা অবিনশ্বর,নিরাকার ও আমাদের দেহেই তার অবস্থান। আমাদের যে প্রাণবায়ু, তাকেই আত্মা বলা যেতে পারে।কারন, যে মুহূর্তে আমাদের দেহের হৃদপিন্ড তার চালিকা শক্তি নষ্ট করবে-সেই মুহূর্তে প্রাণবায়ু দেহ ছেড়ে তার নিজধামে চলে যাবে।নিরাকার আত্মার আধার স্বরূপ দেহ, শবরূপে পড়ে থাকবে। এখন প্রশ্ন, সে কোথায় যায়, কেনই বা আসে, কিভাবে এর সৃষ্টি? এক কথায় বলা সম্ভব নয়, তবে আমাদের জানতে হবে, সৃষ্টি রহস্য। এই চরাচরের সৃষ্টিকর্তা অজানা নিরাকার শক্তি যার থেকেই সৃষ্টি সকল জীবজগৎ, উদ্ভিদ ও পার্থিব বস্তু-যাকে কেউ দেখতে পায় না- এক অতিসূক্ষ্ম আলোক বিন্দু- A POINT OF LIGHT-একেই বলা হয় ঈশ্বর, খোদা, আল্লাহ্। যে যেমন ভাবে সেই শক্তিকে ডাকবে।এই শক্তিই হচ্ছে পরমাত্মা-নিরাকার, অবিনাশী, অপার জ্ঞানের সাগর, বলের সাগর,তিনিই এক ও অদ্বীতিয়ম- এর কোন বিকল্প নেই।এই পরমাত্মা থেকেই সৃষ্টি অজস্র আত্মা, যেমন আকাশে আছে অগুনিত নক্ষত্র, নীহারিকা।ক্রম অনুসারে এই আত্মা দেবতাত্মাতে ও জীবাত্মাতে পরিণত হয়।পরমাত্মা যেমন অবিনাশী- দেবতাত্মা, জীবাত্মাও তেমনি অবিনশ্বর।যেহেতু আত্মা নিরাকার, তাই চাই তার আধার-জীবের দেহই সেই আধার।কাজেই, প্রতি জীব এক একটা আত্মা ও এসছে সেই পরমাত্মা থেকে, কাজেই তিনি আমাদের পরম ও প্রিয় পিতা।যেহেতু জীবাত্মার সৃষ্টি হয় লৌকিকভাবে, তাই যখন মাতৃগর্ভে ভ্রূণ বড় হতে থাকে, তখনি প্রবেশ করে এই নিরাকার শক্তি। এটাই হচ্ছে প্রাণবায়ু বা আত্মা।কাজেই আমরা অর্থাৎ জীব সকলেই এক ও অভিন্ন- কর্ম অনুযায়ী ক্রমেই শ্রেণীর বিভাজন ঘটেছে। আমি ধর্ম প্রসঙ্গে যাচ্ছি না- শুধু বলতে চাই, নিজের দেহের আত্মাকে কষ্ট দিলে, পরমাত্মাকে বা ঈশ্বরকে কষ্ট দেওয়া হবে।
আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, দেহকে, মনকে সুস্থ, সবল ও শান্ত রাখা।চরিত্র গঠন করা। কাম, ক্রোধ, লোভ,মোহ, অহং নামক রিপুকে দমন করা, যার জন্য চাই ‘রাজযোগ’ শিক্ষা, চাই ধ্যান করা, চাই সৎভাবে চলার অভ্যাস করা, আমিষ ভোজন ত্যাগ করা যাতে হিংসে শরীরে প্রবেশ না করে- তবেই আসবে বিশ্বশান্তি।
"ঘুম বিভ্রাট "
---মুহাম্মদ ইসমাইল
উল্টো যখন বইছে হাওয়া
দিনের শেষে রাত্রিবেলা
রবির তাপে শরীর পুড়ে
ঘুমের সাথে যুদ্ধ খেলা ।
ঘামের স্রোতে ভেসে ভেসে
ডুব দিয়ে যায় স্বপ্নগুলো
হাঁসফাঁসিয়ে উঠে কেঁপে
রক্ত শিরা অকাল ম'লো।
ভোরের দিকে শান্ত হাওয়ায়
চোখ জুড়িয়ে ঘুমের কাঁথা
সকাল সকাল চেঁচিয়ে বলে
ওঠো এবার ধরে মাথা।
এই করে এই গরমকালে
দিন কাটে না, ভীষণ জ্বালা
কাজের সময় ক্লান্তি বড়ো
মনটা খুঁজে শীতল শালা।
"ফেরা "
হামিদুল ইসলাম।
প্রয়োজনে ফিরে আসি তোমার কাছে প্রতিদিন
সকালে বাসি ভাতের গন্ধ
কুয়াশার চাদরে হামাগুড়ি দেয় সূর্য
এলোমেলো তোমার কেশ
আটকে থাকি বিছানায় ।।
চাঁদের আমেজ নিই প্রভাতী রাত
ফিরে আসে কবিতারা
ছন্দ ভাঙি পরস্পর
পেয়ে যাই অনন্ত ভালোবাসার রুপালী পাহাড়
সময়ের ক্যানভাস ।।
সাজানো দেয়াল ভাঙে প্রভাতী আকাশ
শব্দহীন শ্বাস
বসন্তের বাড়িময় পাখিদের কূজন
অলস সুখ হেঁটে হেঁটে আসে নরম আলোয় ।।
আমরা ফিরে আসি শালবাগানের রাস্তায় ।।
আবার বসন্ত
তন্ময় চক্রবর্তী
বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনীর অপচয়
মধ্যমা ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে
বহুদিন বিস্মিত হয়নি চোখ
চোখের অসুখ ধরা পরে গেছে!
বসন্তে কোকিল নিরুদ্দেশ
পলাশ রক্ষিত শান্তিনিকেতনে
বাতাসে খোয়াইয়ের কান্না
আজ বসন্তের ভিন্ন আগমনে!
বহুদিন বিস্মিত হয়নি চোখ
কয়েকটা পতঙ্গের বহ্নিদশা
ভৈরবী সুরে মশার উৎপাত
আবিরে মাখানো 'নষ্টশশা'!
শুঁয়োপোকা প্রজাপতি হব
রঙিন পাখায় বিতাড়িত রোগ
সোনাঝুরি রোদে তুমি শাশ্বতী
দু-চোখে প্রতিদিন বসন্ত হোক
শুভজিৎ সার
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ,
পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গন্তব্য
ধুলো মাখা ক্যানভাসে আবেগের বিকেল গুলো
গড়িয়ে আজ সন্ধ্যা নেমেছে ।
স্যোসাল সাইডে কাটছে দিন
কাটছে পড়ন্ত বিকেলের মুহূর্ত গুলো
মৃত অব্যয়ে ফেরার কোনো চোখ নেই আজ
ভরসা দেওয়ালে আটকে আছে না ফেরার দেশ ।
ভেজামাটির গন্ধ এখন কম
পলাশ রাঙা রঙিন ছদ্মবেশ এড়িয়ে যাচ্ছে মৃত চোখ
মনখারাপ এ বন্দি ফেসবুক
আর্তনাদেও সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা রোজ ।
স্বার্থ নিয়ে চলছে দিন গুলো
রূপের প্রতি টান অনেক বেশী ,
মানসিকতায় বন্দি থাকা নারী
হেটে চলে একা একা রোজ ।
ইভটিজিংয় ধর্ষন পনপ্রথা
নারী নির্যাতন এ আটকে যাচ্ছে আবছা চোখ
দাবী টা শুধু শরীর এর উপর ক্রমাগত
থমকে যাচ্ছে নিঝুম রাত্রি গুলো ।
ক্ষুধার জ্বালা গ্রাস করছে পেটে
অন্ধ হয়ে দেখছি শুনছি আর বোবা হয়ে গেছি
এই মৃত সভ্যতায় লুকিয়ে আছে শিকার
হিংস্র আমরা হচ্ছি রোজ কতো ।
ধারাবাহিক নেপোদাদুর গপ্পো
রাজকুমার ঘোষ
অষ্টম পর্ব
নেপোর ভয়ে রোমি
পানুখুড়োর অট্টালিকাসম বাড়িতে নতুন বৌকে নিয়ে বেশ সুখেই থাকতে লাগলো নেপোদাদু। তারপর বাড়ির বিশাল ছাদে প্রতিদিন সকালে উঠে নেপোদাদুর শরীর চর্চার ধুম দেখে আশেপাশের প্রতিবেশীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো। নেপো গিন্নী ছাদে আসতেন জামা-কাপড় শুকোতে দিতে, ঠিক সেই সময় পাশের বাড়ির ছোকরা রোমি নেপো গিন্নীকে দেখে নানারকম ইশারা করতো, কু-ইঙ্গিত করতো। নেপোদাদু সব কিছুই খেয়াল রেখেছেন। নেপো খোঁজ খবর রাখতে শুরু করলেন রোমি সম্বন্ধে। রোমি একটা বখাটে ছোকরা। সেভাবে কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই। যত আড্ডা পাড়ার বৌদিদের সাথে। একদিন নেপোদাদু রোমির এইসব কান্ড দেখে রেগে গেলেন, ছাদ থেকেই চেঁচিয়ে বললেন,
- এই হারামজাদা, পুঁতে ফেলবো তোকে আমি, জানিস।
রোমি ভয়ে পালিয়ে যায় ছাদ থেকে। এরপর রোমি যখনই নেপোদাদুকে দেখে, সেখান থেকে চটজলদি পালিয়ে যায়, নেপোদাদুকে যেন ভুত দেখার মত দশা হয় রোমির। কিন্তু নেপোদাদু তক্কে তক্কে থাকে কিভাবে রোমিকে জব্দ করা যায়। প্ল্যান করতে থাকেন। নেপোদাদু তার প্রভাব খাটিয়ে কিছু ছেলে ছোকরার সাথে যোগাযোগ করলেন। রোমির সব কীর্তি জেনে নেবার চেষ্টা করলেন। রোমি কিছুই করে না, বাবার দোকান আছে। ও বাড়িতে বসে থাকে। দুপুর হলেই কোনো বৌদি মহলে যায়, সেখানে তাদের সাথে পরচর্চা পরনিন্দার আসরে বসে।
একদিন পানুখুড়োর বাড়ির সামনের রাস্তায় পাড়ার ছেলেরা একটা রক্ষাকালীর পুজোর আয়োজন করে। নেপোদাদু সেই ছোকরাদের সাথে মিশে যায়। তাদের উৎসাহ দেয় পুজোর ব্যাপারে। তারাও নেপোর ন্যাওটা হয়ে যায়। তাদের হাত করার জন্য পানুখুড়োকে পটিয়ে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদার ব্যবস্থা করে দেয়। মাথায় থাকে ঐ হারামজাদা রোমিকে কিভাবে বিপাকে ফেলা যায়। রোমি যে সকল বৌদি গ্রুপের সাথে মেলামেশা করতো, তাদেরও সেই পুজোয় আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। একটু রাতে মাইকে হিন্দি গান চালিয়ে নাচের আসর বসে। সকল বৌদিকে ঐ নাচে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই রোমিকেও নাচতে দেখা যায়। সুযোগ বুঝে নেপোদাদুর ঠিক করা কিছু ছোকরাকেও সেই নাচে পাঠানো হয়। তারা ইচ্ছা করেই নাচের ভীড়ে মিশে যায় এবং রোমির কাছে যে বৌদি নাচছিল, তার পাছায় জোর করে চিমটি কেটে দেয়। এইভাবে বার তিনেক করার পর সেই বৌদি ভীষন রেগে যায়। আর চেল্লামেল্লি আরম্ভ করে। বলতে থাকে –
- জানোয়ারের দল, বাড়িতে মা-বোন নেই। এতো অসভ্য, ছিঃ
ছোকরাদের মধ্যেই একজন জিজ্ঞেস করলো,
- কি হলো বৌদি, আপনি চিৎকার করছেন কেন? হলো কি আপনার?
- চুপ একটা কথাও বলবে না। কি ভেবেছো তোমরা?
- দেখুন আমি বুঝতে পেরেছি আপনার ব্যাপারটা। বলুন, আপনার সাথে কে নাচছিল? আমি দেখেছি কে এই অসভ্যতা করেছে আপনার সাথে।
- রোমি, তুই?
এবারে মাঠে নামলো নেপোদাদু। রোমির কানটা টেনে ধরে জিজ্ঞেস করল –
- কি, হারামজাদা... এবারে তুই কি বলবি বল?
- আরে আমি কি করলাম?
- কি আবার করবি? ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে তোর মা’এর বয়সী মহিলাদের দিকে তুই কি সব ইশারা করিস, আমি কি দেখিনি বুঝেছিস। এখানেও অসভতা করছিস।
এক থাপ্পড় কষিয়ে দিলো নেপোদাদু রোমিকে। তারপর বৌদিদের মাঝে ঠেলে দিলেন।
- নিন, আপনাদের পেয়ারের রোমিকে কি করবেন দেখুন।
এরপর বৌদির দলের সবাই তাদের পায়ের জুতো খুলে রোমিকে উত্তম মধ্যম দিলো বেশ করে। তার খানিকবাদে সেখান থেকে সবাই চলে গেলো।
নেপোদাদু এবার রোমির কাছে এসে বললেন,
- তোদের মত পুচকে ছেলেদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়, আমার জানা আছে। দেখলি তো? ভুল জায়গায় চোখ দিলে কি হয়! চল ফোট এখান থেকে।
এরপর নেপোদাদু ওখানে উপস্থিত ছোকরাদের নাচতে বলে নিজেও তাদের সাথে নাচতে লাগলেন।
চলবে...
শুন্য থেকে শুরু
বাপন দেব লাড়ু
একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে
উঠোন জুড়ে রেখে গেছে তার স্মৃতি,
আকাশে এখন মেঘ-পিয়নের ব্যস্ততা,
টুপ-টুপ করে জল ঝরছে খড় ছাউনি থেকে,
পুরোনো খাতা, পুরনো কলম, বিষন্ন মাদুরে একা
পাতা জুড়ে একরাশ আঁকি বুঁকি ,
ঘর মেলাতে মেলাতে ভরে ওঠে লেখচিত্র
আগামীর উৎকন্ঠায়,
মনে মনে অতীত স্মৃতির 'ফ্ল্যাশব্যাক'।
আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করে সব কিছু।
কোনো এক না পেয়েছির দেশের থেকে,
যেমন করে শুরু হয়,
শুন্য থেকে ধারাপাত।
ভ্রমণ: "বাঁকুড়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত স্থান ভ্রমণ"
---টুম্পা মুখার্জী
চতুর্থ দিন
(বিষ্ণুপুর ভ্রমণের বাকি অংশ ও জয়পুর ভ্রমণ)
মৃন্ময়ী মন্দির দর্শন শেষে আমরা গেলাম জোড়বাংলা মন্দিরে। বিষ্ণুপুরে একটা সুবিধা হল , মন্দিরগুলি একে অপরের কাছাকাছি, তাই পায়ে হেঁটেই কাছে পিঠে সব বিখ্যাত মন্দির গুলির দর্শন সারা যায়। আমরা গাড়ি এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে পায়ে হেঁটে সব দর্শন করেছি।
যাইহোক, এবার আসি জোড়বাংলা মন্দির সম্পর্কে--
৫.
জোড়বাংলা মন্দির
মল্লরাজ প্রথম রঘুনাথ সিংহ ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন ।পরস্পর সংযুক্ত দুটি দোচালা কুটিরের সমণ্বয়ে গঠিত এবং সংযুক্ত অংশের মধ্যস্থলে একটি চারচালা শিখর বিদ্যমান, তাই মন্দিরটির নাম জোড়বাংলা মন্দির। বাংলার টেরাকোটার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এই মন্দিরটি ।
৬.
রাধেশ্যাম মন্দির
মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ মাকড়া পাথরের এই মন্দির ১৭৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।মন্দিরের শিখরটি গম্বুজাকৃতি। দেওয়ালে ফুলকারি ও জ্যামিতিক ভাস্কর্য, মহাভারত ও পুরাণ কাহিনীর স্থাপত্য লক্ষণীয়।মন্দিরে রাধেশ্যাম, নিতাই-গৌর ও জগন্নাথের মূর্তি পূজিত হয় এখনো।মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে ইটের তৈরি সুন্দর নহবতখানা আছে।মন্দিরের পূর্ব দিকে ওড়িশার স্থাপত্য অনুসারে সুন্দর তুলসী মঞ্চ রয়েছে। এছাড়া রান্নাঘর ও নাটমঞ্চও দৃষ্টিগোচর হল।
৭.
বড় পাথর দরজা
মাকড়া পাথরের তৈরি খিলান সজ্জিত এই প্রবেশ পথটি বড় পাথর দরজা বলে পরিচিত। দ্বিতল বিশিষ্ট এই দরজার দুই দিকে তীরন্দাজী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের অবস্থানের জায়গা রয়েছে । সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে মল্লরাজ বীরসিংহ এটি তৈরি করেছিলেন।
৮.
লালবাঁধ
সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রধান বাঁধটিসহ বাকি ছয়টি বাঁধ খনন করেন । কথিত আছে দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহের আমলে লালবাঈকে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রধান নর্তকী হিসেবে। রাজা তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন, তাদের এক পুত্রসন্তানও হয়। বাঈজির ছেলে সিংহাসনে বসবে এটা রাণীসহ প্রজারা মেনে নিতে পারেনি। তাই ষড়যন্ত্র করে লালবাঈ ও তার ছেলেকে এই বাঁধে নৌকা ডুবিয়ে মেরে ফেলা হয়। সেই থেকে এর নাম লাল বাঁধ। বাঁধ সংলগ্ন লালবাঈয়ের অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ আজও যেন নিষ্ঠুর ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
৯.
দলমাদল কামান
' দলমর্দ্দন' শব্দ থেকে অপভ্রংশ হয়ে ' দলমাদল' শব্দটি এসেছে।কথিত আছে স্বয়ং মদনমোহন এই কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে মারাঠা দস্যু ভাস্কর রাওয়েরনেতৃত্বাধীন বিশাল বর্গী বাহিনীকে বিতাড়িত করেন ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দে।এর ওজন তিনশত মণ।
১০.
ছিন্নমস্তা মন্দির
ছিন্নমস্তা মায়ের মূর্তিটি একটি গোটা শ্বেত পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। মেদিনীপুর নিবাসী স্বর্গীয় কৃষ্ণচন্দ্র গুঁই বামাখ্যাপা, ভৈরবীমাতা ও রাধারানী দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৭৩ সালের২১ জুলাই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কয়েকটি স্থান দর্শন করে আমরা ফেরার পথ ধরি।
পথে জয়পুরের বনলতা রিসর্টের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য থামি। খেতে খেতে ছানার বাবা ডিসিশন নেন আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে আগমীকাল সকালে জয়পুরের জঙ্গল সাফারি করে বাড়ি ফিরবেন। আমরাও পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো সবাই রাজি হয়ে যাই। কিন্তু রিসর্টের ভিতরে সব রুম বুক হয়ে আছে। একে পূজার ছুটি, তার উপর বনলতার সুনাম--- বাঙালি সদলবলে হামলে পড়েছে। শেষে অনেক অপেক্ষার পর মূল রিসর্টের গেটের কাছে পাশাপাশি দুটি রুম, প্রত্যেকটি ১৩০০/- তে পাওয়া যায়। ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, আধুনিক সুযোগসুবিধা সহ রুম। সামনে বারান্দায় কাঠের কারুকাজ করা ডাইনিং টেবিল চেয়ার । আমাদের ঘরের অদূরে বিশাল জলাধারে হাঁসের জলকেলী আর মাছেদের নিশ্চিত সন্তরণ। আর প্রত্যেকটি জায়গায় দোলনার ব্যবস্থা । চোখ জুড়ানো ফুল গাছের বাহার, অসংখ্য ফলের গাছ ,রিসর্টের ভিতরে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত সব্জি, এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গরুর খাটাল থেকে দুধসহ দুগ্ধজাত দ্রব্য, কোয়েল, টার্কি, এমু,দেশি মুরগি , তেলের ঘানি, ঢেঁকি , গুড় সমস্ত কিছুই এদের রিসর্টের সুবিশাল পরিসরে উৎপাদিত। রিসর্টের চারিপাশ ঘুরতে ঘুরতে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে মনে বলে উঠি, "আহা কী দেখিলাম!"
পঞ্চম দিন
পরদিন সকালে উঠেই হোটেল থেকে গাইড নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম জয়পুর ফরেস্টে। পথে একটা মৃত চন্দ্রবোড়া সাপ দেখলাম। গাইড বলল সাপটি বাচ্চা। ফণাবিহীন চন্দ্রবোড়া সাপ মারাত্মক বিষাক্ত। কামড়ালে মৃত্যু অবধারিত। কোনও সময় নাকি তিনি দেন না। জঙ্গলে স্থানে স্থানে উইপোকার বিশাল বিশাল ঢিবি ।গাইডের কথায় এই ঢিবি গুলোই চন্দ্রবোড়ার আবাসস্থল। এমনিতেই সাপে আমার প্রচণ্ড ভয়, তার উপর বিষাক্ত চন্দ্রবোড়ার কুখ্যাত কাহিনী।, গাড়ির থেকে নামতেই ভয় পাচ্ছি। কিন্তু জয়পুর জঙ্গলের মধ্যে যে অপার বিস্ময় অপেক্ষা করছে তা আমাদের ধারণাতীত ছিল। একটা সুবিশাল চাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করালেন আমাদের গাইড বাবু।বললেন এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর এয়ারপোর্ট এর মতো ছিল। এই সিমেন্টের চাতাল বা রানওয়ে সেই সময়ে নির্মিত। সমস্ত জঙ্গলে ২২ টির মতো (সঠিক সংখ্যা কিনা, কনফিউশন আছে ) এমন রান ওয়ে বা হেলিপ্যাড রয়েছে। জাপানি শত্রু পক্ষের দৃষ্টি থেকে আড়াল রাখতেই সুচতুর ব্রিটিশরা এই ঘন জঙ্গলে তাদের বিমান বাহিনীর আস্তানা গড়ে তুলেছিল। সত্যি দেখে অবাক আর মোহিত হতে হয়। কারণ প্রায় একশো বছর আগে নির্মিত এই রানওয়ের এক জায়গায়ও আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি, নতুনের মতোই অক্ষত অবিকৃত রয়ে গেছে। শুধু গাছগাছালি পরম মমতায় এর উপর ছায়া বিস্তার করে চলেছে।
জঙ্গলের ভিতরে একজায়গায় হঠাৎ করে প্রচন্ড মাছি আমাদের ঘিরে ধরল। গাইড বলল, পাশেই জৈবপ্রযুক্তিতে চাষ হয় বলে এত মাছি। গিয়ে দেখি কয়েকজন স্থানীয় মহিলা পুরুষ জমিতে কাজ করছে। তাদের আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ হতে হয়। এই জঙ্গলে হরিণ হাতির দেখা পাওয়া যায়। তবে শীতকালে নাকি তাদের দর্শনের সৌভাগ্য হয়। আমার ছানা এমন সময় 'হলিন হলিন' বলে চেঁচিয়ে উঠলো, তাকিয়ে দেখি ছাগলের বাচ্চা। আর ভাইপো হাতি হাতি বলে চীৎকার করে উঠল, তাকিয়ে দেখি গাছের আবডালে বিশাল বিশাল কালোকালো চেহারার আভাস... আমরা সবাই উত্তেজিত... হঠাৎ হেটহেট শব্দ আর দুরদার আওয়াজ, না হাতি না.... বিশাল বিশাল কাড়া। ঝকঝকে নীলাকাশ আর মিঠেল হাওয়া গায়ে মেখে ফেরার পথ ধরলাম। বাঁদিকে নতুন ওয়াচ টাওয়ার দেখলাম, যেটা তখনও চালু হয়নি। কিছু দূরে মল্লরাজাদের আমলে তৈরি আগাছায় ঘেরা ওয়াচ টাওয়ারের ভগ্নস্তূপ চোখে পড়ল ।
রিসর্টে ফিরে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট করে একরাশ তৃপ্তি আর মন খারাপ নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। কেবলি মনে হতে লাগল, "এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো 'তোমরা'(তুমি ) বলতো " ... সত্যি চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে " সকল দেশের রাণী সে যে , আমার বঙ্গভূমি" ।
(সমাপ্ত )
নববধূর স্মৃতিচারনা
আনোয়ার হোসাইন
ওগো ....., শুনেছ কি প্রিয়া
দশ বৎসর ছাড়িয়েছি যে মোরা
কখনো কি ভেবেছিলে তুমি
অচেনা নরের সাথে রইবে তুমি নারী
জানি তুমি জানো , তবুও একথা
বলবে না যে আমাকে কখনও।
জানি লজ্জাবতী লতা যে তুমি
তবু উন্মুক্ত করো নিজ দেহখানি
সুখী রাখতে স্বজন স্বামী ।
আমার তো সব কথায়
তোমার আছে জানা
তবুও আমি ছুতে পারিনি
তোমার মনের কোনা ।
নতুন মেরুন বেনারসীর প্রতি খাজে
অঙ্কিত ছিল যত স্বপ্ন তার ভাজে ভাজে
দর্শনে কাপিয়া উঠিল আমার নাড়ি
হ্নদয়ে বইছিল আমফান তুফান তখনি।
পতির ঘরে যখন এসে হাজির হলে
পায়ে মল্ ঝুম ঝুম হাতে চুড়ির ঝনঝন
নাকে টানা নথ শিরে রানীর মুকুট
কানেতে ঝুলছিল ঝুমকো কর্নদুল
সীতা হার গলাতে জ্যোৎস্না আলোতে
চকচক করছিল বক্ষের উর্ধ্বেতে ।
অজানা অচেনা তুমি নারী
রইলাম বাসরঘরে তুমি আর আমি
সুগন্ধি মাখা নববধূ তুমি
সুবাসিত করেছ বাকী জীবনের
নবীন দাম্পত্যের নবগৃহখানি।
যে রাতের আকাশ তারা ঝিলমিল
সে রাতের আকাশ জ্যোৎস্না ভরা নীল
পুবের জানালা ভেদিয়া আলো
স্পর্শে বক্ষদেশ দৃষ্টতায় লোমকেশ
সে রাত্রির চন্দ্রের মুখের মুচকি হাসি
হৃদয় করেছিল উৎফুল্ল।
যে রাত ছিল অনিদ্রা যাপনের
প্রথম রাত জীবনের।
স্পর্শ
বলাই মন্ডল
হৃদয় গহ্বরে ইচ্ছুক খেলে
তোমা স্পর্শ সইবে বলে!
সান্ধ্য রবি অতল গহ্বরে
মগ্ন ওষ্ঠ সিক্ত চড়ে।
তৃপ্তি শাঁসে ক্ষিপ্র বেশে
ধ্বজ চঞ্চল আধাঁর দেশে..।
ডিঙা মাঝী চতুর হয়ে
হাল টানে তৃষ্ণা পেয়ে..।
অন্ত চলে মধুর অনন্তে
ভিন্ন সুখে অভিন্ন গন্ত্যে।
কিছুটা প্রকাশিত,কিছুটা অপ্রকাশিত
-------সৌমেন সরকার
একটা ভোরের চৌকাঠে পেরিয়ে
মুঠো মুঠো আবীর শূন্যে ছুঁড়েছিলে যেদিন
স্তব্ধ আমি শূন্য বুকে
ডান হাত চেপে বসেছিলাম...
একটা আকাশ নামের সামিয়ানার বুকে
খিলখিল হাসিটুকু তোমার ছড়িয়েছিলে যেদিন
বাকরুদ্ধ আমি আবাক চোখে
দু হাত চেপে বসেছিলাম...
একটা পাহাড় প্রমাণ নিস্তব্ধতার বুক চিরে
ঝরণার কলতানের মত কথা বলেছিলে যেদিন
শ্বাসরুদ্ধ আমার বিহ্বল কানদুটি
দু হাত দিয়ে চেপে ধরেছিলাম...
একটা সাগরসম তরঙ্গের বুকে
গভীর চক্রবাকের মত সুর তুলেছিলে যেদিন
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি
হৃদস্পন্দন জরিপে ব্যস্ত হয়েছিলাম...
একটা পৃথিবীর মত প্রেমের গভীরে
ভালোবাসার অঙ্কুরোদ্গম করেছিলে যেদিন
যদি ভালোবেসে ফেলি এই ভয়ে
ভীত সন্ত্রস্ত দুরুদুরু বক্ষে আমি চলে গিয়েছিলাম...
পারুল ( ২ )
বদরুদ্দোজা শেখু
পারুলের মা টুকাই মেঝেন, বাপ হ্বপন মাঝি
পেট চালানোর জন্য খাটে বেজায় গতরবাজি ,
দিদিমা তার বুড়ী এখন থাকে বাড়ি ব'সে
চোখ দুটোতে ঝাপসা দ্যাখে ছানি পড়ার দোষে ।
পারুললতা দিম্মার কাছে দিনের বেলা থাকে
বাসি খাবার খায়দায় আর দ্যাখে সে দিম্মাকে,
মালুর যখন খিদে পায় সে পায়ে পা লাগায়
কালু কিন্তু এধার ওধার খাবার খুঁজতে যায়,
উঠানে ব'সে পুতুল নিয়ে পারুল খ্যালে রোজ
মাটির পুতুল কাঠের পুতুল রোজ বিয়ে রোজ ভোজ,
পাশের বাড়ির জুঁই চামেলি তারাও সঙ্গ দ্যায়
এমন ক'রেই পার হয় তাদের শিশুকাল অধ্যায়। ।
পারুল (৩)
পারুল এখন একটু বড়ো, ইস্কুলেতে যাবে
ওখানেই সে দুপুর বেলা মিড-ডে মিল খাবে,
গাঁওবুঢ়া তাই ব'লে দিয়েছে-- কামাই চলবে লাই,
পঢ়ালিখা শিখতে হবেক --- সরকার এটাই চায়।
মুদের বিটি বই পঢ়বেক , লিখা শিখবেক বটে--
টুকাই হ্বপন খুশী খুশী মানত দিবেক মঠে।
জুঁই চামেলি পারুললতা একসাথে ইস্কুলে
যেতে লাগলো, টুকাই হ্বপন ভর্তি ক'রে দিলে,
মালু কালুর মনটা খারাপ,ওরা দিম্মার
পাশে
পায়ের কাছেই ব'সে থাকে, কখন পারুল আসে!
অস্থায়ী
রুপম
আমরা পরিযায়ী
মাটি আমাদের জন্য ক্ষণস্থায়ী ,
আমরা পেটের দায়ে পাল্টে ফেলি সুখ
ভাতের খোঁজে ভুলে যাই অসুখ ।
আমরা পরিযায়ী
ওরা ভাবে শরীর আমাদের শুধু কাজের জন্য
কিংবা কাজের শেষে দু মুঠো ভাত এর জন্য ,
কোথাও আবার খাবার শেষে ডাক পরে মোদের
এঁটো থালা কিংবা বাটির জন্য ।
আমরা পরিযায়ী
আমাদের বাড়ি ই ই ই ই ই...
সেতো প্রায় অন্য দেশ ,
সেথায় দিনের শেষে সবার সাথে গল্পে কাটে বেশ
সেথায় ধানের শীষে মায়ের ছোঁয়ার শিশির লেগে রয়
সেথায় কথার মাঝে ভেসে ওঠে শুধু সহজ সরল মুখ ,
ক্যামনে যাবো সেতো দীর্ঘ মাইল দূর !
আমরা পরিযায়ী
আশা আমাদের কারো প্রতি আসে না ,
তাই গল্পে আমাদের গা ও ভাসে না ,
লক্ষ- কোটি টাকা !
ওসব বোকা বাক্সে দেখে স্বপ্ন আসে বেশ
কিন্তু রাতের শেষে নিজের পায়েই নিজেদের রেশ ।
রক্ত ঝরছে ! সে আর নতুন কি ,
পা ফুলছে , খিদের জ্বালায় নাড়ি ছিরছে !
আমরা যে অস্থায়ী ! দুঃখ মোদের চিরস্থায়ী
বাড়ির উঠোন ছাড়া আমাদের তরে অন্য ভালোবাসা যে ক্ষণস্থায়ী।।
‘আত্মা রেখে ধর্ম’
নির্মাল্য পান্ডে
‘আত্মা রেখে ধর্ম’, এই প্রবচনটি প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষভাবে যখন পূজোর সময় উপবাস থাকা যায়।কিন্তু কেন এর প্রচলন হল-তার কি বিশ্লেষণ করেছি? আত্মা কি ও কোথা থেকে এসেছে, তার ব্যাখ্যা অনেক, তবে সারবস্তু এইযে,-আত্মা অবিনশ্বর,নিরাকার ও আমাদের দেহেই তার অবস্থান। আমাদের যে প্রাণবায়ু, তাকেই আত্মা বলা যেতে পারে।কারন, যে মুহূর্তে আমাদের দেহের হৃদপিন্ড তার চালিকা শক্তি নষ্ট করবে-সেই মুহূর্তে প্রাণবায়ু দেহ ছেড়ে তার নিজধামে চলে যাবে।নিরাকার আত্মার আধার স্বরূপ দেহ, শবরূপে পড়ে থাকবে। এখন প্রশ্ন, সে কোথায় যায়, কেনই বা আসে, কিভাবে এর সৃষ্টি? এক কথায় বলা সম্ভব নয়, তবে আমাদের জানতে হবে, সৃষ্টি রহস্য। এই চরাচরের সৃষ্টিকর্তা অজানা নিরাকার শক্তি যার থেকেই সৃষ্টি সকল জীবজগৎ, উদ্ভিদ ও পার্থিব বস্তু-যাকে কেউ দেখতে পায় না- এক অতিসূক্ষ্ম আলোক বিন্দু- A POINT OF LIGHT-একেই বলা হয় ঈশ্বর, খোদা, আল্লাহ্। যে যেমন ভাবে সেই শক্তিকে ডাকবে।এই শক্তিই হচ্ছে পরমাত্মা-নিরাকার, অবিনাশী, অপার জ্ঞানের সাগর, বলের সাগর,তিনিই এক ও অদ্বীতিয়ম- এর কোন বিকল্প নেই।এই পরমাত্মা থেকেই সৃষ্টি অজস্র আত্মা, যেমন আকাশে আছে অগুনিত নক্ষত্র, নীহারিকা।ক্রম অনুসারে এই আত্মা দেবতাত্মাতে ও জীবাত্মাতে পরিণত হয়।পরমাত্মা যেমন অবিনাশী- দেবতাত্মা, জীবাত্মাও তেমনি অবিনশ্বর।যেহেতু আত্মা নিরাকার, তাই চাই তার আধার-জীবের দেহই সেই আধার।কাজেই, প্রতি জীব এক একটা আত্মা ও এসছে সেই পরমাত্মা থেকে, কাজেই তিনি আমাদের পরম ও প্রিয় পিতা।যেহেতু জীবাত্মার সৃষ্টি হয় লৌকিকভাবে, তাই যখন মাতৃগর্ভে ভ্রূণ বড় হতে থাকে, তখনি প্রবেশ করে এই নিরাকার শক্তি। এটাই হচ্ছে প্রাণবায়ু বা আত্মা।কাজেই আমরা অর্থাৎ জীব সকলেই এক ও অভিন্ন- কর্ম অনুযায়ী ক্রমেই শ্রেণীর বিভাজন ঘটেছে। আমি ধর্ম প্রসঙ্গে যাচ্ছি না- শুধু বলতে চাই, নিজের দেহের আত্মাকে কষ্ট দিলে, পরমাত্মাকে বা ঈশ্বরকে কষ্ট দেওয়া হবে।
আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, দেহকে, মনকে সুস্থ, সবল ও শান্ত রাখা।চরিত্র গঠন করা। কাম, ক্রোধ, লোভ,মোহ, অহং নামক রিপুকে দমন করা, যার জন্য চাই ‘রাজযোগ’ শিক্ষা, চাই ধ্যান করা, চাই সৎভাবে চলার অভ্যাস করা, আমিষ ভোজন ত্যাগ করা যাতে হিংসে শরীরে প্রবেশ না করে- তবেই আসবে বিশ্বশান্তি।
"ঘুম বিভ্রাট "
---মুহাম্মদ ইসমাইল
উল্টো যখন বইছে হাওয়া
দিনের শেষে রাত্রিবেলা
রবির তাপে শরীর পুড়ে
ঘুমের সাথে যুদ্ধ খেলা ।
ঘামের স্রোতে ভেসে ভেসে
ডুব দিয়ে যায় স্বপ্নগুলো
হাঁসফাঁসিয়ে উঠে কেঁপে
রক্ত শিরা অকাল ম'লো।
ভোরের দিকে শান্ত হাওয়ায়
চোখ জুড়িয়ে ঘুমের কাঁথা
সকাল সকাল চেঁচিয়ে বলে
ওঠো এবার ধরে মাথা।
এই করে এই গরমকালে
দিন কাটে না, ভীষণ জ্বালা
কাজের সময় ক্লান্তি বড়ো
মনটা খুঁজে শীতল শালা।
"ফেরা "
হামিদুল ইসলাম।
প্রয়োজনে ফিরে আসি তোমার কাছে প্রতিদিন
সকালে বাসি ভাতের গন্ধ
কুয়াশার চাদরে হামাগুড়ি দেয় সূর্য
এলোমেলো তোমার কেশ
আটকে থাকি বিছানায় ।।
চাঁদের আমেজ নিই প্রভাতী রাত
ফিরে আসে কবিতারা
ছন্দ ভাঙি পরস্পর
পেয়ে যাই অনন্ত ভালোবাসার রুপালী পাহাড়
সময়ের ক্যানভাস ।।
সাজানো দেয়াল ভাঙে প্রভাতী আকাশ
শব্দহীন শ্বাস
বসন্তের বাড়িময় পাখিদের কূজন
অলস সুখ হেঁটে হেঁটে আসে নরম আলোয় ।।
আমরা ফিরে আসি শালবাগানের রাস্তায় ।।
আবার বসন্ত
তন্ময় চক্রবর্তী
বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনীর অপচয়
মধ্যমা ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে
বহুদিন বিস্মিত হয়নি চোখ
চোখের অসুখ ধরা পরে গেছে!
বসন্তে কোকিল নিরুদ্দেশ
পলাশ রক্ষিত শান্তিনিকেতনে
বাতাসে খোয়াইয়ের কান্না
আজ বসন্তের ভিন্ন আগমনে!
বহুদিন বিস্মিত হয়নি চোখ
কয়েকটা পতঙ্গের বহ্নিদশা
ভৈরবী সুরে মশার উৎপাত
আবিরে মাখানো 'নষ্টশশা'!
শুঁয়োপোকা প্রজাপতি হব
রঙিন পাখায় বিতাড়িত রোগ
সোনাঝুরি রোদে তুমি শাশ্বতী
দু-চোখে প্রতিদিন বসন্ত হোক
No comments:
Post a Comment