সামাজিক দূরত্ব
শুভজিৎ বসাক
শহুরে বড় বড় শপিংমলগুলোর এখন সবকটাই প্রায় বন্ধ।পাড়ার মুদি দোকানগুলোই বড় ভরসা এখন সবার।সৌরদীপ সবসময়ে স্টেশন পাড়ের শপিংমল থেকেই জিনিস কিনে আনত।ওখানে ভিড়ভাট্টা কম না হলেও জিনিস নেওয়ার জন্য এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় না আর সবচেয়ে বড় কথা সব পরপর সাজানো থাকে বলে একটা নিতে গিয়ে একটা ভুলে গেলেও ঠিক জিনিসটার দিকে চোখ গেলে তা মনে পড়ে যায়।সে পাশের পাড়ায় শঙ্করদার মুদির দোকান থেকে এইজন্যই জিনিস কেনে না।এখন সে নিরুপায়।স্টেশন অবধি অনেকটা রাস্তা আর তাদের পাড়ার মুদির দোকানটা বহুকাল যাবৎ বন্ধ।শোনা যায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে।তাই পাশের পাড়ায় শঙ্করদার দোকানেই এখন লাইন দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেপে সেও জিনিস কিনছে।নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে গড়ফায় এসে দু’বছরে এই প্রথম সে এখান থেকে জিনিস কিনছে।আগে ঐ টুকটাক দশ-কুড়ি টাকারই জিনিস কিনে খাতিরদারীটা বজায় রেখেছিল।তবে এখন লাইন দিয়ে জিনিস কিনতে গিয়ে একটা জিনিস ভাল করে লক্ষ্য করে সে দেখছে যে শঙ্করদা লোকটা একজন কর্মচারী নিয়েই এই মাঝারী ধরনের দোকানটা চালায় আর লোকের ভিড় উপছে পড়ছে,এটা-ওটা চাইছে সবাই,বসার ফুরসৎ নেই তবুও কত মানবিক ব্যবহার তার! সব ক্লান্তিটুকু হাসিমুখে ফুরসতে সরিয়ে সে জিনিস দিচ্ছে।আবার চেনা মুখের লোকদের জিনিসে ছাড়ও দিচ্ছে।সৌরদীপ গত কয়েক বছর শপিংমল থেকে জিনিস কিনেও নির্ধারিত মূল্যের ওপর কোনও কম পায়নি।বরং টাকা দিতে দেরী হলে ক্যাসিয়ারটি বিরক্ত হয়ে চেয়ে থাকত তার দিকে।জিনিস কেনার পরে শঙ্করদা হাসিমুখে বিলটা তার দিকে এগিয়ে দিলে সৌরদীপ দেখল সবমিলিয়ে সাড়ে তিনশো টাকার জিনিস কিনে মোটের ওপর কুড়ি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।শঙ্করদাকে সে এই কথা বলতেই সে মৃদু হেসে বলল, “আপনারা পাশের পাড়ার লোক।আপনারাই আমার রুজিরুটির জোগান দেন।সবসময়ে লাভের কথা না ভেবে দীর্ঘদিন ভালো সম্পর্ক থাকুক এই জন্যই আমি ছাড় দিই।আমার জিনিসে গলদ পাবেন না সে কথাও দিতে পারি”।এই মাসে পুরো মায়নাও পায়নি সৌরদীপ তাই এই খুচরো ছাড়েও তার ভালোই হল।ঘরে এসে দেখল জিনিসগুলো শপিংমলের থেকেও বেশ উন্নতমানের আর সাথে পাওয়া এমন ব্যবহারের কথা ঘরনী স্নিগ্দ্ধাকে সে বলায় সেও বলে উঠল, “তোমায় তো প্রায়ই বলি আমায় টাকা দিয়ে যেও, আমি শঙ্করদার থেকে জিনিস কিনে নিয়ে আসব”।এতদিন প্রতি কেজি জিনিসে সৌরদীপ ভালোই লোকসান করেছে।এই লকডাউনের সামাজিক দূরত্ব তার আতিশয্যের দেখনদারিকে ভেঙ্গে চুরমার করে বাস্তবিকতার পথ চিনিয়েছে।এখনও কিছু অলি-গলিতে শঙ্করদার মত মানুষ আছে তা প্রাসাদসম শপিংমলগুলোর জৌলুস চিনতে তো দেয়ই না সাথে ছদ্মবেশে লুটও চালায়।এসবের মাঝেও মনে মনে হেসে ফেলে সৌরদীপ শঙ্করদার মুখভরা হাসিটা ভেবেই।
শুভজিৎ বসাক
শহুরে বড় বড় শপিংমলগুলোর এখন সবকটাই প্রায় বন্ধ।পাড়ার মুদি দোকানগুলোই বড় ভরসা এখন সবার।সৌরদীপ সবসময়ে স্টেশন পাড়ের শপিংমল থেকেই জিনিস কিনে আনত।ওখানে ভিড়ভাট্টা কম না হলেও জিনিস নেওয়ার জন্য এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় না আর সবচেয়ে বড় কথা সব পরপর সাজানো থাকে বলে একটা নিতে গিয়ে একটা ভুলে গেলেও ঠিক জিনিসটার দিকে চোখ গেলে তা মনে পড়ে যায়।সে পাশের পাড়ায় শঙ্করদার মুদির দোকান থেকে এইজন্যই জিনিস কেনে না।এখন সে নিরুপায়।স্টেশন অবধি অনেকটা রাস্তা আর তাদের পাড়ার মুদির দোকানটা বহুকাল যাবৎ বন্ধ।শোনা যায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে।তাই পাশের পাড়ায় শঙ্করদার দোকানেই এখন লাইন দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেপে সেও জিনিস কিনছে।নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে গড়ফায় এসে দু’বছরে এই প্রথম সে এখান থেকে জিনিস কিনছে।আগে ঐ টুকটাক দশ-কুড়ি টাকারই জিনিস কিনে খাতিরদারীটা বজায় রেখেছিল।তবে এখন লাইন দিয়ে জিনিস কিনতে গিয়ে একটা জিনিস ভাল করে লক্ষ্য করে সে দেখছে যে শঙ্করদা লোকটা একজন কর্মচারী নিয়েই এই মাঝারী ধরনের দোকানটা চালায় আর লোকের ভিড় উপছে পড়ছে,এটা-ওটা চাইছে সবাই,বসার ফুরসৎ নেই তবুও কত মানবিক ব্যবহার তার! সব ক্লান্তিটুকু হাসিমুখে ফুরসতে সরিয়ে সে জিনিস দিচ্ছে।আবার চেনা মুখের লোকদের জিনিসে ছাড়ও দিচ্ছে।সৌরদীপ গত কয়েক বছর শপিংমল থেকে জিনিস কিনেও নির্ধারিত মূল্যের ওপর কোনও কম পায়নি।বরং টাকা দিতে দেরী হলে ক্যাসিয়ারটি বিরক্ত হয়ে চেয়ে থাকত তার দিকে।জিনিস কেনার পরে শঙ্করদা হাসিমুখে বিলটা তার দিকে এগিয়ে দিলে সৌরদীপ দেখল সবমিলিয়ে সাড়ে তিনশো টাকার জিনিস কিনে মোটের ওপর কুড়ি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।শঙ্করদাকে সে এই কথা বলতেই সে মৃদু হেসে বলল, “আপনারা পাশের পাড়ার লোক।আপনারাই আমার রুজিরুটির জোগান দেন।সবসময়ে লাভের কথা না ভেবে দীর্ঘদিন ভালো সম্পর্ক থাকুক এই জন্যই আমি ছাড় দিই।আমার জিনিসে গলদ পাবেন না সে কথাও দিতে পারি”।এই মাসে পুরো মায়নাও পায়নি সৌরদীপ তাই এই খুচরো ছাড়েও তার ভালোই হল।ঘরে এসে দেখল জিনিসগুলো শপিংমলের থেকেও বেশ উন্নতমানের আর সাথে পাওয়া এমন ব্যবহারের কথা ঘরনী স্নিগ্দ্ধাকে সে বলায় সেও বলে উঠল, “তোমায় তো প্রায়ই বলি আমায় টাকা দিয়ে যেও, আমি শঙ্করদার থেকে জিনিস কিনে নিয়ে আসব”।এতদিন প্রতি কেজি জিনিসে সৌরদীপ ভালোই লোকসান করেছে।এই লকডাউনের সামাজিক দূরত্ব তার আতিশয্যের দেখনদারিকে ভেঙ্গে চুরমার করে বাস্তবিকতার পথ চিনিয়েছে।এখনও কিছু অলি-গলিতে শঙ্করদার মত মানুষ আছে তা প্রাসাদসম শপিংমলগুলোর জৌলুস চিনতে তো দেয়ই না সাথে ছদ্মবেশে লুটও চালায়।এসবের মাঝেও মনে মনে হেসে ফেলে সৌরদীপ শঙ্করদার মুখভরা হাসিটা ভেবেই।
Khub bhalo laglo. It's a fact. shopping mall a asol rup ta apnar lekha dia futia tulechen.
ReplyDelete:)
DeleteBhalo laglo pore apnar lekhata.Apni je bishoye likhechen seta sotiye i relevant.
ReplyDeleteহুম ধন্যবাদ আপনাকে।।
Delete