অসুন্দরের জয়গান
সৌমিত্র চ্যাটার্জী
এসো একত্রে বাস করি এই অন্ধকূপে
অন্ধকারের সখ্যতায় দান করি সূর্যালোক
স্পর্শহীন সহবাসে শব্দকে পাঠাই পরবাস
তুমি কি তৃষ্ণার্ত, ছেঁচে নাও এই লবনাক্ত ঘ্রাণ
জ্বলন্ত অন্ধকার শিকড়ে ছড়িয়েছে
অক্ষহীন বৃহস্পতির শাখাপ্রশাখা সেই শোকে মৃতপ্রায়
শানিত সুভাষিত অন্তর থেকে আপ্লুত করে
তবু চেতনার ঘুম ভাঙ্গে না
কুমেরুবৃত্তে দিগদর্শকের ভূমিকায় বরফশীতল গভীরতা
ঘোচায় মনমরা শ্বেতশূকরের সংক্ষিপ্ত অভিমান
এসো অভিযানে যাই
আলোকবিহীন সরণীর দুই পাশে পতিত আলপথ ধরে পদযাত্রা করি
অসুন্দরের জয়গান গেয়ে
অন্ধকারের ঘুম ভাঙাই...
এপিটাফ
ওই যে বাড়িটা প্রাসাদের মত
যার পরিধি ঘিরে সাগরের নিত্য টহল
জলে ধুয়ে যায় বালিয়াড়ি আর সবুজ ঝাউবন
ওটাই আমার স্বপ্নের শিশমহল
বাদা বন আর ভেজা বালির গন্ধে মাতোয়ারা
ঝোড়ো বাতাসের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা
ওই আমার দেওয়ানি খাস
যাত্রাপথে সেলাম জানিয়ে যায় দীর্ঘদেহী পোত
ওরাই আমার জীবনের নির্ঘোষ
এলোমেলো বাতাস ফিসফিস করে ডাকে
বালিয়াড়িতে আঁকিবুঁকি কেটে রাখে বন্ধুসম ঢেউ
আমারই জীবন বোধ লিখে রাখে
ওদের মধ্যে কেউ কেউ...
ভালবাসতে আমি ভীত
শিবপ্রসাদ গরাই
চেতনার গভীর থেকে উঠে আসা নৈরাশ্য
ক্রমশ হতাশা জাগায় ,
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মুখ দেখতেও ভয় লাগে মনে হয় ,মুখে চোখে রক্ত ক্রমশ ছাপিয়ে উঠছে। আমার প্রিয় চুম্বনের ঠোঁট
সেখান থেকেও রক্ত ক্রমশ উছলে উঠছে ।
হাতে পায়ে ক্রমশ বিষাক্ত চেতনা
আমাকে, ঘুমোতেও দিচ্ছে না
অথচ ঘুমিয়ে থাকতেই মন চায় ।
হে ঈশ্বর ,ভালবাসতে আমি ভীত
বড্ড ভয় করছে আমার
এই মটকা মারা,
ঘুমিয়ে থাকার ভান করা
কত সহ্য করবে তুমি ,
এবার তোমারও তো কিছু কর্তব্য আছে ।
এই জীবনে যাকেই ছুঁয়েছি,
যেখানে ছুঁয়েছি ,
পচা-গলা রক্ত ফুটে বেরিয়েছে সেখান থেকেই । তোমার হাতে হাত রেখেছি যখন ,
তুমিও অনুভব করেছো আমার কথা
বিশ্বাস হয় না ,আবার রাখো হাত ।
যেদিন এক বুক ভালোবাসা নিয়ে তোমায় ভালবাসতে গিয়েছি
ঘরে ফিরে দেখি ,সেই বুক থেকেও ক্রমশ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে
আমি কখখনো কাউকেই ভালোবাসতে পারিনি ভালোবাসা কি এতই সোজা?
এই জগতে কেউ কাউকে ভালোবাসে না,
সবাই ভালোবাসার অভিনয়টুকুই করে ।
"ফুল"
অঙ্কিতা সরকার
যার পরশে জীবনে আমার
ফুটলো রঙিন ফুল,
জানি না কেন মাঝে মাঝে সে
আমায় বোঝাে ভুল।
সত্য মিথ্যা কতটা জানি না,
জানে শুধু সে।
আমি শুধু ভাবি
সে আমার কে?
যত্ন করে, জল দিয়ে
তোমার ছাদের পরে।
আমার বাহার আর ফুলের গন্ধে,
তোমায় দেব ভরে।
একদিন হয়তো শুকিয়ে গেলে
তুলে দেবে ফেলে।
তোমার দয়া কী করে আমি
যাবো যে ভুলে?
লকডাউনের ইজেলে
মিনতি গোস্বামী
(১)
যোজন পথ ভেসেছি দূরে
যখন ডানায় ছিলাম অন্ধ
হাঁটু মুড়ে করছি স্তব
যখন খাঁচায় হয়েছি বদ্ধ।
(২)
ভাইরাস তোর সাম্য দেখে
অভিমানে চোখের পাতা ভারি
সাম্যবাদের শ্লোগান তুলে
অযথাই শুধু করেছি ফিরি।
(৩)
অলঙ্কার আর শাড়ির বাহার
আজ সব ই হয়েছে গৌণ
আয়ুরেখার অঙ্ক কষেই
জীবন এখন হয়েছে মৌন।
(৪)
যে পথে হেঁটেছি বহু বছর
সে পথ রাখেনি হাঁটার চিহ্ন
যারা গড়েছে সভ্য ইমারত
তারাই আজ হচ্ছে নিশ্চিহ্ন।
(৫)
যাপনের পথে ছিল যত ভুল
জীবন দিচ্ছে তার মাশুল
বেঁধে বেঁধে থাকা সভ্যতায়
পৃথিবী হবে না আর মশগুল।
কালো বলে কি মানুষ নয়!
ইউসুফ মোল্লা
আমরা কালো বলে কি মানুষ নয়!
আমাদের আদিপিতা আদম তো শায়িত,
আরেকবার ভাবুন বিপ্লব কিন্তু বাহিত।
বুকের ভিতর আগুন নয়;অধিকারের ভয়।
জন্ম তো আর অবৈধ অন্যায় নয়।
সময়ের সওয়ার চড়ে ভাবছো সিংহাসনে বসি,
ঠিক আছে মনে রেখো আজ কিন্তু আমরা উপোসি।
যেদিন জেগে উঠবে বিবেক, জল কূলপ্লাবীর মতো;
বুঝে উঠার আগেই আঘাত হানবে ভাবি প্রজন্ম।
সেদিন হিসাবটা তিল তিল করে বুঝে নিও।
পিকাসোর তুলিতে রংয়ের যে রূপান্তর,
রঙেরও যে মুক্তি হয় সে খবর রাখে কেবা আবার।
হাতি ও তার সোনাবাবুর আত্মকথা
কাঞ্চন সরকার
সোনাবাবু হাতি,
মাগো আমার কি এমন দোষ ছিল?
জন্মানোর আগেই আমায় মরতে হলো।
এ জগতের মানবতার আলো কোথায় চলে গেল?
আমার দেখার আগেই সে আমায় নিভিয়ে দিল॥
কি দোষ ছিল মা আমার বলো বলো বলো?
মৃত্যুর আগে দোষটা মাগো বলো তুমি বলো॥
মা হাতি,
দোষতো আমারই সোনা, ওরা তো আজ সভ্য?
মানুষের চোখে আজও আমারা শুধুই বন্য।
আমার চোখেতে যা ক্ষুধার অন্ন আনারস?
তার ভেতরে সে লুকিয়ে রেখেছে মৃত্যুর রসদ॥
ভুল কি ভরসা! মানুষের মত প্রানীগুলোকে?
মানুষের মানবতা না জানি কোথায় লুটেছে॥
এক জীব হয়ে অন্য জীবের দুঃখ সে কি বোঝে?
অন্যের প্রাণ চুলোয় যাক!নিজের স্বার্থ সে খোঁজে॥
হে ঈশ্বর! হিংস্র মানুষগুলোকে একটু সভ্য করো।
এর থেকে তো গিরগিটি অনেক অনেক গুনে ভালো
বাঁচতে গেলে
----সৌমেন সরকার
মরণ নিশ্চিত,মৃত্যু অনিবার্য
তবুও মরতে কে চায়,
বাঁচতে গেলে আগে তাই বাঁচাও মাকে
লুটিয়ে পড় পায়।
গাছ কাটছি,বন কাটছি
কাটছি নিজের শিরা
আলোকবর্ষ পথ এগিয়ে গেলে,
হয়না ঘরে ফেরা...
একটি কাটলে তিনটি লাগাও
বুলি ফাটাও রোজ,
কাজের বেলা লবডঙ্কা
পাওয়াই যায়না খোঁজ!
ইট,পাথর,কংক্রিটের জঙ্গলে আজ
হৃদপিণ্ড হতে রক্ত ঝরে,
প্রকৃতি মা আর সইবে কত-
আর কত দেবে উজাড় করে।
ঝুলি ভর্তি উন্নতি আজ
গগনচুম্বী ইমারত সব!
বড় বড় বিস্ফোরণে ওঠে
মর্মভেদী কলোরব।
খাদ্যশৃঙ্খল মানতে হবে
মানতে হয়ে মায়ের কানুন,
আমি তো মন থেকে মানছি
আপনারাও একটু মানুন।
হাতি মারছি বাঘ মারছি
মারছি মানুষ রোজ,
একদিন কেউ মারবে তোকেও
লাশটিরও হবে না খোঁজ!
তার থেকে ভালো হাতে হাত ধরি
প্রতিজ্ঞা করি সবে,
বাঁচতে গেলে বাঁচাতে হবে আগে
যারা বাঁচলে আমাদেরও অস্তিত্ব রবে।
বাঁচতে গেলে বন বাঁচাও
বাঁচাও বন্য প্রাণী,
বাঁচতে গেলে পরিবেশ বাঁচাও
প্রকৃতি থেকে মনুষ্যেতর টানি।
আজ ধরনীর অসুখ করেছে
ফুসফুস গেছে জ্বলে,
তাকিয়ে আছে মোদের পানে
আমরা হাত বাড়াবো বলে...
বুকে হাত রেখে শপথ করি
বাঁচব বাঁচাব মাকে,
বাঁচতে গেলে আজ সাড়া দাও
যুগান্তরের ডাকে...
রাস্তা
হামিদুল ইসলাম
তোমার সাথে নিত্য দেখা
রাস্তা কিংবা ঘাটে
তুমি আমার বুকের মাঝে রাস্তা বানাও
সদর কিংবা মাঠে ।।
সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি আমি
তোমার সাথে দেখা
তোমার রাস্তা আমার বুকের উপর হেঁটে চলে
তুমি আমার প্রাণের সখা ।।
তোমায় নিয়ে ঘুরিফিরি
রাত্রি এখন অগাধ
তোমার রাস্তা আমায় আলো দেখায়
ভাঙে মরুতৃষার বাঁধ ।।
তোমায় নিয়ে খেলা করি
আকাশ যখন নীল
তোমার মাঝে আমি, আমার মাঝে তুমি
আমরা এক হৃদয়ে বিলীন ।।
অনন্ত সময়
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
কদম্ব গোধূলি তুমি, তুমি এসে অরণ্য টিলায় দাঁড়ালে,টিলাও গগনচুম্বী টলমলে এপিটাফ
সহসা যাজকের উর্দি কেড়ে নেয়
তারপর মেঘ আসে বৃষ্টি পড়ে ঝিরঝিরে উপত্যকায় ঝাঁ করে অন্ধকার নামে
এই ঋষিখোলা গ্রামে
তখন কী আশ্চর্য প্রেমের দেবীরাও
চোখের ইঙ্গিতে বলে ,এসো...
ডারউইন অথবা লামার্ক নয়
ফ্রয়েড ই তখন একচ্ছত্রাধিপতি ...
স্পন্দিত হয়, রেশ রেখে যায়... অপার্থিব প্রতিধ্বনি তোলে
মনে হয়, একা একা যে সমস্ত গাছ হাজার বছর ধরে মাথা তুলে আছে, বুঝি কেন এক একটি পাতা বিযুক্ত হতে লেগে যায় অনন্ত সময়...
সুন্দর
ReplyDeleteখুব ভালো
দারুন
সতত শুভেচ্ছা
মাইন্ড ব্লোয়িং