PravatiPatrika

Tuesday, June 2, 2020

কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ




 প্রকৃত শিক্ষার সার্থকতা
      রণধীর দাস

মানবজীবনে খাদ্য- বস্ত্র- বাসস্থানের মতো শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম -- শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, আর বিপ্লব আনে মুক্তি। কিন্তু বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীর হিংসা-স্বার্থপরতায় মানবিক মূল্যবোধ যেন ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার পথে। ফলস্বরূপ 'শিক্ষার' প্রকৃত অর্থ ও স্বরুপ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে-একথা বলাই বাহুল্য । আমরা যতই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হই, ডাক্তার অফিসার ইঞ্জিনিয়ার হই না কেন, আমরা যদি শিক্ষিত হওয়ার সামান্য বিচার বোধটুকু রাখতে না পারি, নিচু মানসিকতা নিয়ে থাকি - তবে এ শিক্ষার সার্থকতা কোথায়? স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন-- "When money is lost, something is lost. When Health and Wealth is lost, more or less is lost. But when character is lost, everything will be lost". আমরা যেটুকু অজ্ন করতে পেরেছি, সেইটুকু যদি ধরে না রাখতে পারি, তবে এই শিক্ষাজীবন বৃথা বলাই শ্রেয়।

আজকাল যাতায়াতে বাসে-ট্রামে প্রায়শই চোখে পড়ে কিছু শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা সিটে বসে ফোনে ব্যস্ত অথচ পাশেই বাবা-মায়ের বয়সী কোনো লোক দাঁড়িয়ে থাকে। সমাজে মানুষ বড়োই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে । কোনো কথা কাটাকাটিতে কিংবা হাতাহাতিতে সহযোগিতা না করে চুপ হয়ে দেখে চলছে । আমরা নিজেদের দেশ স্বাধীন বলে চিত্কার করি কিন্তু আমরা কী নিজের প্রবৃত্তির কাছে স্বাধীন হয়েছি, নিজেদের ইচ্ছে আকাঙ্খাকে মুক্তি দিয়েছি? আজও সমাজে কিছু মুখোশধারী মানুষ একাকিত্বের সুযোগে নোংরা কাজ করে চলছে মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে- আর প্রতিষ্ঠিত কিংবা নামীদামি  কেউ হলে মোমবাতি জ্বালছে, শাস্তির বিচার চলছে, সাধারণ কেউ হলে তা অন্ধকারের ভিড়ে চাপা পড়ছে-- এসব তো শিক্ষার সার্থকতার পরিবর্তে "প্রকৃত শিক্ষার প্রচার "-প্রসার নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-" শুধু চাকরির অধিকার নয়, মনুষ্যত্বের অধিকারে যোগ্য হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য।" নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাষায়--" মনকে রাশি রাশি তথ্য দিয়ে ভরে রাখার নাম শিক্ষা নয়। মনরূপ যন্ত্রটিকে সুষ্ঠুতর করে তোলা এবং তাকে বশীভূত করা--এই হল শিক্ষার আদর্শ"।

     একজন মানুষের শুধু পড়াশোনার দিক থেকে নয়, চারিত্রিক দিক থেকেও শিক্ষিত হওয়ার বীজ বপন হয় ছোটবেলা থেকেই পরিবারের হাত ধরে। কথায় আছে- একজন মানুষের জীবনের ভীত গড়ে ওঠে পরিবারকে কেন্দ্র করে মায়ের হাত ধরে। এরপর থেকে শুরু হয় পর্যায়ক্রমে-- প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক- এভাবে আস্তে আস্তে চলতে থাকে উচ্চ শিক্ষা থেকে সমাজে আদর্শ উচ্চশিক্ষিত রূপে প্রতিষ্ঠা।আর প্রত্যেক স্তরে শিক্ষার্থীর মনন বিকাশে একজন আদর্শ শিক্ষকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে । কথায় আছে- " শিক্ষক হলেন সমাজের মেরুদণ্ড " তবে একথা সত্য যে একজন শিক্ষার্থীর যথাযথ ও সুষম বিকাশে শিক্ষানুকুল পরিবেশের সাথে সাথে একজন মায়ের ভুমিকাও অপরিসীম। হাবার্ট বলেছিলেন-" একজন মা একশোজন শিক্ষকের সমান।" একটি বিশাল অট্টালিকা তৈরিতে যেমন একদম নিচ থেকে শক্ত ভিত গড়ে তোলা প্রয়োজন, তেমনি একজন আদর্শ মানুষের ক্ষেত্রেও ছোট্টবেলার সেই বাল্যপাঠ থেকে অনূকুল পরিবেশের আচার-আচরণসহ সমস্ত ভিত শক্ত হওয়া প্রয়োজন। তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে চারপাশের পরিবেশ আদর্শকতা ও শ্রদ্ধা-ভক্তির সাথে সাথে সময় সবকিছু বনে আনতে পারে। বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্মমহাসভায় শেষ অধিবেশনের ভাষণে বলেছিলেন যে--" মাটিতে বীজ পোঁতা হল, মাটি, বাতাস ও জল তার চারদিকে রয়েছে। বীজটি কী মাটি, বাতাস বা জল হয়ে যায? না-- চারাগাছ হয়। এই চারাগাছ বড় হয়; মাটি, জল,বাতাসকে আত্মস্থ করে সেগুলোকে বৃক্ষের উপাদানে পরিণত করে এবং ক্রমশ বৃক্ষ হয়েই বেড়ে ওঠে।"- ঠিক তেমনি করেই আমাদের চারপাশেও খারাপ- ভালো নানান রকম মানুষ রয়েছে। ফলে আমরাও কী সবার মতো হতে চাইব? না- তা নয়। আমাদের চারপাশের সকলকে নিয়েই নিজের বৈশিষ্ট্য সত্তা ঠিক রেখে সকলকে সচেতন করে ও শিক্ষা দিয়ে একসাথে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন ।

     প্রকৃত শিক্ষার আলো পেতে হলে অবশ্যই তার প্রতি সম্মান, ভালোবাস ও আনন্দ থাকা উচিত। সবার মধ্যে বুদ্ধি ও বিবেকবোধ আছে , শুধু তার সঠিক বিকাশ প্রয়োজন(Education is the manifestation of the perfection already in man"- Vivekananda)। আর সঠিকভাবে চলতে গেলে চাই একটু আনন্দ, শান্তি আর একটা বাস্তব স্বপ্ন ।আর তার জন্য প্রয়োজন জীবনে একটা সত আদর্শ, যা শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব। কবিগুরুর ভাষায় বলতে গেলে-- " শিক্ষার-জ্ঞান, প্রেম ও কর্মের মিলন ঘটিয়ে আনন্দ এনে দেয়।আর এই তিনের মধ্যে কোনোরকম বিচ্ছেদ ঘটলে সেখানে আনন্দ থাকে না। সুতরাং তিনের মিলনই আনন্দ।" আর জীবনে একজন সার্থক শিক্ষিত হতে গেলে আনন্দিত থাকা জরুরি।সাথে সাথে সকলকে সমান চোখে বিচারবোধ ও বিবেববোধে দেখা প্রয়োজন তবেই এ জীবনে গৃহীত শিক্ষার সার্থকতা প্রকৃত অর্থে ফুটে উঠবে।


 



গরীব-গাথা
সুব্রতচট্টোপাধ্যায়

রাজার হাতে সুখের চাবি
আমার তাতে কি?
আমার তো সেই নুন-পান্তা
রাজার পাতে ঘি।

আমরা তো সেই ঘাম ঝরিয়ে
দু-মুঠো জোটাবো,
আশায় থাকি, কবে বুঝি
রাজার প্রসাদ পাবো।

রাজা থাকেন রাজপ্রাসাদে
আমার ফুটো চাল,
রাজার ছেলে হৃষ্টপুষ্ট
আমারটা কঙ্কাল।

রাজা আসে রাজা যায়
ছবি থাকে একই,
যতই শোনাক আশার বাণী
সবই জেনো মেকি।

রাজার আছে অনেক কিছু
তাই হারাবার ভয়,
আমরা তো সব দুঃখজীবী
নেই কোনো সংশয়।

যদি গরীবগুলো একজোট হয়
একসাথে সব মেশে,
বদল তবেই আসবে জেনো
হীরক রাজার দেশে।।




  পারুল(১)
বদরুদ্দোজা শেখু


এক যে আছে পারুল  মেয়ে , জানো সে কোথায় থাকে
টাটির  ঘরে বাস করে সে বেলপাহাড়ির বাঁকে।
চারিপাশে ঝোপজঙ্গল গাছগাছালির মেলা
তাদের ভিতর করে সে মজার লুকোচুরি খেলা,
খেলার সাথী জানো কারা ? বিড়ালছানা মালু
আর পোষা এক কুকুরছানা প্রভুভক্ত কালু।
লাল নীল ছাপ ফ্রক পরে সে , বেণীতে ফিতে লাল,
শ্যামলা মুখে ঝকঝকে দাঁত হাসে যেন সকাল।
ফুলগুলো সব হাওয়ায় দোলে,ফড়িং প্রজাপতি
উড়ে বেড়ায় ওদের মাঝে ছোট বড়ো একরতি,
হরেক বুনো ফুলের মাঝে ফ্রকপরা এক পরী
ঘুরে বেড়ায় সকাল সাঁঝে আনন্দলহরী।
সন্ধ্যা হ'লেই ঘুমোতে যায় মায়ের কোলে শুয়ে
পিছু পিছু সাথ ধরে তার মালু কালু দু'য়ে।
গল্প শোনায় মা যে তখন ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমীর
ঘুমায় পারুল, ঝিমায় মালু, সজাগ কালু বীর।




যুদ্ধবিলাসী
প্রভাত দেব মন্ডল

ওরা যুদ্ধ বাধাবে যখন খুশী         
যেখানে খুশী
          যেকোনো ওজরে,
          যুদ্ধ অপরাধী করে--
          যাকে যখন খুশী
ধরিয়ে দিতে মানুষের  লালসাকে উসকাবে,
হাজার হাজার অপমৃত্যু,
ওদের ভালো লাগায়,না লাগায়
ওরা যা চায়  তাই কেড়ে নিতে
                          ওজর  খুঁজে বেড়ায়,
এমন আদিম তন্ত্র খোলাখুলি চালায়,
তবু----সভ্যতা নামক শব্দটা
                       ওদের পুরোপুরি কব্জায়।
কোনো দেশ ওদের যুদ্ধ অপরাধী বলবেনা
ভয় পায়,  পাছে সমর্থন হারায়,
                    একঘরে  হয়ে যায়,
কারণ     আমাদের অন্ন,
               আমাদের বস্ত্র,  আমাদের তেল
              সবকিছু ওদের ঘরে যায়
আমাদের আছে অর্থদায়,
                             আর ওরা----------ওরা
                             অর্থ খুঁজে খুঁজে অর্থ দেয়।
আমাদের সুখ -  দুঃখ সব ই যে
                               ওরাই চালায়,
যখন খুশী  যেখানে খুশী
যুদ্ধ করে----করে -----
যুদ্ধ অপরাধীদের   খুঁজে বেড়ায়।





 যুগান্তরের প্রেমিক হব
 অরুপ দাস

আবারও ফিরবো চেনা পথে
এই যুদ্ধ জয়ের শেষে ,
তখনই দেখা হবে আমাদের
হাঁটবো কিছু পা এক সাথে
ওই নরম সবুজ ঘাসে ।
হবে কিছু কথা আর বন্য ভালোবাসা
সে ভালোবাসায় ভেসে ,
যুগান্তরের প্রেমিক হয়ে ঘুরবো দীপান্তরে  ।





                রাষ্ট্র জবাব দাও
                  হামিদুল ইসলাম

পরিযায়ী পাখিরা চলে গেছে
ফিরে আসে পরিযায়ী শ্রমিক
ক্ষুধায় তৃষ্ণায় বিবস্ত্র জীবন সারাদিন পথ হাঁটে
ওরা আজ পথের পথিক   ।।

ওরা পারবে কি আসতে ফিরে কোনোদিন
আপন বসত বাটি
পায়ের নীচে কাঁটা বিছানো রাজপথ
উত্তপ্ত পায়ের মাটি    ।।

হাঁটি হাঁটি পা পা
সেই কচি শিশুটি এখন হয়েছে কতোটা বড়ো
মনের গভীরে প্রতিদিন খেলে শূণ‍্যতার আকাশ
তবু যেনো কাছাকাছি হয়ে থাকি জড়ো  ।।

আরো জোর  আরো জোর
প্রতিদিন আরো জোরে হাঁটা
পথের শেষ নেই। ক্ষুধার জ্বালায় ছেড়ে যায় প্রাণ
রাষ্ট্র জবাব দাও। বিভৎস আর্তনাদে কেনো তার দুঃখ বুকফাটা  ??





বার বার যে কথা তোমায় বলেছি
           বিনয় ডাঙ্গর


এই যে অত্যন্ত সুস্বাদু নিমের আচার
আমি হাসিমুখে খেয়ে নিচ্ছি
কতবার বলেছি এর চেয়ে ভালো খাবার
আর হয় না

এ কথা কি সত্যি

এই যে তোমাকে প্রতিদিন বিকেলের আলোয়
দাঁড়িয়ে রেখে আমি আকাশ দেখছি
তোমাকে অস্পষ্ট হতে দেখে
আমার মনে পড়ছে কোটি কোটি বছরের অন্ধকার নামা
এই দৃশ্য আমি তো কোন নাটকে পড়িনি

তবে তুমি কি সত্যি

এই যে সকাল থেকে আমাদের ঘর বিমানবন্দর
আমি কি চেয়েছিলাম এভাবে বানাতে

কতবার বলেছি তোমায়
অনামিকার জন্য সামনের দরজাটা খুলেই রাখো

ও কি আর আসবে

প্রতি রাতে শোবার ঘরে তুমি যেভাবে আলো নেভাও
মনে হয় পৃথিবীতে আর সূর্য থাকবে না

তোমাকে কতবার বলেছি
অন্যভাবে বানাও,
অন্যভাবে হাঁটো,
অন্যভাবে চিৎকার করো

দুপুরের বিছানাটা দেখে মনে হয়
একই রোদ পড়ে আছে তোমার চুলে
চুল মানে তুমি তো বিনুনি ছাড়া আর কিছুই
বুঝলে না
আমার বিনুনি ভালো লাগে কিন্তু কতবার বলেছি
বলো
এই চুল আমার চোখ কালো করে দেয়





          খোকার প্রশ্ন
        সত্যব্রত চৌধুরী


বল্ দেখি মা, এত এত জল কোথা হতে আসে  ?
আকাশে কি নদী আছে? - সেই জলেই কি সব ভাসে?
তারই জল কি মেঘেরা সব আনছে মুখে করে ?
ঝর্ ঝর্ ঝর্, রিম ঝিম ঝিম - খেলা পণ্ড করে ।
জানালায় বসে তখন দেখি ঝাপসা চারিদিক ,
কালো মেঘে বাদল ঝরে জল করে থিকথিক ।।

জানি তুমি বলবে, এসবই বরুণদেবের কৃপা  ¡
বর্ষা-বাদল, মেঘ ভরা জল -- সৃষ্টি অপরূপা ।।

তাই যদি হয় সত্যি, তবে বল দেখি মা আমায় --
এত জল কি রাখা আছে বরুণদেবের মাথায় ?
বর্ষা বিদায় নিলে, মাগো কালো মেঘ উধাও হলে,
পথ-ঘাট সব শুকালে,মাঠও সবুজ হলে --
দুধ-সাদা রঙ মেঘ যত সব ঘোরে দিবারাতি ।
তার মুখে কি জল থাকে না -- ফাটে নাকি ছাতি ??

তখন তুমি বলবে জানি -- কাজ মিটেছে তাই ,
মেঘের ভেলায় ভাসছেন সেই বরুণ দেবতাই ।।

তোমার কাজ তো ফুরোলে মা সেলাই নিয়ে বসো ,
নয়তো মোরে পড়তে বসাও জোরে ধমক কষো ।
গল্প পড়া, ছড়া বলা, কিম্বা ছবি আঁকা ,
আমায় যেন হতেই হবে সব কিছুতেই পাকা ।
বরুণের কি নেইকো পড়া, কেবল কাজ আর খেলা ?
আমিও তবে খেলব মাগো কাজ করব মেলা ।।

 

  কৃষক
 আনোয়ার হোসাইন

কৃষক মাঠে কাজ করে
মলিন পোশাক গায়ে পরে
রোদ খরা আর ঝড়- বৃষ্টি
মাঠেই তাহার সর্বদাই দৃষ্টি ।

প্রখর রোদের তীর্যক রশ্মি
পতিত হয় তাহার দেহে জানি
দুইবেলা দুইমুঠো অন্নের লাগি
পুড়াইছে সে নিজ দেহখানি ।
ইসহাল বৃক্ষের বাকলের ন‍্যয়
চর্ম , বাবলার বাকলে এখন সে হয়েছে পরিনত।

তাহার রক্ত নিঃসৃত  ঘামের ঝর্ণায়  উৎপাদন করছে অন্ন 
 আমাদের দেশের মানুষের জন্য ,
কত ফুল  ফল আর শাকসবজি
এ সব যা কিছুই আমরা গ্ৰহণ করি সবই তোমার শ্রমের সৃষ্টি ।

শীত মৌসুমে পিঠা, পুলি ,পায়েসে
আর  নলিন গুড়ের স্বাদে
 রসদ নিয়ে আসে
জিভের অগ্ৰভাগে
যা সব কৃষকেরই হাতে।

যারা তোমার করে অবহেলা
তুমি খাদ্যের যোগান না দিলে
সাহেব বাবুরা বাঁচবে কেমন করে।
দুঃখ কষ্ট লাগে সেই সময়ে ,
সাহেব বাবুরা যখন তোমার ট্রেনে ,বাসে ট্রামে আর রাস্তাঘাটে
 গেঁয়ো ,গাধা আর মূর্খ বলে।
তবুও তুমি করোনি কখনো
কোনো অভিযোগ আর অভিমান।

আমি কৃষক  আজ দিশেহারা
ঋনে আমি জর্জরিত
তাইতো মৃত্যু আমার অনিবার্য।





    বেথা
      শেখ মনিরুল ইসলাম

কেন বেথা দাও
এ বুকের মাঝে তে
যদি যেতে চাও
তবে বলো কেন?
আমায় ছেড়ে  যাও।




   প্রিয়া তুমি
  বিমান প্রামানিক

অন্য নামে চিনিনা তোমায়, তুমি অনামিকা,
গুনবতী তুমি দাও আমারে দেখা।
চিরকাল থেকো পাশে, করি অর্ঘ্য নিবেদন,
পাশে আছো, সাথে আছো, তবু অবুঝ মন।
চিরসাথি রুপে রাখবো তোমায় পাশে সারাক্ষণ,
পারবো না রাখতে ধরে, একলা এ জীবন।
তুমি আছো অনেক দুরে, তাই মনে কত ভাবনা,
চেনার মাঝে কখনো যেন অচেনা হয়ো না।
সুখের সাগরে কাণ্ডারী তুমি, যাত্রী কেবলই আমি,
অণু-মানে তুমিই শুধু, আর কিছু না জানি।
স্রোত সাগরের অথৈ জলে যদি হারিয়ে যায়,
বাঁচবো আমি তবুও, সাগর পাড়ে তোমার দেখা পাই।
যে বিপদেই পড়িনা কেন? উদ্ধারিব আমি
সাথে থেকো, পাশে থেকো, অর্ঘ্য নিয়ে তুমি।




তুমি
মৃত্যুঞ্জয় হালদার

চুপ চুমুতে চৌচির চমকিত চাঁদ
জোয়ারে জীবন জাগুক ভেঙে যাক বাঁধ।
আজ আর আকাশে আশঙ্কা নয়
মৃদু মৃদু মোহ মেঘ ময়দানময়।
সেই সুরে শুক সারি গেয়ে যাক গান,
হারালে হারাক হৃদয় হোক খান- খান!
তুমি তুমি তুমি শুধু তুমি সেই জন
যার জন্য জীবন বন্য হন্যে হলো মন!
কী সামান্য অসামান্য সুখের তরে হায়,
আজীবন কি ভীষণ অনন্ত মন  ধায়!
তবুও আশা ভালোবাসা মরে মাথা কুটে,
কোন সুখে কী অসুখে অহরহ কেন ছোটে!




হত‍্যাকারী
শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার

ফুলের মত রঙীন ছিলে,
পাপড়ি ছিঁড়ে হাওয়ায় কত,
উড়িয়ে দিলাম বৃন্তচ‍্যূত,
রঙীন শরীর, নরম মত।

ফুলের মত রঙীন ছিলে,
ওষ্ঠাধরে ছোঁবার ছলে,
কামড় বসাই জিহ্বামূলে!
রক্ত ফোটে ফুলের পাখায়,
রক্তজমাট নীল হয়ে যায়!

ফুলের মত রঙীন ছিলে,
বাগানবিলাস ঘরের কোণে,
সবাই এসে ধন‍্য করে,
হাততালি দেয় বাহবা বলে!
ফুলের মত সরল ছিলে,
পাপড়ি ছিঁড়ে খুন করেছি,
ফুল ফোটানোর আবেগ ভুলে,

পাপড়ি ছিঁড়ে হাওয়ায় কত
উড়িয়ে দিলাম বৃন্তচ‍্যূত,
রঙীন শরীর, নরম মত!





          ঘড়ি এবং সময়
           সোহিনী শবনম

    আপনাদের কি মনে পড়ে, কীভাবে প্রথম ঘড়ি দেখা শিখেছিলেন? আপনারা বরং মনে করুন। সেই অবসরে আমি আমার সময় গণনার গল্পটি বলি।
     বয়সটা ঠিক মনে নেই।গ্ৰামের বাড়িতে ছোট্ট থেকে বড় হয়ে ওঠা। সময়ের হিসাব, ঘন্টার পরিমাপ এবং প্রত্যেক সেকেন্ডের গুরুত্ব বোঝার মতো বয়স হয়নি তখন। যৌথ পরিবার-শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, হেঁশেল ঘর, গোয়াল ঘর,ধান রাখার ঘর-এই সমস্ত ঘরে বিভক্ত গোটা বাড়িটা। তখন তো আর 2Bhk বা attached bathroom এর কথা জানা‌ ছিল না। যাই হোক, শোবার ঘর থেকে হেঁশেল ঘর একটু দূরে,মানে খোলা আকাশের নীচে দিয়ে উঠোন পেরিয়ে ঐ পেয়ারা গাছের পিছনে হেঁশেল।
      মা,বাড়ির বড় বউ, বাড়ির হেঁশেল সহ নানা কাজের মূল চালিকাশক্তি হলেন আমার মা। আনাজ-পাতি কাটা হলে হাঁড়ি নিয়ে তাতে কাদা মাখিয়ে,কাঠকুঠো-পাতা জোগাড় করে, উনুন জ্বালিয়ে তবেই রান্নার শুভারম্ভ। না!না! গরীব নই, LPG gas এর ব্যবস্থা তখনও ছিল, কিন্তু সকালের রান্নার জন্য উনুনই সম্বল। ইস্কুল তো সময় মতো যেতে হবে,তাই গরম ভাতটাও ঠিক সময়ে সামনে পাওয়া চায়। রান্না করতে করতে মা ডাক দিলেন-"কই রে, কটা বাজে একবার বল দেখি!" ছুট্টে গিয়ে মায়ের সামনে হাজির হয়ে বললাম-"আমি তো ঘড়ি দেখতে জানি না মা..."
       মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী ঘড়ি দেখে সময় বলা শিখলাম-বাজে তখন সাড়ে আটটা। কীভাবে শিখলাম?সবুর করুন,বলছি।
       "ঐ যে ঘড়ির ছোট্ট কাঁটাটা,আট আর ন'য়ের মাঝে,আর বড় কাঁটাটা ছ'য়ের ঘরে।আর ঐ যে আরেকটা সেটা তো দাঁড়াচ্ছেই না, মা!!!"
         
           



"সোনালীদের জামাই ষষ্ঠী
   মুহাম্মদ ইসমাইল

   
বড়ো সাধ করেই বিয়েটা দিয়েছিলাম। কে জানতো কপালে এতো দুঃখ আছে। সোনালীর মা কথাটা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।

একমাত্র মেয়ে সোনালীর বিয়ে হয় পাশের গ্রামের মোড়ল সুমন ওঝার ছেলে যতিনের সাথে। অবস্থা ভালোই। মেয়ে সুখে থাকবে এটা সব বাবা মা ই চাই।
    বিয়ের দুই তিন মাস পর থেকে অশান্তি শুরু।দেনা পাওনার হিসেব।    গরীব বলে এটা সেটা কত্তো কথা শুনতে হয়  সোনালীকে। বছরে একবার জামাইষষ্ঠী। তাতে ও ভিখারির মতো আচরণ ... ইত্যাদি ইত্যাদি।         
       এবারেও সাধ্যমতো  চেষ্টা করেছে জামাই ষষ্ঠীতে জামাইয়ের মন ভরাতে। নতুন পোশাক, ভিন্ন স্বাদের রান্না পোলাও, মটন বিরিয়ানি, কচু  চিংড়ি , দই, মিষ্টি, বাহারি ফলমূল। কিন্তু মন যার তেতো, কোনো মধু মিষ্টিতেই তা মিষ্ট হবে না।   
   অনেক বলে কয়ে   জামাই এসেছে । অন্তরের পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে কেনা পোশাক গুলো জামাই এর হাতে তুলে দিতেই ---
   "একি!  আমাকে কি ভাবেন?  আমি কি ফকির?  এই ফুটপাতের পোশাক আমি পরবো! আমার বাড়ির চাকররা তো এ-র চেয়ে দামি পরে।"

-----সোনালীর মা বিনীতভাবে   বলল --"দেখো বাবা,আমাদের সাধ্যমতো ভালো কাপড় কিনেছি।তুমি গ্রহণ করলে আমরা খুশি হবো। "
 
 --যতীন কিছু  না বলে বেরোতে যাচ্ছিল, সোনালী থামিয়ে দিয়ে বলল --"আজকে আমি তোমার জন্য নতুন নতুন রান্না করেছি। একটু খেয়ে যাও।"
 যতিন বিরিয়ানির থালা থেকে এক চামচ মুখে দিতেই ---
  "ওয়াক্ থু! এ কি রান্না করেছো?  এটা বিরিয়ানি হলো?  যত্তসব......" যতিন রেগেমেগে  বেরিয়ে যায়।

  হায় রে কপাল!হায় রে সুখ!   সোনালী ও সোনালীর মা হাঁউমাঁউ করে কেঁদে  একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো...    ..।





নদী কথায় ভেসে যায় .....
              তীর্থঙ্কর সুমিত


বলতে বলতে বলাটাই বাকি থেকে যায়।প্রতিদিনের আশ্চর্যতা মূলত ভাবায় না কাউকে।শুধু আঙ্গুলের পরিবর্তন। কথার সাথে বিন্দু পরিবর্তন হতে হতে কখন যে বৃত্ত ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে বহুদূর।কেউ খবর রাখেনা।খবর রাখে স্রোতস্বিনী নদী তার ঢেউ হারিয়ে চুপ করে বসে আছে।কিন্তু তা ক্ষণিকের আবার ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিয়েছে পাড়।এভাবেই নদী আমায় গল্প শোনায় প্রতিদিন।আমি ভেসে যাই নদী বুকে বহু বহুদূর ...




1 comment:

  1. 'হত্যাকারী' কবিতাটি অসাধারণ লাগলো।

    ReplyDelete