PravatiPatrika

Sunday, June 28, 2020

রবিবারের পাতা

                  সাক্ষাৎকথায় লুৎফর হাসান
                        প্রশান্ত ভৌমিক

    আমি বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান পাঠক

(লুৎফর হাসান- উপন্যাসিক, ছড়াকার, কবি গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী, সাংবাদিক। বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে যে কয়জন তরুণ নিজ দ্যুতিতে ঝলমল করছেন তাদের একজন তিনি। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। রচনা করেছেন বেশকিছু পাঠকপ্রিয় উপন্যাস। শিশুদের জন্য লেখার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নতুন বছরে। নিউজ জি টোয়েন্টি ফোর ডট কম নামের অনলাইনে কর্মরত আছেন লুৎফর হাসান। জানুয়ারির এক বিকেলে এলিফ্যান্ট রোডে জি সিরিজের অফিসে মুখোমুখি তিনি।)

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনার ছোটবেলার পাঠ্যাভ্যাস সম্পর্কে বলুন। ছোটবেলায় কী পড়েছেন? বাড়িতে পড়ার পরিবেশ কেমন ছিল?

লুৎফর হাসান: ছোটবেলায় পড়ার জায়গাটা যেটা সেটা হচ্ছে যে আমার ছোটবেলাটা অনেক সমৃদ্ধ, বড়বেলার চেয়ে। আমার বড় মামা মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে লিখতেন। উনি নিয়মিত দেশ পত্রিকা আনতেন আমাদের বাড়িতে। আর ছিলো দৈনিক ইত্তেফাক। ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতা বা বাচ্চাদের কচি কাঁচার আসর পড়তাম। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন পূজা সংখ্যা আনতেন। তারপরে সাপ্তাহিক বিচিত্রা ঈদ সংখ্যা আনতেন। সেখানে গল্প, উপন্যাস এগুলা পড়তাম। তারপরে আম্মার একটা লাইব্রেরি ছিলো। ভালো সংগ্রহ ছিলো সেখানে। ওখানে আমরা আসলে বাংলা সাহিত্যের বেসিক যেটা মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়- এসব লেখকের লেখা আমি ছোটবেলায় পড়ে ফেলেছি। তারপরে একটু বড় হলাম যখন- বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই আমার পড়া হয়ে গেলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিশেষ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আমার সবচেয়ে প্রিয়, পছন্দের লেখক। তারপরে পড়লাম রশীদ করিম, মাহমুদুল হক। অর্থ্যাৎ এই যে পাঠ পরিক্রমা, তখন থেকেই আমার অভ্যাস হয়ে গেলো। মানে পারিবারিকভাবেই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠলো আর কি!

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনার শৈশব- কৈশোর সম্পর্কে বলুন। আপনার গ্রাম নবগ্রামের একটি ছবি আমরা আপনার বর্ণনায় দেখতে পাই। সেই গ্রাম সম্পর্কে বলুন।

লুৎফর হাসান : শৈশব- কৈশোর দু'টোই কেটেছে গ্রামে, ঝিনাই নদীর পাড়ে। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার নবগ্রামে। নবগ্রাম হিন্দু ব্রাহ্মণদের গ্রাম ছিলো। এই সময়ে এসে আমাদের গ্রামের বাড়িগুলোর নাম লাহিড়ী বাড়ি, ভাদুড়ি বাড়ি, সান্যাল বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ি, ব্যানার্জি বাড়ি। বাড়িগুলোর নাম এখনও এরকম। ওনারা চলে গিয়েছেন বিক্রি করে। এখন মুসলমানরাই থাকছেন। এমন না যে দেশ বিভাগের সময় ওনারা গিয়েছেন। ওনারা গিয়েছেন আশি- একাশি সালের দিকে। আমার গ্রামটা কেমন জানেন? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাসের মতো। দূরবীনের মধ্যে পড়া যে বর্ণনা যেমন একশ বছর আগের কুয়া, কুয়ার পাড়, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, কালী মন্দির। এমনকি আমাদের গ্রামের যে মসজিদটা আছে সেটাও অনেক পুরনো। প্রায় দুই- তিনশ বছরের পুরনো মসজিদ, ঈদগাহ। গ্রামটিকে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো করে পেঁচিয়ে রেখেছে ঝিনাই নদী। মাঝখানে হচ্ছে নবগ্রাম। আর শেষ সীমানায় হচ্ছে হেলেঞ্চা বিল এবং শ্যাওড়া বিল দুইটা বিল পাশাপাশি। প্রকৃতির সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটি গ্রাম আমার নবগ্রাম। এই গ্রামটা ক্ল্যাসিক গল্প- উপন্যাসে পড়া গ্রামের মতো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প- উপন্যাসের গ্রাম। আমি কখনো দেখেছি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথার বিলটার মতো একটা বিল। আবার কখনো আমি দেখেছি পথের পাঁচালীর মতো গ্রাম। আবার কখনো মনে হয়েছে এটা হাঁসুলী বাঁকের উপকথার সেই গ্রাম। বা হাসান আজিজুল হকের সাবিত্রী উপাখ্যানের মধ্যে যে রাতের বর্ণনা দেয়া নদীর তীরের বা আম বাগানের এরকম আমার মনে হয় আমাদের নবগ্রাম। আমি সবকিছু পেয়েছি এই গ্রাম থেকে। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এই গ্রামে। আমি ছোটবেলায় খুবই দুষ্ট এবং চঞ্চল ছিলাম বলে আমার আব্বা আমাকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়ার কারণ ছিলো আমি খুবই দুরন্ত ছিলাম। আমি সিনেমা হলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমাদের থানা শহরে একটা সিনেমা হল ছিলো। সেই সিনেমা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে সাউন্ড শুনতাম। আমার একটা কালো রঙ-এর রেডিও ছিলো ন্যাশেনাল ব্র‍্যান্ডের। সেটা দিয়ে বিজ্ঞাপন তরঙ্গ শুনতাম। আমাদের গ্রামে কোনো টেলিভিশন ছিলো না সেই সময়ে। নদী সাঁতরিয়ে জামতলী নামে একটা গ্রাম ছিলো, সেই গ্রামে গিয়ে টেলিভিশন দেখে আসতাম। পালিয়ে যেতাম। সব মিলিয়ে শৈশব- কৈশোর একদম বর্ণাঢ্য ছিলো আমার।

প্রশান্ত ভৌমিক: টেলিভিশন ছিলো না বলতে কি ইলেকট্রিসিটির কারণে টেলিভিশন ছিলো না?

লুৎফর হাসান : গ্রামে কিছুই ছিলো না। অন্ধকার একটা গ্রাম। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর গ্রামটা অন্ধকার হয়ে যায়। কিন্তু একসময় এটাই সবচেয়ে আলোকিত গ্রাম ছিলো। কোলকাতা থেকে যাত্রা দল আসতো। ময়মনসিংহ থেকে যাত্রা দল আসতো। প্রতি পুজা- পার্বনে, বিভিন্ন উৎসবে দারুণ দারুণ অনুষ্ঠান হতো আমাদের গ্রামে। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর গ্রামটা অন্ধকার হয়ে যায়। আমার বেড়ে ওঠা সেই অন্ধকার সময়ে। এখন আবার আলোকিত হয়ে গেছে নবগ্রাম। তবে আমি এখন মনে করি যে সেই অন্ধকারের ভেতর একটা উৎসব ছিলো। উজ্জ্বল একটা ব্যাপার ছিলো। না হলে এত সুন্দর শৈশব আমি পেতাম না। এত বিচিত্র! আমি মনে করি বর্ণাঢ্য একটি শৈশব আমি কাটিয়েছি।

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সম্পর্কে বলুন।

লুৎফর হাসান : আমার স্কুল- কলেজ জীবন মাদ্রাসায় কেটেছে। তাই আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, তখন আমার মনে হলো আমি মুক্ত হলাম। আমি মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধীতা করছি না বা ঐরকম কোনো বক্তব্যও দিচ্ছি না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে আমি বড় ধরনের একটা বাধার ভিতরে ছিলাম, যেটা আমার সঙ্গে যায় না। আমি গান- বাজনা করি, অভিনয় করি, কবিতা আবৃত্তি করি, অনেক কিছুই করি যেটা মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যায় না। ফলে মাদ্রাসায় পড়া আমার জন্য খুব কঠিন ব্যাপারই ছিলো। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমার মাদ্রাসার পৃথিবী থেকে প্রস্থান। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর উড়তে লাগলাম। আমি পাখি হয়ে গেলাম। আমি গানের একটা বিরাট পৃথিবী পেয়ে গেলাম। দল বেঁধে গান গাইতাম, মঞ্চে গাইতাম, হলের ছাদে গাইতাম, হলের সামনের মাঠে গাইতাম, অন্ধকারে গাইতাম, জোছনায় গাইতাম। আজকে আমার গানে যতটুকু পরিচিতি সবটুকুই এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

প্রশান্ত ভৌমিক: আপনি স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার। গায়ক এবং সুরকার সত্ত্বাকে পাশ কাটিয়ে শুধু গীতিকার সত্ত্বাটাকে নিয়ে কথা বলবো। যেহেতু আমি শুধু লেখকদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি তাই গীতিকার হিসেবে আপনার পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাইছি।

লুৎফর হাসান: দুই ধরনের কথা আছে এখানে। গীতিকার এবং গীতিকবি। আমি গীতিকিবি। স্বতি:স্ফূর্ত গান লিখি। গীতিকার যারা, তারা দক্ষ খুব। তারা সুরের উপর গান লিখে ফেলে, মিউজিক্যাল ট্র‍্যাকের উপর গান লিখে, থিম দিয়ে দেয় সেটার উপর গান লিখে। একটা গণ্ডি বেঁধে দেয় এরকম করে লিখতে হবে, ওরকম লেখা যাবে না, সেভাবেই লিখে ফেলে তারা। ওরা গীতিকার। আমি কখনো গীতিকার ছিলাম না। আমি পারি না এভাবে লিখতে। আমি গীতিকবি। যখন যে সুরটা খেলা করে আমার ভেতরে সুরের সাথে কথা চলে আসে। কথা আমি লিখে ফেলি। বা যখন যে ভাবনা আসে লিখে ফেলি, সুর হয়ে যায়। হয় সুর আমি করি, অথবা অন্য কেউ করে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি গান লিখতে পারে তারাই যারা ছড়া খুব ভালো পারে। ছন্দ নিয়ে যারা খেলতে পারে। আমি ছোটবেলায় খুব ছড়া লিখতাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা দুই বন্ধু ছিলাম। আমি আর নাজমুল হক। নাজমুল হক এখন উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা। নাজমুল আর আমি একসাথে হলেই ছন্দে ছন্দে কথা বলতাম সবসময়। হাঁটতে হাঁটতে, রিক্সায় যেতে আমরা ছন্দে ছন্দে কথা বলতাম। ছন্দের বাইরে আমরা কথা বলতাম না। ছন্দে ছন্দে আমরা ফান করতাম। এমনকী অশ্লীল আড্ডা যেগুলো ছিলো সেগুলোও আমরা ছন্দে ছন্দে বলতাম। ওটা আমাকে খুব দক্ষ করে তুলেছিলো। তারপর যখন গান লিখতে আসলাম, তখন দেখলাম যে গান লেখা খুবই সহজ কাজ। মানে গান লেখা আমার জন্য খুবই সহজ কাজ। ধরেন উপন্যাস লিখতে অনেক সময় লাগে। বসে বসে লিখতে হয়, চরিত্রগুলোকে ঠিকঠাক রাখতে হয়, সময়কে ধরতে হয়- সবকিছু মিলে উপন্যাস লেখা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সবচেয়ে কঠিন লাগে কবিতা। কবিতা তো আসে না সহজে। হুট করে আসে। আমি তো সব মাধ্যমেই লিখি। গান লেখাটা সবচেয়ে সহজ মনে হয়। আমার মনে হয় পৃথিবীতে যে ক্রিয়েটিভ মানুষ ছন্দ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে তার জন্য সবচেয়ে সহজ কাজ গান লেখা। আমার লেখা অনেক জনপ্রিয় গান আছে মাত্র পাঁচ মিনিটে লেখা





            বীর্য পুরুষ
                  বিকাশ  দাশ

যজ্ঞের অগ্নি থেকে
বেরিয়ে আসছে যে পবিত্র শব্দের উচ্চারণ
তাকে ধারন করার মতো দীক্ষিত মানব নেই দেখে
যিনি এগিয়ে এলেন তিনি এক বীর্যবান কবি।
এই বিরাট ভুবনের দায়ভার নিয়ে
বেদ ব্রাহ্মণ রূপে জাগ্রত হলেন সমাজে।

অথচ যিনি মহামন্ত্রোচ্চারণে কমণ্ডলু হাতে 
প্রলয় ওঙ্কার হয়ে দাঁড়াতে পারতেন
তিনি মৌনব্রতে ব্রহ্মকে তেজ রূপে ধারনে ব্যস্ত।
দধীচির যে হাড়, একদা যে সত্য রচনা করেছিল
সে বজ্র সংকল্পচ্যুত হয়ে
ভেসে যাচ্ছে অনন্তের গভীরে
বহু বীর্যবান হারিয়ে যাচ্ছে ভুল ঠিকানায় । 

অথচ একমাত্র বীর্যবানের বসার কথা ছিল পদ্মবেদীতে
আসন্ন যজ্ঞের পুরোহিত হয়ে ;
সেই সংকল্পের চুল্লিতে এখন আগুন নির্বাপিত। 

যার ধীরজ কণ্ঠের মন্ত্রোচ্চারণে সমুদ্র থেকে
সজল শরীরে উঠে আসত মৎস্যগন্ধা ;
অনুত সুখের ভেতর কবিতার বর্ণগুলি
দম্ভের সৌন্দর্য হয়ে ফুটে উঠত দু- একটি তারায় ;
তিনি " জবা কুসুম সংকাশ্যং " - মন্ত্রোচ্চারণের আরম্ভ ছুঁয়ে
শব্দকোষ সাজাচ্ছেন চটুল ইস্তাহারে ;
অবশেষে নতজানু হয়ে
আস্বীকার করলেন সমস্ত দায়ভার । 





                         শ্রী
                  শঙ্খশুভ্র পাত্র

অশেষ ফাল্গুনে তুমি মেঘে-মেঘে প্রতিদিন দোল...
অব্যক্ত আকাশ ঘিরে — সুরে-সুরে চতুর্দশপদী
অবন্ধুর পথে, বন্ধু — হাতে-হাত, অবাধ হিন্দোল
রাতের গহনে, গ্রহ — ঘূর্ণমান, কাল নিরবধি...

সম্পর্ক টেকে না, শুধু ঠেকে শেখা, ছন্নমতি কুহু
না- মেলালে এ-জীবন— তন্ত্রমন্ত্র, বৃথা হাঁকডাক
লালনদুহিতা— ওই অস্তসূর্যে—একবার... উঁহু...
দ্বিতীয়বারের জন্য উড়ে গেল প্রেতসিদ্ধ-কাক...

বাকরুদ্ধ-শুদ্ধাচার, সামান্য পাথর—চকমকি
আগুনের ব্যবহার— স্বপ্নপ্রভ অতীতের রং
ছন্দের বন্ধনে, ওই আরক্ত-আবেগে, তুমি, সখী
ফাগুনের ফুটে ওঠা শিমুল-পলাশে, দ্যাখো শ্রম ৷

ঋতুযান, মিথ্যে নয়— মেঘে-মেঘে প্রতিদিনই দোল
কেবল দেখার গুণে : শ্রী, যে-গান রাতের, হিন্দোল...






         উৎসর্গ_সখি_তোমাকে
              সপ্তর্ষি মন্ডল
 
কবি প্রেমে পড়েছেন , এটা স্বাভাবিক
কিন্তু কবি প্রেম থেকে উঠে এসেছেন , এটা বড়ই অস্বাভাবিক ।

কবি যখন প্রেমে পড়েন , হোয়াইট হাউস সেদিন নিস্তব্ধ
তারপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সীমাবন্ধের ঘোষণা পেতেই
কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন , মানা গেল না তো ?

কবি যখন প্রেমে পড়লেন , নোবেল সেদিন পুরস্কার দেয়নি
তারপর ঘোষণা হল সাহিত্য শান্তিনিকেতন বানাবে
আর কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন , বিশ্বাস হল না তো ?

কবি প্রেমে পড়লে , পার্লামেন্ট মুলতুবি হয়ে গেল
তারপর ইমার্জেন্সি লাগাতেই , কবি প্রেমে ইতি টানলেন
এটাও বাস্তবে ঠিক মানানসই হল না তো ?

কবি যখন প্রেমে পড়লেন , তখন
ঘরের কচি ছেলেগুলো বউ আনতে ব্যস্ত
তারপর বউয়ের জায়গায় একজোড়া বর ঘরে ঢুকতেই
কবি বললেন , প্রেমে আর কোনদিন পড়া যাবে না ,
হজম হল না তো ?

আসলে , কবিরা প্রেমে পড়েন না কোনদিন
মুহুর্মুহু মন বদল হলেও ,
প্রেম তাদের তুলে ধরে ,
তারা প্রেম করে আর উঠে আসে শিখরে প্রত্যেকবার ।






                    সাদা পাথরের দু:খ 
                    হীরক বন্দোপাধ্যায়

সাদা পাথরের স্নান দেখতে দেখতে কতবার আমি দরজা খুলে দিয়েছি হাট করে
যাতে নারী পুরুষেরা মেলামেশা করার
সুযোগ পায় ,ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে যারা এসেছিল একদিন তারা সব আত্মহত্যা করেছে
শূন্যবেদী জুড়ে এখন আর কোনো ঝর্না নেই
বেদানা সাইজের দু:খ ,পোস্টকার্ড সাইজের
যন্ত্রণাকে আলিঙ্গন করছে
এখন আর ঋতুকালীন সম্ভাবনা নেই তাই
অভ‍্যাসে অনভ‍্যাসে চিকচিক করছে
যা কিছু কম্পাস, টর্চ ইলেকট্রনিকস মেঘেদের
সাথে জল ভরতে চলে গেছে
শ্রীকৃষ্ণ ফার্মেসির পাশে হাট বসেছে
চিত্রালয় পেরিয়ে ক্রেতাদের ভিড়
কতকিছু হাবিজাবি বক্সক‍্যামেরা সাপের আ্যসিড, হাটুরেরা সব অন্ধ
ইতিহাসের রত্নগুহায় কোনোরকম মান‍্যতা না দিয়ে হোমার কবর থেকে উঠে এসেছেন
কিছু চাল ডাল তরিতরকারি কেনার জন্য
ইলিয়াড ওডিসির জন্য
এ দেশের মহাভারত আর রামায়ণ বড়ো ক্লিশে
বাল্মীকি ও ব‍্যাসদেবের বয়স হয়েছে
দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ কিংবা অশোক বনে
সীতার শ্লীলতাহানিতে ওদের আর কিছু
যায় আসে না ...






                   দেবপ্রিয় দে এর দুটো কবিতা

                     হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স
           

ভালোবাসার গায়ে বড়ো টকটক গন্ধ।ক্ষার সাবানে ঘষে উজালা দিয়ে ট্রিনোপলে ধুলেও বেদব্যাস গ্রহণ করেন না।

জামাতে পারফিউমের গন্ধ পেলে হেরোডোটাসরা কফি হাতে বসে পড়েন ঘন্টাখানেক সুমনের সাথে।ঘা আর ঘায়ের পোকা দুজনেই সাফ।

অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশ করলে তুমি বিরাট বড় হনু।কর্ণের রথচক্র মেদিনী গ্রাস করলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ?

হাজার দোষ করেও তুমি নাড়াজোলের নাতজামাই। আমি পেনাল্টিবক্সে ওয়ান ইস টু ওয়ান হলেই তোমার অফসাইডের বাঁশি?

একশো হাঁড়ি শিলাবতী দুশো প্লেট দামোদর দিয়ে খেয়েও তোমার ক্ষিদে বেড়েই চলে।আমি শালার একচিমটে ডোবা! যত সূর্যগ্রহণ আর বলয়গ্রাস ভীষ্মের কপালেই লেখা?

একটা হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স খুঁজছি সংগে একটা সক্রেটিস - একটা কিনলে দুটো ফ্রী!  শালা লাথি মারবো ভূগোলে লাশ পড়বে ইতিহাসে।




                  বিধিসম্মত সতর্কীকরণ

চশমার ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া আংটি বানায়।পড়িয়ে দেয় আকাশের আঙুলে।অতএব এনগেজমেন্ট সমাপ্ত হোলো।

তুমি তখন ঝারখাওয়া দেবদাস।পুরো হিমালয়টাই একটা গেদে-শিয়ালদা লোকাল।তুই থামমিনি তোর বাপ থামমে।

'ধ'-নামক অক্ষরটিতে আপনি হ্রস্ব-উ কারই দেন বা দীর্ঘ-ঊ কার,করোনা আটকাতে পারবেন না।উল্টে গাদাগুচ্ছের হ্যাণ্ড-স্যানিটাইজার কিনতে গিয়ে ঝিটচাল তক বিক্রি করতে হবে।

তার চেয়ে চুপিচুপি একটা কথা বলি শুনুন।কাব্যের মোড়কটা ঝাঁ চকচকে করুন,তা সে ভেতরে যতই তেল চটচট করুক!শুধু তলায় ছোট্ট করে লিখে দিন----------
Disclaimer টা-('ধুম' পান সাহিত্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)।

 


      সময় বিষয়ক 
   সন্দীপ কাঞ্জিলাল

একটা দাঁত কয়েকদিন ধরে
এমন সাপটাচ্ছিল
আজ তুলে ফেললাম।
কিছুদিন আগে চোখে উঠেছে চশমা।
বলা নেই কওয়া নেই
মাথার চুল কিছু উধাও।
এখন সেই বয়স,
সিঁড়ি না ভাঙতে হলে ভালোই লাগে।

বেশ বুঝতে পারছি
এবার ধরতে হবে ফিরতি ট্রেন।

তা নিয়ে আমার ভাবনা নেই,
আমার ভালোই জানা
এখানে এসেছি বেড়াতে।

ভয়? তা একটু আছে।
ঐ বেচারা সময়কে নিয়ে।
বয়সকাল
সময় টময় মারো গুলি বলে
এমন শাসিয়ে ছিলাম,
ব্যাটা সেই যে পগারপার,এখন তাকে
আর ধারেকাছেও দেখছি  না।

তখন আর কে জানতো
সময়ই হাত ধরে
তুলে দেবে ফিরতি ট্রেনে।

সময় কে সময় না ভাবা
তার যে কি জ্বালা
এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।






  কণ্টক শয্যা
    সৌম্য চক্রবর্তী

লাল গোলাপটা না হয়,
কণ্টক রূপেই পরিপূর্ণতা পাক !
মনের ভিতরের জমানো কথা গুলো ;
না হয় যত্ন করেই তোলা থাক।
আমার এই মনের গভীরে,
নীরবতা বারে বারে আঘাত করুক !
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি গুলোতে,
নয়ন তরে অশ্রু জমুক !
বেঁচে আছি আজও ;
অর্ধমৃত সব অনুভূতি কে সঙ্গী করে !
বেঁচে থাকুক আমার মতনই ;
অভিমানী সব বন্ধু গুলো।






     প্রেম.কম
            সত‍্যব্রত ধর

অনধিকার চর্চায় আপত্তি রেখেও,
প্রেমের আলাপ শুরু।
পুরনো ভালোবাসারা পাখি হয়ে,
উড়ে গেছে অচিরেই।
এরপর একটু একটু করে তোমাতে,
বিলীন হয়ে গেছি।
সামলে ওঠার আগেই বিলিয়ে দিয়েছি,
সমস্ত নিজস্ব সত্ত্বা।
বেঁচে থাকার চাবিকাঠি পৌঁছে দিয়েছি,
তোমার নরম হাতে।

ডান নিলয়ের ঠিক বামপাশটায়,
সযত্নে রেখেছি তোমায়।
রক্তের স্রোতে মিশে পৌঁছে গেছো,
শরীরের কোণায় কোণায়।
দেহের নোনতা চেটে বুঝে নিয়েছো,
প্রকৃত দুর্বলতাগুলো।
মেরুদন্ড ফুঁড়ে অবাধে ঢুকে গেছো,
মজ্জার অতল গভীরে।
তবে মগজে আনাগোনা করলেও,
কব্জা হতে দেইনি আজও।






    তীর্থঙ্কর সুমিত এর ধারাবাহিক ব্যক্তিগত গদ্য   



                  নদী কথায় ভেসে যায় .......
                            (১১)

যখন একা দাঁড়াই রাস্তায়।মনে হয় কত রাস্তা মিশে গেছে এপাশ থেকে ওপাশ।ওপাশ থেকে এপাশ।ভালো লাগা কি না লাগার সূত্র ধরে ক্রমশ এগিয়ে যাই।আরো রাস্তার খোঁজে ।শেষ কোথায় কেউ জানিনা।তবুও শেষের নেশায় শুরুকে খুঁজি প্রতিদিন।আর হারিয়ে যাই কোনো নদীর বুকে। যার স্রোত প্রতিনিয়ত আমায় ভেজায়। যার পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলি।



                নদী কথায় ভেসে যায় .......
                          (১২)

যে কথাগুলো অনেকদিন আগে বলার ছিল।সে কথাগুলো বলা হয়েছে।গভীর থেকে গভীর ভাবে।শুধু বলার প্রয়োজনীয়তা থেকে অপ্রয়াজনীয়তায় ব্যাবহার হয়েছে বেশি। অক্ষর চিহ্ন আরো কত কি?ভেসে গেছে কথামালা ।তবুও বদল হয়নি মুহুর্ত।শুধু বদলেছে সময়।বহুদিনের ব্যার্থতার ইতিহাস আজকে অব্যার্থ চাহিদার সাথে হুবহু মিল।যে পথ বেঁকে যেতে যেতে বাঁক নিয়েছে নদী বুকে,সে পথ ই আজ নদী কথা বলে।






3 comments:

  1. সব লেখাগুলি ই অসাধারন
    বেশ ভালো লাগলো।

    ReplyDelete