PravatiPatrika

Friday, May 15, 2020

শুধুই কবিতা

   নদীর কাছে
রথীন পার্থ মণ্ডল

এভাবেই যেতে হয়
নদীর কাছে
কিছু কথা বলতে

বালুচরে অল্প জলে
পা ডুবিয়ে শান্ত বসে

আপন মনে
ভাবতে হয় খেয়ালিপনা
তুলে রাখা দুপুরবেলা
আর
না মেলা হিসেব

এভাবেই...



        ত্রয়োদশপদী কবিতা 

             করোনাজীন
                    লক্ষণ কিস্কু 

কোথায় তোমার জন্ম? ছলনাময়ী,
কেন করো কণ্ঠরোধ?   মানব তনু
থরথর  কাঁপি,   তড়িৎ     চমকিয়া
যথা,- জীবকুল;  জলধি   বরষণে
ভাঙে বাড়ি  ঘর, আপন যেন পর। 
পৃথ্বী জুড়ে হাহাকার, ছিন্ন সেতার
বিরহ   বিধূ,   বাজেনা  মধুর  সুর
দূরদর্শন   বেতার  --  বিষাদবার্তা।

লাশ    যেন   ঝরা   ফুল,   মেঘ  চাদর
গায়ে ঢাকা; যায় না শোনা কান্না রোল।
জানি আমি। বিশ্ব সংসার গেছে ভেঙে
দূর্ণীবার     করোনাজীনের     তান্ডবে।
হে  ত্রাস!  ঠাঁই  নাই  আর  জীব  দেহে।।

   

          পাখিরাও গান গায়
                   বিকাশ চন্দ

প্রকৃতি যখন কাঁদ ছিল দিনে রাতে
কেউ শোনেনি হৃদয় ভরে,
অপেক্ষার ইতিহাস অচেনা প্রভাতে
বন্ধকী ঋণ জমে কেমন করে।

কিছু স্বচ্ছ কথা কিছু কালো অক্ষরে
এখনো তো মুক্ত অবশেষ,
ঋণ মুক্ত হবেই কিছু জীবন স্বাক্ষরে
হিসেবই করছে সব দেশ।

তবুও গণনা চলছে যুক্তির বিন্যাসে
রীতি নীতির ধার ধারেনা কেউ,
মুক্ত আকাশ প্রাণের মুক্তির প্রত্যাশে
এখনো প্রশান্ত সামুদ্রিক ঢেউ।

জমে আছে যন্ত্রণা এ পৃথিবীর অন্তরে
বোঝেনি হিসেব রাখার দায়,
বদ্ধ ঘরের মুক্তি আলো জ্বলে অন্দরে
শোন ঐ পাখিরা ও গান গায়।


                       অন‍্যমনপর্ব
                            সোমনাথ বেনিয়া

হৃদয় ফিরছে, ছায়াপথে শুভেচ্ছার ফুল ছড়িয়ে ...

আগুন নেভাও, শীতলপাটির পাশে রেখো জল
গাছের পাতা মুহূর্ত, বাদ যাওয়া দিনের ষোলো আনা
যে চিৎকার ঘাস হয়ে নিকানো উঠোনে মাথা উঁচিয়ে আছে,
তার কাছে এখন‌ও প্রশ্নহীন বাধ‍্যতা পাবে ...

দরজা খোলা, ঘুণের কড়কড়লিপি সংসারের আত্মকথন
যত চিঠি, তার পুনশ্চে উচ্ছ্বাস না-বলা কথার
ছায়া নিশ্চুপ থাকে শত কথার মাঝে, অর্থ বোঝো তার
নিজের হাতে-হাতে বিশ্রামের বাঁকে বসে থাকে অবসর

দৃষ্টি ফিরছে, সম্পর্কের জ্বরে তোমার নামের জলফেট্টি নিয়ে ....



          তৃতীয়  পুরুষ 
                 মৌমিতা পাঁজা

 নাড়ির বাঁধন ছিন্ন করে তুমিও  নিলে জন্ম 
তাচ্ছিল্য  এসমাজ তোমায়
বানিয়ে  দিলো  নিকম্ম,
সাধ যে  হয় তোমারও
 এ সুন্দর  পৃথিবী দেখার
  ঠুকরে মারে  এধরনী তোমায়
 বাসিন্দা করেছে চিলেকোঠার
 ভাই,  দাদা নাম না দিয়ে 
ডেকেছে  অন্য নামে,
খোঁজ  রাখেনা অস্পৃশ্য মনের অস্তিত্ব কেবল তৃতীয় নামক খামে।
স্বাধীন  চেতনা  থাকতে নেই, সভ্যতা বেঁধায় কুশ,
 তবে শ্রদ্ধা করে!
নিশিপল্লী নয় ঠিকানা 
তুমি যে তৃতীয় নামক  পুরুষ।



         লাল থান
          হাসিবুর রহমান


নারী পরিয়ে দিয়েছে সধবা
     পুরুষদের
   বৈধব্যের লাল থান।
সুস্থ শরীরে মিশিয়ে দিয়েছে
 বিষাক্ত  যন্ত্রনার কালো গ্রেনেড।
  ইরান-তেহেরান ইংল্যান্ড
   পেরু-চিলি-নরওয়ে পেরিয়ে
      ভারতের রাজপথে।
 তিরিশের কর্তব্য ধুকতে ধুকতে
 কাকের পেটের মতো খসখসে।
বেরঙিন পেট ফুলে ঝরে গেছে।
 
ছলনার তরবারি ছিঁড়ে দিয়েছে 
 পুরুষ অস্তিত্বের  সুক্ষ নেফ্রন।
 বাস্তব - পথ ভুলে চলে গেছে
 ঘোড়ার খুরের মতো বার্মায়,
   দিশাহীন পাগলের দেশে।
প্রেমের বেইমানি -
ভরসার বোতামখুলে উড়িয়ে দিয়েছে
 আকাশে- আগুনে-নেপচুনে।
যন্ত্রনার জলীয় বাষ্প সজারু হয়ে
 উসকে দিয়েছে মৃত্যুর ক্যেরিয়ার।
  চড়ুই বেঁধেছে বাসা দোতলায়,
 আড়ি দিয়ে কুল গাছ কে
 মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পারেনি ফেরাতে,
নিউটনকে পৃথিবীর পথে ।

  নারী- ধর্ষণ করতে করতে
 কক মুরগির মতোই নিস্তেজ
 করে দিয়েছে
    অব্যক্ত পুরুষ হৃদয়।
ফুজিয়ামার লাভাতে,
    নৈরাশ্যের ছায়াতে।
 স্বপ্ন নিয়ে এসেছে  স্বপ্নেরই দেশে।
ঐ বারান্দার নীচে ।
  পরনে লাল থান ,
হিজিবিজি কাগজ হাতে।
   কাগজ খুজতে খুজতে তিরিশ
  হারিয়েছে কাগজের ভাজে।
  সমাজ কে ছুড়ে দিয়েছে,
   নির্বাক, নিস্তব্ধ বিবেক।


        একটু অন্যরকম
             সৌমেন সরকার

প্রত্যাখ্যান মানে ফিরিয়ে দেওয়া নয়
প্রত্যাখ্যান মানে
চক্রবৃদ্ধি হারে ভালোবাসার প্রত্যাবর্তন...

যে থাকার সে এমনিই রয়ে যায়
বিনা কোন শর্তে
হাজার বার প্রত্যাখ্যান পাবার পরেও...

আর যে না থাকার,
হাজার বাঁধনেও তাকে-
হৃদয়ের মণিকোঠায় ধরে রাখা সম্ভব হয় না...

আমার ভালোবাসা
এক অন্তঃসলিলা নদীর মত
অপ্রকাশিত

যেখানে অনুবীক্ষনও কার্যকরী নয়
প্রেমের স্বরূপ দর্শনে...

কিন্ত,বোধগম্যতার গভীরে
নিহিত থাকে-
প্রেমের সমূল চক্রবৃদ্ধি...


      ফসিলস
 সৌরভ আম্বলী

খোলা দ্বার
আলো আধাঁর,
সব চুপ ---
মৃত স্তূপ ।

ঐ হাসে
কানে ভাসে,
কবরে কেউ ---
কাঁদে ভেউ ।

ক্লান্ত মন
নেই প্রয়োজন,
বিষণ্নতা জুড়ে ---
ফেলবো ছুঁড়ে ।

আঁকড়ে ধরবো
আলোর ঝিলিক,
পেলেও পেতেপারি ---
আনন্দের আলমারি ।

কালটা পারতো
আজ হতে ,
গল্পটা সময়ের ---
থাকতো হাতে ;
কান্নাটা পারতো
হাসি হতে ,
জেদটা দিত ---
সুদ পরক্ষণেতে ।

জীবনের রাজপথে
ফেলেছি সব স্নেহ ,
বাঁচতে শিখেছি
'ফসিলস' হয়ে
তাইবলে নই ---
আমি মৃত দেহ ।



       রাত নামে যমজ চোখে
            মুকলেসুর রহমান


একটা জরাজীর্ণ রাত জটিল ভাগ্য

আকাশে এখনো কয়েকটা তারা জ্বলছে
 যেন একেওপরের গায়ে আদরের বিলাসিতায় ডোলে পড়ছে
   চাঁদ বড়ই  নিরসঙ্গ ঠিক আমার পৃথিবীর মত!
আগামী দিনের কুয়াশায় ভাসছে আমার শহর

পৃথিবী আজ রুগ্ন খিটখিটে
বৃষ্টির ইতিহাসে ছাতা ধোরে দাঁড়িয়ে।

  লোডশেডিং চলে শব্দে আর মানুষের দেহে
   রাত নামে যমজ চোখে।

দূরে শুকনো জলাশয়ের ধারে অভুক্ত শিশুর
গ্যাদার
হিংসুটে পেট খায় খায় করে মরে

তার পর  আমার পৃথিবী  চৌরাস্তায় 'থ'
আমি ম্যানহোলের ঢাকনা তুলে দেখি আমার বিবেক বিজ্ঞাপনে ঢাকা।
নাভি ছিঁড়ে ওঠে আসে ক্ষীদের বাষ্প
    শাক পাতা সিদ্ধ ভাত ও উচ্ছিষ্ট ফ্যানটুকু খেয়ে
    আজ মানুষ নিত্যানন্দে নাচে।
    দূরে মোমবাতির মিছিল বলছে  ক্ষুধার্ত শিশুর কন্ঠস্বর

দুঃখ যেন বড় বাড়ি
   একটি সিঁড়ি আকাশ ছুঁয়ে ফিরে আসে
   ছাদের ওপর চাঁদের পাহারাদার
     ঝুলে থাকা বাঁদরের চোখে রাত
     কয়েকটা প্যাঁচা ডেকে আনে

  চুলোর আগুনের ওপর হাঁড়ি ফুটন্ত জল
  অসময়ের কান্না।
   আমার বড়ই অসুখ

তাই রাত নামে রুগ্ন শিশুর যমজ চোখে।




          অসম_বিন্যাস
                  শৈলেন মন্ডল

সত্যি তো আমার কোনো দাম নেই তোমার কাছে
যা কিছু মিথ্যেয় সাজানো তা চোখের সামনেই ভাসে।

সম্পর্কের আঁকি বুঁকি বাহানা যতো
এক চিলতে সিঁদুরের সোহাগ মাখা কতো।

হতাশায় মন আজ আবেশ হারায়
স্বপ্ন আজ পথেরই ধূলায় লুটায়।

কতো স্বপ্ন জলাঞ্জলি নতুন স্বপ্ন সাজাতে
ভালবাসায় ঋণ থাকে হিসেব মেটাতে।



                 প্রান
             অসিম কুমার বিশ্বাস
 
শহরটা আজ গ্রাম হয়েছে,নির্জন নিরালায়
ব্যস্ততা আজ পিছু হেঁটেছ, ‘করোনা’ বিভীষিকায়।
রাজপথ আজ জনশূন্য,নেই গাড়ী ঘোড়া ,লোকজন
বদ্ধ ঘরে মাক্সপরে করি,সময় নিরীক্ষণ ।
সূর্য্য ওঠে আলো ছড়ায়,দিন শেষে ঢলে পশ্চিমে......
মাঝে মাঝে বৃষ্টিটা সুর তোলে রিমঝিমে।
দহনে জ্বালা নেই, জ্বালা বেঁচে থাকা
বাতাসের সুর যেন, ডেকে আনে ব্যথা
মনের পরতে পরতে আজ বেদনার সুর
ভালবাসা প্রান থেকে ছুটে যাই দূর।
জীবনের মন্ত্রটা শুধু বেঁচে থাকা
প্রান ছাড়া পৃথিবীতে সব কিছু ফাঁকা......।



    প্রভাত
সত্যব্রত চৌধুরী

ওঠে   সূর্য্য
বাজে  তূর্য্য ।
পরি - ত্যাজ্য
যত    বর্জ্য  ।।

মেলে   আঁখি
বলে   পাখি --
' কাজে  ফাঁকি
দেয়   নাকি ??

ফোটে   কলি
ধায়    অলি ,
কাশ  -  গুলি
ঢলা  -  ঢলি  ।।

যত   বন্য
হয়   ধন্য
জনা - রণ্য
কাজে  হন্য ।।


No comments:

Post a Comment