PravatiPatrika

Monday, June 22, 2020

আজকের সংখ্যা

অনুগল্প

এক বহুমুখী প্রতিভার কথা
 - অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)

   রাণীর কথায় চমকে উঠলেন আচার্য সায়ণ । শস্ত্র আবার ধরতেই হবে তাহলে ! ..
  মনটা ভালো নেই আচার্যের । ..দুদিন আগেই রাজপ্রতিনিধি কম্পন মারা গিয়েছেন । উদয়গিরির এই প্রাসাদে সর্বক্ষণ শত্রুদের শ্যেনদৃষ্টি!..ওদিকে দাদা হাম্পিতে কী করছেন কে জানে ! বিজয়নগর রাজ্য আরম্ভেই যেন হোঁচট খাচ্ছে ।
 বিধবা রাণী সায়ণকে বললেন :-" আচার্য, আপনি ও আপনার দাদা আচার্য মাধব আমাদের জন্য অনেক করেছেন ।"
 " আমার সৌভাগ্য মহারাণী ।"
 " আমাদের পুত্র সঙ্গম শিশু মাত্র । ..ওদিকে চম্পারায় উদয়গিরি আক্রমণ করবে শুনলাম ।"
 সায়ণও গুপ্তচর মারফত একথা শুনেছেন । মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন ।
 " আপনি আমাদের সেনাপ্রধান হোন আচার্য! রক্ষা করুন আমাদের সবাইকে ।"
 " আমি !"
  " রাজপ্রতিনিধি কম্পনের সঙ্গে মিলে আপনি নেল্লোর ও কাডাপা জয় করেছিলেন, সে কথা আমি জানি আচার্য ।"
 সবে বেদের ভাষ্য প্রস্তুত করছিলেন সায়ণ; এখন যুদ্ধ! তবে রাজকার্য তো সর্বাগ্রে ! যদিও তলোয়ার তাঁর তেমন ভালো লাগে না ।
 যুদ্ধ বাধে; সায়ণের তলোয়ারে ছিন্নভিন্ন হয় চম্পারায়ের দেহ । উদয়গিরির বীর সৈন্যরা জয়ী হয় ।
  ইতিহাস এই মহান আচার্য ও তাঁর দাদাকে মনে রাখেনি। বিজয়নগর রাজ্যের উন্মেষলগ্নে তাঁরা কৌটিল্যের মতোই নির্লোভ সদুপদেশে ও অসীম বীরত্বে  সাম্রাজ্য রক্ষা করেন। এর মধ্যে সায়ণ সুপন্ডিত , ও অত্যন্ত কুশলী যোদ্ধাও ।
 ইতিহাস এত ভুলে যায় কেন ??






        আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে ( সম্পূর্ণ )
                      দীপাঞ্জন ভট্টাচাৰ্য
       (কিংবদন্তী মান্না দের  জন্ম   শতবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য)

নীরদ চন্দ্র চৌধুরী বলে এক বিখ্যাত এবং বিতর্কিত বাঙালি ছিলেন. ভারতবর্ষ তার পোষায় নি নানা কারণে. বিলেতে গিয়ে তিনি তার নাম লিখতেন নীরদ সি চৌধুরী নামে. মানে একদন বিলিতি কায়দায়. তার বহু বিতর্কিত বই এর মধ্যে,, " আত্মঘাতী বাঙালি ' ও " আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ " বহুল পঠিত. এই একটি জায়গায় আমি ওই বিতর্কিত ব্যক্তির সাথে সহমত. যে বাঙালি আত্মঘাতী তো বটেই এমন কি আত্ম বিস্মৃত জাতী ও বটে. তা না হলে এখনকার প্রজন্মের শিল্পী নচিকেতা যখন গেয়ে উঠেন... " আর বিরহের কথা এলে / বুঁকের জ্বালা ভুলে / আজও মাঝে মাঝে শুনি মান্না দের গান... ".  সেই মান্না দের জন্ম শতবর্ষ তো গেলো 2019 সালে. পয়লা মে মান্না দে জন্মগ্রহণ করেন. 2019 তে চিনা কোরোনার জুজু ছিল না. কিন্তু বাঙালি সে ভাবে মান্না দের জন্ম শতবর্ষ ঘটা করে পালন করলো কোই? তবুও তিনি বেঁচে আছেন মনের মনিকোঠায় সকল সংগীত পিপাসু দের হৃদয় তন্ত্রী তে. হিন্দি গান দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু হলেও তিনি গেয়েছেন মারাঠি পাঞ্জাবী গুজরাটি সহ দক্ষিণ ভারতীয় ভাষার বহু গান.
নব্বুই পেরিয়ে ও বাংলা বেসিক গানের তীব্র খরার দিনেও যখন তিনি মৃনাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর সুরে গেয়ে উঠেন... " আমায় একটু জায়গা দাও / মায়ের মন্দিরে বসি ". তখন তা সুপার ডুপার হিট হয়. এমন প্রবৃদ্ধ অবস্থায় এমন ইতিহাস আর কারো নেই. অ্যালবাম টির নাম ছিল মা আমার মা. সেই এলবামের একটি গানেই গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায় বলে গেছেন তার অনাহুত ভবিষ্যত এর কথা. গানটি ছিল... " যখন এমন হয় / জীবন টা মনে হয় ব্যর্থ আবর্জনা / ভাবি গঙ্গায় ঝাঁপ দেই / রেলের লাইনে মাথা রাখি "....... মান্না দে এই গানটি রেকর্ড করতে চান নি
...... কিন্তু নাছোড়বান্দা পুলক বাবু মান্না দে কে রাজি হতে বাধ্য করান. এরপর সত্যি সত্যি পুলক বাবু 2000 সালে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হোন. মান্না দে তার জীবনে যত বেসিক গান এর রেকর্ড করেছেন তার সত্তর শতাংশের ও বেশি গান পুলক বন্দোপাধ্যায় এর লেখা. যাই হোক কিংবদন্তী মান্না দের জন্মদিনের আবহে মনকে আর ভারাক্রান্ত করবো না. চলুন কিছু মজার কথা ও অবিস্মরণীয় গান সৃষ্টির ইতিহাস জানি. অনেকের কাছে চর্বিত চর্বন হতে পারে. কিন্তু এই স্বর্ণালী ইতিহাস যে এই প্রজন্ম কেও জানতে হবে.পুজোর গান বলতে সেই সময় আপামর বাঙালির কাছে এক তুমুল উত্তেজনা ছিল. HMV থেকে গান রিলিজ করার আগেই একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হতো. সেখানে লিপিবদ্ধ থাকতো সেই বছর কে কে কি কি পুজোর গান গাইছেন. তো একবার মান্না দে কে পুজোর গানের জন্য তাগাদা দিচ্ছে  HMV. কিন্তু তখন অব্দি মান্না দের নুতন কোন গান ই তৈরী হয় নি. ভারী মন খারাপ. কারণ পুলক বাবু তখন ও নুতন গান বাধঁতে পারেন নি. একদিন তিনি মান্না দের মন ভালো করার জন্য বললেন " চলুন আমার ভায়রা ভাই এর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি ". মান্না দে নিমরাজি হলেন. সেই বাড়িটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের একটি খনি অঞ্চলে. গাড়ি নিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লেন. কিন্তু যথা স্থানে পৌঁছে পুলক বাবু তার ভায়রা ভাই এর বাড়িটা ঠিক ঠাহর করতে পারলেন না. একটি সুদৃশ্য বাড়ি দেখে তার মনে হলো এটাই হয় তো তার ভায়রা ভাই এর বাড়ি. মান্না দে কে গাড়িতে বসিয়ে তিনি ওই বাড়িতে গেলেন এবং কলিং বেল টিপলেন. দরজা খুলে দিলেন এক অনুপমা সুন্দরী মহিলা. মহিলা প্রশ্ন করে বুঝতে পারলেন যে ভদ্রলোক ভুল বাড়িতে এসেছেন. পুলক বাবুও তার ভুল বুঝতে পেরে প্রায় দৌড়ে গাড়িতে মান্না দের কাছে এসে বললেন চলুন চলুন আর ভায়রা ভাই এর বাড়িতে যেতে হবে না. আপনার পুজোর গান রেডি. বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে মান্না দে কে রীতিমতো জোড় করে একটি অচেনা গানের স্কুলে গিয়ে উঠলেন. মান্না দে কে দেখে ওই অখ্যাত গানের স্কুলের সবাই তো বিস্ময়ে হতবাক. পুলক বাবু নির্বিকার ভাবে একটা হারমোনিয়াম মান্না দের দিকে টেনে দিয়ে বললেন চলুন সুর করুন. বলেই এক ছাত্রীর গানের খাতা টেনে নিয়ে লিখে ফেললেন " ও কেনো এতো সুন্দরী হলো / অমনি করে ফিরে তাকালো / দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই / আমি তো মানুষ.... ". সত্যিই তো মানুষই তো বারবার প্রেমে পড়বে,  ভালোবাসবে. খাক না দুয়েকটা হোঁচট. এভাবেই হটাৎ ই সৃষ্টি হয়ে গেলো সেই অমর গান. যা আজও বাঙালির হৃদয় তন্ত্রী তে ঝংকার তুলে.
মান্না দে যখন হিন্দী গানের জগতে প্লে ব্যাক শুরু করেন সেই সময় তার গান দুর্দান্ত হলেও কোন বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত জন কে প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে যেতে লজ্জা পেতেন. কারণ তার গান তখন পর্দায় পিক্চারাইজ হতো কোন ভবঘুরে, পাগল, ভিখারি, বা সন্ন্যাসীর লিপে. সেই সময় হিন্দী গানের জগৎ শাসন করছেন রফি, মুকেশ, কিশোরকুমার এর মতো ব্যক্তিরা. অনেক সংঘর্ষ করে আলাদা গায়ন শৈলী তৈরী করে মান্না দে কে হিন্দী গানের জগতে স্থান পাকা করে নিতে হয়েছে. মান্না দে যে কোন অনুষ্ঠানে তার গায়ক হয়ে উঠার পেছনে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে এর অবদান খোলা মনে স্বীকার করতেন. কাকার সাথেই তিনি বোম্বে জান. এরপর হয়ে জান শচীন কর্তার সহকারী. মান্না দে বলতেন সব কাজেতেই আমি কর্তার সহকারী ছিলাম.শচীন দার গানের নোটেশন তৈরী করে দিতাম, পান এনে দিতাম, তার বাজারের থলে বইতাম, এমনকি দুজনে একসাথে ফুটবল খেলা দেখতেও যেতাম. দুজন আবার ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান দুই ভিন্ন দলের সমর্থক ছিলেন. শচীন কর্তার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন মান্না দে. তাঁদের ফুটবল খেলা দেখা নিয়েও অনেক গল্প আছে. মুম্বাই তে যখন মান্না দের বেশ নামডাক সেই সময় একদিন কলকাতার বাড়িতে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন,  " হ্যাঁ রে তুই কি বাংলা গান গাইবি না কোনোদিন? " মান্না দে তার মাকে বললেন " বাংলা গান গাইতে তো আমার খুব ইচ্ছে করে মা. কিন্তু সেভাবে তো কেও ডাকে নি. " পরবর্তীতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল লতাজীর জন্য বানানো দুটি গানের দৌলতে. গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এর কথায় আর মান্না দের সুরে তৈরী করা দুটি গানের রেকর্ডিং এ লতাজি দুদিন সময় দিয়েও আসতে পারেন নি. অগত্যা মান্না দেই গাইলেন " কত দূরে আর নিয়ে যাবে বলো " এবং আরো একটি গান. এরপর তো বাংলা গানের ভুবনে রচিত হলো নুতন ইতিহাস.নচিকেতা ঘোষ খুব সকাল বেলা সুর নিয়ে বসতেন. সেবার মান্না দের পুজোর গানের জন্য সকালবেলা নচি বাবু তার পাইক পাড়ার বাড়িতে বসে আছেন. এদিকে গীতিকার পুলক বাবুর কোন পাত্তা নেই. বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে নচিকেতা ঘোষ ফোন করলেন পুলক বন্দোপাধ্যায় কে. পুলক বাবু ফোনেই বললেন তিনি খুব অসুস্থ. আজ আসতে পারবেন না. এদিকে সুরের ভুত চেপে বসেছে নচি বাবুর মাথায়. তিনি বললেন আপনি ফোনেই গানের মুখরা টা বলুন. পুলক বাবু অগত্যা বললেন " ক ফোটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালোবাসবে ". সুর নিয়ে বসলেন নচিকেতা ঘোষ. এভাবে ফোন এর মাধ্যমেই তৈরী হলো ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক অবিস্মরণনীয় গান.নচিকেতা ঘোষ এর বাড়িতে প্রায় ই আসতেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার. এসে দেখতেন নচিকেতা বাবুর ছেলে সূপর্ণ কান্তি  ঘোষ যাকে সবাই খোকা নামে ডাকতো সে শুধু আড্ডা মারছে. একদিন গৌরী বাবু জিজ্ঞেস করে ফেললেন, " কি রে তোরা এতো আড্ডা মারিস কেন? " উত্তরে খোকা বললো কাকু আড্ডা নিয়ে একটা গান লিখো না. আমি সুর দেবো আর মানা কাকু গাইবে ( এই নামেই উনি মান্না দে কে ডাকতেন )" এর পর সেই কথার সূত্র ধরে তৈরী হলো আর একটা ইতিহাস. গৌরী বাবু লিখলেন " কফি হাউস এর সেই আড্ডা টা আজ আর নেই ". সূপর্ণ কান্তি ঘোষ এর সুরে মান্না দের কণ্ঠে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলো সেই চিরকালীন গান. এখন আমার দশ বছর বয়সী মেয়েও সেই গান গুনগুন করে. মান্না দে পরে সূপর্ণ কান্তি ঘোষ এর সুরে সাড়া জাগানো দুটি অ্যালবাম " সারা বছরের গান এবং সারা জীবনের গান, "ও রেকর্ড করেন.  তুমুল জনপ্রিয় হয় অ্যালবাম দুটি. এছাড়া করেন, " সে আমার ছোট বোন '".  মান্না দের গান সৃষ্টির ইতিহাস একটি নিবন্ধে লেখা যায় না. সে এক মহাভারত. " দুই পুরুষ " ছবির জন্য গান তৈরী করতে সুরকার অধীর বাগচীর বাড়িতে এলেন গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়. অধীর বাবু একটার পর একটা রাগ ট্রাই করছেন কিন্তু কিছুতেই মনমতো হচ্ছে না. একসময় বলেই ফেললেন, " ভালো লাগে না ".  পুলক বাবু বললেন " এই না ভালো লাগা নিয়েই তো একটা ভালো গান হতে পারে ".  বলেই লিখে ফেললেন আর এক জনপ্রিয় গান " বেহাগ যদি না হয় রাজি / বসন্ত যদি না আসে / এই আসরে ইমন তুমি / থাকো বন্ধু আমার পাশে ".  মান্না দে বলতেন মানুষ এর মধ্যে সেন্স অফ হিউমার বা রসবোধ না থাকলে সে প্রকৃত মানুষই না. এই ব্যাপারে শচীন কর্তা কে গুরু মানতেন মান্না দে. তার মতে রসবোধ এর এপ্রিশিয়েট করার মতো লোক থাকাও প্রয়োজন. তারা একে অন্যের সেন্স অফ হিউমার কে এপ্রিশিয়েট করতেন. মান্না দে বিরহের গানের রাজা হলেও তাঁদের সাংসারিক জীবন ছিল খুব সুখের. স্ত্রী সুলোচনা দেবী কে খুবই ভালোবাসতেন মান্না দে. আবার মাঝে মধ্যে খুনসুটি ও হতো. মান্না দের কথায় " মাঝে মাঝে মন্দ হলে মন্দ কি /কাঁটা না বিধিয়ে / হাতে তুললে গোলাপ / আনন্দ কি ". মান্না দে বলতেন সব সংসারেই হয় তো এমন হয়. তারপর ভুল বুঝাবুঝি এক সময় কেটেও যায়. আর তখন সত্যি সত্যি " বিরহের জ্বালার পরেই মধুর লাগে /মিলন সুধা পান /এতো রাগ নয় গো / এ যে অভিমান ". কাজের প্রতি সেই সময় এর শিল্পী দের নিষ্ঠা ও ভালোবাসা ছিল অনুকরণ যোগ্য. যাকে আমরা স্বর্ণ যুগ বলি. একদিন রাত সাড়ে দশ টার সময় লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে স্বয়ং শচীন কর্তা হাজির মান্না দের বাড়িতে. এসেই বললেন হারমোনিয়াম টা বের কর. এক্ষুনি এই গানটা তুলতে হবে. কাল রেকর্ডিং. মান্না দে আর কি করেন. বসে গেলেন গান নিয়ে. সৃষ্টি হলো অমর গান " পুছনা কেইসে মেনে রেন বিতাইয়ি " গালার চাকতি গেলো. এরপর গেলো পঁয়ত্রিশ ও আটাত্তুর আর পি এম এর রেকর্ড. এলো ক্যাসেট. তাও একসময় বিদায় নিলো. এর পর এলো সি ডি / ডি ভি ডির যুগ. সেটাও যাই যাই করছে. এখন সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন বা আধুনিক ডিভাইস. ইউ টিউব সার্চ করলেই ভেসে উঠে মান্না দের সব জনপ্রিয় গান. ভবিষ্যত এ প্রযুক্তি কোন পথে যাবে আজকের দিনে বসে তা কেও জানেনা. কিন্তু যে প্রযুক্তি তেই মানুষ সাবলীল হোক হলফ করে বলা যায় মান্না দের গান থেকে যাবে শ্রোতা দের হৃদয় এর মনিকোঠায়






                        সরলরেখা
                        তানবীর


এখন শুধুমাত্র   রাত. . .আরও রাত আছে
 রাতকে   যদি সারা রাত  গহনা পরাই
 দেখি  -এ সত্যি আঁচল -আঁচল।
বাতাস হয়ে ছুটে আসে
রাতের কালো চুল  বঙগোপসাগরে ,
এখন শুধু রাত আর রাত আছে,

সহ্য করে নেয়ার অভ্যাসে।


হাত ধরে চলে যাওয়া যায় বহুদূর ,
হয়তো...!
যেমন গুটি পায়ে রাত নামে
কোকিলের কুহুতানে বহুদূরে - বহুদূর|
এখন শুধু আ -কাপড় , আ-  বণ্টন  আছে,

জীবনের এক অবিশ্বাস্য প্রাক্তনকে অঞ্জলি
যদি এমন হয় বহুবার?

এখন    রাত. .  "ৎ "আসছে ছুয়ে।

তোমার নাম, তোমার গন্ধ,
তোমার  বাড়ি,
তোমার  সাথে প্রাক্তন  স্বপ্ন।

আসছে সকাল - ইতি -বাউন্ডুলে ।






জীবন চুঁইয়ে পড়ে নোনাজল
পৃথা চট্টোপাধ্যায়

আরো বেশি নিঃসঙ্গ হলে
             হৃৎপিন্ডের শব্দ শোনা যায়
নিঝুম দুপুরকে মাপা যায় লীনতাপে
   বৃত্তের জ্যা ধরে হেঁটে গেলে
           পাওয়া যায় অর্থহীন ব্যাসবাক্য
সমোচ্চারিত  উল্লাসে
     হয়তো পেতেও পারো উৎসব প্রাঙ্গণ

তবুও তো
জীবন চুঁইয়ে পড়ে নোনাজল
পাখিদের শিস্ দেওয়া রাতে
       বিপণ্ণ  বিস্ময় এক খেলা করে...







                             মুক্তি

                     শাশ্বত ভট্টাচার্য্য

সকাল থেকেই মনটা আজ একেবারে ভালো নাই তিতাইয়ের,বারেবারে খালি মনে হয়, গ্ৰামে কতো ভালোই না ছিলো সে, সকালে ঘুম ভাঙা পাখির ডাকে, গাছে গাছে খেলে বেড়ানো কাঠবিড়ালি, তাকে দেখলেই পালিয়ে যেতো ঝটপট, চারিদিকে শুধু মাঠের পর মাঠ, মাঠ জুড়ে ফলে থাকা সোনার মতো ঝকঝকে ফসল, আর মাঠের মাঝে ওই কাকতাড়ুয়াটা যে কেমন যেন একদৃষ্টে চেয়ে থাকতো তার দিকে, ইরা-যামিনীদের সাথে কত খেলা, কত দুষ্টুমি, গোটা গ্ৰাম চষে বেড়ানো, ঘুড়ি ওড়ানো,ফল চুরি, হারু ময়রার দোকান, দাদুর কাছে গল্প শোনা, বিকেলে দাদুদের চায়ের আসর, তারপর...হঠাৎ বাবার অফিসে বদলি...শহরে চলে আসা, শীতের সকালের ধোঁয়াশার মতোই একটা তার চোখের সামনে থেকে একটু একটু করে ঝাপসা হয়ে যায় দিনগুলো, চলে আসে আস্ত একটা শহর, কিন্তু কিন্তু...এই শহরটা...কেমন যেন একটা অদ্ভুত, খাঁচার মতো, চারিদিকে খালি বাড়িঘর আর রাস্তাঘাট,গাড়িঘোড়া, কংক্রিটের জঙ্গল, না আছে গাছ, না আছে পাখি, আর না আছে পাখির ডাক, লোকেদের সারাক্ষণ যেন তাড়া..ভীষণ তাড়া, কেউ কারো খবর নেয়না, একদণ্ড দাঁড়ায় না পর্যন্ত, নতুন স্কুলের বন্ধুগুলোও ভালো নয়, ঘুরে বেড়ানো তো দূরের কথা, কথা পর্যন্ত বলেনা, খালি নম্বর-নম্বর,পরীক্ষা-টিউশন...একটুও ভালো লাগেনা তিতাইয়ের, শহরের এই পরিবেশে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, চোখ দিয়ে জল পড়ে, পড়ার বইটা সামনে খুলে রাখলেও মন যে এতটুকু বসেনা তার,মুক্তি চায় সে...মুক্তি, উড়ন্ত পাখির মতোই মুক্তি।মা-বাবারও ভারি কষ্ট হয় তাকে দেখে, কিন্তু কিছুতেই ভেবে উঠতে পারেনা ঠিক কী...কী করা যাবে, অবশেষে অনেক ভেবে একটা ফন্দি আঁটে তিতাইয়ের বাবা। বিকেলে তিতাই ঘরের মেঝেতে বসে নিজের মনে আঁকছে, হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ, তিতাইয়ের বাবা গিয়ে দরজা খোলে, তিতাই রংপেন্সিলের বাক্সে রংগুলো গুছিয়ে রাখছে, এমন সময় হঠাৎ কানে এলো বিভিন্ন ধরনের পাখির শব্দ, কখনো দোয়েল, কখনো কোকিল, কখনো টিয়া...এ কী...কীভাবে সম্ভব! ছুট্টে বাইরের বারান্দায় যায় তিতাই, কিন্তু নাহ্, সেখানে তো কেউ নাই, গাছই নাই তো, পাখি আসবে কোত্থেকে, তার মনে হলো আওয়াজটা যেন ঘরের দিক থেকে আসছে, বেশ একটা উৎসাহ জাগলো তিতাইয়ের মনে, তাহলে কী বাবা কোনো...., আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে হাজির হয় বসার ঘরে, গিয়ে দেখে, ওমা একি, এ যে রেকর্ডিংও নয়, পাখিও নয়, একটা লোক, যে বিভিন্ন ধরনের পাখির আওয়াজ বের করছে মুখ থেকে, অবাক হয়ে গেলো তিতাই, চোখের জল যেন মুহূর্তের মধ্যে লোপাট।তিতাইকে দেখে মুচকি হাসে লোকটা, বাবা বললো, "কী রে তিতাই, চিনতে পারছিস, সুদেব কাকু, গ্ৰামে বাড়ি", ঠিক তো, তিতাই তো বেমালুম ভুলেগিয়েছিল সুদেব কাকুর কথা, খুব ছোটোবেলায় তাদের বাড়িতে আসতো, দাদুর আড্ডায়, তার খুব বন্ধু ছিলো, কোলে নিতো, নানারকম পাখির আওয়াজ শোনাতো, তারপর অবশ্য শহরে চলে আসে, অনেকদিন কথাও হয়নি, ঠোঁটটা নাড়িয়ে আলতো হেসে ওঠে তিতাই, সুদেবকাকু আবারও বিভিন্ন পাখির আওয়াজ করতে থাকে, তিতাইয়ের মনটা খুশি হয়ে ওঠে‌, তার মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে আবার যেন সে হারিয়ে গিয়েছে ওই গ্ৰামের মাঠে, শেখার জন্য খুব বায়না করে তিতাই, সুদেবকাকুও তাকে প্রমিস করে শিখিয়ে দেবে।ঘন্টাখানেক আড্ডার পর সুদেবকাকু চলে গেলেন সেদিনের মতো‌, পরদিন বিকেলে আবার যথাসময়ে এসে হাজির, হাতে তাঁর একটা খাঁচা, যার ভিতরে দুটো টিয়াপাখি। খাঁচাটা তিতাইয়ের হাতে দিয়ে খুব যত্ন করতে বলেন সুদেবকাকু, তারপর নিজেও আবার বিভিন্ন পাখির আওয়াজ করে শোনান তিনি, ভারি মজা হয় তিতাইয়ের, আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে সে, মনের দুঃখটা একেবারে ধুয়েমুছে সাফ, প্রতিদিন খুব খুব যত্ন করে সে পাখিগুলোর, স্কুল থেকে এসে কথা শেখায়, সুদেবকাকুও মাঝেমধ্যে আসেন, পাখির আওয়াজ শোনাতে।শুকিয়ে যাওয়া মুখটা যেন আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তিতাইয়ের, দিন চলে যায়, কংক্রিটভরা শহরেও কেমন একটা নতুন বাঁচার রাস্তা খুঁজে পেলো সে, কিন্তু...সে আনন্দ বোধহয় সহ্য হলোনা নিয়তির... হঠাৎ শুরু অসহ্য পেটে যন্ত্রণা,  ডাক্তার বললেন, ব্লাড ক‍্যানসার লাষ্ট স্টেজ, অনেক চিকিৎসা করা হলো, কিন্তু নাহ্, পারা গেলোনা, ক্রমশ অবনতি হতে থাকলো পরিস্থিতি, বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হলো তাকে, সারারাত একটিবারের জন্যও দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনা তিতাই, অসহ্য যন্ত্রণা, অদ্ভুত অস্থিরতা, চোখেমুখে ফুটে ওঠে কষ্টের ছাপ।ভোরবেলা উঠেই তিতাইয়ের বাবার চোখে পড়ে, বিছানায় নাই তিতাই, শুরু হলো খোঁজ, কোত্থাও নাই,চিন্তায় যেন মাথা কাজ করছেনা, তিতাইয়ের বাবা বললেন, "আজব এমন অসুস্থ শরীরে গেলো কোথায় মেয়েটা!", বালিশের পাশে হাতড়ে ফোনটা খুঁজতে যাবে, হঠাৎ একটা শব্দ, বেশ জোরে, বারান্দার দিক থেকে মনে হলো, তিতাইয়ের বাবা-মা তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো...মেঝের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে তিতাইয়ের নিথর দেহ, পাশে পড়ে রয়েছে পাখির শূন্য খাঁচাটা, মুখে যেন অমলিন একটা হাসি, চোখদুটো তার স্থির আকাশের দিকে...অনেক অনেক দূরে...গভীর শূন্যে!








                       বিচ্ছুরিত বলয়
                         লক্ষণ কিস্কু 

   যখন বন্দী জীবন অতিজীবন লয়ে প্রাণ বায়ু বয়ে ছটপট তীরবিদ্ধ পাখি ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে ভাবে  এখন কোন দিকে যাব।
    নিজ চরণখানি লক্ষণ রেখা পেরিয়ে যেতে বুক দুরু দুরু করে। মনে হয় এক পা থেকে আরেক পায়ের দূরত্ব অলীক অশরীরী।
       বাসযোগ্য বসুন্ধরা অভি বিচ্ছুরিত বলয় ঘেরা। যেথায় অভিগম নিবে সেথায় নীড় হারা পাখীর কলরব। ভাবি, আমি জাগিয়ে তুলতে পারি তোমার হৃদপিণ্ড। তোমার জাগতিক সত্তা।
        আমার প্রয়াস ঔষধ, সেবক- সেবিকা হাত,  লাখ লাখ নিষ্প্রাণ আঙুলের উৎক্ষেপ। 
       আমি বন্দী জীবনের কথা বলি, গহন অন্ধকারে তোমার মৃত চোখের কোটর থেকে অদৃশ্য সরিয়ে অনুভূতির আবহে অবগাহন করে দিতে চাই অধিকারহীন আপ্লুত চুম্বন। ভীত চঞ্চল জীবন বদ্ধ জ্বালামূখ বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে আজ বা কাল। 






                       " তবু "
               
                 হামিদুল ইসলাম।
               
ঝুল বারান্দায় বসে থাকি
একাকী
নিঃশব্দ হাওয়া
লোকগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে
আমরা খোঁজ রাখি না কারো   ।।

প্রতিদিন খবরের পাতায় উঠে আসে
প্রাত‍্যহিক জীবন
বেসামাল হিসেব নিকেশ
স্বপ্নগুলো রোজ রোজ ভাঙে মনের বাগান
তবু অন‍্যের সাথে হয়ে থাকি জড়ো     ।।

নদীর জলে ভাসান আজ
প্রাণকোষ
প্রাণের প্রতিমা
গভীর শোকে ভেঙে পড়ে আকাশ
স্মৃতিগুলো নিপাত্তা তবু ভরিয়ে রাখি দুহাত    ।।

আমাকে ভোলাতে আসে
মহিমের দল
বিশ্বাসঘাতক
সাত‍্যকি সর্বনাশ
পিঠের ছালেতে রক্ত ভাসে সারারাত 





ধারা-পাত 'এর ধারাপাত
       সত্যব্রত চৌধুরী

বৈশাখের  বৃষ্টি ,
যত  অনাসৃষ্টি ।
জ্যৈষ্ঠেতে ধারা-পাত ,
আঁবগুলি  চিৎপাৎ ।
আষাঢ়েতে  বাদল ,
হৃদে বাজে  মাদল ।
শ্রাবণে  মুষল-ধারা,
চাষীরা  পাগল-পারা ।
ভাদ্রেতে  ঝুর-ঝুরে ,
চিত্ত হয়  ফুর-ফুরে ।
আশ্বিনের  ঝটকা ,
ওড়ে  চাল, মটকা ।
কার্ত্তিকেতে কদাচিৎ ,
ধান কাটা  বিলম্বিত ।
শুষ্ক মেঘ  অঘ্রাণে ,
পুলক জাগে এ-প্রাণে ।
পৌষে মেঘের  শ্বাস ,
ডেকে আনে সর্বনাশ !
ধারা যদি আনে  মাঘ ,
গর্জায় শীতের  বাঘ ।
ফাগুনে বৃষ্টি  আগুন,
মঞ্জরী পোড়ায় দ্বিগুণ ।
চৈত্রেতে  নিদাঘ-শেষে ,
সিক্ত-ধরা বরুণ বেশে ।।







বুড়ো ল্যাম্পপোস্ট
পলাশ পাল

প্রাকৃতিক আলোর খেলা শেষ।
এবার তবে আমার পালা।
পথের ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে র‌ই।
ওই দরিদ্র সমাজ ছুটে আসে আমার কাছে
সাদা পাতার ভাষা গুলো আবছা লাগে দেখে।
আমি স্বস্তির আলো দিই ওই ভাষার মাঝে।
প্রেমের শহরে রাতের আঁধারে ধর্ষিত হয় ওরা।
নিরুপায় হয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে
এগিয়ে আসে যৌবন ছেঁড়া পোশাকেই।
পথের ধারে একটু স্বস্তির আলো খোঁজে ওরা।
আমি বিলাসী আলোর চুম্বনে ভরিয়ে দিই।
ভালোবেসে এর থেকে আর যে
কিছু দিতে পারি না।
আমি অটল নিজের খেয়ালে।
বৃষ্টিতে ভেজা নিস্তব্ধ শহরে আমি একা।
ভিজতে থাকে আমার মরিচা পড়া শরীর।
এভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর।
মরিচা গুলো আরো পুরু হতে থাকে।
দেখায় ঠিক পোড়া বারুদের ঝলসানো দেহের মতো।
তাতে কি হয়েছে?
আমার স্থান তো পথের ধারেই
ডাস্টবিনের মতো।
আমি যে এক বুড়ো ল্যাম্পপোস্ট।




          আমি করোনা বলছি
        -------সৌমেন সরকার

আমার প্রিয় মানবসভ্যতা,

প্রতি প্রায় একশত বৎসর পর পর
যে সকল অতিথিগণ সারা পৃথিবীতে এসে
মানবসভ্যতাকে কোন না কোন শিক্ষা দান করে যান,
তাদের উত্তরসূরি আমি।
তাদের দ্বারা আমার হস্তে অর্পিত সেই গুরু দায়িত্ব-
আমি পালন করছি।
তাই ২০১৯-২০২০ তে চলে এসেছি,
আর বেশ সাফল্যের সাথেই আপন দায়িত্ব পালন করছি।

আমি Covid-19,
যাকে তোমরা ভালোবেসে নোভাল করোনা ভাইরাস নামে ভূষিত করেছ!
আমার সম্পূর্ণ নাম Corona Virus Disease 19.
আমি কিন্তু তোমাদের মত ভালো সাজার মুখোশ পরে থাকিনা।
আমি আমার কর্তব্য পালনে সর্বদাই অবিচল।
আমার হাত থেকে সারা পৃথিবীর নিষ্কৃতির কথা এখন আপাতত ভুলে যাও সকলে।
অবশ্যই আমি চলে যাব,
তবে তার আগে তোমাদের যে শিক্ষা দিতে এসেছি সেটি আগে সম্পন্ন করি।

প্রকৃতি-পরিবেশ তোমাদের মায়ের মত,
এমনকি মায়ের থেকেও অনেক বেশী...
তবে তারও সহ্যের একটা সীমানা আছে।
আজ তোমরা যেভাবে পরিবেশের সাথে ক্রমবর্ধমান অনাচার করে চলেছ,
তার জবাবেই এবার আমি চলে এলাম শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে।
তাকিয়ে দেখো,
লকডাউনে সারা পৃথিবী সেরে উঠেছে,
সুস্থ হয়ে উঠছে প্রকৃতি-পরিবেশ,
ভরে উঠেছে ওজোন স্তরের তীক্ষ্ণ ক্ষত।
বিষাক্ত নগরায়ণের লোলুপ জিহ্বা ক্রমপ গ্রাস করে চলছিল সারা বিশ্বকে।
এখন কত শান্তি চারিদিকে,কত সুন্দর চারিদিক।

ধরে নাও শেষ সুযোগ পেয়েছ তোমরা।
দেখো,কেবল তোমাদেরকেই শিক্ষা দিয়ে চলেছি।
মনুষ্যেতর কোন প্রাণী,উদ্ভিদ
বা আর কাউকেই কিন্তু আমি স্পর্শ করে কষ্ট দিচ্ছি না।
এই মহামূল্যবান শিক্ষা কেবল তোমার জন্য।
পৃথিবীকে ভালোবাসো,প্রকৃতিকে ভালোবাসো,পরিবেশকে ভালোবাসো।
এরাই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু।

সময় আছে এখনো,
পৃথিবীর সুস্থতার দায়িত্ব তোমরা আপন হস্তে তুলে নাও।
দেখবে,তুমি যতটা ভালোবাসা ও যত্ন দেবে,
তার থেকে শতগুণ বেশী প্রকৃতি তোমাকে ফিরিয়ে দেবে।

আশা করছি আর দেখা হবে না,
তবে যদি হয় তবে আবার আসব ফিরে Devil Virus হয়ে।
সুধরে যাও,
আশা করছি এই শিক্ষা যথেষ্ট হবে তোমাদের জন্য...

ইতি
তোমাদের সকলের ত্রাস
নোভাল করোনা ভাইরাস




        লকডাউন,ক্যানসার  আর জামাইষষ্ঠী
                 পরাশর গঙ্গোপাধ্যায়

 টুবলুদার মোটর সাইকেলে শ্বশুর বাড়ি জামাই ষষ্ঠী করতে চলেছে প্রকাশ।সাত বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম।

সরকারি উচ্চপদস্থ বাবার মেয়ের সামান্য চাকরি করা ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে মেনে নেয়নি শ্বশুর বাড়ির কেউ।

গত আটমাস আগে,প্রকাশের শাশুড়ির বুকে ক্যানসার ধরা পড়ে।চিকিৎসার জন্য যে লোকবল ভীষণ প্রয়োজন অর্থের অহংকারে ভেবেই দেখেনি এতদিন তারা।এগিয়ে আসে প্রকাশ।একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন শাশুড়ি।তারপরই এবছরের জামাই ষষ্ঠী।শাশুড়ি নিমন্ত্রণ করে প্রকাশকে।প্রথমে ভেবেছিল যাবেনা।ওর বউ আর ছেলে সেই থেকে রয়েছে ওখানেই।তারউপর লক ডাউন। যাওয়ার সমস্যা।কিন্তু  ক্যানসার আক্রান্ত এক মহিলার আর্তি ফেলতে  পারলোনা সে।তাই পাশেরবাড়ির  টুবলুদার বাইক একবেলার জন্য ধার নিয়ে ঝড় জল এড়িয়ে এগিয়ে যায় প্রকাশ...




স্তব্ধ
    ---টুম্পা মুখার্জী

ক্ষমতার অলিন্দ শিয়ালের গর্জনে মুখরিত,
ধী এর অধিপতিরা আজ কবরে শায়িত,
চারিদিকে উল্লাস আক্রমণ, হননের কদর্য ঘূর্ণন,
গৃধ্নুর শীৎকারে আকাশ ছিন্নভিন্ন,
ক্ষয়িঞ্চু সূর্য জাগরণের আলো জ্বালাতে অক্ষম,
আফিমের নেশায় আচ্ছন্ন বিবেক
মাকুতে আর স্বপ্নের তন্তু বোনে না।
অন্ধকার, অন্ধকার...
ঈশান, বায়ু, অগ্নি নৈঋত কোনে কেবল অন্ধকারের প্রাচীর,
উত্তোরণের স্বর্ণমৃগ শেষ নিঃশ্বাস
ফেলার আগে চীৎকার করে...
"লক্ষ্ম.....ণ     বাঁ...চা......ও"।
         
ধী এর অধিপতিরা ওম ভেঙে জেগে ওঠে,
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা শিশুর
শব্দে চারিদিক মুখরিত।
             


সেরা বন্ধু বাবা
জয় জ্যোতির্ময়

বাবা তুমি আমার প্রথম বন্ধু
প্রথম ভালোবাসা,
তোমার কাছে শেখা আমার
জীবনের আশা।

চলার পথে মূল মন্ত্রণা
দিছো বাবা তুমি,
প্রথম গৃহ শিক্ষক বাবা
তোমার চরণ চুমি।

তুমি বাবা সবার সেরা
ভাবতে আমায় হিরো,
তুমি ছাড়া যেখানে আমায়
ভাবতো সবাই জিরো।





     গগন
মিলন পুরকাইত

আজ নাকি ঐ গগন মাঝে,
চাঁদ উঠেছে রঙিন হয়ে।
পাখিরা সব দলে দলে,
উড়ছে মনের আনন্দ।
রজনী গন্ধার গন্ধে যেন,
ভরে গেছে নীল আকাশে।
পাখিরা ও সব রজনীর,
খুঁজে ছুটছে দিনরাত।



          শাশ্বত
   বাপন দেব লাড়ু_

সবার দখলেই রয়েছে একটা আকাশ,
কিছুটা হারিয়ে ফেলেই
তাকে আবার সাজাই নিজের মতন করে।
যত পথ আছে সব কৃষ্ণ গহ্বর এর সাথেই মিশে,
অজানা সংকেতের তীর চিহ্ন আঁকে।
মুহুর্তেই স্পষ্ট হয় অবহেলিত বর্ন মালা।
আঙুল ঘষে তাকে মোছানো কঠিন ;
'ট্রেসিং' করতে গিয়ে একটা মানচিত্র,
বহুবার ভুলভুলাইয়ায় আটকা পড়েছি আমি।
শূন্যগর্ভ থেকে উঠে আসে আকরিক,
এইযে স্বাধীন সত্তার আলাপচারিতা,
ফিরিয়ে নেবে একদিন জানি,
আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস হয়ে,
থাকবে বাকিটা সময়, নির্বিকার ইতিহাস।।



বীরের মর্যাদা
বিশ্বজিত মুখার্জ্জী

উত্তর সীমান্তে বেজেছে ওই যুদ্ধের দামামা,
ওরে জওয়ান হও আগুয়ান শত্রুর মুখে ঘষে দিতে ঝামা।
ক্ষমতা প্রয়োগে লাগাও ক্ষত্রিয় তেজ বল বুদ্ধি,
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে বদলা নিতে হবে সুধী।
একশতআটত্রিশ কোটি ভারতভূমির বিশ্বস্ত জাগ্রত সন্তান,
কোন বেইমান,ভারত জওয়ানে বধিতে সেজেছে শয়তান।
রক্তচক্ষু রুদ্রমূর্তি ধরিয়া শত্রুরে ক'র বিনাশ,
আঘাতে আঘাতে জর্জরিত ক'র শত্রুশিবিরে ডেকে আন সর্বনাশ।
প্রস্তুত থাক দেশের জন্য দিতে আত্মবলি দান,
যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ ত্যাগ পরম -ধর্ম শহিদের সম্মান।
রাত্রি নিঝুম চোখে নাই ঘুম কর্তব্যে অবিচল দৈনিক,
সীমান্তে সদা জাগ্রত ভারতমাতার সাহসী নির্ভিক সৈনিক।
রুধিতে শত্রু সেনার আগ্রাসন গড়ে তোল প্রতিরোধ,
প্রত্যাঘাতে বদলা হা'ন প্রতি আঘাতে নাও প্রতিশোধ।
সহজলভ্য নহে এ কঠিন কর্ম সহজে হয়না আসান,
বীরসৈনিক বক্ষ পাতিয়া আগলে রাখছে ভারতমাতার নিশান।






সাথে থেকো তুমি

            -- বাপ্পা দাস

সাথে থেকো তুমি জীবনের সেই দিনে ,
যখন দিনটাকে খুব বড় মনে হয় ;
নিদ্রাহীন রাত যেন শেষ হওয়ার নয় ।
যখন বিশ্বাস থাকে না নিশ্বাসে ,
চোখে সব কিছু আপছা ছবির মত ভাসে ।
যখন নিজের শরীর পায়ে বোঝা মনে হয় ,
রাতের ঘুমে সকালে জেগে ওঠার অনিশ্চয়তা রয় ।
সাথে থেকো তুমি জীবনের সেই দিনে ,
যখন জীবন চলে তীব্র গতিতে ,
লিখতে থাকে তার শেষ কাহিনী ;
যখন মৃত্যু দেয় হাতছানি ।






ভয়!
সমীরণ বেরা।

আমার বুকে আগুন ধরিয়ে
আগুনের লেলিহান ছবি এঁকেছ,
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
জমাট বাঁধা বরফ গলে
কোন নদী উপত্যকা বা হিমবাহ নয়
শুধু দেখেছো নি:সাড় অবয়ব ।
গুনে দেখেছ; আর দেখেছ চরম বিস্ময়ে
ওদের সারা শরীর কেমন করে অক্ষত
কোন কঙ্কাল খুঁজে পাও নি ।

তোমরা তখনো শোনো নি
ওদের আর্ত চিত্কার
দেখেছ শুধু বাঁচার তাগিদে দৌড় ঊর্দ্ধশ্বাস
তখনো তুমিই শ্রেষ্ঠ মদ মত্ত আত্মবিশ্বাস
আজ তোমার ও তোমাদের জীবনের ত্রাস
তুমিও কী নিদারুণ অসহায় !
তোমার ডাক কি কেউ শুনতে পায়?

একটা ছোট্ট চারা জন্ম নিয়েছে
লোকালয়ে নয় , গভীর অরণ্যে
এই মাত্র খবর পেলাম ।
এখন ওদের মনে ভয় ভীষণ ভয়
যেন আনন্দ নেই কোথাও!
সমস্ত জীব কুলের গর্ভসঞ্চারের আগে
আনন্দ ও পূর্ণতার জয়গান থেমে গেছে
এবার গাভীও ভয় পেয়েছে
তোমাদেরকে ওদের ভীষণ ভীষণ ভয়!

আমার বুকে আমার সব সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়
শুধু তুই ও তোরা শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপায়
আমি! আমি ধরিত্রী মাও আজ অসহায়
আমার বোবা গাছ আর সমগ্র শাবকের দল
সবাই সব্বাই একে একে পেয়েছে ভীষণ ভয়
তাই তোদের কে আর ক্ষমা নয়।

তোদের আর্ত চিত্কার ভেসে আসছে
সুমেরু কুমেরু হয়ে আটলান্টিক প্রশান্ত মহাসাগর
 আমি এখন বধির হয়ে গেছি
শুধু কান্নার জলে অকাল বন্যা তীব্র জলোচ্ছ্বাস
ঝড়ের তাণ্ডব আমার দীর্ঘশ্বাস
আমার পদ সঞ্চালনে কেঁপে উঠছে বারম্বার
সুবিশাল জনপদ থেকে নগর প্রান্তর।
তোদের আর ক্ষমা নেই
গর্ভ সঞ্চারের আগে কিম্বা সৃষ্টির আদি লগ্নে
তোদের মনেও জাগুক ভয় ভীষণ ভয়






পিতা
শংকর হালদার

বয়সের ছাপ সময়ের গায়
প্রণয়ের গোপন শ্বাস মন জুড়ে
অক্ষুন্ন প্রবৃত্তি সীমা টানে আমার চৌকাঠ মাড়িয়ে
শিরাগুলি কেঁপেছিল ঈষৎ হাওয়ায়
অধীর চঞ্চলতা, যখন আঁকড়ে ধরেছিল সে সবুজ ঘাস
সবুজাভ হয়ে মুঠোর আদর মেখেছিলাম গায়
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে দু'চোখের অবুঝ মায়া
আলোর জাল বোনে বেদনার পাশ কাটিয়ে
খুলে রেখেছিল দ্বার দখিনা হাওয়ার
বারবার নিজেকে জানতে শিখেছি তার-ই ছায়
ছন্দের ঘর এঁকে, স্বপ্নের ছবি এঁকেছি তার গায়
ফাগুনের প্রথম সকাল মাড়িয়ে
অযাচিত যৌবন প্রেরণা পেয়েছিল তব খালি হাতে
আগামী প্রজন্মে পিতার স্বীকৃতি নিয়ে ।




ছিলাম তোমার অপেক্ষায়
বিমান প্রামানিক

আজও আমি আছি তোমার অপেক্ষায়
তুমি আমায় আসবো বলে কথা দিয়েছিলে তাই।
আমি কি ঠিক চিনতে পেরেছি তোমায়!
যেন আমি আছি এখনও শুধু তোমার অপেক্ষায়।

যতই এসেছে ঝঞ্ঝা তুফান, যতই এসেছে বাধা
কৃষ্ণ রুপে ছিলাম আমি, তুমিই আমার রাধা।
মনের যত ভাবনা ছিল, সবই যেন নিল বিদায়
মনের দুঃখ ঘুচিল সব, শুধু তুমি এলে তাই।

আমি জানিতাম, তুমি আসবে ঠিক একদিন
তাই তো আমি স্বপ্নে তোমায় দেখি কোনোদিন।
তোমায় ঘিরে কুটিল ভাবনা যত ছিল আমার মনে
সব কিছু আজ দূরে গেল প্রতীক্ষার অবসানে।

নতুন করে উঠবে ভরে তোমার আমার জীবন
তুমি আসবে বলেই হয়নি আমার একা একা মরণ।
সংসার যুদ্ধে জয়ী যেন আমি; তুমি এলে তাই
সেদিনের সেই দুই মাসের আদরের মেয়েটি আমার কোথায়?

তবে কি!পাঁচটি বছর পরেও বাবার উপর অভিমান!
নাকি তুমি এসেছো শুধুই একা নিতে কিছু প্রতিদান?






1 comment:

  1. অনেক ধন্যবাদ জানাই প্রভাতী পত্রিকা কে।।

    ReplyDelete