PravatiPatrika

Tuesday, July 7, 2020

আজকের সংখ্যা

 



                       অপত‍্য
              শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার

সরু গলির পাশে উপচে পড়া ডাস্টবিনের পাশে একমাথা উকুন আর ছিন্ন পোশাকে তার মা ! মা টা পাগলী ! মাঝে মাঝে উদোম হয়ে ঘোরে। ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খায়। কিন্তু সেই যে ওর আসল মা   সেটা ও জানে । কেউ বলে দেয়নি, তবু জানে। যেমন বাপ বলে কাউকে সে চেনে না। ছোটবেলাটাও তার মনে নেই। এখানে কতদিন আছে তাও জানে না। চোখ বুজলে মা' ছাড়া কিছুর স্মৃতি মনে নেই। মাথার উপর শহরের ধোঁয়াভরা আকাশ আর পাশে মা, সম্পূর্ণ উলঙ্গ। সারাগায়ে আবর্জনা মাখা। তার মধ্যে থেকে কোথা থেকে একটা ছেঁড়া ন্যাকড়ার  পুতুল কুড়িয়ে পেয়েছে সে।শুকনো ঝুলে যাওয়া বুকে পুতুলটাকে ঠেসে ধরে। একটু পর আক্রোশে ছুঁড়ে ফেলে দেয় দূরে। সে দেখতে পেয়ে  পরক্ষণেই একটা শতচ্ছিন্ন কাপড় জোগাড় করে  আনে আর তার  মা'র  গা টা ঢেকে দেয়। সেটা গায়ে জড়িয়ে নরম ভোরের আলোর মত তার পাগলী মা হেসে ওঠে !

গলির সামনে  বড় রাস্তার ওপারে  ফ্ল্যাটবাড়ির পার্কিং লটে যত গাড়ী আছে সবগুলো সে মোছে টাকার বিনিময়ে। ওখানে সবাই ওকে ছোটু বলে ডাকে। মোটামুটি দিনে দুশো টাকা কামাই হয়ে যায়। ফ্ল্যাটবাড়ির লোকগুলো ছোটু বলে না ডাকলে ও জানতেই পারত না ওর কোন নাম আছে ! পাগলী কোনও দিন নাম ধরে ডাকেনি ওকে। খাবার এনে মুখের সামনে ধরলে খানিক দেখে, শোঁকে , তারপর খেয়ে নেয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এখান থেকে  পালিয়ে গেলে বেশ হয় ! আসলে পাগলী আর ওর কোমরের নীচে একটা একই রকম জরুলের জন্মদাগ আছে। ওই দাগটার জন্যই পাগলীকে ও মা বলে। ছেড়ে চলে যেতে পারেনা শেষ পর্যন্ত। গুলতির টিপটা খারাপ নয় ওর। দুটো কাকের একটা উড়ে গেল। অন্যটা মুখ থুবড়ে ডাল থেকে পড়ে গেল। কি অদ্ভূত ! দুনিয়ার যত কাক যেন জড়ো হয়ে গোল করে চক্কর মারতে লাগলো। পুরো ব্যাপারটাই ফ্ল্যাট বাড়ির সামনে হচ্ছে।

প্রায় পঞ্চাশটা কাক এখন সমস্বরে চেল্লাচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়িটার সামনের  কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে।
কাকেদের ডাকটা শহরটার ক‍্যাকোফোনির সাথে বেশ সঙ্গত করে কিন্তু। আসলে  শহরেরর দিনরাত্রি  একটা  ছিন্ন তমিশ্রার তন্তু হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন।  এখানে প্রেম,ঘৃণা, হতাশা,শরীর সবই সুস্থতর ধনবান নাগরিকের একচেটিয়া। সেখানে এক অর্ধউলঙ্গ উন্মাদিনীর হাসি শুধু  ফুকরে ওঠে খাবারটা মুখে তোলার আগে !
 সেও এতদিনে জানে প্রতিটি সম্পর্ক আসলে এক জটিলতর স্বার্থের বোঝাপড়াই।  মরা কাক কে ঘিরে বাকী কাকেদের সাময়িক বিক্ষোভের মত তা সবই মুহূর্তকালেই তা মিলিয়ে যাবে একই রকম উদাসীন নির্লিপ্তিতে। শুধু রয়ে যাবে  ধূসরবর্ণ চিত্রপটে একটি অপার্থিব  দৃশ‍্যকল্প।

 যে  বালকটি  এখন তার  সদ্য  কৈশোরের জাগৃতিতে সে কেবল তার জন্মদাগের স্বার্থশূন্য  কারণেই এক উন্মাদিনী নারীর নগ্নতাকে ঢেকে রাখে  পরম মমতায়। সেই যেন আসলে এক অলীক পক্ষীমাতা। তার নিশ্চিন্ত পক্ষপুটের  আশ্রয়ে সে ঢেকে  রেখেছে  ক্ষমাহীন ক্লিন্ন পৃথিবীর শেষ অবশিষ্ট একমুঠো অপত‍্য স্নেহকে।



       "কদম ফুল"
       বিমান প্রামাণিক


বর্ষাকালে কদম ফুল গাছে কত ফোটে
মধুর টানে ভ্রমর যত সে দিক পানে ছোটে।
কদম ফুলে ভরা গাছটি, দেখতে লাগে বেশ!
কদম ফুল কুড়িয়ে শিশু সাজায় খেলার দেশ।
এমন ভারী সুন্দর, যেন সবাই ভালোবাসে
গাছের তলায় ঝরেও পরে দেখি দিনের শেষে।
চক্ষু মেলে দেখি যতই, ততই অবাক  লাগে,
ফুলের পরে ফলটি যখন ঝোলে গাছের শাখে।







      আগ্রাসন
  বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

বৃটিশের অন্তরে-নবাবী প্রাসাদের অন্দরে,
বোনে ষড়যন্ত্রের জাল,
মীরজাফর,জগৎ শেঠ-বৃটিশে দেয় ভেট,
পুড়া'ল বাংলার কপাল।
নবাবের প্রধান সেনাপতি-মনে ভাবে বাংলার নৃপতি,
খাল কেটে ডেকে আনে কুমির,
যুদ্ধ ক্ষেত্র মাঝে-রণ সজ্জার সাজে,
মীরমদন,মোহনলাল শহীদ দুই বীর।
যুদ্ধের দ্বিধাদ্বন্দ্বে-নবাবী প্রাসাদের অলিন্দে,
সব কিছু শেষ,
মীরজাফর,উঁমিচাঁদের চক্রান্তে-ঘসেটি বেগমের উদভ্রান্তে,
রহি'লনা স্বাধীনতার লেশ।
কোম্পানিরে দিতে উপঢৌকন-ক্লাইভের পদ লেহন,
ছিলনা লজ্জা ভয়,
বিচারের বাণী বিকৃত-সিরাজ হত্যায় উদ্যত,
মীরনের হৃদয় দগ্ধ নয়।
সিরাজের নিথর দেহ-দূর হয় ঘসেটির সন্দেহ,
বাংলার বিপদ আচম্বিত,
জাফর আলির উদ্যোগ-ঘসেটির জোটেনি রাজভোগ,
শক্ত ছিলনা সিংহাসনের ভিত।
কোম্পানি কলকাঠি নেড়ে-নবাবী সিংহাসন কেড়ে,
তবুও দেয়নি নিস্তার,
বাংলার স্বাধীনতা হরণ-বাঙ্গালি মননে দহন,
বাড়া'ল সাম্রাজ্য বিস্তার।






                     " জীবন "
                হামিদুল ইসলাম।
                   

আজ কবিতার বাসর
টেবিলের উপর সাজানো গোছানো
কবিতার বই
ঠিক যেনো ঊৎসব  ।।

জীবন উৎসবের পাতায়
তোমার নাম
কবিতার আখরে খোদাই করে রাখি
রামধনু রাঙা আকাশ বরাবর  ।।

তোমাকেই ছন্দ ভাবি
বৃক্ষের শেকড়ে রাখি প্রেম
কবিতারা গানের বিরামে ফেলে রাখে নির্যাস
অটোফেজি জীবন   ।।

দুহাতের পাশে আরো দুহাত
নিশুতি রাত
বেআব্রু বুকের রক্তশিরা
পৃথিবী এখানে হারিয়ে যায় প্রতিদিন নেই কোনো মানা   ।।







উপাস্য
প্রশান্ত ভৌমিক


জলের মধ্যে নাকি আগুন জ্বলে,
সত্যি বলছি, আমার জানা নেই।

জানার মধ্যে কেবল এইটুকু জানি
খাদ্য ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

বাদল দিনে নাকি বৃষ্টি হয়,
আমি দেখেছি কিনা জানি না।

শুধু মনে পড়ে বৃষ্টির দিনে
খাবার যোগাড় করতে কষ্ট হয়।

শীত নাকি পিঠে খাওয়ার ঋতু,
আমার তো তখন ভাতই জোটেনা।

আমি স্বীকার করছি খোলা মনে,
খাদ্য, কেবল খাদ্যই আমার উপাস্য।






        নতুন পৃথিবীতে
                  ডঃ রমলা মুখার্জী

ঔদ্ধত্যের সোপান বেয়ে এ কোন অমানবিক পৃথিবী !
বিবর্তনের পথে হেঁটে ধ্বংসের দেওয়াল, যেখানে পিঠ ঠেকিয়েছে দ্বিপদচারীরা।
কালো ধূমে আবৃত সভ্যতার প্রশ্বাসে প্রতিনিয়ত বিষের ছোঁবল!
অরণ্যবাসীর স্হান কেড়ে লাস্যময় নগরকীর্তন।
কংক্রীটের বহুতলে স্বার্থের বিকট উল্লাস !
কদর্য লালসায় লালায়িত স্নায়ুরা স্হবির, বিকল।
প্রসারিত হোক হৃদয়ের অলিন্দ....
টাটকা অম্লজানের জন্য ফিরিয়ে আনি সবুজ।
দূষণ মুক্তির শেষে প্রতিটি প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই...
পৌঁছে যাই নতুন সকালে নতুন পৃথিবীতে ......
যেখানে মানুষের রক্তে মানুষ কলুষিত নয়,
আমিকে ছুটি দিয়ে আমারাকে আমন্ত্রণ করি।
সবাই বাঁচি একসাথে লুপ্তপ্রায়দের কাছে টেনে।
পাখির কলতানে ভরাই উঠান, অলির গুঞ্জনে বাতাস হোক আমোদিত।
সুন্দর সেই মানবিক পৃথিবীতে ভালোবাসার ফুল সুগন্ধ ছড়াক।







    পল্লী বধূ
তাপস চন্দ্র বর্মন

কলসি কাঁখে সোনার হাতে
    সোনার কাঁকন পরে,
পল্লী বধূ ঝিনিক ঝিনিক
   যাচ্ছ কাহার ঘরে?
তাড়াতাড়ি যাইও বধূ
    সন্ধ্যা নামে ঐ,
দীপ জ্বালিয়ে পথ দেখাবে
   এমন মানুষ কৈ?
হয়না শৃগাল শকুনেরা
   থাকে পথের বাঁকে,
কাঁকন ধরে টানবে তোমার
   উদাস মনের ফাঁকে।
           





" তারুণ্য "
জুয়েল রুহানী

তরুণ সে তো দুর্বার,
ভেঙ্গে করে সর চুরমার
অন্যায়ে কভূ শির নত নয়-
জয়ের নেশা রক্তে মেশানো-
তাঁরা মানে না কখনও পরাজয়!
সত্য তাঁদের পুঁজি
কর্ম তাঁদের রুজি
মহাপ্রলয়ের হুঙ্কারে তাঁরা
পেশিতে যোগায় অসীম শক্তি
গোপনে তাঁদের অশ্রু রোদন-
করে এক আল্লাহর ভক্তি।
তাঁরা ভয় করে না
শিরশ্ছেদে মিথ্যার,
অসীম সাহস বক্ষে ধরে-
তারা তৎপর  যুদ্ধে যাবার।





আগুন
জহরলাল দাস

অতিমারী,মহামারী
 যতই আসুক ঝড়,
 লেগে আছে তবুও ভাই
 হিংসা বিদ্বেষ
 দারুন পরস্পর!
 মাটি নিয়ে কাটাকাটি
 চীন করেছে খুন
 শহীদ মায়ের বুকে জ্বলে
  ক্রোধের আগুন।
  ঘরে আগুন বাইরে আগুন
  আগুন সারা দেশ
  কোন আগুনে পুড়ব মোরা
   বিপদের নেই শেষ।
   মারন রোগে বান ডেকেছে
   লাগছে দেহে দোষ
   ধরিত্রী মা জ্বলছে ক্ষোভে
   তবুও নেই মানবজাতির হুঁশ!





"সমাজ চেতনায় স্তম্ভ বিদ্যাসাগর "
    অমরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী

হে মহান, সমাজে এনে ছিলে নতুন আলো,
অন্ধ সমাজের কুঁড়িতে
পাতায়, পুষ্পে---
সমাধানের উৎস খুঁজতে খুঁজতে পেয়েছিলে অসহায় বিধবাদের
সুখের পেখম
বিধবাদের ব্যথিত দেওয়ালের আঁধার,
সাজানো বিছানো,
লাল পেড়ে শাড়ীর চমক
যৌবনের গোধূলি বেলার
রাঙা ঠোঁট
এ ব্যথা থেকে মুক্তি দিলে
নারীর বুকে ভালোবাসার তরঙ্গে খোঁপায় গুঁজে দিলে
লাল গোধূলির মিস্টি ফুল
হে মহান,
তুমি শুধু বিদ্যার সাগর নও
তুমিই সমাজের জাগরণের দেবতা,
নারীকে মর্যাদা দিয়েছো
হৃদয় জুড়ে
আজ তবে নারীর সংসারে
কেবলি ধুলো,
নেই নতুন বধূর লাল শাড়ির এয়োতি রং
মাখা পদ্ম মুখ---
চারিদিকে শুধুই অসভ্যতার ফাটল,
নেই জননীর কোলে স্নেহভরা ভালোবাসার আদরের স্পর্শ
ঝাঁঝরা ধরা কঙ্কাল সার সমাজকে
তোমার স্পর্শে মানবিক
শিল্প মহিমায়
আবার আলো দাও,
আলো দাও
এ আমাদের একান্ত প্রাথর্না






No comments:

Post a Comment