PravatiPatrika

Saturday, May 9, 2020

কবিতা ও গল্প

জড়ুল
দেবাশিষ সাহা


ওই তো
   দেখা যায় উরু
উরুর পাড়ে
চুপ করে বসে আছে
হলুদ এক জড়ুল

জড়ুল পেরোলেই আড়াল রঙের বাড়ি
বাড়ির আড়ে এক পরিত্যক্ত কুয়ো
জলহীন কুয়ো

কুয়োর গভীরে এখনো পড়ে আছে
চুকচুক জল খাওয়ার শব্দ

কুয়োতে বিলীন ঈশ্বর হবার স্বপ্ন

কাওকে না পেয়ে
কুয়োতলায় একা একা জেগে থাকে
আধকপালি রোদ।


কেনো


তোমার চেয়েও কষ্টে আছে রাস্তা
রাস্তার কোনো ছাদ নেই
রাস্তার কোনো গরম ভাত নেই
তুমি একবার নিজের দিকে তাকাও
তুমি একবার রাস্তার দিকে তাকাও
দেখো
তোমার চেয়ে অনেক গরীব আজ গাছের সমাজ
তোমার চেয়েওআজ অন্ধ বেশি বাতাস
তুমি অনেক ভালো আছো
আনন্দ থেকে
কেনো বঞ্চিত করছো নিজেকে
আরো আরো আনন্দ করো
আলো ছড়িয়ে পড়ুক ঘরে

ভালোবাসা গড়িয়ে আসবে
আমার দিকে




  কিছু ধূসর ধু-ধু 
       সোমনাথ বেনিয়া

ওটাই স্বপ্ন, বাস্তবের মায়া, ফসিলের চিরন্তন উত্তাপ
যতটা খুঁজে পাবে প্রিয় সম্বোধনে ভাতের নুন
আহা স্বাদ, বিরহের পর নির্মিত প্রেক্ষাগৃহ, দৃশ‍্য
মুছে যায় হৃদয়ের উপর থাকা কিছু ধূসর ধু-ধু
এরপর হেঁটে যাওয়া, বায়ুস্তরের ভিতর গোপন সংকেত
দরকার নেই চরাচরে বসবাস করা নীতির অবকাশ
অসহ‍্য সব আত্মপ্রবণ, শিরদাঁড়ায় সাবেকি পিছুটান
সুগন্ধ আপন সত্তায় নিশ্বাসে বসে পূর্ণতার লোভে
গ্রহণে সক্ষম কিনা এই প্রশ্নের আড়ালে বর্ণমালা
অক্ষর খুঁটে যে বাক‍্য সান্ত্বনার দোলাচলে বাঁচে, অনন্ত
কাছে এলে সরে যায় রামধনুর অভিলাষ, তুমুল
শুধু দেহবাসে ফোটে উত্তরাধিকারের ক্রোড়পত্র
আশার ফাঁক গলে নগ্নচরিত বংশের সৌজন‍্য সংখ‍্যা
চোখ পড়তেই আশ্চর্য নির্মাণ হাতের প্রত্নলিখন, স্পষ্ট
তবুও বালিয়াড়ির ভগ্নদশায় সবুজের উত্থিত পদাবলি
প্রণয়গাঁথায় রাখে সকল সুখের স্বরচিত সূচিপত্র …



  অবুঝ আনন্দ
 - অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

 এখন সবকিছু তালাবন্ধ চলছে ; তাও আদেশানুসারে রোজই কার্যক্ষেত্রে যেতে হয় । ..গণ যানবাহন বন্ধ; গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছি  ! যেতে যেতে দেখি, রাস্তার মধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরছে কাক- শালিখ । আকাশটা আরেকটু নীলচে, মেঘমুক্ত ।..পাখিগুলোর দেখি ভয়ডর নেই; লাফাতে লাফাতে প্রায় গাড়ির সামনেই চলে আসছে!
  আমাদের কাজের জায়গাটির  পরিসরে একটু ফাঁকা মাঠ আর বাগান আছে । নীচে গিয়ে মাঝে মাঝে পায়রাদের একটু খাবার দিই, মানে বাদাম, বিস্কুটের টুকরো ইত্যাদি । ওরাও ফ্যাটফ্যাট করে ডানা ঝাপটাতে  ঝাপটাতে এসে খায় । ..কাল গিয়েছি নীচে, আর আমায় দেখে ওরাও ঝটাপট করে এগিয়ে আসে ...। চিনে গিয়েছে এতদিনে ।..
 বলি-' যাও, ওখানে গিয়ে বসো ।' তারপর ওদের খাবার ছড়িয়ে দিই একটা উঠোনমতো বাঁধানো জায়গায় । গোটাকতক কাক আর শালিখও চলে আসে। তবে পায়রাই সঃখ্যাগরিষ্ঠ, প্রায় তিরিশখানা হবে । ...পরে ভাবছি, ওদের জন্য একটা মাটির খুরিতে একটু জলও রাখবো, কারণ কাল দেখি তেষ্টায় ওদের মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছে ।..
  কিছু কুকুরও আছে নীচে, পরিসরের মধ্যেই । ওদের জন্ম এখানেই হয়েছিল; তাই বাইরে ভাগিয়ে দিলেও ঠিক ফিরে আসে । ওরা খাবার বিস্কুট ছুঁড়ে মাটিতে  দিলে খাবে না; খাইয়ে দিতে হবে! তবে ডালভাত মেখে নীচে দিলে খাবে । ...
  ওদের জন্য কিছু না কিছু ঠিক নিয়ে যাই । এটা এখন আমার আরেক কাজ; তবে ভালোই লাগে ।...
 এই অতিমারীতে প্রকৃতি যেন তার স্বকীয়তা ফিরে পেয়েছে ।..শুনেছি ভেনিসে খালগুলিতে ডলফিন ঘুরে বেড়াচ্ছে! আমাদের গঙ্গায়ও নাকি আবার শুশুক দেখা যাচ্ছে ।
 মানুষ অবিমৃষ্যকারী; এভাবেই হয়তো তাই প্রকৃতি হিসেব মিলিয়ে  নিচ্ছে !!



   লকডাউন এর প্রকৃতি
        আব্দুল রাহাজ

আমরা বর্তমানে এক কঠিন ভয়াবহতার পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছি। সারা বিশ্ব অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে মৃত্যু-মিছিল শোক স্তব্ধ সারা বিশ্ব।
ঠিক সেই সময় প্রকৃতির দিকে তাকালে মনে হয় চারিদিকে এক ভয় ভয় কাজ করছে। একদিকে আমরা বলতে পারি যানবাহন গাড়ি ধোঁয়া কলকারখানার ধোঁয়া আশেপাশের আওয়াজ সবই যেন নিস্তব্ধ করি ফলে পরিবেশের দূষণ অনেকটা কমেছে একটা ভালো দিক এর কারণ হিসেবে উঠে আসছে। প্রকৃতির মা সবুজে রাঙানো পরিবেশকে উপহার দিলেও কোথাও যেন অসহায় মানুষদের চোখেমুখে দেখাচ্ছে দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের অভাব যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যাচ্ছে পরিবেশে। ঠিক এই সময় পরিবেশ সুস্থ কিন্তু তার আশেপাশের প্রাণীজগৎ যেন হাহাকার ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ। সবে মিলে পরিবেশ যেন কোথাও তার মায়া সৌন্দর্য কে বিস্তার করছে চারিদিকে তখন অসহায়তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লকডাউন এর প্রকৃতি এক অন্যরকম ভাবে বিস্তার করেছে আমাদের সবার মাঝে কিন্তু মানুষ আর কই উপভোগ করছে তারা উপভোগ করছে পরের দিন আমরা কি খাবো আমরা কি পরের দিন দুটো ভাত খেতে পাবো কি অনেকে কথা ভাবছে সেই অসহায় মানুষগুলো যাদের কাছে বন ছিল মায়ের মত প্রকৃতি ছিল তাদের কাছে সৌন্দর্যের প্রতীক রূপে এখন সেই প্রকৃতি চারিদিকে সবুজের বিস্তার করছে থেকেই কিন্তু মানুষের সেই অসহায় দিনটা এসে গেছে এই লকডাউন এর ফলে হলে অসহায় মানুষগুলো প্রকৃতির শোভা দেখে কাটাচ্ছেন কিন্তু তাতে দুবেলা দুমুঠো ভাত ফেটে পড়ছে না। এই বিপদের দিনে প্রকৃতি তাদের সহায়ক হচ্ছে যা তাদের এই লোকটা অনেক সময় গুলো কেটে যাচ্ছে। সুজন আর ভুবন দুই বন্ধু দুজনেই একই স্কুলে পড়াশোনা করে কিন্তু গ্রামটা একটু পাশাপাশি তো এবারে সুজন একদিন বিকাল বেলা তাদের গ্রামে গেল কারণ ভুবন গ্রামের পরিবেশে ছিল সুমধুর তাই বিকালবেলা আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে গেল তখন লকডাউন চলছিল এক ছোট পথ দিয়ে ভুবন আর সুজন নদীর ধারে গিয়ে বসল। লকডাউন নিয়ে তখন ভুবন বলল পরিবেশ টা দেখ কিরকম আগে যখন আমার এখানে বসতাম তখন চারিদিকটা কিরকম সবুজ হলেও যেন একটা ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে দেখাতো এটা তুই ভাব আর প্রত্যক্ষ কর সেই সময়কার পরিবেশটা। কিন্তু এখন দেখ একটা অন্যরকম পরিবেশ বইছে আমাদের গ্রামে সত্যিই তাই। সবুজ যেন চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে কিন্তু মানুষের সেই এই সুন্দর প্রকৃতির মায়া কোলে সূর্যের দীপ্ত রাশির মত ফুটে উঠছে সত্যি তাই। লকডাউন এ পরিবেশ এক অন্য মাত্রা নিয়ে অবস্থান করছে সবার মাঝে এক বিষাক্ত দূষণ হিন বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে মানুষ যেন তাই উপভোগ করে দিন কাটাচ্ছে। তাই পরিবেশ তার মনোরম মায়া দৃশ্য তুলে ধরলেও  কোথাও যেন মানুষের অসাহয়তা প্রকৃতির মাঝে ফুটে উঠছে। লকডাউন এর প্রকৃতি এখন অন্য রূপে অবস্থান করেছে। যা সবার মাঝে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। যা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আরাম কেদারায় বসে প্রত্যক্ষ করলেও সেই অসহায় মানুষগুলো তাদের অসহায়তা যেন বেড়েই চলেছে।
এই পরিবেশ সবে মিলে এক সবুজ প্রকৃতি উপহার দিচ্ছে যা দেখার ছিল অনেকদিন তাই লকডাউন এর ফলে সবার মনের মাঝে ফুটে উঠছে।




    প্রতিদান
          মিঠুন রায়

প্রিয়ার বয়স সবেমাত্র সাতাশ।গতবছর অর্থনীতি নিয়েই এম.এ পাশ করেছে সে।আপাতত মানিকতলায় একটি প্রাইভেট  কোম্পানিতে কাজ করে সে।বাবা সুশান্ত মিত্র প্রতিদিন অফিসে যাবার পথে মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে যান।যদিও বাবাকে কখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি প্রিয়া।সেই কুড়ি বছর আগের কথাপ্রিয়ার জন্মদাতা বাবা নবারুণ     গুহ যান দুর্ঘটনায় মারা যান।মা বিপাশা দেবীর তো শিরে বজ্রাঘাত।সংসারে  হাল ধরার কেউ নেই।বাসনমাঝা থেকে শুরু করে দু-তিন বাড়িতে  ঝি -এর কাজ করেও মা-মেয়ের খরচ মেটাতে ব‍্যর্থ হন তিনি।শ্রীরামপুরে ফ্ল‍্যাটে কাজ করার সময়ই সুশান্ত বাবুর সাথে পরিচয় হয় বিপাশা দেবীর।সুশান্ত বাবু বিয়ে থা করেন নি।পরিচয় থেকেই পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।সাত বছরের শিশু প্রিয়া পেল তার নতুন পিতাকে।

   যদিও নবারুণ বাবুর জায়গায় প্রিয়া তার নতুন বাবাকে কখনও বসাতে রাজী ছিলেন না।মা-বাবার ভালোবাসা পেলেওতার মনে যেন একটা বরাবরই অতৃপ্তি ছিল।বাবার অপত‍্য স্নেহ থেকে সে সদাই নিজেকে বঞ্চিত মনে করত।স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠী অয়নের সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়।পরবর্তী সময়ে অয়ন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে।বিপাশা দেবীও তাকে পছন্দ করেন।হাতের ছেলে বলে কথা।অয়নকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রিয়া।সেদিন হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার পথে চৌমাথায় অয়নের রক্তবমি হয়।কি ব‍্যাপার!সহকর্মী বাদল তাকে ট্রাক্সি কর নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী আরোগ‍্য নিকেতনে।চিকিৎসায় ধরা পড়ে অয়নের ব্লাড ক‍্যান্সার।প্রাইমারী স্টেজ। চিকিৎসকদের পরামর্শ একটি জটিল অস্ত্রোপচারে সেরে যাবে।
     অন‍্যদিকে অয়ন আর প্রিয়ার আশীর্বাদের দিনও ঘনিয়ে আসছে।যথারীতি শুরু হল অপারেশন।আচমকা প্রয়োজন হল রক্তের।অয়নের রক্তের গ্রুপ বি-নেগেটিভ।বিরল গ্রুপ।নার্সিংরুমে এই গ্রুপের রক্ত নেই।প্রিয়া বার বার বন্ধুবান্ধবদের ফোন করেও রক্ত পাচ্ছে না।অয়নের বড় ভাই বেহালা থেকে এসেছেন।কিন্তু রক্ত  নেই।উপস্হিত সকলেরতো মাথায় হাত।প্রিয়ার দুচোখে জল।তবে কি আক্ষরিক অর্থে তার আর অয়নের সাথে সামাজিক গাটবন্ধন হবে না।এমন সময় অপারেশন রুমের আলো নিভে গেল।হাসিমুখে  বেরিয়ে এলেন ডা: বসু।অপারেশন ভালো হয়েছে।তবে কে দিয়েছে রক্ত?দৌড়ে গেল প্রিয়া।রক্ত দিয়েছেন সুশান্ত মিত্র।সারাজীবন যাকে প্রিয়া ঘৃণা করত,ঐ লোকটা কিনা শেষপর্যন্ত তার জীবনসঙ্গীকে বাঁচিয়েছেন।হায়রে বিধাতার একি বিধান।ছুটে গিয়ে প্রিয়া জাপটে ধরল বাবাকে।লুটিয়ে পড়ল  সুশান্ত মিত্রের চরণে।আজ সে অনুতপ্ত।ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি যেন সারাজীবন তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা বলল-তোর খুশি তোকে ফিরিয়ে দিয়ে আমিও খুশি।প্রকৃত ভালোবাসার প্রতিদানও মহৎ হয়।
       






No comments:

Post a Comment