PravatiPatrika

Tuesday, May 12, 2020

গল্প ও কবিতা




                        একটি রহস্য
                                  শুভঙ্কর রায়


অনেক দিন পর তোকে চিঠি লিখছি বলে অবাক হচ্ছিস তাইনা! আমার জীবনে একটা ঘটনা ঘটে গেছে যা তোকে না বললেই নয় ‌। কথাগুলো শুনলে তুই হতচকিত হয়ে পড়বি। আমার হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছে। তাই কলম ধরতে বাধ্য হয়েছি। যাক ওসব, যে কথাটা বলতে তোকে চিঠি লেখা সে প্রসঙ্গে আসি। তুই বিষয়গুলো মন দিয়ে লক্ষ্য করবি।

সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মোবাইলে একটা আননোন নম্বর নাম দিয়ে সেভ করা আছে। একটু উৎসুক হয়ে তখনই কল করলাম, আরবাস থেকে একটি কম বয়সি মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো-'হ্যালো! কে বলছেন?
-আমি অমিত, আপনি-
- রত্না!
-আপনার নামে এই নম্বর সেভ করা ছিল।
-হয়তো দেখা হয়েছিল, আবার নাও হতে পারে।
-আপনি কিন্তু বেশ কথা বলেন।
-তাই! মা আসছে, রাখছি।
সেদিন এই পর্যন্তই। মেয়েটির সাথে কথা বলে মনে হলো জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক। অথচ মেয়েটিকে দেখিনি, তার সম্বন্ধে কিছু জানিনা। একটু সময়ের কথোপকথনেই মনে হয় কত চেনা। আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না ওর নম্বরটা আমার মোবাইলে এলো কি করে। কেউ যে সেভ করে রাখবে, সেও সম্ভব নয়। কারণ মোবাইল সবসময় আমার কাছেই থাকে। এইসব ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা আইডিয়া এলো ফোনে ওর কাছেই জানতে হবে। ও কিছু বলতে পারে কিনা। হয়তো কোনদিন দেখা হয়েছিল আমার মনে নেই।

ফোনে কথা বলার পর নিজেকে বেশ খুশি খুশি মনে হচ্ছিল। দ্বিতীয়বার কথা বলার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে রয়েছি। রাতের বেলা কল করলাম। প্রথমেই জানতে চাইলাম কথাটা।
-আচ্ছা, তোমার সঙ্গে কোথায় দেখা হয়েছিল বলতো।
-ফোনে কথা বলছো, অথচ আমাকে চেনো না, আমিও চিনি না।প্রথমে তুমি ফোন করেছিলে, নিশ্চয়ই তুমি জানো।
-আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। তোমার নামে নম্বরটা সেভ করা ছিল।
-হয়তো তোমার এমন বন্ধু আছে, যে আমারও বন্ধু।
-খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।
-সে ঘটনা খুঁজে আর কি হবে? তাছাড়া একটা সম্পর্ক যখন হয়েছে, তাতে অসুবিধা কোথায়?

একথা বলা মাত্র ফোনের লাইনটা কেটে গেল। কথা হল না। প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। বেশ চলতে থাকে গল্পগুজব।ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর প্রেমে পরিণত হয়ে যায়। উভয়ই উভয় অন্তপ্রাণ, দিনান্তে একবার কথা না বললেই নয়। সেই শুরু থেকেই ফোনে ফোনে কথা। কেউ কাউকে চিনি না, কোনদিন সামনাসামনি দেখাও করিনি। তবু মনে যে কি অনুভূতি হয়, তা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর দেরি নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখা করতে হবে। কথা হলো দেখা করতে যাব, ঠিকানা পত্র সব বলে দিল।

ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রিয়ার সাথে দেখা করতে। বাড়ি খুঁজে বের করলাম। কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দিল এক মাঝবয়সী মহিলা। আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম-রিয়ার বন্ধু, অমিত। রিয়ার সাথে কথা বলে এসেছি। ও আমায় আসতে বলেছিল। ওকে একটু দেখে দিন। এ কথাগুলো শুনে ভদ্রমহিলা সম্ভবত রিয়ার মা অবাক হয়ে গেলেন।
-রিয়া দু'বছর আগে খুন হয়েছে।
একথা শুনে বাড়ির গেটের সামনে আমি কখন বসে পড়েছি কিছুই জানিনা।


                       নিঝুম রাত্রি
                                     প্রভাত মণ্ডল

নিঝুম রাত্রি,অবসন্ন চাঁদ
এক পলকে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে,
মেঘের চাদর ক্ষণে ক্ষণে ঢেকে দিচ্ছে মুখ
তবুও তৃষাতুর চোখ কি যেন খোঁজে বারেবার।

গভীর সমুদ্রের প্রবালের সাথে সখ‍্যতা গড়ে তুলতে চায়,
ঊষর মরুবক্ষ থেকে হিমাদ্রির চূড়া,
মন্দিরের প্রাঙ্গন হতে মসজিদের বারান্দা
ছুঁয়ে দেখে সে।কখনো ভাবেনি এত মৃত্যু হবে
পৃথিবীর বুকে,তবুও মৃত্যু আসে।

সোনালি চাঁদের আলো ছুঁয়ে যায় শরীর,
ফুটপাতে মাছি ভনভনে দোকানের বারান্দায়
কৃশকায় কয়েকটি দেহ ছুঁতে গিয়ে
উদাসীন হয়ে ওঠে।ছন্দপতন ঘটে।

অজস্র কলঙ্ক গায়ে নিয়ে স্নিগ্ধ আলোয় এতদিন
ভরিয়েছে পৃথিবীর কোল,আজ চকিতে নয়নে অশ্রুধারা।
চিতার আগুন আর কবরের সারি ছুঁয়ে যেতে চায়,
যদি সেরে ওঠে পৃথিবীর সবগুলো বাড়ি,
মুছে যায় শ্বাসরোধী এই মহামারী।


       নাভিমূলে লকডাউন
                     অনুকূল বিশ্বাস

থমকে  যাওয়া বিশ্বে কবরের ঘ্রাণ,
অতল সমুদ্রে  বিলীন জনারণ্যের কোলাহল  ।
স্থিমিত নদীর নাব্যতায় আসে জোয়ার,
সাগরের ঢেউ মৃদুমন্দ সমীরণে করে আলিঙ্গন।
পাহাড়ের কান্নায়  পড়ে ছেদ,
পাখিদের কলতানে ভরে ওঠে অবনী।

অচীন দেশের সীমান্ত  পেরিয়ে ছুটে আসে কারা
বাতাসের কানে কানে বলে যায় তারা---
আকাশের নীলিমায় লেগেছে রঙ,
সাতরঙা রামধনু রঙে।
শুকতারা মেলেছে আলোর ডানা  নতুনের উল্লাসে,
অন্তহীন হরিৎক্ষেত্র মিশেছে নীলাকাশে,
 শান্ত সুনির্মল ধরণী বিশুদ্ধতার আভরণে
সেজে উঠেছে নবনব আঙ্গিকে;
বন-বনানীর মরমর ধ্বণি আজ আপন খেয়ালে ।

থমকে যাওয়া মানব সভ্যতার গতি---
বসুন্ধরাকে দিয়েছে পবিত্রতা,
হাসি ফুটেছে দীর্ঘায়ুর ছন্দে
ফিরে পেয়েছে সে আপন আভিজাত্য।
কিন্তু ; দীন -দুঃখীদের দৈন্যতা করেছে প্রকট,
অন্নহীন, বস্ত্রহীন  ছিন্নমূল মানুষের
নাভিমূলে পড়েছে তালা ।
লক্ষ লক্ষ সহায়-সম্বলহীন  ক্ষূধার্তের হাহাকার
বায়ুর শুদ্ধতাকে করেছে ম্লান,
জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে
সভ্যতার গৌরব আক্রান্ত সিদ্ধান্ত হীনতায় ;
তবুও , লড়াইয়ের ময়দানে জেগে আছি আমরা,
জেগে আছি ভারতবাসী;
জয়টিকা একদিন পরবোই আমরা-----
থাক না সে যত ই অন্তরালে,
হোক না সে যত ই বিষধর।


                   গুণীন
                 হামিদুল ইসলাম।

আজগুবি কথা
তবু লোকগুলো বিশ্বাস করে মন্ত্র
গাছের শেকড়ে বেটে অষুধে সাপে কাটা রোগীকে বাঁচায়
এ যুগের গুণীন

সবটাই বুজরুকি ।।

সাময়িক শান্ত্বনা খোঁজে মানুষ
 টাকা নিয়ে বাজি ধরে
আটপৌরে  সকাল
শ্মশান থেকে ফিরে আসে সবাই  ।।


    পুকুরে  ঋতুরঙ্গ
               সত্যব্রত চৌধুরী

গ্রীষ্মে  রবির  দাপট
মাছ  করে  ছটফট
এক দৌড়ে  চটপট
          সারমেয়  পুকুরে  ।

বরষায়  কোলা  ব্যাঙ
ইয়া  বড়ো গোদা ব্যাঙ
ডাক  পাড়ে  গং-গ্যাং
            খালে বিলে পুকুরে ।

শরতের   আকাশে
মেঘ  হয়  ফ্যাকাশে
প্যাঁজা-তূলা রঙে  সে
             ছায়া  ফেলে  পুকুরে ।

হেমন্তের  সন্ধ্যায়
কেয়া রজনীগন্ধায়
সুবাসের  পেয়ালায়
              নেশা  ধরে  পুকুরে  ।

শীত-বুড়ি  জবু- থবু
ছোট-বড়ো সব কাবু
জলপোকা  সে ও হাবু
              নামে না তো পুকুরে ।

বসন্ত  আগত  আজি
নবপত্র-ফুলে  সাজি
অভিসারে যায় বুঝি
                অবগাহি  পুকুরে  ।।




              দুটো নদী
                 শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার

আমাদের গাঁয়ে দুটো নদী আছে,
একটা সর্বদা শুকনো,
অন‍্যটায় জল থাকে সারাবছর!
যে নদীটাতে জল থাকেনা-
কখনো বৃষ্টির দিনে একটুকরো স্রোত,
হয়তো পা এর ওপর পা দিয়েই চলে যায়,
তারও ইচ্ছে করে কয়েকটা শালুক ফোটাতে
কয়েকটা কই মাছ কানে হেঁটে হেঁটে....

যে নদীটি সর্বদা জলে ভরা,
তার দুপাশে নারকেল গাছ,
জলে ছায়া পড়ে সুনিবিড়,
একান্নবর্তী ঘরের গৃহবধূটির মত।
একটুকরো ঢিল ছুঁড়লে,
তার বুকেও কাঁপন ওঠে,
ঝুপ্ করে পাথরের টুকরোটাকে
গিলে নেয় কেউ দেখবার আগেই!
তার ঘাটে বৌ ঝি'রা স্নানের সময়,
গল্প করে সংসারের, দুঃখকষ্টের,
তার ওসবে কখনো মন থাকেনা শোনার!
সে চায় জলে ঝাঁপিয়ে নামা ছেলের দলকেই
তোলপাড় করে যারা সাঁতার কাটতে কাটতে
সুঠাম পুরুষালী দেহে তার জলতরঙ্গ মাখে।

যে নদীটা শুকনো বছরভর -
তার ওপর গরুছাগল হেঁটেই চলে যেতে পারে,
সবসময় বৈধব‍্যের সিঁথির মত সে নিষ্প্রাণ!
তবু কয়েকটা দিন বর্ষার জল পেলে,
একরাম আলি পলুই হাতে আসে এখনো,
কয়েকটা জীওল মাছ কাদার ভিতর থেকে
নিয়ে যেতে যেতে জলে হাত দেয় তার,
আঙুল থেকে টপটপ্ করে জল ঝরাটুকুই
তার সারাবছরের দর্শনসুখ!

আমাদের গাঁয়ে দুটো নদী আছে,
একটা সর্বদা শুকনো,
অন‍্যটায় জল থাকে সারাবছর!


                         লেনাদেনা
                                প্রশান্ত ভৌমিক

মালতী স্বামীকে প্রতিদিন ধমকের ওপর রাখে৷ স্বামী যতই বাইরে থেকে খেটে আসুক না কেন, ঘরের রান্নাটাও তাকেই করতে হয়। আর মালতী সারাদিন ঘরে টিভি আর প্রতিবেশীদের সাথে পরচর্চা করে কাটায়। স্বামী অনেকবার প্রতিবাদ করার কিংবা বোঝানোর চেষ্টা করেছে। মালতীর এক কথা, আমার মা চাকরিও করেছে, ঘরের কাজও করেছে। বাবা কিছুই করেনি । তাই, এখন তুমি ঘরেও করবে, বাইরেও করবে। আর আমার জীবন? বিশ্রামের।



No comments:

Post a Comment