পয়লা বৈশাখের লেখা
জয়দীপ চক্রবর্তী
বৈশাখী কাগজের নৌকা করে
ইচ্ছেগুলোকে সাজাই
এমনই জোনাক ভোরে
তোমাকেই লিখে যেতে চাই।
ছাইপাঁশ ফুঁ নামা স্মরণ
বৈশাখে সাঁঝের হাত
ভুলে যাওয়া ঝিলপাড়ে
অনবদ্য সেসব আঘাত।
জলজ ছায়ার ধারণায়
পয়লা বৈশাখের অপ্রাপ্তি
নিজেকেই জানার নিভৃতে
টালমাটাল সময়ের বিস্তৃতি।
খোলাহাওয়া আঁকিবুঁকি কাটে
বাতাবিলেবু ফুলের ঘ্রাণ
মিশুকে বৈশাখী বিকেলে
পাখিদের অবদান অম্লান।
ফুলের বনে অচেনা অভিমানী
চিরদিনের তুমিই সুজন
ছলাত্ শালিখের কিচিরমিচির
বৈশাখে বাঁধা দেওয়া মন।
করোনার বিস্তীর্ণ কোলাহলে
সভ্যতার দুঃসহ পুড়ে যাওয়া
নাগরিক জীবনের লেনদেনে
নিজেকেই একা একা রাখা।
কবেকার কিশোরী বেত্রবতি
হারিয়ে যাওয়া নীলসাদা বেলা
এখন করোনার হানাদারি
স্মৃতির চিরকুটে সাজাই লেখা।
ছদ্মবেশী গভীরতা শেখা রাত
করোনায় নেমেছে মৃত্যুকামনার
জেগে একা চাঁদের সন্ত্রাস
হাওয়ার বদলে শুশ্রূষা জানাশোনার।
বৈশাখী অনিশ্চয়তার ভাসাই তরী
অক্ষরে,অক্ষরে দিন-বদলের কাব্য
এইসব কী জানে শান্ত মেয়েটি
এক ঘর ভরে উঠা লাবণ্য।
বৈশাখী অনিশ্চয়তায় জাগে প্রাণ
জীবন জড়িয়ে শূন্যতার সঙ্গীত
শোক নয় মৃত্যুর অধিক মহান
জীবিত জীবন আমৃত্যু নির্ভীক।
স্পর্শ করো না একাকী হৃদিমধ্য
অনন্ত মৃত্যুর বিরতিতে ঠিকই জয়
বৈশাখী দিনে অগ্নিশুদ্ধ সান্নিধ্য
দিকনির্দেশ লিখে রাখে সময়।
দীপশিখা জ্বলে পুড়ে খাক
অব্যক্ত মুগ্ধতার অলিগলি
আমার আলোলাগা আমারই থাক
পৃথিবী সুস্থ হলেই সব বলাবলি।
সেসব আমি বলিনি কিছুই শোনো
এমন দিনে অনিশ্চয়তার পোড়া দাগ
ভালোবাসায় ঘৃণা আসে কখনও?
পুড়েছি একা একা অনন্য আঘাত।
অগুন্তি হিসেবে লেনদেন অনিশ্চয়তার
দৃশ্যতা জুড়ে অন্তহীন সংশয়
তবুও নতুন লিখি হাজার হাজার
অন্তরতর সুন্দরের হোক জয়।
সংকেত সেদিনও হয়েছে রচিত
বিপন্নতার সুর ছিল সঠিক
হে স্তব্ধতা,হে প্রেম নক্ষত্র খচিত
সভ্যতার মুখে প্রকৃতই ধিক্ ধিক্।
বৈশাখী মধ্যরাত ফুটে ওঠা ফুল
কাজল কালো মেঘের লুটোপুটি
করোনা বলে ভুল সব ভুল
জীবিত জীবনে মৃত্যুটুকুই খাঁটি।
হারায়নি কিছুই শিকড়ের সন্ধানে
গাছের ছায়াতল ভুলে গেছে
অবিস্মরণীয় ফুলের ঘ্রাণে
রেনুরেনু সংকোচ ঝরে পড়ে।
বৈশাখী সমর্পণের মূর্তিমান ছায়া
করোনা ছুঁয়ে অসম্পূর্ণতার ঘরবাড়ি
প্রস্থানেও মিশে থাকার ভাষা
লিখে রাখি বৃত্তের পরিধি ।
বিদ্বেষের রঙ বদলে কোথাও সাদা
অক্ষরে অক্ষরে জাগে নির্বাক সূচি
মানুষ ততটা নয় তারই ছায়া
হৃদয় আকাশে তুমুল ঝড়বৃষ্টি।
এসেছো মনে হে আজ
সমস্ত জলজ পতনের ডাক
আগুনের চমৎকার অভিযোগে
ব্যাকুলতায় জেগে থাকে অবাক।
এসেছো তুমি হে বৈশাখী দিন
বিষাদের বিনিদ্র সুবর্ণ প্রবাহ
সূর্য পোড়া সর্বনাশের আশায়
বুকভর্তি করা শোকার্ত সন্দেহ।
তমসায় নদীর একাকী ঢেউ
বৈশাখী শূন্যতার সন্তাপে সাজাই
শুরু থেকে শেষের পাতার ঝরঝরে
শুধু পড়ে আছে সুন্দর ছাই।
দ্রবীভূত জীবনের যত জানালাদরজা
অন্তরতর প্রার্থনার অনন্ত বোধ
বৈশাখী দিনের অনির্বান শিখা
শুধুই পৃথিবী করোনা মুক্ত হোক...
ভুবনডাঙ্গার মাঠ
মহীতোষ গায়েন
কঠিন এই দু:সময়ে
সবাই কেমন একা,
জীবন-যুদ্ধ শেষে হবে
মঙ্গলময় দেখা।
ভোরাই সুরে আর বাজেনা
আনন্দময়ী গান,
উতল হাওয়ায় যায়না শোনা
আশাবরীর তান।
মাধবীলতায় ফুল ফুটেছে
সূর্য গেছে পাটে,
বিষাদ সুরে বাজছে সানাই
উজানতলির ঘাটে।
নির্জন রাত দুর্দিনে আজ
বনপলাশীর পাশে,
জোৎস্নালোকে পথ বেয়ে
ঐ বিষাদসিন্ধু আসে।
আবার সবাই ফিরে যাবে
কর্মজীবন হাটে,
যুদ্ধ জেতার প্রস্তুতি তাই
ভুবনডাঙ্গার মাঠে।
বিজয়ী
মিত্রা ঘোষ
ভাইরাস কোনো সীমানা মানেনা
মানেনাতো কাঁটা তার
মানুষে মানুষে ছোঁয়াছুয়ি হয়ে
করে ওরা পারাপার
চিন নিয়ে এলো মারন অস্ত্র
করনা ভাইরাস
গোটা বিশ্বের সমান মাথায়
ফেলছে নাভিশ্বাস
ঘরের ভেতর বন্দি মানুষ
কাটায় কোয়ারেন্টিনে
বসন্ত আজ এসে চলে যায়
কোকিলের ডাক বিনে
চৈত্র দুপুরে হাঁকেনা হকার
বসেনা সেলের বাজার
লকডাউন, কেড়ে নিয়ে গেছে
জীবন ছন্দ হাজার
দুনিয়া জুড়ে মৃত্যু মিছিল
চলছে অবিরত
তার মাঝেতে ফুটছে গোলাপ
আগামীও আগত
অসম লড়ায়ে জিতছে মানুষ,
মানুষেরই হবে জয়
নতুন সূর্য জানিয়ে দেবে
মানুষের পরিচয়।
প্রশ্ন
শঙ্খ রঞ্জন পাত্র
যদি আমি হাত বাড়াই ,
ভালোবাসার হাত ,
তুমিও কি তাই করবে
নাকি দূরে চলে যাবে কল্পনা থেকে ?
যদি একগুচ্ছ গোলাপ তোমায় দিই,
নিজের বাগানের গোলাপ ,
তুমি কি আকর্ষিত হবে
নাকি ছুড়ে ফেলে দিবে মাড়ানোর জন্য ?
যদি একসাথে তুমি আর আমি ঘুরতে যাই ,
শুধু তুমি আর আমি ,
তুমি কি আমায় বুঝবে
নাকি চেষ্টা করবে দূরে দূরে থাকার ?
যদি তোমার জন্য একটি কবিতা লিখি ,
প্রশংসাই ভরা কবিতা ,
তুমি কি লজ্জা পাবে
নাকি বলবে বিরক্তি কর ?
যদি তোমার প্রতি একটি গান গাই ,
বেদনাতে ভরা গান ,
তুমি কি কষ্ট পাবে
নাকি বলবে অন্যদের শোনাতে ?
যদি তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি ,
শুধু তোমায় নিয়ে ,
তুমিও কি তাই করবে
নাকি ভয় দেখাবে দূস্বপ্নে বদলে দেবার ?
জ্যাকারাণ্ডাফুল ও প্রেমাস্পদ
দীপক বিশ্বাস
এবছর পলাশ, আম্রমুকুল,শিমুল
আর পলকজুঁই,রক্তকাঞ্চন ও ঘোড়ানিম
একটু আগেই এসেছিল
যেমন হিমঝুরি এসেছিল হাত রাখতে
ঝিরিঝিরি পাতার জ্যাকারাণ্ডা গাছের নীচে
হিমাদ্রীর হাতে। হিমাদ্রীর বেগুনি জ্যাকারাণ্ডা
পছন্দের ফুল, তাতে সবে কুঁড়ি এসেছে --- হিমঝুরি বারে বারে তাকে তাড়া দিচ্ছে -
'হিম' তুমি কিছু করো-- না হলে আমি যে---
হিমাদ্রী সেদিন হিম হয়েই ছিল,
সে লাভা উদগীরণ করতে পারেনি
তাই হিমঝুরিকে দু'হাতে পানপাতায়
মুখ ঢাকতে হয়েছিল কলাবধূর মতো
আর মুখ ঢেকেছিল সদ্য বিবাহিত বর
ফুলশয্যার রাতে -- জ্যাকারাণ্ডাফুলের মতো
হিমঝুরির নিথর বেগুনি-নীল দেহ দেখে!
হিমাদ্রী আজও দাঁড়িয়ে জ্যাকারাণ্ডার নীচে
তার গায়ে মাথায় হিমের মতো
ঝরে পড়ছে জ্যাকারাণ্ডাফুল,আর
হিমঝুরির মতো শুভ্র নীর হিমাদ্রীর চোখ থেকে!
কবিতার মেয়েরা আর এই মেয়ে
প্রাপ্তি মুখোপাধ্যায়
নীল নদী তার আঁচল পাতে
বাউণ্ডুলে ঢেউ আঁকে জলছবি
উনিশ-কুড়ির ধারাপাতে
ডাক দিয়ে যায়,"মেঘবালিকা হ'বি..?"
এই তো রাজি,এক্ষুণি সব
আকাশ খামে ভরছে মেয়ে চিঠি
কান্নাহাসির সব কবিতা
আদর করে রাখছে পিঠোপিঠি...!
এই মেয়েটার বৃষ্টি নূপুর
মেঘের মাদল তাল মিলিয়ে নাচে,
এই মেয়েটার একহাজারি
বায়না জমে এক আকাশের কাছে...!
কেউ লেখেনা এক-আকাশ বা
কেউ গাঁথেনা একছড়া কবিতা
মেঘবালিকার মৃত্যুদিনে
হার মানা হার স্তব্ধ নিষিদ্ধতা....!
রোগশয্যায় নিঃস্ব নীরা
এই মেয়েটার রূপোলী চুল ক্রমে
কৃষ্ণকলি কাজল পাতে
আলের ধারে মুক্তবেনীর হোমে...!
এই মেয়েটার কাঁধব্যাগেতে
চিঠির বদল যত্নে থাকে ছাতা
বৃষ্টি এলেই ঘামতে থাকে
এই বুঝি ফের ডাক দিল কবিতা..!
সব গোপনের কবর খুঁড়ে
বেরিয়ে আসে মরচেপড়া চাবি,
বন্ধুডাকের দেয়াল লিখন
দরজা ভেঙে দুঃখভাগের দাবী..!
এই মেয়েটা আঁতকে উঠে
শরীর কেটে ঢাকতে থাকে ক্ষত
নতুন কারুর শ্রাবস্তীঘুম
সেই মৃতমুখ এই মেয়েটার মতো...!
হেমন্ত বিকেলের পাখি
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
কখন কাহাকে কে পাশে পেলে
নিঃশব্দে সে হাহাকার ভোলে !
তার কাছে, কতবার জারুলের ডালে
বোবা পাখি বাসা বেঁধে গেছে।
কখন কাহাকে পাশে নিলে
ছায়াটিও দীর্ঘ হয়েছে অবেলায়
সবচেয়ে দামী যত, শরীরের,
অকাতরে বিনাদামে সে বিলায় !
আকাশের নভোনীল রঙে
কি এক উদাসী চোখ যেন
পটুয়ার রঙে আঁকা,
সেইসব কোলাহল দেখে।
কখন কাহার নাম স্থান পেলে
নির্জনে ডেকেছি চুপিসারে
হেমন্তে মলিন অরণ্যের মত
জ্যোৎস্নার রূপোলী অন্দরে।
ভালবাসা
শৈলেন মন্ডল
সেদিন দেখা হল তোমার শহরে
কোন এক অজানা পথের বাঁকে,
দৃষ্টি নিক্ষেপ হলো সংগোপনে
এক নিমেষের পলকে।
তারপর গলিপথ বেয়ে
অনেকদূরে দেখা হলো সেদিন,
এতোদিন পর মনে হলো
এলো বুঝি ভালবাসার সুদিন।
সুধামাখা অাভ্যন্তরীন দৃষ্টিতে
যেন মধূর পলক না পড়ে,
কতোকালের অব্যাক্ত যন্ত্রনা বুঝি
মলিনতার ভারে মরে।
মনেতে জাগে নতুন অনুভূতি
আবেশে দিন কাটে হয় আনন্দযাপন,
মরা নদীতে বান ডাকে তাই
শুরু হয় ভালবাসার বীজবপন।
নতুন আলাপচারিতা, সুখানুভূতির যতো বিনিময়,
জীবনটা তোমায় পেয়ে
ভালবাসায় হলো পূর্ণতাময়।
কতো আশায় বুক বাঁধলাম
শত অনুপম হরষে,
তোমায় পেয়ে ধন্য জীবন
ভেসে যাই সুখ- স্বপ্নের দেশে।
জয়দীপ চক্রবর্তী
বৈশাখী কাগজের নৌকা করে
ইচ্ছেগুলোকে সাজাই
এমনই জোনাক ভোরে
তোমাকেই লিখে যেতে চাই।
ছাইপাঁশ ফুঁ নামা স্মরণ
বৈশাখে সাঁঝের হাত
ভুলে যাওয়া ঝিলপাড়ে
অনবদ্য সেসব আঘাত।
জলজ ছায়ার ধারণায়
পয়লা বৈশাখের অপ্রাপ্তি
নিজেকেই জানার নিভৃতে
টালমাটাল সময়ের বিস্তৃতি।
খোলাহাওয়া আঁকিবুঁকি কাটে
বাতাবিলেবু ফুলের ঘ্রাণ
মিশুকে বৈশাখী বিকেলে
পাখিদের অবদান অম্লান।
ফুলের বনে অচেনা অভিমানী
চিরদিনের তুমিই সুজন
ছলাত্ শালিখের কিচিরমিচির
বৈশাখে বাঁধা দেওয়া মন।
করোনার বিস্তীর্ণ কোলাহলে
সভ্যতার দুঃসহ পুড়ে যাওয়া
নাগরিক জীবনের লেনদেনে
নিজেকেই একা একা রাখা।
কবেকার কিশোরী বেত্রবতি
হারিয়ে যাওয়া নীলসাদা বেলা
এখন করোনার হানাদারি
স্মৃতির চিরকুটে সাজাই লেখা।
ছদ্মবেশী গভীরতা শেখা রাত
করোনায় নেমেছে মৃত্যুকামনার
জেগে একা চাঁদের সন্ত্রাস
হাওয়ার বদলে শুশ্রূষা জানাশোনার।
বৈশাখী অনিশ্চয়তার ভাসাই তরী
অক্ষরে,অক্ষরে দিন-বদলের কাব্য
এইসব কী জানে শান্ত মেয়েটি
এক ঘর ভরে উঠা লাবণ্য।
বৈশাখী অনিশ্চয়তায় জাগে প্রাণ
জীবন জড়িয়ে শূন্যতার সঙ্গীত
শোক নয় মৃত্যুর অধিক মহান
জীবিত জীবন আমৃত্যু নির্ভীক।
স্পর্শ করো না একাকী হৃদিমধ্য
অনন্ত মৃত্যুর বিরতিতে ঠিকই জয়
বৈশাখী দিনে অগ্নিশুদ্ধ সান্নিধ্য
দিকনির্দেশ লিখে রাখে সময়।
দীপশিখা জ্বলে পুড়ে খাক
অব্যক্ত মুগ্ধতার অলিগলি
আমার আলোলাগা আমারই থাক
পৃথিবী সুস্থ হলেই সব বলাবলি।
সেসব আমি বলিনি কিছুই শোনো
এমন দিনে অনিশ্চয়তার পোড়া দাগ
ভালোবাসায় ঘৃণা আসে কখনও?
পুড়েছি একা একা অনন্য আঘাত।
অগুন্তি হিসেবে লেনদেন অনিশ্চয়তার
দৃশ্যতা জুড়ে অন্তহীন সংশয়
তবুও নতুন লিখি হাজার হাজার
অন্তরতর সুন্দরের হোক জয়।
সংকেত সেদিনও হয়েছে রচিত
বিপন্নতার সুর ছিল সঠিক
হে স্তব্ধতা,হে প্রেম নক্ষত্র খচিত
সভ্যতার মুখে প্রকৃতই ধিক্ ধিক্।
বৈশাখী মধ্যরাত ফুটে ওঠা ফুল
কাজল কালো মেঘের লুটোপুটি
করোনা বলে ভুল সব ভুল
জীবিত জীবনে মৃত্যুটুকুই খাঁটি।
হারায়নি কিছুই শিকড়ের সন্ধানে
গাছের ছায়াতল ভুলে গেছে
অবিস্মরণীয় ফুলের ঘ্রাণে
রেনুরেনু সংকোচ ঝরে পড়ে।
বৈশাখী সমর্পণের মূর্তিমান ছায়া
করোনা ছুঁয়ে অসম্পূর্ণতার ঘরবাড়ি
প্রস্থানেও মিশে থাকার ভাষা
লিখে রাখি বৃত্তের পরিধি ।
বিদ্বেষের রঙ বদলে কোথাও সাদা
অক্ষরে অক্ষরে জাগে নির্বাক সূচি
মানুষ ততটা নয় তারই ছায়া
হৃদয় আকাশে তুমুল ঝড়বৃষ্টি।
এসেছো মনে হে আজ
সমস্ত জলজ পতনের ডাক
আগুনের চমৎকার অভিযোগে
ব্যাকুলতায় জেগে থাকে অবাক।
এসেছো তুমি হে বৈশাখী দিন
বিষাদের বিনিদ্র সুবর্ণ প্রবাহ
সূর্য পোড়া সর্বনাশের আশায়
বুকভর্তি করা শোকার্ত সন্দেহ।
তমসায় নদীর একাকী ঢেউ
বৈশাখী শূন্যতার সন্তাপে সাজাই
শুরু থেকে শেষের পাতার ঝরঝরে
শুধু পড়ে আছে সুন্দর ছাই।
দ্রবীভূত জীবনের যত জানালাদরজা
অন্তরতর প্রার্থনার অনন্ত বোধ
বৈশাখী দিনের অনির্বান শিখা
শুধুই পৃথিবী করোনা মুক্ত হোক...
ভুবনডাঙ্গার মাঠ
মহীতোষ গায়েন
কঠিন এই দু:সময়ে
সবাই কেমন একা,
জীবন-যুদ্ধ শেষে হবে
মঙ্গলময় দেখা।
ভোরাই সুরে আর বাজেনা
আনন্দময়ী গান,
উতল হাওয়ায় যায়না শোনা
আশাবরীর তান।
মাধবীলতায় ফুল ফুটেছে
সূর্য গেছে পাটে,
বিষাদ সুরে বাজছে সানাই
উজানতলির ঘাটে।
নির্জন রাত দুর্দিনে আজ
বনপলাশীর পাশে,
জোৎস্নালোকে পথ বেয়ে
ঐ বিষাদসিন্ধু আসে।
আবার সবাই ফিরে যাবে
কর্মজীবন হাটে,
যুদ্ধ জেতার প্রস্তুতি তাই
ভুবনডাঙ্গার মাঠে।
বিজয়ী
মিত্রা ঘোষ
ভাইরাস কোনো সীমানা মানেনা
মানেনাতো কাঁটা তার
মানুষে মানুষে ছোঁয়াছুয়ি হয়ে
করে ওরা পারাপার
চিন নিয়ে এলো মারন অস্ত্র
করনা ভাইরাস
গোটা বিশ্বের সমান মাথায়
ফেলছে নাভিশ্বাস
ঘরের ভেতর বন্দি মানুষ
কাটায় কোয়ারেন্টিনে
বসন্ত আজ এসে চলে যায়
কোকিলের ডাক বিনে
চৈত্র দুপুরে হাঁকেনা হকার
বসেনা সেলের বাজার
লকডাউন, কেড়ে নিয়ে গেছে
জীবন ছন্দ হাজার
দুনিয়া জুড়ে মৃত্যু মিছিল
চলছে অবিরত
তার মাঝেতে ফুটছে গোলাপ
আগামীও আগত
অসম লড়ায়ে জিতছে মানুষ,
মানুষেরই হবে জয়
নতুন সূর্য জানিয়ে দেবে
মানুষের পরিচয়।
প্রশ্ন
শঙ্খ রঞ্জন পাত্র
যদি আমি হাত বাড়াই ,
ভালোবাসার হাত ,
তুমিও কি তাই করবে
নাকি দূরে চলে যাবে কল্পনা থেকে ?
যদি একগুচ্ছ গোলাপ তোমায় দিই,
নিজের বাগানের গোলাপ ,
তুমি কি আকর্ষিত হবে
নাকি ছুড়ে ফেলে দিবে মাড়ানোর জন্য ?
যদি একসাথে তুমি আর আমি ঘুরতে যাই ,
শুধু তুমি আর আমি ,
তুমি কি আমায় বুঝবে
নাকি চেষ্টা করবে দূরে দূরে থাকার ?
যদি তোমার জন্য একটি কবিতা লিখি ,
প্রশংসাই ভরা কবিতা ,
তুমি কি লজ্জা পাবে
নাকি বলবে বিরক্তি কর ?
যদি তোমার প্রতি একটি গান গাই ,
বেদনাতে ভরা গান ,
তুমি কি কষ্ট পাবে
নাকি বলবে অন্যদের শোনাতে ?
যদি তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি ,
শুধু তোমায় নিয়ে ,
তুমিও কি তাই করবে
নাকি ভয় দেখাবে দূস্বপ্নে বদলে দেবার ?
জ্যাকারাণ্ডাফুল ও প্রেমাস্পদ
দীপক বিশ্বাস
এবছর পলাশ, আম্রমুকুল,শিমুল
আর পলকজুঁই,রক্তকাঞ্চন ও ঘোড়ানিম
একটু আগেই এসেছিল
যেমন হিমঝুরি এসেছিল হাত রাখতে
ঝিরিঝিরি পাতার জ্যাকারাণ্ডা গাছের নীচে
হিমাদ্রীর হাতে। হিমাদ্রীর বেগুনি জ্যাকারাণ্ডা
পছন্দের ফুল, তাতে সবে কুঁড়ি এসেছে --- হিমঝুরি বারে বারে তাকে তাড়া দিচ্ছে -
'হিম' তুমি কিছু করো-- না হলে আমি যে---
হিমাদ্রী সেদিন হিম হয়েই ছিল,
সে লাভা উদগীরণ করতে পারেনি
তাই হিমঝুরিকে দু'হাতে পানপাতায়
মুখ ঢাকতে হয়েছিল কলাবধূর মতো
আর মুখ ঢেকেছিল সদ্য বিবাহিত বর
ফুলশয্যার রাতে -- জ্যাকারাণ্ডাফুলের মতো
হিমঝুরির নিথর বেগুনি-নীল দেহ দেখে!
হিমাদ্রী আজও দাঁড়িয়ে জ্যাকারাণ্ডার নীচে
তার গায়ে মাথায় হিমের মতো
ঝরে পড়ছে জ্যাকারাণ্ডাফুল,আর
হিমঝুরির মতো শুভ্র নীর হিমাদ্রীর চোখ থেকে!
কবিতার মেয়েরা আর এই মেয়ে
প্রাপ্তি মুখোপাধ্যায়
নীল নদী তার আঁচল পাতে
বাউণ্ডুলে ঢেউ আঁকে জলছবি
উনিশ-কুড়ির ধারাপাতে
ডাক দিয়ে যায়,"মেঘবালিকা হ'বি..?"
এই তো রাজি,এক্ষুণি সব
আকাশ খামে ভরছে মেয়ে চিঠি
কান্নাহাসির সব কবিতা
আদর করে রাখছে পিঠোপিঠি...!
এই মেয়েটার বৃষ্টি নূপুর
মেঘের মাদল তাল মিলিয়ে নাচে,
এই মেয়েটার একহাজারি
বায়না জমে এক আকাশের কাছে...!
কেউ লেখেনা এক-আকাশ বা
কেউ গাঁথেনা একছড়া কবিতা
মেঘবালিকার মৃত্যুদিনে
হার মানা হার স্তব্ধ নিষিদ্ধতা....!
রোগশয্যায় নিঃস্ব নীরা
এই মেয়েটার রূপোলী চুল ক্রমে
কৃষ্ণকলি কাজল পাতে
আলের ধারে মুক্তবেনীর হোমে...!
এই মেয়েটার কাঁধব্যাগেতে
চিঠির বদল যত্নে থাকে ছাতা
বৃষ্টি এলেই ঘামতে থাকে
এই বুঝি ফের ডাক দিল কবিতা..!
সব গোপনের কবর খুঁড়ে
বেরিয়ে আসে মরচেপড়া চাবি,
বন্ধুডাকের দেয়াল লিখন
দরজা ভেঙে দুঃখভাগের দাবী..!
এই মেয়েটা আঁতকে উঠে
শরীর কেটে ঢাকতে থাকে ক্ষত
নতুন কারুর শ্রাবস্তীঘুম
সেই মৃতমুখ এই মেয়েটার মতো...!
হেমন্ত বিকেলের পাখি
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
কখন কাহাকে কে পাশে পেলে
নিঃশব্দে সে হাহাকার ভোলে !
তার কাছে, কতবার জারুলের ডালে
বোবা পাখি বাসা বেঁধে গেছে।
কখন কাহাকে পাশে নিলে
ছায়াটিও দীর্ঘ হয়েছে অবেলায়
সবচেয়ে দামী যত, শরীরের,
অকাতরে বিনাদামে সে বিলায় !
আকাশের নভোনীল রঙে
কি এক উদাসী চোখ যেন
পটুয়ার রঙে আঁকা,
সেইসব কোলাহল দেখে।
কখন কাহার নাম স্থান পেলে
নির্জনে ডেকেছি চুপিসারে
হেমন্তে মলিন অরণ্যের মত
জ্যোৎস্নার রূপোলী অন্দরে।
ভালবাসা
শৈলেন মন্ডল
সেদিন দেখা হল তোমার শহরে
কোন এক অজানা পথের বাঁকে,
দৃষ্টি নিক্ষেপ হলো সংগোপনে
এক নিমেষের পলকে।
তারপর গলিপথ বেয়ে
অনেকদূরে দেখা হলো সেদিন,
এতোদিন পর মনে হলো
এলো বুঝি ভালবাসার সুদিন।
সুধামাখা অাভ্যন্তরীন দৃষ্টিতে
যেন মধূর পলক না পড়ে,
কতোকালের অব্যাক্ত যন্ত্রনা বুঝি
মলিনতার ভারে মরে।
মনেতে জাগে নতুন অনুভূতি
আবেশে দিন কাটে হয় আনন্দযাপন,
মরা নদীতে বান ডাকে তাই
শুরু হয় ভালবাসার বীজবপন।
নতুন আলাপচারিতা, সুখানুভূতির যতো বিনিময়,
জীবনটা তোমায় পেয়ে
ভালবাসায় হলো পূর্ণতাময়।
কতো আশায় বুক বাঁধলাম
শত অনুপম হরষে,
তোমায় পেয়ে ধন্য জীবন
ভেসে যাই সুখ- স্বপ্নের দেশে।
খুবই ভালো মানের লেখা।
ReplyDeleteখুবই ভালো লাগলো
ReplyDelete