PravatiPatrika

Tuesday, June 23, 2020

অনুকবিতা ও অনুগল্প





                ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

                   "সোহান ও তার বন্ধুরা“ 
                           পার্থসারথি
▪শেষ পর্ব▪

সবাই দল বেঁধে আবার নৌকার দিকে চলল। এসে দেখে মাঝি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মাঝিকে ইচ্ছে করেই ডাকে নি। খাবারের সময় এসে ডেকে নেয়া যাবে। কী বলিস?-চিনুদা সবার উদ্দ্যেশে বলে।
নাউড়া বলল- 'ঠিকই, এখন ডাকবার কোন প্রয়োজন নেই।'
সবাই এটা-ওটা হাতে নিল। আসফি, কাজল আর শিবলীও বেশ আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। দু'বারে সব জিনিষ আনা শেষ হলো।
চিনুদার কথামতো আসফি ডাব গাছে ওঠল। অবশ্য আসফি ডাব গাছে ওঠাতে সবচেয়ে পটু। পায়ে দঁড়ির রিং লাগিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠল। গোটা বিশেক ডাব ফেলল। ডাব পাড়তে পাড়তেই সরোজ ঠেলা জাল নিয়ে হাজির। সরোজ এসে বলল- 'দিদি, মা , ঠাকুরমা ওরা তোদের সবাইকে দেখতে চাচ্ছে।'
কথাটা শুনে সবার মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠল। কিন্তু চিনুদা বলল- 'এখন না। ফিরে যাবার আগে দেখা করে যাব।'
সরোজ বিমর্ষ চিত্তে বলল- 'কাছেই তো, চল না! দেখা করেই চলে আসবো।'
চিনুদার সোজাসাপটা জবাব- 'এখন গেলেই প্রচুর সময় নষ্ট হবে।'
অন্য একটা বুদ্ধি পেয়ে গেছে এমন ভাব নিয়ে সরোজ বলল- 'তাহলে দিদি-ওদেরকে এখানে আসতে বলি?'
'না, দরকার নেই। এসে ডিস্টার্ব করবে!'-চিনুদার কাঠকোট্টা জবাব।
নাউড়া এবার কথা না-বলে পারল না। চিনুদাকে নাউড়া বলল- 'চিনুদা, ওর দিদিরা যদি আসে তা'তে দোষের কী?'
চিনুদা এবার ভেংচি কেটে বলল- 'ওর দিদি-ওরা এসেই বলবে, তোমরা রাঁধতে পারবে না। একটু সরে বস। আমরা রেঁধে দিচ্ছি। আমি চাই, আমাদের পুরো কাজ আমরা নিজেরাই করব। রান্না-বান্না শেষ করে তারপর আমরা নিজেরাই গিয়ে দিদিদেরকে নিয়ে আসবো।'
চিনুদার আইডিয়াটা সবারই পছন্দ হয়েছে।
সরোজ ওদের বাড়ীর একজন গোমস্তাকে নিয়ে এসেছে। নাম রহমত। রহমতকে সব জিনিষের পাহারায় বসিয়ে ওরা সবাই মাছ ধরতে গেল। পানিতে নামল চিনুদা আর সরোজ। আর বাকীরা সবাই ডাঙায়। চিনুদা জাল ঠেলে মাছ ধরছে আর মাছের ঝুড়িটা সরোজের হাতে। প্রায় ঘন্টা খানেক কেটে গেল মাছ ধরাতে। পাঁচ-মিশালী মাছের মধ্যে চিংড়ীর পরিমাণই বেশি। তারপর পিকনিক স্পটে ফিরে এল।
এবার রান্নার আয়োজন। সব মশলাপাতি বের করে সরোজের হাতে দিল, বাড়ী থেকে বেটে আনার জন্য। রহমতকে দিয়ে বাড়ীতে পাঠালো সরোজ। কীভাবে কে, কখন, কোন কাজ করবে সব ভাগ করে দিয়েছে। সবাই যার যার কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পাটখড়ি আনা হয় নি। রহমতটা বাড়ীতে গেল। বলে দিতে খেয়াল ছিলো না। চিনুদার কথামতো পাতা কুঁড়িয়ে আনা হলো। পাতা দিয়েই আগুন ধরানো হলো।রান্নার কাজ শুরু হয়ে গেল। গাছে গাছে পাখিরা কোলাহলে মত্ত। আর তেমনি পিকনিকের কাজে মত্ত ওরা সবাই। কাউকে দ্বিতীয়বার কিছুই বলতে হচ্ছে না। কার আগে কে কাজ শেষ করবে তা' নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
চিনুদাকে বেশ খুশী খুশী মনে হচ্ছে। দুটো চুলায় আগুন ধরানো হয়েছে। চিনুদা হেড বাবুর্চির মতো কাজ করছে। নাউড়া যাবতীয় কাটাকুটির কাজ করছে। কাহার আর কাজল সবকিছু ধুয়ে দিচ্ছে।শিবলী একটা চুলার আগুন দেখাশুনা করছে। আসফি আর সোহান আছে মুরগী কাটায়। আসফিই বেশির ভাগ কাজ করে নিচ্ছে। সোহান শুধু আসফির কথামতো সহযোগিতা করছে। সরোজ বসেছে মাছ কুটতে। ফাঁকে ফাঁকে চিনুদাও হাত লাগাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রহমত বাটা মশলা নিয়ে হাজির। রহমতও মাছ কুটতে বসে গেল। এই মুহূর্তে সবাই খুব ব্যস্ত।
চিনুদা বলতেই আসফি জাম গাছে গিয়ে ওঠল। কাহার উঠল গিয়ে আম গাছে। আম গাছে উঠেই একটা আম হাতে নিয়েই কামড়িয়ে খেতে শুরু করল। তারপর আম ছুঁড়ে ছুঁড়ে নীচে ফেলতে লাগল। সবাই কামড়িয়েই খাচ্ছে।
'আধা-পাকা আমের স্বাদই আলাদা।'-আম খেতে খেতে চিনুদা বলল।
অনেকগুলো জাম একসাথে নিয়ে আসফি গাছ থেকে নেমে এল। অবশ্য গাছের ডাল ঝাঁকিয়ে বেশ কয়েকবার নীচে জাম ফেলেছে। গাছ থেকে নেমেই আসফি বেছে বেছে কয়েকটা জাম মুখে পুরে সরোজকে বলল- 'জামগুলোর জাত খুব ভালো রে! দারুণ মিষ্টি!' তারপর একমুঠ করে সবার হাতে জাম পৌঁছে গেল।
বেলা দুটো নাগাদ ওদের রান্নার কাজ পুরোপুরি শেষ হলো। মাঝি আর রহমতকে সবকিছুর পাহারায় রেখে সবাই গেল স্নান করতে। হই-হুল্লোড় করে ওরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। একটা মিনি সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। সরোজ খুব ভালো সাঁতার পারে। ওর সাথে সাঁতরিয়ে কেউ পারে নি। 
স্নান শেষে এসে দেখে কয়েকটা মেয়ে মাঝি আর রহমতের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। চিনুদা দূর থেকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে, সরোজের দিদি আর উনার বান্ধবীরা। কাছে আসতেই মেয়েগুলো যেন একটু গুটিয়ে গেল। চিনুদা একটু গম্ভীর ভাব নিয়েই আছে। সরোজ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
পরিচয় পর্ব সেরেই দিদিরাসব চলে এল রান্না করে রাখা হাঁড়ির কাছে। একটা একটা ঢাকনা খুলছে আর খিলখিলিয়ে হেসে একজন অন্যজনের গায়ে ঢলে পড়ছে আর বলছে- 'বা! বেশ চমৎকার রং হয়েছে। স্বাদটা ভালই হবে। কে রেঁধেছে?'
সবাই চিনুদাকে দেখাল। দিদি চিনুদার থুতনিতে আদরের টোকা মেরে বলল-'তুমি কার কাছে রান্না করতে শিখেছো ভাইটি?'
চিনুদা একটু ভাব নিয়েই বলল- 'আমার মা'র রান্না দেখে দেখেই নিজেই শিখে নিয়েছি।' দিদিদেরকে তেমন পাত্তা না-দিলেও যেচে যেচে এসে এটা-ওটা জিজ্ঞ্যেস করছে। কিছুক্ষণ পর চিনুদা বুঝতে পারলো যে, দিদিরা খুবই আন্তরিক। তাই দিদিদের কথামতো সবাই একসঙ্গে খেতে বসল। ওদের খাওয়া শেষে দিদিরাও অল্প অল্প খেয়ে চেকে দেখল।সবাই রান্নার বেশ প্রশংসা করল। ডাবের পানি পান করেই বাগানবাড়ী ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়ল। দিদিরাও সাথে সাথে।
সূর্য কিছুটা হেলে পড়েছে। বিকেল বেলার প্রথম লগ্ন। ঝিরঝির বাতাস বইছে। রৌদ্রের তাপ ধীরে ধীরে থিতিয়ে এসেছে। পাখিরা অলসভাবে গাছের ডালে বসেই ডানা ঝাপটাচ্ছে। ঘুঘু পাখির ডাক শুনে সোহানের চোখ জোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে পাখিটাকে দেখার জন্য। নাউড়া বুঝতে পেরে দেখিয়ে দিল। সোহানের চোখ জোড়া খুশীতে ঝলমলিয়ে ওঠল। বেশ কতক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে পাখিটাকে মুগ্ধ চোখে দেখল সোহান। দেখতে ঠিক কবুতরের মতো। শুধু আকারে একটু ছোট।
হাঁটতে হাঁটতে এবার কিছুটা জঙ্গলমতো এলাকায় চলে এলো। লতায়-পাতায় হাজার রকমের ফুল চোখ মেলে যেন তাকিয়ে আছে। ফুল-পাখি-গাছ আর পাখির কলতানের রাজ্যে ওরা সবাই কিছুক্ষণের জন্য যেন ডুবে ছিল।
দেখতে দেখতে রৌদ্র অনেকটা হেলে পড়েছে। শেষ বিকেল। পাখিদের ভীড় ক্রমশঃ বাড়ছে। মুহূর্তেই যেন পাখিদের স্বর্গ হয়ে ওঠল এই বাগানবাড়ীটা। এমন নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর জায়গা থেকে চলে আসতে কারও মন চাচ্ছে না। কিন্তু সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সরোজের মা-বাবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে এল। দিদিরা এগিয়ে দিতে এগিয়ে এল। যখন নৌকা ঘাট ছাড়ে তখন সন্ধ্যা তারাটা আকাশে উঁকি দিয়ে যেন হেসে ওঠল। নৌকা অনেকটা দূর চলে এসেছে। সরোজ ও দিদিরা এখনও হাত নাড়াচ্ছে। চিনুদা যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সরোজের দিদির ভালোবাসায় মোড়ানো হাসিমাখা মুখখানা। হঠাৎ কানে বেজে ওঠল দিদির শেষ কথাটা- 'আবার এসো, এই দিদিটাকে দেখতে।'-চিনুদা নীরবে শুধু মাথা নাড়ালো।
ফুল-গাছ-লতাপতা-পাখি আর পাখির মধুর সুর রেখে চলে আসতে কারও মন সায় দিচ্ছিল না। নৌকা চলছে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিয়ে হেসে ওঠল। ধীরে ধীরে সরোজ ও দিদিরা দৃষ্টির সীমার বাইরে চলে গেল। আর এক বুক আনন্দ নিয়ে সবাই ফিরতি পথে।
                                *শেষ*


ব্যক্তিগত ৬ 
রঞ্জন চৌধুরী

১.
নতুন পাখি উড়তে চেয়ে একটু সময় নেবে

কিন্তু একবার উড়লে
শস্যমুখে তাকে ফিরতে দেখাও কম সুখের নয়

২.
শীতের আদরে চুম্বন রেখেছে যে
তাকে একবার জিজ্ঞেস করো তো----

বসন্ত কি এসে গেছে

আমি একবার ন্যাড়া গাছটার কাছে যেতে চাই

৩.
কলেজ বেলার গিটারটা আর সুর তোলে না
অথর্ব হয়ে পরে আছে

এখন তার গায়ে হাত দিলে
ভুল স্বরগমে কেবল চিৎকার করে কেঁদে ওঠে

৪.
পৃথিবীটা কেমন
কমলা লেবুর মত না ডিমের মত

বুঝতে বুঝতে কত কত বছর ফুরিয়ে গেল
মন মগজের চাপে

৫.
রাতবিরাতে ঘুম ভেঙে গেলে যাকে দেখি
সে অন্ধকার

যাকে আমি আলোতে পুড়তে দেখেছি
মৃত বলে জানি

৬.
সদর দরজাটা খুলে রেখেছি
আসতে পারো

অতিথি হয়ে নয় বন্ধু হয়ে

                 


           নামধারী বন্ধু
             রুহুল আমিন

সর্তি করে বলতো,
আমি কি তোর বন্ধু ছিলাম?
আজও কি তোর গ্রাফে আমার অনুপ্রবেশ ঘটে?
অস্বস্তিকর ইচ্ছা গুলো ইন্টারেস্টিং হয় কখন?
পলক হীন দৃষ্টিতে কেউ তাকায় তোর পানে?
তোর নিষ্ঠুরতার জীবন কি আতংকে ওঠে?
স্নেহ ভরা চোখে বিষক্রিয়া কেন?
আজ মৃত্যু বেদনা জাগে মনে।





কার ছায়া আসে
    বনবিহারী কুমার

এই রঙঝরা সন্ধ্যায়
       সুরঝরা আঙিনায়
       কার ছায়া আসে রূপ ধরি '
        সে তুমি , সে আমি মনে করি ।।




           অনুকবিতা গুচ্ছ
          সেখ সাবির মোল্লা

               শকুন

শকুনেরা হারিয়ে গেছে দরাজ নীল আকাশ থেকে,
এখন মেঠো পৃথিবীতে জন্মেছে,
ওদের সংখ‍্যা বেড়েছে বহুগুন।
মৃত মানুষ নয়,
জীবন্ত মানুষের রক্ত খায় ওরা।

                  পুঁজ

যে আকাশ একসময় ভালোবাসার মেঘে ভরে থাকতো,
বৃষ্টির রহমতে শ‍্যামল হয়ে উঠতো রুক্ষ জমিন।
সেই আকাশেই জমেছে বদরক্তের মেঘ,
পুঁজ হয়ে ঝরে পড়ে অনর্গল,
দূর্গন্ধময় নরক হয়ে উঠেছে যেন সব।




         রথযাত্রা
    ডঃ রমলা মুখার্জী

রথের রশি না টেনে এবার মন লোভের রশি টান........
সার্থক তবে হবে শুভ রথ
খোঁজ খোঁজ রে সত্যপথ।
জয় জগন্নাথ, জয় জগন্নাথ,
সেবা কর সবে আতুর অনাথ।
ঘুচিয়ে কালো, জগৎ আলো, চৈতন্য কর গো দান।




      নদী কথায় ভেসে যায় .......
          তীর্থঙ্কর সুমিত 
               (১১)

যখন একা দাঁড়াই রাস্তায়।মনে হয় কত রাস্তা মিশে গেছে এপাশ থেকে ওপাশ।ওপাশ থেকে এপাশ।ভালো লাগা কি না লাগার সূত্র ধরে ক্রমশ এগিয়ে যাই।আরো রাস্তার খোঁজে ।শেষ কোথায় কেউ জানিনা।তবুও শেষের নেশায় শুরুকে খুঁজি প্রতিদিন।আর হারিয়ে যাই কোনো নদীর বুকে। যার স্রোত প্রতিনিয়ত আমায় ভেজায়। যার পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলি।





   অণুকবিতা
  - অগ্নিমিত্র

১। রথের দিন


রথের মেলা হবে না আজ
তবুও খুশি অপার..
রথের খুশি ভাগ করে নিই
এই রথ যে সবার!

২।
গতিময় রথ


দুর্বার গতি হোক না আজকে
মানবতারই রথের ;
সবাই মিলে সাথে থাকা
মিল না হলেও মতের ..।

৩।
শান্তির রথ

শান্তির রথ এগিয়ে চলুক
এই পৃথিবীর বুকে,
গোলমাল যত মানুষের গড়া
যাক না চুকেবুকে!!



গোপাল বিশ্বাসের অনুকবিতা 

               ১)
 কাঞ্চন নজরে ধরেনা,
কাঁচ নিয়ে মাতামাতি।
আমার ঘর অন্ধকার রেখে,
তোমার ঘরে জ্বেলে গেছি বাতি।।
                ২)
যে জিনিস চিতার আগুনে
পুড়ে হয় ছাই,
সে জিনিস বুকের আগুনে
নিয়ত জ্বালায়।

            ৩)
 যে ফুল মধুতে টসটস,
তার কাঁটাতে অতি বিষ।
ভালোবেসে আদরে আদরে
তুই আমাকে নিলামে তুলিস।
                        -




   অতৃপ্তি-১
প্রশান্ত ভৌমিক

বৈশাখী শ্বশুর বাড়ির সবার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, এমনকি স্বামীর সাথেও। অথচ ১০ বছর প্রেমের পর বিয়ে হয়েছিল তাদের। বিয়ের আগে প্রদীপ স্যারের কাছে টিউশন পড়ত বৈশাখী। সেখান থেকেই সম্পর্ক। বিয়ের পরেও স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে বেশি দেরি হয়নি। স্বামী স্ত্রী দুজনেই সরকারি চাকুরিজীবী। ভালবাসার সংসারে একটা মেয়ে আছে।
কিন্তু ইদানীং খারাপ ব্যবহারের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদেরা নানাভাবে জানতে চেয়েছে বৈশাখীর সমস্যা। ও কাউকেই বলেনি। বরং সবার সাথে খারাপ ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যন্ত্রণা বৈশাখীর ভেতরটা কুরে কুরে খায়৷ ও কীভাবে সবাইকে বলবে এত ভালবাসার সংসারের মাঝে ওর মন পড়ে আছে স্কুল জীবনের বন্ধু নারায়নের কাছে?


অতৃপ্তি-২


মালতী বিয়ের পর থেকে কখনোই স্বামীর কাছে সুখ পায়নি। না, স্বামী মোটের ওপর খারাপ লোক নয়। কোন ধরনের নেশাও করে না। মালতীকেও খুব ভালবাসে। শুধু বিছানাতেই যথেষ্ঠ দক্ষতা দেখাতে পারে না। এ নিয়ে মালতীর মেজাজ সারাক্ষণ বিগড়ে থাকে। স্বামীকে ভালভাবে রান্না করে খাওয়ায়ও না। অনেকবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছে দু'জন। ডাক্তার বারবার বলেছে দুজনেই স্বাভাবিক, কারোর কোন সমস্যা নেই। মালতীর স্বামীও বারবার আকারে ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করেছে- ও স্বাভাবিক আছে। মালতীরই চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু মালতী এত কথা শুনতে চায় না। ও শুধু জানে, চাহিদা না মিটলে ও পাগল হয়ে যায়। মাথা গরম হয়ে যায় তখনই।



অতৃপ্তি-৩


মণির বিয়ে হয়েছিল খুব কম বয়সে। সতেরো বছর বয়সে ও যখন স্বামীর ঘরে আসে তখন স্বামীর বয়স ৪০। সেই থেকে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। বিয়ের পর অভাবের সংসারের অভাব কেটেছে। দু'টি সন্তান এসেছে ঘর আলো করে। আজ সাতচল্লিশ বছর বয়সের মণি একজন পরিপূর্ণ নারী। বড়লোক স্বামী টাকা পয়সা দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে। কিন্তু সত্তর বছরের সেই পুরুষের সাথে মনের মিল জীবনে কখনোই হয়নি। এসব ব্যাপারে স্বামী নিতান্তই চুপচাপ থাকে। কিন্তু মণি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আগের দিনের কথা তোলে, দুঃখে কাঁদে। কষ্টটা কাউকেই বোঝাতে পারে না। স্বামীকেও না, ছেলেদেরও না। জীবনের উপরেই অতৃপ্তি জন্মে যায় তার।



অতৃপ্তি-৪


পিটনের সাথে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই রিয়া জানতে পারে যে পিটন উভকামী। এ নিয়ে অশান্তির শেষ ছিল না। কারণ প্রতিটি সঙ্গমের মুহূর্তেই পিটনের অন্য অনুভূতি জেগে উঠত। পলকেই নিজের মধ্যে হারিয়ে যেত। ফলে পিটনের তৃপ্তি হত না। রিয়ার তো তৃপ্ত হবার প্রশ্নই নেই৷ পরদিন সকালে উঠেই পিটন দৌড়াত তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী বন্ধু রূপকের বাড়ি। কিন্তু রিয়ার তো তৃপ্ত হবার কোন উপায় নেই। অতৃপ্তি বেড়েই চলে তার দিন দিন। অতৃপ্তি থেকে অশান্তি। রিয়া বুঝে গেছে তার জীবনে এই অশান্তির শেষ হবার নয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয় সব অতৃপ্তির উর্ধ্বে চলে যাবার। সিদ্ধান্ত নেবার দিন রাতেই সে শেষ চেষ্টা করে সঙ্গমের। যথারীতি বিফল হবার পরে সে চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে।


অতৃপ্তি-৫


প্রিয়ার জীবনে খুব কালো একটা দাগ আছে। যখন তার বয়স ১৪ বছর, একদিন দেখে ফেলে তার মায়ের সাথে মামাত ভাই শুয়ে আছে৷ প্রতিবাদ করতে গেলে মা তাকে শুইয়ে চেপে ধরে রাখে, আর মামাত ভাই ধর্ষণ করে। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত তিন থেকে চারদিন করে মামাত ভাই এসে থাকত তার সাথে। বাকি দিনগুলো থাকত তার মায়ের সাথে। প্রিয়ার বাবা ব্যাপারটা জেনেও কিছু করতে পারেনি তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য৷ একসময় প্রিয়া এই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হল এক ভাল চাকুরিজীবীর সাথে। বিয়ের পর প্রিয়া সুমনকে মেনে নিতেই পারছিল না। ওর মনে, শরীরে অতৃপ্তি চিরকালের জন্য বাসা বাঁধল।




অনু কবিতা
সত্যব্রত চৌধুরী
১)

বরষা আসিল ওই,
ক্ষেত জলে থৈ-থৈ ,
চাষীদের হৈ-চৈ ।।


২)

পাতা-ঝরা জিওল গাছে ,
মঞ্জরীতে  মধূপ  নাচে  ।।




  ঘূর্ণির স্রোতে
  সঞ্জীব দে

ঘূর্ণির স্রোতে পাক খেতে খেতে
কতো অমূল্য জীবন তলিয়ে যায়।





No comments:

Post a Comment