PravatiPatrika

Thursday, May 14, 2020

সৌরভকুমার ভূঞ্যা র গল্প,সৈকত ঘোষ ও শংকর হালদারের কবিতা

                                পরিচয়
                          সৌরভকুমার ভূঞ্যা


‘তাজপুর যাবে?’
ঘুরে মহিলাটিকে দেখে চমকে ওঠে অজয়। দীর্ঘ্য সাত বছরের ব্যবধান। কিন্তু সঞ্চিতাকে চিনতে অসুবিধা হয় না। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না। সঞ্চিতাও প্রথমটা বেশ হতভম্ব। পরমুহূর্তে তার চোখে-মুখে ঝরে পড়ে একরাশ তাচ্ছিল্য।
উত্তরের অপেক্ষা না করে উঠে বসে সঞ্চিতা। টোটো এগিয়ে চলে।
দু-বছরের সম্পর্ক তাদের। কত না রঙীন স্বপ্ন দেখেছে দুজনে। কিন্তু হঠাৎই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। এখন হাত বাড়ালেই পরস্পরকে ছোঁয়া যায়। কিন্তু অজয় অনুভব করতে পারে কী বিশাল এই ব্যবধান।
অজয়ের ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না। তার একটাই অপরাধ সে কোনো চাকুরি জোটাতে পারেনি। শাস্তি স্বরূপ জুটেছে সঞ্চিতার প্রত্যাখান।
‘তোমাকে দেখে ভালোই লাগছে। শেষমেষ টোটোচালক!’ স়়ঞ্চিতার গলায় বিদ্রুপ।
অজয় নিরুত্তর।
‘হোয়াট আ ক্যারিয়ার গ্রাফ! সবাই চায় ওপরে উঠতে, আর তুমি...! তোমাকে দেখে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না।’
নীরবে এগিয়ে চলে অজয়।
‘কত না রঙীন স্বপ্নের কথা শোনাতে। এই তার হাল? তোমাকে পুরুষমানুষ ভাবতে লজ্জা করছে।’
একটু যেন নড়েচড়ে ওঠে অজয় তবে কিছু জবাব দেয় না।
‘ভাগ্যিস তোমার কথায় গলে যাইনি। তাহলে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেত। নিজের পরিচয় দিতেই পারতাম না।’
অজয় চুপ।
তাজপুর এসে যায়। ভাড়ার টাকা মিটিয়ে এগিয়ে যেতে গিয়েও কী মনে করে থমকে দাঁড়ায়। পিছু ফিরে অজয়ের মুখোমুখি হয়ে একরাশ অবজ্ঞার সুরে বলে, ‘জানো আমার স্বামী ব্যাঙ্কে বড়ো পোস্টে চাকরি করে।’
‘কিন্তু আপনার পরিচয় কী?’ প্রথমবার মুখ খোলে অজয়।
সঞ্চিতা কিছুটা থতমত।
‘আমি না হয় টোটোচালক কিন্তু আপনি কি? ভাড়া মেটানোর টাকার মতো নিজের পরিচয় দিতেও আপনাকে অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।’
সঞ্চিতার মুখ গম্ভীর। তার দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে এগিয়ে যায় অজয়।



                            সামাজিক দূরত্ব
                                      শুভজিৎ বসাক


শহুরে বড় বড় শপিংমলগুলোর এখন সবকটাই প্রায় বন্ধ।পাড়ার মুদি দোকানগুলোই বড় ভরসা এখন সবার।সৌরদীপ সবসময়ে স্টেশন পাড়ের শপিংমল থেকেই জিনিস কিনে আনত।ওখানে ভিড়ভাট্টা কম না হলেও জিনিস নেওয়ার জন্য এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় না আর সবচেয়ে বড় কথা সব পরপর সাজানো থাকে বলে একটা নিতে গিয়ে একটা ভুলে গেলেও ঠিক জিনিসটার দিকে চোখ গেলে তা মনে পড়ে যায়।সে পাশের পাড়ায় শঙ্করদার মুদির দোকান থেকে এইজন্যই জিনিস কেনে না।এখন সে নিরুপায়।স্টেশন অবধি অনেকটা রাস্তা আর তাদের পাড়ার মুদির দোকানটা বহুকাল যাবৎ বন্ধ।শোনা যায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে।তাই পাশের পাড়ায় শঙ্করদার দোকানেই এখন লাইন দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেপে সেও জিনিস কিনছে।নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে গড়ফায় এসে দু’বছরে এই প্রথম সে এখান থেকে জিনিস কিনছে।আগে ঐ টুকটাক দশ-কুড়ি টাকারই জিনিস কিনে খাতিরদারীটা বজায় রেখেছিল।তবে এখন লাইন দিয়ে জিনিস কিনতে গিয়ে একটা জিনিস ভাল করে লক্ষ্য করে সে দেখছে যে শঙ্করদা লোকটা একজন কর্মচারী নিয়েই এই মাঝারী ধরনের দোকানটা চালায় আর লোকের ভিড় উপছে পড়ছে,এটা-ওটা চাইছে সবাই,বসার ফুরসৎ নেই তবুও কত মানবিক ব্যবহার তার! সব ক্লান্তিটুকু হাসিমুখে ফুরসতে সরিয়ে সে জিনিস দিচ্ছে।আবার চেনা মুখের লোকদের জিনিসে ছাড়ও দিচ্ছে।সৌরদীপ গত কয়েক বছর শপিংমল থেকে জিনিস কিনেও নির্ধারিত মূল্যের ওপর কোনও কম পায়নি।বরং টাকা দিতে দেরী হলে ক্যাসিয়ারটি বিরক্ত হয়ে চেয়ে থাকত তার দিকে।জিনিস কেনার পরে শঙ্করদা হাসিমুখে বিলটা তার দিকে এগিয়ে দিলে সৌরদীপ দেখল সবমিলিয়ে সাড়ে তিনশো টাকার জিনিস কিনে মোটের ওপর কুড়ি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।শঙ্করদাকে সে এই কথা বলতেই সে মৃদু হেসে বলল, “আপনারা পাশের পাড়ার লোক।আপনারাই আমার রুজিরুটির জোগান দেন।সবসময়ে লাভের কথা না ভেবে দীর্ঘদিন ভালো সম্পর্ক থাকুক এই জন্যই আমি ছাড় দিই।আমার জিনিসে গলদ পাবেন না সে কথাও দিতে পারি”।এই মাসে পুরো মায়নাও পায়নি সৌরদীপ তাই এই খুচরো ছাড়েও তার ভালোই হল।ঘরে এসে দেখল জিনিসগুলো শপিংমলের থেকেও বেশ উন্নতমানের আর সাথে পাওয়া এমন ব্যবহারের কথা ঘরনী স্নিগ্দ্ধাকে সে বলায় সেও বলে উঠল, “তোমায় তো প্রায়ই বলি আমায় টাকা দিয়ে যেও, আমি শঙ্করদার থেকে জিনিস কিনে নিয়ে আসব”।এতদিন প্রতি কেজি জিনিসে সৌরদীপ ভালোই লোকসান করেছে।এই লকডাউনের সামাজিক দূরত্ব তার আতিশয্যের দেখনদারিকে ভেঙ্গে চুরমার করে বাস্তবিকতার পথ চিনিয়েছে।এখনও কিছু অলি-গলিতে শঙ্করদার মত মানুষ আছে তা প্রাসাদসম শপিংমলগুলোর জৌলুস চিনতে তো দেয়ই না সাথে ছদ্মবেশে লুটও চালায়।এসবের মাঝেও মনে মনে হেসে ফেলে সৌরদীপ শঙ্করদার মুখভরা হাসিটা ভেবেই।


                      সৈকত ঘোষ এর কবিতা


                 হেডলাইন


তুমি বলেছিলে খবরে থাকতে হলে
সিংহ রাশি রাক্ষস গণ হতে হয়

আমি বুঝেছিলাম ফ্রন্টপেজ আর
লাস্ট বেঞ্চের মাঝে একটা অদৃশ্য সুতো আছে
ওই ব্যালেন্সটা শিখে গেলেই
বলে বলে জীবনকে দশ গোল দেওয়া যায়

আমি শূন্যের মধ্যবর্তী বিষাদটুকু কুড়িয়ে নিয়ে
দৌড়তে থাকি
রেলস্টেশন ফেরিঘাট এয়ারপোর্ট হাইওয়ে হয়ে
তোমার বিছানা বালিশ ভেজা চোখ
শরীর উপচে পড়া বিষাদের কাছে

পৃথিবী জেগে ওঠার আগেই
আমাকে বেচে দিতে হবে টাটকা তাজা বিষাদ

             


মরাল অফ দ্যা স্টোরি আপনারাই বলুন



তুমি বলেছিলে পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়াটাই সবচেয়ে বড়ো রাজনীতি
সেদিন পশ্চিম আকাশে একটা পাখি ডেকে উঠেছিল

আজ মিলানের ক্যাথিড্রাল থেকে ভেসে আসছে সেই সুর

পোপ মাথা নিচু করলেন
দরজা বন্ধ করে দিলেন ঈশ্বর
মোহাম্মদ বললেন সব আলো নিভিয়ে দাও
বুদ্ধ ফিরে গেলেন জ্ঞান বৃক্ষের কাছে

আমি দেখলাম নীল গ্রহটা ধীরে ধীরে
সবুজ হয়ে উঠছে
আমি দেখলাম মানুষ ফিরে গেছে
আগুন আবিষ্কারের আগে

আর বিজ্ঞান!
প্রকৃতির গালে চুমু খেয়ে দিব্বি মিটিমিটি হাসছে




                স্বপ্ন সুখ
                     শংকর হালদার

হাসতে দেখে সবাই ওকে বসন্ত বলি
সত্যি বসন্ত কখনও কি নিজেই হাসে
মাতায় শুধু...
যেমন তুমি আমার বসন্ত ।

নেশার ঘোরে অনেক মানুষ পথ ভোলে
সত্যি নেশা কখনও কি নিজেকে হারায়
ভোলায় খালি...
যেমন ভোলাও তোমার হাসিতে ।

মেঘকে দেখে বৃষ্টি ভাবি
সত্যি কি মেঘ জীবন বাঁচায়
ভাবায় কেবল...
যেমন করে তুমি আমায় ...

ফাগুনকে দেখে সবাই ওকে আগুন বলি
সত্যি কি ফাগুন কখনও নিজেই পোড়ে
পোড়ায় শুধু...
যেমন করে তোমার হৃদয়ে আমার হৃদয় ।

বাদল নামায় আশায় বাঁধি বুক
ফাগুনকে আমি বরণ করি
বসন্ত বুকে নিয়ে...
সুপ্ত হাজার স্বপনে সুখ ভেবে ।



No comments:

Post a Comment