PravatiPatrika

Wednesday, June 3, 2020

অনুকবিতা ও অনুগল্প

 যখন আয়নায় দেখি
  প্রলয় কুমার বিশ্বাস


পশ্চিমে সেজেছে মেঘ,
বিদ্যুতের ঝলকানি, কানের কাছে ভয়াল চিৎকার।

ঘুঘুরা অট্টালিকার কোণে,
পরিযায়ী শালিকেরা পাখা ঝাপটায়!

পরদিন কাক শকুনের বৈঠক
কুমির কান্না কারো কারো চোখে মুখে।

ভোরের কোকিল প্রভাতী গায়........



সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা 



ঈশ্বর কাঁদছে
- সুদীপ্ত বিশ্বাস

পৃথিবী মারা গেছে, তার প্রাচীন খোলসে
লেগে নেই কোনো জন্মদাগ।
ধু-ধু প্রান্তরে শুধু নীরস পাথর।
নিস্তব্ধ বাজনা বাজছে ফাঁকা হাওয়ার বুকে।
একদিন নদী ছিল,পাখিদের গান ছিল,
সোনালী প্রভাত ছিল, ফুলে প্রজাপতি ছিল।
পাতায় পাতায় ছিল সবুজের ছাপ,
মানুষের ইট, কাঠ, জঙ্গলও ছিল তার বুকে।
চুপচাপ সব কিছু মুছে গেছে।
মৃত্যুর গভীর থেকে উঠে আসছে বিষাক্ত নিশ্বাস।
নক্ষত্রের ফ্যাকাশে আলোরা
শুরু করতে পারছে না নতুন কোনও গান।
প্রেতপুরীতে একলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঈশ্বর।
আশেপাশে কেউ নেই যে হাত রাখবে তার কাঁধে।
ঈশ্বর কাঁদছে, তার জমাট কান্নারা সৃষ্টি করছে নতুন নদীর!



কালচিত্র


দিনকে ফাঁকি দিতে পারলেও
রাতের কাছে হেরে যাই রোজ!

স্বপ্নেরা সব মুখ থুবড়ে পড়ে
চোখের জলে বালিস ভিজতে থাকে।

তারপর খুব ক্লান্ত হলে,
গভীর ঘুমে পাই মৃত্যুর স্বাদ।

সারারাত জ্বলতে-জ্বলতে
রাতের তারার সলতে ফুরিয়ে যায়।

আবার একটা দিন...
আবার ছোটা শুরু...





বিদ্রোহী মেঘ
  ডঃ রমলা মুখার্জী

মসির মেঘে অসির মত বিদ্যুতের ঝলকানি-
মেঘরা সব গর্জে বলে কি বিদ্রোহের বাণী?
বিদ্রোহী মেঘ শান্ত হল অঝর বারিধারায়....
সবুজ বনে প্রেম নাচে বর্ষারাণীর সাড়ায়।
ফুলে ফলে ওঠে দুলে প্রকৃতির অঙ্গন,
অম্লজানের বাতাস ভরে পৃথিবীর প্রাঙ্গন।
 

অসুস্থ দুনিয়া
শুভদীপ দাস

যেদিকে তাকাই শুধুই অবক্ষয়
পৃথিবীর মাতৃক্রোড় আজ শুন্য,
চারিদিকে হিংসা-মৃত্যু-ক্ষতি-ভয়
সভ্য মানুষেরা ধীরে ধীরে হচ্ছে বন্য।

শূন্যে তাকিয়ে দেখি শকুনের ভিড়
লাশের গাদায় দেখি কত চেনা লোক,
ঝড়-ঝঞ্ঝায় ধ্বংস শতাধিক নীড়
প্রতিশোধ এর শেকলে বাঁধা বিশ্ব-রক্ষক।

 সৃষ্টি এখনো বাঁচে স্বপ্নদুয়ার খুলে
সুস্থ হবেই একদিন ধরে রেখে বিশ্বাস,
প্রকৃতি ফিরবে ছন্দে সবকিছু ভুলে
সভ্যতার ফুসফুস নেবে আবার প্রশ্বাস।

   
            
খাওয়া
বিনয় ডাঙ্গর

পেট খালি থাকলে খুব বিচ্ছিরি দেখায়।
মনে হয় পা থেকে মাথা পর্যন্ত
একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হেলে
পড়া কুঁড়ে ঘর।
তাকে সোজা করে দাঁড় করানোর জন্যে
আমি খাবার খাই।



"ভাঙা চালে"
মুহাম্মদ ইসমাইল

ভাঙা নৌকার চালে
সাজানো গন্তব্য স্থল।
আনমনা হয়ে ছুটছে আপনতালে
 দমকা হাওয়ার ক্রুদ্ধ রোষে
   ক্ষুব্ধ হয়ে জলে। 
    অতল তলে প্রদীপ জ্বেলে
 বন্ধ হৃদয় খোলে!




অণুকবিতা
     ---টুম্পা মুখার্জী

১.দিলবাহার

প্রতি রাতে বালিশে আঁকা
 চোখের জলের উল্কি,
দুঃখের দিলবাহার
রচনা করে সঙ্গোপনে ।

২.তৃতীয়ার চাঁদ

রাতজাগা ক্ষুধার্ত চোখে তৃতীয়ার
 চাঁদের মতো অন্তহীন স্নিগ্ধ ঘুম।

৩.পরোয়ানা

নিয়তির আয়নায় মৃত্যুর পরোয়ানা
লোহার বাসরঘরেও ।

৪.একক সঙ্গীত

আত্মহননে হাজার কারণ
বাঁচার জন্য একক সঙ্গীতের আবাহন।

৫. সঙ্গলাভ

উত্তর পুরুষ উল্কার বেগে ছুটে যায়
মরণের ওপারে, পূর্বপুরুষের সঙ্গলাভে।

     
    


সমতা
     মৃন্ময় ভট্টাচার্য্য

যখন সবার কঠিন দিন,
যে যার সুখ বিলিয়ে দিন,
ফিরবে তবেই আবার সুদিন,
কেউ সুখ বিলিয়ে হয়না দীন।




স্বপ্নের বেড়াজালে
                   ঈমান আখতার


আকাশে সূর্যটা সবে উঠিয়াছে,চারদিকে রোদের ছটা ছড়িয়ে পৃথিবীকে অতল অন্ধকার থেকে আলোর দুয়ারে  পৌঁছে দিয়েছে। আজ আর কয়েকটা দিনের মতো কিছুই স্বাভাবিক লাগছিল না,চারদিকটা ঝলমল করলেও কোথাও আমি নিজে অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে বসেছিলাম।সেদিন আবার তাকে দেখলাম,পূর্বের ন্যায় তাহার সৌন্দর্যের জৌলুসে কোনো কিছুই থাবা বসাতে পারে নাই। অনেক বেশি উজ্জ্বল আর অনেক বেশি আন্তরিক লাগলো তাকে। হয়তো বাস্তবতার মোরকে সে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে,আমি ভাবলুম। না পাওয়ার আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলো হটাৎ করেই।বাঁধা মানলো না আমার মন,ছুটে গেলুম তার কাছে,খুব ইচ্ছে করছিল কাছ থেকে দেখার। দেখলুম, সে একটা হাসি দিলো,সাথে আমিও।
হটাৎ করে বলে উঠলুম, 'আর কিছুই কি সম্ভব নয়?'
হেসে বললো 'তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না'
আকাশে তখন মেঘ কালো করেছে,ভাগ্যের দোহাই আমার মন কে আরোই ভগ্নপ্রায় করে দিলো, তবুও হাত টা ধরলুম, বললুম 'কিছুই কি আর বাকি নেই?'

সে আমার দিকে চেয়েই রইলো ঠিক আগের মতোই,যেন ভ্রান্ত মনে হটাৎ করেই আশার সঞ্চার হলো। আমি বললাম ওসব সমাজ ভেবে লাভ নেই,চলো দূরে কোথাও চলে যাই।
আকাশ থেকে ঠিক তখন ই ব্রজপাত হতে লাগিল।
সবাই ভয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করিতেছে।
হাত টা শক্ত করে ধরেই রইলাম,প্রাণ বাঁচানোর অকুতোভয় তখন তাহার মনে সঞ্চার হইয়াছে,আমি ভাবলুম না যেতে দেয়া যাবে না।
হটাৎ দেখলুম গুরুজনেরা তাহাকে ডাকতে শুরু করিয়াছে,এদিক ওদিক হুলস্থূল পরিয়া গিয়াছে।
আমি একদৃষ্টে তাহার দিকে তাকিয়েই রইলুম,তাহার চোখের ভাষা অনেক কিছুই বলিয়া দিলো।
যেন বলতে চাইলো 'সমাজ তোমার আমার কথা সুনিবে না,তুমি সমাজের বিশিষ্ট কেউ হও তবেই তুমি তাহার মূল্য পাইবে! এখন আর কিছুই বাকি নেই,সব শেষ হয়ে গিয়েছে,তুমি চলে যাও,ফিরেও তাকাবে না।'
ব্রজপাত তখন গুরুগম্ভীর ভাবে হটাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল,আমার দুঃখ তাহারা যেন বুঝিতে পারিল,আমি আমার গন্তব্যে যাত্রা করিতে লাগিলাম,কিছুদূর গিয়ে মন বাঁধা মানলো না,সেই ফিরেই তাকালাম।
দেখলাম সে হাপুস নয়নে একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে অশ্রু বর্ষণ করিতেছে,মন চাইলো একবার গিয়ে জড়িয়ে ধরি, ব্যথা টা একটু কমবে হয়তো।
ঠিক তখন ই আবার মেঘের গর্জন শুরু হইলো।
প্রাণভয় তখন আর নেই,দৌড়ে গেলাম তার পাশে,হটাৎ সে আমার দৃষ্টির অগোচর হইতে শুরু করিল,রূপকথার গল্পের মতো অদৃশ্য হইয়া গেল।
আমি তাহারে খুঁজে না পাইয়া, পাগলের মতো ডাকিতে লাগিলাম,কোথাও খুঁজে পাইলাম না,হটাৎ আমার সে বুকভাঙা চিৎকার মেঘের গর্জন কেও ছাপিয়ে গেল,আকাশে তখন গণ কালো মেঘ,বৃষ্টি বর্ষণ হইতে লাগিল। আমি তাহারে না খুঁজে পাইয়া হটাৎ করেই আকাশের দিকে তাকালাম,বৃষ্টি ফোটা তখন চোখ মুখে সজোরে পরিতে লাগিল,আমার ক্রন্দন তাহার কাছে তুচ্ছ হইয়া গেল,তাও সজোরে চিৎকার করে কাঁদিতে লাগিলাম,বিরহের ভারে ভারাক্রান্ত আমি তাহারে খুঁজে না পাইয়া, পাগলপ্রায় হইয়া নিজের কষ্ট গুলি যেন বৃষ্টি হইয়া আমার উপর পড়িতেছে,এমন ভাবিতে লাগিলাম।।

ঘুম ভেঙে গেল মা এর ডাকে।
উচ্চস্বরে ক্রন্দন করিতে লাগিলাম।
বিছানায় তখন আমার অশ্রু ফোঁটা টপটপ করিয়া পড়িতেছে,বাইরে তাকাইয়া দেখি আকাশও বেশ পরিষ্কার। ক্রন্দনরত অবস্থায় হেসে উঠলুম, মনে মনে বলে ফেললুম 'এখনো কি কিছু বাকি আছে আর?"






"রক্তাত্ব মুখ"
পিয়ালী গোস্বামী


দারুন ক্লান্ত লাগছে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। গত দুদিন ধরে যা গেল। তখন রাত ১২ হবে ফোনটার সোঁ সোঁ শব্দে আচমকা ঘুম ভেঙে গেল।দেখলাম মিসড কল কিন্তু কোন নম্বর দেখা যাচ্ছে।বেশি না ভেবে এলিয়ে পড়লাম বিছানায়।মিনিট দশ পড়ে আবার সোঁ সোঁ শব্দ। ডিম লাইটের আলোয় যতটা দেখা যায় ফোনটা হাতে নিলাম।দেখলাম কোন নম্বর নেই।শুধু লাল রঙের রিসিভার সাইন আর লেখা মিসড কল।বেশ বিরক্ত হলাম।ভাবলাম ফোনটা রি-ডায়েল করি কিন্তু এত রাতে মন চাইল না। আবার মনে হল দু-রাত না ঘুমানোর ফলে হয়তো হ্যালোজিনেট করছি। এবার ফোনটা সুইচড অফ করে ডিম লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে শান্তি পেলাম মনের ভুল ভেবে। বেশ কিছুক্ষন বোধহয় ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ সোঁ সোঁ শব্দটা গোঁয়ানির শব্দের মতো লাগল যেন কোন মেয়ের গলা।এবার খুব চমকে বিছানায় উঠে বসলাম।সারাঘর অন্ধকার করায় কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু শব্দটা! কিসের ফোনটা থেকে কি, ফোনটা ওলটানো ছিল তাই আলোটা চোখে পড়ছে না  কিন্তু ফোনটা তো সুইচড অফ করে শুয়েছিলাম তাহলে আওয়াজটা? মোবাইলটা হাতে নিলাম কোন শব্দ নেই।দেখলাম শরীর ঘেমে উঠেছে।হাত বাড়িয়ে আলো জালতে গেলাম,দেখলাম শরীরের নিয়ন্ত্রন নেই কেউ যেন আলো জ্বালতে আটকাচ্ছে কিন্তু কে, এবার আশঙ্কা হচ্ছে।কি হচ্ছে আমার সাথে হঠাৎ হাতে রাখা ফোনটা ভাইব্রেট হতে হতে সোঁ সোঁ গোঁয়ানির শব্দ। আচমকা ভয় পেয়ে গেলাম। ফোনটা উল্টে দেখলাম কঙ্কণার ছবি ভেসে আসছে স্কিনে। সেই মর্গে দেখা  রক্তাত্ব মুখ যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে..




                    " ময়না "
                          হামিদুল ইসলাম।

ময়নাকে ভালোবাসতাম সেই ছোটোবেলা থেকেই। ময়না আমার চোখের সামনেই বড়ো হয়ে উঠলো। হাল্কা পাতলা চেহেরা ওর। নাক টিকলু। ডাগর ডাগর চোখ।
      একদিন ময়না বাই সাইকেলে করে আমার সাইকেলের দোকানের পাশ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ টায়ার পাঞ্চার। আমাকে বললে " দাদা টায়ারটা সারিয়ে দাও। " আমি টায়ার সারিয়ে দিলাম। চুপিচুপি বললাম " আই লাভ ইউ, ময়না।"
ময়না খানিকটা ক্ষেপে উঠে বললো " করো তো একটা সাইকেলের দোকান। বাঁদর হয়ে চাঁদে হাত ?"
       এক বছরের মধ‍্যেই ময়নার বিয়ে হয়ে গেলো। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হলো না। যৌতুকের এক লাখ টাকা তখনো বাকি। এই নিয়ে বিয়ের প্রথম থেকেই সংসারে অশান্তি। ঝগড়াঝাটি। মারপিঠ। অত‍্যাচার। নির্যাতন। বছর পার না হতেই ময়না শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে আসলো বাপের বাড়ি। বাবাকে সব কথা বললো। বাবা বাড়ি বিক্রির আশ্বাস দিয়ে যোতুকের টাকা শোধ দেবার কথা বললেন।
        ময়নার মনে অশান্তি। ও বাঁচতে চায় না আর। একদিন ভোরবেলা সে নদীতে ঝাঁপ দিলো। আমিও নদীতে যাচ্ছি স্নান করতে।ময়নাকে দেখতে পেয়ে আমিও ঝাঁপ দিলাম। খুব কষ্ট করে তুললাম ওকে। ময়না কাঁদতে কাঁদতে বললো " কেনো তুমি আমাকে বাঁচাতে গেলে অয়ন দা ? আমার মৃত‍্যুই ভালো। " আমি ময়নাকে  বললাম " আই লাভ ইউ ময়না। আমি তোমাকে মরতে দিতে পারি না। "
ময়নার দুচোখে জল।



প্রোগ্রেস
-----সৌমেন সরকার


ওরা পাঁচ বন্ধু আপার প্রাইমারী ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে এল হতাশ হয়ে।এম.এল.এ সাহেব বলেছিলেন,সাত-আট লাখ টাকা অলরেডি জমা পরেছে সিটগুলোর জন্য।তাই টাকা না হলে চাকরী হবেনা।অবশ্য সবই হয়েছিল গোপনে।
ওদের কারও বাবা মাছ বিক্রি করে,কারও বাবা নেই।মা পরের বাড়ী কাজ করে সংসার চালায়।কেউ বা লেবার বা মুদির দোকানে থাকে অথবা অসুস্থ।ওরা পাঁচজন নিজেরা কোচিং করে টিউশন পড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে।প্রত্যেকের অনার্স আছে এবং ৫০%+ মার্কস।এটাই প্রশিক্ষণ ছাড়া চাকরীর শেষ সুযোগ ছিল।প্রাইমারীতে পাঁচ লাখ এর মত টাকার কথা বলেছিল।ওদের যা অবস্তা তাতে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে ওরা অপারগ।আবার বি.এড ছাড়া এস.এস.সি ও আর দিতে পারবে না।বা কোন প্রশিক্ষণ ও নিতে পারবেনা।সে ক্ষমতা কারও নেই।সব নেতৃবৃন্দের হাতে পায়ে ধরেও কোন কাজ হলনা।
হতাশায় ভেঙে না পরে ওরা ঠিক করল বছর দুই লেবারি করবে।তারপর পাঁচজন কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করবে।অবশ যদি দাদারা করতে দেন...
ওরা কিছুদিন পর দেখল পুঁটি বা ভোলার মত ক্যান্ডিডেট রা সব সেজেগুঁজে স্কুলে পড়াতে যাচ্ছে।ওরা কিন্তু এখনও ইংরাজীতে পুরো অ্যাড্রেস লিখতে পারেনা...আর লিখতে গেলে অজস্র বানান ভুল করে...





বাজারু জগনবাবু
উত্তম চক্রবর্ত্তী


সকাল বেলা জগনবাবু হনহন করে বাজারের দিকে চলেছেন । এক হাতে ঝোলা ব্যাগ অন্য হাতে স্বভাব মাফিক কে সি পালের ডান্ডাওয়ালা ছাতা। বিড়বিড় করে বলছেন আজ বড্ড বেশী দেরী হয়ে গেল। টাটকা শাকসবজি পাবো কি না কে জানে !
বাজারে ঢুকেই জগনবাবু আলুওয়ালা বটুর কাছ থেকে আলু ও পিঁয়াজ কিনলেন। এরপর গেলেন মাছের দোকানে। বেশ সাইজ মতো একখানা মাছ কিনে বেরিয়ে এলেন। মুখে প্রশস্ত হাসি। যাক বাবা, বেশ জ্যান্ত মাছ খানি পেয়েছি। দুর থেকে সবজিওয়ালা জগনবাবুকে ডাক দিল। কাছে আসতেই
সবজিওয়ালা খোকা বলল, মাস্টার মশাই, জ্যান্ত কচি পটল রয়েছে। এক কিলো দিয়ে দিই। বলেই পটল ওজন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
জগনবাবু বললেন, না রে খোকা, আজ  বরঞ্চ ঢেঁড়স, বেগুন, ঝিঙে সব হাফ কিলো করে দে। আর করলা একপাউ দে। সাথে অবশ্য ফ্রি কিছু ধনেপাতা দিবি।
সবজিওয়ালা খোকা সব ওজন করে জগনবাবুর ব্যাগে ভরতে ভরতে বলল, মাস্টারমশাই এই লাউ টা দিই?
জগনবাবু বললেন, না রে লাগবে না।
খোকাও শোনার পাত্র নয়
বলল, নিয়ে জান মাস্টার মশাই। দেখছেন না, লাউ তো নয়। যেন বড় লোকের আদুরী কন্যা। বলেই লাউটার গায়ে আদরের হাত বোলাতে লাগল।
জগনবাবু একটু মুচকি হেসে বললেন, দিয়ে দে, তুই তো গছিয়ে দিতে পারলেই বাঁচিস্।
ব্যাগটা তুলেই টাকা মিটিয়ে জগনবাবু বাজারের ওপারে ফল ওয়ালার কাছে এলেন। ব্যাগটা ও ছাতাটি জায়গা মতো রেখে বললেন, বাবু আপেল আছে? কি দাম?
বাবু বলল, এই তো, কত লাগবে? 120  টাকা কিলো। তা আপনি একটু কম দেবেন। বলেই দাড়িপাল্লায় আপেল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
জগনবাবু বললেন, না রে, তুই বরঞ্চ আজ সব পঁচা আপেল গুলো বেছে দে। বাবু বলল, মাস্টারমশাই, সবপচা আপেল নেবেন ?
বাবু মনে মনে অবাক হলেও সব পচা আপেল গুলো একটা পলিথিনের ব্যাগে পুরে ফেলল।
জগনবাবু বললেন, হ্যাঁ রে ,সব পচা গলো বেছেছিস তো বাবা?
বাবু গদগদ হয়ে বললেন, হ্যাঁ-হ্যাঁ, সব গুলো তে এই ব্যাগে বেছে দিয়েছি।
জগনবাবু জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, এখানে রাখ । বলেই বেশ কয়েকটা সতেজ আপেল পাল্লাতে তুলে বললেন, এগুলো ওজন কর  ।দেখাদেখি আরও অনেকে বেছে সতেজ আপেল কিনলো।ওজন হলে দাম মিটিয়ে ব্যাগ ও ছাতা খানি হাতে নিতেই বাবু বলল, এই পচা আপেল গুলো নেবেন না মাস্টার মশাই  ?
জগনবাবু বললেন, না রে, ওগুলো তোর কাছে রেখে দে। তোর কাজে লাগবে। বলেই বাজার থেকে বেরিয়ে এলেন।
                 ফলের দোকানে পুরো ব্যাপারটাই পাড়ার এক ছেলে রঘু দেখছিল। সেও বাইরে এসে পিছন থেকে জগনবাবুকে ডাক দিল, ও মাস্টার জ্যেঠু ---
জগনবাবু দাঁড়ালেন।বললেন কি রে রঘু?
রঘু্ সামনে এসে বলল, আপনি পচা আপেল বাবুকে বাছতে বলে নিলেন না তো! ব্যাপার খানা বুঝলাম না।
জগনবাবু একটু কাঁধ ঝাপিয়ে বললেন, উঁহু বাবা, সেদিন বাবু আমাকে পচা আপেল গছিয়ে দিয়ে ঠকিয়েছিল।আজ আমিও তাকে জব্দ করেছি। সকলকে আজ ঠকানোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।
         বলেই হাতে ঝোলা ব্যাগ , বগলে ডান্ডিওয়ালা ছাতা নিয়ে বাড়ীর পথে হাঁটতে শুরু করলেন।





সত্যিকারের বন্ধু
সিদ্ধার্থ সিংহ


রিকির বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কীরে, এরা তোর বন্ধু?
রিকি ওর‌ বাবার মুখের দিকে তাকাল, হ্যাঁ।
--- এরা তোর বন্ধু! যাদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে‌ তুই  ক'পা এগিয়ে গেলে, যারা তোর জামার পিছন ধরে টানে?
--- হ্যাঁ, টানে।
--- তুই আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা ঝর্ণা কলমের মুটকি খুলে তোর পিঠে কালি ছিটোয়?
--- হ্যাঁ, ছিটোয়।
--- তার থেকেও আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা নর্দমা থেকে দলা দলা নোংরা তুলে তোর পিঠে ছুড়ে মারে?
--- হ্যাঁ, মারে।
--- আর তখন তুই ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পড়ি কি মড়ি করে প্রাণপণে পা চালাস?‌কী, তাই তো?
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, একদম ঠিক বলেছ। আমি চাই, ওরা এ সব আরও করুক। ‌ওরা যত এ সব করবে, আমি তত ওদের ও সবের হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে জোরে পা ফেলে ওদের থেকে আরও একটু এগিয়ে যাব।
ছেলের কথা শুনে বাবা তো অবাক, কী বলছিস!
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিকই বলছি। এরা এগুলো না করলে আমি এগোতেই পারতাম না। এরাই আমার আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু।




1 comment: