বাঁশিটি
সজল কুমার টিকাদার
বাঁশিটি পড়ে আছে ধুলায়।
অনেক কথা তার ভিতর।অনেক সুর
তাই ঠোঁটে তুলে নেয় তাকে গভীর রাত
তারপর,দুজনে দুজনকে বজায়!
২)
যৌবন মে-মাসের রোদ
যৌবন মে-মাসের রোদ বড্ড ধারালো!
তা-না হলে পার্কে
মেয়েটির মোমবাতি আঙ্গুল ছুঁতেই
আ:!ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
মাইনাস পাওয়ার চাপদাড়ি ঝাঁকড়া চুল
দৌড়...
ডেটল ডেটল!
হদিস
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
এ পথে কুয়ো গেছে নেমে
পিচ্ছিল শ্যাওলারা জমে আছে ঘায়ে
এ পথে রক্ত জমে কালো হয়ে আছে
কালসিটে পড়ে আছে বিদ্রুপ নিয়ে
এমনই পথের পাশে আমি কোনোদিন
জানালায় বাঁকা হয়ে কুঁজো হয়ে মৃত চাঁদ ধরে নিয়ে বসি
জোনাকির মত কিছু জৈবিক আলো
ভুলালো আমাকে রক্তের দাগ ভুলালো
জৈবিক তবু তারা কুঁজো হয়ে বসা
শ্রান্ত ক্লান্ত তাদের রাত ওঠে ঘেমে
আমিও কি মৃত নই জাম্বির মত
আমারও পথ গেছে মৃত্যুতে নেমে ...
পাঁচটি দুই লাইনার কবিতা
অশোক কুমার আচার্য
১)
ভালবাসা ছড়িয়ে দাও আকাশে বাতাসে,
প্রেমের সৌগন্ধ ভরে যাক আনাচে কানাচে।
২)
বৃক্ষ তোমার পরিচয় তুমি জান,
তোমার পরিচয় তুমি আমাদের প্রাণ।
৩)
কোনদিন ভাবিনি কিছু লিখব
এখন ভাবি লিখে কি হবে।
৪)
আত্মসম্মান এর বড় কথা
সমালোচনার মধ্যে না যাওয়া।
৫)
তুমি কত বড় আর আমি কত বড়,
আমরা কেউই বড় নয় সবাই সমান।
নদী কথায় ভেসে যায় .....
তীর্থঙ্কর সুমিত
সময়ের সাথে সাথে সময় বদলে যায়।মুহূর্তের সাথে মুহুর্ত।সবাই কথা রাখে। শুধু সময় পেরিয়ে গেলে ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে । তাইতো ফাঁকা পথেও কথায় যেনো একটা জট। জটের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আমার পৃথিবী।জল আলো বায়ু সবই আছে।শুধু হারানো দিনগুলো আর নেই।নেই কোনো সীমাবদ্ধতার লড়াই।সবাই মুক্ত ।মুক্ত পৃথিবীর কথা আমরা সবাই জানি।কবি , গল্পকার , পবন্ধকার সবাই সাজিয়ে নেয় তাঁর পৃথিবীকে। আমার কল্পনায় হৃদয় ভেসে যায় __ গঙ্গা,মেঘনা,পদ্মার দিকে ...
এভাবেই আছি বেশ!
- রিঞ্জক
। ১।
এভাবেই আছি বেশ
হাত গুটিয়ে, চোখ পর্দায়,
শোকাতুর মন, রসনায় মাতে
বন্ধকি শিক্ষা আর নিবহীন মসি
চোখের আরশিতে ঘষা অস্বচ্ছতা ।
চোখের আরশিতে ঘষা অস্বচ্ছতা
বিবেকে তালা, সদা সাইরেন হাঁকে
প্রতিশ্রুতির সীমাহীন ডেসিবল
দূষণ ছড়ায় যথারীতি
এভাবেই আছি বেশ!
। ২।
এভাবেই আছি বেশ!
ক্ষয়ে গেছে সুকতলা
সদ্যপ্রসূতা ফুল ফেলে দিয়ে
দ্বিধাবিভক্ত নাড়ী ছিঁড়ে ভিন্ন সত্ত্বা
ভারতমাতা হাঁটে, রক্তের দাগ রেখে।
ভারতমাতা হাঁটে, রক্তের দাগ রেখে
নবজাতক বিশ্বক্ষুধায় বেবাক্ থ
কাঁদেনি ভারত, শঙ্কিত বাসী
কাঁদো ভারত কাঁদো
আমরা নিশ্চিন্ত হই।
। ৩।
আমরা নিশ্চিন্ত হই
লেন্সবন্দী করি দাগ
প্রাকৃতিক বা উপায় যান্ত্রিক
ছিনিয়ে আনতেই পুলজিৎজার,
নো-বেল, কিংবা নির্বাচনী উচ্ছ্বাস।
নো-বেল, কিংবা নির্বাচনী উচ্ছ্বাস
আগামী ইস্তেহারে শপথ ভারী
সংরক্ষণের অঙ্গীকার হেথা
ভারতমাতার হাঁটা পথ
এভাবেই আছি বেশ!
পোশাক বদল
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
মুক্তো কুড়িয়ে নিলে দুই খোল ডিঙি
ভেসে যায় কান্না ধোয়া নীলের তারল্য।
আলোর গতি মহাকাশ ছোঁয়
ছায়াপথ পায়না স্টেশন।
হয়তো স্বপ্নের গাড়ি স্বর্গের কাছাকাছি
পারিজাত ব্লটিংয়ে আটপৌরে ঘাম
অজানা দানব চোষে স্বপ্নময় বীজ।
দৃশ্য সুন্দর হলে কোমলতা পায়?
তাহলে অদৃশ্য কেন কাঁটাদের দাঁত!
ধুসর ফুলের মধু জমে জমে ক্ষীর
নীলকণ্ঠ খুঁজে ফেরে বিজাতি পতঙ্গ।
ভোগপদ গেয়ে গেয়ে পোশাক বদল
মহাকাশে পাতা যাক ভোজের টেবিল.....
গোলমালে সুর দিলে সবাই শাবাশ।
"শুধু ভালোবাসা বাঁচে"
শ্রী শতানীক ভট্টাচার্য
প্রত্যেকটা মানুষের একটা নিজস্ব রং আছে,
গায়ের গন্ধ আছে,
ঠিকানা আছে,
আছে একটা সুন্দর মন!
জানি,
আর তার মনের ফাঁকা দালানে ভালোবাসার অবাধ বিচরণ!
আচ্ছা বলতো ভালবাসার রং কি?
ভালোবাসার একটাই রং--- গাঢ় ভালোবাসা,
তার ঠিকানা.... মনের মানুষ
আর অধিষ্ঠান
ওই কম্পিত হৃদয়ের গোপন অলিন্দে!
যেন ভালোবাসা বাসা বাঁধে,
ঠিক, বীজের খোলস ভেঙে বিদীর্ণ অঙ্কুরের দুরন্ত কলরবে!
কাল বৈশাখীর ঘূর্ণিঝড় উপেক্ষা করে
অথবা নিষ্ঠুর অদৃষ্টের বুকে পদাঘাত করে !
তবুও ভালোবাসা বাঁচে,
ছড়ায় তার শাখা-প্রশাখা প্রেম সিক্ত উর্বর মনে
মুক্ত বিহঙ্গের মত মেলেডানা প্রেমিকের নীল চোখে
শুধু ভালোবাসা বাঁচে,
মৌসুমী বায়ুর মত বারিবিন্দু নিয়ে আনে প্রেমিকের মরু হৃদয়ে !
শুধু ভালোবাসা বাঁচে,
প্রেমের স্বপ্নাতুর আবেগে,
কিম্বা শান্ত গোলাপের পাপড়ির সৌন্দর্যে!
ভালোবাসা বাঁচে,
মাথা উঁচু করে থাকা ঘাসফড়িঙের অসীম ধৈর্য এ,
মোরগঝুঁটির রক্তিম শিরদাঁড়ায়!
শুধু ভালোবাসা বাঁচে,
প্রেমিকার বুকে মাথা রেখে ,
আর আকাশ পানে চেয়ে প্রেমের প্রহর গুনে!
শুধু ভালোবাসা ই বাঁচে,
ভালোবাসার তরে
ভালোবাসার আকর্ষণে
ভালোবাসা বাঁচে,
যুগে যুগে,
পৃথিবীর পথে
নতুন ভোরের মধুরিম আল্পনায়!
প্রশ্ন
বিশ্বজিত মুখার্জ্জী
জীবন ফিরুক ঝলমলে রৌশনাইয়ে,
অন্ধকার ঘুচুক চাঁদের জ্যোৎস্নায়ে।
ছন্দে ফিরে জীবন খুঁজুক গতি,
মৃত্যুর পথ রুদ্ধ ক'র---'ওহে নিয়তি'!
পথিক তুমি দিগভ্রান্ত, হারায়াছ্ বুঝি পথ!
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খুঁজ'ছ নতুন রথ।
ধ্বংসের মাঝেও ফুটছে--একী অপরূপ পরিচয়!
সৃষ্টকেও দিয়ে চলে'ছ ক্রমগত প্রশ্রয়।
ধ্বংস সৃষ্টির মাঝে সঞ্চিত হোক নবপ্রাণ,
আটপৌরে জীবনে গেয়ে উঠি জীবনের জয়গান।
পাওনা গন্ডার হিসাব মেলাতে হৃদয় গেল ভেঙে,
জীবন তরী ভাসাবো এবার কোন গাঙে্?
এ মোর জীজ্ঞাসা-----
তোমাদের কী আছে জানা এর মীমাংসা।
বন্ধকি আত্মা
শোভন সরকার
সময়ের ডাক পারেনা কেহ ফেরাতে
আমি,তুমি বা সে,বন্দী আছি তার হাতে
শুধু কটা দিন কাটে যে অভিনয়েতে
এ বিশাল রঙ্গ-মঞ্চে চলি এক পথে
আমি , তুমি বা সে , একই ধারাতে !
নিত্যই প্রবহমান জন সমুদ্দুরে
ফুটেছি ক্ষণিক কমল হয়ে পুষ্করে
মধুকর আসি ভালোবাসা দিলো ভরে
ভরিলো হৃদয় পূর্ণ অঞ্জলি পরে
এবার ছাড়িতে স্থান ডাক ঐ এলো রে !
তবু অভিযোগী মন মানিতে পারে না
রচিলেম কত গল্প , শোনানো হল না
সুখ-দুখের সাগরে সে ঢেউ এলো না
যার লাগি নিশি দিন আমি আনমনা |
শুধালেম তারে এখুনি কি হবে শেষ ?
কিছু খেলা রহিলো যে পড়ে অবশেষ ,
ছাড়িবো কেমনে হেন মায়ারো আবেশ
কিছু সময় চাইছি যে ভিক্ষা হে ভবেশ
ফিরায়ো না রিক্ত হাতে তুমি ঋষিকেশ !
শোনে কে বা কার কথা এলো শেষ বার্তা
তুলি নিলো তার রথে কালের কর্তা ,
অভিমানী মনে পেলো ঠাঁই নিরবতা
আমি , তুমি বা সে , শুধুই বন্ধকি আত্মা |
মাঠ
প্রলয় কুমার বিশ্বাস
এইতো কিছুদিন আগেও
নীল রঙের নীচে মন জুড়ানো তোমার সবুজ চাদরে
পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি কলকাকলিতে ভরে থাকতে তুমি;
সূর্যমুখীর মতো মুখ
কুন্দের মতো সাদা দাঁতের ঝলমলে হাসি,
স্পষ্ট-অস্পষ্ট কোকিলের কুহুতান,
সপ্তসুরে ভরে উঠতো চারপাশ,
কোণে বসে থাকা বাউলের দোতরার সুর
অথবা ভাটিয়ালি গান -তোমার কোলে; এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস।
তুমিও কি আজ মানুষের মতো আইসোলেটেড?
আজও অসীম দিগন্ত জুড়ে আছে শ্যাম,
আছে সবুজের মায়াবি টান
মৃত্যু ভয়ে ঘরবন্দী তোমার খেলার সাথী
তাইতো তোমার চোখে জল, শূণ্য বুকে ভালোবাসার স্মৃতি।
রাতের তন্দ্রালু স্বপ্ন- পৃথিবী সুস্থ হয়ে ওঠো,
উচাটন মন অপেক্ষায় এই বুঝি ভোর হল।
নগ্নতা
সুদীপ্ত বিশ্বাস
রাতের কাছে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই;
বরং ও রাত ঘন কালো চাদর মুড়ে
ঢেকে রাখে আমার যত নগ্নতা সব।
ওই আকাশে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই;
বরং আকাশ ছাতার মত মাথার উপর
মুড়ে রাখে সবকিছু তার বুকের ভিতর।
জল বাতাসে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই;
বরং তারা একটু বেশি খুশি হয়েই
ফিসফিসিয়ে বলে কিছু বাড়তি কথা।
নদীর কাছেও নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই;
বরং নদী ছলাত-ছলাত ছন্দ তুলে
নগ্ন হয়েই আমায় শুধু নাইতে বলে।
বন-পাহাড়ে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই
বরং তারা খুব খুশিতে দুজনেই চায়
আমি যেন খালি পায়ে যাই হেঁটে যাই।
পশুপাখি ওদের কাছেও লজ্জা তো নেই;
বরং তারা বন্দুক আর চশমা-টুপি
এসব ছাড়ায়, সত্যি কোনও বন্ধুকে চায়।
এই পৃথিবীর সত্য যারা তাদের কাছে
নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,লজ্জা তো নেই
কারণ সত্য নগ্ন হতে লজ্জা পায় না।
মানুষ দেখে নগ্ন হতে লজ্জা করে
মানুষগুলো লুকিয়ে রাখে নিজের মুখও
তারা শুধুই মিথ্যে বলে, মুখোশ পরে।
এই সমাজে নগ্ন হতে লজ্জা করে
গোটা সমাজ মিথ্যেবাদী, ভ্রষ্টাচারী
নগ্নতা আর সরলতার সুযোগ খোঁজে।
পৃথিবী
হামিদুল ইসলাম
হাতের বাতি নিভে এলো
সাঁঝে
বকুল তলায় দাঁড়িয়ে থাকে কে
সুন্দরী সাজে ।।
এ কি ! এই অবেলায় তুমি
কেবল বিস্ময়
বুকের মাঝে বৃষ্টি নামে
দুরন্ত দুর্জয় ।।
হাতের বালা ফাঁকা তোমার
নাকে নেই নোলক
তবু চিনতে কষ্ট হয় না কোনো
হৃদয় মাঝে দোলক ।।
তোমার শাড়ির ভাঁজে নিখুত আঁকা
রক্ত করবী
যেখানে যাই সঙ্গে তুমি
তুমি আমার পৃথিবী ।।
একটি ভালো কবিতার জন্য
মিনতি গোস্বামী
মানবতার অপমৃত্যু দেখতে দেখতে
কবিতার পাঠ গেছে চুকে
দেশ ঘিরছে হিংস্রতার কাঁটাতার
অজস্র ক্ষতের দগ্ধতা বুকে।
এক প্রান্তে গর্ভবতী হাতিকে মারলে
অন্য প্রান্তে মারা হচ্ছে দুধেল গাই
নখ, দাঁত শান দেওয়া পর্বে
মানবতার পাঠ কোথাও নাই।
কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যাওয়া যুবক
বিপর্যয়ে তকমা পায় পরিযায়ী গর্ভবতী মেঘের মতো প্রসবের ইচ্ছায়
মানুষতো চিরকাল অস্থায়ী।
একটি ভালো কবিতা লিখবো বলে
পেতে চেয়েছিলাম ভালোবাসার পাঠ
চোখ মেললেই চারিদিকে দেখছি
সাজানো হচ্ছে চিতার কাঠ।
ঠোঁটে প্রাণ নিয়ে চালিয়ে যাবো
তবু কবিতার সুলুক সন্ধান।
যত ই রক্তচক্ষু দেখাক
করোনা, নিসর্গ,আমফান।
প্রতীক্ষা
সত্যব্রত দাস অধিকারী
এসো প্রিয় এসো মোর দ্বারে,
দাও সুযোগ বরন করিতে তোমারে।
বহিছে আজি পিরিতি পবন,
পথ চাহি রিক্ত সজল নয়ন।
তব দেখা পাইবা লাগি,
আঁখি মোর ব্যাকুল।
পাইতে অনুরাগের ছোঁয়া,
রুক্ষ প্রাণ হয়েছে আকুল।
দীর্ঘ দিবস আসো নাই সজনী,
কাটে নাহি যেনো এ কলুষিত রজনী।
প্রতীক্ষায় তব কাটিছে প্রহর,
আসিবে কবে কাঙ্ক্ষিত ভোর?
এসো তুমি এই বৈশাখী সন্ধ্যায়,
ভরাও তুমি এ জীবন প্রেমের উপমায়।
বিরহের ভালোবাসা
গৌতম দাস
অকৃত্রিম ভালোবাসার বিশ্বাসের চিতা জ্বালালে আজ।
দুঃখের সাগরে ভাসতে যখন-
তরী হয়ে আমিই ছিলাম তোমার পাশ।
হৃদয়ের অন্তঃস্থলে এঁকেছি প্রেয়সীর ছবি।
আবেগ বহিঃপ্রকাশে হয়েছি প্রেম জগতের কবি।
কালবৈশাখী ঝড়,বৃষ্টি, বজ্রপাত এড়িয়ে।
মেঠো পথে দাঁড়িয়েছি বৃষ্টি ভেজা প্রেমিক হয়ে।
থাকব তোমার ছায়া হয়ে বলে ,মুগ্ধ করেছিলে আমায়।
কোথায় সেই প্রেমময় বাণী-
তোমার স্মৃতি আজ ক্ষণে ক্ষণে কাঁদায়।
তুমি আছো আনন্দ সাগরে জাহাজের নাবিকের সনে।
না বলে যদি ইঙ্গিতও দিতে , শান্তি খেলা করত রিক্ত মনে।
প্রার্থনা করি-
সুখে , স্বাচ্ছন্দ্যে , আনন্দে হও যেন রাজসুখী।
তোমার আবেগময় স্মৃতিতে আমি হব চিরকালের যোগী।
মৃত্যু মিছিল
সুমনা দত্ত (ঘোষ)
ভাইরাসেরই দারুন ত্রাসে, যখন গোটা বিশ্ব কাঁপে ,
মৃত্যু মিছিল অব্যাহত অর্থনীতি নীচের ধাপে।
দিশেহারা সেনানায়ক প্ল্যানের উপর প্ল্যান চলে ,
অদৃশ্য শত্রু যখন ,পরাজয়টাই মান বলে!
প্রদীপ জ্বালি ,হাততালি দেই , মুখোশে মুখ ঢাকি
যুদ্ধে যারা প্রণাম তাদের, শ্রদ্ধা ধরে রাখি।
কার্ফুজারি জব্দ করতে ,শত্রু নাকি হবে নাশ!
লকডাউনের চারটি ধাপেও, থামলনা তো সর্বনাশ।
বাইরে ছিল যারা তাদের ঘরে ফেরার বড্ড তাড়া,
হাঁটছে ভারত কাঁদছে শিশু, পরিযায়ী নামটি যারা।
সবই তো হল, তবুও তো সে বুক চিতিয়ে ঘোরে, অভাব দেখো নাড়ছে কড়া বন্ধ ঘরের দোরে ।
শহর জুড়ে চলছে তখন মন খারাপের বিজ্ঞাপন,
কাঁদছে আকাশ বইছে বাতাস হারিয়ে গেছে প্রিয়জন!
খিদে বড় জীবন থেকে ,খুলতে হলো সব যে তাই,
টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছি, কে যে কার আগে যাই!
ঘরবন্দী
নির্মাল্য পাণ্ডে
না,না, বিষ্ণু! তোমাকে তো আমার সৃষ্ট বিশ্বকে ধ্বংস করার অধিকার দিই নি।তবে, কেন এমন মারণরোগ ছড়ালে ধরাতে, যার জন্যে মৃত্যু মিছিলের হাহাকারে আমার তপস্যা ভেঙে গেল?
প্রভু!মাপ করবেন। আমি তো আপনারই আত্মার আরেক রূপ, আপনিই তো বলেছেন, যখন ধরণী পাপে, অনাচারে, ভ্রষ্টাচারে
ডুবে যাবে, তখনি মর্তে গিয়ে দুরাচার মানুষদের জব্দ করবে, শিক্ষা দেবে,তাই তো করছি, প্রভু! আমার দোষ কোথায়?
আপনি তো গীতাতে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে, বাণী ছড়িয়েছন-“—দুষ্টের দমন। ধর্মলাগি, যুগেযুগে, করি আগমন।” প্রভু, কি করি, স্বার্থের জন্য দাদা-দিদিরা সুন্দর ভুবনকে কলঙ্কিত করেছে গাছ কেটে, জীবনস্বরূপ জলকে অপব্যবহার করে, দূষণে জীব ও জীবনকে দুর্বিষহ করেছে, রাজনীতিকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছে। তাই, প্রভু!আমার সৃষ্টি ‘করোনা’কে পাঠিয়েছি তাদের ঘরবন্দী করতে, যাতে এই সংশোধনাগারে চরিত্র বদলায়।
লাভ কিছু হল?
হ্যাঁ, প্রভু। হয়েছে। গৃহবন্দীতে আজ ধনী থেকে সেলিব্রেটি, শ্রমিক থেকে কয়েদী, ডাক্তার থেকে সেবিকা, নেতা থেকে নেত্রী, গায়ক থেকে কবি--, সকলেই ঘরে বসে হাতের কাজ, মাথার কাজ ও কেউ কেউ সেবার কাজে ব্যস্ত। তাও কি টনক নড়চ্ছে!- সুযোগ পেলেই চোর সিঁধ কাটছে।
ঠীক আছে, আর কতদিন চলবে এই সংশোধানরের ব্যবস্থা? আমাকে তো বাঁচাতে হবে সৃষ্টিকে।
আর মাত্র কয়েক মাস--!
প্রশ্ন
মৃন্ময় ভট্টাচার্য্য
সূর্য দেখে ঐ সূর্যমুখী
যখন হাসে প্রথম হাসি,
ভাঙা ঘুমে অবাক চোখে
একমনে স্থির দৃষ্টি রেখে
দেখেছো কি ?
কানটা পেতে গাছের পাতা
শুনছে বায়ুর কোন্ বারতা,
চুপিচুপি সে গোপন কথা
আড়াল থেকে একা একা
শুনেছো কি ?
ফুলেদের মৌমাছির সাথে
লেনদেনের যে চুক্তি আছে,
হিসাব কেমনে কি ভাষাতে
রাখছে ওরা ওদের খাতে
জেনেছো কি ?
বাসার ভাড়া গাছের কাছে
পাখি সকল বাকি রাখে !
ডিম ফুটে যেই শিশু হাসে
শোধ হয়ে যায় অনায়াসে
বুঝেছো কি ?
মানুষ নাকি ভিন্নগ্রহী !
চায় হতে সে একলা জয়ী,
বাঁচায় যে গাছ, তাকেই কাটে
মনুষ্যত্বের মুখোশ মুখে
সত্যিই কি ?
আহ্বান
মহীতোষ গায়েন
মানুষ কাঁদছে দেখ দিন রাত ধরে
রুটি-চাঁদ দেখা যায় আকাশের পরে,
প্লাবনে ভেসে গেছে জীবনের যত
ঘূর্ণি এসেছে যেন দানবের মত।
ঘর বাড়ি ভেসে গেছে ভালো নেই মন
কাঁদছে অঝোর ধারায় সুন্দরবন,
ছেলে মেয়ে কাঁদছে পাড়ায় পাড়ায়
মা বাবার হতাশা চোখের তারায়।
স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিতে আম্ফান এলো
দু:সহ ব্যথা ভেসে সংসার গেল,
জোড়া তিরে বিদ্ধ সমাজের পাশে
বিপদেতে চালে ডালে সাহায্য আসে।
মানুষের সাথে থেকো এই বিপদে
বিভেদটা মুছে যাক ঘোর আপদে,
বাঁচতে সবাই চায় স্বপ্নের মাঝে
রাজনীতি ভুলে এসো এই মহা কাজে।
মাপা ভবিষ্যৎ
টুম্পা মুখার্জী
অনেক বছরের অদেখা প্রেমের
চিত্রনাট্য সাজাতে সাজাতে
বিকলাঙ্গ মন ফুলের মৃতদেহ
জড়ো করে নিভৃতে।
অবিশ্বাসের আর্তনাদ অশ্রুত
ধ্বনি হয়ে অবিরাম বাজে,
মুহূর্তের উর্বর যোনি
আজ ক্ষরার কবলে,
বিস্ফোরণের সূর্য তাই
কফিনে অক্ষত নিদ্রা যায় ।
শাম্বের প্রসবিত মুষল ধ্বংসের
হুঙ্কার ছাড়ে উল্লাসে, ছুঁয়ে যাওয়া
দ্বারাবতী নগরীর প্রতি ঢেউয়ে।
আর প্রতি এরকাগাছের অগ্ৰভাগে
ক্ষতবিক্ষত প্রেমের প্রতিশোধ
বংশীধ্বনি হয়ে ভবিষ্যৎ মেপে তোলে।
Feel calm
Ritam Ray
Once upon a time there was a calm,
How many thousands of thoughts revolve.
Sometimes I think what I did in life, what I got, what I can get, what I can do, what I have done.
Thousands peek out,
The cuckoo's cuckoo cuckoo's voice,
Peek into the teenager's vitality, passion.
The bees buzzing in the trees,
How many unnamed birds live in the branches,
They sing nature songs -----I sit quietly, sometimes alone on the balcony or on the roof. .
Hours after hours, sometimes or fall asleep.
After a while I hear my parents calling ---
My dreams seem to come true.
I know the world is fleeting,
Happiness, emotion,
What a loss in genuine love !!!!!
কলকাতার পাখপাখালি
- অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)
আমার ভাই অর্ণব তেমন পাখিটাখি চেনে না । ওকে চেনাতে গিয়ে কলকাতার অনেক পাখি চিনে গিয়েছি।
আমাদের ছোটবেলায় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে কাদাখোঁচা পাখি দেখা যেত । ট্রাম লাইনের ধারে ওরা জমে থাকা জলকাদা থেকে পোকা ধরে খেত। লম্বা ঠোঁট, উড়তে অপটু । এখন আর দেখাই যায় না । মাংস মেরে খেয়ে লোকে এদের শেষ করে এনেছে ।
এছাড়া কলকাতায় কাক, চড়াই, শালিখ দেখা যায় অগুনতি । তবে মোবাইল যত থ্রীজি, ফোরজি হচ্ছে, চড়াই পাখি তত কমছে । কমছে টিয়া ও মৌটুসিও ।
শালিখ আবার অনেকে দেখেও দেখে না একলা হলে, কুসংস্কার হিসেবে ।
চিলও অনেক দেখা যেত কলকাতায়, এখনো যায় । মাছ মাংসের টুকরো উঠিয়ে নিয়ে যেতে এরা ওস্তাদ । এমনকি অনেক আগে শকুনও দেখেছি অনেক। উঁচু গাছ , যেমন পাম গাছ বা অন্য উঁচু গাছে এদের দেখা যেত। বিশেষ করে গঙ্গার ধারে এদের বাসা ছিল।. ..গোরুর দেখভালে অতিরিক্ত Diclofenac ব্যবহারের ফলে শকুন কলকাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে । ..এখনকার পাখির মধ্যে আর আছে পায়রা, নানা রঙের । পায়রা, ঘুঘু, চড়াই, এরা মানুষের বাড়ির কাছেই বা বাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে ।..
সম্প্রতি লকডাউনের সময়ে নাটক্র্যাকার পাখিও দেখেছি । আর দেখেছি ল্যাজঝোলা দোয়েল পাখি । আগে ডাহুক পাখিও দেখতাম; সুস্বাদু মাংসের কারণে সে লুপ্তপ্রায় ।..দেখতাম লক্ষ্মী প্যাঁচা ও ভুতুম প্যাঁচা! এখন এরা খুব কমে এসেছে ।
বাইপাসের ধারে বা লবণহ্রদ এলাকায় বক দেখা যায় অনেক; কাছাকাছি জলাশয় থাকার জন্য । মাছ পেতে অসুবিধা হয় না ।..
আমরা যত পাখি দেখেছি, অর্ণবরা তার অর্ধেকও দেখবে না । ক্রমাগত গাছ কেটে, ফ্ল্যাট উঠিয়ে, জলাশয় বুজিয়ে ওদের বাসস্থানই শেষ করে আনছি আমরা। আমপানে সহস্রাধিক গাছ পড়ে ওদের থাকার জায়গা আরো কমে এসেছে।.. মনে রাখা দরকার, পৃথিবীটা সবার ।।
সময়ের আহ্বান
সত্যব্রত চৌধুরী
সময়ের তালে তালে,
ক্ষণে ক্ষণে, পলে পলে -
আসে যায় দিন ও রাত্রি ।
গ্রহ-তারা-নক্ষত্র দল ,
সদা ব্যস্ত, সদা সচল ,
মহাকাশের অনন্ত-যাত্রী ।।
ব্রহ্মাণ্ড গড়েছেন যিনি -
'একমেব অদ্বিতীয়ম্' তিনি ।
মন্দিরে মসজিদে বিরাজিত ।
অকারণ শুধুই মোরা
ভায়ের বুকে বসাই ছোড়া -
লহুতে করি হস্ত রঞ্জিত ।।
'এক রক্ত-এক প্রাণ',
এ সত্য হোক মহীয়ান ,
যেমন নিত্য গ্রহ-নক্ষত্র ।
সময়ের সাথে সাথে
মিলে যাও হাতে-হাতে ,
শান্তিধারা বহুক সর্বত্র ।।
ক্ষণিক অনুভব
ডঃ রমলা মুখার্জী
নিরালা দুপুরে তোমার ক্ষণিকের অনুভব আমার হৃদপিন্ডের ছান্দিক গতিকে ত্বরান্বিত করে,
লাব ডুবের তালে পেরিয়ে যাই সহস্র সন্ত্রাস.....
মৃত্যুর সীমান্ত থেকে জীবনের স্বপ্নরা হাতছানি দেয়।
তোমার সঙ্গে কাটানো ছোট মুহূর্তরা অমাবস্যার আঁধারেও
জ্যোৎস্না ঝরায় আমার প্রতিটি রক্ত কণিকায়;
পেরিয়ে যাই ধোঁয়াশার গাঢ়তম শীত.....
তোমার হাল্কা ঝাঁঝালো ঘাম-ঘ্রাণ আমাকে উদ্দীপিত করে,
তিয়াস ছড়িয়ে পড়ে প্রতি স্নায়ু কোষে....
তোমার কথা-কবিতারা সঞ্জীবনী সুধার মত অবিরত অমৃত ঢালে;
ছড়িয়ে যায় কর্ণছত্র, কর্ণকুহর,ককলিয়ার আরও গভীরে....
তোমার ইষদুষ্ণ প্রত্যাশার প্রশ্বাস নির্জীব কোষে অম্লজান যোগায়;
সঞ্চারিত হয় অমিত শক্তি, আমি সূর্যের দিকে মুখ ফেরাই।
তোমার আঙ্গুলের আলতো ছোঁয়ায় আমি সোনার কাঠির পরশ পাই,
আমার ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যা জেগে উঠে বলে,"আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচবো।"
No comments:
Post a Comment