বিরসা মুণ্ডা হল্ট
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
অচেনা জঙ্গল ফুঁড়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে একটি রেল হল্ট
যার নাম দেখে ইতিহাস ঘা দেয়।যোদ্ধার জীবন।বনভূমি আর
দখলদারের কঠিন লড়াই। মনে পড়ে ভাগলপুরের সেই স্টেশন।
দেখি বনফুল বলাইচাঁদ হাতে ডাক্তারি ব্যাগ রাতের নির্লিপ্ত ট্রেন
চলে যায়।আশাহত।উদাস দৃষ্টি থিতু না হতেই দেখেন পিছু হেঁটে
ফিরে আসে ট্রেন।অথবা কার্মাটাঁরের কর্মযোগী ঈশ্বরচন্দ্র নির্লিপ্ত চোখে
তাকিয়ে আদিবাসী রোগীর সেবায় ডুবে যান। চম্বল রেলের
কোনো হল্ট হতেও বাধা নেই।হেঁটে যান আদিবাসী মা আর
তার সংসার।অভাব বধের জন্য ঘর ছেড়ে চলেছেন মজুরির
খোঁজে। এই হল্ট তাঁদের।সারাদিন মনুষ্যহীন এই পথ।ক্রমাগত
আশীর্বাদি শালপাতা ঝরে বিরসা পুরুষের মাথায়...........।
অভাজন আমি দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে..... একদিন।
হেরে যাবেন বিধাতা
অর্চনা ভট্টাচার্য্য
এই পৃথিবীতে এত মায়া
তাই তো এই গ্রহে জীবের প্রকাশ
অন্য গ্রহগুলো করে হা-হুতাশ।
এত নদী, গাছ গাছালি,
জন্তু জানোয়ার, পাখ পাখালি
সবাই কেমন সুখে আছে
পাতিয়েছে দেখ মিতালি ।
মানুষ পড়েছে মায়ার বাঁধনে
স্ত্রী পুত্র সন্তানে, ভাই বোনে
এমন সুন্দর সাজান গ্রহ
কোথায় আছে, আগে দেখেনি কেহ।
বিধাতার বুঝি হিংসা হ'ল
মানুষের মনে লোভ বপন করলেন
লোভের বশে সে পাপ করল, করতেই লাগল
সোনার পৃথিবী নরক হ'ল।
মনে মনে হাসেন বিধাতা,
মানুষ হবে শ্রেষ্ঠতম?
যাবে স্রষ্টাকে ছাড়িয়ে?
তাইতো সব কিছু দিলেন বিষিয়ে।
তবুও আজও আছে মায়া আছে মমতা
হয়ত শুভ বুদ্ধির উদয়ে
হেরে যাবেন বিধাতা।
শরণার্থী ( কবিতা)
আব্দুল রাহাজ
ওরা শরণার্থী শরণার্থী ওরা এসেছে ভিটেমাটি ছেড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা কে কষ্টকে সহ্য করে পাড়ি দিয়েছে অন্য দেশান্তরে। ওরা আজ সবার কাছে শরণার্থী উদ্বাস্তু ওরা যেন কোথাও বঞ্চিত অত্যাচারিত কেউ তাদের সাহায্য করে না। ওদের বড় কষ্ট দুঃখ হে মানুষ তুমি তাদের পাশে দাঁড়াও পাশে দাঁড়াও ওরা যে অসহায়
ওদের সাহায্য করো ওদের আশ্রয় দাও দুবেলা দুমুঠো খাবার ভাগ করে খাও ওদের একটু শান্তি দাও শান্তি দাও ওরাও তো সেই মানুষ এক ভাই এক বোন তবে ওদের এত কষ্ট দিচ্ছ কেন তোমরা। ওরা আজ শরণার্থী শরণার্থী তাদেরকে আঁকড়ে ধরে তোমরাও বেঁচে থাকো।
অবসর
শর্মিষ্ঠা সাহা
.........কথা হয়েছিল,
ফিরে যাব না মালকোষে,
অঙ্গীকার ভেঙে সৃষ্টির গন্ডূষ,
একটু অবসর চেয়েছিল।
.......কথা হয়েছিল,
ফিরে যাব না মধ্যরাতের সাম্পানে,
সহজ চাওয়াগুলো আত্মহত্যার আগে,
একটু অবসর চেয়েছিল।
......কথা হয়েছিল
প্রেমে পড়া বারন,
অজুহাতগুলো আঘাত হবার আগে,
একটু অবসর চেয়েছিল।
......কথা হয়েছিল,
ফিরে চাইব না অস্তিত্বের দোসর,
নিঃস্ব হবার আগে অভিমান,
একটু অবসর চেয়েছিল।।
বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হাইকুর মাধ্যমে
রমলা মুখার্জি
হাইকু
1.
সীমান্ত পারে
সাহসী তাজা প্রাণ
যুদ্ধেতে মরে।
2.
মরণ দেহে
দেশের বীর সেনা
অমর রহে।
3.
নওজোয়ান
ধন্য লড়াকু প্রাণ,
শত প্রণাম।
" হতাশা "
হামিদুল ইসলাম
ভেঙে পড়া প্রদীপখানি
রেখে দাও জানালার পাশে
প্রয়োজনে হাতে নিয়ো
যদি কোনোদিন কাজে আসে ।।
যে প্রদীপে তুমি
প্রতিদিন জমিয়ে রাখো ঘৃণা
সেই ভাঙা প্রদীপ আমি
যাকে তুমি কোনোদিন করতে পারো নি ক্ষমা ।।
আর ক্ষমা নেবো না
তোমার কোমল হাতে
পারলে আমাকে ভুলে যেয়ো
স্মৃতিগুলো সুখে থাক তোমার সাথে ।।
যদি কোনোদিন দেখা হয় দূরে বহুদূরে
মুখটিও ঘুরিয়ে নিয়ো
তোমার সমস্ত ঘৃণা আমি বয়ে যাবো
যতো পারো কষ্ট আমাকে দিয়ো ।।
তবু তুমি সুখে থাকো
পুড়ে খাক হয়ে যাক আমার ভালোবাসা
তুমি শান্তি পেলে
কেটে যাবে আমার সমস্ত হতাশা ।।
বন্ধ হোক যুদ্ধ
মিনতি গোস্বামী
যুদ্ধের আবহেই শুরু হলো
সীমান্তে নতুন যুদ্ধ
শত্রু এসে দেশের সীমানা
করছে অবরুদ্ধ।
হাজার হাজার বীর সেনানী
দেশকে করছে রক্ষা
আমাদের মত তাদের বুকে
নেই তো মরণ শঙ্কা।
পেটের খিদে মেটাতে তারা
জড়িয়ে ধরেছে মায়ের আঁচল
মায়ের মান রক্ষাই তাই
তাদের জীবনের সম্বল।
রাতের অন্ধকারে লাদাখ সীমান্তে
শহীদ হল কুড়িটি প্রাণ
তারাতো আমাদের আদরের সন্তান
মায়ের নারী ছেঁচা দান।
ভেসে গেল কুড়িটি সংসার
স্বামীহারা, সন্তানহারা বুক ছারখার
ঘরের শিশুটি বাবা বলে
ডাকতে পারবেনা কখনো আর।
দেশের মানুষ যুদ্ধ চায় না
জেনে রাখুক দেশের সরকার
আলোচনা করে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এখনি বন্ধ করা দরকার।
অযান্ত্রিক
----সৌমেন সরকার
আমি আর অপু পাশাপাশি
হাতে হাত আর চোখে চোখ...
নিমেষে ভুলে গেলাম চতুষ্কোণ পৃথিবী!
ধূধূ ধূসর বালির সাগরে,যেন ঠিক একটা মরিচীকা।
একটা প্রবল ঝাঁকুনি...একটা প্রবল যান্ত্রিক শব্দ...
পাশে তাকিয়ে দেখি অপু নেই!
সে চলেছে অনেক আগে
আর আমি তার পিছনে...একা...বড় একা...একদমই একা...
অশ্রুধারা
ডাঃ তারক মজুমদার
তোমার সাথে হয়েছিলো যে সব কথা
সব কথা আজো যায়নি হারিয়ে
মনের গহনে অতি সংগোপনে
লালন করেছি তাদের------- ।
কথার পৃষ্ঠে সাজিয়ে কথা
কত আলোচনা সুখ দুঃখ
মেলে দিতো ডানা, বিশ্বাস আর
ভালোবাসার পরশে ------ ।
আজো চির সবুজ কথা গুলোকে
স্বযত্নে আগলে রাখি বৈশাখী ঝড় থেকে।
জানিনা কেমন আছো ?
আবার শুরু হয়েছে হিমেল হাওয়ায়
শীতের শিশির ভেজা সকাল---।
আজ ডাইরীর পৃষ্ঠা উল্টাতেই
তোমার ছবিটা বেড়িয়ে পড়লো
নিমেষে ঝড় উঠলো এ বুকে,আর
মুষলধারায় অশ্রুধারা ঝরে পড়লো
তোমার ছবির উপর ----।
তোমার ভালোবাসা
- গণেশ দেবরায়
তোমার ভালোবাসা মানে
এক মাঠ নিস্তব্ধতা
আর একটা নিশ্চুপ বৃক্ষ।
তোমার ভালোবাসা মানে
উন্মুক্ত আকাশে ফুটে উঠা
তোমার স্বপ্নের শত তারা।
তোমার ভালোবাসা মানে
মরুভূমির অফুরন্ত উত্তাপ
আর অস্ফুট সব শব্দ।
তোমার ভালোবাসা মানে
একটা ঝড়ের পূর্বাভাস
আর উষ্ণ জলস্রোত
একালের সত্যবতী
----টুম্পা মুখার্জী
সকালের রাঙা রোদে পিঠখানি মেলে
খোদ্দেরের অপেক্ষায় বসে আছে সত্যবতী,
কালো রাস্তায় ঝরে পড়া হলুদ লাল
কৃষ্ণচূড়া যেন ওর বার্ধক্য যৌবন শৈশবের রঙ।
মাছের গন্ধ ডিঙিয়ে কোনো শান্তনু
আসেনি ওর জীবনে,
নিরাসক্ত জ্যোৎস্না,অর্থহীন মেঘদূত...
কেবল বেঁচে থাকার লড়াই।
একদিন হারে রেরে রেরে করে
ডাকাত বৃষ্টি,
রাস্তা রূপকথা নদী...
একঝাঁক আর্গল মুক্ত কৈমাছ
ভেসে যায় রূপকথার নদী বেয়ে
ম্যানহোল বেয়ে গঙ্গার দিকে...
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা সত্যবতীও
ভেসে যায় তার রামধনু শৈশবে।
কিন্তু কতগুলি হিসেবি চোখ
দৃষ্টির ফিতেয় নির্ণয় করে
একালের সত্যবতীর
মস্তিষ্কের পরিমাপ।
"কর্ম"
জুয়েল রূহানী
কর্ম সাধন কর-
মর্ম বুঝে
ধর্ম পালন কর-
মানব খুঁজে।
করলে মানব সেবা-
স্বার্থ ত্যাগে,
মিলবে প্রভূর দয়া-
সবার আগে।
আপন কর্ম ভূলে-
নয় ইবাদত,
ধর্ম-কর্ম মূলে-
জীবন মহৎ।
সব কথা কি জোরেই বলতে হয় ?
ডাঃ শুভদীপ বিস্বাস
নীরবতাই ভাষা হোক ;
প্রতিবাদে
দেখেছি চিৎকার
এ শহরে ।
হেঁটে গেছে মিছিল
শ্লোগানে শ্লোগানে;
আমাদের আপাত নিরাপদ
জীবনে
প্রচন্ড থাপ্পড়,
নীচু মুখে
হেঁটে যাওয়া
পরিযায়ী শ্রমিকের দল।
প্রতিবাদ
প্রতি পদক্ষেপে
নীরবতায় ।
দুঃসময়ের কথকতা--
জহরলাল দাস
কি করে কাব্য লিখব?
কি করে কবিতা লিখব?
মনে আমার আশন্কার কালো মেঘ!
বুকে অজানা আতন্ক!
ঘরে বাইরে এখন শুধুই মৃত্যু ভয়! বিভীষিকা, ভয়, আতন্ক
ঘিরে ধরে আমাকে!
প্রেয়সীর রাঙাঠোট হাসিমাখা মুখ মনে করে আমি আরো বেদনার্ত হই।
আবেগ, উৎকন্ঠা, উদ্বেগে আমি সিটিয়ে যাই!
মনে মনে ভাবি
এ কোন পৃথিবীর জীব আমরা?
কেন এই বিভীষিকাময় পৃথিবীতে আমাদের জন্ম?
আমি এখন কবিতার পৃথিবীতে নেই। এই দঃসময়ে আমি অন্ধকারের গর্ভগৃহে মৃত্যুর প্রহর গুনি!
গল্প
রাঁচীতে
- অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)
এক শীতের সন্ধ্যায় রাঁচীতে পৌঁছলাম । ছিল একটি কনফারেন্স । উড়ে গেলাম পাটনা থেকে রাঁচী ।
তখন বিয়ের মরশুম; হোটেলে একটাই রূম খালি ছিল । তবে গিয়ে দেখি সেখানে বাথরুমে জল টপটপ করে পড়ছে ।
অনেক খুঁজেও হোটেল না পেয়ে অগত্যা সেখানেই থাকা হলো। সেটি লাইন ট্যাঙ্ক রোডে, অ্যালবার্ট এক্কা চকের কাছে ।
একটু ধাতস্থ হয়ে গিন্নীর সাথে যাওয়া গেল বিখ্যাত ' ফিরায়ালাল'-এ । তিনতলা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; জুতো- জামা- সোয়েটারের সম্ভার ।
পরদিন ভোরে গাড়ি ভাড়া করে রাজরাপ্পায় ছিন্নমস্তা মন্দির দেখতে গেলাম । প্রায় দেড় ঘন্টার রাস্তা ।
দামোদর ও তার শাখা নদীর সঙ্গমে পুরনো তীর্থ ছিন্নমস্তা মন্দির । আরো অনেক মন্দির আছে; প্রাকৃতিক পরিবেশে ঝর্ণা, পাথর, পাহাড়, সব খুব ভালো লাগবে ।
ফিরে রাঁচীতে কনফারেন্সে ব্যস্ত জীবন; তারই ফাঁকে দেখা টেগোর হিল, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ও ট্রাইবাল মিউজিয়াম ।
ফেরার আগের দিন ঠিক করলাম যে দশম ফলস দেখতে যাব। রাঁচী শহরকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে প্রায় ছয়টি ঝর্ণা, যেমন হুন্ড্রু, জোনা, দশম, হিরণী ইত্যাদি ।
ঘন্টাখানেক লাগল দশম ফলস পৌঁছাতে । পথে পড়বে আদিবাসীদের ছোট গ্রাম, ছোট্ট চার্চ, খেত ।
প্রায় একশো ফিট ওপরে পাহাড় থেকে ভীমবেগে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দশম। দৃশ্য অতি মনোরম; ছবি তোলার পক্ষে আদর্শ । শীতেই তার দুর্দম রূপ; বর্ষায় সে আরো ভীষণ ।
সুন্দর জায়গা রাঁচী; ছোট শহর, কিন্তু সব সুযোগ সুবিধা আছে । লোকজন মিশ্র; বিহারী, বাঙালি , সাঁওতাল, পাঞ্জাবি, সবাই মিলেমিশে আছে । খাওয়া দাওয়াও ভালো ।
তাই অল্প কিছুদিনের ছুটি পেলে ঘুরে আসাই যায় রাঁচীতে । বেশ ভালোই লাগবে ।।
No comments:
Post a Comment