ভালো ছিলাম তো
জিৎ মজুমদার
ভালো ছিলাম তো,
ওই সামান্য জিনিস গুলোর মধ্যে ভালো ছিলাম তো।
রোজ স্কুলের টিফিনে মুড়ি-বাদাম এর মধ্যে হঠাৎ করে মায়ের হাতে বানানো লুচি-আলুর দমের মধ্যেই কিংবা হঠাৎ করে বাবার আনা চিপস্ কি ক্যাডবেরির মধ্যেই ছিলো ভালো থাকা। রোজ ভোরে উঠে স্কুলে গিয়ে বাড়ি এসে নাকে-মুখে গো-গ্ৰাসে খেয়ে ছুট্টে খেলার মাঠে গিয়ে লাফালাফির মধ্যেই ভালো ছিলাম তো। রোজ রাতে পড়ার পর দাদুর মুখে গল্প কি দিদুন এর স্নেহ চুম্বন এর মধ্যেই আবার সেই রবিবার সকাল এ আকার ক্লাশ থেকে ফিরে "ঠাকুমার ঝুলি" র মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসা রাক্ষস-খোক্কস দের মধ্যেই ভালো ছিলাম তো। ভালো ছিলাম তো ওই নন্টে ফন্টে আর কেল্টু দার সাথে। ভালো ছিলাম তো এই ভেবে সাকালাকা ভুমভুম এর পেন্সিল টা একদিন আমার ও হবে আর যা খুশি তাই এঁকে ফেলতে পারবো। ভালো ছিলাম তো এই ভেবে কোনোদিন আমি ও ইন্ডিয়ার নীল রঙের জার্সি টা গায়ে চাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করে লগ অন দিয়ে ছয় মারবো। আর সমস্ত গ্যালারী জুরে অডিয়েন্স রা চেঁচিয়ে বলবে, "ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া"। সত্যিই , ভালো থাকা টা কতোটা সহজ ছিলো আগে। তাইনা? এরপর কার্টুন চ্যানেল, ক্রিকেট মাঠ থেকে ব্রেকিংস নিউজ এর মধ্যে দিয়ে সোজা চলে এলাম অ্যান্ডরয়েড, তারপর ফেসবুক, হোয়্যাটস্অ্যাপ, ইন্সটাগ্ৰাম থেকে একদম সরাসরি প্রেম, ক্রাশ, প্রাক্তন, আর দুটো তিনটে অ্যাডাল্ট ভিডিও কি ওয়েব সিরিজ আর্ট ফিল্ম এর মধ্যে দিয়ে খুঁজে পেলাম ভালো থাকার রসদ। আবার এসবের মাঝে আমাদের অভিধানে একটা নতুন শব্দ যোগ হয়েছে, ডিপ্রেশন। হ্যাঁ মাঝে মাঝে কোনো।কারন ছাড়াই আমাদের মন খারাপ।
আগে ছোটো বেলায় কার্টুন দেখার সময় বাবা খবর এর চ্যানেল, কি মা সিরিয়াল এর চ্যানেলে দিয়ে দিতো, আবার যখন পাড়ায় খেলতে গিয়ে ব্যাট করার সময় প্রথম বলে আউট কি বল করতে গিয়ে প্রথম বলে ছক্কা খেয়ে কি ফিল্ডিং করার সময় ইজি ক্যাচ মিস করতাম আর বন্ধুরা খ্যাপাতো, টিউশন ব্যাচে অল্প চিৎকার এর জন্য যখন অনেকখানি বকুনি খেতাম, কোনো বন্ধু কারো বাড়ি র টিনে ঢিল মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিতো তখন ও মন খারাপ হতো কিন্তু দিনের পর দিন মাথায় এভাবে চেপে বসতো না। ভালো থাকাটা আগে কত্ত সোজা ছিলো তাইনা?
আর এখন, পাড়ার লোক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুর মা, বান্ধবীর বাবা, ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা, বন্ধু কে কি বললো? এস এম এস সিন করে রিপ্লাই দিলো না কেনো? এসব ভেবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়? সারারাত ফেসবুক, ইন্সটাগ্ৰাম, টিকটক, স্ক্রল ডাউন করতে করতে গোটা দিন নষ্ট হয়ে যায়, কোনো কাজে মন বসতে চায়না। কেনো আমাদের গৌর গোপাল দাস, সন্দীপ মাহেশ্বরীর ভিডিও দেখে নিজেদের ডিপ্রেশন কাটাতে হয়?
কেনো? কেনো? কেনো?
কেনো আমরা হজমি গুলির দিন গুলোতে ফিরে যেতে পারিনা? অল্প তে খুশি থাকার দিনে। কেনো সারারাত কেদে কেটে পরদিন সকাল এ উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করতে পারিনা," দেখিয়ে দেবো শালা, আমি অপগন্য নই, আমি হেরে যাওয়া নই, আমি পাগল নই। কেনো আমাদের মন খারাপ গুলোকে সহজে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারিনা? কেনো? কেনো? কেনো? কেউ কি অদৃশ্য বন্ধনে আমাদের আজকাল বেধে রেখেছে কেউ?
রবি প্রাসঙ্গি কথা
রবীন্দ্রনাথ,
এই প্রজন্মের এক বহু পরিচিত নাম। হ্যাঁ অনেকের আদর্শ, অনেকের কাছে দেবতার সমতুল্য, অনেকে তাঁকে "সরস্বতীর বর-পুত্র" ও বলেন। তবে, হ্যাঁ, অধিকাংশ বাঙালীর কাছে কিন্তু পঁচিশে বৈশাখ এর মাহাত্ম্য অনেক। বাঙালী সারাজীবন ই আলসেমি-কুঁড়েমি তে বেশ প্রথম সারি তে ছিল, আছে আর থাকবেও, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর তার মধ্যে ওই বৈশাখের শেষে তপ্ত, হাসফাসানির গরমে, যদি একটা ছুটি পাওয়া যায়, আহা! যেন পরম তৃপ্তি। সকাল থেকে কোনো রকম তাড়াহুড়ো নেই, নেই কোনো রকম ছুটোছুটি । সকাল দশটা অবধি সুখ নিদ্রা, তারপর বেশ জল-খাবার খেয়ে, দুপুরে গরম ভাত আর কচি পাঠার ঝোল দিয়ে লম্বা ঘুম দিয়ে, এটটু তাসের আড্ডা থেকে ফিরে, সন্ধ্যেবেলা তেলেভাজা, মুড়ির সঙ্গে একটু কড়া লিকার এর চা আর নিউজ চ্যানেলে তর্কা-তর্কি থুরি বিশেষজ্ঞ দের আলোচনার মাধ্যমে নিজের জ্ঞান গুলোকে ঝালিয়ে নিয়ে পরের দিনের আপিসে যাবার পথে বাস বা ট্রেনের ওই আলোচ্য বিষয় গুলোর নেট - প্র্যাক্টিস আর কি......
এইভাবে, গেলো এক মধ্যবিত্ত মাঝ বয়সীদের রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর দিনযাপন।
হ্যাঁ মশাই একদম ঠিক ই ভাবছেন, এই মানুষটিকে আজ জানার আগ্ৰহ অনেক কমে গেছে। আর চর্চা ? এমা! ছি! কি ব্যাকডেটেড মশাই আপনি? আর এ মশাই এখন "টুনির মা" এর সাথে সাথে " পুরানো সেই দিনের কথা" এর ও DJ হচ্ছে।
আর কিছুদিন মর্ত্যলোকে থাকলে ওই "জনগণমন" এর ও DJ Version শুনে যাবেন এইটুকু আশা তো করা ই যায় কিন্তু। কি বলেন?
আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, এগুলো তাঁরা ই করছেন যিনি জাতির জন্য এক ভদ্রলোক ঊনিশশো ঊনিশ খ্রিস্টাব্দের তেরো ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করতে দুবার ভাবেননি ।ঊনিশ শো পাঁচ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন এর বঙ্গভঙ্গের সময় হিন্দু মুসলিম দের এক সুতোয় বাঁধা জন্য " রাখি বন্ধন উৎসব" উদ্জাপন করলেন। ঊনিশশো তেরো খ্রিস্টাব্দে ভারত তথা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলার নাম প্রথম নোবেল জয়ী বাঙালি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলার নাম সগৌরবে প্রকাশ করলেন।
আর আমরা? হ্যাঁ, ওই বাইশে শ্রাবণ,
পঁচিশে বৈশাখ, একাদশীর দিন গুলো( তা ওই হাতে গোনা কয়েকজন) আর দুগ্গা পুজোর দিন দেখা বাদ দিয়ে বাকি দিন গুলো তে এই বাংলা ক্যালেন্ডার এর কাজ, দেওয়ালে টান- টান হয়ে ঝুলে থাকা। তাও, পঁচিশে বৈশাখ কি বাইশে শ্রাবণ পালন কিন্তু উদ্জাপন নয় আর পাঁচ- সাতটা ছুটির দিনের আমেজ। হ্যাঁ, অবিশ্যি ব্যতিক্রম ও কিছু দেখা যায়।
যাইহোক, অনেক হলো তা এই বছর করোনার অভিশাপ বাঙালি এক মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে প্রায় মাস দুয়েক বাড়িতে ছুটি উপভোগ করছে তাই এই বছর রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর কথা অকল্পনীয় , অবাঞ্চিত।
সে মশাই, এখন নিঃসন্দেহে বলা যায়, এখন সাধারন মানুষের বাড়িতে পুস্তক এর থেকে পোষাক সৌন্দর্য্য , কি বৈদ্যুতিন সামগ্ৰীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
হ্যাঁ, এটা ই সত্যি। বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম, কি যুব সম্প্রদায় যাদের হাতে এই দেশ ও সমাজ রক্ষার দায়িত্ব অ । তারা কার্যত আজ উদাসীন। যার ফলস্বরূপ, তারা অসামাজিক, কদর্য মন ও মানসিকতায় পরিনত হয়েছে। যার অভিশাপে, হিংসা, হানাহানি, হত্যালীলা, প্রচুর বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর আর ও বৃদ্ধি পাবে যদি আমরা এখন ও সচেতন না হই।
দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী, যদি কোনো ব্যক্তি কে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করে থাকি, তবে এইটুকু আশা রাখব, চলুন না এই পঁচিশে বৈশাখ থেকে আর মাংস-ভাত খেয়ে ছুটি কাটিয়ে নয় বরং এই যুগাবতার কে বাঁচিয়ে রাখি তাঁর সৃষ্টি আর স্মৃতি চারনার মধ্য দিয়ে, তাহলে হয়তো এই হিংসার পৃথিবীর মধ্যে থেকে হয়তো আমরা আবার ভারত মাতৃকার গর্ভজাত কয়েকটি মহামানব এর আবির্ভাব হতে দেখব।
আর তার ফলে,
" ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ট আসন লবে"
(রজন্তীকান্ত সেন)
আছি কেমন ?
মৃন্ময় ভট্টাচার্য্য
প্রিয়জনে ফোনে ফোনে
প্রায়ই জানতে চায়,
কেমন আছিস এ দুর্দিনে
একলা বন্দিদশায় ?
প্রতিজনে বলবো কি আর
সব কি বলা যায় !
অসুখগুলো ঢেকে রেখে,
সুখ শোনাতে হয় ।
কর্মহীন রুদ্ধ জীবন,
মনটা আছে কেমন !
যেমন রাতে বন্দী পাখী
প্রভাত খোঁজে, তেমন ।
ভুল
শেখ মনিরুল ইসলাম
ভুলের মানে ভুল
লুকোনো নেই কোনো কূল।
সব যেন......
আঁকা বাকাঁ এলো মেলো
নদীর কিনারার ঢেউ।
কি নামে ডাকবো তোমায়?
শ্যামল অধিকারী
তিলোত্তমা - আমার অনুভূতি তুমি।
চোরা আলোর চোরা মনের গোধূলি বেলা,
ঝর্নার সুরে ভেষে যাই।
আর রোমাঞ্চিত নদী হয়ে বলতে চাই -
কি নামে ডাকবো তোমায়?
নয়নমনি-প্রেয়সী-প্রিয়তমা;
নাকি প্রবহমান নদীর ঢেউ তুমি।
তোমাকে নিত্যদিন নতুন নতুন নামে পেতে চাই।
তোমার এলোচুলে মেঘনা নদীর ধারা।
তোমার দুই চোখ যেন অশান্ত গঙ্গা-যমুনা।
তোমার হাতের শীতল স্পর্শ যেন স্বপ্নের যাদুকর।
তোমার কমোল ঠোঁটে উজ্জ্বল রক্তাভ তিল।
তোমাকে তিলোত্তমা করে দেয়।।
আমি একবুক ভালোবাসার নামের ডালি নিয়ে বসে আছি।
বলোনা কি নামে ডাকবো তোমায়?
আবার দেখা হবে
প্রশান্ত ভৌমিক
সেই মন কেমনের দেশে ছিল নিত্য বিচরণ
মন খারাপের দিনগুলোতেও হাতে হাত,
তবে আজ কেন বহুদূরের নাগরিক হয়ে
বেঁচে থাকতে হয়?
যেন দুজনে দুই ভূবনের কোন বাসিন্দা,
সেই গানের মত-
রেল লাইন বহে সমান্তরাল।
যত যাই হোক, আবার দেখা হবে
হয়তো নন্দনের খোলা চত্ত্বরে,
নয়তো শিয়ালদহ স্টেশনের কোন এক প্ল্যাটফর্মে।
দেখা হতেই হবে।
পূর্ণ জননী
রাজকুমার ঘোষ
সাধনাই তো বটে...
কত গঞ্জনার পর
কোল আলো করে তুই এসেছিলিস...
বুক ভরা মমতায় নিজেকে সঁপে দিয়েছি,
লালনে পালনে, লাগামছাড়া স্নেহতে তোকে ভাসিয়েছি...
মেপে দেখিনি গভীরতা ।
শাসনের ঘেরাটোপে তোকে বন্দি করেও রাখিনি,
দলছুট হয়ে তুইও এগিয়ে গেছিস বাঁধনছাড়া উল্লাস নিয়ে...
মেতেছিস নানা অবক্ষয়ের খেলাতে...
স্নেহে অন্ধ হয়ে আমিও
তোর আগুনে খেলার মত্ততা নিয়ে কখনো ভাবিনি...
তোর বাবার চোখ রাঁঙানিকেও বারে বারে উপেক্ষা করে গেছি...
সামাজিক দায়বদ্ধতায় একরাশ হতাশা নিয়ে
তোর বাবাও অকালে চলে গেলো...
আমিও বুঝতে পারলাম
কিন্তু কফিনের শেষ পেরেক লাগানো তো প্রায় শেষ...
চোখের সামনে চিতায় তোকে জ্বলতেও দেখলাম...
কাঁদলাম...... খুব কাঁদলাম...
কিন্তু এ কান্না মমতার নয়, তোকে হারাবারও নয়...
শুধুই হতাশা,
যে হতাশা আমার লজ্জার, আমার মাতৃত্বের অপূর্ণতার...
সঠিক জননী না হতে পারার হতাশা ।
এ জন্মে যা আমাকে গ্রাস করে যাবে...
“হে ভগবান...পরজন্ম দাও,
খোকার পূর্ণ জননী হওয়ার একবার সুযোগ করে দাও...”
আসঙ্গ
শ্রী সেনগুপ্ত
খুব খানিক গল্প করতে ইচ্ছে করে তোমার সাথে।
দুটো পা মেলে বসে আড়চোখে তাকিয়ে আলতো করে হাতটা রাখব হাতে।
মাথার ওপর যেই না একটা তারা ফুটে উঠবে অমনি বলব আমার জন্য আর একটা তারা খুঁজে দাও।
তুমি ছাদের কারনিশ থেকে কিছু জোনাকি ধরে এনে বলবে এই তো এই নাও।
টুকরো কবিতা
ডাঃ তারক মজুমদার
(১)
দিনের আলোয় দেখছি এখন
ঘোর অমানিশা
মিথ্যে যত ফুলঝুড়িতে
পুড়ছে যত দিশা ।
(২)
শরীর বেয়ে নামছে যখন
কলঙ্কের ওই কাঁদা
যমুনায় জল আনতে যায়
কোন পাড়ার ওই রাধা ?
(৩)
হৃদয় জুড়ে বৃষ্টি ঝরে
অশ্রু ধারায় বণ্যা
কৃত্রিম ভালোবাসায় যাবি হারিয়ে
ওরে শ্যামলা গাঁয়ের কন্যা ।
বৈশাখ
সত্যব্রত চৌধুরী
প্রখর শুষ্ক তাপ
অসহ্য নিঠুর দাব
কিছুতেই আর যায় তো সহা।
ক্লান্ত তপ্ত বায়
মৃদু মন্দ ধায়
যেন কোন তাপস মৌনী মহা।।
হেন ক্ষধাতুর রক্ত চক্ষু মেলে
যেন গ্রাসিতে চায় অবহেলে ।।
নিদারুণ দহন বাণ
শুকায়ে উঠিছে প্রাণ
নিষ্প্রাণ হয় বা শ্যামল ধরা।
তাপসের অগ্নি - বৃষ্টি
ওই পলাশ-রাঙা দৃষ্টি
তপ্ত -বায় প্রাণ ওষ্ঠাগত করা।।
চাঁপার কাঁপন দেখি
বাদল উঠিল জাগি
ছাইল মৌন সুনীল আকাশ।
তৃষা মিটাইতে ধরার
বারি অমৃত-ধারার
বহিল ঢালিল জুড়াইল শ্বাস ।।
বিস্বাদ প্রেম
মৌমিতা পাঁজা
প্রেম একবার নয়
বারবার আসে জীবনে,
অনুভূতির ছটা না হোক
অশ্রু ঝরায় নয়নে।
কথায় আছে , ফিরবে মিলন
ধৈর্য্য থাকলে মনে -
ব্যর্থতায় মাথা নত
সয়নে কিংবা স্বপনে।
হাতেহাত রেখে ভরসা দিলেও
মাঝ পথে দাঁড়িয়েএকা,
দিগ্বিদিক দিশেহারা
থমকে সে দিন দেখা,
সুজন ছাড়াও সাজে জীবন
শিখলে কঠিন হতে,
নয়তো প্রেম জীবন ও কাড়ে
সর্বশান্ত পথে।
মুখোমুখি আমি
সমীরণ বেরা
কী চেয়েছিল সে তোমার কাছে?
তুমি দিতে পারলে না ! নিষ্ঠুর!
ঘন কালো এক খাবলা অন্ধকারের ভিতর
তুমি একাকী নিজেকে অনবরত প্রশ্ন করে চলো
কেন কেন এমন হয়?
হাতের বাইরে কেমন করে আস্ত পৃথিবীটা
খসে পড়ে, স্তব্ধ হয়ে যায় অকস্মাৎ !
নির্বোধ নিরবয়ব অনুভুতিগুলো হারিয়ে যায়
বোবা অন্ধকারে চুপ চাপ গুটি মেরে শুয়ে থাকি।
কি চাই? এমন কি চাই? যা ছিল না তোমার কাছে!
অসংযমী বিচ্যুত কিছু দুর্বীনিত কথার আঘাত শুধু ?
আর কিছু ছিল না কি?
রাতের পর রাত বিষ পানে নীলকণ্ঠ হ'য়ে
তারপর একদিন হয়তো সব এলোমেলো হয়ে যেত!
তাই সেই সব ঘটার আগেই সরে এসেছি।
তুমি সেই সব বুঝবে না, তোমার চোখে শুধু
লোভাতুর হিংস্র দানবীয় শিকারী আমি!
সব - সঅব কিছু অন্ধকারে বিড়ালের চোখের মত
শিকারী মুখের গরম রক্ত মুছে ওঁত্ পেতে বসে থাকে
আমি কবে যে নিজেই শিকার হয়ে গেলাম!
তুমি কিচ্ছু বুঝবে না বুঝতে নেই তোমাদের।
আমার এই অন্ধকারে আলো না জ্বালালেই ভালো
অন্ধকার আর এক অন্ধকারের ভিতর আমাকে আমি বেসেছি ভালো।
আমার একলা ভুবন আমার একলা আকাশ অন্তর্যামী
আমার একলা নদী - মুখোমুখি আমার আমি!
জিৎ মজুমদার
ভালো ছিলাম তো,
ওই সামান্য জিনিস গুলোর মধ্যে ভালো ছিলাম তো।
রোজ স্কুলের টিফিনে মুড়ি-বাদাম এর মধ্যে হঠাৎ করে মায়ের হাতে বানানো লুচি-আলুর দমের মধ্যেই কিংবা হঠাৎ করে বাবার আনা চিপস্ কি ক্যাডবেরির মধ্যেই ছিলো ভালো থাকা। রোজ ভোরে উঠে স্কুলে গিয়ে বাড়ি এসে নাকে-মুখে গো-গ্ৰাসে খেয়ে ছুট্টে খেলার মাঠে গিয়ে লাফালাফির মধ্যেই ভালো ছিলাম তো। রোজ রাতে পড়ার পর দাদুর মুখে গল্প কি দিদুন এর স্নেহ চুম্বন এর মধ্যেই আবার সেই রবিবার সকাল এ আকার ক্লাশ থেকে ফিরে "ঠাকুমার ঝুলি" র মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসা রাক্ষস-খোক্কস দের মধ্যেই ভালো ছিলাম তো। ভালো ছিলাম তো ওই নন্টে ফন্টে আর কেল্টু দার সাথে। ভালো ছিলাম তো এই ভেবে সাকালাকা ভুমভুম এর পেন্সিল টা একদিন আমার ও হবে আর যা খুশি তাই এঁকে ফেলতে পারবো। ভালো ছিলাম তো এই ভেবে কোনোদিন আমি ও ইন্ডিয়ার নীল রঙের জার্সি টা গায়ে চাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করে লগ অন দিয়ে ছয় মারবো। আর সমস্ত গ্যালারী জুরে অডিয়েন্স রা চেঁচিয়ে বলবে, "ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া"। সত্যিই , ভালো থাকা টা কতোটা সহজ ছিলো আগে। তাইনা? এরপর কার্টুন চ্যানেল, ক্রিকেট মাঠ থেকে ব্রেকিংস নিউজ এর মধ্যে দিয়ে সোজা চলে এলাম অ্যান্ডরয়েড, তারপর ফেসবুক, হোয়্যাটস্অ্যাপ, ইন্সটাগ্ৰাম থেকে একদম সরাসরি প্রেম, ক্রাশ, প্রাক্তন, আর দুটো তিনটে অ্যাডাল্ট ভিডিও কি ওয়েব সিরিজ আর্ট ফিল্ম এর মধ্যে দিয়ে খুঁজে পেলাম ভালো থাকার রসদ। আবার এসবের মাঝে আমাদের অভিধানে একটা নতুন শব্দ যোগ হয়েছে, ডিপ্রেশন। হ্যাঁ মাঝে মাঝে কোনো।কারন ছাড়াই আমাদের মন খারাপ।
আগে ছোটো বেলায় কার্টুন দেখার সময় বাবা খবর এর চ্যানেল, কি মা সিরিয়াল এর চ্যানেলে দিয়ে দিতো, আবার যখন পাড়ায় খেলতে গিয়ে ব্যাট করার সময় প্রথম বলে আউট কি বল করতে গিয়ে প্রথম বলে ছক্কা খেয়ে কি ফিল্ডিং করার সময় ইজি ক্যাচ মিস করতাম আর বন্ধুরা খ্যাপাতো, টিউশন ব্যাচে অল্প চিৎকার এর জন্য যখন অনেকখানি বকুনি খেতাম, কোনো বন্ধু কারো বাড়ি র টিনে ঢিল মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিতো তখন ও মন খারাপ হতো কিন্তু দিনের পর দিন মাথায় এভাবে চেপে বসতো না। ভালো থাকাটা আগে কত্ত সোজা ছিলো তাইনা?
আর এখন, পাড়ার লোক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুর মা, বান্ধবীর বাবা, ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা, বন্ধু কে কি বললো? এস এম এস সিন করে রিপ্লাই দিলো না কেনো? এসব ভেবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়? সারারাত ফেসবুক, ইন্সটাগ্ৰাম, টিকটক, স্ক্রল ডাউন করতে করতে গোটা দিন নষ্ট হয়ে যায়, কোনো কাজে মন বসতে চায়না। কেনো আমাদের গৌর গোপাল দাস, সন্দীপ মাহেশ্বরীর ভিডিও দেখে নিজেদের ডিপ্রেশন কাটাতে হয়?
কেনো? কেনো? কেনো?
কেনো আমরা হজমি গুলির দিন গুলোতে ফিরে যেতে পারিনা? অল্প তে খুশি থাকার দিনে। কেনো সারারাত কেদে কেটে পরদিন সকাল এ উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করতে পারিনা," দেখিয়ে দেবো শালা, আমি অপগন্য নই, আমি হেরে যাওয়া নই, আমি পাগল নই। কেনো আমাদের মন খারাপ গুলোকে সহজে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারিনা? কেনো? কেনো? কেনো? কেউ কি অদৃশ্য বন্ধনে আমাদের আজকাল বেধে রেখেছে কেউ?
রবি প্রাসঙ্গি কথা
রবীন্দ্রনাথ,
এই প্রজন্মের এক বহু পরিচিত নাম। হ্যাঁ অনেকের আদর্শ, অনেকের কাছে দেবতার সমতুল্য, অনেকে তাঁকে "সরস্বতীর বর-পুত্র" ও বলেন। তবে, হ্যাঁ, অধিকাংশ বাঙালীর কাছে কিন্তু পঁচিশে বৈশাখ এর মাহাত্ম্য অনেক। বাঙালী সারাজীবন ই আলসেমি-কুঁড়েমি তে বেশ প্রথম সারি তে ছিল, আছে আর থাকবেও, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর তার মধ্যে ওই বৈশাখের শেষে তপ্ত, হাসফাসানির গরমে, যদি একটা ছুটি পাওয়া যায়, আহা! যেন পরম তৃপ্তি। সকাল থেকে কোনো রকম তাড়াহুড়ো নেই, নেই কোনো রকম ছুটোছুটি । সকাল দশটা অবধি সুখ নিদ্রা, তারপর বেশ জল-খাবার খেয়ে, দুপুরে গরম ভাত আর কচি পাঠার ঝোল দিয়ে লম্বা ঘুম দিয়ে, এটটু তাসের আড্ডা থেকে ফিরে, সন্ধ্যেবেলা তেলেভাজা, মুড়ির সঙ্গে একটু কড়া লিকার এর চা আর নিউজ চ্যানেলে তর্কা-তর্কি থুরি বিশেষজ্ঞ দের আলোচনার মাধ্যমে নিজের জ্ঞান গুলোকে ঝালিয়ে নিয়ে পরের দিনের আপিসে যাবার পথে বাস বা ট্রেনের ওই আলোচ্য বিষয় গুলোর নেট - প্র্যাক্টিস আর কি......
এইভাবে, গেলো এক মধ্যবিত্ত মাঝ বয়সীদের রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর দিনযাপন।
হ্যাঁ মশাই একদম ঠিক ই ভাবছেন, এই মানুষটিকে আজ জানার আগ্ৰহ অনেক কমে গেছে। আর চর্চা ? এমা! ছি! কি ব্যাকডেটেড মশাই আপনি? আর এ মশাই এখন "টুনির মা" এর সাথে সাথে " পুরানো সেই দিনের কথা" এর ও DJ হচ্ছে।
আর কিছুদিন মর্ত্যলোকে থাকলে ওই "জনগণমন" এর ও DJ Version শুনে যাবেন এইটুকু আশা তো করা ই যায় কিন্তু। কি বলেন?
আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, এগুলো তাঁরা ই করছেন যিনি জাতির জন্য এক ভদ্রলোক ঊনিশশো ঊনিশ খ্রিস্টাব্দের তেরো ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করতে দুবার ভাবেননি ।ঊনিশ শো পাঁচ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন এর বঙ্গভঙ্গের সময় হিন্দু মুসলিম দের এক সুতোয় বাঁধা জন্য " রাখি বন্ধন উৎসব" উদ্জাপন করলেন। ঊনিশশো তেরো খ্রিস্টাব্দে ভারত তথা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলার নাম প্রথম নোবেল জয়ী বাঙালি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলার নাম সগৌরবে প্রকাশ করলেন।
আর আমরা? হ্যাঁ, ওই বাইশে শ্রাবণ,
পঁচিশে বৈশাখ, একাদশীর দিন গুলো( তা ওই হাতে গোনা কয়েকজন) আর দুগ্গা পুজোর দিন দেখা বাদ দিয়ে বাকি দিন গুলো তে এই বাংলা ক্যালেন্ডার এর কাজ, দেওয়ালে টান- টান হয়ে ঝুলে থাকা। তাও, পঁচিশে বৈশাখ কি বাইশে শ্রাবণ পালন কিন্তু উদ্জাপন নয় আর পাঁচ- সাতটা ছুটির দিনের আমেজ। হ্যাঁ, অবিশ্যি ব্যতিক্রম ও কিছু দেখা যায়।
যাইহোক, অনেক হলো তা এই বছর করোনার অভিশাপ বাঙালি এক মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে প্রায় মাস দুয়েক বাড়িতে ছুটি উপভোগ করছে তাই এই বছর রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর কথা অকল্পনীয় , অবাঞ্চিত।
সে মশাই, এখন নিঃসন্দেহে বলা যায়, এখন সাধারন মানুষের বাড়িতে পুস্তক এর থেকে পোষাক সৌন্দর্য্য , কি বৈদ্যুতিন সামগ্ৰীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
হ্যাঁ, এটা ই সত্যি। বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম, কি যুব সম্প্রদায় যাদের হাতে এই দেশ ও সমাজ রক্ষার দায়িত্ব অ । তারা কার্যত আজ উদাসীন। যার ফলস্বরূপ, তারা অসামাজিক, কদর্য মন ও মানসিকতায় পরিনত হয়েছে। যার অভিশাপে, হিংসা, হানাহানি, হত্যালীলা, প্রচুর বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর আর ও বৃদ্ধি পাবে যদি আমরা এখন ও সচেতন না হই।
দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী, যদি কোনো ব্যক্তি কে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করে থাকি, তবে এইটুকু আশা রাখব, চলুন না এই পঁচিশে বৈশাখ থেকে আর মাংস-ভাত খেয়ে ছুটি কাটিয়ে নয় বরং এই যুগাবতার কে বাঁচিয়ে রাখি তাঁর সৃষ্টি আর স্মৃতি চারনার মধ্য দিয়ে, তাহলে হয়তো এই হিংসার পৃথিবীর মধ্যে থেকে হয়তো আমরা আবার ভারত মাতৃকার গর্ভজাত কয়েকটি মহামানব এর আবির্ভাব হতে দেখব।
আর তার ফলে,
" ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ট আসন লবে"
(রজন্তীকান্ত সেন)
আছি কেমন ?
মৃন্ময় ভট্টাচার্য্য
প্রিয়জনে ফোনে ফোনে
প্রায়ই জানতে চায়,
কেমন আছিস এ দুর্দিনে
একলা বন্দিদশায় ?
প্রতিজনে বলবো কি আর
সব কি বলা যায় !
অসুখগুলো ঢেকে রেখে,
সুখ শোনাতে হয় ।
কর্মহীন রুদ্ধ জীবন,
মনটা আছে কেমন !
যেমন রাতে বন্দী পাখী
প্রভাত খোঁজে, তেমন ।
ভুল
শেখ মনিরুল ইসলাম
ভুলের মানে ভুল
লুকোনো নেই কোনো কূল।
সব যেন......
আঁকা বাকাঁ এলো মেলো
নদীর কিনারার ঢেউ।
কি নামে ডাকবো তোমায়?
শ্যামল অধিকারী
তিলোত্তমা - আমার অনুভূতি তুমি।
চোরা আলোর চোরা মনের গোধূলি বেলা,
ঝর্নার সুরে ভেষে যাই।
আর রোমাঞ্চিত নদী হয়ে বলতে চাই -
কি নামে ডাকবো তোমায়?
নয়নমনি-প্রেয়সী-প্রিয়তমা;
নাকি প্রবহমান নদীর ঢেউ তুমি।
তোমাকে নিত্যদিন নতুন নতুন নামে পেতে চাই।
তোমার এলোচুলে মেঘনা নদীর ধারা।
তোমার দুই চোখ যেন অশান্ত গঙ্গা-যমুনা।
তোমার হাতের শীতল স্পর্শ যেন স্বপ্নের যাদুকর।
তোমার কমোল ঠোঁটে উজ্জ্বল রক্তাভ তিল।
তোমাকে তিলোত্তমা করে দেয়।।
আমি একবুক ভালোবাসার নামের ডালি নিয়ে বসে আছি।
বলোনা কি নামে ডাকবো তোমায়?
আবার দেখা হবে
প্রশান্ত ভৌমিক
সেই মন কেমনের দেশে ছিল নিত্য বিচরণ
মন খারাপের দিনগুলোতেও হাতে হাত,
তবে আজ কেন বহুদূরের নাগরিক হয়ে
বেঁচে থাকতে হয়?
যেন দুজনে দুই ভূবনের কোন বাসিন্দা,
সেই গানের মত-
রেল লাইন বহে সমান্তরাল।
যত যাই হোক, আবার দেখা হবে
হয়তো নন্দনের খোলা চত্ত্বরে,
নয়তো শিয়ালদহ স্টেশনের কোন এক প্ল্যাটফর্মে।
দেখা হতেই হবে।
পূর্ণ জননী
রাজকুমার ঘোষ
সাধনাই তো বটে...
কত গঞ্জনার পর
কোল আলো করে তুই এসেছিলিস...
বুক ভরা মমতায় নিজেকে সঁপে দিয়েছি,
লালনে পালনে, লাগামছাড়া স্নেহতে তোকে ভাসিয়েছি...
মেপে দেখিনি গভীরতা ।
শাসনের ঘেরাটোপে তোকে বন্দি করেও রাখিনি,
দলছুট হয়ে তুইও এগিয়ে গেছিস বাঁধনছাড়া উল্লাস নিয়ে...
মেতেছিস নানা অবক্ষয়ের খেলাতে...
স্নেহে অন্ধ হয়ে আমিও
তোর আগুনে খেলার মত্ততা নিয়ে কখনো ভাবিনি...
তোর বাবার চোখ রাঁঙানিকেও বারে বারে উপেক্ষা করে গেছি...
সামাজিক দায়বদ্ধতায় একরাশ হতাশা নিয়ে
তোর বাবাও অকালে চলে গেলো...
আমিও বুঝতে পারলাম
কিন্তু কফিনের শেষ পেরেক লাগানো তো প্রায় শেষ...
চোখের সামনে চিতায় তোকে জ্বলতেও দেখলাম...
কাঁদলাম...... খুব কাঁদলাম...
কিন্তু এ কান্না মমতার নয়, তোকে হারাবারও নয়...
শুধুই হতাশা,
যে হতাশা আমার লজ্জার, আমার মাতৃত্বের অপূর্ণতার...
সঠিক জননী না হতে পারার হতাশা ।
এ জন্মে যা আমাকে গ্রাস করে যাবে...
“হে ভগবান...পরজন্ম দাও,
খোকার পূর্ণ জননী হওয়ার একবার সুযোগ করে দাও...”
আসঙ্গ
শ্রী সেনগুপ্ত
খুব খানিক গল্প করতে ইচ্ছে করে তোমার সাথে।
দুটো পা মেলে বসে আড়চোখে তাকিয়ে আলতো করে হাতটা রাখব হাতে।
মাথার ওপর যেই না একটা তারা ফুটে উঠবে অমনি বলব আমার জন্য আর একটা তারা খুঁজে দাও।
তুমি ছাদের কারনিশ থেকে কিছু জোনাকি ধরে এনে বলবে এই তো এই নাও।
টুকরো কবিতা
ডাঃ তারক মজুমদার
(১)
দিনের আলোয় দেখছি এখন
ঘোর অমানিশা
মিথ্যে যত ফুলঝুড়িতে
পুড়ছে যত দিশা ।
(২)
শরীর বেয়ে নামছে যখন
কলঙ্কের ওই কাঁদা
যমুনায় জল আনতে যায়
কোন পাড়ার ওই রাধা ?
(৩)
হৃদয় জুড়ে বৃষ্টি ঝরে
অশ্রু ধারায় বণ্যা
কৃত্রিম ভালোবাসায় যাবি হারিয়ে
ওরে শ্যামলা গাঁয়ের কন্যা ।
বৈশাখ
সত্যব্রত চৌধুরী
প্রখর শুষ্ক তাপ
অসহ্য নিঠুর দাব
কিছুতেই আর যায় তো সহা।
ক্লান্ত তপ্ত বায়
মৃদু মন্দ ধায়
যেন কোন তাপস মৌনী মহা।।
হেন ক্ষধাতুর রক্ত চক্ষু মেলে
যেন গ্রাসিতে চায় অবহেলে ।।
নিদারুণ দহন বাণ
শুকায়ে উঠিছে প্রাণ
নিষ্প্রাণ হয় বা শ্যামল ধরা।
তাপসের অগ্নি - বৃষ্টি
ওই পলাশ-রাঙা দৃষ্টি
তপ্ত -বায় প্রাণ ওষ্ঠাগত করা।।
চাঁপার কাঁপন দেখি
বাদল উঠিল জাগি
ছাইল মৌন সুনীল আকাশ।
তৃষা মিটাইতে ধরার
বারি অমৃত-ধারার
বহিল ঢালিল জুড়াইল শ্বাস ।।
বিস্বাদ প্রেম
মৌমিতা পাঁজা
প্রেম একবার নয়
বারবার আসে জীবনে,
অনুভূতির ছটা না হোক
অশ্রু ঝরায় নয়নে।
কথায় আছে , ফিরবে মিলন
ধৈর্য্য থাকলে মনে -
ব্যর্থতায় মাথা নত
সয়নে কিংবা স্বপনে।
হাতেহাত রেখে ভরসা দিলেও
মাঝ পথে দাঁড়িয়েএকা,
দিগ্বিদিক দিশেহারা
থমকে সে দিন দেখা,
সুজন ছাড়াও সাজে জীবন
শিখলে কঠিন হতে,
নয়তো প্রেম জীবন ও কাড়ে
সর্বশান্ত পথে।
মুখোমুখি আমি
সমীরণ বেরা
কী চেয়েছিল সে তোমার কাছে?
তুমি দিতে পারলে না ! নিষ্ঠুর!
ঘন কালো এক খাবলা অন্ধকারের ভিতর
তুমি একাকী নিজেকে অনবরত প্রশ্ন করে চলো
কেন কেন এমন হয়?
হাতের বাইরে কেমন করে আস্ত পৃথিবীটা
খসে পড়ে, স্তব্ধ হয়ে যায় অকস্মাৎ !
নির্বোধ নিরবয়ব অনুভুতিগুলো হারিয়ে যায়
বোবা অন্ধকারে চুপ চাপ গুটি মেরে শুয়ে থাকি।
কি চাই? এমন কি চাই? যা ছিল না তোমার কাছে!
অসংযমী বিচ্যুত কিছু দুর্বীনিত কথার আঘাত শুধু ?
আর কিছু ছিল না কি?
রাতের পর রাত বিষ পানে নীলকণ্ঠ হ'য়ে
তারপর একদিন হয়তো সব এলোমেলো হয়ে যেত!
তাই সেই সব ঘটার আগেই সরে এসেছি।
তুমি সেই সব বুঝবে না, তোমার চোখে শুধু
লোভাতুর হিংস্র দানবীয় শিকারী আমি!
সব - সঅব কিছু অন্ধকারে বিড়ালের চোখের মত
শিকারী মুখের গরম রক্ত মুছে ওঁত্ পেতে বসে থাকে
আমি কবে যে নিজেই শিকার হয়ে গেলাম!
তুমি কিচ্ছু বুঝবে না বুঝতে নেই তোমাদের।
আমার এই অন্ধকারে আলো না জ্বালালেই ভালো
অন্ধকার আর এক অন্ধকারের ভিতর আমাকে আমি বেসেছি ভালো।
আমার একলা ভুবন আমার একলা আকাশ অন্তর্যামী
আমার একলা নদী - মুখোমুখি আমার আমি!
No comments:
Post a Comment