PravatiPatrika

Saturday, June 13, 2020

শুধুই কবিতা

আমার কবিতারা
---------------বিকাশ দাশ

গ্রামের যে  সাঁওতাল মেয়েটি ধান রোয়া সেরে 
কাদা মাখা শরীরে 
ঝুমুর কণ্ঠে বাড়ি ফিরছে
তার  নাম  কবিতা।

অদিগন্ত ভালো লাগা যেখানে 
একলা পায়ে পায়ে উঠে আসে -
তার নাম কবিতা। 

ধানের শিসে যখন সুর বেজে ওঠে 
আমার কবিতা তখন আলতা পায়ে সদ্য কিশোরী । 

মেঠো রাখাল যখন বনপথে বাঁশির সুরে আনমনা 
আমার কবিতা তখন অভিমানিনী রাই। 

অনন্তের সীমানা পেরিয়ে যে প্রেম 
আঁচল পেতে অপেক্ষা করে আছে
-তার নাম কবিতা। 

জনমজুরের চাটানো বুকে 
সাফল্যের যে ঘাম ফুটে ওঠে
 তার নাম কবিতা। 

কবিতা আমার শৈশবের মাতৃত্ব -
কৈশোরে সহচরী ;  যৌবনের আকাঙ্খা - বার্ধক্যের বেদমণ্ত্র। 

পৃথিবীর যে কোন সূতিকাগারে 
এইমাত্র যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হল -
সে আমার কবিতা। 

কাশ্মীর সীমান্তে যে সমস্ত ভারতীয় জোয়ান ভাইয়েরা 
বুক চিতিয়ে লড়ছে -  তারাই আমার কবিতা। 

ভারতবর্ষের কল কারখানা ; কয়লা খাদানে 
যে সমস্ত শ্রমিক 
মৃত্যু ছুঁয়ে ফসল তুলে আনছে  -
তারা আমার কবিতা। 

কিশোরীর রঙিন ফিতে ; কাঁচের চুড়ি 
পায়ের নূপুর ; চোখের কাজল - আমার কবিতা। 

নারীত্বের লান্ছনা - অপমানে
কবিতা আমার বীরাঙ্গনা। 
ভুখা মানুষের মিছিলে - আর্তনাদে 
কবিতা আমার প্রতিবাদী। 

গঙ্গা -পদ্মা  এপার ওপার একাকার আমার কবিতা। 
ফুটপাতে অপুষ্ট শিশুর চিৎকার আমার কবিতা । 

মন্দির্ - মসজিদ - গির্জা - গুরুদোয়ারা আমার কবিতা। 
যুবকের উচ্ছলতায় - কর্মোদ্যোগে আমার কবিতা। 

আমার কবিতা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রহরী ।

জনপ্লাবনে -মিছিলে - স্লোগানে -যে প্রতিবাদ
 -- তারও নাম কবিতা। 

কবিতার জন্য জন্ম আমাদের 
কবিতার জন্য জীবন আমাদের। 




                            মুক্তি
                         কবিরুল


           উচ্ছল  নদীর মতন এ জীবন  তোমার  - 
                বয়ে চল দিবানিশি আপন ছন্দে ,
           ভাঙ্গা পাড় আমি একাকী নিভৃত নিবাসে ;
           তোমার অলিন্দের আনাচে কানাচে যৌবনের 
           বোহেমিয়ান শিহরণ প্রতিনিয়ত টের পায়।
      দিশেহারা , উদভ্রান্ত , ক্ষয়িষ্ণু এ জীবনে   
          খাঁচার ভেতর অচিন পাখি রোজই
            ব্যথায় গুমরে কাঁদে , ছটফট করে।
           খাঁচা থেকে নীল আকাশের নেশাটা
             একটু একটু করে ডানায় মাখে।
              স্বাধীনতা ! মুক্তির বিনম্র স্বাধীনতা!
              ঋণ পরিশোধের স্বাধীনতা ! ও  মানে , বোঝে।


             ঐ আকাশে সন্ধ্যাতারা আছে  -
           তোমার মতনই উজ্জ্বল , ও জেনে গেছে।
             তুমিও তো পার তোমার  সকল শক্তি বিকিয়ে
             পাখিটাকে একটু শান্তি দিতে , তারার কাছে
               নিয়ে গিয়ে  ওকে একটু মুক্ত বাতাস দিতে ।
             আকাশেরও কি ভাঙ্গা পাড় আছে আমার মত ? তুমি জান।
        নিয়ে চল আমাকে  সন্ধ্যাতারার কাছে , ওখানেই মুক্তি -
         আমিও ওর মতন মুক্তি চাই। উড়তে চাই।



                     খেলা করে
                   আব্দুর রহমান

যাত্রা শুরু কত দিন কত সন্ধ্যা রাত বট গাছ
চলে গেল হিসেবের খাতায় রাঙানো লাল সবুজ
নীলের কাটাকুটি , কিংবা সূর্যের মুখ সূত্রমতে প্রণাম গঙ্গা মোহনায় স্মৃতি রোমন্থন , সব ঋতুতেই ঋণ বোঝা পড়া জীবন । লাভের ঘরে হাই প্রোফাইল ডায়াগ্রাম
ঝক ঝকে,  অনুসরণে হিমালয় শৃঙ্গ ; ছুটে চলা‌
 অবিরত পথ বৃষ্টি বাদল নিশি রাত অবরুদ্ধ ভোর ।

 অভিমানে , এক অকথিত  ভালবাসার টানে খুলে পড়ে কাছার  কাপড় , বুকের তাপে খুঁজে মরে  ঘরের মানুষ
যাত্রা শুরু শেষের পাতা অযত্নে মৃত্যু  চোখের সামনে মানবিকতার পাঠ বেদ মন্ত্রের মতো শব্দায়নে  মিডিয়া

দেশ কাল ভূত অনাগত মুহূর্ত লাল-সবুজ নীলের বুকে
 ছুঁয়ে হাত , ঝড় বৃষ্টি খরা  মৌসুমে দিন শুরু, শব্দবাণে
অগ্নি দগ্ধ ঘর বাড়ি বিবি উড়ে যায় জীবনের ছবি
সন্ধ্যা রাত বট গাছ চলে গেল হিসাবের কথায় লালনীল সবুজের কাটাকুটি
আর কত দিতে হবে ঘাম স্মৃতি রক্তিম স্বপ্ন নদীর তীরে
 সাহারা মালবার থেকে অন্তরীপ আকাশের তলায় ।
ভেসে যায় সব তারা তবু অপেক্ষায় আশায় বাঁধে বুক
লড়াইয়ের ঢেউ খেলে যায় জীবনের প্রথম প্রেমের মতো ।
বার্ধক্য জরা কীট  মৃত্যুর স্মৃতি বিভাজিত  ঢেউয়ে
লাল নীল সবুজ খেলা করে খেলা করে খেলা করে ।
             
           

                       সুখের শাস্তি
                       অমিত পন্ডিত 

তার চোখের ভিতর, সারাক্ষণ এক হেডমাষ্টার ছড়ি হাতে আমাকে তাক করে থাকে..

অগত্যা আমি নীল ডাউন হয়ে  থাকি যতক্ষণ তার ছড়ি ও ভাবে আমাকে বাধ্য করে রাখে..

বসে থাকতে থাকতে এক সময় আমি নীলকন্ঠ পাখি হয়ে যায় আর সে হয়ে যায় অতীন বন্দোপাধ্যায়..




      প্রেমের আবহে আছি তাই
         মিনতি গোস্বামী


আতঙ্কিত শরীর আর
শরীর থেকে অজান্তেই গড়ায় মৃত‍্যুরস
শকুনের ডানার মূর্ছনা
মুছে দেয় জীবনের যশ।

ভোট কাটাকুটির মত অসমাপ্ত অঙ্ক
জীবনকে হারিয়ে দিলে
নটে গাছের গোড়ায়
জমা হয় বিষ পিঁপড়ে।

জীবনপঞ্জীতে নাম বাদ গেলেও
পায়ের তলা থেকে দেশ কেড়ে নিলেও
ডোবা জুড়ে লতিয়ে ওঠে কলমীলতা
ডলফিন খেলা করে মফস্বলী গঙ্গায়
কুবো পাখির মত কুবকুব করে স্বপ্নেরা।

কবেকার সোনাঝুরির ছাওয়ায়
দোলের কোন এক সকালে
আবেগে মাখিয়েছিলে
গালজুড়ে একমুঠো আবির
চিরযৌবনা অবিনশ্বর রাধারূপ এঁকে দিতে।

বৈশ্বিক বিপদে তাই
আজো আছি অবিকল
মৃত‍্যুরস ছাপিয়ে বুকেতে ঢেউ তোলে
মিলনকামী প্রেম যমুনার জল।




দূরের ভাষা
          মৃন্ময় ভট্টাচার্য্য

বলতে পারো আমরা কেন
ভীষন চেঁচাই রেগে গেলে?
বলছি যাকে দাঁড়িয়ে পাশে
ফাটাই গলা জহর ঢেলে ?

কিন্তু যাকে কাছের ভাবি
আলাপ জুড়ি রস ঝরিয়ে,
দোষ এড়িয়ে গুণটা খুঁজি
বসাই তারে মন-মন্দিরে ।

দূরের থেকে বলতে গেলে
একটু চেঁচাতে হয় মানছি,
পাশে থেকে যে'জন চেঁচায়
সে যে মনের দূরের জানছি ।

মাপজোকের মাপকাঠিটা
থাকে রাখা হৃদয়পুরে,
দূরের মানুষ হয় যে আপন
নিজের ভাইকে রাখি দূরে ।




ফেরত
শ্যামাপ্রসাদ সরকার

নিয়তির মত কাঁটাতার দিয়ে
আমায় আলাদা করেছ কবেই
নরম মাটির বুকে ধূলোমাটি মেখে
কমলারঙের রোদে কত আশনাই
বিকেলের জলছবি
কতকাল আগেই
আঁকতে আঁকতে শেষে
ক্ষয়িষ্ণু রঙ পেন্সিল

এভাবেই বাকীটা জীবন
সূর্যাস্ত দেখব বারান্দায়
প্রবল জোয়ার মাখা চাঁদ
চিঠি দেবে আদুরে জোছনায়...

ভালো থেকো, প্রিয় দেশ
ভালো থেকো, আত্মজন
এখানে পায়ের নীচে কাঁকড়
নরম ঘাসের মাটি স্বপ্নে দেখি
এসব সত‍্যি করে ওখানে মানায়।




ছোট গাছের আত্মকথা
করুণা দেবনাথ

 খানিক বাদেই ঝড়ছো  তুমি
 যখন খুশি এসেছো নামি
 ভাবছো কিগো
ভাসিয়ে দেবে
 খানিক বাদেই ঝড়ছো ?

 বলছি আমি ছোট্ট গাছ
আমায় চিনতে পারোনি
ঝড়ো আগে বাড়োর প'রে
গড়িয়ে আসো আমার তরে
 দিচ্ছ হৃদয় ভরে ।

বলছি আমি ছোট্ট গাছ
 গড়িয়ে পড়া বিন্দুগুলো
সহ্য করে বগলদাবায়
  আমরাই ঝাঁপিয়ে রাখি
 চিনতে পারলে কি?

 বলছি আমি ছোট্ট গাছ
 এবার ঝরা ক্ষান্ত করো
 আর পারছিনা কষ্ট বড়ো
খানিক বাদেই ঝড়ছো
 ভাসিয়েই দেবে নাকি।।



        উদ্বাস্তু
   শোভন সরকার

সম্পর্ক যেথায় খোঁজে শুধুই শরীর
সেথা ভালোবাসা সদা বাসি ফুল সম ,
রাশি রাশি প্রতিশ্রুতি জেনো অর্থহীন
আবেগি হৃদয় সেথা শুধু ভোগ্যপন্য |
লালসার  বনে মধু লোভী  মধুকর
শুষে নেয় শেষ বিন্দু শোষক দণ্ডেতে |
পদতলে তৃণ দলে  মিশে যায় স্বপ্ন ,
পূজার অঞ্জলি শেষে জোটে আস্তাকুড় !


বিশ্বাসের  নেই মূল্য ছলনার  গল্পে
ক্ষুদ্র অজুহাতে নিভে যায় আশা দীপ,
ফাগুন চোখেতে নামে শ্রাবণের ধারা !
মেঘলা মনের আকাশে জমা অভিমান
ভাঙিবেনা কেহ আসি , বনবাসী হৃদে
ক্ষতের স্তূপে দাঁড়িয়ে প্রেম ও উদ্বাস্তু !





No comments:

Post a Comment