PravatiPatrika

Friday, June 5, 2020

অনুকবিতা, কবিতা,অনুগল্প ও গল্প

       স্টেথোস্কোপ
       স্বরূপ সান্যাল

এখন যুদ্ধ স্টেথোস্কোপ নিয়ে
বিধ্বস্ত বিশ্ব
জীবন বাজি রাখে
সূর্য চাঁদের আকাশ অন্ধকার
অলীক শত্রু ঘরে ঘরে।
ছদ্দবেশী বেশ নিয়ে দাঁড়িয়েছে
ধ্বংস বাহিতে
মাখিয়েছে অজানা বিষাক্ত বারুদ
ভিজে যাচ্ছে গা
দীর্ঘ পথ এখনো বাকি
অস্তিত্ব মুছে যায় এই শ্মশানে...
অদৃশ্য ছোঁয়ায় কেউ নেই পাশে
পথ পাতা ঢাকা
হাজারো ফুল ফল
রোদ পাহারা দেয়
ঝড়-বৃষ্টিতে মেঘের গর্জনে

বনভূমি যায় ভেঙে
মন খোঁজে শান্তি নির্ভরতা




ভুল
সপ্তর্ষি মন্ডল


মানুষ মাত্রই ভুল হয়

অথবা

ভুল হয় তাই মানুষ

এছাড়া কি বা আছে জীবনে
ভুল যত ঠিক মানুষের চোখে
আর ঠিক যত সমাধিস্থ নিচে

ওপরে ঝুলছে ফলক
সাজানো অক্ষর মালায় ----

অর্থ মান যস , সম্মান কাড়িকাড়ি
ঘুমিয়ে এখানে । আর যেটুকু আপনাদের
চোখে ধরা পড়েছে

অথবা

পড়ছে

তা শুধুই ভুল ।



আশ্চর্য ফকির
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী

আশ্চর্য ফকির সেজেছি আমি
 জনালা দিয়ে পেড়ে আনি মাঠ-
মেঘের মিনার ছুঁয়ে ফেলি একতারার বাঁটে-
ঝিঁঝিঁ পোকার রাগ বেঁধে নি পায়ের ঘুঙুরে-
মাঠের সোনালী ফসলে ছাপিয়ে নি বৈরাগীর তল্পি-
বিচিত্র মানুষের মন ধরে বসিয়ে নি চৌখুপী মারা তাপ্পি পোশাকে-
তারপর খুব লঘু সুরে স্বরের মাথায় চাপিয়ে দিই কথা...
'ভোলামন বাউল আর গাইবে না মানুষের গান...'
গানে গানে জেনেছি -
মানুষ বাদেও এ পৃথিবী আরও অনেক বড়।



          স্বপ্ন-রানী
   গিয়াসুদ্দিন আহমেদ

স্বপ্নরানী চলতো যখন, মাথায় থাকতো ছাতি,
ভাব খানা তার এমন যেন, মস্ত একটা হাতি।
আসল কথা হাতি তো নয়, ছোট্ট একটা মশা,
উপকারী নয়তো সে, কেবল রক্ত চোষা।

অহংকারে চলতো যখন, সঙ্গে থাকতো গাড়ি,
দাসী গুলি সামলাতো তার লম্বা ঝোলা শাড়ি।
স্বপ্নের ভেলায় পাড়ি দিয়ে, পৌঁছে যায় স্বর্গে,
স্বপ্ন ভেঙে চেয়ে দেখে পড়ে আছে মর্গে।



দূষণ মুক্ত পৃথিবী
              দিলীপ রায়

পরিবেশ দূষণ করোণাকো আর
একটু সচেতন হও বন্ধু এবার।
এস প্লাস্টিক বর্জন সবে করি
দুষণমুক্ত পৃথিবী মোরা গড়ি।
প্লাস্টিক জলে কাদায় পচেনা
তাই বৃষ্টির জল গভীরে যায়না।
অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি খরা ও বন্যায়
পৃথিবী আজ ভারসাম্য হারায়।
পৃথিবী আজ তাই ধ্বংসের পথে
মানুষকে আজ সচেতন হতে হবে।
এসো মোরা বৃক্ষরোপণ করি সবে
ফাঁকা জায়গায় পথের ধারে ধারে।
লাগাই ফলের গাছ বাড়িতে সবার
সবুজে ভরুক সারা পৃথিবী আবার।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শপথ করি
এস মোরা সবে দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ি।
 



 নদীর আত্মকথা"
 রিকি ঘোষ (গল্পকথক)


পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আলোয় নদীর পাড়ে বসা
কে যেন দিল এক চিৎকার সহিত ডাক,
যে ডাকে প্রশ্ন ছিল, "তুমি কে?"
মাথা তুলতেই চোখে পরলো নদীর স্রোতের বাঁক।

বলে উঠল নদী আমায়, "ওহে বন্ধু
চল বলি দুজনে দুটো সুখ দুঃখের কথা,
তোমারটা নাহয় শুনবো পরে
আজ শোনো তুমি আমার আত্মকথা।

আমার বেজায় দুঃখ জানো
বুকে চাপা দ্বিগুণ ব্যাথা,
তোমরা যে আজ দিচ্ছ অভিশাপ
যাহাতে শুধুই দুঃখ গাঁথা।

বর্ষায় আমি উপচে পরি দুপারে
বুকে কতই না মৃতদেহ ওঠে ভেসে,
কতই না দুঃখ, কান্নার চিৎকার শুনি
তবুও আমি নিশ্চুপ নিয়তি, অশ্রুর তরে হেসে।

বর্ষায় আমার তীর পড়ছে ক্রমে ভেঙে
হচ্ছে আমার স্রোতধারা রুদ্ধ,
এভাবে চললে আর বাঁচবো কদিন
আর বাঁচার জন্যে করবই বা কত যুদ্ধ।

আমি বাঁচলেই, বাঁচবে তোমরা
কতই না দুঃখে বইলাম,
তোমাদের সেই বিবেকী কর্মধারার উপকারার্থে
অশ্রু মুছে হেসে, অপেক্ষায় রইলাম




আমাদের পৃথিবী
 বিনয় ডাঙ্গর

রাত্রি শেষে একদিন ভোরবেলা উঠে
চলো যাই রঙের পৃথিবীতে ।

আমাদের কোন লোভ নেই,
আমাদের কোন পৃথক আদর্শ নেই;
ওই পৃথিবীতে জমা আছে সবকটি রঙ।
তুমি নেবে লাল,
আমি সবুজ ,
শিল্পা গোলাপী, ববিতা গেরুয়া
প্রশান্ত নেবে সাদা ,
বাকিরাও নিজেদের পছন্দমতো তুলে নেবে রঙ;
আর কালো রঙ?
রাত্রি নেবে কালো।

চলো যাই এইভাবে আমরা সবাই রঙিন হয়ে উঠি।



ছায়া মাখা কথা
     সোমনাথ মুখার্জী

বালিশে মাথা রেখে ঘুম শুয়ে আছে।
ভোর আলোর সংকল্প মেখে অপেক্ষায় আছে।
মানুষ মানুষের হৃদয়ের বারান্দায়
ঝুঁকে আছে।
নারী স্বপ্নকে আপন করে আয়নায় প্রতিবিম্বে আছে।
স্বপ্ন স্বপ্নকে জড়িয়ে টড়িয়ে আলোকবর্ষে আছে।
প্রেম আজ দুর্যোগ বুকে মেখে আশার আলো যাচে।
 

         
 প্রেমের বাঁধন
                  শেখ মনিরুল ইসলাম

ভালো লাগা আর ভালো বাসা
         দুটির মাঝে,
 শুধু সময়ের ব্যবধান।
     এই দুই অন্তদিশা
 যদি হয় অন্তরে একই ভাষা,
তবে গড়ে উঠে প্রেমের বাঁধন।



প্রকৃতিকে লেখা
 অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

প্রকৃতিকে আজ লিখলাম চিঠি,
বললাম মনোকথা ...
কষ্ট দিয়েছি অনেক , দিয়েছি
অকারণে তাকে ব্যথা!
আজ তাই ভুগতেই যে হবে
দারুণ কর্মফল ।
ভেবে কাজ করি না, তাই
অনুতাপ সম্বল!!


       
সিদ্ধার্থ সিংহ-র
দু'লাইনের ৫টি কবিতা

১.
সমস্ত সম্পর্ক এই ভাবে চুকিয়ে দিও না
অন্তত বিচ্ছেদটুকু রাখো।

২.
একুশ পর্যন্তই মেয়েরা সভ্যভব্য
চল্লিশ পেরোলেই ভীষণ সহজলভ্য।

৩.
যারা ঘন-ঘন পুরস্কার পায়
তারা খুব একটা পরিষ্কার নয়।

৪.
কেউ শান্তি পায় বুদ্ধে
কারও বা শান্তি যুদ্ধে।

৫.
মেয়েরা এত সুন্দর করে ঘর লেপতে পারে
কেউ বুঝবে না আগে কেউ পা রেখেছিল!




                          কোনও দায় নেই
                            কৃষ্ণা গুহ রায়

বিষাক্ত ধোঁয়া ওড়ানো শহরটা এখন ঘুমিয়ে আছে৷ আজকাল বেশ বুঝতে পারি শান্তনু নীল রঙের বিষটা আমার শরীরের ভেতরটা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে৷ সহজ সরল মুখগুলোর পেছনে যখন কুটিল রেখাগুলো স্পষ্ট হয় তখন তোমার নীলকন্ঠ রূপটাই আমি মনে মনে অর্চনা করি৷ পলাশ বনে রোদের ছায়ায় কেবল তুমি আর আমি৷ শীতের সাঁঝে তোমার সঙ্গে আকন্ঠ মহুয়ার রসে যখন আমি মাতাল হয়ে সাঁওতাল পাড়ার মেয়ে বউদের সঙ্গে ঝুমুর গানের তালে  কোমর-ছোঁয়া নাচে শহুরে সভ্যতাকে ভুলে গিয়েছিলাম, সে দিন শান্তনু তুমিই আমার এলো খোঁপার পাশে গুঁজে দিয়েছিলে আগুন রঙের পলাশ৷
তুমি চলে যাবার পর শান্তনু আজ কত দিন হলো পাহাড় দেখা হয়নি, ভেজা বালির বুকে ঝিনুক কুড়োনো এখন ঘষাকাচ, সবুজের রেখাও আমার কাছে এখন অধরা৷ যখন হাফিয়ে উঠি কিছু নামগোত্রহীন সম্পর্ক ভরসা দেয় বেঁচে থাকার৷ তবুও সেই সম্পর্কগুলোর তো আর তোমার মতন কোনও দায় নেই শান্তনু আমাকে ভাল রাখার৷




                            লাল কাপড়
                          শুভজিৎ বসাক

25 শে বৈশাখের একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে টুপুর গেছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে।সে নাচ এবং গান দুইই করে।সকাল হতে না হতেই সে হাজির হয়েছে সেখানে।বরেণ্য সব ব্যক্তিদের মাঝে এসে নিজেকেও ধন্য মনে করছে সে।সে নিজেও অনুষ্ঠান প্রদর্শন করে একটু বিশ্রাম দিতে নিজেকে চলে এল ঠাকুরবাড়ির ছাদে।তখন প্রায় বিকেলবেলা।আকাশটাও সামান্য মেঘ করেছে,রোদের ছটা কমে গিয়ে মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে।সে এসে ছাদের পাঁচিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো।যে দিকটা তার চোখে পড়ল সেটা ঠাকুরবাড়ির পিছনের দিকটা যেটা প্রায় অযত্নে পড়ে আছে।কত আসবাব,বড় বড় বাঁশ রাখা রয়েছে সেখানে।সে আনমনে তা দেখতে লাগল।হঠাৎ তার চোখে পড়ল দেওয়ালে আটকানো পেরেকের গায়ে একটা লাল কাপড়ের টুকরো।তার মন ভেসে গেল অতীতের কোনও এক সময়ে।সে মনে মনে ভাবল ঐ টুকরো কাপড়টি কার হতে পারে? ভবতারিণীদেবী (রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী) যখন বৌ হয়ে এই বাড়িতে আসেন তার ছিল অল্প বয়স,তবে কি ডানপিটেপনা করবার সময় তাঁর কাপড় এ পেরেকে আটকে ছিঁড়ে যায়! আর তা শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী হয়ে আজও সকলের অলক্ষ্যে ঐখানে লেগেই আছে।এমনকি রবীন্দ্রনাথেরও কি চোখে পড়েনি স্ত্রীয়ের পরনের কাপড়ের টুকরোখানি! নাকি কাদম্বরীদেবী মারা যাওয়ার আগে ঐ লাল কাপড়ের টুকরোখানি ঐ পেরেকে বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন যাতে রবি তার অস্তিত্ব প্রতি মুহূর্তে মনে করে তারঁ ভীর প্রেমের অনুভূতি।আর সই গভীর ভালবাসার মাপকাঠি বুঝে নিতেই বুঝি কবিগুরুও সেই লাল কাপড়ের টুকরোখানি সরিয়ে দেননি।নাকি এই বিংশ শতাব্দীর কোনও মানুষের পরনের কাপড়ের টুকরো সেটি! ইতিহাস,কল্পনা আর বাস্তব এই তিনে মিলে একেকার হয়ে চিন্তার দরজায় কড়া নাড়া দিচ্ছে টুপুরের মগজে।সে হারিয়ে গিয়েছে নিজের মনেই।ঐ টুকরোটা যাঁরই হোক সে অযত্নের আসবাবের মাঝেও যত্নশীল হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে ঠিকই।এটা আবারও প্রমাণিত যে জায়গা করে নিতে জানতে হয় শৌখীন মনের মধ্যে যেমনটা ঐ সামান্য লাল কাপড়ের টুকরো করে নিয়েছে ঠাকুরবাড়ির অযত্নে পড়ে থাকা ধূলো পড়া ঐ দালানের দেওয়ালে।মৃদু হাসল সে নিজের মনে চিন্তার জগৎ থেকে ফিরে এসে।আজ সে নিস্তব্দ্ধে শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসের সম্ভবত একমাত্র সাক্ষী হয়ে ফিরছে,এ যেন কবিগুরুর জন্মদিনে তার পাওয়া অন্যতম সেরা উপহার।তখন আকাশটা বেশ কালো করে মেঘ জমেছে,মেঘ ডাকছে গুরুগুর শব্দে।এরই মাঝে নীচের ঘর থেকে ভেসে এল কোনও মহিলা সুরেলা কন্ঠস্বর, “কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা” এই গানটি।টুপুর ধীর পায়ে নীচে নেমে যেতে থাকল আর তখনই দমকা হাওয়া তার খোলা চুলটা মাথায় এলোমেলো হয় গেল।পায়ে তারে মলটা সে খোলেনি।অপূর্ব ঝন্-ঝন্ শব্দে একটা মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করে গেল সে ছাদে এসে।মেঘ-লাল কাপড়ের টুকরো-পুরানো আসবাব-দুই নারী-এক প্রবাদপ্রতিম-মেঘের শব্দ আর তার পায়ের মলের ঝঙ্কার সব মিলিয়ে জোড়াসাঁকো আজ আবার ঘুম ভেঙ্গে গল্প লেখার আশায় যেন বুক বেঁধেছে।


              সুতপা মন্ডলের অনুগল্প

                         বহিরাগত

বাবার অকালে চলে যাওয়াতে বেহাল সংসারে ছোট ভাই বোনের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজের পড়াশোনা ছেড়ে রাজমিস্ত্রি করিম চাচার সাথে ঘর ছেড়েছিলো বছর তেরোর অতিন। নিজের সুখ না ভেবে বেশি পয়সার আশায় পাড়ি দিয়েছিল সাগর পার, নিজে উপোস থেকেও পাঠিয়েছে টাকা।
কাল রাতে ভাইয়ের ঘর থেকে ভেসে এসেছিল - "মরতে  কেন যে এলো আমাদের জ্বালাতে"!
সারা জীবন অন্যের দেশে বহিরাগত থেকেছে অন্যের ঘর বানিয়েছে । আজ নিজের দেশ, নিজের ঘর, নিজের আপনজন তবুও কেন সে বহিরাগত!


                             লুকোচুরি


 "আর সময় দেওয়া যাবে না, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতেই হবে, টাকার জোগাড় করুন।"

প্রেসক্রিপশনগুলো লুকিয়ে ফেলতে হবে,
মহুয়াকে জানতে দেওয়া যাবে না।
 ওর ভবিষ্যৎ সুরক্ষা করে যাব, ওকে নিঃস্ব করে নয়।

অতনুর ফিসফিস করে ডাক্তারের সাথে এ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা মহুয়া শুনতে পায়।
ওর পিছু নিয়ে চেম্বারে।

আলাদা করে কথা বলে ডাক্তারের সাথে।

গয়না বেচে টাকা জোগাড়।

"কিডনি পাওয়া গেছে, অপারেশনের খরচও হাসপাতাল মাপ করেছে।"

আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে দুজনেই, মুখোমুখি ডাক্তারের চেম্বারে।

লুকোচুরির আড়ালে ভালোবাসা অন্তহীন।



                   এক ফালি চাঁদ


সুন্দরী মল্লিকার প্রেমে পাগল ছেলেরা, যদিও সে কাউকে সেভাবে পাত্তা দেয় না।
 কৃশানু আলাদা, শান্ত, নম্র,ভদ্র পড়াশোনায় ভালো। কৃশানু তাকিয়েছে কয়েকবার, কিছু বলে না । মল্লিকার মনেও একটা ভালোলাগা আছে।
সেদিন কলেজ ফেরত কোন ব্যর্থ প্রেমিকের অব্যর্থ নিশানা ------ জ্বলে গেল মুখ । হাসপাতাল থেকে ফিরে, নিজের অ্যাসিড  পোড়া মুখটা দেখে নিজেই আঁতকে উঠেছিল সে ।
তথাকথিত কোন প্রেমিকের দেখা মেলেনি ।
পাঁচ বছর পর আজ  কৃশানু - মল্লিকার বাসর ঘর। তাদের ভালোবাসার সাক্ষী, জানলা দিয়ে উঁকি মারা একফালি চাঁদ।


                      নষ্টনীড়


চিরকুমার ছোটো কাকা,রাহুলের আদর্শ। ছোটো থেকেই তাঁর সান্নিধ্যে বড় হয়েছে সে।
বাবাকে তার মনেই পরে না।শুনেছে,বাবা হঠাৎ একদিন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান,আর ফেরেননি।
আজ কলেজে শেষের ক্লাস গুলো না হওয়ায় একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে। ছোটো কাকার সাথে ফিজিক্সের  'থিওরিগুলো' একসাথে পর্যালোচনা করতে হবে।
ছোট কাকার ঘরের দিকে যেতেই, একটা চাপা আওয়াজ।
মা আর ছোটো কাকা !
তবে কি বাবা সব জেনেই এই নষ্টনীড় ত্যাগ করেছিলেন!
  হতভম্ব রাহুলের মনে প্রশ্ন - সে কার সন্তান?




                        বাবুই পাখী-
           .           নির্মাল্য পাণ্ডে

কিরে চড়াই! কেমন আছিস এই গরমে বাবুদের বাড়িতে!
-দূর! এটা কি থাকা, না আছে বারান্দা, না আছে বড় বড় থামের ফোকোর যেখানে, বাঁধব বাসা খড়কুটো দিয়ে। সবি তো ফ্ল্যাট বাড়ি। যত সাবেকি বাড়ি ছিল, সবই তো এখন প্রোমোটারের কাছে বাঁধা। তারা সব আমাদের বাসা ভেঙ্গে দিয়ে ফ্ল্যাট বানাচ্ছে, যেখানে থাকছে না কোন আলাদা জায়গা, থাকছেনা কোন অলিন্দ বা উঠোন। শুধু ইটের পরে ইঁট গেঁথে, এক চিলতে মাথা গোঁজার স্থান করে দিচ্ছেন বাবুদের জন্যে। না থাকছে পর্যাপ্ত আলোবাতাসের সংস্থান, না থাকছে যথেষ্ট পরিসর, তার মধ্যেই থাকতে হচ্চে কোন রকমে। তুই তো আমার খোঁজ নিলি, তোর খবর বল!
--আমার আবার খবর! আমার অবস্থাও তোর মত। সবুজ তো আজ ধ্বংসপ্রায়, বড় বড় গাছ কেটে চালান হচ্ছে বাবুদের বাড়িতে। একটা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে শহুরে বাবুরা, আধুনিক সভ্যতা। বনানী আজ হয়েছে কারখানা বা আবাসন, যেখানে ঠাঁই নেই আমাদের। আমরা তো বনের, গাছের আশ্রয়ে থাকি, গাছের ডালে ঘর বাঁধি, আমাদের শিল্প সত্ত্বা প্রকাশ পায় ঘর বাঁধার মাধ্যমে, আমরা কিন্তু শিল্পকলা নিয়ে শিক্ষালাভ করিনা, এটা আমাদের সহজাত গুন-ঈশ্বর প্রদত্ত  আশীর্বাদ, কিন্তু তাতেও বাধ সাধছেন আধুনিক সভ্যতা, আধুনিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি। বিজ্ঞান বলছে, সবুজ নষ্ট করবে না, গাছ কাটবে না, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, লোকক্ষয়, প্রানীক্ষয়, দূষণ জনিত নানান প্রকৃতি নির্ভর ‘অসুখের’ আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু ভাই, কে,- কার কথা শোনে! সেই চলেছে প্রকৃতির ওপর আঘাত, অত্যাচার, নিপীড়ন। আমাদের নেই কোন ঠাঁই, তাই চলে যাই দূর-দূরান্তে, হয়ে যাই অনেক সময় পরিযায়ী ! দেখ না ভাই, এই তো এল আম-পান, কেউ বলছেন উম –পুন, কেউ বা নাম দিয়েছেন আম্ফান-সে যাইই হোক না কেন, নিমেষে বড় বড় গাছে পড়ে গেল মাটিতে। ঝড়ের দাপটে খনিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল আধুনিক সভ্যতা, সভ্যসমাজের দম্ভ, অহংকার, নেতা-নেত্রির বক্তৃতা। মুখে তারা বলেন- কয়েক কোটি গাছ লাগাব, সবুজে ভরে দেব প্রকৃতিকে, এত অক্সিজেনের যোগান দেব যে, মানুষ-প্রাকৃতিক জীব হয়ে উঠবে চনমনে! কিন্তু, ভাই গাছ লাগাবে কোথায়? সব তো প্রমোটারদের কবলে, আবাসনে আবদ্ধ। তা’ছাড়া বড় গাছ হতে কতদিন লাগবে বলতো! বড় গাছ না হলে বাবুই বাসা বাঁধব কোথায়? অক্সিজেনই বা উৎপাদন হবে কিভাবে? তবে ভাই, একটা উপকার হয়েছে- এই হাজার হাজার বড় গাছ যা, আম্ফানের দয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে, তার গতি হবে বাবুদের বাড়িতে, কাঠ হোয়ে আসবাবে বা ইমারতের কাজে-এটা কিন্তু কিমি. আশীর্বাদ নয়! আইনকে ফাঁকি দিয়ে ঝড়ের নামে গাছ কাটা- আর, আমাদের অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকের মত। দেখনা ভাই! অমোঘ মারণ রোগ এল ‘করোনা’, কত লোককে দিতে হল প্রাণ বা, আরও কত দিতে হবে, তা-কে জানে! এটাও তো প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের ফল--।
- আচ্ছা! ভাই, সবই তো বুঝলাম, এখন তবে করনীয় কি? তোমারও যা হাল, আমারও তাইই! আমাদের তো বাঁচতে হবে, স্বর্গে বললেই তো যেতে পারব না, তার জন্য চাই আবার মনের স্বচ্ছ্বতা, পবিত্রতা- আমরা তো ভ্রষ্টাচার, আসুরিক বৃতিতে আসক্ত, নিজেদ্র স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমরা সব কিছু খারাপ কাজ করতে পারি, আমাদের চৈতন্য পেয়েছে লোপ লোভের জন্য- তাই তো নারী ধর্ষণ থেকে অর্থনৈতিক ধর্ষণে অভ্যস্থ হয়ে পরেছি—
- ব্যাপারটা গুরুতর। এই জাল থেকে বেরিয়ে আসার উপায়- আমার মনে হয়- সততার সঙ্গে, পবিত্রতার সঙ্গে, ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখে ও প্রকৃতিকে যদি ঠিকমত লালন-পালন করা যায়, তবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের স্থান হবে—
     


                        নারী দিবস
                     রাজা দেবরায়

নিশাঃ কিরে এই সিডিটা দেখার পরে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই !

রিশাঃ ধুর পাগলী ! তার জন্য আবার বিয়ে করতে হয় নাকি !!

নিশাঃ যাব্বাবা ! বিয়ে না করে এইরকম সিডি কিভাবে বানাবি তাহলে !!?

রিশাঃ আরে বাবা যেকোন অকেশনেই তো এরকম সিডি বানানো যায় । শুধু বর থাকবে না ব্যস । পার্টিটা তো থাকবে । তা সে জন্মদিনের পার্টি হোক অথবা কোনো সফলতার পার্টিই হোক ।

নিশাঃ সে কী আর এরকম আনন্দ হয় বা হবে ? বিয়ের সিডি সবথেকে বেশি প্রেশাস ! জন্মদিন বা অন্যকিছু তো বছর বছর করা যায় । কিন্তু বিয়ে একদম স্পেশাল, বুঝলি ? দেখিসনি কিরকম মজা !

রিশাঃ হ্যাঁ আজই তো প্রথমবার দেখলাম !!! গবেট কোথাকার !

নিশাঃ কী করবো আমি ? মাসিমণি তো আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যে তোকে রাজি করাতে রীতিমতো আদেশ দিয়েছে বলা চলে । তাই তোকে এগুলো দেখাচ্ছি । যদি তোর মতিগতি ফেরে ! কিন্তু "তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি, আর কেউ জানেনা" !!! কিন্তু মাসিমণিকে বোঝাবো কিভাবে ?

রিশাঃ হা হা হা । মা সব জানে বলেই তো অগতির গতি তোকে ধরেছে । তুই যে আমার হৃদয়ের টুকরো, মা তো সেটা জানে ।

নিশাঃ মাসিমণির মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত বিয়েটা কর্ ।

রিশাঃ তুই রাজি থাকলে তোকে বিয়ে করবো ! তুই রাজি ?

নিশাঃ আমি তো বিবাহিত । কিভাবে করবো ? বরকে ডিভোর্স দিয়ে ? করতাম যদি বর আমার থেকে বেশি হম্বিতম্বি করতো ! তুই তো জানিস তাকে কিভাবে অনুশাসনে রাখি ।

রিশাঃ তুই তো পারবিই । তুই যে একজন সাকসেসফুল ওয়ার্কিং মহিলা । একজন সফল নারী ।

নিশাঃ মহিলা, নারী এগুলো আবার কী ? মানুষ বল্ মানুষ । নারী নারী করেই আজ এই অবস্থা । জানি কমন কথা বলবি, এখন আর সেই দিন নেই ইত্যাদি ইত্যাদি । শহর থেকে একটু বেরিয়ে দ্যাখ কী অবস্থা ! পরাধীনতার যাতাকলে তোর নারীরা বা মহিলারা পিষেই চলেছে ।

রিশাঃ তারপরেও তো আমাকে বিয়ে করতে বলছিস ! বিয়ে না করেও আমার দিব্যি চলে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যাবে ।

নিশাঃ জানিরে ভাই । তোর মতো ট্যালেণ্টেড মানুষকে কোন কিছুই অসুবিধার মধ্যে ফেলতে পারবে না । তবুও একটা সময় পরে একজন কথা বলার মানুষ লাগে । কিছু মনে করিসনা, মাসিমণির শরীরও তেমন ভালো যাচ্ছে না ইদানীং । কিছু একটা হয়ে গেলে তখন তো তুই একা ।

রিশাঃ বিয়ে করলে অনেক হ্যাপা পোহাতে হবে । সময়ে অসময়ে বিরক্ত করবে । তাতে আমার ক্রিয়েটিভিটিরও বারোটা বেজে যেতে পারে । তাই আমি এখন যেমন আছি বিন্দাস আছি । তাছাড়া বিয়ের কনসেপ্টটা এখন পুরনো হয়ে গেছে । একটা সময় দরকার ছিলো । এখন যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিয়ে নামক শব্দটাই মুছে ফেলা উচিত ।

নিশাঃ নিজের পায়ে দাঁড়াও । ব্যস আর কে পায় তোমাকে । তুমি তখন স্বাধীন । তাই তো ?

রিশাঃ অনেকটা তাই । তবে শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ালেই চলবে না মানে টাকা কামালেই শুধু চলবে না, নিজস্ব কিছু সৃষ্টিও থাকতে হবে পৃথিবীর বুকে । কম হোক বা বেশি হোক কিছু সৃষ্টি রেখে যাওয়া চাই ।

নিশাঃ তাহলে আমি কি পুরোপুরি সফল নই বলতে চাইছিস ?

রিশাঃ সফল বা অসফল বা পুরোপুরি সফল অথবা আংশিক সফল তো নিজের চেতনার কাছে, নিজের বোধের কাছে । তোর মূল্যায়ন একমাত্র তুই সবথেকে ভালো করতে পারবি । কারণ তুই সবথেকে ভালো বুঝবি তোর আত্মসন্তুষ্টির জায়গাটা । তোর ব্যাপারে আমার বা আমাদের একটা মূল্যায়ন থাকলেও সেটা তুলনামূলক বিশ্লেষণে ছোট-বড় হয়ে যাবে, তা সে তুই আমেরিকার প্রেসিডেন্টই হোসনা কেনো ! কিন্তু তোর নিজের মূল্যায়নটাই তোর সফলতার মাপকাঠি হবে যেটা তোকে আরো আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে ।

নিশাঃ তাহলে নিজস্ব সৃষ্টির কথা যে বললি একটু আগে ?

রিশাঃ এটাতো ভবিষ্যতের জন্য কিছু রেখে যাওয়া যাকে কেন্দ্র করে কেউ পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পারে । তা সে যেকোন ফিল্ডেই হোকনা কেনো । তোর সৃষ্টি মানে একটা ধাপ বা হতে পারে তারও কম একটা ধাপ । কিসের ধাপ ? পরবর্তী আরেকটি সৃষ্টির । তুই যেখানে শেষ করেছিস, সেখান থেকেই আবার নতুন কিছু পাওয়া বা সৃষ্টি হওয়া । তাই সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা আছে খুব বেশি ভাবেই ।

নিশাঃ থাম্ থাম্ । একেবারে তাত্ত্বিক, দার্শনিক হয়ে যাচ্ছিস । এগুলো পরে করিস, আগে বিয়েটা করে নতুন সৃষ্টির জন্ম দে । এটাও তো সৃষ্টিই, আবার ভবিষ্যতের জন্যও বটে !

রিশাঃ হা হা হা । তুই চলে গেছিস আবার অন্য লাইনে । হা হা হা ।

নিশাঃ হা হা হা । আমিও এই সৃষ্টিটাই রেখে যেতে পারবো । অন্য কিছু পারবো না । হা হা হা ।

রিশাঃ চল্ থ্রি ইডিয়েটস দেখি । অনেকদিন হয়ে গেলো দেখা হয়নি ।

নিশাঃ চল্ ।।




No comments:

Post a Comment