PravatiPatrika

Wednesday, June 24, 2020

কবিতা ও ধারাবাহিক উপন্যাস

                    পাখির ডানার উড়ান
                        প্রশান্ত ভৌমিক 

পাঁচ।
স্কুলে গিয়েই শুনলাম আজ নাকি বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন দেবে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন নাইনের ক্লাস আরম্ভ হয়েছিল। অথচ দেখতে দেখতে বছরটা পুরো শেষ হয়ে গেল। মোজাম্মেল স্যার প্রথম পিরিয়ডে ক্লাসে এসেই ঘোষণা করলেন আজ বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন দেয়া হবে। সাথে জানালেন, আজকের পর থেকে প্রতিদিনই পরীক্ষার জন্য সাজেশন দেয়া হবে। তাছাড়া এই পরীক্ষায় কেউ যদি এক বিষয়েও ফেল করে, তবে তাকে প্রমোশন দেয়া হবে না। স্যার রসিকতা করে বললেন, ছেলেরা ফেল করলে রিক্সা চালাবে আর মেয়েরা ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে।
এরপর রুটিন লিখে দিলেন বোর্ডে। পরীক্ষার রুটিন দেখে কেউ খুশি হতে পারল না। কেমন যেন এলোমেলো। প্রথমে ইংরেজি, তারপরে ধর্ম। তারপরে বাংলা, রসায়ন, আবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র। তারপরে বাকিগুলো। কী হবে কী জানি! তাছাড়া স্যার জানিয়ে দিলেন পরীক্ষার রেজাল্টের দিন অভিভাবক সাথে নিয়ে আসতে হবে।
এবার বোধহয় বাবার হাতে বার্ষিক মার না খেয়ে উপায় নেই। প্রতি বছরই বলেন বার্ষিক পরীক্ষার পর মার দেবেন। কিন্তু কখনো সেই মার খেতে হয়না। এবার রেজাল্টের দিন নিশ্চিত মার খেতে হবে। তবে এর উল্টো দিকও আছে। পরীক্ষায় ভাল করতে পারলে বাবা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে কিছু বই কিনে দেবেন। সেটাও জানি। তাহলে সমাধান হল আগামী কিছুদিন মন দিয়ে ভাল করে পড়া।
গণিত ক্লাসে মোজাম্মেল স্যার রুটিন দেয়ার পরে ত্রিকোণমিতির কয়েকটা অংক করালেন। ত্রিকোণমিতি আমার কাছে বিতিকিচ্ছি লাগত। আজ মন দিয়ে স্যারের কথাগুলো শুনলাম। সাথে সাথে বোর্ডে করা স্যারের অংকটা দেখলাম। মুহূর্তেই ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। এরপর নিজে নিজেই চেষ্টা করে আরো কয়েকটা অংকের সমাধান বের করে ফেললাম।
দ্বিতীয় ঘণ্টায় বাদশাহ আলম স্যার ইংরেজি সাহিত্য পড়ালেন। সাহিত্য আমার বরাবরই ভাল লাগে পড়তে। আজ আরো মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। খুবই উপভোগ করলাম। তৃতীয় ঘণ্টায় ওয়াজেদ স্যার এলেন বাংলা পড়াতে। ওয়াজেদ স্যারের মত মানুষ হয় না। স্যারের কথা শুনে ইচ্ছে করে পড়াশুনা করে নতুন করে বাঁচতে। তিনি খুব উৎসাহ দিয়ে কথা বলেন।
চতুর্থ পিরিয়ডে নিখিল স্যারের পদার্থ বিজ্ঞান। নিখিল স্যার খুব ভাল পড়ান। নিখিল স্যারের আগে পদার্থ বিজ্ঞান পড়াতেন বীরেন্দ্র স্যার। স্যার মারা গেছেন কিছুদিন আগে। বীরেন্দ্র স্যার আমার দুঃসম্পর্কের মামা হতেন। তাই ক্লাসে সুযোগ পেলেই পড়া ধরতেন। স্যারের প্রথম টার্গেটই ছিলাম আমি। কিন্তু পড়াতেন খুব মন দিয়ে। নিখিল স্যারও তেমনই। নিখিল স্যারের ক্লাস শেষে টিফিন টাইম। আজকে টিফিনে দেয়া হল বনরুটি আর জিলিপি। আমার মনে হয় পৃথিবীতে খারাপ খাবারের কোন তালিকা যদি কখনো হয় তাতে প্রথমেই থাকবে এই খাবারটি। কেউই পছন্দ করে না এটা খেতে। তাও কেন যে স্যারেরা এটা দেন খেতে কে জানে! অধিকাংশ ছেলেমেয়েই বনরুটি আর জিলিপি ফেলে দিয়ে চটপটির দোকানে ছুটল চটপটি খেতে। আমি অবশ্য ফেললাম না। আমি খেয়ে নিলাম। মা পছন্দ করেন না বাইরের খোলা খাবার খাওয়া, বিশেষ করে চটপটি তো একেবারেই না। আর আমিও খেয়ে গিয়ে মিথ্যে বলি না মাকে। তাই বনরুটি আর জিলিপিতেই সন্তুষ্ট থাকলাম।
টিফিন টাইমে বাপ্পী আমার কাছে জানতে চাইল বিপ্লবের কী কী ক্যাসেট বের হয়েছে? সে নাকি সবগুলো কিনবে। আমি মাঝে মাঝে বাপ্পীকে ঈর্ষা করি। আমরা যে ক্যাসেটগুলো বা বইগুলো দিনের পর দিন টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিংবা মা-বাবার সাথে ঘ্যানঘ্যান করে কিনি সেগুলো বাপ্পী ইচ্ছে করলে একসাথে সবগুলো কিনে নিতে পারে। কিন্তু কেনা পর্যন্তই! আমি নিশ্চিত জানি বিপ্লবের সবগুলো ক্যাসেট হয়ত বাপ্পী আজ কিনে নেবে, কিন্তু কোন গান কখনোই শুনবে না। আর বাসায় কেউ গেলে বাপ্পী শোকেস ভর্তি বই আর ক্যাসেটের স্তুপ দেখিয়ে বলে, এগুলোর কোনটাই আমি পড়িনি কিংবা শুনিনি। পরে কোন একসময় নিশ্চয়ই পড়ব, শুনব।
বিপ্লব আমাদের সময়ের ক্রেজ। কয়েক বছর আগেও দেখতাম বড়রা আইয়ুব বাচ্চু, জেমস কিংবা হাসানকে নিয়ে মেতে থাকতেন। এখন আমাদের প্রজন্ম মেতে আছে বিপ্লবকে নিয়ে। কয়েকদিন আগেই ‘ইত্যাদি’তে পথিক নবী নামে একজনের গান দেখিয়েছে। পথিক নবীরও ক্রেজ হতে সময় লাগবে না। আমাদের ক্লাসের নাদিম দেখি সেদিন পথিক নবীর গান গুনগুন করছিল—‘আমার একটা নদী ছিল, জানল না তো কেউ’। নাদিমের গানের গলা ভাল। অবশ্য নাদিম পড়াশোনাতেও খারাপ নয়। কিন্তু গান কিংবা পড়াশোনা কোনকিছুকেই নাদিম সিরিয়াসলি নেয়নি কখনো। সবসময় হেলাফেলা করেই এসেছে।
বাপ্পীর বিপ্লব সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লবের যতগুলো ক্যাসেটের নাম জানি সেগুলো বললাম। বিপ্লবের মোটামুটি সবগুলো ক্যাসেটই আমার কাছে আছে। বিপ্লব আর পান্থ কানাই- এই দুইজনেই গান আমার বেশ পছন্দ। অবশ্য বড়দি কিংবা ছোটদি কেউই এঁদের গান পছন্দ করে না। ওরা পছন্দ করে সোনু নিগম, জগজিৎ সিং, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ এঁদের গান। এক কথায় মেলোডি গান। আমার কাছে অহেতুক প্যানপ্যানানি মনে হয়। আমার বয়েসী কেউ অবশ্য এঁদের গান শোনে না। আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই হিন্দি গান, হিন্দি সিনেমার ভক্ত। আমার কোনকালেই হিন্দি সিনেমা কিংবা হিন্দি গান ভাল লাগত না। হিন্দি ভাষা না বোঝাটাই এর অন্যতম কারণ। আর তাছাড়া বাংলার যে আবেগ সেটা হিন্দিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আমার বিশ্বাস। আর যারা হিন্দি গান শোনে না এদের অধিকাংশই বিপ্লব, পান্থ কানাই, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস কিংবা হাসানে মশগুল। অনেকে আবার আসিফের গানও শোনে খুব।
বাপ্পীর সাথে কথা শেষ হতে না হতেই ঢং ঢং করে টিফিন শেষের ঘণ্টা পড়ল। এখন জীববিজ্ঞান ক্লাস। খন্দকার স্যার আসবেন। খন্দকার স্যারকে সহজে রাগারাগি করতে দেখা যায় না। অত্যন্ত সুন্দরভাবে সবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু সব ছাত্র-ছাত্রী স্যারকে যমের মত ভয় পায়। আচ্ছা যমের মত ভয় পায় কথাটা বলে কেন সবাই? যমকে কেমন ভয় পায়? কেনই বা পায়? যমের যে কাজ সেটা তো ঘটবেই। সেখানে ভয় পেলেই কী, আর না পেলেই কী?
খন্দকার স্যারকে আমিও খুব ভয় পাই। কিন্তু কেন ভয় পাই তা জানিনা। স্কুলে যেদিন প্রথম এসেছি সেদিন থেকেই দেখছি খন্দকার স্যারের নামে ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ছেলেটিও ভয়ে কাবু হয়ে যায়। আর আমি তো চুনোপুঁটি! কেউ জোরে একটা ধমক দিলে খাটের নিচে ঢোকার রাস্তা খুঁজতে থাকি আমি। আর খন্দকার স্যারকে ভয় পাব না?
স্যার অবশ্য ক্লাসে এসে আজ নতুন কিছু পড়ালেন না। বই বের করে পৃষ্ঠা নাম্বার আর প্রশ্ন নাম্বার বলে সাজেশন দিতে লাগলেন। সবাই জানে খন্দকার স্যার যদি সাজেশন দেন সেটা ভুল হবার নয়, প্রশ্ন সেখানে যিনিই করুন না কেন! জীব বিজ্ঞানের পরের ঘণ্টায় ধর্ম। ধর্ম ক্লাসের সময় মুসলিম ছাত্ররা ক্লাসে বসে থাকে। আর হিন্দুরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে অন্য ফাঁকা ক্লাসে যায়। হিন্দুদের ধর্ম পড়ান পরেশ স্যার। আর মুসলিমদের শহিদ উল্লাহ স্যার। ধর্ম ক্লাসের পরে শেষ পিরিয়ডে রসায়ন পড়াতে আসেন মতিলাল স্যার। রসায়নের মত এত সুন্দর বিষয়কে কতটা কঠিন করে পড়ানো যায়, সেটা মতিলাল স্যারকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। মতিলাল স্যারের ক্লাসটা যেন শেষ হতেই চায় না। একসময় সেটাও শেষ হল, এবার ছুটি।
ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখলাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। শীতের শুরু মাত্র। বৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই, তবু বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় রিক্সা কম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রিক্সা পেলাম। আজকেও এক রিক্সায় সেই আমি, দোলন আর সনি। বৃষ্টির কারণে আজকেও তিন গোয়েন্দার বইটা কিনতে পারলাম না।




ধ্বংস
        সত‍্যব্রত ধর

অভুক্ত কলমের বিষাক্ত কালি,
গেঁথে দিয়েছি সমাজের নরপিশাচদের বুকে।
ফ‍্যাকাসে রঙ তুলির মোহের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করেছি,
দায়হীন সংসারের রাক্ষুসে পাশন্ডদের।
বেআব্রু ধর্ষকের লৌহ শিশ্নকে খুবলে নিয়েছি,
প্রবল ক্রোধের ক্ষিপ্র কামড়ে।
অজ্ঞাত আগমনীর আতুঁরঘরে কলুষিতদের জব্দ করেছি,
ক্ষারকীয় কথার তীব্রতায়।
আগ্রাসী চৌচির আদরের চাদরে আবদ্ধ করে,
পথহারা উলঙ্গ কপট শয়তানদের পিষেছি দিবিনিশী।
তবুও রয়ে গেছে কিছু ভণ্ড কাপুরুষ,
রক্তাক্ত চক্রব‍্যূহের ফাঁদে পড়ে ধ্বংসের অপেক্ষায়...






       মুক্তা
  সৌম্য ঘোষ


এক দঙ্গল ফাজিল বৃষ্টিরা কোলাহল
করে এল আমার বাগানে ,
টগর , মালতি , অপরাজিতার সোহাগ নিতে ।
কারো কি এখন  আসার কথা ছিল ,
এই অবেলায়?

তুমি নদীর ভেতর যাও
সেখানে অপরূপ শান্তি আছে;
নদীর ভেতর যাও , মুক্তা হবে ।

শুধু মুখের ভালোবাসায় মন ভরে না ,
তোমার বুকের মধ্যে ঘুমতে চাই
মুক্তা হবো  !
অবিশ্বাসে  পুড়ে প্রত্যহ অঙ্গার
হওয়ার বেদনা সইতে পারি না আর ।

কে ডাকে নিরবধি
শান্ত মোহন বাঁশি র সুর
নির্মল জ্যোৎস্না এসে ধুয়ে দেয়
আমার উঠোন , ফুলের বাগান   ।।





                     " বিশ্বাস
                হামিদুল ইসলাম
                     

অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে পৃথিবী
মরুরয় রাত
জীবনের পাতায় বড্ডো গোলমাল
মনের গভীরে ছুঁয়ে যায় এক রামধনু হাত   
কামনায় পুড়ে ছারখার   ।।

অসম্ভব খরস্রোতা নদী পেরিয়ে যায়
তারুণ‍্যের পুরুষকার
জীবনের মানে খোঁজে জীবন
পঙ্কিল পথ পায়ে ভাঙ্গে জীবাশ্মের আকর
পথের ধর্ম বিশ্বাসে অপার   ।।

ধর্মের নামে কাপালিক কপালে রাখে মৃত‍্যুবাণ
সাহসে নিঠুর ভর
দেখা হয় জানালার ওপারে
শতাব্দীর দলিল পোড়ে চোখের উপর
সুগন্ধিহারা আজন্ম কর্পুর   ।।

মুখোশে ঢাকা এখন সব মুখ
ভেঙে পড়ে শ্বাশত বিশ্বাস
প্রতিদিন পৃথিবী জন্ম নিচ্ছে মৃত‍্যু উপত‍্যকায়
বিবর্ণ সব ইতিহাস 
তবু জীবন  বিশ্বাসে ভরপুর    ।।





নেপো-পানুর আড্ডা
রাজকুমার ঘোষ

রোববারের ছুটির দিনে,
জমজমাটি আসর ।
ছোট-বড় সব খবরের…
পানু, নেপোর দোসর ।

পানুখুড়োর গেস্ট রুমটি,
সবার প্রিয় ঠেক ।
সবজান্তা নেপোদাদুর…
হয়না মিসটেক । 

হরেক রকম আলোচনা,
পাড়ার খবর বেশি,
স্বাদের স্থানে তৃপ্তি দিতো
কিপ্টে নেপোর দেশি ।

দুই বন্ধুর আড্ডা-স্থলে,
আরো বুড়োর ভিড়… 
পকেট খসে পানুখুড়োর
নেপো জমে ক্ষীর ।




প্রেমের টানে।
দিলীপ রায়।

আমি যদি মেঘ হতাম
তুমি হতে বৃষ্টি।
বুকে নিয়ে ভেসে বেড়াতাম
যতদূর যায় দৃষ্টি।
নীল আকাশে আঁধার ঘনায়
আমার কালো মেঘে।
রিমঝিম ঝিম ঝরতে তুমি
শ্যামল ধরার মাঝে।
শস্য শ্যামল হত ধরিত্রী
তোমার ধারায় ভিজে।
সার্থক হতো জনম তোমার
গর্ব হত নিজের।
বর্ষা শেষে আমার বুকে
তোমার ফেরার তারা।
একলা শেথায় ভাল লাগেনা
আমার পরশ ছাড়া।
মোর বিরহে ধরার মাঝে
থাকবে কেমন করে।
বাষ্প হয়ে ফিরলে আবার
আমার প্রেমের টানে।






            রথ যাত্রা
      সত্যব্রত চৌধুরী

আয়রে ছুটে আয় রথের মেলা বসেছে ।
পাঁপড়ভাজা, জিলিপি আর বেলুন এসেছে ।
এদিকে ফটোর সারি -
           পুতুল ও খেলনা-গাড়ি।
ভিডিও গেম, বন্দুক, মোবাইল এসেছে।
সন্দেহ নাই, মেলা যে ভাই খুব জমেছে ।।

ওইযে দেখো, মস্ত বড়ো রথ সেজেছে ।
জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলরাম বসেছে ।
রশিতে পড়লো টান -
            ভক্তের জোয়ার-বান ।
ঘড়ঘড়িয়ে ঐ দেখো ভাই রথ চলেছে ।
উদ্বেলিত ভক্তরা সব উপচে পড়েছে ।।

কে গো বাজায় বাঁশি, ঝুনঝুনি কিনেছে ।
কে কোথা যে ভীড়ের মাঝে ছিটকে গিয়েছে ।
হারিয়ে গেল 'সুমনা' -
      খোঁজে তার দাদা 'সোনা'।
অনেক পরে দাদু তাকে খুঁজে পেয়েছে ।
ততক্ষণে মায়ের চোখে জল এসেছে ।।






      জীবন
           শেখ মনিরুল ইসলাম

জীবন যদি শুরু হয়
নতুন ভোরে
লিখবো তোমায়
প্রভাত আলোয়।

জীবন যদি শেষ হয়
সাঁঝের বেলায়
দেখবো তোমায়
চাঁদের কোনায়

জীবন.......
নির্জন রাতের
আলো-আঁধারী মুখী
স্বপ্নহারা সবই  দুখী।






*অতিবাহিত দিন*
বাপন দেব লাড়ু

প্রতি রাতে যখন ঘুম ভাঙে
খুঁজে যাই মন খারাপের কারণ,
অভিমানী কলমে
তখন লেখা হয় না
বাকি ইতিহাস।

জমে জমে ভারাক্রান্ত ম'ন,
'হ্যাঙার'এ ঝোলানো জামা দেখে,
চোখের সামনে ভেসে ওঠে
গতকালের জল কালির লিখিত সারণ ;
শুধু ভাবি এসবের বাইরেও কি কোনো ভুল ছিল?

এই প্রশ্ন তেই অতিবাহিত হয় আরও একটা দিন।।








অন্ধকার যাপন
অনীশ ঘোষ

যাবতীয় অন্ধকার নিয়ে বেঁচে থাকা ,
শ্রাবণের চোখে আগুন জ্বলছে এবার ,
'আলো 'তুমি প্রস্ফুটিত হলে নিভে যাবে নিয়ন্ত্রিত শোক ,
এজন্মে নয়---
প্রিয় ,আমাদের পরজন্মে দেখা হোক |








পারুল( ৬ )
বদরুদ্দোজা শেখু


পারুল সোনা পাশ দিয়েছে, পারুল সোনা ধন্যি 
এখন থেকে সবাই তাকে করবে মান্যিগণ্যি !
মেঝেন মায়ের ছাতির  ধ্বকে দুঃখ উঠে ফুঁসি'
আজ যদি ওর দিম্মা থাকতো, হতো কতোই খুশী।
হ্বপন মাঝি  মানত দিইছে মুর্গা দিবেঙ্ চঢ়ি,
পারুল বুঝায় --- থাক-না বাপুন, উ তো মুদের ঘড়ি !
ভোরের বেলায় বাঙ্ দিয়ে যায়, পহর পহর ডাকে ---
ও তো মুদের পুষ্যি আছে, বাঁচাও মুর্গাটাকে ! বিটির কথায় বিপন্ন হয় বিরত হয় মাঝি
মাঝি মেঝেন কীই-বা করবে, বিটিই তো নয় রাজী।
সবাই মিলে মাদল বাজায় এবং ঝুমুর নাচে
মহুয়া পিয়ে মাতাল ডিহা রঙবেরঙের সাজে।।





কিশোর
        হরিহর বৈদ্য

শিশু মানে ফুলের কুঁড়ি
     শিশু মানে চারা গাছ।
ওরাই জাতির মেরুদণ্ড
     অন‍্যায়ের প্রতিবাদ।
কিশলয়ের মতো তাদের
     সবুজ-সাদা মন।
দেশের জন‍্য ধরতে রাজি
     জীবন মরণ পন।
শিশু মানে চঞ্চল মন
     দুরন্ত উচ্ছাস।
জাতের বড়াই থাকেনা যেথায়
     একসাথে করে বাস।
আজকে যারা কিশোর তারা
     স্বপ্নে রাঙা ভোর।
জাতির ভালে আগামী কালের
     পরাবে ন‍‍্যায়ের তিলক।





ব‍্যবধান
     ---------তমাল

তোমার শিশু ইনফ‍্যান্টে
ভরা টিফিনবক্স আর কাঁটাচামচে,
  থাকে যে মুখ গুঁজে।

 আমার শিশু শহরের বুকে
 ফুটপাতে বসে বিষন্ন মুখে, খালি থালাতে দুমুঠো ভাত খোঁজে।

তোমার শিশুর মাথার ওপর 
পুট্টি করা কংক্রিটের চাদর,
রঙবাহারী কারুকার্যের রাশ।

আমার শিশুর মাথার ওপর
খোলা আকাশ আর চাঁদের টোপর,
খিলখিলিয়ে রোদের হাঁসি থাকে যে বারমাস।







প্রথম আষাঢ়'-এ অমর বিশ
প্রলয় কুমার বিশ্বাস

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
বরং বুকটা কেঁপে উঠেছে
অন্ধকারে পথ দেখানো তারার বুক থেকে ঝরা রক্তে

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
গর্জন ছিল আকাশে, ঢেউ ছিল উত্তাল,
বীরের আর্তনাদ আর কাপুরুষের উল্লাস দিগন্তরেখায় মায়ের চোখে জল

'প্রথম আষাঢ়' প্রেমের টানে আবেগী হয়নি একটুও
বিশে বিষে বিষময়, অভাব-মহামারী তুচ্ছ মনে হয়
যখন বলিদানের রাষ্ট্রীয় সন্মানে দেখি আমার গর্বের অমর বিশ







অমরাবতী
জয় জ্যোতির্ময়

আমাজন পাহাড়ের ভেতরে গোপনে
সঙ্গহীন একা হাঁটি বুকে নিয়ে ব্যথা,
তন্নতন্ন করে খুঁজি তোমার সন্ধানে
কবরও পুরাতন হাড় পোড়া চিতা।
একেকটা বৃক্ষ তবু আকাশ সমান
নিচে শুধু অন্ধকার জ্যোতিহীন চোখ,
সমুদ্রে ভেসে বেড়ায় প্রাণহীন ঘ্রাণ
বৃক্ষেরও প্রাণ আছে দেখি নাই মুখ।

তোমাকে দেখেছি স্বপ্নে সেই থেকে মনে
বঙ্গ ছেড়ে আমাজনে প্রেমে জ্যোতির্ময়ে,
আসমান থেকে নেমে জোড়া হাত ধ্যানে
চিমটি কেটে বিশ্বাসে তোমাকে জড়িয়ে।
জীবনে বাঁচার স্বাদ পূর্ণতায় ব্রতী,
আজন্ম বাঁচবো আমি ও অমরাবতী।







No comments:

Post a Comment