PravatiPatrika

Sunday, May 17, 2020

কবিতা পত্র


                        আর এক হরিশ্চন্দ্র
                          সিদ্ধার্থ সিংহ

আগেই ঘোষণা করেছিলেন
ফের জিতলেই স্থাবর-অস্থাবর যা আছে
তিনি সব বিলিয়ে দেবেন।
দিন-ক্ষণ সব ঠিক
সমস্ত মিডিয়া হাজির
আলোকচিত্রীরা তাক করে আছেন ক্যামেরা
প্রাসাদের বাইরে হাজার-হাজার লোক।

যে লোকটা একদম শূন্য থেকে
আজ এতগুলো শূন্যের আগে একটা ৯ বসিয়েছেন
তিনি তা কী ভাবে বিলিয়ে দেন, তা দেখার জন্য।

আগেই ঘোষণা করেছিলেন
এ বার জিতলেই তিনি সব বিলিয়ে দেবেন।
সব নয়, যদি তার সামান্য কয়েক শতাংশও বিলোন
তা হলেও, এ দেশের সব ক'টা গণ্ডগ্রামে
                           গভীর নলকূপ বসানো যাবে
অন্তত পঞ্চাশ হাজার স্কুলবাড়ি পাকা হবে
সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না
                                          অনেক ব্যাপারেই।

ওঁর বাড়ির সামনে হাজার-হাজার উৎসুক লোক
ক্যামেরায় ক্যামেরায় ঠোকাঠুকি
এই তিনি দরজা খুললেন বলে...

সে দিন ভিড়ের চাপে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন
পরে জেনেছিলেন, সে দিন তিনি সব উজাড় করে দিয়েছেন
বাড়িঘরদোর থেকে ঘরের আসবাব
এমনকী নীলাখচিত আংটি, মানিব্যাগের খুচরো পয়সাও
সব, সব হরির লুঠের মতো তিনি বিলিয়েছেন
বিলিয়েছেন অন্দরমহলে
আর সেগুলো টপাটপ কুড়িয়ে নিয়েছেন তাঁর বউ
ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি।

সে দিন সমস্ত মিডিয়ার সামনে তিনি আবার কথা দিয়েছেন
এর থেকেও অনেক অনেক বেশি আবার তিনি বিলোবেন
তবে আজ নয়, ঠিক পাঁচ বছর পরে।



                    অশনি সংকেত
                                   শ্রীরণজিৎ

 তোমার পুরুষালি কদর্য হাত পবিত্র ফুলের পাপড়িগুলোকে এক এক করে যেভাবে কচলে দিচ্ছে আর বিবর্ণ করে তুলছে তাতে করে আমার হেমন্তের বাগিচায় আর ফুলের কুড়ি ধরবে নাকো।

তোমার পুরুষালি ক্ষমতার চাকু যেভাবে এক এক করে সুমিষ্ট কন্ঠনালীগুলোকে রক্তাক্ত করে চলেছে, কেড়ে নিচ্ছে ভাষা তাতে করে আমার বসন্তের বাগিচায় আর কোকিল ডাকবে নাকো।

তোমার পুরুষালি পাষাণ হৃদয় যেভাবে এক এক করে ছেঁটে দিচ্ছে নিষ্পাপ প্রজাপতির রঙিন ডানা, রক্তাক্ত করছে তার হৃদয় তাতে করে আর আমার শীতের বাগিচায় ফুলে ফুলে কোনো প্রজাপতি বসবে নাকো।

তোমার পাষন্ড পুরুষালি বোধহীন ক্রিয়াকলাপ যেভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ, কদর্য করছে দৃশ্যশোভা তাতে করে আমার বাগিচায় আর কোনো ঋতু আসবে নাকো।

সৃষ্টির সৌন্দর্য রয়েছে যাতে নিবিষ্ট তোমার পুরুষালি কদর্যতায় এভাবেই যদি তা বিনষ্ট হতে থাকে তবে নিশ্চিত তোমার পৌরুষত্ব আর থাকবে নাকো।

উৎসর্গঃ সেইসব ধর্ষিতাদের।



         অসংলগ্ন পদাবলী
                 আবদুস সালাম

 পাল্টে যেতে থাকে নিঃশব্দ পদচারণা
 লুকানো ভবিষ্যত হামাগুড়ি দেয়
মেঘ পাড়ি জমায় মফস্বল আকাশে

অসংলগ্ন পা হাঁটে নরকের পথে
প্লাস্টিক দেবতারা ও পূজা পায়
চিৎকার ফেলে আসি লাশ হয়ে যাওয়া যুবতীর গোপনাঙ্গে

অসমাপ্ত ঘুমের আস্কারায় স্বপ্নেরা উদ‍্দাম নাচে
নিস্তব্ধতা ভেঙে শিরোনামে আসে ওম লাগা বিছানাটা
নিঃশব্দ পদচারণায় গিরগিটি বারবার রং বদলায়


            প্রিয়তমা
          সৌমেন সরকার

দিনের শেষে ক্লান্ত মাথা
রাখতে ইচ্ছা করে খুব
একটা প্রিয় মানুষের কাঁধে,
ক্লান্ত চরণ এলিয়ে আসে
টুকরো টুকরো হয়ে আসে
অস্তিত্ব,যখন নিজের সাথেই নিজের দ্বন্দ্ব বাঁধে...

তার প্রীতির স্পর্শে
উবে যাবে ক্লান্তির অন্তিম কণাটুকুও
বৃষ্টিস্নাত ফকির শরীরের মত
তাকে জড়িয়ে ধরে
সারাদিনের লুকানো কথা দেব উজাড় করে,
জমে থাকা আমার একার রাগ-অভিমান যত...

তার নিষ্পাপ মুখখানি
খুব ভোরে ফোঁটা কোন এক
অতি সুন্দরতম রঙিন ফুলের মত,
মুখের দিকে তাকাতেই
এক নিমেষে উবে যায় যেন
রাগ আমার,ঘন কৃষ্ণকায় ভীষণ দৈত্যের মত!



               গাছ
               মহীতোষ গায়েন

যাবতীয় স্থবিরতা সরিয়ে এই গাছ
মর্মহীন সংঘাতের শিকড়ে পচন ধরাবে...
আলোর নিশানা খুঁজে পেয়েছে যারা,
তারা কি অস্থির সময়কে বেছে নেবে?

পল্লবিত বাগানে শোনা যায় বিপ্লবের
মর্মবাণী, দুরাত্মা ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ
মানুষ বেরুতে চাইছে-
ও গাছ ও স্বপ্নময় গাছ মৃত্যুহীন বাঁচো।

নবজীবনের আশ্বাস গান বেজে ওঠে...
আমাদের পথচলা এখনো অনেক বাকি;
এসো,মানুষের সাথে মিশি;
মানুষই মুমূর্ষু পৃথিবীর জিয়নকাঠি‌।


         এখনও বসন্ত
                সুব্রত চট্টোপাধ্যায় 

এখনও বসন্ত যায়নি তো চলে
কোকিল এখনও গান গায়,
এখনও শাখায় রাধাচূড়া দোলে
এখনও অনেক আছে সময়।

সূর্য এখনও পূবপানে ওঠে
সন্ধ্যায় চাঁদ জ্যোৎস্না দেয়,
এখনও আকাশে তারামালা ফোটে
এখনও বাঁচার আছে সময়।

সৃষ্টি এখনও যায়নি তো থেমে
ভৈরবী সুর মন ভরায়,
মেঘ ঘন হলে বারিধারা নামে
হতাশ হবার নয় সময়।

রামধনু-মন  সাতরঙ মাখে
স্বজন-বিয়োগ চোখ ভেজায়,
এখনও মায়েরা আগলিয়ে রাখে
হেরে যাবার নেইতো ভয়।

এখনও তো প্রেম আছে কত প্রাণে
অনাহারকালে হাত বাড়ায়,
বিশ্বাসটুকু রাখি শুধু মনে
কেটে যাবে এই দুঃসময়।



              মানবী
              শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার

গুহামুখ থেকে আলো এনেছ,
হে মানবী! তোমার জরায়ুতে
আমার জন্মদাগ! আমার পিতার জন্মদাগ..
আমার সন্তানও তোমার কোলে
ধূলো মেখে, ছাই মেখে,
প্রথম আগুনের তাপে রাঙা হয়ে আছে!

তুমিও আলিঙ্গন দিলে প্রবল আশ্লেষে,
ভূমিকম্প হবে, বিদীর্ণ পর্বতগাত্র থেকে
লাভা উদ্গীরণের পর জমে,
উপহার দেবে প্রিয় জন্মভূমির ভূখন্ড,
হে নারী! গুহামুখ থেকে আলো এনে ধর
বহুমুখে ধরেছ স্তনবৃন্ত! গড়িয়ে পড়ছে ফেনিল দুগ্ধধার....

ভয়ংকরী! এবার সজোরে অট্টহাস‍্য কর!



           কবিতা তোমাকে
                 ঈশিতা চৌধুরী

তোমায় আগেও বহুবার,
 ডাকনামে মুড়ে ধূসরে সুদূরে
সেধেছি গোপনে লয়ে মণিহারী মণিহার....
এলোমেলো খোলা খামে ভরে
উড়িয়ে দিয়েছি অভিসার ....
পুড়িয়ে ফেলেছি আভরণ,
যত্নে বেঁধেছি কবিতারই এলো সম্ভার।

কবিতা তুমি আমারই আলোছায়া,
আমাতেই তুমি বেহিসেবি, বেসামাল  দিক-দিশাহারা,

সেদিনের সেই প্রখর বসন্ত বাহুডোরে,
একমুঠো সুখ কুড়িয়েছিলেম রক্তিমে,
অনুভবে, অনুপমে, অশান্ত মন ছুঁয়ে...
কবিতা, তুমি আমার সুখ,
আমার অনন্ত আবেগী হৃদ নীড়ে
শান্তির বারি, ক্লান্তিতে ভরা ইচ্ছে সাগর  দুখ,
কবিতা... তোমায় চুম্বনে মধুমাস
তুমি আমার একাকী নীরবের
একটিমাত্র আকাশ ।।


        তবুও ভালোবাসি
           প্রাপ্তি মুখোপাধ্যায়

এ সকাল কেমন সকাল
চায়ের টেবিল নিউজপেপার ছাড়া-
রেলবাজারে চাঁদের হাটে
জনান্তিকে খসছে পলেস্তারা...


চাকা সব পিঠ হেলিয়ে
বন্ধ ঝাঁপে আঁকছে বালিঘড়ি,
ব্যথার ঝোঁকে রোদঝালরে
ভুল আঙুলে কাঁপছে আশাবরী ...


গৃহবাস ভয়-তরাসে
ছাদের সিঁড়ি ধাপ উঠেছে ভয়ে,
হেডলাইনে রুগ্ন স্বদেশ
আবিশ্ব শোক বাড়ছে দ্রুত লয়ে ...


ফুরোচ্ছে ভাতের ধোঁয়া
হাতের দাগে বদলে যাচ্ছে আয়ু,
রাজপেয়াদায় ধরছে অসুখ
সাবধানতায় স্হবির হচ্ছে স্নায়ু...


ঘুমন্ত হাত জড়িয়ে
কোন অণুজীব এগোচ্ছে শ্বাসরোধ,
কোন ইতিহাস গড়ছে সময়
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুপরিশোধে...


খিদে ঘুম স্বপ্নতলি
কড়া গুনেছে মরণখেলায় বসে,
দে দোল,দে দোল দুন্দুভিরোল
জীবন ঘিরে ফণাচ্ছে আক্রোশে ...


বীনাহীন সুরের সভা
স্হির বিধাতা একাই সাধনপীঠে,
নীল ধুলোময় সব কবিতা
মহাকালের কপালে কালশিটে ...


প্রাণপণ মন্ত্র জপে
প্রলয়সন্ধ্যা অন্ধকারের প্রাতে,
সেই ঋষিভূম কুপিয়ে কেবল
মানুষ মানুষ মানুষ ঠেকছে হাতে ...


না না  না পান্না চুণী
শূন্য সুরে তলিয়ে যাচ্ছে বাঁশি--
তবুও গোলাপ সুন্দর আর
আমরা আকুল বাঁচতে ভালোবাসি...!



              আমি প্রহরী
                     অনাদি মুখার্জি

আমি যে হলাম এক প্রত‍্যয়ী প্রহরী,
এই গভীর রাত্রিতে , গাঢ় অন্ধকারে,আছি একা দাড়িয়ে,
যেখানে আছে ঘনকৃষ্ণ কুয়াশায়!
স্তম্বের মতোন দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারায়!
পরিবার,সন্তান বৃদ্ধ বাবা ও মা
তাদের কে একা ছেড়ে আছি আমি ,
জীবনের বাজী রেখে অদ‍্যম দৃঢ়তায়,
সীমান্ত পাহারায় আছি অমোঘ প্রত‍্যয়!
আমি ত‍্যাগী সীমান্তে এক অক্লান্ত প্রহরী!


              রাতের পরীরা
              হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

রাতের পরীরা এখন কোথায় থাকে?
বিপ্রতীপ প্রবন্ধে অনুশীলন তত্ত্বে হারিয়েছি
ঠিকানা ঘুমের...
স্পর্শযোগ্য দুটি ঠোঁট ,বোঝার উপর শাকের আটি,টোল খায় গালে, শুধু তার আজানুলম্বিত
কেশভার মনে পড়ে
মনে পড়ে হাত দুটি অদ্ভুত সুডৌল
জয় পরাজয়ে ঝিঁঝির একটানা শব্দে
খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর গড়ানো জলে
সে কত উপন্যাসের ভিতর স্বগত সম্ভাষণে
ঢুকে গেছে কে জানে ,প্রেমিকের উষ্ণ আলিঙ্গনে

আজ অন্ধকারে ধিক ধিক জ্বলে
শূন্য ঘরে অসমাপ্ত চিত্রনাট্যে
বিধিবদ্ধ উপত্যকায় উঁকি দেয় মাঝে মাঝে
তৎপুরুষ কর্মধারয় অব‍্যয় ব‍্যাঞ্জনে যোগিনীর সাজে ,কেউ কি ডাকে নি আজো
চাপা নি:শ্বাসের মতো বৃষ্টিহীন কাজে
ভালো লাগা মন্দ লাগা চোখে চোখে রাত জাগা
সিমলা পাহাড়ে নিরীহ কুয়াশার বিষাদ
ও মৃত্যুর মধ্যে হঠাৎ আঙ্গুলের ছোঁয়া
দিবারাত্রি আকাশকুসুম
ফের বুঝি জলপ্রপাত বসন্তের ঘুম...
তোমরা কি ভেবেছিলে দৈবলীলা
আজ থেকে রাতের পরীরা ফের চুল বেঁধে
বুনো ফুল মালা ...

No comments:

Post a Comment